পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৩৯-[১৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করার পর তাদের দু’টি দিন ছিল। এ দিন দু’টিতে তারা খেলাধূলা ও আমোদ-প্রমোদ করত। (এ দেখে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এ দু’টি দিন কি? তারা বলল ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়্যাতের সময় এ দিন দু’টিতে আমরা খেলাধূলা করতাম। (এ কথা শ্রবণে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দু’দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য আরো উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। এর একটি হলো ঈদুল আযহার দিন ও অপরটি ঈদুল ফিতরের দিন। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ: «مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟» قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَدْ أَبْدَلَكُمُ اللَّهُ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (يَوْمَانِ يَلْعَبُوْنَ فِيْهِمَا) এমন দু’টি দিন নির্ধারিত ছিল যে দিনগুলোতে খেলাধূলা ও রং তামাশা করত আর দিন দু’টি ‘নিরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ হাদীসটিতে দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হয় যে, কাফিরদের ঈদোৎসব সমূহকে যেমন নিরোজ ও মেহেরজানকে সম্মান করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে বলেন, মুশরিকদের উৎসবসমূহে আনন্দ প্রকাশ করা ও তাদের সাদৃশ্য হওয়া ঘৃণা হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
হানাফী সম্প্রদায়ের শায়খ আবূ হাফস্ আল আন্ নাসাফী কড়া সমালোচনা করে বলেন, মুশরিকদের ঐ দিনে একটি ডিমও উপহার দেয় তাদের উৎসবকে সম্মান করে তাহলে সে আল্লাহর সাথে কুফরী করল। আর ক্বাযী মানসূর হানাফী বলেনঃ ঐ দিনে কেউ যদি কোন কিছু ক্রয় করে তার ক্রয় অন্য কোন উদ্দেশ্য না অথবা অন্য কাউকে উপহার দেয় ঐ উৎসবকে সম্মানের উদ্দেশে যেমন কাফিরকে সম্মান করে তাহলে সে কাফির হল। আর যদি ভোগের উদ্দেশে ক্রয় করে আর স্বাভাবিক ভালবাসার বন্ধুত্ব চালু রাখার জন্য উপহার দেয় তাহলে কাফির হবে না তবে কাজটি ঘৃণিত এর থেকে বেঁচে থাকা প্রয়োজন। ইবনু হাজার বলেন, এ কুসংস্কৃতি চালু করেছে মিসরবাসীরা তাদের অধিকাংশরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের উৎসব ও সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়েছিল তাদেরকে সম্মান করতে যেয়ে। যেমন খাওয়া-দাওয়ায় পোশাকে-আষাকে মিশে গিয়েছিল। ইবনু হাজার মালিকী-এর প্রচন্ড বিরোধিতা করেন এবং মুসলিমদের সংস্কৃতিগুলো তুলে ধরেন।
আমি (ভাষ্যকার) বলিঃ অনুরূপ প্রচুর সংখ্যক ভারত ও পাকিস্তানের মুসলিম কাফিরদের সাথে বিশেষ করে হিন্দু, খৃষ্টান, ইয়াহূদী অগ্নিপূজকে তাদের উৎসবের সংস্কৃতির সাথে মিশে গেছে। তারা যা করে মুসলিমরাও তা করে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪০-[১৫] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে ও ঈদুল আযহার দিন কিছু খেয়ে সালাতের জন্য বের হতেন না। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]
وَعَن بُرَيْدَة قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَطْعَمَ وَلَا يَطْعَمُ يَوْمَ الْأَضْحَى حَتَّى يُصَلِّيَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه والدارمي
ব্যাখ্যা: হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সুন্নাহ হল ঈদুল ফিতরে সালাতের পূর্বে খাওয়া আর কুরবানী ঈদে সালাতের পরে খাওয়া। ঈদুল আযহায় দেরী করে খাওয়ার হিকমাত হল, কেননা ঐদিনে কুরবানী শুরু করবে আর কুরবানীর গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) দিয়ে ইফত্বার করবে। যায়ন ইবনু মুনীর বলেছেনঃ দু’ঈদের নির্দিষ্ট সদাক্বাহ্ (সাদাকা) রয়েছে ঈদুল ফিতরের সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আর ঈদুল আযহার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) পশু যাবাহের পর। আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন, যার কুরবানী রয়েছে সে ফিরে আসার পর খাবে কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবাহকৃত গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) খেয়েছেন ফিরে আসার পর। আর যার কুরবানী নেই তার খাওয়াতে বাধা নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪১-[১৬] কাসীর তাঁর পিতা ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে, তিনি তাঁর পিতা ’আমর ইবনু ’আওফ হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ঈদের প্রথম রাক্’আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাতবার ও দ্বিতীয় রাক্’আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচবার তাকবীর বলেছেন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ كَثِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَبَّرَ فِي الْعِيدَيْنِ فِي الْأُولَى سَبْعًا قَبْلَ الْقِرَاءَةِ وَفِي الْآخِرَةِ خَمْسًا قَبْلَ الْقِرَاءَةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه والدارمي
ব্যাখ্যা: অন্য স্থানে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস দারাকুত্বনীতে এসেছে, তাতে বলা হয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরুর তাকবীর ব্যতিরেকে বারোটি তাকবীর দিয়েছেন। আর ‘আমর ইবনু ‘আস-এর হাদীস তাকবীরে তাহরীমা ব্যতিরেকে। আর হাদীসটি সাব্যস্ত করে দলীল হিসেবে যে, দু’ঈদে ক্বিরাআতের পূর্বে প্রথম রাক্‘আতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে পাঁচ তাকবীর আর এমতটি সাহাবীদের বিশাল সংখ্যক দলের। তাদের মধ্যে খুলাফায়ে রাশিদীনের এবং তাবি‘ঈন ও পরবর্তী ইমামদের। আর ইমাম আবূ হানীফার মত প্রথম রাক্‘আতে তাকবীরে তাহরীমার পরে ক্বিরাআতের পূর্বে তিন তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে ক্বিরাআতের পরে রুকূ‘ তাকবীর ব্যতিরেকে তিন তাকবীর। আমি (ভাষ্যকার) বলিঃ আমাদের ‘আমল এবং উত্তম ক্বিরাআতের পূর্বে প্রথম রাক্‘আতে বার তাকবীর সাত দ্বিতীয় রাক্‘আতে পাঁচ তাকবীর।
দু’টি দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রথমতঃ প্রচুর সংখ্যক মারফূ' হাদীস বর্ণিত হয়েছে, এ বিষয়ে তার মধ্যে কতকগুলো সহীহ অথবা হাসান আর বাকী হাদীসগুলো তার সমর্থন করেছে। পক্ষান্তরে আবূ হানীফার মতের স্বপক্ষে একটি মাত্র মারফূ' হাদীস আবূ মূসা আল আশ্‘আরীর হাদীস যা সামনে আসছে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য না আর বাকী হাদীসগুলো মাওকূফ এবং দুর্বল। দ্বিতীয়তঃ খুলাফায়ে রাশিদীনের ‘আমল। তথা ১২ তাকবীর।
সংশ্লিষ্ট সংক্ষিপ্ত কিছু মাস্আলাহ্ঃ
১। তাকবীর সুন্নাহ, ওয়াজিব না ভুলে ক্বিরাআত (কিরআত) শুরু করলে তাকবীর পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই।
২। শুরুর দু‘আ তথা সানা পড়ার স্থানঃ ইবনু কুদামাহ্ বলেন, প্রথম তাকবীরের পরে সানা পড়বে। অতঃপর ঈদের তাকবীর দিবে। তারপর আ‘ঊযুবিল্লা-হ পড়ে ক্বিরাআত (কিরআত) শুরু করবে। আবার কারো মতে তাকবীর পড়ে সানা পড়বে তবে যেটি করুক বৈধ হবে।
৩। প্রত্যেক তাকবীরের সময় দু’হাত উঠানোঃ প্রত্যেক তাকবীরের সময় হাত উঠানো মুস্তাহাব আহমাদে বর্ণিত হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরের সময় হাত উঠাতেন আর ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি জানাযার সময় প্রত্যেক তাকবীরে দু’হাত উঠাতেন এটিই গ্রহণযোগ্য মত।
৪। তাকবীরে ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে, না মধ্যখানে বিরতি দিয়ে তাসবীহ তাহলীল পড়বে সঠিক মত হল তাকবীরের মাঝে স্বতন্ত্র কোন দু‘আ নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪২-[১৭] জা’ফার সাদিক্ব ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) মুরসাল হিসেবে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর, ’উমার (রাঃ) দু’ ঈদে ও ইসতিসকার সালাতে সাতবার ও পাঁচবার করে তাকবীর বলেছেন। তাঁরা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন খুতবার পূর্বে। সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়েছেন উচ্চস্বরে। (শাফি’ঈ)[1]
وَعَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ مُرْسَلًا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ كَبَّرُوا فِي الْعِيدَيْنِ وَالِاسْتِسْقَاءِ سَبْعًا وَخَمْسًا وَصَلَّوْا قبل الْخطْبَة وجهروا بِالْقِرَاءَةِ. رَوَاهُ الشَّافِعِي
ব্যাখ্যা: (وَجَهَرُوْا بِالْقِرَاءَةِ) তারা সশব্দে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করেছেন। এ ব্যাপারে সবাই ঐকমত্য হয়েছেন এবং আহলে ‘ইলমদের মাঝে কোন মতানৈক্য নেই যে, ঈদের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) সশব্দে তথা বড় আওয়াজ করে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪৩-[১৮] সা’ঈদ ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা আল আশ্’আরী ও হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সালাতে কতবার তাকবীর বলতেন? তখন আবূ মূসা আল আশ্’আরী বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানাযার তাকবীরের মতো চার তাকবীর বলতেন। এ জবাব শুনে হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বললেন, তিনি ঠিকই বলেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ الْعَاصِ قَالَ: سَأَلْتُ أَبَا مُوسَى وَحُذَيْفَةَ: كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُ فِي الْأَضْحَى وَالْفِطْرِ؟ فَقَالَ أَبُو مُوسَى: كَانَ يُكَبِّرُ أَرْبَعًا تَكْبِيرَهُ على الجنازه. فَقَالَ حُذَيْفَة: صدق. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আমি (ভাষ্যকার) বলি, এ হাদীসের সানাদে আবূ ‘আয়িশাহ্ আল উমাবী অজ্ঞাত রাবী। আর ইবনু হাযম বলেন, তিনি অজ্ঞাত রাবী, কেউ তাকে চেনে না আর তার হতে কোন হাদীস বর্ণনা করা শুদ্ধ হবে না। সুতরাং সুস্পষ্ট হয়েছে এ হাদীস দলীল গ্রহণে সহীহ হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪৪-[১৯] বারা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঈদের দিনে একটি ক্বাওস দেয়া হলো। তিনি এ ক্বাওসের উপর ভর করে (ঈদের) খুতবাহ্ দান করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ الْبَرَاءِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُووِلَ يَوْمَ الْعِيدِ قَوْسًا فَخَطَبَ عَلَيْهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪৫-[২০] ’আত্বা (রহঃ) হতে মুরসাল হাদীস হিসেবে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ প্রদান করার সময় নিজের লাঠির উপর ঠেস দিয়ে (খুতবাহ্) দিতেন। (শাফি’ঈ)[1]
وَعَنْ عَطَاءٍ مُرْسَلًا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَطَبَ يَعْتَمِدُ عَلَى عنزته اعْتِمَادًا. رَوَاهُ الشَّافِعِي
ব্যাখ্যা: হাদীসে খুতবাহ্ (খুতবা) দানের সময় ধনুক বা লাঠির উপর ভর করার অনুমোদন পাওয়া যায়। আর হিকমাত হলঃ অনর্থক বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা বা উত্তেজনাকে সংযত রাখা।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪৬-[২১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবার আগেই আযান ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) ছাড়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করে দিলেন। সালাত শেষ করার পর তিনি বিলালের গায়ে ভর করে দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব ও গুণ গরীমা বর্ণনা করলেন। লোকদেরকে উপদেশ বাণী শুনালেন। তাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। আল্লাহর আদেশ নিষেধ অনুসরণ করার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগালেন। তারপর তিনি মহিলাদের দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর সাথে ছিলেন বিলাল। তাদেরকে তিনি আল্লাহর ভয়-ভীতির কথা বললেন, ওয়াজ করলেন। পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। (নাসায়ী)[1]
وَعَن جَابر قَالَ: شَهِدْتُ الصَّلَاةِ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي يَوْمِ عِيدٍ فَبَدَأَ بِالصَّلَاةِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ بِغَيْرِ أَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ فَلَمَّا قَضَى الصَّلَاةَ قَامَ مُتَّكِئًا عَلَى بِلَالٍ فَحَمَدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَوَعَظَ النَّاسَ وَذَكَّرَهُمْ وَحَثَّهُمْ على طَاعَته ثمَّ قَالَ: وَمَضَى إِلَى النِّسَاءِ وَمَعَهُ بِلَالٌ فَأَمَرَهُنَّ بِتَقْوَى الله ووعظهن وذكرهن. رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে প্রমাণিত হয়, খতীব সাহেবের উচিত ধনুক নেয়া ও লাঠির উপর ভর দিবে বা কোন মানুষের উপর। আর প্রমাণ করে হাদীস মহিলাদের জন্য ঈদগাহে পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে পুরুষদের সাথে মেলামেশার সুযোগ না থাকে।
‘ওয়াজ করতেন’ মুসলিমের রিওয়ায়াতে এসেছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করলেন, অতঃপর উৎসাহ প্রদান করলেন তার অনুগতদের আর বললেন, হে মহিলা সকল! তোমরা দান কর কেননা তোমরা জাহান্নামের আগুনে প্রজ্জ্বলিত হবে। অতঃপর বংশের মর্যাদায় তত উচ্চ না এবং দু’গাল ঝলসানো একজন মহিলা বলল, হে আল্লাহর রসূল! কারণ কী? তিনি জবাবে বললেন, তোমরা বেশি বেশি অভিযোগ কর এবং আপনজন তথা স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। অতঃপর তারা মহিলারা তাদের গলার হার কানের দুল এবং আংটি খুলে বিলালের কাপড়ে জমা করতে লাগলেন দানের উদ্দেশে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪৭-[২২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন এক পথ দিয়ে (ঈদগাহে) আসতেন। আবার অন্য পথ দিয়ে (বাড়ীতে) ফিরতেন। (তিরমিযী, দারিমী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَرَجَ يَوْمَ الْعِيدِ فِي طَرِيقٍ رَجَعَ فِي غَيْرِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ والدارمي
ব্যাখ্যা: ঈদ হতে ফেরার পথে অন্য রাস্তা দিয়ে আসবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪৮-[২৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একবার ঈদের দিন তাঁদের সেখানে বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সবাইকে নিয়ে মসজিদে ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن أبي هُرَيْرَة أَنَّهُ أَصَابَهُمْ مَطَرٌ فِي يَوْمِ عِيدٍ فَصَلَّى بِهِمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الْعِيدِ فِي الْمَسْجِدِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: আমি (ভাষ্যকার) বলি, হাদীস প্রমাণ করে ওযর ব্যতিরেকে ময়দান ছেড়ে মসজিদে ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা মাকরূহ বা ঘৃণিত।
‘উলামারা মতভেদ করেছেনঃ মাসজিদ প্রশস্ত হলে মসজিদে পড়া উত্তম, না মাঠে পড়া উত্তম? ইমাম শাফি‘ঈর মতে মসজিদে পড়াই উত্তম, কেননা এর উদ্দেশ্য হল একত্রিত হওয়া। আর এটি মসজিদে একত্রিত সম্ভব হচ্ছে তাই মাসজিদই উত্তম। আর মক্কাবাসীরা মাসজিদ প্রশস্ত হওয়ার কারণে তারা মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করেন। তবে উত্তম মত হল ওযর ব্যতিরেকে মাঠে সালাত আদায় করা।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৪৯-[২৪] আবুল হুওয়াইরিস (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজরানে নিযুক্ত তাঁর প্রশাসক ’আমর ইবনু হাযম-এর নিকট চিঠি লিখলেন। ঈদুল আযহার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তাড়াতাড়ি আদায় করাবে। আর ঈদুল ফিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিলম্ব করে আদায় করবে। লোকজনকে ওয়াজ নাসীহাত করবে। (শাফি’ঈ)[1]
وَعَن أبي الْحُوَيْرِث أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَى عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ وَهُوَ بِنَجْرَانَ عَجِّلِ الْأَضْحَى وَأَخِّرِ الْفِطْرَ وَذَكِّرِ النَّاسَ. رَوَاهُ الشَّافِعِي
ব্যাখ্যা: আল্লামা শাওকানী বলেন, হাদীস প্রমাণ করে ঈদুল আযহা তাড়াতাড়ি করে এবং ঈদুল ফিতরের সালাত বিলম্বে পড়া শারী‘আত সম্মত। আর এমনটি করার রহস্য হলো ঈদুল আযহার সালাতের পর কুরবানীর পশু যাবাহ করা হয় এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়। তাই এ সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করা আবশ্যক, পক্ষান্তরে সালাতের ফিতরের ক্ষেত্রে এমনটি না বরং সালাতের পূর্বে কিছু আহার করা ও ফিতরাহ্ আদায় করে দিতে হয় তাই এ সালাত তাড়াতাড়ি না করে বিলম্বে আদায় করা হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত
১৪৫০-[২৫] আবূ ’উমায়র ইবনু আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি তাঁর এক চাচা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত। (তিনি বলেন) একবার একদল আরোহী নবীকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে সাক্ষ্য দিলো যে, তারা গতকাল (শাও্ওয়াল মাসের) নতুন চাঁদ দেখেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সওম ভেঙ্গে ফেলার ও পরের দিন সকালে ঈদগাহের ময়দানে যেতে নির্দেশ দিলেন। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي عُمَيْرِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ عُمُومَةٍ لَهُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ رَكْبًا جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْهَدُونَ أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلَالَ بالْأَمْس ن فَأَمرهمْ أَن يفطروا وَإِذا أَصْبحُوا أَن يَغْدُو إِلَى مصلاهم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (أَنَّ رَكْبًا جَاءُوْا إِلَى النَّبِيِّ ﷺ) একদল আরোহী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন এবং সাক্ষ্য দিলেন তারা গতকাল্য শাও্ওয়ায়েল নতুন চাঁদ দেখেছে। অর্থাৎ মদীনাতে রমাযান মাসের ত্রিশ রাত্রে চাঁদ দেখেনি, সুতরাং ত্রিশ তারিখে সওম পালন করেছেন, অতঃপর একটি দল আসলো এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, ত্রিশ রাত্রিতে চাঁদ দেখেছে। আহমাদ, ইবনু মাজাহ্ এবং দারাকুত্বনী ও বায়হাক্বীতে এসেছে, শাও্ওয়ালে চাঁদের ব্যাপারে আমাদের ওপর মেঘাচ্ছন্ন হলো। সুতরাং আমরা সওম পালন করলাম, অতঃপর দিনের শেষ প্রহরে একটি আরোহী দল আসলো এবং তারা সাক্ষ্য দিল, গতকাল তারা দেখেছে। ত্বাহাবী রিওয়ায়াতে সূর্য ঢলার পর তারা সাক্ষ্য দিল। আল্লাম শাওকানী বলেনঃ হাদীসটি প্রমাণ করে ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দ্বিতীয় দিন আদায় করা মাঝে সময় অতিবাহিত হবার পর যদি ঈদের সালাত আদায়ের জন্য কোন প্রমাণ না থেকে থাকে আর হাদীসটির সুস্পষ্ট ভাষ্য দ্বিতীয় দিন ঈদের সালাত আদায়যোগ্য ক্বাযা হিসেবে বিবেচিত হবে না।