লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন
৩৩০৯-[৬] মুগীরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্(রাঃ) বললেন, আমি যদি কোনো পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখি, তবে আমি তরবারি দিয়ে হত্যা করে ফেলব। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, তোমরা কি সা’দ-এর আত্মমর্যাদবোধে বিস্ময় প্রকাশ করছ? আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি তো তার চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদসম্পন্ন, আর আল্লাহ তা’আলা তো আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাশীল। তাঁর আত্মসম্ভ্রমের দরুন তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অশ্লীল বিষয় হারাম বা নিষিদ্ধ করেছেন। আর মানুষের ওযর-আপত্তি দূর করা আল্লাহর চেয়ে অধিক কেউ ভালোবাসে না। এ কারণে তিনি মানুষের মাঝে সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী নবী-রসূলরূপে পাঠিয়েছেন, আর আল্লাহ সর্বাপেক্ষা নিজের প্রশংসা-স্তুতি শুনতে ভালোবাসেন বলে জান্নাতের ওয়া’দাহ্ দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ اللِّعَانِ
وَعَنِ الْمُغِيرَةَ قَالَ: قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ: لَوْ رَأَيْتُ رَجُلًا مَعَ امْرَأَتِي لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفِحٍ فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَتَعْجَبُونَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ؟ وَاللَّهِ لَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ وَاللَّهُ أَغْيَرُ مِنِّي وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللَّهِ حَرَّمَ اللَّهُ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعُذْرُ مِنَ اللَّهِ مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ بَعَثَ الْمُنْذِرِينَ وَالْمُبَشِّرِينَ وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمِدْحَةُ مِنَ اللَّهِ وَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ وَعَدَ اللَّهُ الْجَنَّةَ»
ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ-এর কথাকে প্রশংসনীয়রূপে দেখলেন; কেননা তার কথাটি আত্মমর্যাদার উপর আঘাত আসার ভিত্তিতে ছিল। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলা আত্মমর্যাদার ব্যাখ্যা দেন। হাদীসের আলোকে এর সারমর্ম হলো, গইরত বা আত্মমর্যাদা হচ্ছে, ব্যক্তি তারা মালিকানাধীন বস্তুতে অন্যকে হস্তক্ষেপ করতে দেখলে অপছন্দ করে এবং রাগাম্বিত হয়। মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ যে, কেউ তার স্ত্রীর দিকে অন্যকে তাকাতে দেখলে বা স্ত্রীর সাথে কোনো কর্মে লিপ্ত দেখলে মানুষ রাগ করে; কেননা এতে তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়। তদ্রূপ আল্লাহর তা‘আলার মালিকানাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ আল্লাহর ক্রোধের কারণ। আল্লাহ তাঁর এই আত্মমর্যাদার কারণেই অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। নিজের অধিকারভুক্ত ব্যক্তির সাথে অশ্লীলতা দেখলে মানুষের আত্মমার্যায় যেমন আঘাত হানে, তার চেয়ে বেশি আঘাত হানে আল্লাহর আত্মমর্যাদায়; কেননা সবই আল্লাহর প্রকৃত মালিকানাধীন। আর এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সর্বপ্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। মালিকানার আধিক্যের ভিত্তিতে আল্লাহর আত্মমর্যাদাও তেমন অধিক।
(وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمِدْحَةُ مِنَ اللّٰهِ) অর্থাৎ ওযুহাতকে আল্লাহর চেয়ে অধিক ভালোবাসে এমন কেউ নেই। এ কথার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ -কে তার কর্ম থেকে বারণ করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আল্লাহর তা‘আলার গাইরত অধিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি ওযর ভালোবাসেন। তার মর্যাদায় আঘাত হানলেও যে কোনো ওযুহাতে তিনি তা ছেড়ে দেন। পূর্ণ দলীল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত শাস্তি দেন না। শাস্তির দলীল পূর্ণ প্রতিষ্ঠার জন্য নাবী পাঠান, যারা সতর্ক করেন এবং সুসংবাদ দেন। তাই সা‘দ বা যে কারো জন্যেই আত্মমর্যাদায় আবেগপ্রবণ হয়ে দলীল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে কোনো কর্মতৎপরতায় যাওয়া ঠিক নয়। মোটকথা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ-এর আবেগপ্রবণ কথার উপর আপত্তি না করলেও সা‘দ যে ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন সেই কর্মে যাওয়ার উপর আপত্তি করেন। (ফাতহুল বারী ১৩ম খন্ড, হাঃ ৭৪১৬)