পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

ক্বদর (কদর) বা তাক্বদীর তাই, যা আল্লাহ ফায়সালা করেছেন এবং কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করেছেন।

তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনার অর্থঃ এ বিশ্বাস রাখা যে, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে তা ভালো হোক আর মন্দ হোক, ক্ষতিকর হোক বা উপকারী হোক তা’ নির্ধারিত। এমনকি বান্দার কর্মকান্ড যার মধ্যে ঈমান আনা, কুফরী করা, আনুগত্য করা, অবাধ্য হওয়া, পথভ্রষ্ট হওয়া ও সৎ পথে চলা- সব কিছুই আল্লাহর ফায়সালা। এসব তাঁরই নির্ধারণ, ইচ্ছা, সৃষ্টি ও প্রভাবের ফল। তবে তিনি ঈমান আনয়নে ও তাঁর আনুগত্যে সন্তুষ্ট হন এবং এজন্য তিনি প্রতিদানের অঙ্গীকারও করেছেন। পক্ষান্তরে কুফরী ও অবাধ্যতায় সন্তুষ্ট হন না বরং এজন্য তিনি শাস্তির ভয়প্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ তা’আলা সবকিছু নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ- তিনি কোন কিছু অস্তিত্বে আনার আগেই তার পরিমাণ, অবস্থা ও তার অস্তিত্বে আসার কাল বা সময় সম্পর্কে অবহিত। অতঃপর তিনি তা অস্তিত্বে এনেছেন। অতএব উর্ধ্বজগতে বা অধঃজগতে আল্লাহ ব্যতীত কোন স্রষ্টা ও নির্ধারণকারী নেই। সবকিছুই তাঁর জ্ঞান, ক্ষমতা ও ইচ্ছানুযায়ী হয়। এতে সৃষ্টি জগতের কারো ইচ্ছা বা প্রভাব নেই।


৭৯-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে মাখলূক্বের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (তখন) আল্লাহর ’আরশ (সিংহাসন) পানির উপর ছিল। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَتَبَ اللَّهُ مقادير الْخَلَائق قبل أَن يخلق السَّمَوَات وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ» قَالَ: «وَكَانَ عَرْشُهُ على المَاء» . رَوَاهُ مُسلم

عن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كتب الله مقادير الخلاىق قبل ان يخلق السموات والارض بخمسين الف سنة» قال: «وكان عرشه على الماء» . رواه مسلم

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


‘Abdallah b. 'Amr reported God’s messenger as saying, “God recorded the fates of all creatures 50,000 years before creating the heavens and the earth, and His throne was upon the water.”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: (كَانَ عَرْشُهٗ عَلَى الْمَاءِ) অর্থাৎ- আকাশ ও জমিন সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তা‘আলার ‘আর্‌শ (আরশ) পানির উপরে ছিল। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, পানি ও আরশ এ দু’টি বিশ্ব সৃষ্টির সূচনা। যেহেতু এ দু’টিকে আসমান ও জমিন সৃষ্টির আগেই সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে এমনটা প্রতীয়মান হতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির কোন কিছুই পানির আগে সৃষ্টি করেননি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮০-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেকটি জিনিসই আল্লাহর ক্বদর (কদর) (তাক্বদীর/ভাগ্য) অনুযায়ী রয়েছে, এমনকি নির্বুদ্ধিতা ও বিচক্ষণতাও। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ شَيْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجز والكيس» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كل شيء بقدر حتى العجز والكيس» . رواه مسلم

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Ibn ‘Umar reported God’s messenger as saying, “Everything is decreed, even backwardness and shrewdness.”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: (حَتّى الْعَجْزِ وَالْكَيْسِ) অর্থাৎ- বুদ্ধিমত্তা ও অপারগতা- এ দু’টিও আল্লাহর তাক্বদীর অনুযায়ী হয়ে থাকে। অর্থাৎ- বান্দার উপার্জন ও কাজকর্মের বিষয়ে তা’ শুরুর ব্যাপারে ইচ্ছা বা অবগতি থাকলেও তা আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তাদের দ্বারা সম্পাদন হয় না। সবকিছুই স্রষ্টার নির্ধারণ বা তাক্বদীর অনুযায়ীই হয়। এমনকি বুদ্ধিমত্তা যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তার অভিষ্ঠ লক্ষে পৌঁছে অথবা অপারগতা যার কারণে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে বিলম্ব ঘটে বা পৌঁছতে পারে না- এটিও আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮১-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (আলমে আরওয়াহ্ বা রুহ জগতে) আদম ও মূসা (আঃ) পরস্পর তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হলেন। এ তর্কে আদম (আঃ) মূসার উপর জয়ী হলেন। মূসা (আঃ) বললেন, আপনি তো সে আদম, যাঁকে আল্লাহ (বিনা পিতা-মাতায়) তাঁর নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মধ্যে তাঁর রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। মালায়িকার দ্বারা আপনাকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করিয়েছেন এবং আপনাকে তাঁর চিরস্থায়ী জান্নাতে স্থান করে দিয়েছিলেন। অতঃপর আপনি আপনার স্বীয় ত্রুটির কারণে মানবজাতিকে জমিনে নামিয়ে দিয়েছেন। আদম (আঃ) (প্রত্যুত্তরে) বললেন, তুমি তো সে মূসা যাঁকে আল্লাহ তা’আলা নুবূওয়্যাতের পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। তোমাকে তাওরাত দান করেছেন, যাতে সমস্ত বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। অধিকন্তু তিনি তোমাকে গোপন কথা দ্বারাও নৈকট্য দান করেছেন। আল্লাহ আমার সৃষ্টির কত বছর পূর্বে তাওরাত লিখে রেখেছিলেন তুমি কি জান? মূসা (আঃ) বললেন, চল্লিশ বছর পূর্বে। তখন আদম (আঃ) বললেন, তুমি কি তাওরাতে (এ শব্দগুলো লিখিত) পাওনি যে, ’’আদম তাঁর প্রতিপালকের নাফরমানী করেছে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে?’’ (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০: ১২১)। মূসা (আঃ) (উত্তর) দিলেন, হাঁ, পেয়েছি। তখন আদম (আঃ) বললেন, তারপর তুমি আমাকে আমার ’আমলের জন্য তিরস্কার করছ কেন, যা আমার সৃষ্টিরও চল্লিশ বছর পূর্বে আল্লাহ আমার জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুতরাং আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-এর ওপর জয়ী হলেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «احْتَجَّ آدَمُ وَمُوسَى عَلَيْهِمَا السَّلَام عِنْدَ رَبِّهِمَا فَحَجَّ آدَمُ مُوسَى قَالَ مُوسَى أَنْتَ آدَمُ الَّذِي خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ وَأَسْجَدَ لَكَ مَلَائِكَتَهُ وَأَسْكَنَكَ فِي جَنَّتِهِ ثُمَّ أَهَبَطْتَ النَّاسَ بِخَطِيئَتِكَ إِلَى الأَرْض فَقَالَ آدَمُ أَنْتَ مُوسَى الَّذِي اصْطَفَاكَ اللَّهُ بِرِسَالَتِهِ وَبِكَلَامِهِ وَأَعْطَاكَ الْأَلْوَاحَ فِيهَا تِبْيَانُ كُلِّ شَيْءٍ وَقَرَّبَكَ نَجِيًّا فَبِكَمْ وَجَدَتِ اللَّهِ كَتَبَ التَّوْرَاةَ قَبْلَ أَنْ أُخْلَقَ قَالَ مُوسَى بِأَرْبَعِينَ عَامًا قَالَ آدَمُ فَهَلْ وَجَدْتَ فِيهَا (وَعَصَى آدَمُ ربه فغوى)
قَالَ نَعَمْ قَالَ أَفَتَلُومُنِي عَلَى أَنْ عَمِلْتُ عَمَلًا كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيَّ أَنْ أَعْمَلَهُ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَنِي بِأَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَجَّ آدَمُ مُوسَى» . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «احتج ادم وموسى عليهما السلام عند ربهما فحج ادم موسى قال موسى انت ادم الذي خلقك الله بيده ونفخ فيك من روحه واسجد لك ملاىكته واسكنك في جنته ثم اهبطت الناس بخطيىتك الى الارض فقال ادم انت موسى الذي اصطفاك الله برسالته وبكلامه واعطاك الالواح فيها تبيان كل شيء وقربك نجيا فبكم وجدت الله كتب التوراة قبل ان اخلق قال موسى باربعين عاما قال ادم فهل وجدت فيها (وعصى ادم ربه فغوى) قال نعم قال افتلومني على ان عملت عملا كتبه الله علي ان اعمله قبل ان يخلقني باربعين سنة قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فحج ادم موسى» . رواه مسلم

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Abu Huraira reported that God’s messenger told of Adam and Moses holding a disputation in their Lord’s presence and of Adam getting the better of Moses in argument. Moses said, “You are Adam whom God created with His hand, into whom He breathed of His spirit, to whom He made the angels do obeisance, and whom He caused to dwell in His garden; then because of your sin you caused mankind to come down to the earth.” Adam replied, “And you are Moses whom God chose to deliver His messages and to address, to whom He gave the tablets on which everything was explained, and whom He brought near as a confidant. How long before I was created did you find that God has written the Torah?”* Moses said, “Forty years.” Adam asked, “Did you find in it, ‘And Adam disobeyed his Lord and erred’?”** On being told that he did, he said, “Do you then blame me for doing a deed which God had decreed that I should do forty years before He created me?” God’s messenger said, “So Adam got the better of Moses in argument.”

Muslim transmitted it.

* At-Taurat, a general name for the first five books of the Old Testament.
** These words are in Quran, xx, 121.

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা আমার অস্তিত্বের আগেই ফায়সালা করে রেখেছেন যে, তা অবশ্যই ঘটবে। অতএব এটা কি সম্ভব যে আল্লাহর সিদ্ধান্তে যা আছে আমার দ্বারা তার বিপরীত কিছু ঘটবে? অতএব তুমি কিভাবে আল্লাহ তা‘আলার পূর্ব জ্ঞান সম্পর্কে গাফিল থেকে অর্জনকে উল্লেখ কর যা মূলত উপকরণ আর আসল বস্তুকে ভুলে যাও যা হলো তাক্বদীর? অথচ তুমি তো সে সব নির্বাচিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যারা আল্লাহর রহস্য সম্পর্কে অবহিত। তাছাড়া তাক্বদীরকে দলীল হিসেবে পেশ করা দু’ভাবে হতে পারে।

(১) গুনাহের কাজে দুঃসাহস দেখানো এবং নিজের প্রতি কোন দোষোরোপকে প্রতিহত করা এবং গুনাহের কাজে কাউকে উৎসাহ প্রদান। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটি বেহায়াপনা এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অপরাধীর নির্লজ্জতার প্রমাণ। যা যুক্তিগত ও শারী‘আতগত কোন দিক থেকেই বৈধ নয়।

(২) মনকে সান্ত্বনা দেয়া এবং গুনাহের কারণে মনে যে অশান্তি ও অস্থিরতা দেখা দেয় তা প্রতিহত করাই তাক্বদীর সম্পর্কিত বিষয়ের শিক্ষা এটা শারী‘আতের দৃষ্টি এবং যৌক্তিক দৃষ্টিতে কোন খারাপ বিষয় নয়। অতএব এ ধরনের দলীল দেয়া যেতে পারে। আর আদম (আঃ) কর্তৃক তাক্বদীরকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা এই প্রকারের ছিল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮২-[৪] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেরই জন্ম হয় এভাবে যে, তার মায়ের পেটে (প্রথমে তার মূল উপাদান) শুক্ররূপে চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকে। অতঃপর তা চল্লিশ দিন পর্যন্ত লাল জমাট রক্তপিন্ডরূপ ধারণ করে। তারপর পরবর্তী চল্লিশ দিনে মাংসপিন্ডর রূপ ধারণ করে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা একজন মালাককে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য পাঠন। সে মালাক লিখেন তার- (১) ’আমল [সে কি কি ’আমল করবে], (২) তার মৃত্যু, (৩) তার রিয্‌ক্ব (রিজিক/রিযিক) ও (৪) তার নেককার বা দুর্ভাগা হওয়ার বিষয় আল্লাহর হুকুমে তার তাক্বদীরে লিখে দেন, তারপর তন্মধ্যে রূহ্ প্রবেশ করান। অতঃপর সে সত্তার কসম, যিনি ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই! তোমাদের মধ্যে কেউ জান্নাতবাসীদের ’আমল করতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে, এমন সময় তার প্রতি তাক্বদীরের লিখা তার সামনে আসে। আর তখন সে জাহান্নামীদের কাজ করতে থাকে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। তোমাদের কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের মতো ’আমল করতে শুরু করে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার প্রতি সে লেখা (তাক্বদীর) সামনে আসে, তখন সে জান্নাতীদের কাজ করতে শুরু করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

عَن عبد الله بن مَسْعُود قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِق المصدوق: «إِن أحدكُم يجمع خلقه فِي بطن أمه أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثمَّ يكون فِي ذَلِك علقَة مثل ذَلِك ثمَّ يكون فِي ذَلِك مُضْغَة مثل ذَلِك ثمَّ يُرْسل الْملك فينفخ فِيهِ الرّوح وَيُؤمر بِأَرْبَع كَلِمَات بكتب رزقه وأجله وَعَمله وشقي أَو سعيد فوالذي لَا إِلَه غَيره إِن أحدكُم لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا»

عن عبد الله بن مسعود قال: حدثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو الصادق المصدوق: «ان احدكم يجمع خلقه في بطن امه اربعين يوما ثم يكون في ذلك علقة مثل ذلك ثم يكون في ذلك مضغة مثل ذلك ثم يرسل الملك فينفخ فيه الروح ويومر باربع كلمات بكتب رزقه واجله وعمله وشقي او سعيد فوالذي لا اله غيره ان احدكم ليعمل بعمل اهل الجنة حتى ما يكون بينه وبينها الا ذراع فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل اهل النار فيدخلها وان احدكم ليعمل بعمل اهل النار حتى ما يكون بينه وبينها الا ذراع فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل اهل الجنة فيدخلها»

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Ibn Mas'ud said that God’s messenger who spoke the truth and whose word was believed told them the following:
The constituents of one of you are collected for forty days in his mother’s womb in the form of a drop, then they become a piece of congealed blood for a similar period, then they become a lump of flesh for a similar period. Then God sends to him an angel with four words who records his deeds, the period of his life, his provision, and whether he will be miserable or blessed: thereafter He breathes the spirit into him. By Him other than whom there is no god, one of you will do the deeds of those who go to paradise so that there will be only a cubit between him and it, then what is decreed will overcome him so that he will do the deeds of those who go to hell and will enter it; and one of you will do the deeds of those who go to hell so that there will be only a cubit between him and it, then what is decreed will overcome him so that he will do the deeds of those who go to paradise and will enter it.

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা চোখের পলকে মানুষ সৃষ্টি করতে সক্ষম। তা’ সত্ত্বেও এই রূপান্তরের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টিতে অনেক উপকার ও উপদেশ বিদ্যমান। তন্মধ্যে-

(১) যদি চোখের পলকে মাতৃগর্ভে একজন শিশু সৃষ্টি করতেন তাহলে তা মায়ের জন্য কষ্টকর হত অনভ্যস্ততার কারণে। হয়তবা মায়ের মনে আশঙ্কা দেখা দিত যে, তিনি রুগ্ন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে মানব ভ্রূণকে কিছুদিন মায়ের পেটে নুত্বফাহ্ (বীর্য) অবস্থায় রেখেছেন, অতঃপর ‘আলাকায় (রক্তপিন্ড-) রূপান্তর করেছেন। এভাবে ক্রমান্বয়ে ভ্রূণকে পরিপূর্ণ করেছেন যাতে মা অভ্যস্ত হয়ে উঠে।

(২) আল্লাহর ক্ষমতা ও তার নি‘আমাত প্রকাশ করা যাতে বান্দা তাঁর ‘ইবাদাত করে ও তাঁরই শুকরিয়া আদায় করে।

(৩) মানবজাতিকে এ বিষয়ে সতর্ক করা যে, মহান আল্লাহ পুনরুত্থানে পরিপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। কেননা যে আল্লাহ পানি থেকে রক্ত, অতঃপর মাংস সৃষ্টি করেছেন, তাতে রূহ দিয়েছেন, তিনি তাকে পুনরুত্থান করতে ও তাতে আবার রূহ দিতেও পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।

(৪) বান্দাকে কোন কাজে তাড়াহুড়া না করে ধিরস্থিরতার সাথে করতে শিক্ষা দেয়া। মানবজাতি কোন কাজে ধিরস্থিরতা অবলম্বন করলে এটা তার জন্য আরো বেশী উপযোগী হবে।

(৫) মানবকে সতর্ক করা এবং এটা বুঝানো যে আসলে তারা কি? অতএব তারা যেন শারীরিক শক্তি ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের শক্তিমত্তার কারণে ধোঁকায় পতিত না হয়। তারা যেন মনে করে এসব কিছুই আল্লাহর দান। বরং এটা তাদের প্রতি অনুগ্রহ।

হাদীসের শিক্ষাঃ

১। তাক্বদীর সুস্পষ্টভাবেই সাব্যস্ত আছে।

২। তাওবাহ্ গুনাহকে মুছে ফেলে।

৩। যার মৃত্যু যেভাবে হয় তার জন্য তাই সাব্যস্ত থাকে। যে ভালো কাজের উপর মৃত্যুবরণ করে তার জন্য ভালো এবং যার মৃত্যু খারাপ কাজের উপর তার জন্য খারাপই সাব্যস্ত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮৩-[৫] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা জাহান্নামীদের আ’মাল করতে থাকবে, অথচ সে জান্নাতী। এভাবে কেউ জান্নাতীদের আ’মাল করবে অথচ সে জাহান্নামী। কেননা মানুষের আ’মাল নির্ভর করে ’খাওয়া-তীম’ বা সর্বশেষ আ’মালের উপর। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

وَعَن سهل بن سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْعَبْدَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّهُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجنَّة وَإنَّهُ من أهل النَّار وَإِنَّمَا الْعمَّال بالخواتيم»

وعن سهل بن سعيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان العبد ليعمل عمل اهل النار وانه من اهل الجنة ويعمل عمل اهل الجنة وانه من اهل النار وانما العمال بالخواتيم»

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Sahl b. Sa’d reported God’s messenger as saying, “One man does the deeds of those who go to hell but is one of those who go to paradise, and another does the deeds of those who go to paradise but is one of those who go to hell, for judgment is given according to one’s final actions.”

(Bukhari and Muslim).

ব্যাখ্যা: (إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ) সর্বশেষ আ‘মালই ধর্তব্য। অর্থাৎ- পূর্বেকার আ‘মাল ধর্তব্য নয়, শেষ আ‘মালই ধর্তব্য।

অত্র হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) আনুগত্যের উপর অটল থাকা এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে সময়ের হিফাজত করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কেননা যে কোন সময়ের আ‘মালই তার সর্বশেষ আ‘মাল হতে পারে।

(২) অনুরূপভাবে ভালো কাজ করতে পেরে আনন্দিত হওয়া ও অহংকার করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। কেননা সে অবহিত নয় যে, পরবর্তীতে তার কি ঘটবে।

এ হাদীস তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট দলীল যারা বলেন যে, মানুষ তার নিজ বিষয় নিজেই নির্ধারণ করতে সক্ষম তা ভালো হোক আর মন্দ হোক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা'দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮৪-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন আনসারীর শিশু সন্তানের জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ডাকা হলো। আমি (’আয়িশাহ্) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ বাচ্চার কি সৌভাগ্য, সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখীদের মধ্যে একটি চড়ুই। সে তো কোন গুনাহ করেনি বা গুনাহ করার বয়সও পায়নি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এছাড়া অন্য কিছু কি হতে পারে না হে ’আয়িশাহ! আল্লাহ তা’আলা একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন, যখন তারা তাদের পিতার মেরুদন্ডে ছিল। এভাবে জাহান্নামের জন্যও একদল লোক সৃষ্টি করে রেখেছেন অথচ তখন তারা তাদের পিতার মেরুদন্ডে ছিল। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

عَن عَائِشَة أم الْمُؤمنِينَ قَالَتْ: «دُعِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِنَازَةِ صَبِيٍّ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ طُوبَى لِهَذَا عُصْفُورٌ مِنْ عَصَافِيرِ الْجَنَّةِ لَمْ يَعْمَلِ السُّوءُ وَلَمْ يُدْرِكْهُ قَالَ أَوَ غَيْرُ ذَلِكِ يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ لِلْجَنَّةِ أَهْلًا خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِي أَصْلَابِ آبَائِهِمْ وَخَلَقَ لِلنَّارِ أَهْلًا خَلَقَهُمْ لَهَا وهم فِي أصلاب آبَائِهِم» . رَوَاهُ مُسلم

عن عاىشة ام المومنين قالت: «دعي رسول الله صلى الله عليه وسلم الى جنازة صبي من الانصار فقلت يا رسول الله طوبى لهذا عصفور من عصافير الجنة لم يعمل السوء ولم يدركه قال او غير ذلك يا عاىشة ان الله خلق للجنة اهلا خلقهم لها وهم في اصلاب اباىهم وخلق للنار اهلا خلقهم لها وهم في اصلاب اباىهم» . رواه مسلم

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


‘A’isha said:
God’s messenger was invited to the funeral of a boy who belonged to the Ansar and I said, “Messenger of God, this one is blessed; he is one of the young ones* in paradise, for he has done no evil, being too young for that.” He replied, “It may be otherwise, ‘A’isha, for God has created some to go to paradise, doing so when they were still in their fathers’ loins; and He has created others for hell, doing so when they were still in their fathers’ loins.”

Muslim transmitted it.

* Lit. small birds or sparrows.

ব্যাখ্যা: (أَوَ غَيْرَ ذلِكَ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মন্তব্য করেছেন তিনি এ কথা অবহিত হওয়ার পূর্বে যে, মুসলিমদের শিশুরা জান্নাতবাসী হবে। কেননা মুসলিম ‘আলিমদের মধ্য হতে যাদের বক্তব্যকে সঠিক বলে গণ্য করা হয় তারা সবাই একমত যে, মুসলিমদের মধ্যে যারা শিশু অবস্থায় মারা যাবে তারা সবাই জান্নাতবাসী। যা কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে এ মন্তব্য করতে নিষেধ করার কারণ ছিল যে, তার (‘আয়িশার) নিকট কোন নিশ্চিত প্রমাণ ছিল না যার কারণে তিনি এ মন্তব্য করতে পারেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮৫-[৭] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার অবস্থান জান্নাতে কিংবা জাহান্নামে লিখে রাখেননি। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আমরা কি আমাদের তাক্বদীরের লেখার উপর নির্ভর করে আ’মাল ছেড়ে দিব না? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (না, বরং) আ’মাল করে যেতে থাক। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজ করে দেয়া হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান তাকে আল্লাহ সৌভাগ্যের কাজ করার জন্য সহজ ব্যবস্থা করে দিবেন। আর সে ব্যক্তি দুর্ভাগা হবে যার জন্য দুর্ভাগ্যের কাজ সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (কুরআনের এ আয়াতটি) পাঠ করলেনঃ ’’যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (সময় ও অর্থ) ব্যয় করেছে, আল্লাহকে ভয় করেছে, হক কথাকে (দীনকে) সমর্থন জানিয়েছে’’- (সূরাহ্ আল্ লায়ল ৫-৬ নং আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

عَن عَليّ رَضِي الله عَنهُ قَالَ كُنَّا فِي جَنَازَة فِي بَقِيع الْغَرْقَد فَأَتَانَا النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقعدَ وقعدنا حوله وَمَعَهُ مخصرة فَنَكس فَجعل ينكت بمخصرته ثمَّ قَالَ مَا مِنْكُم من أحد مَا من نفس منفوسة إِلَّا كتب مَكَانهَا من الْجنَّة وَالنَّار وَإِلَّا قد كتب شقية أَو سعيدة فَقَالَ رجل يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلَا نَتَّكِلُ عَلَى كِتَابِنَا وَنَدع الْعَمَل فَمن كَانَ منا من أهل السَّعَادَة فسيصير إِلَى عمل أهل السَّعَادَة وَأما من كَانَ منا من أهل الشقاوة فسيصير إِلَى عمل أهل الشقاوة قَالَ أما أهل السَّعَادَة فييسرون لعمل السَّعَادَة وَأما أهل الشقاوة فييسرون لِعَمَلِ الشَّقَاوَةِ ثُمَّ قَرَأَ (فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصدق بِالْحُسْنَى)
الْآيَة

عن علي رضي الله عنه قال كنا في جنازة في بقيع الغرقد فاتانا النبي صلى الله عليه وسلم فقعد وقعدنا حوله ومعه مخصرة فنكس فجعل ينكت بمخصرته ثم قال ما منكم من احد ما من نفس منفوسة الا كتب مكانها من الجنة والنار والا قد كتب شقية او سعيدة فقال رجل يا رسول الله افلا نتكل على كتابنا وندع العمل فمن كان منا من اهل السعادة فسيصير الى عمل اهل السعادة واما من كان منا من اهل الشقاوة فسيصير الى عمل اهل الشقاوة قال اما اهل السعادة فييسرون لعمل السعادة واما اهل الشقاوة فييسرون لعمل الشقاوة ثم قرا (فاما من اعطى واتقى وصدق بالحسنى) الاية

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


‘Ali reported God’s messenger as saying, “The place which everyone of you will occupy in hell or in paradise has been recorded.” When his hearers asked him whether they should not trust simply in what had been recorded for them and abandon doing good deeds, he replied, “Go on doing them, for everyone is helped to do that for which he was created. Those who are among the number of the blessed will be helped to do appropriate deeds, and those who are among the number of the miserable will be helped to do appropriate deeds.” Then he recited, “As for him who gives, shows piety, and considers what is best to be true, We will help him to prosperity.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: (أَفَلَا نَتَّكِلُ عَلى كِتَابِنَا) এই বাক্য দ্বারা বুঝা যায় যে, আমাদের জন্য তাক্বদীরে যা নির্ধারিত রয়েছে তার উপরই নির্ভর করবো কি-না এবং আ‘মাল বর্জন করবো কি-না, অর্থাৎ- আ‘মালের প্রচেষ্টা ত্যাগ করবো কি-না। কারণ, যখন আমাদের জান্নাতী বা জাহান্নামী হওয়াটা পূর্ব নির্ধারিত তখন ‘আমলের প্রতিযোগিতা করেই বা কি লাভ? কেননা আল্লাহর ফায়সালা তো কখনও পরিবর্তিত হওয়ার নয় এবং তার নির্ধারিত বিষয় কখনও রদ হওয়ার নয়।

জেনে রাখা উচিত যে, যাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য জান্নাতের আ‘মালটাই অধিক সহজ হবে। আর এই সহজতাই তার জান্নাতী হওয়ার আলামত। পক্ষান্তরে যার জন্য জান্নাতী আ‘মালটা সহজ নয়। সে জান্নাতী নয় বরং জাহান্নামের অধিবাসী।

নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সকল কর্ম পরিচালনা করেন এবং তা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্তও করে।

যার জন্য জান্নাত নির্ধারিত তার জন্য জান্নাতী আ‘মালটাও তো নির্ধারিত এবং সেই কৃতকর্মই তাঁর জন্য উপযোগী হবে এবং সে কর্মের উপরই তাকে উৎসাহ এবং ধমকের মাধ্যমে উজ্জ্বীবিত করা হয়। আর যার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাঁর জন্য মন্দটাই নির্ধারিত। এমনকি সে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং তার মাওলার আদেশ বর্জন করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮৬-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

কিন্তু সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, আদম সন্তানের জন্য তাক্বদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।[2]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ فَزِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ وَزِنَا اللِّسَانِ الْمَنْطِقُ وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي وَالْفَرْجُ يصدق ذَلِك كُله ويكذبه»
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «كُتِبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ نَصِيبُهُ مِنَ الزِّنَا مُدْرِكٌ ذَلِكَ لَا محَالة فالعينان زِنَاهُمَا النَّظَرُ وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ»

عن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم: «ان الله كتب على ابن ادم حظه من الزنا ادرك ذلك لا محالة فزنا العين النظر وزنا اللسان المنطق والنفس تمنى وتشتهي والفرج يصدق ذلك كله ويكذبه» وفي رواية لمسلم قال: «كتب على ابن ادم نصيبه من الزنا مدرك ذلك لا محالة فالعينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطا والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه»

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Abu Huraira reported God's messenger as saying, “God has decreed for man his portion of fornication which he will inevitably commit. The fornication of the eye consists in looking, and of the tongue in speech. The soul wishes and desires, and the private parts accord with that or reject it.”

(Bukhari and Muslim.)
In a version by Muslim he said, “Man’s share of fornication which he will inevitably commit is decreed for him. The fornication of the eyes consists in looking, of the ears in hearing, of the tongue in speech, of the hand in violence, and of the foot in walking. The heart lusts and wishes, and the private parts accord with that or reject it.”

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা তুরবিশতী (রহঃ) বলেছেন, আদম সন্তানের ওপর এটাই সাব্যস্ত যে, তার জন্য প্রয়োজন সৃষ্টি করা হয়েছে আর সে প্রয়োজনীয়তার দ্বারা সে স্বাদ গ্রহণ করে। তাকে শক্তি দান করা হয়েছে যার দ্বারা সে উক্ত কর্ম সম্পাদনের (যিনার) ক্ষমতা রাখে। আর চক্ষুদ্বয় এর বিষয় হলো যে, এই চক্ষুদ্বয়ের দৃষ্টিপাতের সক্ষমতা দ্বারা দেখার স্বাদ গ্রহণ করা যায়। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেন যে, كَتَبَ উদ্দেশ্য হলো, তাতে যৌন চাহিদা এবং নারীদের প্রতি পুরুষের দুর্বলতা বা ঝুঁকে পড়া প্রমাণিত হয় এবং চক্ষু, কর্ণ, অন্তর এবং লজ্জাস্থান দ্বারা যিনার স্বাদ গ্রহণ করা যায়।

(وَالنَّفْسُ تَمَنّى وَتَشْتَهِي) অন্তর আকাঙ্ক্ষা ও খাওয়াহিশাত বা যৌন চাহিদার জন্ম দেয়। অর্থাৎ- অন্তরের যিনা হলো- আকাঙ্ক্ষা করা। (وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذلِكَ) যৌনাঙ্গ সহবাসের মাধ্যমে দৃষ্টিপাত ও খাহেশাতের বাস্তব প্রতিফলন ঘটায়। আর (يُكَذِّبُهٗ) এর অর্থ হলো, প্রতিপালকের ভয়ে উক্ত কর্ম থেকে বিরত থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮৭-[৯] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। মুযায়নাহ্ গোত্রের দুই লোক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি মনে করেন, মানুষ এখন (দুনিয়াতে) যা আ’মাল (ভাল-মন্দ) করছে এবং ’আমল করার চেষ্টায় রত আছে, তা আগেই তাদের জন্য তাক্বদীরে লিখে রাখা হয়েছিল? নাকি পরে যখন তাদের নিকট তাদের নবী শারী’আহ্ (দলীল-প্রমাণ) নিয়ে এসেছেন এবং তাদের নিকট তার দলীল-প্রমাণ প্রকটিত হয়েছে, তখন তারা তা করছে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না, বরং পূর্বেই তাদের জন্য তাক্বদীরে এসব নির্দিষ্ট করা হয়েছে ও ঠিক হয়ে রয়েছে। এ কথার সমর্থনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন (অনুবাদঃ) ’’প্রাণের কসম (মানুষের)! এবং যিনি তাকে সুন্দরভাবে গঠন করেছেন এবং তাকে (পূর্বেই) ভালো ও মন্দের জ্ঞান দিয়েছেন’’- (সূরাহ্ আল লায়ল ৯২: ৭-৮)। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

وَعَن عمرَان بن حضين: إِن رجلَيْنِ من مزينة أَتَيَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ مَا يَعْمَلُ النَّاسُ الْيَوْمَ وَيَكْدَحُونَ فِيهِ أَشِيءٌ قُضِيَ عَلَيْهِمْ وَمَضَى فيهم من قدر قد سَبَقَ أَوْ فِيمَا يَسْتَقْبِلُونَ بِهِ مِمَّا أَتَاهُمْ بِهِ نَبِيُّهُمْ وَثَبَتَتِ الْحُجَّةُ عَلَيْهِمْ فَقَالَ لَا بَلْ شَيْءٌ قُضِيَ عَلَيْهِمْ وَمَضَى فِيهِمْ وَتَصْدِيقُ ذَلِكَ فِي كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ (وَنَفْسٍ وَمَا سواهَا فألهمها فجورها وتقواها)
رَوَاهُ مُسلم

وعن عمران بن حضين: ان رجلين من مزينة اتيا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالا يا رسول الله ارايت ما يعمل الناس اليوم ويكدحون فيه اشيء قضي عليهم ومضى فيهم من قدر قد سبق او فيما يستقبلون به مما اتاهم به نبيهم وثبتت الحجة عليهم فقال لا بل شيء قضي عليهم ومضى فيهم وتصديق ذلك في كتاب الله عز وجل (ونفس وما سواها فالهمها فجورها وتقواها) رواه مسلم

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


‘Imran b, Husain told of two men of Muzaina who said, “Messenger of God, tell us whether what men do to-day and strive over is something which has been destined for them and has previously been decreed for them, or whether it is something their prophet has brought them with which they are encountered and which has become binding upon them.” He replied, “No, it is something which has been destined for them and previously decreed for them.” The verification of that is found in God’s Book which says, “By a soul and Him who formed it and implanted in it its wickedness and its piety.”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: (أَشَيْءٌ قُضِيَ عَلَيْهِمْ) অর্থাৎ- আপনি আমাদের অবহিত করুন মানবজাতি ভালো-মন্দ যে কাজ করে তা-কি তাদের জন্য যেভাবে ফায়সালা করা হয়েছে সে অনুযায়ী করে? আর তা তাদের জন্য নির্ধারিত সময়ে তা সংঘটিত হয়? নাকি তা তাদের জন্য ফায়সালাকৃত নয়? বরং সকল কাজই সংঘটিত হয় ভবিষ্যতে যা সে সম্পাদন করতে চায় সে চাহিদা অনুযায়ী তাক্বদীর অনুযায়ী না হয়ে?

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যা কিছু ঘটে তা পূর্ব নির্ধারিত তাক্বদীর অনুযায়ীই ঘটে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮৮-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি একজন যুবক মানুষ। তাই আমি আমার সম্পর্কে ব্যভিচারের জড়িয়ে পড়ার আশংকা করছি। অথচ কোন নারীকে বিবাহ করার (আর্থিক) সঙ্গতিও আমার নেই। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) যেন খাসী হবার অনুমতিই প্রার্থনা করছিলেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে তিনি প্রত্যুত্তর না দিয়ে নীরব থাকলেন। আমি আবারও অনুরূপ প্রশ্ন করলাম। এবারও তিনি নীরব থাকলেন। সুতরাং আমি ঐরূপ প্রশ্ন করলাম, এবারও তিনি নীরব থাকলেন। আমি চতুর্থবার সেরূপ প্রশ্ন করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! তোমার জন্য যা ঘটবার আছে তা আগে থেকেই তোমার ভাগ্যে নির্ধারিত হওয়ার মাধ্যমে কলম শুকিয়ে গেছে। এখন তুমি এটা জেনে খাসীও হতে পারো বা এমন ইচ্ছা পরিত্যাগও করতে পারো। (বুখারী)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي رَجُلٌ شَابٌّ وَأَنَا أَخَافُ عَلَى نَفْسِي الْعَنَتَ وَلَا أَجِدُ مَا أَتَزَوَّجُ بِهِ النِّسَاءَ كأَنَّهُ يَسْتَأْذِنُهُ فِي الِاخْتِصَاءِ قَالَ: فَسَكَتَ عَنِّي ثُمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ فَسَكَتَ عَنِّي ثُمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ فَسَكَتَ عَنِّي ثُمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا هُرَيْرَةَ جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا أَنْتَ لَاقٍ فَاخْتَصِ على ذَلِك أَو ذَر» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قلت يا رسول الله اني رجل شاب وانا اخاف على نفسي العنت ولا اجد ما اتزوج به النساء كانه يستاذنه في الاختصاء قال: فسكت عني ثم قلت مثل ذلك فسكت عني ثم قلت مثل ذلك فسكت عني ثم قلت مثل ذلك فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «يا ابا هريرة جف القلم بما انت لاق فاختص على ذلك او ذر» . رواه البخاري

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Abu Huraira said:
I told God’s messenger that I, being a young man, was afraid of committing fornication, and I had no means to enable me to marry a wife. (It was as though he was asking permission to have himself made a eunuch.) He gave me no reply, so I repeated what I had said, but he gave me no reply. I repeated it again, but he gave me no reply. I repeated it once more and the Prophet said, “Abu Huraira, the pen has written all it has to write* about your destiny, so have yourself made a eunuch on that account, or leave things as they are.”

Bukhari transmitted it.

* Lit. “the pen dried up”.

ব্যাখ্যা: (جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا أَنْتَ لَاقٍ) অর্থাৎ- তোমার যা কিছু ঘটবে তা লিখে অবসর হওয়ার পর ক্বলাম (কলম) শুকিয়ে গেছে। তুমি তোমার জীবনে যা কিছুর সম্মুখীন হবে তা তোমার জন্য নির্ধারিত। তোমার জন্য ফায়সালা করা রয়েছে। কোন কারণে তোমার নির্ধারিত বিষয়ে পরিবর্তন ঘটবে না। অতএব নির্ধারিত পরিবর্তন ঘটানোর উদ্দেশে কোন প্রকার হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়।

(فَاخْتَصِ عَلى ذلِكَ أَوْ ذَرْ) অর্থাৎ- তুমি তা কর বা না কর তোমার ব্যাপারে নির্ধারিত তাক্বদীর বাস্তবায়ন হবেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮৯-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সমস্ত অন্তর আল্লাহর আঙ্গুলসমূহের দুই আঙ্গুলের মধ্যে একটি অন্তরের ন্যায় অবস্থিত। তিনি নিজের আঙ্গুলগুলোর দ্বারা তা যেভাবে ইচ্ছা ঘুরিয়ে থাকেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ’’হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে তোমার ’ইবাদাত ও আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দাও।’’ (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَقُول إِنَّ قُلُوبَ بَنِي آدَمَ كُلِّهَا بَيْنَ أُصْبُعَيْنِ من أَصَابِع الرَّحْمَن كقلب وَاحِد يصرفهُ حَيْثُ يَشَاءُ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الله مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عبد الله بن عمرو بن العاص قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يقول ان قلوب بني ادم كلها بين اصبعين من اصابع الرحمن كقلب واحد يصرفه حيث يشاء ثم قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الله مصرف القلوب صرف قلوبنا على طاعتك» . رواه مسلم

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


‘Abdallah b. ‘Amr reported God’s messenger as saying, “The hearts of all men are between two of the Compassionate’s fingers as if they were one heart which He turns about as He wills.” Then God’s messenger said, “O God, who turnest the hearts, turn our hearts to Thy obedience!”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: (بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمنِ) এটি আল্লাহর সিফাত অর্থাৎ- গুণবাচক হাদীস। এতে যা বর্ণিত হয়েছে কোন প্রকার ব্যাখ্যা ছাড়াই আমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব। এর অর্থ জানার চেষ্টা করবো না। এ বিষয়ে ঈমান আনা ওয়াজিব এবং তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকাও ওয়াজিব। যে তা মেনে নিবে সেই সঠিক পথপ্রাপ্ত। যে তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে প্রবেশ করবে সে পথভ্রষ্ট।

হাদীসের অর্থ, বান্দার অন্তর পরিবর্তন করা আল্লাহর নিকট অতি সহজ। তিনি তাঁর বান্দাদের অন্তর বা যে কোন বিষয়ে তাঁর ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এ কাজে তাঁর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। আর তিনি যা করতে চান তা তাঁর হাত ছাড়া হয় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ বিন আমের
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৯০-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। যেরূপে চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ জন্তুই জন্ম দিয়ে থাকে, এতে তোমরা কোন বাচ্চার কানকাটা দেখতে পাও কি? এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত করলেনঃ

فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ

’’আল্লাহর ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত দীন।’’ (সূরাহ্ আর্ রূম ৩০: ৩০)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنهُ كَانَ يحدث قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلَّا يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ ثُمَّ يَقُول أَبُو هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ (فطْرَة الله الَّتِي فطر النَّاس عَلَيْهَا)
الْآيَة»

عن ابي هريرة رضي الله عنه كان يحدث قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: «ما من مولود الا يولد على الفطرة فابواه يهودانه او ينصرانه او يمجسانه كما تنتج البهيمة بهيمة جمعاء هل تحسون فيها من جدعاء ثم يقول ابو هريرة رضي الله عنه (فطرة الله التي فطر الناس عليها) الاية»

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “Everyone is born a Muslim, but his parents make him a Jew, a Christian, or a Magian; just as a beast is born whole. Do you find some among them [born] maimed?” Then he was saying, “God’s pattern on which He formed mankind. There is no alteration of God’s creation. That is the true religion.” *

(Bukhari and Muslim.)

* Quran, 30:30. It is not quite clear whether these words were recited by the Prophet or by Abu Huraira.

ব্যাখ্যা: (الْفِطْرَةِ) শব্দের অনেক প্রকার ব্যাখ্যা রয়েছে তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ হচ্ছে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলাম। ইমাম বুখারী এ বক্তব্যকেই দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন এবং অনেক পূর্বসুরীই এটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অন্য বর্ণনাতে الْفِطْرَةِ এর পরিবর্তে الملة শব্দটিও এ বক্তব্যকে সমর্থন করে। (فِطْرَةَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا) এ আয়াতের উল্লেখ। প্রকৃত ব্যাপার বুঝানোর জন্য হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়ার হুকুমের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগত ঈমান বা ইসলামের বিষয়টি ধর্তব্য নয়। দুনিয়াতে ধর্তব্য বিষয় হলো স্বেচ্ছায় ঈমান আনা।

(فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِه) প্রমাণ করে যে, দুনিয়ার হুকুমে সে কাফির যদিও তার মধ্যে স্বভাবগত ঈমান বিদ্যমান। কিংবা এখানে ফিত্বরাতের অর্থ হলো আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টাকে চিনবার যে যোগ্যতা দিয়েছেন সেই অবস্থার নামই ফিত্বরাত। সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানকে যদি তার ফিতরাতের উপর ছেড়ে দেয়া হত এবং তার পিতা-মাতা বা অন্য কোন দিক থেকে প্রভাবিত করা না হত তাহলে সে সত্য দীনকেই আঁকড়িয়ে থাকতো। তা বাদ দিয়ে অন্য দিকে যেত না এবং এ দীন ব্যতীত অন্য কোন দীন গ্রহণ করত না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৯১-[১৩] আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি বিষয়সহ আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেনঃ (১) আল্লাহ তা’আলা কক্ষনো ঘুমান না। (২) ঘুমানো তাঁর পক্ষে সাজেও না। (৩) তিনি দাঁড়িপাল্লা উঁচু-নিচু করেন [সৃষ্টির রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) ও আ’মাল প্রভৃতি নির্ধারিত করে থাকেন]। (৪) রাতের ’আমল দিনের ’আমলের পূর্বে, আর দিনের ’আমল রাতের ’আমলের পূর্বেই তার নিকটে পৌঁছানো হয় এবং (৫) তাঁর [এবং সৃষ্টিজগতের মধ্যে] পর্দা হচ্ছে নূর [জ্যোতি]। যদি তিনি এ পর্দা সরিয়ে দিতেন, তবে তাঁর চেহারার নূর সৃষ্টিজগতের দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত সব কিছুকেই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিত। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

وَعَن أبي مُوسَى قَالَ قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ فَقَالَ: «إِنَّ اللَّهَ عز وَجل لَا يَنَامُ وَلَا يَنْبَغِي لَهُ أَنْ يَنَامَ يَخْفِضُ الْقِسْطَ وَيَرْفَعُهُ يُرْفَعُ إِلَيْهِ عَمَلُ اللَّيْلِ قَبْلَ عَمَلِ النَّهَارِ وَعَمَلُ النَّهَارِ قَبْلَ عَمَلِ اللَّيْل حجابه النُّور» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي موسى قال قام فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم بخمس كلمات فقال: «ان الله عز وجل لا ينام ولا ينبغي له ان ينام يخفض القسط ويرفعه يرفع اليه عمل الليل قبل عمل النهار وعمل النهار قبل عمل الليل حجابه النور» . رواه مسلم

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Abu'Musa said :
God’s messenger stood up among us and made five statements, saying, “God does not sleep, as it is unfitting that He should do so; He lowers the scale and raises it up; the deeds done by night are taken up to Him before the day’s deeds are done; the deeds done by day before the night’s deeds are done; His veil is light, if He were to remove it His majesty would burn up all His creation which was reached by His glance.”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: (يَخْفِضُ الْقِسْطَ وَيَرْفَعُه) অর্থ মীযান বা দাঁড়িপাল্লাকে قِسْطٌ নামকরণ করা হয়েছে। এজন্য যে, তা দ্বারা বণ্টন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ন্যায় আচরণ সংঘটিত হয়। এ অর্থ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস (يَرْفَعُ الْمِيْزَانَ وَيَرْفَعُه) এর সমর্থন করে। এও বলা হয় যে, قِسْطٌ দ্বারা রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) উদ্দেশ্য। কেননা তা প্রত্যেক মাখলূক্বের জন্য নির্ধারিত। নীচু করা অর্থ তা কমিয়ে দেয়া। আর উঁচু করা অর্থ বাড়িয়ে দেয়া। তিনি কখনো রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) সংকোচন করে তা নীচু করে দেন। আবার কখনো তা প্রশস্ত করে পাল্লা উঁচু করে দেন।

(حِجَابُهُ النُّوْرُ) হিজাবের প্রকৃত অর্থ পর্দা যা দর্শনার্থী এবং প্রদর্শিত বস্তুর মাঝখানে বাধার সৃষ্টি করে। এখানে উদ্দেশ্য হলো সে প্রতিবন্ধক যা সৃষ্টিকে তাঁর দর্শন হতে বিরত রাখে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৯২-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার হাত সদাসর্বদা পূর্ণ। অবিরাম মুষলধারে বর্ষণকারীর মতো দান কখনও তা কমাতে পারে না। তোমরা কি দেখছো না, তিনি যখন থেকে এ আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে কতই না দান করে আসছেন। অথচ তাঁর হাতে যা ছিল তার থেকে কিছুই কমায়নি। তাঁর ’আর্‌শ (আরশ) (প্রথমে) পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে দাঁড়িপাল্লা। তিনি এ দাঁড়িপাল্লাকে উঁচু বা নিচু করে থাকেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহর দক্ষিণ (ডান) হাত সদা পরিপূর্ণ। আর ইবনু নুমায়র (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে, আল্লাহর হাত পরিপূর্ণ, দিন-রাতের মধ্যে সর্বদা দানকারী কোন কিছুই এতে কমাতে পারে না।

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَدُ اللَّهِ مَلْأَى لَا تَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُذْ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ؟ فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيرْفَع» وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: «يَمِينُ اللَّهِ مَلْأَى قَالَ ابْنُ نُمَيْرٍ مَلْآنُ سَحَّاءُ لَا يُغِيضُهَا شَيْءٌ اللَّيْل والنهار»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يد الله ملاى لا تغيضها نفقة سحاء الليل والنهار ارايتم ما انفق مذ خلق السماء والارض؟ فانه لم يغض ما في يده وكان عرشه على الماء وبيده الميزان يخفض ويرفع» وفي رواية لمسلم: «يمين الله ملاى قال ابن نمير ملان سحاء لا يغيضها شيء الليل والنهار»

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “God’s hand is full, undiminished by any expenditure, bountiful night and day. Have you seen what He has expended since He created the heaven and the earth, for what His hand holds has not decreased? His throne was upon the water, and in His hand the scale which He lowers and raises.”

(Bukhari and Muslim.)
A version by Muslim says, “God’s right hand is full.” Ibn Numair said, “Full and pouring out blessings night and day, being decreased by nothing.”

ব্যাখ্যা: (يَدُ اللهِ مَلْأَى) আল্লাহর হাত পরিপূর্ণ। অর্থাৎ- ধন ও প্রাচুর্যে তিনি পরিপূর্ণ। তাঁর নিকট এত রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) রয়েছে যার কোন শেষ নেই। এ দ্বারা আল্লাহর নি‘আমাতের আধিক্যের ও প্রাচুর্যের এবং তাঁর দানের বিশালতা ও সার্বজনিনতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৯৩-[১৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাফির-মুশরিকদের শিশু-সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (মৃত্যুর পর তাদের স্থান কোথায় জান্নাতে, না জাহান্নামে)? জবাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন, তারা (জীবিত থাকলে) কি ’আমল করত। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

وَعَنْهُ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَرَّارِيِّ الْمُشْرِكِينَ قَالَ: «اللَّهُ أعلم بِمَا كَانُوا عاملين»

وعنه قال: سىل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن ذراري المشركين قال: «الله اعلم بما كانوا عاملين»

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


He [Abu Huraira] also reported that when God’s messenger was questioned about the offspring of polytheists he said, “God knows best about what they were doing.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: (اللّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوْا عَامِلِيْنَ) অর্থাৎ- তারা জীবিত থাকলে কি করতো তা আল্লাহই ভালো জানেন। অতএব তাদের সম্পর্কে কোন মন্তব্য করবে না। এ হাদীস মুশরিকদের সন্তান সম্পর্কে মন্তব্য করা হতে বিরত থাকার সুস্পষ্ট নির্দেশ। যারা বলেন, মুশরিকদের সন্তানদের বিষয় আল্লাহর ইচ্ছাধীন; এ হাদীস তাদের পক্ষে দলীল।

বিরত থাকার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আবার মতভেদ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে এর উদ্দেশ্য হলো ব্যাপারটা আমাদের অজানা অথবা এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। আবার কেউ বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো সকলের ব্যাপারে একই মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। অতএব তাদের কেউ মুক্তি পাবে আবার কেউ ধ্বংস হবে।

আমার (মুবারকপূরী) দৃষ্টিতে সঠিক হলো মুশরিকদের সকল নাবালেগ সন্তানই জান্নাতে যাবে। এর স্বপক্ষে যে সকল প্রমাণাদি রয়েছে তন্মধ্যে প্রণিধানযোগ্য প্রমাণ বা দলীল ইমাম আহমাদ কর্তৃক খনসা বিনতু মু‘আবিয়াহ্ ইবনু মারইয়াম সূত্রে তার ফুফু হতে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, ‘‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কারা জান্নাতে যাবে? তিনি বললেন, নাবীগণ জান্নাতে যাবে, শাহীদগণ জান্নাতে যাবে আর সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুগণও জান্নাতে যাবে।’’


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে