পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৭১-[৩০] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কুরআন মাজীদের এ আয়াত ’’তোমরা ইয়াতীমের সম্পদের নিকটবর্তী হয়ো না উত্তম পন্থা ছাড়া’’- (সূরা আল আন্’আম্ ৬ : ১৫২) এবং এ আয়াত ’’যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১০) নাযিল হলো, তখন যাদের অধীনস্থ ইয়াতীম ছিল, তারা তাদের স্বীয় খাদ্য হতে তার খাদ্য, তাদের স্বীয় পানীয় হতে তার পানীয় পৃথক করতে লাগল। এভাবে যখন ইয়াতীমের খাদ্য ও পানীয় যা উদ্বৃত্ত হতো তখন তা তাদের জন্য রেখে দিতে লাগল, পরে ইয়াতীম আহার্য করত অথবা নষ্ট হয়ে যেতো। এটা ইয়াতীমদের তত্ত্বাবধায়কদের জন্য সঠিন মনে হলো। এমতাবস্থায় তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এতদসম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন ’’লোকেরা আপনাকে ইয়াতীমদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে; বলুন, তাদের সুব্যবস্থা করা উত্তম। আর তোমরা যদি তাদের সাথে থাক, তবে তারা তো তোমাদের ভাই’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২২০)। অতঃপর তারা ইয়াতীমদের খাদ্য ও পানীয় নিজেদের খাদ্যের সাথে একত্রিত করল। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَ قَوْلُهُ تَعَالَى (وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أحسن)
وَقَوْلُهُ تَعَالَى: (إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا)
الْآيَةَ انْطَلَقَ مَنْ كَانَ عِنْدَهُ يَتِيمٌ فَعَزَلَ طَعَامه من طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ مِنْ شَرَابِهِ فَإِذَا فَضَلَ مِنْ طَعَامِ الْيَتِيمِ وَشَرَابِهِ شَيْءٌ حُبِسَ لَهُ حَتَّى يَأْكُلَهُ أَوْ يَفْسُدَ فَاشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ فَذَكَرُوا ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْيَتَامَى قُلْ: إصْلَاح لَهُم خير وَإِن تخالطوهم فإخوانكم)
فَخَلَطُوا طَعَامَهُمْ بِطَعَامِهِمْ وَشَرَابَهُمْ بِشَرَابِهِمْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ ‘‘ইয়াতীমের মালের কাছে যেও না’’- (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৫২)। অর্থাৎ ইয়াতীম সন্তান যাদের লালন পালনের দায়িত্বে রয়েছে তোমরা ইয়াতীমের মালে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করো না। অন্যায় হস্তক্ষক্ষপের নিষেধাজ্ঞাকে জোরালো করতে কাছে না যাওয়ার কথা বলা হয়েছে; কেননা সাথে সাথে আল্লাহ বলেনঃ إِلَّا بِالَّتِىْ هِيَ أَحْسَنُ অর্থাৎ তবে উত্তম পন্থায় হলে ভিন্ন কথা। তাই ন্যায়সঙ্গত হস্তক্ষেপ, যেমন- ইয়াতীমের স্বার্থে তার সম্পদ ব্যয় করা, ইয়াতীমকে লালনকারী দরিদ্র হলে ন্যায় লালনের পারিশ্রমিক হিসেবে ন্যায়সঙ্গত আহার গ্রহণ করা জায়িয।
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১০) আয়াতের পরবর্তী অংশ إِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১০) অর্থাৎ যারা ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা নিজ পেটে আগুন খায় এবং অচিরেই তারা জাহান্নামের আগুনে মিলিত হবে।
এই কঠিন বিধান শুনে সহাবায়ে কিরাম ইয়াতীমের মাল সম্পূর্ণ পৃথক করা আরম্ভ করলেন, এমনকি তাদের জন্য আলাদা রান্না, আলাদা খাবার ইত্যাদি ব্যবস্থা করলেন। ইয়াতীমের খাবার বেঁচে গেলে তা নষ্ট হতো তবুও কেউ তাতে হাত দিতো না। একই পরিবারে এভাবে চলাফেরা অত্যন্ত কষ্টকর হলে সহাবায়ে কিরাম রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বিষয়টির সুরাহা কামনা করেন। তখন নাযিল হয়ঃ
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْيَتَامٰى قُلْ إِصْلَاحٌ لَهُمْ خَيْرٌ وَإِنْ تُخَالِطُوهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ
‘‘তারা আপনাকে ইয়াতীমদের মাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, তাদের জন্য সঠিভাবে গুছিয়ে দেয়া উত্তম, আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজেদের সাথে মিশিয়ে নাও তবে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই।’’
(إِصْلَاحٌ لَهُمْ) তাদের মালামাল পৃথক করে গুছিয়ে রাখাটাই সর্বোত্তম।
(وَإِنْ تُخَالِطُوهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ) অর্থাৎ গুছিয়ে রাখা কষ্টকর হলে তারা তোমাদের ভাই হিসেবে তাদের মাল তোমাদের মালের সাথে মিশিয়ে নিতে পার। অর্থাৎ মিশিয়ে নেয়াটা হবে কঠিন ঝামেলা এড়ানোর জন্য। তাদের মাল ভোগ করার জন্য নয়। তাই এই বাক্যের পরেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَاللّٰهُ يَعْلَمُ الْمُفْسِدَ مِنَ الْمُصْلِحِ অর্থাৎ ‘‘কে মাল ফাসিদকারী আর কে কল্যাণকামী তা আল্লাহ তা‘আলা জানেন।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২২০)
এতএব এ আয়াত নাযিল হলে সহাবায়ে কিরাম অবকাশ পান এবং ইয়াতীমদের খাবার ও পানীয় তাদের খাবার ও পানীয়ের সাথে একত্রিত করেন। (ইবনু কাসীর বর্ণিত আয়াতের অধীনে)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৭২-[৩১] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন, যে ব্যক্তি পিতা পুত্রের মধ্যে এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটায়। (ইবনু মাজাহ, দারাকুত্বনী)[1]
وَعَن أبي مُوسَى قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الْوَالِدِ وَوَلَدِهِ وَبَيْنَ الْأَخِ وَبَيْنَ أَخِيهِ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارَقُطْنِيُّ
ব্যাখ্যা: এই মর্মের হাদীস আমরা ইতোপূর্বে দেখে এসেছি। এ হাদীসটি আরেকটি কথার উপর ইঙ্গিত বহন করে যে, বিচ্ছিন্ন করা হারাম হওয়ার সম্পর্ক কেবল পিতা-মাতা ও সন্তানের সাথে নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৭৩-[৩২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন যুদ্ধবন্দী হয়ে আসতো তখন তাদের মাঝে যাতে সম্পর্কচ্ছেদ না ঘটে, সেজন্য এক পরিবারের সকলকে এক ব্যক্তির অধীন করে দিতেন। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُتِيَ بِالسَّبْيِ أَعْطَى أَهْلَ الْبَيْتِ جَمِيعًا كَرَاهِيَةَ أَنْ يفرق بَينهم. رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (بِالسَّبْىِ) শব্দের অর্থ বন্দী বা বন্দিনী। যুদ্ধে যাদেরকে বন্দী করে নিয়ে আসা হয়, তারা গোলাম বা দাসী হয়।
এক্ষেত্রে এক পরিবারের ছোট বড় বন্দী হয়ে থাকলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতেন না। অর্থাৎ এক পরিবারের সদস্যদেরকে বণ্টন করে কয়েকজনকে দিতেন না। বরং সবাইকে একজনের কাছে দিতেন যাতে তারা একাকিত্ব অনুভব না করে।
এ হাদীসটিও এই কথা প্রমাণ করে যে, বিচ্ছিন্নতা অবৈধ হওয়া কেবল পৈত্রিক সম্পর্কের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। (সম্পাদক)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৭৪-[৩৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে বলব না? সে হলো যে একাকী খায়, স্বীয় দাসকে প্রহার করে এবং দান-সাদাকা হতে বিরত থাকে। (রযীন)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِشِرَارِكُمُ؟ الَّذِي يَأْكُلُ وَحْدَهُ وَيَجْلِدُ عَبْدَهُ وَيَمْنَعُ رِفْدَهُ» . رَوَاهُ رزين
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির কথা বলেন। যার মাঝে এই সব গুণাবলী বিদ্যমান থাকবে সে নিকৃষ্ট ব্যক্তি বলে গণ্য। এই মন্দ গুণাবলী একটি: (الَّذِىْ يَأْكُلُ وَحْدَه) ‘‘যে একাকি খায়’’। অর্থাৎ অহংকার ও কৃপণতাবশত তার খাবারে অন্য কাউকে অংশীদার বানায় না। দ্বিতীয় মন্দ গুণ : (وَيَجْلِدُ عَبْدَه) এবং দাসকে প্রহার করে। অর্থাৎ অন্যায়ভাবে তার মালিকানাভুক্তদের প্রহার করে। তৃতীয়তঃ (وَيَمْنَعُ رِفْدَه) এবং দান করতে বাধা দেয়।
হাদীসের সার হলো, যার মাঝে কৃপণতা ও মন্দ আচরণ থাকবে সে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ব্যক্তি। এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কৃপণতা ও মন্দ আচরণের তিনটি দিক তুলে ধরেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৭৫-[৩৪] আবূ বকর আস্ সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাস-দাসীর সাথে অসদাচরণকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আমাদেরকে ইতঃপূর্বে বলেননি যে, সকল উম্মাতের তুলনায় আপনার উম্মাতের মধ্যে অধিকহারে দাস-দাসী ও ইয়াতীম হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। তবে তোমরা যদি জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও, তাহলে তাদেরকে স্বীয় সন্তান-সন্ততির মতো সদ্ব্যবহার কর। যা নিজেরা খাও তাদেরকেও তাই খাওয়াও। তারা জিজ্ঞেস করল, তারা আমাদের পার্থিব কি উপকারে আসবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এমন ঘোড়সওয়ার, যা তুমি শত্রুর বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে বেঁধে রাখ। আর এমন দাস, যা তোমার কাজকর্মের জন্য যথেষ্ট। আর যখন সে সালাত আদায় করে, তখন সে তোমার ভাই। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ سَيِّئُ الْمَلَكَةِ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَيْسَ أَخْبَرْتَنَا أَنَّ هَذِهِ الْأُمَّةَ أَكْثَرُ الْأُمَمِ مَمْلُوكِينَ وَيَتَامَى؟ قَالَ: «نَعَمْ فَأَكْرِمُوهُمْ كَكَرَامَةِ أَوْلَادِكُمْ وَأَطْعِمُوهُمْ مِمَّا تَأْكُلُونَ» . قَالُوا: فَمَا تنفعنا الدُّنْيَا؟ قَالَ: «فَرَسٌ تَرْتَبِطُهُ تُقَاتِلُ عَلَيْهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَمْلُوكٌ يَكْفِيكَ فَإِذَا صَلَّى فَهُوَ أَخُوكَ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (سَيِّئُ الْمَلَكَةِ) ‘‘মালিকানায় মন্দ আচরণকারী’’। অর্থাৎ যে মালিক তার মালিকানাভুক্ত দাসদের সাথে অন্যায় আচরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলতে প্রথমেই জান্নাতে প্রবেশ করবে না উদ্দেশ্য। তবে তার এই অন্যায় আচরণের শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেননা যার মাঝে অণু পরিমাণ ঈমান রয়েছে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে বলে আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী থেকেই জানতে পারি। অর্থাৎ অন্যায়ের শাস্তি ভোগ করার পর সব মু’মিনই একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(أَلَيْسَ أَخْبَرْتَنَا أَنَّ هٰذِهِ الْأُمَّةَ) ‘‘আপনি কি আমাদেরকে খবর দেননি যে,...’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাহাবীদের এই প্রশ্নের সারমর্ম হলো, হে রসূল! আপনি যখন বললেন, মালিকানাভুক্ত দাসদের সাথে অন্যায় আচরণকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অতএব আপনার এই উম্মাত যখন সবচেয়ে বেশি দাস-দাসীর অধিকারী তখন তাদের জন্য সবার সাথে নরম আচরণ সম্ভব নয়। তাই তারা স্বাভাবিকতই তাদের সাথে মন্দ আচরণ করবে। অতএব তাদের অবস্থা এবং শেষ পরিণাম কি হবে?
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। তবে ভয়ের তো কারণ নেই। তোমরা জান্নাতে না যাওয়ার মন্দ পরিণাম থেকে বাঁচতে দাস-দাসীদের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা কর, যেমন তোমাদের সন্তানদের যথাযথ মূল্যায়ন করে থাক এবং তাদেরকে খাওয়ায় যা তোমরা নিজে যা খাও।
সাহাবীরা আবার প্রশ্ন করলেন যার সার হলো, দুনিয়ায় দাসদের এমন মূল্যায়ন করতে হলে দুনিয়ায় তাদের দিয়ে আমাদের লাভ কি? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এই প্রশ্নের উত্তর একটি উপমা সহ পেশ করলেন। অর্থাৎ ঘোড়া যেমন আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদের জন্য বেঁধে রেখেছো কেবল আখিরাতের সাওয়াব পাওয়ার জন্য, তবে তার দ্বারা দুনিয়ার উদ্দেশ্য না থাকলেও জিহাদে গিয়ে গনীমাতের মাল পাওয়ার মাধ্যমে দুনিয়াবী উদ্দেশ্য অর্জিত হয়ে যায়। ঠিক তদ্রূপ দাস থাকায় তুমি নিজে আখিরাতের কাজে মনোযোগ দিতে পারছো। সে না থাকলে তোমাকে আখিরাতের কর্ম ছেড়ে দুনিয়াবী অনেক কাজ-কর্ম করতে হতো। গোলাম তোমার সেই কাজের জন্য যথেষ্ট হওয়ায় তুমি নির্বিঘ্নে আখিরাতের কর্ম করতে পারছো। এটাই তোমার দুনিয়ার স্বার্থকতা। তারপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যেমন তার মাধ্যমে আখিরাতের কর্মের সুযোগ পাচ্ছ তাকেও আখিরাতের কর্ম সালাত আদায়ের সুযোগ দাও। দাস যখন সালাত আদায় করছে তখন সে তোমার ভাই।