১৪৩২

পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত

১৪৩২-[৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বিদায় হাজ্জে) মিনায় অবস্থানকালে আবূ বকর তাঁর নিকট গেলেন। সে সময় আনসারদের দু’জন বালিকা সেখানে গান গাচ্ছিল ও দফ্ বাজাচ্ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা বু’আস যুদ্ধে আনসার গোত্রের লোকেরা যে সব গান গেয়ে গর্ব করেছিল সে সব গান আবৃত্তি করছিল। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদর মুড়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলেন। এ অবস্থা দেখে আবূ বকর বালিকা দু’টিকে ধমক দিলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড় হতে মুখ খুলে বললেন, হে আবূ বকর ওদেরকে ছেড়ে দাও। এটা ঈদের দিন। অন্য বর্ণনায় আছে, হে আবূ বকর! প্রত্যেক জাতির একটা ঈদের দিন আছে। আর এটা হলো আমাদের ঈদের দিন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ فِي أَيَّامِ مِنًى تُدَفِّفَانِ وَتَضْرِبَانِ وَفِي رِوَايَةٍ: تُغَنِّيَانِ بِمَا تَقَاوَلَتِ الْأَنْصَارُ يَوْمَ بُعَاثَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَغَشٍّ بِثَوْبِهِ فَانْتَهَرَهُمَا أَبُو بَكْرٍ فَكَشَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ وَجْهِهِ فَقَالَ: دَعْهُمَا يَا أَبَا بَكْرٍ فَإِنَّهَا أَيَّامُ عِيدٍ وَفِي رِوَايَةٍ: يَا أَبَا بَكْرٍ إِن لكل قوم عيدا وَهَذَا عيدنا

وعن عاىشة قالت: ان ابا بكر دخل عليها وعندها جاريتان في ايام منى تدففان وتضربان وفي رواية: تغنيان بما تقاولت الانصار يوم بعاث والنبي صلى الله عليه وسلم متغش بثوبه فانتهرهما ابو بكر فكشف النبي صلى الله عليه وسلم عن وجهه فقال: دعهما يا ابا بكر فانها ايام عيد وفي رواية: يا ابا بكر ان لكل قوم عيدا وهذا عيدنا

ব্যাখ্যা: جَارِيَتَانِ তার বাণীতে উম্মু সালামার হাদীসে জানা যায় বালিকা দু’জনের একজন হাসসান সাবিত-এর অথবা অন্য হাদীসের মাধ্যমে দু’জনই ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন সালাম-এর।

বু‘আস মদীনাহ্ হতে আনুমানিক দু’মাইল দূরে একটি স্থানের নাম। নিহায়াহ্ গ্রন্থের ভাষ্যকার বলেন, এটা ‘আওস’ সম্প্রদায়ের একটি কিল্লা বা দুর্গের নাম। কারও মতেঃ বানী কুরায়যার বসতবাড়ীর স্থানের নাম। খাত্ত্বাবী বলেনঃ ইসলামের পূর্বে মদীনার বিশেষ শক্তিশালী ‘আওস ও খাযরাজ’ এই দু’গোত্রের মধ্যে সেখানে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ফলে তাদের উভয় গোত্রের মধ্যে এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১২০ (একশত বিশ) বৎসর পর্যন্ত শত্রুতা ও যুদ্ধ চলতে থাকে এমনকি ইসলাম আসলো আল্লাহ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কল্যাণের মাধ্যমে তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দিলেন।

ইমাম নাবাবী বলেন, গানের বিষয় নিয়ে ‘উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। আহলে হিজাযের একটি দল বৈধ বলেছেন দলীল হিসেবে এ হাদীসটি পেশ করেছেন। আর আবূ হানীফাহ্ ও ইরাকবাসীরা হারাম বলেছেন, এ হাদীসটির জবাবে বলেছেন উল্লেখিত হাদীসে বালিকাদ্বয়ের গানের বিষয়বস্ত্ত ও প্রতিপাদ্য ছিল যুদ্ধে তাদের সৈনিকদের বীরত্বপূর্ণ কীর্তিগাঁথার শেস্নাক। যা অশ্লীলতা ও চরিত্র বিধ্বংসের দিকে উদ্বুদ্ধ করেনি। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ সূফীবাদীরা এ হাদীসটিকে গান বাজনা ও তবলা বাজানোর পক্ষে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছে এটি প্রত্যাখ্যানযুক্ত। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সুস্পষ্ট উক্তির মাধ্যমে বলেছেনঃ (وَلَيْسَتَا بِمُغْنِيَتَيْنِ) বালিকা দু’জন গায়িকা ছিল না।

হাদীসটিতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছেঃ

১। ঈদের দিনগুলোতে দায়িত্বশীলগণ তাদের পরিবারের ওপর উদারতা প্রকাশ করবেন যাতে পরিবারে সদস্যরা চিত্তবিনোদন ও আনন্দোৎসব করতে পারে।

২। ঈদের দিনগুলো আনন্দ প্রকাশ করা দীনেরই প্রতীক।

৩। লোকদের জন্য বৈধ তার মেয়ের কাছে যাওয়া স্বামীর নিকট থাকা অবস্থায় এবং স্বামীর উপস্থিতিতে মেয়েকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে পারবে। স্বামী এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে পিতার ওপরই বর্তাবে।

৪। স্বামীরা স্ত্রীর ওপর দয়ার্দ্র হবে।

৫। কল্যাণকামীরা অনর্থক কথাবার্তা কাজ কর্ম হতে বাধা দিবে আর যদি পাপের কাজ না হয় তাহলে অনুমোদন দিবে।

৬। যদি ছাত্র শিক্ষকের সামনে কাউকে অনৈতিক কাজ করতে দেখে তাহলে দ্রুত বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে এবং শিক্ষকের নিকট ফাতাওয়া চাওয়ার অপেক্ষা করবে না বরং এ সময় শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি খেয়াল করবে।

৭। শিক্ষকের সামনে ছাত্রের ফাতাওয়া দেয়া যেমনটি প্রমাণ করে, আবূ বাকর (রাঃ) ধারণা করেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে আছেন। তিনি তাকে জাগ্রত করতে ভয় করলেন। ফলে নিজেই তাঁর মেয়ের প্রতি রাগ করলেন এবং (অন্যায়ের) এ পথ বন্ধ করতে সচেষ্ট হলেন।

৮। বালিকাদের গানের আওয়াজ শ্রবণ বৈধ যদিও তারা দাসী না হয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর (রাঃ)-এর শ্রবণকে অস্বীকার করেননি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)