পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩০৪-[১] সাহল ইবনু সা’দ আস্ সা’ইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উওয়াইমির আল আজলানী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কোনো ব্যক্তি যদি স্বীয় স্ত্রীর সাথে অপর পুরুষকে (ব্যভিচারে) দেখতে পায় এবং সে যদি (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকে হত্যা করে বসে, তবে কি নিহতের আত্মীয়স্বজন তাকে হত্যা করবে? (আর এরূপ যদি না করে) তবে সে (স্বামী) কি করবে (অর্থাৎ- এই ব্যভিচারের কারণে তার করণীয় কি)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার এবং তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে ওয়াহী নাযিল হয়েছে, ’যাও তোমার স্ত্রীকে নিয়ে আসো’। বর্ণনাকারী সাহল বলেন, অতঃপর তারা উভয়ে মসজিদে এসে লি’আন করল, আমিও অন্যান্য লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে উপস্থিত থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিলাম।

অতঃপর উভয়ে যখন লি’আন শেষ করল, তখন ’উওয়াইমির বলল, আমি যদি তাকে আমার বিবাহের বন্ধনে রাখি, তাহলে আমি তার ওপর মিথ্যারোপ করেছি, এটা বলে সে তাকে তিন তালাক প্রদান করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি স্ত্রী লোকটি কালো রংয়ের এবং কালো চক্ষুবিশিষ্ট, বড় বড় নিতম্ব, মোটা মোটা পা-বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তবে মনে করতে হবে ’উওয়াইমির তার সম্পর্কে সত্য বলেছেন। আর যদি রক্তিম বর্ণের ক্ষুদ্রাকৃতির কীটের ন্যায় সন্তান প্রসব করে, তবে মনে করব ’উওয়ামির মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর স্ত্রীলোক এমন বর্ণের সন্তান প্রসব করল যেরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা দিয়েছিলেন- সে সেরূপ সন্তানই প্রসব করল।’ এর দ্বারা ’উয়াইমির-এর দাবির সত্যতার ধারণা জন্মে, অতঃপর সন্তানটিকে (পিতার পরিবর্তে) মায়ের পরিচয়ে ডাকা হতো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنهُ قَالَ: إِن عُوَيْمِر الْعَجْلَانِيَّ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ رَجُلًا وجدَ معَ امرأتِهِ رجُلاً أيقْتُلُه فيَقْتُلُونه؟ أمْ كَيفَ أفعل؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قدْ أُنْزِلُ فِيكَ وَفِي صَاحِبَتِكَ فَاذْهَبْ فَأْتِ بِهَا» قَالَ سَهْلٌ: فَتَلَاعَنَا فِي الْمَسْجِدِ وَأَنَا مَعَ النَّاسِ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا فَرَغَا قَالَ عُوَيْمِرٌ: كَذَبْتُ عَلَيْهَا يَا رسولَ اللَّهِ إِن أَمْسكْتُها فطلقتها ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: انْظُرُوا فَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أَسْحَمَ أَدْعَجَ الْعَيْنَيْنِ عَظِيمَ الْأَلْيَتَيْنِ خَدَلَّجَ السَّاقَيْنِ فَلَا أَحسب عُوَيْمِر إِلَّا قَدْ صَدَقَ عَلَيْهَا وَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أُحَيْمِرَ كَأَنَّهُ وَحَرَةٌ فَلَا أَحْسِبُ عُوَيْمِرًا إِلَّا قَدْ كَذَبَ عَلَيْهَا فَجَاءَتْ بِهِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِي نَعْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ تَصْدِيقِ عُوَيْمِرٍ فَكَانَ بَعْدُ يُنْسَبُ إِلَى أمه

عن سهل بن سعد الساعدي رضي الله عنه قال: ان عويمر العجلاني قال: يا رسول الله ارايت رجلا وجد مع امراته رجلا ايقتله فيقتلونه؟ ام كيف افعل؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «قد انزل فيك وفي صاحبتك فاذهب فات بها» قال سهل: فتلاعنا في المسجد وانا مع الناس عند رسول الله صلى الله عليه وسلم فلما فرغا قال عويمر: كذبت عليها يا رسول الله ان امسكتها فطلقتها ثلاثا ثم قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: انظروا فان جاءت به اسحم ادعج العينين عظيم الاليتين خدلج الساقين فلا احسب عويمر الا قد صدق عليها وان جاءت به احيمر كانه وحرة فلا احسب عويمرا الا قد كذب عليها فجاءت به على النعت الذي نعت رسول الله صلى الله عليه وسلم من تصديق عويمر فكان بعد ينسب الى امه

ব্যাখ্যা: ‘‘লি‘আন’’ অর্থাৎ একে অপরে অভিশাপ দেয়া। ইমাম নববী লিখেন, ‘‘লি‘আন’’-কে লি‘আন বলার কারণ হলো, স্বামী স্ত্রী উভয় এর মাধ্যমে একে অপর থেকে দূরে সরে যায় এবং তাদের মাঝে বিবাহ চিরস্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যায়। ফাতহুল বারীতে লিখেন, লি‘আনকে এজন্য লি‘আন বলা হয় যেহেতু স্বামী বলে, ‘‘আমার ওপর আল্লাহর লা‘নাত, যদি আমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হই।’’

(قدْ أُنْزِلُ فِيكَ وَفِىْ صَاحِبَتِكَ فَاذْهَبْ فَأْتِ بِهَا) অর্থাৎ তোমার ও তোমার স্ত্রীর বেলায় হুকুম অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব তুমি যাও, গিয়ে তাকে নিয়ে এসো।
লি‘আনের বিধান সংক্রান্ত আয়াত কার বেলায় নাযিল হয়- এ নিয়ে ‘উলামাহ্ কিরামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কারো কারো মতে লি‘আনের বিধান সংক্রান্ত আয়াত ‘উওয়াইমির আল ‘আজলানীর বেলায় নাযিল হয়। বর্ণিত হাদীসটি তাদের মতের পক্ষে দলীল। তবে জুমহূর বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিমের মতে হিলাল ইবনু উমাইয়াহ্-এর ঘটনা কেন্দ্র করে লি‘আনের আয়াত অবতীর্ণ হয়। কেননা সহীহ মুসলিমে হিলাল ইবনু উমাইয়াহ্-এর ঘটনার বিবরণে রয়েছে, (وَكَانَ أَوَّلَ رَجُلٍ لَاعَنَ فِي الْإِسْلَامِ) অর্থাৎ ‘‘তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামে লি‘আন করেন।’’

বর্ণনার মাঝে উভয় সম্ভাবনা থাকায় ‘আল্লামা ইবনু হাজার লিখেন, ‘‘আমি বলি, যথাসম্ভব উভয়ের বেলায় অবতীর্ণ হয়েছে। সম্ভবত উভয়ের প্রশ্ন পাশাপাশি দুই সময়ে সময়ে ছিল। তাই উভয়ের বেলায় লি‘আনের আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে, যদিও হিলালের ঘটনা আগের। তাই ‘উওয়াইমির-এর বেলায় অবতীর্ণ হয়েছে বা হিলাল ইবনু উমাইয়াহ্-এর অবতীর্ণ হয়েছে উভয় কথায়ই সঠিক। তবে হিলাল প্রথমে লি‘আনের বিধান কার্যকর করেছেন। লি‘আন কিভাবে করতে হবে তার বিবরণ লি‘আন সংক্রান্ত আয়াত অর্থাৎ সূরা আন্ নূর-এর ৪ নং আয়াতে রয়েছে।
 

(فَطَلَّقَهَا ثَلَاثًا) অতএব আমি তাকে তিন তালাক দেই। হাদীসের এই অংশ থেকে বুঝা যায়, লি‘আন সংঘটিত হয়ে গেলে কেবল লি‘আনে বিচ্ছেদ ঘটবে না। কেবল লি‘আনে বিচ্ছেদ ঘটলে তালাক দেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। হয় তালাক দিতে হবে অথবা কাযী বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিবে। পরবর্তী বিবরণে আমরা দেখব যে, (فَفَرَّقَ بَيْنَهُمَا) অর্থাৎ অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন। এর আলোকে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে স্বামীর তালাক বা কাযীর ফায়সালা ছাড়া বিচ্ছেদ ঘটবে না।

তবে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈসহ জুমহূর ‘উলামার মতে কেবল লি‘আনেই বিচ্ছেদ ঘটে যাবে। কেননা পরবর্তীতে আরেকটি সহীহ বর্ণনায় আমরা দেখব যে, স্বামী স্ত্রী উভয়ে লি‘আন করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ «حسابكما على الله أحدكما كاذب لا سبيل لك عليها» অর্থাৎ তোমাদের হিসাব আল্লাহ তা‘আলার ওপর, তোমাদের একজন মিথ্যা, তোমার জন্য স্ত্রীকে পাওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, লি‘আনের মাধমেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। বিচ্ছেদ ঘটে যাওয়ার পর কাযী তাদেরকে ভালোভাবে পৃথক করে দিবেন। বিচ্ছেদ ঘটার কারণেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরক পৃথক করে দিয়েছেন। আর ‘উওয়াইমির নিজ থেকে আবার তালাক দেয়ার কারণে বিচ্ছেদ ঘটেনি এর কোনো ইঙ্গিত হাদীসে নেই। হয়ত তার অতিরিক্ত ঘৃণাবোধ সৃষ্টি হওয়ার কারণে তিনি অধিক সতর্কতাবশত তিন তালাক দিয়ে দেন, যাতে কোনো সময় এই স্ত্রীকে সংসারে নিয়ে আসার আর কোনো ধরনের সুযোগ বের না হয়।
(ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৪৫; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৯২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা'দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩০৫-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর মাঝে লি’আনের বিধান কার্যকর করে দিলেন, কারণ সন্তানকে পুরুষলোকটি স্বীয় সন্তান বলে অস্বীকৃতি জানাল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সন্তানটি স্ত্রীলোকটির কাছে অর্পণ তথা মায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

অত্র হাদীসে আরও উল্লেখ আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষটিকে উপদেশ ও ভীতিপ্রদর্শন করে বললেন, জেনে রাখ, দুনিয়ার শাস্তির তুলনায় আখিরাতের ’আযাব অতি কঠিন। অতঃপর স্ত্রীলোকটিকে ডেকে অনুরূপভাবে উপদেশ ও ভীতিপ্রদর্শন করে বললেন, জেনে রাখ, দুনিয়ার শাস্তির তুলনায় আখিরাতের ’আযাব অতি সামান্য। কিন্তু তারা উভয়ে তাদের নিজ নিজ রায় ও জিদের উপর অবিচল থাকল, ফলে লি’আন কার্যকরী করতে হলো।

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَاعن بَين رجل وَامْرَأَته فانتقى مِنْ وَلَدِهَا فَفَرَّقَ بَيْنَهُمَا وَأَلْحَقَ الْوَلَدَ بِالْمَرْأَةِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي حَدِيثِهِ لَهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَهُ وَذَكَّرَهُ وَأَخْبَرَهُ أَنَّ عَذَابَ الدُّنْيَا أَهْوَنُ مِنْ عَذَابِ الْآخِرَةِ ثُمَّ دَعَاهَا فَوَعَظَهَا وَذَكَّرَهَا وَأَخْبَرَهَا أَنَّ عَذَاب الدُّنْيَا أَهْون من عَذَاب الْآخِرَة

وعن ابن عمر رضي الله عنهما ان النبي صلى الله عليه وسلم لاعن بين رجل وامراته فانتقى من ولدها ففرق بينهما والحق الولد بالمراة. متفق عليه. وفي حديثه لهما ان رسول الله صلى الله عليه وسلم وعظه وذكره واخبره ان عذاب الدنيا اهون من عذاب الاخرة ثم دعاها فوعظها وذكرها واخبرها ان عذاب الدنيا اهون من عذاب الاخرة

ব্যাখ্যা: (فَانْتَفٰى مِنْ وَلَدِهَا) হাদীসের এই অংশ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, এখানে লি‘আনের ঘটনাটি ঘটেছিল বাচ্চাকে অস্বীকার করা নিয়ে। অর্থাৎ লোকটি সরাসরি স্ত্রীর ওপর যিনার অভিযোগ আরোপ করেনি, বরং নিজ স্ত্রীর সন্তানটিকে তার নয় বলে দাবী করার ভিত্তিতে লি‘আনের ঘটনা ঘটে। অতএব এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, নিজ বাচ্চাকে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে লি‘আন বৈধ।
 

(فَفَرَّقَ بَيْنَهُمَا) অর্থাৎ অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন। হাদীসের এই অংশ দিয়ে ইমাম আবূ হানীফাহ্ দলীল দেন যেন কেবল লি‘আন দ্বারা বিচ্ছেদ ঘটবে না। (এ সংক্রান্ত আলোচনা আমরা ইতোপূর্বে করে এসেছি।)

(وَأَلْحَقَ الْوَلَدَ بِالْمَرْأَةِ) সন্তানটিকে মায়ের সাথে সম্পৃক্ত করে দেন। অর্থাৎ সন্তানের সম্পর্ক পিতার দিকে না থেকে নাকচ করে মায়ের দিকে করে দেন এবং একক মায়ের জন্য বানিয়ে দেন। এ ধরনের সন্তানকে মায়ের দিকে সম্পৃক্ত করে ডাকা হবে এবং মা ও সন্তানের মাঝে মীরাসের বিধান কার্যকর হবে। সহীহ মুসলিমে সাহল (রাঃ)-এর বিবরণে রয়েছে, فَكَانَ ابْنُهَا يُدْعٰى إِلٰى أُمِّه ثُمَّ جَرَتْ السُّنَّةُ أَنَّه يَرِثُهَا وَتَرِثُ مِنْهُ مَا فَرَضَ اللّٰهُ لَهَا

‘‘অতএব তার ছেলেকে মায়ের দিকে সম্পৃক্ত করে ডাকা হতো। এরপর সুন্নাহ চালু হয় যে, সে মায়ের ওয়ারিস হয় এবং মা তার ওয়ারিস হয়, আল্লাহ মায়ের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন।’’ (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৩১৫; সহীহ মুসলিম- অধ্যায় : লি‘আন, হাঃ ২৭৪১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩০৬-[৩] উক্ত রাবী [ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লি’আনকারী স্বামী-স্ত্রী উভয়কে বলেছেনঃ তোমাদের প্রকৃত বিচার (কিয়ামত দিবসে) আল্লাহই করবেন, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে একজন মিথ্যাবাদী (কিন্তু তোমরা তা স্বীকার করছ না)। তোমার সাথে তার আর কোনো সম্পর্ক থাকল না। এটা শুনে স্বামী বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! (মোহরে প্রদত্ত) আমার ধন-সম্পদের কি হবে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাতে তোমার কোনো অধিকার থাকবে না। কেননা তুমি যদি (ব্যভিচারের দাবিতে) সত্য বলে থাক, তবে ইতঃপূর্বে যে স্ত্রীর স্বাদ গ্রহণ করেছ তার বিনিময় প্রদান হয়ে গেছে। আর যদি মিথ্যারোপ করে থাক, তবে সে ধন-সম্পদ তোমার নিকট ফেরতের কথাই আসবে না, কাজেই এর দাবী তো করতেই পার না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِلْمُتَلَاعِنَيْنِ: «حِسَابُكُمَا عَلَى اللَّهِ أَحَدُكُمَا كَاذِبٌ لَا سَبِيلَ لَكَ عَلَيْهَا» قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَالِي قَالَ: «لَا مَالَ لَكَ إِنْ كُنْتَ صَدَقْتَ عَلَيْهَا فَهُوَ بِمَا اسْتَحْلَلْتَ مِنْ فَرْجِهَا وَإِنْ كُنْتَ كَذَبْتَ عَلَيْهَا فَذَاكَ أَبْعَدُ وَأبْعد لَك مِنْهَا»

وعنه ان النبي صلى الله عليه وسلم قال للمتلاعنين: «حسابكما على الله احدكما كاذب لا سبيل لك عليها» قال: يا رسول الله مالي قال: «لا مال لك ان كنت صدقت عليها فهو بما استحللت من فرجها وان كنت كذبت عليها فذاك ابعد وابعد لك منها»

ব্যাখ্যা: (حِسَابُكُمَا عَلَى اللّٰهِ أَحَدُكُمَا كَاذِبٌ) অর্থাৎ তোমাদের দু’জনের প্রকৃত হিসাব, মূল বিষয় উদঘাটন এবং এর প্রতিফল দেয়া আল্লাহ তা‘আলার ওপর। কেননা দু’জনের একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। নিজ স্বীকারোক্তি ছাড়া তা জানার আমাদের ব্যবস্থা নেই। তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা জানেন এবং তিনি প্রকৃত হিসাব নিতে পারেন। এই হাদীস থেকে আমরা এও বুঝতে পারি যে, গায়ব বা অদৃশ্যের জ্ঞানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্য জ্ঞানের ক্ষমতা রাখেন না। তার সম্মুখে উপস্থিত দুই ব্যক্তির মাঝে কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যাবাদী এইটুকু যেখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জ্ঞানের ক্ষমতা দিয়ে বলতে পারছেন না সেখানে তিনি সার্বিক গায়বের জ্ঞানের অধিকারী কিভাবে হতে পারেন? আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউই গায়বের জ্ঞানের অধিকারী নন, এর প্রমাণে কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য বক্তব্য রয়েছে।

(لَا سَبِيلَ لَكَ عَلَيْهَا) অর্থাৎ তাকে পাওয়ার তোমার আর কোনো রাস্তা নেই। হাদীসের এই অংশটুকু তাদের দলীল যারা বলেন, লি‘আন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। পৃথক তালাক দেয়া বা বিচারকের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এ সম্পর্কে ইতোপূর্বে আলোচনা হয়েছে।
 

(يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ! مَالِىْ) হে আল্লাহর রসূল! আমার সম্পদ। অর্থাৎ তার অনৈতিক আচরণে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে গেল। এখন আমি তাকে বিবাহ করতে যে খরচ করেছি, মহর ব্যয় করেছি তার কি হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কথার উত্তরে বললেন, তুমি সত্যবাদী হলে তোমার সম্পদ তাকে এতদিন ভোগ করার পিছনে খরচ হয়েছে। তাই তুমি কোনো সম্পদ পাবে না। বিয়ে করে ভোগের বিনিময়ে তা কেটে গেছে। আর তুমি মিথ্যাবাদী হলে তা পাওয়া তো অনেক দূরের কথা অর্থাৎ তা পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩০৭-[৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন হিলাল ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) তার স্বীয় স্ত্রীর ওপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করেন যে, সে শরীক ইবনু সাহমাহ্-এর সাথে ব্যভিচারের লিপ্ত হয়েছে। এটা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ কর, অন্যথায় তোমার পিঠে (মিথ্যা অপবাদের দরুন) শাস্তি দেয়া হবে। তিনি উত্তরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যখন কোনো স্বামী স্বীয় স্ত্রীর সাথে কোনো পুরুষকে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখতে পাবে, তখন কি সে (ত্বলাক (তালাক)ের জন্য) সাক্ষ্য-প্রমাণ সন্ধানে বের হবে? কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে থাকলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে এসো, অন্যথায় তোমার পিঠে (মিথ্যা অপবাদের) শাস্তি দেয়া হবে। হিলাল বললেন, শপথ সেই আল্লাহর! যিনি আপনাকে নবীরূপে সত্যায়িত করে পাঠিয়েছেন। আমার (অভিযোগে) আমি নিশ্চয় সত্যবাদী। অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা এমন বিধান নাযিল করবেন, যার দরুন আমার পিঠ (অপবাদের) কোড়া হতে রক্ষা করবেন। (রাবী বলেন) অতঃপর জিবরীল (আঃ) অবতরণ করে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর) আল্লাহর আয়াত নাযিল করলেন- অর্থাৎ- ’’এবং যারা নিজের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে ..... তার স্বামী সত্যবাদী হলে’’- (সূরা আন্ নূর ২৪ : ৬-৯ আয়াত) পর্যন্ত পৌঁছলেন।

এরপর হিলাল এসে (স্ত্রীসহ) লি’আনের জন্য প্রস্তুত হলো। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কে বলতে লাগলেন- জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্যে একজন মিথ্যাবাদী। অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ কি তওবা্ করতে প্রস্তুত? (উভয়ের অনড় অবস্থানের দরুন) অতঃপর তার স্ত্রী উঠে দাঁড়াল এবং লি’আনের সাক্ষ্য দিল। কিন্তু যখন পঞ্চমবারে সে উদ্যত হলো, তখন উপস্থিত লোকেরা তাকে থামাতে চেষ্টা করে বলল, সাবধান! এবারের শপথে আল্লাহর গযব অবধারিত (তাই বিরত হও)। এতে স্ত্রীলোকটি থেমে গেল এবং স্থির হয়ে গেল। আমাদের ধারণা হতে লাগল যে, স্ত্রীলোকটি স্বীয় দাবি হতে সরে যাবে। কিন্তু পরক্ষণেই এই বলে লি’আন করল যে, চিরকালের জন্য আমি আমার বংশের মর্যাদাহানী করব না, এ কথা বলে সে পঞ্চমবারের শপথও শেষ করল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দেখে রাখবে, যদি সে কালো ভ্রূযুক্ত ও বড় বড় নিতম্ব এবং মোটা নলাবিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তবে সন্তানটি শরীক ইবনু সাহমাহ্-এর। পরিশেষে স্ত্রীলোকটি এরূপ বর্ণনার সন্তানই প্রসব করল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আল্লাহর কিতাবের হুকুম-আহকাম জারী না হতো, তবে আমি ঐ স্ত্রীলোকটিকে নিদারুণ শিক্ষা দিতাম। (বুখারী)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ هِلَالَ بْنَ أُمَيَّةَ قَذَفَ امْرَأَتَهُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَرِيكِ بْنِ سَحْمَاءَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْبَيِّنَةَ أَوْ حَدًّا فِي ظَهْرِكَ» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِذَا رَأَى أَحَدُنَا عَلَى امْرَأَتِهِ رَجُلًا يَنْطَلِقُ يَلْتَمِسُ الْبَيِّنَةَ؟ فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْبَيِّنَةَ وَإِلَّا حَدٌّ فِي ظَهْرِكَ» فَقَالَ هِلَالٌ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ إِنِّي لَصَادِقٌ فَلْيُنْزِلَنَّ اللَّهُ مَا يُبَرِّئُ ظَهْرِي مِنَ الْحَدِّ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ وَأنزل عَلَيْهِ: (وَالَّذين يرْمونَ أَزوَاجهم)
فَقَرَأَ حَتَّى بَلَغَ (إِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ)
فَجَاءَ هِلَالٌ فَشَهِدَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ أَنَّ أَحَدَكُمَا كَاذِبٌ فَهَلْ مِنْكُمَا تَائِبٌ؟» ثُمَّ قَامَتْ فَشَهِدَتْ فَلَمَّا كَانَتْ عِنْدَ الْخَامِسَةِ وَقَفُوهَا وَقَالُوا: إِنَّهَا مُوجِبَةٌ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَتَلَكَّأَتْ وَنَكَصَتْ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهَا تَرْجِعُ ثُمَّ قَالَتْ: لَا أَفْضَحُ قَوْمِي سَائِرَ الْيَوْمِ فَمَضَتْ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبْصِرُوهَا فَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أَكْحَلَ الْعَيْنَيْنِ سَابِغَ الْأَلْيَتَيْنِ خَدَلَّجَ السَّاقِينَ فَهُوَ لِشَرِيكِ بْنِ سَحْمَاءَ» فَجَاءَتْ بِهِ كَذَلِكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْلَا مَا مَضَى مِنْ كِتَابِ اللَّهِ لَكَانَ لِي وَلَهَا شَأْن» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عباس: ان هلال بن امية قذف امراته عند النبي صلى الله عليه وسلم بشريك بن سحماء فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «البينة او حدا في ظهرك» فقال: يا رسول الله اذا راى احدنا على امراته رجلا ينطلق يلتمس البينة؟ فجعل النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «البينة والا حد في ظهرك» فقال هلال: والذي بعثك بالحق اني لصادق فلينزلن الله ما يبرى ظهري من الحد فنزل جبريل وانزل عليه: (والذين يرمون ازواجهم) فقرا حتى بلغ (ان كان من الصادقين) فجاء هلال فشهد والنبي صلى الله عليه وسلم يقول: «ان الله يعلم ان احدكما كاذب فهل منكما تاىب؟» ثم قامت فشهدت فلما كانت عند الخامسة وقفوها وقالوا: انها موجبة فقال ابن عباس: فتلكات ونكصت حتى ظننا انها ترجع ثم قالت: لا افضح قومي ساىر اليوم فمضت وقال النبي صلى الله عليه وسلم: «ابصروها فان جاءت به اكحل العينين سابغ الاليتين خدلج الساقين فهو لشريك بن سحماء» فجاءت به كذلك فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «لولا ما مضى من كتاب الله لكان لي ولها شان» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ يَعْلَمُ أَنَّ أَحَدَكُمَا كَاذِبٌ فَهَلْ مِنْكُمَا تَائِبٌ؟) অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহ জানেন নিশ্চয় তোমাদের একজন মিথ্যুক। তোমাদের মধ্যে কি কোনো একজন তাওবাকারী আছে?’’ অর্থাৎ তোমাদের উভয়ে জিদের উপর না থেকে প্রকৃত কথা স্বীকার করে নিলে হয়। দু’জনের একজন নিশ্চিত মিথ্যুক। বাহযত মনে হয় রসূলুল্লাহ এই কথা লি‘আন কার্যকর হওয়ার পর বলেছেন। উদ্দেশ্য হলো যে, মিথ্যুক যেন তাওবাহ্ করে নেয়। আবার লি‘আনের পূর্বেই তাদেরকে সতর্ক করার জন্যও বলতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে যে মিথ্যুক সে যেন লি‘আন দ্বারা নিজের উপর অভিশাপ ডেকে না আনে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(إِنَّهَا مُوجِبَةٌ) নিশ্চয় এটা সাব্যস্তকারী। অর্থাৎ এভাবে নিজের ওপর অভিশাপ দেয়া নিজের বিপদ ডেকে আনা। যে লি‘আনের মাধ্যমে নিজের ওপর অভিশাপের দু‘আ করে তা কার্যকর হয়ে যায়। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে থামাও। কেননা সে এর পরিণতি লক্ষ্য না করে লি‘আন করেই যাচ্ছে।

হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চয় বুঝে নিয়েছিলেন যে, প্রকৃত মিথ্যাবাদী হিলাল নয়, বরং তার স্ত্রীই মিথ্যাবাদী। বিভিন্ন আলামত থেকে বিষয়টি মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে হিলালের দাবীর উপর আয়াত নাযিল হওয়া তার একটি প্রমাণ। সত্য কথা বলে সাক্ষী নিয়ে আসতে না পারার অপরাধে তিনি যেন অপরাধী হয়ে শাস্তি ভোগ না করেন, তাই আল্লাহ তার কথার পর পরই এ সংক্রান্ত বিধান নাযিল করেন। বিভিন্ন নিদর্শন থেকে হিলালের স্ত্রী মিথ্যাবাদী হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও যিনা সাব্যসেত্মর শারী‘আত দলীল না থাকায় তার ওপর যিনার বিধান আরোপ করা হয়নি। এ থেকে বুঝা যায়, বিচারককে সর্বদা দলীলের উপর নির্ভর করতে হবে। যে বস্তু প্রমাণের জন্য যে দলীল শারী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত সেই দলীল ছাড়া অন্য কোনা আকার ইঙ্গিতে কোনো কিছু বুঝা গেলে এর উপর নির্ভর করে কোনো ফায়সালা করা যাবে না।

(لَا أَفْضَحُ قَوْمِىْ سَائِرَ الْيَوْمِ) অর্থাৎ এখন যিনার স্বীকারোক্তি করে আমার গোত্রকে সর্বদার জন্য লাঞ্ছিত করব না। অর্থাৎ যিনা স্বীকার করলে আমাকে ও আমার গোত্রকে লাঞ্ছনার কালিমা লেপন করতে হবে। এখান থেকে জানা যায় যে, হিলালের দাবীর ভিত্তিতে যিনার স্বীকার না করা কেবল তার দুনিয়াবী লাঞ্ছনা থেকে বাঁচার কারণে ছিল। দুনিয়ার স্বার্থ আখিরাতের তুলনায় বড় করে দেখার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাসীহাত তার কাছে কাজে আসেনি।

(فَإِنْ جَاءَتْ بِه أَكْحَلَ الْعَيْنَيْنِ) ‘‘যদি সে জন্ম দেয় কাজলকালো চোখওয়ালা.....।’’ হাদীসের এই অংশ থেকে বাহযত বুঝা যায় যে, সাদৃশ্য থেকে কারো বংশ নির্বাচন করা যেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু নিশ্চিত নয়, তাই কেবল সাদৃশ্যের মাধ্যমে কারো বংশ সাব্যস্ত হবে না। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বাচ্চাকে একজনের দিকে সম্পৃক্ত করলেও বিষয়টিকে একটি অনুমানমূলক হিসেবে ধরা হয়েছে। কেননা সাদৃশ্য বংশের চূড়ান্ত ফায়সালা হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বাচ্চা প্রসবের অপেক্ষা করে বাচ্চা দেখে লি‘আন না করেই হিলালের স্ত্রীকে যিনাকারিণী সাব্যস্ত করে যিনার বিধান জারী করতে পারতেন। রসূলের এমনটি না করাই প্রমাণ করে, তাঁর এ কথাটি একটি ধারণার উপর ছিল। যদিও রসূলের ধারণা সঠিক। এছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর মাধ্যমে বিষয়টি জানার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু শারী‘আত দলীল না থাকায় যিনার বিধান কার্যকর করা যায়নি। তাই এ হাদীসের আলোকে বাচ্চার সাদৃশ্যতা দেখে কাউকে তার দিকে সম্পৃক্ত করা যাবে না এবং কোনো মেয়েকে যিনাকারিণী সাব্যস্ত করা যাবে না।

(لَوْلَا مَا مَضٰى مِنْ كِتَابِ اللّٰهِ) যদি আল্লাহর কিতাবে এর হুকুম না যেত, অর্থাৎ যদি আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে যিনার বিধান ও তা সাব্যসেত্মর নির্ধারিত নীতি না থাকত তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটা ব্যবস্থা নিতেন। কারণ বিভিন্ন আলামত দ্বারা রসূলের কাছে হিলালের স্ত্রী যিনাকারিণী বলে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যিনার দণ্ডবিধি প্রয়োগের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত হুকুম রয়েছে। তিনি এর বাহিরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৪৭)

সতর্কতাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত নাবী ও রসূল। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ইজতিহাদ গবেষণা করে মাসআলাহ্ দেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। কিন্তু ইজতিহাদ বা গবেষণার আলোকে যে হুকুম তিনি দিবেন তা কুরআনের হুকুমের বাহিরে চলে যায় কিনা এ ক্ষেত্রে তার এত ভয় হলে আমরা যারা বিভিন্ন ওজুহাত ও যুক্তির আলোকে কুরআনের ব্যাখ্যার নামে অপব্যাখ্যা করি এবং কুরআনের খেলাফ বিধান দেই তাদের চিন্তা করা উচিত এবং আল্লাহ ও আখিরাতের হিসাবের ভয় করে এমন কর্ম থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩০৮-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (খাযরাজ গোত্রের নেতা) সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জানতে চাইলেন, যদি কোনো পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখি, তবে চারজন সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতীত তাকে কি কিছু বলব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন- হ্যাঁ (কিছুই বলবে না)। সা’দ(রাঃ) বললেন, কক্ষনো সম্ভব নয়! সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সত্য নবীরূপে পাঠিয়েছেন, আমি তো চারজন সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পূর্বেই তাকে তরবারির আঘাতে নিঃশেষ করে দিব। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আনসারীগণের উদ্দেশে) বললেন, শুন! তোমাদের নেতা কি বলে? নিশ্চয় সা’দ অত্যন্ত আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, আর আমি তার অপেক্ষা অধিক আত্মমর্যাদাশীল। আর আল্লাহ তা’আলা তো আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। (মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ: لَوْ وَجَدْتُ مَعَ أَهْلِي رَجُلًا لَمْ أَمَسَّهُ حَتَّى آتِيَ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» قَالَ: كَلَّا وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ إِنْ كُنْتُ لَأُعَاجِلُهُ بِالسَّيْفِ قَبْلَ ذَلِكَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْمَعُوا إِلَى مَا يَقُولُ سَيِّدُكُمْ إِنَّهُ لَغَيُورٌ وَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ وَالله أغير مني» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة قال: قال سعد بن عبادة: لو وجدت مع اهلي رجلا لم امسه حتى اتي باربعة شهداء؟ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «نعم» قال: كلا والذي بعثك بالحق ان كنت لاعاجله بالسيف قبل ذلك قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اسمعوا الى ما يقول سيدكم انه لغيور وانا اغير منه والله اغير مني» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (لَمْ أَمَسَّه حَتّٰى اٰتِىَ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ؟) বর্ণিত বাক্যটিতে সুদূর পরাহতমূলক প্রশ্ন চিহ্ন হামযাহ হরফ উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ আমার স্ত্রীকে পর পুরুষের সাথে পাওয়ার পরও কি আমি চার সাক্ষী না নিয়ে আসা পর্যন্ত তাকে স্পর্শ করব না? অর্থাৎ তার শরীরে হাত তুলব না? তাকে প্রহার করব না? সাহাবীর আত্মমর্যাদার কাছে কাজটি অনেক বড় মনে হলে তিনি আশ্চর্য হয়ে এই প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ। অর্থাৎ এমনটি করা যাবে না। কেননা এর জন্য নির্ধারিত বিধান রয়েছে।

হাদীসের এই অংশ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, যে আইন প্রয়োগের যে নীতি বা বিধান রয়েছে তা সেই নীতির আলোকেই চলবে এবং সেভাবেই প্রয়োগ করতে হবে। আইন বা কানুনকে কখনো নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। সবাই নিজের হাতে আইনকে তুলে নিলে সমাজের কি দুরাবস্থা হবে তা একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়।
(كلا) অর্থাৎ কখনো এমন হতে পারে না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার উপর এমনটি বলা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। তবে মানুষ অনেক সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনিচ্ছায় কিছু ঘটে গেলে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত। সা‘দ ইবনু ‘উবাদার ঘটনাটি এমনই ছিল। ইমাম নববী (রহঃ) মাওয়ার্দী এবং অন্যান্যদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘‘তার কথা ‘কখনো না...’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাকে প্রত্যাখ্যান করতঃ ছিল না, রসূলের নির্দেশের বিরোধবশত ছিল না। এটি কেবল মানুষের সেই সময়কার অনিয়ন্ত্রিত অবস্থার খবর দেয়া, যখন সে কোনো বে-গানা পুরুষকে তার স্ত্রীর সাথে দেখে এবং ক্রোধ তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এমতাবস্থায় সে লোক দ্রুত তরবারিই ব্যবহার করবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতিবাদের কারণ বুঝতে পেরেছেন। অর্থাৎ সে এ কথা রসূলের কথার বিরোধী হয়ে বলেনি বরং আত্মমর্যাদার আবেগে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বলেছে। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এমন কথার ওযর তুলে ধরে বলেন, তোমাদের সাথীর আত্মমর্যাদা দেখো। আমি আরো বেশি আত্মমর্যাদাবান এবং আল্লাহ তা‘আলা আমার চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবান। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৯৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩০৯-[৬] মুগীরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্(রাঃ) বললেন, আমি যদি কোনো পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখি, তবে আমি তরবারি দিয়ে হত্যা করে ফেলব। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, তোমরা কি সা’দ-এর আত্মমর্যাদবোধে বিস্ময় প্রকাশ করছ? আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি তো তার চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদসম্পন্ন, আর আল্লাহ তা’আলা তো আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাশীল। তাঁর আত্মসম্ভ্রমের দরুন তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অশ্লীল বিষয় হারাম বা নিষিদ্ধ করেছেন। আর মানুষের ওযর-আপত্তি দূর করা আল্লাহর চেয়ে অধিক কেউ ভালোবাসে না। এ কারণে তিনি মানুষের মাঝে সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী নবী-রসূলরূপে পাঠিয়েছেন, আর আল্লাহ সর্বাপেক্ষা নিজের প্রশংসা-স্তুতি শুনতে ভালোবাসেন বলে জান্নাতের ওয়া’দাহ্ দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنِ الْمُغِيرَةَ قَالَ: قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ: لَوْ رَأَيْتُ رَجُلًا مَعَ امْرَأَتِي لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفِحٍ فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَتَعْجَبُونَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ؟ وَاللَّهِ لَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ وَاللَّهُ أَغْيَرُ مِنِّي وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللَّهِ حَرَّمَ اللَّهُ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعُذْرُ مِنَ اللَّهِ مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ بَعَثَ الْمُنْذِرِينَ وَالْمُبَشِّرِينَ وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمِدْحَةُ مِنَ اللَّهِ وَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ وَعَدَ اللَّهُ الْجَنَّةَ»

وعن المغيرة قال: قال سعد بن عبادة: لو رايت رجلا مع امراتي لضربته بالسيف غير مصفح فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «اتعجبون من غيرة سعد؟ والله لانا اغير منه والله اغير مني ومن اجل غيرة الله حرم الله الفواحش ما ظهر منها وما بطن ولا احد احب اليه العذر من الله من اجل ذلك بعث المنذرين والمبشرين ولا احد احب اليه المدحة من الله ومن اجل ذلك وعد الله الجنة»

ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ-এর কথাকে প্রশংসনীয়রূপে দেখলেন; কেননা তার কথাটি আত্মমর্যাদার উপর আঘাত আসার ভিত্তিতে ছিল। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলা আত্মমর্যাদার ব্যাখ্যা দেন। হাদীসের আলোকে এর সারমর্ম হলো, গইরত বা আত্মমর্যাদা হচ্ছে, ব্যক্তি তারা মালিকানাধীন বস্তুতে অন্যকে হস্তক্ষেপ করতে দেখলে অপছন্দ করে এবং রাগাম্বিত হয়। মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ যে, কেউ তার স্ত্রীর দিকে অন্যকে তাকাতে দেখলে বা স্ত্রীর সাথে কোনো কর্মে লিপ্ত দেখলে মানুষ রাগ করে; কেননা এতে তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়। তদ্রূপ আল্লাহর তা‘আলার মালিকানাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ আল্লাহর ক্রোধের কারণ। আল্লাহ তাঁর এই আত্মমর্যাদার কারণেই অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। নিজের অধিকারভুক্ত ব্যক্তির সাথে অশ্লীলতা দেখলে মানুষের আত্মমার্যায় যেমন আঘাত হানে, তার চেয়ে বেশি আঘাত হানে আল্লাহর আত্মমর্যাদায়; কেননা সবই আল্লাহর প্রকৃত মালিকানাধীন। আর এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সর্বপ্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। মালিকানার আধিক্যের ভিত্তিতে আল্লাহর আত্মমর্যাদাও তেমন অধিক।

(وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمِدْحَةُ مِنَ اللّٰهِ) অর্থাৎ ওযুহাতকে আল্লাহর চেয়ে অধিক ভালোবাসে এমন কেউ নেই। এ কথার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ -কে তার কর্ম থেকে বারণ করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আল্লাহর তা‘আলার গাইরত অধিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি ওযর ভালোবাসেন। তার মর্যাদায় আঘাত হানলেও যে কোনো ওযুহাতে তিনি তা ছেড়ে দেন। পূর্ণ দলীল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত শাস্তি দেন না। শাস্তির দলীল পূর্ণ প্রতিষ্ঠার জন্য নাবী পাঠান, যারা সতর্ক করেন এবং সুসংবাদ দেন। তাই সা‘দ বা যে কারো জন্যেই আত্মমর্যাদায় আবেগপ্রবণ হয়ে দলীল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে কোনো কর্মতৎপরতায় যাওয়া ঠিক নয়। মোটকথা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ-এর আবেগপ্রবণ কথার উপর আপত্তি না করলেও সা‘দ যে ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন সেই কর্মে যাওয়ার উপর আপত্তি করেন। (ফাতহুল বারী ১৩ম খন্ড, হাঃ ৭৪১৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১০-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন; আর মু’মিন মাত্রই আত্মমর্যাদাবোধ থাকে। আল্লাহর আত্মমর্যাদা হলো, তিনি যা হারাম করেছেন, মু’মিন যেন তা হতে দূরে থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِن اللَّهَ تَعَالَى يَغَارُ وَإِنَّ الْمُؤْمِنَ يَغَارُ وَغَيْرَةُ اللَّهِ أَنْ لَا يَأْتِيَ الْمُؤْمِنُ مَا حَرَّمَ الله»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله تعالى يغار وان المومن يغار وغيرة الله ان لا ياتي المومن ما حرم الله»

ব্যাখ্যা: (وَغَيْرَةُ اللّٰهِ أَنْ لَّا يَأْتِىَ) সহীহুল বুখারীর কোনো কোনো নুসখায় বর্ণিত ইবারতটি এভাবে (لا) সহকারে এসেছে। অর্থাৎ আল্লাহর গাইরত হলো, মু’মিন আল্লাহ কর্তৃক হারামে লিপ্ত হবে না। কিন্তু বুখারীর অধিকাংশ নুসখায় ইবারতটি (لا) ছাড়া। ফাতহুল বারীতে লিখেন, বুখারীর অধিকাংশ বর্ণনাকারী (لا) ছাড়া বর্ণনা করেছেন। অনেকের মতে এটাই সঠিক। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫২২৩)

আমরা ইবারতটিকে (لا) সহ ধরে নিলে তার মর্ম হবে, আল্লাহর মর্যাদার রক্ষা হলো; মু’মিন আল্লাহ কর্তৃক হারামে লিপ্ত হবে না। আর (لا) ছাড়া হলে ইবারতটির মর্ম হবে, আল্লাহর মর্যাদার লঙ্ঘন হলো; মু’মিন আল্লাহ কর্তৃক হারামে লিপ্ত হওয়া। الله اعلم


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১১-[৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক বেদুইন এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আমার স্ত্রী এক কালো পুত্রসন্তান প্রসব করেছে, আমি তা (আমার সন্তান বলে) অস্বীকার করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি উট আছে? সে বলল, জি, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, উটগুলো কি রঙের? সে বলল, লাল রঙের। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এর মধ্যে কি লাল-কালো বা ছাই রঙেরও উট আছে? সে বলল, হ্যাঁ, সে রকম উটও আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, প্রশ্ন করলেন, তাহলে ঐ রঙের কিভাবে আসলো? সে বলল, বংশানুক্রমে এসেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার সন্তানও তো বংশানুক্রমে কালো বর্ণের লাভ করতে পারে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে সন্তান অস্বীকৃতির অনুমতি দিলেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْهُ أَنَّ أَعْرَابِيًّا أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إنَّ امْرَأَتي ولدَتْ غُلَاما أسودَ وَإِنِّي نكرته فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ لَكَ مِنْ إِبِلٍ؟» قَالَ: نَعَمْ قَالَ: «فَمَا أَلْوَانُهَا؟» قَالَ: حُمْرٌ قَالَ: «هَلْ فِيهَا مِنْ أَوْرَقَ؟» قَالَ: إِنَّ فِيهَا لَوُرْقًا قَالَ: «فَأَنَّى تُرَى ذَلِكَ جَاءَهَا؟» قَالَ: عِرْقٌ نَزَعَهَا. قَالَ: «فَلَعَلَّ هَذَا عِرْقٌ نَزَعَهُ» وَلَمْ يُرَخِّصْ لَهُ فِي الِانْتِفَاءِ مِنْهُ

وعنه ان اعرابيا اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: ان امراتي ولدت غلاما اسود واني نكرته فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «هل لك من ابل؟» قال: نعم قال: «فما الوانها؟» قال: حمر قال: «هل فيها من اورق؟» قال: ان فيها لورقا قال: «فانى ترى ذلك جاءها؟» قال: عرق نزعها. قال: «فلعل هذا عرق نزعه» ولم يرخص له في الانتفاء منه

ব্যাখ্যা: (عِرْقٌ نَزَعَهَا) বংশ সূত্রের প্রভাবে এমনটি হয়েছে। অর্থাৎ লাল উট থেকে ধূসরবর্ণ বাচ্চা জন্ম নেয়ার কারণ বংশ সূত্রের প্রভাবে হতে পারে। তথা উটের পূর্ব বংশের কোনো একটি এই বর্ণের থাকার প্রভাব অনেক পরেও পড়তে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেদুইনের কথার উত্তরে বললেন, উটের মতো এই সন্তানটিও বংশ সূত্রের প্রভাবে কালো হতে পারে। অর্থাৎ মায়ের মতো না হওয়া ছেলেটি এই মায়ের নয়- এ কথা প্রমাণ করে না।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, দুর্বল আলামত দ্বারা বাচ্চার বংশ অস্বীকার করা যাবে না। বরং বাচ্চার বংশ নাকচ করতে স্পষ্ট দৃঢ় দলীলের প্রয়োজন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

ইমাম নববী বলেনঃ বর্ণিত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, সন্তান তার পিতার দিকে সম্পৃক্ত হবে, যদিও পিতার বর্ণ ও সন্তানের বর্ণ এক না হয়। এমনকি যদি পিতা সাদা হয় এবং সন্তান কালো হয় বা এর বিপরীত পিতা কালো এবং সন্তান সাদা হয় তবুও সন্তান পিতার দিকেই সম্পৃক্ত হবে। কেবল বর্ণের কারণে বাচ্চার বংশ নাকচ করা যাবে না। এভাবে স্বামী স্ত্রী উভয় সাদা হয় এবং বাচ্চা কালো হয় বা এর বিপরীত হয় তবু বাচ্চাকে নাকচ করা যাবে না। কেননা তার পূর্বের কারো প্রভাব বাচ্চার উপর পড়তে পারে।
হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, বাচ্চা নাকচের ইঙ্গিতে তা নাকচ করা হয়েছে বলে গণ্য হবে না এবং অপবাদের দিকে ইঙ্গিত করলে অপবাদ করা হয়েছে বলে গণ্য হবে না।

বর্ণিত হাদীস থেকে ক্বিয়াস ও সাদৃশ্যের ধর্তব্য এবং উপমা পেশ করার প্রমাণ মিলে।

হাদীস থেকে বংশ নাকচ যাতে না হয় সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন এবং কেবল সম্ভাবনার দ্বারা বংশের সম্পৃক্ত করার প্রমাণ মিলে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৫০০)
ইমাম নববী (রহঃ)-এর কথা, হাদীসে ক্বিয়াস জায়িযের প্রমাণ মিলে অর্থাৎ মূল ক্বিয়াস জায়িয হওয়ার প্রমাণ মিলে। যদিও এখানে ক্বিয়াস দুর্বল হওয়ার কারণে এর ভিত্তিতে বাচ্চাকে নাকচ করা যাচ্ছে না।

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, কেবল সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বাচ্চাটি কার এ কথা প্রমাণিত হবে না। পূর্বে আমরা এই মাসআলার দিকে ইঙ্গিত করে এসেছি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১২-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরায়শ নেতা ’উতবাহ্ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (উহুদ যুদ্ধে কাফির অবস্থায় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দন্ত মুবারক শহীদ করেছিল) সে তার ভাই সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর নিকট মৃত্যুর পূর্বে ওয়াসিয়্যাত করে যায় যে, কুরায়শ নেতা যাম্’আহ্-এর দাসীর গর্ভজাত সন্তান আমার ঔরসের, তুমি তাকে (স্বীয় ভাইয়ের পুত্ররূপে) নিয়ে এসো। তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, মক্কা বিজয়ের সময়ে সা’দ তাকে গ্রহণ করে বলল, এ আমার ভাইয়ের পুত্র। এদিকে যাম্’আহ্-এর পুত্র ’আব্দ (অস্বীকৃতি জানিয়ে বাধা সৃষ্টি করল), এ তো আমার ভাই। অতঃপর উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলো।

সা’দ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার ভাই একে গ্রহণ করার জন্য আমাকে ওয়াসিয়্যাত করেছে। এর প্রতিবাদে ’আব্দ ইবনু যাম্’আহ্ বলল, আমার ভাই, আমার পিতার দাসীর গর্ভের সন্তান, আমার পিতার শয্যাসঙ্গিনীর উৎসে জন্মেছে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ’আবদ ইবনু যাম্’আহ্! সে তোমারই অংশিদারিত্ব হবে। শয্যা যার সন্তান তার আর ব্যভিচারীর জন্য পাথর (অর্থাৎ- বঞ্চিত হওয়া)। অতঃপর তিনি স্বীয় সহধর্মিণী সাওদাহ্ বিনতু যাম্’আহ্ (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বললেন, তুমি ঐ সন্তান হতে পর্দা করবে, সে তোমার ভাই নয়। কারণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুত্রটির মাঝে ’উত্বার গঠন-প্রকৃতির সাদৃশ্য দেখতে পান। অতঃপর ছেলেটি মৃত্যু পর্যন্ত সাওদার সামনে আসেনি। অপর এক বর্ণনায় আছে- হে ’আব্দ ইবনু যাম্’আহ্! ঐ ছেলেটি তোমার ভাই, কেননা সে তার পিতার শয্যাসঙ্গিনীর উৎসে জন্মগ্রহণ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ عُتْبَةُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ عَهِدَ إِلَى أَخِيهِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ: أَنَّ ابْنَ وَلِيدَةِ زَمْعَةَ مِنِّي فَاقْبِضْهُ إِلَيْكَ فَلَمَّا كَانَ عَامُ الْفَتْحِ أَخَذَهُ سَعْدٌ فَقَالَ: إِنَّهُ ابْنُ أَخِي وَقَالَ عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ: أَخِي فَتَسَاوَقَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ سَعْدٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَخِي كَانَ عَهِدَ إِلَيَّ فِيهِ وَقَالَ عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ: أَخِي وَابْن وليدة أبي وُلِدَ على فرَاشه فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هُوَ لَكَ يَا عَبْدُ بْنَ زَمْعَةَ الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ» ثُمَّ قَالَ لِسَوْدَةَ بِنْتِ زَمْعَةَ: «احْتَجِبِي مِنْهُ» لِمَا رَأَى مِنْ شَبَهِهِ بِعُتْبَةَ فَمَا رَآهَا حَتَّى لَقِيَ اللَّهَ وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «هُوَ أَخُوكَ يَا عَبْدُ بْنَ زَمَعَةَ مِنْ أَجْلِ أَنَّهُ وُلِدَ عَلَى فِرَاشِ أَبِيهِ»

وعن عاىشة قالت: كان عتبة بن ابي وقاص عهد الى اخيه سعد بن ابي وقاص: ان ابن وليدة زمعة مني فاقبضه اليك فلما كان عام الفتح اخذه سعد فقال: انه ابن اخي وقال عبد بن زمعة: اخي فتساوقا الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال سعد: يا رسول الله ان اخي كان عهد الي فيه وقال عبد بن زمعة: اخي وابن وليدة ابي ولد على فراشه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «هو لك يا عبد بن زمعة الولد للفراش وللعاهر الحجر» ثم قال لسودة بنت زمعة: «احتجبي منه» لما راى من شبهه بعتبة فما راها حتى لقي الله وفي رواية: قال: «هو اخوك يا عبد بن زمعة من اجل انه ولد على فراش ابيه»

ব্যাখ্যা: (الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ) ‘‘শয্যা যার সন্তান তার’’ অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রী থাকে বা তার মালিকানাধীন দাসী থাকে যাকে সে শয্যায় নিয়েছে, তবে সম্ভাবনাময় সময়ের ভিতর মেয়েটি বাচ্চা জন্ম দিলে সেই বাচ্চার বংশ উক্ত ব্যক্তির দিকে সম্পৃক্ত হবে, আর পিতা ও বাচ্চার মাঝে মীরাসের বিধান এবং পিতা পুত্রের অন্যান্য বিধান কার্যকর হবে। চাই বাচ্চা বর্ণ বা সাদৃশ্যে পিতার মতো হোক বা না হোক।

মহিলা কারো ফিরাশ বা শয্যা কেবল বিবাহের ‘আকদের মাধ্যমে হয়ে যায়। ‘আলিমগণ এ বিষয়ে ইজমা বা ঐকমত্য বর্ণনা করেন। তবে তারা শর্ত করেন যে, শয্যা প্রমাণিত হওয়ার পর সহবাসের সম্ভাবনা থাকতে হবে। যদি সহবাসের কোনো সম্ভাবনা না থাকে যেমন পশ্চিমা কোনো ব্যক্তি প্রাচ্য কোনো নারীকে বিবাহ করল কিন্তু তাদের কেউই কোনো সময় তাদের দেশ ত্যাগ করেনি, এমতাবস্থায় মেয়ে যদি সম্ভাবনাময় সময় তথা বিয়ের ছয় মাস পরেও বাচ্চা জন্ম দেয় তবে বাচ্চাটি ঐ ব্যক্তির হবে না। কেননা এটা তার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা হচ্ছে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ এবং সমস্ত ‘আলিমদের মত। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) সম্ভাবনার শর্ত করেননি। কেবল বিবাহের ‘আকদের মাধমে তার নিকট বাচ্চার বংশ প্রমাণ হয়ে যাবে যদি ঐ ব্যক্তি বাচ্চাকে তার বলে অস্বীকার না করে।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বাচ্চার বংশ প্রমাণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনে এই মত পোষণ করেছেন। অর্থাৎ একটি বাচ্চাকে জারজ না বলার সর্বোচ্চ উপায় খুঁজতে হবে। একান্ত নিরুপায় না হলে চেষ্টা করতে হবে তার বংশ প্রমাণের। এখানে বিয়েটাকেই একটি উপায় হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। তাই অসম্ভবের ক্ষেত্রেও লোকটি যদি বাচ্চাকে তার বলে গ্রহণ করে নেয় তবে তাকে জারজ বলে সমাজে আখ্যায়িত করে বংশ জড় কাটার চেয়ে ভালো।
এ হলো স্ত্রীর ক্ষেত্রে শয্যা প্রমাণিত হওয়া। তবে দাসীর ক্ষেত্রে শয্যা কেবল সহবাস দ্বার প্রমাণিত হবে। কোনো দাসী কারো মালিকানায় আসলে সে তার শয্যা বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ না উক্ত ব্যক্তি তার সাথে সহবাস করেছে।

(وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ) ‘‘আর ব্যভিচারী বঞ্চিত’’ বাক্যটির শাব্দিক অর্থ হলো যিনাকারীর জন্য পাথর। অর্থাৎ তার জন্য ব্যর্থতা ও বঞ্চিত হওয়া ছাড়া কিছু নেই। বাচ্চার বেলায় তার কোনো অধিকার নেই। ‘আরবরা তার জন্য পাথর এবং তার মুখে মাটি বলে উদ্দেশ্য করেন, তার জন্য ব্যর্থতা ও বঞ্চিত হওয়া ছাড়া কিছু নেই। কেউ কেউ বলেন, তার জন্য পাথর অর্থাৎ তার ওপর রজমের দণ্ডবিধি প্রয়োগ হবে। ইমাম নববী এই মত উল্লেখের পর বলেন, এটি দুর্বল; কেননা যে কোনো যিনাকারীকে রজম করা যায় না। রজম কেবল শারী‘আতে বিবাহিতা ব্যক্তির ওপর প্রয়োগ হয়। এছাড়া কেবল বাচ্চা নাকচের দ্বারা রজমের বিধান জারী হয় না। অথচ হাদীসটি বাচ্চা নাকচের বেলায় বর্ণিত হয়েছে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৫৭)

(احْتَجِبِىْ مِنْهُ) ‘‘তুমি তার থেকে পর্দা করো’’ এই হুকুমটি সতর্কতামূলক। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাকে ‘আব্দ বিন যাম্‘আহ্-এর বলে সাব্যস্ত করেছেন। এই হিসেবে সে সাওদার ভাই। কিন্তু মূল উসূলের ভিত্তিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে ‘আব্দ বিন যাম্‘আহ্-এর জন্য সাব্যস্ত করলেও সাদৃশ্যের ভিত্তিতে রসূলের পূর্ণ অনুমান ছিল ছেলেটি সা‘দ এর ভাইয়ের। তাই সাওদাকে পর্দা করতে বলেন।

এখানে আবারো প্রমাণিত হলো যে, সাদৃশ্যের ভিত্তিতে কোনো কিছু অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু এর ভিত্তিতে কোনো হুকুম প্রদান করা যাবে না। এখানে ছেলেটি সা‘দ এর ভাইয়ের বলে প্রবল ধারণায় না পৌঁছলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওদাকে পর্দা করার হুকুম দিতেন না। কিন্তু ছেলেকে সা‘দ-এর ভাইয়ের বলার দৃঢ় কোনো দলীল না থাকায় শয্যার দলীলের ভিত্তিতে ছেলেকে ‘আব্দ বিন যাম‘আহ্-এর জন্য সাব্যস্ত করলেন। অপরদিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমানে ছেলেটি সা‘দ এর ভাইয়ের হওয়ায় সাওদাকে পর্দা করতে বলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১৩-[১০] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত প্রফুল্লাচিত্তে আমার ঘরে ঢুকে বললেন, হে ’আয়িশাহ্! তুমি কি জান, মুজাযযিয মুদলিজী কি বলেছে? সে মসজিদে প্রবেশ করে দেখল যে, উসামাহ্ ও যায়দ (রাঃ) একই চাদরে মাথাসহ শরীর ঢেকে শুয়ে আছে, কিন্তু উভয়ের পা দেখা যাচ্ছিল। এটা দেখে সে বলে উঠল, এ পাগুলো একে অপরের অংশ। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْهَا قَالَتْ: دَخَلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ وَهُوَ مَسْرُورٌ فَقَالَ: أَيْ عَائِشَةُ أَلَمْ تَرَيْ أَنَّ مُجَزِّزًا الْمُدْلِجِيَّ دَخَلَ فَلَمَّا رَأَى أُسَامَةَ وَزَيْدًا وَعَلَيْهِمَا قطيفةٌ قد غطيَّا رؤوسَهُما وَبَدَتْ أَقْدَامُهُمَا فَقَالَ: إِنَّ هَذِهِ الْأَقْدَامَ بَعْضُهَا من بعضٍ

وعنها قالت: دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم وهو مسرور فقال: اي عاىشة الم تري ان مجززا المدلجي دخل فلما راى اسامة وزيدا وعليهما قطيفة قد غطيا رووسهما وبدت اقدامهما فقال: ان هذه الاقدام بعضها من بعض

ব্যাখ্যা: (وَهُوَ مَسْرُورٌ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হওয়ার কারণ ছিল, যায়দ রসূলের পালকপুত্র বলে সবাই জানত। যায়দ-এর সন্তান উসামাহ্ জন্ম নেয়ার পর উসামাহ্ প্রকৃতই যায়দের সন্তান কিনা- এ নিয়ে অনেকের মাঝে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়; কেননা যায়দ ছিলেন ফর্সা আর উসামাহ্ ছিলেন কালো। ব্যতিক্রম বর্ণ বংশের মাঝে কোনো প্রভাব না পড়লেও কারো কারো কানাঘুষা রসূলের মনে কষ্ট দেয়। এদিকে মুজায্যিয আল মুদলিজীকে বংশ চিহ্নিতকারী মনে করা হত। সে যখন উসামার পা দেখে বলল, যায়দ ও উসামার উভয়ে পা সাদৃশ্যপূর্ণ। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কারণে আনন্দিত হলেন যে, এখন তাদের কানাঘুষা দূর হবে।

দুই ব্যক্তির অঙ্গের প্রকৃতি, কাঠামো ইত্যাদির নিদর্শনের মাধ্যমে সাদৃশ্য প্রমাণ করে বংশ সূত্র প্রমাণ করাকে ‘ইলমুল কিয়াফাহ্ বলা হয়। কিয়াফার দ্বারা বংশ প্রমাণ আরবের মাঝে প্রচলিত ছিল।

কিয়াফার জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তির কথার দ্বারা বংশ প্রমাণ হবে কিনা- এ নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ ছাড়া বাকী প্রসিদ্ধ তিন ইমামই মনে করেন, কিয়াফার দ্বারা বংশ প্রমাণ হবে। বর্ণিত হাদীসটি তাদের পক্ষে দলীল। মুদলিজীর কিয়াফায় রসূল আনন্দিত হওয়া কিয়াফার জায়িযের বৈধতা প্রমাণ করে। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে কিয়াফার মাধ্যমে বংশ প্রমাণিত হবে না। কেননা অনেক হাদীসের আলোকে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাদৃশ্যতা প্রকৃতপক্ষে দলীল নয়। বিভিন্ন কারণে ছেলে পিতা থেকে ভিন্ন হতে পারে আবার সন্তান না হয়ে কারো সাথে মিলে যেতে পারে। কেননা সাদৃশ্য একটা অনুমান মাত্র। আর অনুমানের ভিত্তিতে কোনো কিছু প্রমাণিত হয় না। ইতোপূর্বে কয়েকটি হাদীসে আমরা বিষয়টি দেখতে পেয়েছি।

তাছাড়া বর্ণিত হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়াফাহ্ দ্বারা উসামার বংশ প্রমাণ করেননি। বরং মুদলিজীর কিয়াফায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন মাত্র। এই আনন্দ প্রকাশের কারণ ছিল ‘আরবের কিছু লোকের কানাঘুষা দূর হওয়া। এতে সর্বোচ্চ কিয়াফাহ্ জায়িয হওয়ার প্রমাণ মিলে যা মনের সান্তবনার কারণ হতে পারে; কিন্তু বংশ প্রমাণের দলীল হয় না। তাই কিয়াফাহ্ দ্বারা বংশ প্রমাণের উপর এই হাদীস দলীল হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১৪-[১১] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস ও আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সদিচ্ছায় স্বীয় পিতৃ-পরিচয় ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, জান্নাত তার জন্য হারাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ وَأَبِي بَكْرَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حرَام»

وعن سعد بن ابي وقاص وابي بكرة قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من ادعى الى غير ابيه وهو يعلم انه غير ابيه فالجنة عليه حرام»

ব্যাখ্যা: ‘‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে তার পরিচয় নিজ পিতার সাথে না দিয়ে অন্যের সাথে দিবে।’’ অর্থাৎ নিজেকে অন্যের পুত্র বলে দাবী করবে তার জন্য জান্নাত হারাম।

নিজেকে আপন পিতার সাথে সম্পৃক্ত না করে অন্যের দিকে সম্পৃক্ত করা কবীরা গুনাহ। আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আলিমদের মতে কবীরা গুনাহ করলে কেউ কাফির হয় না। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসের আলোকে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। তাই বর্ণিত হাদীসে জান্নাত হারাম হওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র অন্যের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করার কারণে নয়। বরং কেউ যদি এই গুনাহের কাজকে হালাল মনে করে তবে সে কাফির হয়ে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। কেননা গুনাহকে বৈধ মনে করা কুফরী। অথবা হাদীসের মর্ম এও হতে পারে যে, কিছু দিনের জন্য জান্নাত তার জন্য হারাম থাকবে। এই গুনাহের শাস্তি ভোগ করেই তাকে জান্নাতে যেতে হবে। আবার পাপটি অত্যন্ত মারাত্মক হওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধমকীর স্বরে এ কথা বলতে পারেন, যদিও জান্নাত তার জন্য হারাম নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১৫-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের পিতৃ-পরিচয়কে অস্বীকৃতি জানিও না। যে স্বীয় পিতৃ-পরিচয়ে অস্বীকার করল, সে কুফরী করল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

এখানে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে, যা প্রথমে উল্লেখ হয়েছে, আল্লাহ অপেক্ষা অধিক কেউ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নয়- সালাতুল খুসূফ (সূর্যগ্রহণের সালাত) অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَرْغَبُوا عَنْ آبَائِكُمْ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ أَبِيهِ فقد كفر»
وَذُكِرَ حَدِيثُ عَائِشَةَ «مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ من الله» فِي «بَاب صَلَاة الخسوف»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا ترغبوا عن اباىكم فمن رغب عن ابيه فقد كفر» وذكر حديث عاىشة «ما من احد اغير من الله» في «باب صلاة الخسوف»

ব্যাখ্যা: ‘‘আপন পিতার দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে অনীহা পোষণ করো না। যে ব্যক্তি নিজ পিতা থেকে বিমুখ হয়ে অন্যের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে সে কাফির হয়ে গেছে।’’

হাদীসদ্বয়ের উদ্দেশ্য হলো, যে জেনে বুঝে স্বেচ্ছায় নিজ বংশের পরিবর্তন ঘটাতে নিজেকে আপন পিতা বাদ দিয়ে অন্যের দিকে সম্পৃক্ত করে। জাহিলিয়্যাহ্ বা অন্ধকার যুগে কেউ অন্যের ছেলেকে তার বানিয়ে নেয়াকে আপত্তি করা হতো না। এই পুত্রই তখন তার দিকে সম্পৃক্ত হত যে তাকে পুত্র বানিয়েছে, এমনকি আয়াত নাযিল হয়, ‘‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫)

আরো নাযিল হয়, ‘‘এবং আল্লাহ তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৪)

আয়াতদ্বয় নাযিল হলে সবাই নিজেকে প্রকৃত পিতার দিকে সম্পৃক্ত করে ডাকতে থাকেন এবং যে তাকে পালকপুত্র বানিয়েছে তার দিকে সম্পৃক্ত করা ছেড়ে দেন। তবে কেউ কেউ যারা অন্যের দিকে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে প্রসিদ্ধ হয়ে যান, পরিচিতি লাভের জন্য তাদেরকে ঐভাবেই ডাকা হয়। তবে তা বংশ সম্পৃক্তের উদ্দেশে ছিল না। যেমন মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ এর প্রকৃত পিতা হলেন ‘আমর ইবনু সা‘লাবাহ্। আসওয়াদ তারা বন্ধু হওয়ায় তিনি তাকে পুত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন।

হাদীসে ‘কাফির হয়ে গেছে’ বলতে কুফরী কর্ম করে কুফরীর নিকট পৌঁছে যাওয়া উদ্দেশ্য; কেননা গুনাহ কবীরা করলে কাফির হয় না বলে আমরা জেনে এসেছি। তাই কুফরী বলতে এমন কুফরী উদ্দেশ্য নয় যা তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী করে দেয়। তবে পূর্বের মতো এখানেও যদি সে এমন কর্মকে বৈধ মনে করে তবে কাফির হয়ে যাবে। ধমকীর স্বরে এই ধরনের কথা বলারও অবকাশ থাকে। আবার এ অর্থও হতে পারে যে, তার কুফরীর আশঙ্কা রয়েছে।

কোনো কোনো ব্যাখ্যাকার বলেন, এখানে কুফরী শব্দের প্রয়োগটি করার কারণ হলো, সে এমন কর্ম করে আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করেছে। সে যেন বলছে, আল্লাহ আমাকে অমুকের পানি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, অথচ আল্লাহ তাকে ঐ ব্যক্তির পানি দিয়ে সৃষ্টি করেননি। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৭৬৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১২ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে