পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
(بَاب صَلَاة الْعِيْدَيْنِ) তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। الْعِيْدُ শব্দটি الْعَيْدُ হতে নির্গত। শাব্দিক অর্থ اَلرَّجُوْعُ তথা প্রত্যাবর্তন করা।
দু’ ঈদকে ’ঈদ’ হিসেবে নামকরণ করার কারণঃ
১। ঈদের দিনে আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ অবতীর্ণ হতে থাকে। ২। অথবা এ দিনের মধ্যে লোকেরা একের পর এক পরস্পরে মিলিত হয় বলে। ৩। প্রতি বছর পুনরায় আগমন করে বলে। ৪। বার বার আনন্দ ফিরে আসে। ৫। কারও মতে আল্লাহ তা’আলা বান্দার ওপর ক্ষমা ও রহমত পুনরাবৃত্তি করেন। ৬। কারও মতে ঈদের সালাতে বারবার তাকবীর বলতে হয় বিধায় একে ঈদ (عَيْدٌ) নামে আখ্যায়িত করেছে।
আর ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রবর্তনের তাৎপর্য সম্পর্কে আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রহঃ) হুজ্জাতুল্লাহি বালিগাহ্ কিতাবের দ্বিতীয় খন্ডের ২৩ পৃষ্ঠায় চমৎকার তথ্য উপস্থাপন করেছেন আপনি তা দেখে নিবেন। সবাই ঐকমত্য হয়েছেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রথম ঈদুল ফিতর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরীতে, অতঃপর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এর উপর অটুট ছিলেন।
আবার কারও মতে ঈদুল আযহাও দ্বিতীয় হিজরীতে শুরু হয়েছিল। দু’ঈদের সালাতের হুকুম নিয়ে ’উলামাদের নিকট মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফার সহীহ মতে তাঁর নিকট ওয়াজিব। যাদের ওপর জুমু’আর সালাত ওয়াজিব। ইমাম মালিক ও শাফি’ঈর মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। আর আহমাদের মতে ফারযে কিফায়াহ্ সালাতুল জানাযার মতো যদি কেউ পড়ে তাহলে অন্যদের ওপর ফরয রহিত হয়ে যাবে। আর আমার (ভাষ্যকারের) নিকট আবূ হানীফার মতই ’ওয়াজিব’ অধিক বরণীয়। কেননা আল্লাহ তা’আলার বাণী فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَر ’’তুমি তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’’- (সূরাহ্ আল কাওসার ১০৮: ২) এখানে ’আমর তথা আদেশ আবশ্যক কামনা করে। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সারা জীবনে নিরবিচ্ছিন্ন আদায় ওয়াজিব। প্রমাণ করে বিশেষ করে দীনের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও ওয়াজিবের দিকে নিয়ে যায়।
শর্তের ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফার মত জুমু’আর যা শর্ত ঈদেরও তা শর্ত, তবে খুতবাহ্ (খুতবা) শর্ত না বরং তা সুন্নাত সালাতের পরে। আর ইমাম মালিক শাফি’ঈর মতে পুরুষ, মহিলা, দাস, মুসাফিরদের মধ্যে যারা চায় একাকী সালাত আদায় করতে তা বৈধ।
১৪২৬-[১] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন (ঘর থেকে) বের হয়ে ঈদগাহের ময়দানে গমন করতেন। প্রথমে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে গিয়ে সালাত আদায় করাতেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষের দিকে মুখ ফিরে দাঁড়াতেন। মানুষরা সে সময় নিজ নিজ সারিতে বসে থাকতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে ভাষণ শুনাতেন, উপদেশ দিতেন। আর যদি কোন দিকে কোন সেনাবাহিনী পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তাদেরকে নির্বাচন করতেন। অথবা কাউকে কোন নির্দেশ দেয়ার থাকলে তা দিতেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) [ঈদগাহ] হতে ফিরে প্রত্যাবর্তন করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يخرج يَوْم الْفطر وَالْأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى فَأَوَّلُ شَيْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلَاةُ ثُمَّ يَنْصَرِفُ فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ فَيَعِظُهُمْ وَيُوصِيهِمْ وَيَأْمُرُهُمْ وَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ أَوْ يَأْمر بِشَيْء أَمر بِهِ ثمَّ ينْصَرف
ব্যাখ্যা: (يَخْرُجُ يَوْم الْفِطْرِ وَالْأَضْحى إِلَى الْمُصَلّى) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহের দিকে বের হতেন। আর নির্ধারিত একটি পরিচিত জায়গা মদীনার দরজার বাইরে। মদীনার মাসজিদ ও স্থানটির মাঝে দূরত্ব হল এক হাজার গজ। আর এটা মুসতাহাব হিসেবে প্রমাণ করে ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রশস্ত ময়দানে আদায়ের জন্য বের হওয়া যদিও সালাতের জন্য মাসজিদ উত্তম এবং মসজিদে প্রশস্ত জায়গা থাকে। এটা আবূ হানীফা। আহমাদ বিন হাম্বাল ও মালিকীর মাযহাব। আর শাফি‘ঈর মতে মসজিদে পড়া উত্তম, কেননা মাসজিদ হচ্ছে উত্তম স্থান ও পবিত্র। ভাষ্যকার বলেন, আমার নিকট অধিক বরণীয় মত আবূ হানীফাহ্ যে মতে গেছেন যে, ময়দানের উদ্দেশে বের হওয়া উত্তম যদিও মসজিদের স্থান প্রশস্ত হোক না কেন। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত মাসজিদকে ছেড়ে ময়দানে যেতেন অনুরূপ খোলাফায়ে রাশিদীনরা। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এমন কোন দলীল বর্ণিত হয়নি যে, তিনি ওযর ছাড়া মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করেছেন। আর মুসলিমদের ইজমা এ বিষয়ে। প্রত্যেক যুগের মুসলিমরা মাসজিদ প্রশস্ত থাকা সত্ত্বেও ঈদগাহে সালাত আদায় করতেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের ফাযীলাত থাকা সত্ত্বেও ঈদগাহে সালাত আদায় করতেন।
(فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ) তিনি জনতার সম্মুখে দাঁড়াতেন, সুতরাং সুন্নাত হল ঈদগাহে দাঁড়িয়ে খুতবাহ্ প্রদান করা।
(فَيَعِظُهُمْ) তাদেরকে উপদেশ দিতেন তথা তিনি পরকালের প্রতিদানের সুসংবাদ দিতেন আবার ভয়াবহ শাস্তির ভয় দেখাতেন যাতে তারা এ দিনে শুধুমাত্র আনন্দে আত্মহারা হয়ে না থাকে, অতঃপর আল্লাহর আনুগত্য হতে উদাসীন থাকে এবং পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে।
(وَيُوْصِيْهِمْ) তিনি তাক্বওয়ার উপদেশ দিতেন, যেমন আল্লাহর বাণীঃ
وَصَّيْنَا الَّذِيْنَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللّهَ
‘‘বস্ত্ততঃ আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অনুসারীদেরকে এবং তোমাদেরকে যে, তোমরা সবাই ভয় করতে থাক আল্লাহকে।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১৩১)
কারও মতেঃ অন্যের অধিকার আদায়ে উপদেশ করতেন। আবার কেউ বলেনঃ অনুগত্যের প্রতি অবিচল। সকল প্রকার পাপ কাজ হতে বিরত থাকা আল্লাহর অধিকার ও বান্দার অধিকারের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকার উপদেশ দিতেন। (يَأْمُرُهُمْ) সময়ের প্রেক্ষাপটের আলোকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বিরত থাকার দিক নির্দেশনা দিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪২৭-[২] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে দু’ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) একবার নয়, দু’বার নয়, আযান ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) ছাড়া ..... (বহুবার) আদায় করেছি। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِيدَيْنِ غَيْرَ مَرَّةٍ وَلَا مَرَّتَيْنِ بِغَيْرِ أَذَانٍ وَلَا إِقَامَة. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি প্রমাণ করে দু’ ঈদের সালাতে আযান ও ইক্বামাত নেই। আর ইমাম তিরমিযী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথী ও অন্যান্যদের হতে আহলে ‘আলিমরা ‘আমল করে আসছেন যে দু’ঈদে এবং কোন নফল সালাতে আযান ও ইক্বামাত দিতেন না। ‘ইরাক্বীও বলেনঃ সকল ‘উলামাদের ‘আমল অনুরূপ।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪২৮-[৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) দু’ ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) খুতবার পূর্বেই আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ يُصَلُّونَ الْعِيدَيْنِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ
ব্যাখ্যা: আমি (ভাষ্যকার) বলি, তিরমিযী ব্যতিরেকে সকল গ্রন্থকার ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকর, ‘উমার (রাঃ) ও ‘উসমানের সাথে; তারা সকলেই খুতবার পূর্বে সালাত আদায় করেছেন। হাদীস দু’টিতে প্রমাণ পাওয়া যায়, খুতবার পূর্বেই ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আর এর উপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খুলাফায়ে রাশিদীনরা ‘আমল করেছেন এবং বর্তমান পর্যন্ত চলছে। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথী ও অন্যান্যদের হতে আহলে ‘ইলমরা এর উপর ‘আমল করে আসছেন যে, খুত্বার পূর্বেই সালাত। কারও মতেঃ সর্বপ্রথম মারওয়ান বিন হাকাম সালাতের পূর্বে খুতবাহ্ চালু করেন। কেউ যদি সালাতের পূর্বে খুত্বাহ্ (খুতবা) প্রদান করে তাহলে সে যেন খুতবাহ্ প্রদান করেনি কারণ সে অস্থানে খুতবাহ্ প্রদান করেছে। সুতরাং সালাত শেষে পুনরায় যেন খুতবাহ্ (খুতবা) দেয়। মালিক ও আহমাদ এ মন্তব্য করেছেন। আর বাজী বলেনঃ আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ)-এর অস্বীকার মারওয়ান-এর ঈদের সালাতের পূর্বে খুতবাহ্ প্রদানের বিষয়টিতে ঘৃণার দৃষ্টিভঙ্গিতে, কারণ তিনি তাঁর (মারওয়ান-এর) সাথে ঈদের সালাত আদায় করেছেন যদি হারাম বা শর্ত হত তাহলে তিনি তার পিছনে সালাত আদায় করতেন না।
আর মুল্লা ‘আলী ক্বারী ইবনু হুমাম হতে বলেন, যদি সালাতের পূর্বে খুতবাহ্ (খুতবা) প্রদান করে তাহলে সুন্নাহর বিপরীত করল আর খুতবাহ্ (খুতবা) পুনারাবৃত্তি করবে না। ইবনু মুনযির বলেনঃ ‘উলামারা ঐকমত্য হয়েছেন খুতবাহ্ সালাতের পরে পূর্বে বৈধ হবে না আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিশুদ্ধ হবে যদিও পূর্বে খুতবাহ্ পূর্বে প্রদান করে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪২৯-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ছিলাম। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাতের জন্য ঈদগাহে এসেছেন। (প্রথমে) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন, তারপর খুতবাহ্ (খুতবা) প্রদান করেছেন। তবে তিনি আযান ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত)ের কথা উল্লেখ করেননি। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাদের নিকট এসেছেন। তাদের ওয়াজ নাসীহাত করেছেন। দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। অতঃপর আমি দেখলাম মহিলাগণ নিজ নিজ কান ও গলার দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। গহনা খুলে খুলে বিলালের নিকট দিতে লাগলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও বিলাল বাড়ীর দিকে চলে গেলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَسُئِلَ ابْنُ عَبَّاسٍ: أَشَهِدْتَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِيدَ؟ قَالَ: نَعَمْ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى ثُمَّ خَطَبَ وَلَمْ يَذْكُرْ أَذَانًا وَلَا إِقَامَةً ثُمَّ أَتَى النِّسَاءَ فَوَعَظَهُنَّ وَذَكَّرَهُنَّ وَأَمَرَهُنَّ بِالصَّدَقَةِ فَرَأَيْتُهُنَّ يُهْوِينَ إِلَى آذَانِهِنَّ وَحُلُوقِهِنَّ يَدْفَعْنَ إِلَى بِلَالٍ ثُمَّ ارْتَفَعَ هُوَ وَبِلَالٌ إِلَى بَيته
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ خَطَبَ) অতঃপর খুতবাহ্ (খুতবা) দান করলেন। এতে প্রমাণ করে যে, ঈদের খুতবাহ্ একটি শারী‘আত সম্মত আর সেখানে দু’টি খুতবাহ্ নেই জুমু‘আর মতো। আর নির্ভরযোগ্য সূত্রে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম প্রমাণটি প্রমাণিত হয়নি আর দু’টি খুতবাহ্ (খুতবা) সমর্থন করেন জুমু‘আর উপর কিয়াস করে ও দুর্বল হাদীসের উপর।
(وَذَكَّرَهُنَّ وَأَمَرَهُنَّ بِالصَّدَقَةِ) তাদেরকে ওয়াজ ও নাসীহাত করলেন এবং দান-খয়রাত করার জন্য উপদেশ দিলেন। এটা প্রমাণ করে মহিলাদেরকে ওয়াজ নাসীহাত করা ও ইসলামের হুকুম-আহকাম শিক্ষা দেয়া, বিশেষ করে আবশ্যক বিষয়গুলো স্মরণ করে দেয়া ভাল এবং তাদেরকে দানের দিকে উৎসাহ প্রদান করাও মুস্তাহাব। আর বিশেষ করে তাদের জন্য স্বতন্ত্র বৈঠকের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন যা সকল প্রকার ফিতনাহ্ ফাসাদমুক্ত হবে। হাদীসটি প্রমাণ করে মহিলাদের জন্য দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা বৈধ নিজেদের সম্পদ হতে স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে। এবং এক তৃতীয়াংশ হয়, এর বেশি যেন না হয়। হাদীসটি আরও দাবি জানায় মহিলা ও শিশুরা ঈদের দিনে ঈদগাহর উদ্দেশে যাবে যদিও তারা ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩০-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন মাত্র দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এর পূর্বেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন সালাত আদায় করেননি, পরেও পড়েননি। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى يَوْمَ الْفِطْرِ رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُصَلِّ قَبْلَهُمَا وَلَا بَعْدَهُمَا
ব্যাখ্যা: (صَلّى يَوْمَ الْفِطْرِ رَكْعَتَيْنِ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিত্রের দিনে দু’ রাক্‘আত আদায় করেছেন। এটা প্রমাণ করে ঈদের সালাত দু’ রাক্‘আত যে ইমামের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। আর যে ইমামের সাথে আদায় করতে পারেনি সে একা আদায় করলেও অধিকাংশের মতে দু’ রাক্‘আতেই আদায় করবে। আর আহমাদ ও সাওরীর মতে চার রাক্‘আত আদায় করবে।
সা‘ঈদ ইবনু মানসূর বর্ণনা করেছেন সহীহ সানাদে ইবনু মাস্‘ঊদ হতে বর্ণিত যার ঈদের সালাত ইমামের সাথে ছুটে যাব সে যেন চার রাক্‘আত আদায় করে। আর ইমাম আবূ হানীফাহ্ বলে যে, ঈদের সালাত ক্বাযা আদায় করবে তার ইচ্ছাধীন। দু’ রাক্‘আতের আদায় করতে পারে বা চার রাক্‘আতের।
(وَلَا بَعْدَهُمَا) পরেও ঈদগাহে আদায় করেননি তবে বাড়ী যেয়ে দু’ রাক্‘আত আদায় করবে। আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ)-এর হাদীস, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাতের পূর্বে কোন সালাত আদায় করতেন না আর বাড়ীতে ফিরে দু’ রাক্‘আত আদায় করতেন। আহমাদ, ইবনু মাজাহ, হাকিম; হাফিয, ফাতহুল বারী ও বুলূগুল মারামে হাদীসটি সহীহ বলেছেন। ‘উলামারা মতানৈক্য করেছেন ঈদের সালাতের পূর্বে ও পরে নফল সালাতের ব্যাপারে। ইমাম আহমাদ এ মতে গেছেন, ইমাম মুক্তাদী কারও জন্য ঈদগাহে অথবা মসজিদে কোথাও সালাতের পূর্বে ও পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বৈধ না।
আর এটা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) আরও অনেক সাহাবীর অভিমত। আর ইমাম মালিক-এর মতে ঈদগাহে বৈধ না ইমাম ও মুক্তাদীর জন্য আর মাসজিদ হলে দু’টি মত একটি বৈধ না, অপরটি বৈধ। আর হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ মুদ্দা কথা হল ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে কোন সালাত আদায় করা সুন্নাহ হতে সাব্যস্ত নেই। আর যারা বলেন, জুমু‘আর উপর কিয়াস করে। আমি ভাষ্যকার বলি, আমার নিকট আহমাদ-এর মতটিই বেশি গ্রহণযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩১-[৬] উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে মুসলিমদের জামা’আতে ও দু’আয় অংশ নিতে বের করে নেবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে ঋতুবতীগণ যেন সালাতের জায়গা হতে একপাশে সরে বসেন। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো (শরীর ঢাকার জন্য) বড় চাদর নেই। তিনি বললেন, তাঁর সাথী-বান্ধবী তাঁকে আপন চাদর প্রদান করবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: أُمِرْنَا أَنْ نُخْرِجَ الْحُيَّضَ يَوْمَ الْعِيدَيْنِ وَذَوَاتَ الْخُدُورِ فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَدَعْوَتَهُمْ وَتَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُصَلَّاهُنَّ قَالَتِ امْرَأَةٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِحْدَانَا لَيْسَ لَهَا جِلْبَابٌ؟ قَالَ: «لِتُلْبِسْهَا صَاحِبَتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا»
ব্যাখ্যা: (فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَدَعْوَتَهُمْ) তারা যেন মুসলিমদের জামা‘আতে হাজির হতে পারে এবং দু‘আয় অংশগ্রহণ করতে পারে। অন্য রিওয়ায়াতে এসেছে (يشهدن الخير ودعوة المسلمين) তারা কল্যাণে হাজির হতে পারে এবং মুসলিম দু‘আয় অংশগ্রহণ করতে পারে।
(دعوة المسلمين) এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছে যে, ঈদের সালাতের পরে দু‘আ করা শারী‘আত সম্মত যেমনটি পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে দু‘আ করা হয়। এ বক্তব্যটি চিন্তা সাপেক্ষ বা আপত্তিকর, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে দু’ঈদের সালাতের দু‘আ সাব্যস্ত হয়নি। আর কেউ নির্ধারিত দু‘আ বর্ণনা করেনি সালাতের পরে, বরং প্রমাণিত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর সরাসরি খুতবাহ্ দিয়েছেন। সুতরাং এ অর্থ গ্রহণ করা শুদ্ধ হবে না। আর (دعوة المسلمين) দ্বারা সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য হল, দু‘আসমূহ যেগুলো খুত্বায় পাঠ করা হয় ওয়াজ ও কল্যাণের শব্দসমূহে।
(وَتَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُصَلَّاهُنَّ) আর যেন ঋতুবতী মহিলাদের সালাতের স্থান হতে এক পাশে সরে বসে। সরে বসার হিকমাত প্রসঙ্গে ইবনু মুনীর বলেন, লজ্জাষ্কর পরিবেশ প্রকাশ হওয়ায় তারা সালাত আদায় করবে না অন্য সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী মহিলার সাথে। এজন্য পৃথকভাবে অবস্থান করা তাদের জন্য পছন্দনীয়।
অন্য রিওয়ায়াতে এসেছেঃ আমরা আদেশপ্রাপ্ত হতাম ঈদের দিনে ঈদগাহের উদ্দেশে বের হব। এমন কি পর্দানশীল যুবতীরা ও ঋতুবতীগণ তারা জনগণের পিছনে থাকবে আর তারা তাদের সাথে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করবে এবং তাদের সাথে দু‘আও করবে আর সেই দিনের বারাকাত তথা কল্যাণ ও পবিত্রতা কামনা করবে। হাদীসের ভাষ্যমতে ঋতুবতীগণ আল্লাহর যিকর ও কল্যাণকর স্থান ছাড়বে না বা ত্যাগ করবে না। যে জ্ঞান ও যিকিরের (জিকিরের) মাজলিস মাসজিদ ব্যতিরেকে।
হাদীসের শিক্ষণীয় বক্তব্যঃ
১। পর্দানশীল ও যুবতী মহিলাদের প্রকাশ হওয়া বা বেপর্দা হওয়া অবৈধ তবে মুহরিমের নিকট ব্যতিরেকে।
২। মহিলাদের জন্য জিলবাব তথা বোরকা তৈরি করা প্রয়োজন।
৩। অন্যকে কাপড় ধার দেয়া শারী‘আত সম্মত।
৪। জিলবাব ব্যতিরেকে মহিলাদের বাইরে বের হওয়া সম্পূর্ণ হারাম।
৫। দুই ঈদে উপস্থিত হওয়ার জন্য মহিলাদের জন্য মুসতাহাব চাই যুবতী হোক বা না হোক আত্মমর্যাদাশীল হোক বা না হোক।
৬। শাওকানীর বক্তব্যঃ উম্মু ‘আতিয়্যার হাদীসের ভাষ্যমতে কোন প্রকার বিভেদ ছাড়াই মহিলাদের জন্য ঈদের মাঠের উদ্দেশে বের হওয়া শারী‘আত অনুমোদিত বিষয় চাই যুবতী হোক, বিধবা হোক আর বৃদ্ধা হোক আর ঋতুবতী হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবেশ আপত্তিকর বা ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও কোন ওযর না হয়।
ঈদগাহে রমণীদের গমন সম্পর্কে মতানৈক্যঃ
১। রমণীদের গমন ভাল হাদীসের ভাষ্য আদেশসূচক শব্দটা ভাল এর উপর দাবী করে। আর এতে যুবতী ও বৃদ্ধার মাঝে কোন পার্থক্য নেই
২। পার্থক্য যুবতী ও বৃদ্ধার মাঝে তথা বৃদ্ধারা গমন করতে পারবে আর যুবতীরা পারবে না। শাফি‘ঈরা এ মত দিয়েছেন।
৩। বৈধ তবে ভাল না।
৪। এটা অপছন্দনীয় বা ঘৃণিত।
৫। ঈদগাহে রমণীদের গমনটি তাদের অধিকার।
ক্বাযী ‘আয়ায, আবূ বাকর ও ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যা ইবনু আবী শায়বাতে তাঁরা দু’জন বলেন, (حَقٌّ عَلى كُلِّ ذَاتِ نِطَاقٍ الْخُرُوْجُ إِلَى الْعِيْدَيْنِ) প্রত্যেক যুবতীর অধিকার দু’ঈদের উদ্দেশে ঈদগাহে গমন করা। ইবনু হাজার বলেন, এ হাদীসটি মারফূ‘ সূত্রে সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লামা শাওকানী বলেন, রমণীদের ঈদগাহে গমন ঘৃণিত এ মতটি বাতিল এবং বিকৃত মন্তব্য, কেননা তা সহীহ হাদীসের সুস্পষ্ট বিরোধী। তারা দলীল পেশ করেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর উক্তি যদি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্তমানে মহিলাদের ক্ষেত্রে যা ঘটছে এটি পেতেন তাহলে তিনি অবশ্যই বের হওয়াটাকে নিষেধ করতেন। এটি অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। ইবনু হাযম-এর আটটি জবাব দিয়েছেন। আর ইমাম ত্বহাবী বলেন, ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে অমুসলিমদের সম্মুখে সংখ্যা বেশি করে দেখানোর উদ্দেশে মহিলাদেরকে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে আর এর প্রয়োজন নেই। এটিও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য কেননা।
ইবনু হাজার বলেন, ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন মহিলাদের গমন ঈদগাহের উদ্দেশে তখন তিনি ছোট আর এটা মক্কা বিজয়ের পরে। সুতরাং প্রয়োজন পড়ে না ইসলামের শক্তি প্রকাশের তাই ত্বহাবীর মন্তব্য এ উদ্দেশে পূর্ণ হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩২-[৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বিদায় হাজ্জে) মিনায় অবস্থানকালে আবূ বকর তাঁর নিকট গেলেন। সে সময় আনসারদের দু’জন বালিকা সেখানে গান গাচ্ছিল ও দফ্ বাজাচ্ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা বু’আস যুদ্ধে আনসার গোত্রের লোকেরা যে সব গান গেয়ে গর্ব করেছিল সে সব গান আবৃত্তি করছিল। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদর মুড়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলেন। এ অবস্থা দেখে আবূ বকর বালিকা দু’টিকে ধমক দিলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড় হতে মুখ খুলে বললেন, হে আবূ বকর ওদেরকে ছেড়ে দাও। এটা ঈদের দিন। অন্য বর্ণনায় আছে, হে আবূ বকর! প্রত্যেক জাতির একটা ঈদের দিন আছে। আর এটা হলো আমাদের ঈদের দিন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ فِي أَيَّامِ مِنًى تُدَفِّفَانِ وَتَضْرِبَانِ وَفِي رِوَايَةٍ: تُغَنِّيَانِ بِمَا تَقَاوَلَتِ الْأَنْصَارُ يَوْمَ بُعَاثَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَغَشٍّ بِثَوْبِهِ فَانْتَهَرَهُمَا أَبُو بَكْرٍ فَكَشَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ وَجْهِهِ فَقَالَ: دَعْهُمَا يَا أَبَا بَكْرٍ فَإِنَّهَا أَيَّامُ عِيدٍ وَفِي رِوَايَةٍ: يَا أَبَا بَكْرٍ إِن لكل قوم عيدا وَهَذَا عيدنا
ব্যাখ্যা: جَارِيَتَانِ তার বাণীতে উম্মু সালামার হাদীসে জানা যায় বালিকা দু’জনের একজন হাসসান সাবিত-এর অথবা অন্য হাদীসের মাধ্যমে দু’জনই ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন সালাম-এর।
বু‘আস মদীনাহ্ হতে আনুমানিক দু’মাইল দূরে একটি স্থানের নাম। নিহায়াহ্ গ্রন্থের ভাষ্যকার বলেন, এটা ‘আওস’ সম্প্রদায়ের একটি কিল্লা বা দুর্গের নাম। কারও মতেঃ বানী কুরায়যার বসতবাড়ীর স্থানের নাম। খাত্ত্বাবী বলেনঃ ইসলামের পূর্বে মদীনার বিশেষ শক্তিশালী ‘আওস ও খাযরাজ’ এই দু’গোত্রের মধ্যে সেখানে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ফলে তাদের উভয় গোত্রের মধ্যে এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১২০ (একশত বিশ) বৎসর পর্যন্ত শত্রুতা ও যুদ্ধ চলতে থাকে এমনকি ইসলাম আসলো আল্লাহ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কল্যাণের মাধ্যমে তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দিলেন।
ইমাম নাবাবী বলেন, গানের বিষয় নিয়ে ‘উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। আহলে হিজাযের একটি দল বৈধ বলেছেন দলীল হিসেবে এ হাদীসটি পেশ করেছেন। আর আবূ হানীফাহ্ ও ইরাকবাসীরা হারাম বলেছেন, এ হাদীসটির জবাবে বলেছেন উল্লেখিত হাদীসে বালিকাদ্বয়ের গানের বিষয়বস্ত্ত ও প্রতিপাদ্য ছিল যুদ্ধে তাদের সৈনিকদের বীরত্বপূর্ণ কীর্তিগাঁথার শেস্নাক। যা অশ্লীলতা ও চরিত্র বিধ্বংসের দিকে উদ্বুদ্ধ করেনি। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ সূফীবাদীরা এ হাদীসটিকে গান বাজনা ও তবলা বাজানোর পক্ষে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছে এটি প্রত্যাখ্যানযুক্ত। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সুস্পষ্ট উক্তির মাধ্যমে বলেছেনঃ (وَلَيْسَتَا بِمُغْنِيَتَيْنِ) বালিকা দু’জন গায়িকা ছিল না।
হাদীসটিতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছেঃ
১। ঈদের দিনগুলোতে দায়িত্বশীলগণ তাদের পরিবারের ওপর উদারতা প্রকাশ করবেন যাতে পরিবারে সদস্যরা চিত্তবিনোদন ও আনন্দোৎসব করতে পারে।
২। ঈদের দিনগুলো আনন্দ প্রকাশ করা দীনেরই প্রতীক।
৩। লোকদের জন্য বৈধ তার মেয়ের কাছে যাওয়া স্বামীর নিকট থাকা অবস্থায় এবং স্বামীর উপস্থিতিতে মেয়েকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে পারবে। স্বামী এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে পিতার ওপরই বর্তাবে।
৪। স্বামীরা স্ত্রীর ওপর দয়ার্দ্র হবে।
৫। কল্যাণকামীরা অনর্থক কথাবার্তা কাজ কর্ম হতে বাধা দিবে আর যদি পাপের কাজ না হয় তাহলে অনুমোদন দিবে।
৬। যদি ছাত্র শিক্ষকের সামনে কাউকে অনৈতিক কাজ করতে দেখে তাহলে দ্রুত বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে এবং শিক্ষকের নিকট ফাতাওয়া চাওয়ার অপেক্ষা করবে না বরং এ সময় শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি খেয়াল করবে।
৭। শিক্ষকের সামনে ছাত্রের ফাতাওয়া দেয়া যেমনটি প্রমাণ করে, আবূ বাকর (রাঃ) ধারণা করেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে আছেন। তিনি তাকে জাগ্রত করতে ভয় করলেন। ফলে নিজেই তাঁর মেয়ের প্রতি রাগ করলেন এবং (অন্যায়ের) এ পথ বন্ধ করতে সচেষ্ট হলেন।
৮। বালিকাদের গানের আওয়াজ শ্রবণ বৈধ যদিও তারা দাসী না হয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর (রাঃ)-এর শ্রবণকে অস্বীকার করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩৩-[৮] আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। আর খেজুরও খেতেন তিনি বেজোড়। (বুখারী)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَغْدُو يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ وَيَأْكُلَهُنَّ وِتْرًا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: (لَا يَغْدُوْ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহের উদ্দেশে বের হতেন না যতক্ষণ না তিনি কয়েকটি খেজুর খেতেন। ইবনু হিব্বান ও হাকিমে এসেছে তিনটি, পাঁচটি, সাতটি বা এর চেয়ে কম বা বেশি বেজোড় সংখ্যা খেতেন। আর এটা সুস্পষ্ট যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিয়মিত এমনটি করতেন।
মুহলিব বলেনঃ সালাতের পূর্বে খাওয়ার হিকমাত হল কোন অভিযোগকারী যেন ধারণা করতে না পারে যে, তিনি ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পর্যন্ত সওম অবস্থায় রয়েছেন মনে হয় এ পথকে বন্ধ করার জন্য ইচ্ছে করেছেন।
আর খেজুর খাওয়ার হিকমাত হলঃ তাতে মিষ্টি রয়েছে যা চক্ষুকে শক্তিশালী করে তোলে যাকে সওম দুর্বল করে দিয়েছিল। আর সুস্বাদু ঈমানের অনুকূলে হয় এবং এটা দ্বারা হৃদয়কে নরম করে আর এটা অন্য কিছুর চেয়ে সহজলব্ধ। আর বেজোড় সংখ্যা দ্বারা আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি ইঙ্গিত করা অনুরূপ সকল কাজে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেজোড়ের মাধ্যমে বারাকাত নিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩৪-[৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন (ঈদের মাঠে) যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطَّرِيق. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: রাস্তা পরিবর্তনের হিকমাতঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে যে রাস্তায় গমন করতেন সে রাস্তায় প্রত্যাবর্তন না করে অপর রাস্তায় আসতেন এরূপ করার পেছনে অনেক হিকমাত রয়েছে। হাফিয ইবনু হাজার বিশটির মত একত্রিত করেছেন তন্মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটিঃ
১। যাতে উভয় রাস্তা তার জন্য সাক্ষ্য দিবে।
২। উভয় রাস্তার বাসিন্দাগণ জিন্ হোক বা মানুষ হোক তারা সাক্ষী থাকবে।
৩। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার কারণে রাস্তাটি যে মর্যাদা লাভ করল এতে উভয় রাস্তাই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান হল।
৪। জীবিত আত্মীয়-স্বজন যারা উভয় রাস্তায় বসবাস করছেন তাদের ঈদ উপলক্ষক্ষ সাক্ষাত দান করতেন এবং যারা মৃত তাদেরও সাথে সাক্ষাৎ করতেন সালাম প্রদান ও যিয়ারতের মাধ্যমে।
৫। ইসলামের প্রতীক প্রকাশের জন্য।
৬। আল্লাহর যিকর প্রকাশের জন্য।
৭। মুনাফিক্ব ও ইয়াহূদীদেরকে রাগান্বিত করার জন্য ও তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য যে, তাঁর জনশক্তি বন্ধবহুল।
৮। উভয় রাস্তায় মুসলিমদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য। মুসলিমদের মাঝে আনন্দের ব্যাপকতা প্রচারের জন্য ইত্যাদি।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩৫-[১০] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কুরবানীর ঈদের দিন আমাদের সামনে এক ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বলেন, এ ঈদের দিন প্রথমে আমাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে হবে। এরপর আমরা বাড়ী গিয়ে কুরবানী করব। যে ব্যক্তি এভাবে কাজ করল সে আমাদের পথে চলল। আর যে ব্যক্তি আমাদের সালাত আদায় করার পূর্বে কুরবানী করল সে তার পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি যাবাহ করে নিশ্চয়ই তা মাংস ভক্ষণের ব্যবস্থা করল তা কুরবানীর কিছুই নয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنِ الْبَرَاءِ قَالَ: خَطَبَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ النَّحْرِ فَقَالَ: «إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ نُصَلِّيَ فَإِنَّمَا هُوَ شَاةُ لَحْمٍ عَجَّلَهُ لِأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَيْءٍ»
ব্যাখ্যা: (لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَيْءٍ) ফলে কুরবানীর সাথে এর কোন সম্পর্ক থাকবে না তথা এটি আর ‘ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে না বরং এমন গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) হবে যা পরিবারের জন্য (খাদ্য হিসেবে) উপকার হবে। হাদীসটি প্রমাণ করে যাবাহ করার সময় হবে ইমামের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পর। আর শর্ত জুড়ে দেয়া হয়নি যে, ইমামের কুরবানীর দিকে। আর যে সালাতের পূর্বে যাবাহ করবে তার কুরবানী বৈধ হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩৬-[১১] জুনদুব ইবনু ’আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের আগে যাবাহ করেছে সে যেন এর পরিবর্তে (সালাতের পরে) আর একটি যাবাহ করে। আর যে ব্যক্তি আমাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত যাবাহ করেনি সে যেন (সালাতের পর) আল্লাহর নামে যাবাহ করে (এটাই প্রকৃত কুরবানী)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَجَلِيُّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَلْيَذْبَحْ مَكَانَهَا أُخْرَى وَمَنْ لَمْ يَذْبَحْ حَتَّى صَلَّيْنَا فَلْيَذْبَحْ على اسْم الله»
ব্যাখ্যা: (فَلْيَذْبَحْ على اسْم الله) আল্লাহর নামে যেন যাবাহ করে। আর বুখারীতে এসেছে আনাস (রাঃ) হতে وسمى وكبر যাবাহর সময় ‘বিসমিল্লা-হ’ ও ‘আল্ল-হু আকবার’ বলেছেন। ক্বাযী ‘আয়ায বলেনঃ ‘আল্লাহর নামে শুরু’ চার ধরনের অর্থ হবে।
১। আল্লাহর জন্য যাবাহ করছে।
২। আল্লাহর সুন্নাতে বা নীতিতে যাবাহ করছে।
৩। তার যাবাহটা আল্লাহর নামে প্রকাশ করা ইসলামের উদ্দেশে এবং তার বিরোধিতা করা যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে যাবাহ করে এবং শায়ত্বন (শয়তান)কে অপমানিত করার জন্য।
৪। আল্লাহর নামের মাধ্যমে বারাকাত কামনা করা হাফিয ইবনু হাজার ৫ম অর্থ বলেছেন বিস্মিল্লা-হ বলার মাধ্যমে যাবাহের অনুমোদন চাওয়া।
(فَلْيَذْبَحْ مَكَانَهَا أُخْرى) সে যেন এর স্থলে অন্য একাটি পশু যাবাহ করে। এটি প্রমাণ করে কুরবানী ওয়াজিব আর যারা ওয়াজিব বলেন না তারা এটি দ্বারা উদ্দেশ্য ‘সুন্নাহ’ মনে করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩৭-[১২] বারা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি (ঈদের) সালাতের আগে যাবাহ করল সে নিজের (খাবার) জন্যই যাবাহ করল। আর যে ব্যক্তি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পর যাবাহ করল তার কুরবানী পরিপূর্ণ হলো। সে মুসলিমদের নিয়ম অনুসরণ করল। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنِ الْبَرَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَإِنَّمَا يَذْبَحُ لِنَفْسِهِ وَمَنْ ذَبَحَ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَقَدْ تَمَّ نُسُكُهُ وَأَصَابَ سُنَّةَ الْمُسلمين»
ব্যাখ্যা: এ হাদীস এবং পূর্বের হাদীস সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যাবাহের সময় শুরু হয় সালাতের পরে। আর অপেক্ষা করা হয়নি ইমামের কুরবানী পর্যন্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩৮-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবাহ করতেন এবং নহর করতেন ঈদগাহের ময়দানে। (বুখারী)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْبَحُ وَيَنْحَرُ بِالْمُصَلَّى. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: কুরবানী ঈদগাহের মাঠে করা মুস্তাহাব বা ভাল আর হিকমাত হলঃ দরিদ্র ও ফকীররা যেতে পারে এবং কুরবানীর গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) গ্রহণে অংশীদার হতে পারে। কারও মতে কুরবানী হল সাধারণ নৈকট্য। সুতরাং প্রকাশ করাই উত্তম। কেননা সেখানে সুন্নাহকে পুনর্জীবিত করা হয়।