লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন
৩৩০৮-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (খাযরাজ গোত্রের নেতা) সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জানতে চাইলেন, যদি কোনো পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখি, তবে চারজন সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতীত তাকে কি কিছু বলব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন- হ্যাঁ (কিছুই বলবে না)। সা’দ(রাঃ) বললেন, কক্ষনো সম্ভব নয়! সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সত্য নবীরূপে পাঠিয়েছেন, আমি তো চারজন সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পূর্বেই তাকে তরবারির আঘাতে নিঃশেষ করে দিব। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আনসারীগণের উদ্দেশে) বললেন, শুন! তোমাদের নেতা কি বলে? নিশ্চয় সা’দ অত্যন্ত আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, আর আমি তার অপেক্ষা অধিক আত্মমর্যাদাশীল। আর আল্লাহ তা’আলা তো আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। (মুসলিম)[1]
بَابُ اللِّعَانِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ: لَوْ وَجَدْتُ مَعَ أَهْلِي رَجُلًا لَمْ أَمَسَّهُ حَتَّى آتِيَ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» قَالَ: كَلَّا وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ إِنْ كُنْتُ لَأُعَاجِلُهُ بِالسَّيْفِ قَبْلَ ذَلِكَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْمَعُوا إِلَى مَا يَقُولُ سَيِّدُكُمْ إِنَّهُ لَغَيُورٌ وَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ وَالله أغير مني» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (لَمْ أَمَسَّه حَتّٰى اٰتِىَ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ؟) বর্ণিত বাক্যটিতে সুদূর পরাহতমূলক প্রশ্ন চিহ্ন হামযাহ হরফ উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ আমার স্ত্রীকে পর পুরুষের সাথে পাওয়ার পরও কি আমি চার সাক্ষী না নিয়ে আসা পর্যন্ত তাকে স্পর্শ করব না? অর্থাৎ তার শরীরে হাত তুলব না? তাকে প্রহার করব না? সাহাবীর আত্মমর্যাদার কাছে কাজটি অনেক বড় মনে হলে তিনি আশ্চর্য হয়ে এই প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ। অর্থাৎ এমনটি করা যাবে না। কেননা এর জন্য নির্ধারিত বিধান রয়েছে।
হাদীসের এই অংশ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, যে আইন প্রয়োগের যে নীতি বা বিধান রয়েছে তা সেই নীতির আলোকেই চলবে এবং সেভাবেই প্রয়োগ করতে হবে। আইন বা কানুনকে কখনো নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। সবাই নিজের হাতে আইনকে তুলে নিলে সমাজের কি দুরাবস্থা হবে তা একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়।
(كلا) অর্থাৎ কখনো এমন হতে পারে না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার উপর এমনটি বলা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। তবে মানুষ অনেক সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনিচ্ছায় কিছু ঘটে গেলে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত। সা‘দ ইবনু ‘উবাদার ঘটনাটি এমনই ছিল। ইমাম নববী (রহঃ) মাওয়ার্দী এবং অন্যান্যদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘‘তার কথা ‘কখনো না...’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাকে প্রত্যাখ্যান করতঃ ছিল না, রসূলের নির্দেশের বিরোধবশত ছিল না। এটি কেবল মানুষের সেই সময়কার অনিয়ন্ত্রিত অবস্থার খবর দেয়া, যখন সে কোনো বে-গানা পুরুষকে তার স্ত্রীর সাথে দেখে এবং ক্রোধ তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এমতাবস্থায় সে লোক দ্রুত তরবারিই ব্যবহার করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতিবাদের কারণ বুঝতে পেরেছেন। অর্থাৎ সে এ কথা রসূলের কথার বিরোধী হয়ে বলেনি বরং আত্মমর্যাদার আবেগে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বলেছে। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এমন কথার ওযর তুলে ধরে বলেন, তোমাদের সাথীর আত্মমর্যাদা দেখো। আমি আরো বেশি আত্মমর্যাদাবান এবং আল্লাহ তা‘আলা আমার চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবান। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৯৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)