লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন
৩৩১১-[৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক বেদুইন এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আমার স্ত্রী এক কালো পুত্রসন্তান প্রসব করেছে, আমি তা (আমার সন্তান বলে) অস্বীকার করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি উট আছে? সে বলল, জি, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, উটগুলো কি রঙের? সে বলল, লাল রঙের। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এর মধ্যে কি লাল-কালো বা ছাই রঙেরও উট আছে? সে বলল, হ্যাঁ, সে রকম উটও আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, প্রশ্ন করলেন, তাহলে ঐ রঙের কিভাবে আসলো? সে বলল, বংশানুক্রমে এসেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার সন্তানও তো বংশানুক্রমে কালো বর্ণের লাভ করতে পারে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে সন্তান অস্বীকৃতির অনুমতি দিলেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ اللِّعَانِ
وَعَنْهُ أَنَّ أَعْرَابِيًّا أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إنَّ امْرَأَتي ولدَتْ غُلَاما أسودَ وَإِنِّي نكرته فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ لَكَ مِنْ إِبِلٍ؟» قَالَ: نَعَمْ قَالَ: «فَمَا أَلْوَانُهَا؟» قَالَ: حُمْرٌ قَالَ: «هَلْ فِيهَا مِنْ أَوْرَقَ؟» قَالَ: إِنَّ فِيهَا لَوُرْقًا قَالَ: «فَأَنَّى تُرَى ذَلِكَ جَاءَهَا؟» قَالَ: عِرْقٌ نَزَعَهَا. قَالَ: «فَلَعَلَّ هَذَا عِرْقٌ نَزَعَهُ» وَلَمْ يُرَخِّصْ لَهُ فِي الِانْتِفَاءِ مِنْهُ
ব্যাখ্যা: (عِرْقٌ نَزَعَهَا) বংশ সূত্রের প্রভাবে এমনটি হয়েছে। অর্থাৎ লাল উট থেকে ধূসরবর্ণ বাচ্চা জন্ম নেয়ার কারণ বংশ সূত্রের প্রভাবে হতে পারে। তথা উটের পূর্ব বংশের কোনো একটি এই বর্ণের থাকার প্রভাব অনেক পরেও পড়তে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেদুইনের কথার উত্তরে বললেন, উটের মতো এই সন্তানটিও বংশ সূত্রের প্রভাবে কালো হতে পারে। অর্থাৎ মায়ের মতো না হওয়া ছেলেটি এই মায়ের নয়- এ কথা প্রমাণ করে না।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, দুর্বল আলামত দ্বারা বাচ্চার বংশ অস্বীকার করা যাবে না। বরং বাচ্চার বংশ নাকচ করতে স্পষ্ট দৃঢ় দলীলের প্রয়োজন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নববী বলেনঃ বর্ণিত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, সন্তান তার পিতার দিকে সম্পৃক্ত হবে, যদিও পিতার বর্ণ ও সন্তানের বর্ণ এক না হয়। এমনকি যদি পিতা সাদা হয় এবং সন্তান কালো হয় বা এর বিপরীত পিতা কালো এবং সন্তান সাদা হয় তবুও সন্তান পিতার দিকেই সম্পৃক্ত হবে। কেবল বর্ণের কারণে বাচ্চার বংশ নাকচ করা যাবে না। এভাবে স্বামী স্ত্রী উভয় সাদা হয় এবং বাচ্চা কালো হয় বা এর বিপরীত হয় তবু বাচ্চাকে নাকচ করা যাবে না। কেননা তার পূর্বের কারো প্রভাব বাচ্চার উপর পড়তে পারে।
হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, বাচ্চা নাকচের ইঙ্গিতে তা নাকচ করা হয়েছে বলে গণ্য হবে না এবং অপবাদের দিকে ইঙ্গিত করলে অপবাদ করা হয়েছে বলে গণ্য হবে না।
বর্ণিত হাদীস থেকে ক্বিয়াস ও সাদৃশ্যের ধর্তব্য এবং উপমা পেশ করার প্রমাণ মিলে।
হাদীস থেকে বংশ নাকচ যাতে না হয় সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন এবং কেবল সম্ভাবনার দ্বারা বংশের সম্পৃক্ত করার প্রমাণ মিলে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৫০০)
ইমাম নববী (রহঃ)-এর কথা, হাদীসে ক্বিয়াস জায়িযের প্রমাণ মিলে অর্থাৎ মূল ক্বিয়াস জায়িয হওয়ার প্রমাণ মিলে। যদিও এখানে ক্বিয়াস দুর্বল হওয়ার কারণে এর ভিত্তিতে বাচ্চাকে নাকচ করা যাচ্ছে না।
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, কেবল সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বাচ্চাটি কার এ কথা প্রমাণিত হবে না। পূর্বে আমরা এই মাসআলার দিকে ইঙ্গিত করে এসেছি।