৩৩১৩

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১৩-[১০] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত প্রফুল্লাচিত্তে আমার ঘরে ঢুকে বললেন, হে ’আয়িশাহ্! তুমি কি জান, মুজাযযিয মুদলিজী কি বলেছে? সে মসজিদে প্রবেশ করে দেখল যে, উসামাহ্ ও যায়দ (রাঃ) একই চাদরে মাথাসহ শরীর ঢেকে শুয়ে আছে, কিন্তু উভয়ের পা দেখা যাচ্ছিল। এটা দেখে সে বলে উঠল, এ পাগুলো একে অপরের অংশ। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْهَا قَالَتْ: دَخَلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ وَهُوَ مَسْرُورٌ فَقَالَ: أَيْ عَائِشَةُ أَلَمْ تَرَيْ أَنَّ مُجَزِّزًا الْمُدْلِجِيَّ دَخَلَ فَلَمَّا رَأَى أُسَامَةَ وَزَيْدًا وَعَلَيْهِمَا قطيفةٌ قد غطيَّا رؤوسَهُما وَبَدَتْ أَقْدَامُهُمَا فَقَالَ: إِنَّ هَذِهِ الْأَقْدَامَ بَعْضُهَا من بعضٍ

ব্যাখ্যা: (وَهُوَ مَسْرُورٌ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হওয়ার কারণ ছিল, যায়দ রসূলের পালকপুত্র বলে সবাই জানত। যায়দ-এর সন্তান উসামাহ্ জন্ম নেয়ার পর উসামাহ্ প্রকৃতই যায়দের সন্তান কিনা- এ নিয়ে অনেকের মাঝে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়; কেননা যায়দ ছিলেন ফর্সা আর উসামাহ্ ছিলেন কালো। ব্যতিক্রম বর্ণ বংশের মাঝে কোনো প্রভাব না পড়লেও কারো কারো কানাঘুষা রসূলের মনে কষ্ট দেয়। এদিকে মুজায্যিয আল মুদলিজীকে বংশ চিহ্নিতকারী মনে করা হত। সে যখন উসামার পা দেখে বলল, যায়দ ও উসামার উভয়ে পা সাদৃশ্যপূর্ণ। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কারণে আনন্দিত হলেন যে, এখন তাদের কানাঘুষা দূর হবে।

দুই ব্যক্তির অঙ্গের প্রকৃতি, কাঠামো ইত্যাদির নিদর্শনের মাধ্যমে সাদৃশ্য প্রমাণ করে বংশ সূত্র প্রমাণ করাকে ‘ইলমুল কিয়াফাহ্ বলা হয়। কিয়াফার দ্বারা বংশ প্রমাণ আরবের মাঝে প্রচলিত ছিল।

কিয়াফার জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তির কথার দ্বারা বংশ প্রমাণ হবে কিনা- এ নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ ছাড়া বাকী প্রসিদ্ধ তিন ইমামই মনে করেন, কিয়াফার দ্বারা বংশ প্রমাণ হবে। বর্ণিত হাদীসটি তাদের পক্ষে দলীল। মুদলিজীর কিয়াফায় রসূল আনন্দিত হওয়া কিয়াফার জায়িযের বৈধতা প্রমাণ করে। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে কিয়াফার মাধ্যমে বংশ প্রমাণিত হবে না। কেননা অনেক হাদীসের আলোকে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাদৃশ্যতা প্রকৃতপক্ষে দলীল নয়। বিভিন্ন কারণে ছেলে পিতা থেকে ভিন্ন হতে পারে আবার সন্তান না হয়ে কারো সাথে মিলে যেতে পারে। কেননা সাদৃশ্য একটা অনুমান মাত্র। আর অনুমানের ভিত্তিতে কোনো কিছু প্রমাণিত হয় না। ইতোপূর্বে কয়েকটি হাদীসে আমরা বিষয়টি দেখতে পেয়েছি।

তাছাড়া বর্ণিত হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়াফাহ্ দ্বারা উসামার বংশ প্রমাণ করেননি। বরং মুদলিজীর কিয়াফায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন মাত্র। এই আনন্দ প্রকাশের কারণ ছিল ‘আরবের কিছু লোকের কানাঘুষা দূর হওয়া। এতে সর্বোচ্চ কিয়াফাহ্ জায়িয হওয়ার প্রমাণ মিলে যা মনের সান্তবনার কারণ হতে পারে; কিন্তু বংশ প্রমাণের দলীল হয় না। তাই কিয়াফাহ্ দ্বারা বংশ প্রমাণের উপর এই হাদীস দলীল হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)