পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সন্দেহ-সংশয়, কুমন্ত্রণা
৭৬-[১৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ পরস্পরে সর্বদা প্রশ্ন করতে থাকবে, এমনকি একসময় এ প্রশ্নও করবে যে, যখন প্রত্যেক জিনিসকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তবে মহান আল্লাহ রববুল ’আলামীনকে সৃষ্টি করলো কে? বুখারী[1]
আর মুসলিম-এর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আপনার উম্মাতেরা প্রশ্ন করতে থাকবে, এটা কী? আর এটা কিভাবে হল?। পরিশেষে এ ধরনের প্রশ্নও করে বসবে যে, যদি সমস্ত মাখলূক্বকে আল্লাহ সৃষ্টি করেন, তবে মহান আল্লাহ তা’আলাকে সৃষ্টি করেছেন কে?[2]
[2] সহীহ : মুসলিম ১৩৬, সহীহ আল জামি‘ ৫২১৯, সহীহ আল জামি‘ ৪৩১৯।
عَن أنس بن مَالك يَقُولَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَنْ يَبْرَحَ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يَقُولُوا هَذَا الله خَالق كل شَيْء فَمن خلق الله» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ. وَلِمُسْلِمٍ: قَالَ: قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجل: إِن أمتك لَا يزالون يَقُولُونَ: مَا كَذَا؟ مَا كَذَا؟ حَتَّى يَقُولُوا: هَذَا اللَّهُ خَلَقَ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ عَزَّ وَجل؟
Anas reported God’s messenger as saying, “Men will continue to question one another till they propound this:
‘God created everything, but who created God?’ ”
Bukhari transmitted it.
Muslim’s version is: He declared that God said, “Your people will continue to ask, ‘What is this?’ and ‘what is that?’ till they propound this: God created all things, but who created God?”
ব্যাখ্যা: অবিনশ্বরকে নশ্বরের সাথে তুলনা করার ফলে এ প্রশ্ন জাগে যে, আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? নশ্বরের জন্য স্রষ্টার প্রয়োজন হয়। এর ধারাবাহিকতায় তাদের অন্তরে এ প্রশ্নের উদয় হয়। মহান আল্লাহ নশ্বর নন, তাই তাঁর কোন স্রষ্টা নেই। হাদীসে এ ইঙ্গিত রয়েছে অধিক প্রশ্ন নিন্দনীয়। কেননা তা হারামের দিকে ধাবিত করে। আর এটা সীমাহীন অজ্ঞতার কারণেই ঘটে থাকে।
এ হাদীসে কুদসীর উদ্দেশ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে বিষয়ে অবহিত করা যা তাঁর উম্মাতের মাঝে ঘটবে। যাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে সে বিষয়ে সতর্ক করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সন্দেহ-সংশয়, কুমন্ত্রণা
৭৭-[১৫] ’উসমান ইবনু আবুল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! শায়ত্বন (শয়তান) আমার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও ক্বিরাআতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং সে আমার মনে সন্দেহ-সংশয় তৈরি করে দেয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐটা একটা শায়ত্বন (শয়তান) যাকে ’খিনযাব’ বলা হয়। যখন তোমার (মনে) তার উপস্থিতি অনুভব করবে, তখন তা হতে তুমি আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় চাইবে এবং বামদিকে তিনবার থু থু ফেলবে। [’উসমান (রাঃ) বলেন] আমি [রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ অনুযায়ী] এরূপ করলে আল্লাহ তা’আলা আমার নিকট হতে শায়ত্বন (শয়তান) দূর করে দেন।[1]
عَن عُثْمَان بن أبي الْعَاصِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بيني وَبَين صَلَاتي وقراءتي يُلَبِّسُهَا عَلَيَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهُ خِنْزِبٌ فَإِذَا أَحْسَسْتَهُ فَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْهُ وَاتْفُلْ عَلَى يسارك ثَلَاثًا قَالَ فَفَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَذْهَبَهُ اللَّهُ عَنِّي» . رَوَاهُ مَسْلِمٌ
‘Uthman b. Abul-'As said he told God’s messenger that the devil interfered with his prayer and his recitation of the Qur’an, causing confusion in his mind, and God’s messenger replied, “That is a devil called Khinzab; so when you feel his presence seek refuge from him in God and spit three times on your left side.” ‘Uthman did so and God caused him to depart from him.
Muslim transmitted it.
ব্যাখ্যা: (يُلَبِّسُهَا عَلَـيَّ) অর্থাৎ- সালাতে গোলমাল বাধিয়ে দেয় এবং ক্বিরাআত (কিরআত) এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) উভয়ের মধ্যেই সন্দেহে ফেলে দেয়।
(ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهٗ خِنْزَبٌ)-এ গোলমাল সৃষ্টিকারী একজন বিশেষ শায়ত্বনের (শয়তানের) নাম খিনযাব।
হাদীসের শিক্ষাঃ এ হাদীস থেকে সাব্যস্ত হয় যে, সালাতরত অবস্থায় প্রয়োজনে থুথু ফেলা যায় এতে সালাত বিনষ্ট হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সন্দেহ-সংশয়, কুমন্ত্রণা
৭৮-[১৬] ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, সালাতে আমি নানা ধরনের (ভুলের) সন্দেহের মধ্যে পড়ি। এটা আমার খুব বেশি হয়। তিনি (বর্ণনাকারী) বললেন, (এটা শয়তানের কাজ, এ রকম ধারণার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করো না) তুমি তোমার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করতে থাকবে। কেননা সে (শয়তান) তোমার কাছ থেকে দূর হবে না- যে পর্যন্ত না তুমি তোমার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ কর এবং মনে কর যে, আমি আমার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করতে পারিনি। (মালিক)[1]
وَعَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَهُ فَقَالَ: «إِنِّي أهم فِي صَلَاتي فيكثر ذَلِك عَليّ فَقَالَ الْقَاسِم بن مُحَمَّد امْضِ فِي صَلَاتك فَإِنَّهُ لن يذهب عَنْكَ حَتَّى تَنْصَرِفَ وَأَنْتَ تَقُولُ مَا أَتْمَمْتُ صَلَاتي» . رَوَاهُ مَالك
Al-Qasim b. Muhammad said that a man told him he was greatly distressed by wandering thoughts while he was engaged in prayer. He told him to persevere with his prayer, explaining that he would not be free from that till he said when he finished his prayer, “I have not performed my prayer perfectly.”
Malik transmitted it.
ব্যাখ্যা: (أَهِمُ فِي صَلَاتِي ... تَنْصَرِفَ) অর্থাৎ- তুমি তোমার সালাতে অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাও। কেননা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করা পর্যন্ত এ শায়ত্বনী ওয়াস্ওয়াসাহ্ দূর হবে না। শায়ত্বনী ওয়াসওয়াসাহ্ দূর করার জন্য এটি একটি বিরাট মূলনীতি। অর্থাৎ- শায়ত্বনের (শয়তানের) ওয়াস্ওয়াসার দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে যে কোন ‘ইবাদাত অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে।