পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩১-[৬] উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে মুসলিমদের জামা’আতে ও দু’আয় অংশ নিতে বের করে নেবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে ঋতুবতীগণ যেন সালাতের জায়গা হতে একপাশে সরে বসেন। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো (শরীর ঢাকার জন্য) বড় চাদর নেই। তিনি বললেন, তাঁর সাথী-বান্ধবী তাঁকে আপন চাদর প্রদান করবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ
وَعَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: أُمِرْنَا أَنْ نُخْرِجَ الْحُيَّضَ يَوْمَ الْعِيدَيْنِ وَذَوَاتَ الْخُدُورِ فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَدَعْوَتَهُمْ وَتَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُصَلَّاهُنَّ قَالَتِ امْرَأَةٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِحْدَانَا لَيْسَ لَهَا جِلْبَابٌ؟ قَالَ: «لِتُلْبِسْهَا صَاحِبَتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا»
ব্যাখ্যা: (فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَدَعْوَتَهُمْ) তারা যেন মুসলিমদের জামা‘আতে হাজির হতে পারে এবং দু‘আয় অংশগ্রহণ করতে পারে। অন্য রিওয়ায়াতে এসেছে (يشهدن الخير ودعوة المسلمين) তারা কল্যাণে হাজির হতে পারে এবং মুসলিম দু‘আয় অংশগ্রহণ করতে পারে।
(دعوة المسلمين) এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছে যে, ঈদের সালাতের পরে দু‘আ করা শারী‘আত সম্মত যেমনটি পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে দু‘আ করা হয়। এ বক্তব্যটি চিন্তা সাপেক্ষ বা আপত্তিকর, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে দু’ঈদের সালাতের দু‘আ সাব্যস্ত হয়নি। আর কেউ নির্ধারিত দু‘আ বর্ণনা করেনি সালাতের পরে, বরং প্রমাণিত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর সরাসরি খুতবাহ্ দিয়েছেন। সুতরাং এ অর্থ গ্রহণ করা শুদ্ধ হবে না। আর (دعوة المسلمين) দ্বারা সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য হল, দু‘আসমূহ যেগুলো খুত্বায় পাঠ করা হয় ওয়াজ ও কল্যাণের শব্দসমূহে।
(وَتَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُصَلَّاهُنَّ) আর যেন ঋতুবতী মহিলাদের সালাতের স্থান হতে এক পাশে সরে বসে। সরে বসার হিকমাত প্রসঙ্গে ইবনু মুনীর বলেন, লজ্জাষ্কর পরিবেশ প্রকাশ হওয়ায় তারা সালাত আদায় করবে না অন্য সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী মহিলার সাথে। এজন্য পৃথকভাবে অবস্থান করা তাদের জন্য পছন্দনীয়।
অন্য রিওয়ায়াতে এসেছেঃ আমরা আদেশপ্রাপ্ত হতাম ঈদের দিনে ঈদগাহের উদ্দেশে বের হব। এমন কি পর্দানশীল যুবতীরা ও ঋতুবতীগণ তারা জনগণের পিছনে থাকবে আর তারা তাদের সাথে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করবে এবং তাদের সাথে দু‘আও করবে আর সেই দিনের বারাকাত তথা কল্যাণ ও পবিত্রতা কামনা করবে। হাদীসের ভাষ্যমতে ঋতুবতীগণ আল্লাহর যিকর ও কল্যাণকর স্থান ছাড়বে না বা ত্যাগ করবে না। যে জ্ঞান ও যিকিরের (জিকিরের) মাজলিস মাসজিদ ব্যতিরেকে।
হাদীসের শিক্ষণীয় বক্তব্যঃ
১। পর্দানশীল ও যুবতী মহিলাদের প্রকাশ হওয়া বা বেপর্দা হওয়া অবৈধ তবে মুহরিমের নিকট ব্যতিরেকে।
২। মহিলাদের জন্য জিলবাব তথা বোরকা তৈরি করা প্রয়োজন।
৩। অন্যকে কাপড় ধার দেয়া শারী‘আত সম্মত।
৪। জিলবাব ব্যতিরেকে মহিলাদের বাইরে বের হওয়া সম্পূর্ণ হারাম।
৫। দুই ঈদে উপস্থিত হওয়ার জন্য মহিলাদের জন্য মুসতাহাব চাই যুবতী হোক বা না হোক আত্মমর্যাদাশীল হোক বা না হোক।
৬। শাওকানীর বক্তব্যঃ উম্মু ‘আতিয়্যার হাদীসের ভাষ্যমতে কোন প্রকার বিভেদ ছাড়াই মহিলাদের জন্য ঈদের মাঠের উদ্দেশে বের হওয়া শারী‘আত অনুমোদিত বিষয় চাই যুবতী হোক, বিধবা হোক আর বৃদ্ধা হোক আর ঋতুবতী হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবেশ আপত্তিকর বা ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও কোন ওযর না হয়।
ঈদগাহে রমণীদের গমন সম্পর্কে মতানৈক্যঃ
১। রমণীদের গমন ভাল হাদীসের ভাষ্য আদেশসূচক শব্দটা ভাল এর উপর দাবী করে। আর এতে যুবতী ও বৃদ্ধার মাঝে কোন পার্থক্য নেই
২। পার্থক্য যুবতী ও বৃদ্ধার মাঝে তথা বৃদ্ধারা গমন করতে পারবে আর যুবতীরা পারবে না। শাফি‘ঈরা এ মত দিয়েছেন।
৩। বৈধ তবে ভাল না।
৪। এটা অপছন্দনীয় বা ঘৃণিত।
৫। ঈদগাহে রমণীদের গমনটি তাদের অধিকার।
ক্বাযী ‘আয়ায, আবূ বাকর ও ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যা ইবনু আবী শায়বাতে তাঁরা দু’জন বলেন, (حَقٌّ عَلى كُلِّ ذَاتِ نِطَاقٍ الْخُرُوْجُ إِلَى الْعِيْدَيْنِ) প্রত্যেক যুবতীর অধিকার দু’ঈদের উদ্দেশে ঈদগাহে গমন করা। ইবনু হাজার বলেন, এ হাদীসটি মারফূ‘ সূত্রে সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লামা শাওকানী বলেন, রমণীদের ঈদগাহে গমন ঘৃণিত এ মতটি বাতিল এবং বিকৃত মন্তব্য, কেননা তা সহীহ হাদীসের সুস্পষ্ট বিরোধী। তারা দলীল পেশ করেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর উক্তি যদি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্তমানে মহিলাদের ক্ষেত্রে যা ঘটছে এটি পেতেন তাহলে তিনি অবশ্যই বের হওয়াটাকে নিষেধ করতেন। এটি অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। ইবনু হাযম-এর আটটি জবাব দিয়েছেন। আর ইমাম ত্বহাবী বলেন, ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে অমুসলিমদের সম্মুখে সংখ্যা বেশি করে দেখানোর উদ্দেশে মহিলাদেরকে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে আর এর প্রয়োজন নেই। এটিও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য কেননা।
ইবনু হাজার বলেন, ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন মহিলাদের গমন ঈদগাহের উদ্দেশে তখন তিনি ছোট আর এটা মক্কা বিজয়ের পরে। সুতরাং প্রয়োজন পড়ে না ইসলামের শক্তি প্রকাশের তাই ত্বহাবীর মন্তব্য এ উদ্দেশে পূর্ণ হয় না।