পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
৯৪-[১৬] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সর্বপ্রথম যে বস্তুটি সৃষ্টি করেছিলেন তা হচ্ছে কলম। অতঃপর তিনি কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, ক্বদর (কদর) (তাক্বদীর) সম্পর্কে লিখ। সুতরাং কলম- যা ছিল ও ভবিষ্যতে যা হবে, সবকিছুই লিখে ফেলল। (তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি সানাদ হিসেবে গরীব)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَن عبَادَة بن الصَّامِت قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول «إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمُ فَقَالَ اكْتُبْ فَقَالَ مَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبِ الْقَدَرَ مَا كَانَ وَمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى الْأَبَدِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ إِسْنَادًا
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
‘Ubada b. as-Samit reported God’s messenger as saying, “The first thing God created was the pen. He told it to write and when it asked Him what it should write He told it to write what was decreed, so it wrote what had taken place and what would take place to all eternity.”
Tirmidhi transmitted it, saying that this is a tradition whose isnad is gharib.
ব্যাখ্যা: (أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللّهُ الْقَلَمُ) ‘আল্ আযহার’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ- ‘আর্শ (আরশ), পানি ও বায়ু সৃষ্টির পরে প্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। কেননা সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আকাশ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে আল্লাহ তা‘আরা মাখলূক্বের তাক্বদীর নির্ধারণ করেছেন।’’ তখন আল্লাহর ‘আর্শ (আরশ) ছিল পানির উপরে।
বায়হাক্বীতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর ‘আর্শ (আরশ) পানির উপরে ছিল। তাহলে পানি কিসের উপর ছিল? তিনি বললেনঃ (পানি) বায়ুর পিঠে ছিল। হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীর ১৩ খণ্ডের ১৮৬ পৃষ্ঠায় মারফূ‘ সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, ‘‘আর্শ (আরশ) সৃষ্টির পূর্বে পানি সৃষ্টি করা হয়েছে’’। হাদীসটি ইমাম আহমাদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
তবে মুসনাদে আহমাদ ও তিরমিযীতে ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) থেকে সহীহ সানাদে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হাদীস। আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে কলম সৃষ্টি করলেন। অতঃপর বললেন, তুমি লিখ। অতঃপর কলম ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত যা ঘটবে তা লিখলো।
এ হাদীস পূর্বে উল্লিখিত হাদীসের মধ্যে সমন্বয় এই যে, পানি ও ‘আর্শ (আরশ) ব্যতীত যা সৃষ্টি করা হয়েছে তন্মধ্যে কলম প্রথম সৃষ্টি। ‘আর্শ (আরশ) ও কলম এ দু’টির মধ্যে কোন বস্ত্ত আগে সৃষ্টি করা হয়েছে- এ সম্পর্কেও মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ ‘আলিমের মতে ‘আর্শ (আরশ) আগে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইবনু জারীর ও তার অনুসারীদের মতে কলম আগে সৃষ্টি করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
৯৫-[১৭] মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে কুরআনের এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ ’’(হে মুহাম্মাদ!) আপনার রব যখন আদম সন্তানদের পিঠ থেকে তাদের সব সন্তানদেরকে বের করলেন’’ (সূরাহ্ আল আ’রাফ ৭: ১৭২) (...আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। ’উমার (রাঃ) বললেন, আমি শুনেছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং তিনি জবাবে বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আপন ডান হাত তাঁর পিঠ বুলালেন। আর সেখান থেকে তাঁর (ভবিষ্যতের) একদল সন্তান বের করলেন। অতঃপর বললেন, এসবকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, তারা জান্নাতীদের কাজই করবে। আবার আদমের পিঠে হাত বুলালেন এবং সেখান থেকে (অপর) একদল সন্তান বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং তারা জাহান্নামীদেরই ’আমল করবে। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে ’আমলের আর আবশ্যকতা কি? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাতীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। এভাবে আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজই করিয়ে নেন। পরিশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে, আর এ কারণে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করেন। (মালিক, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَن مُسلم بن يسَار قَالَ سُئِلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ (وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورهمْ)
قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يسْأَل عَنْهَا فَقَالَ: «خلق آدم ثمَّ مسح ظَهره بِيَمِينِهِ فأاستخرج مِنْهُ ذُرِّيَّةً فَقَالَ خَلَقَتُ هَؤُلَاءِ لِلْجَنَّةِ وَبِعَمَلِ أهل الْجنَّة يعْملُونَ ثمَّ مسح ظَهره فَاسْتَخْرَجَ مِنْهُ ذُرِّيَّةً فَقَالَ خَلَقَتُ هَؤُلَاءِ لِلنَّارِ وبعمل أهل النَّار يعْملُونَ فَقَالَ رجل يَا رَسُول الله فَفِيمَ الْعَمَل يَا رَسُول الله قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ إِذَا خَلَقَ الْعَبْدَ لِلْجَنَّةِ اسْتَعْمَلَهُ بِعَمَلِ أهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَمُوتَ عَلَى عَمَلٍ من أَعمال أهل الْجنَّة فيدخله الله الْجَنَّةَ وَإِذَا خَلَقَ الْعَبْدَ لِلنَّارِ اسْتَعْمَلَهُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى يَمُوتَ عَلَى عَمَلٍ مِنْ أَعمال أهل النَّار فيدخله الله النَّار» . رَوَاهُ مَالك وَالتِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Muslim b. Yasar said that when ‘Umar b. al-Khattab was questioned about the verse, “When your Lord took their offspring from the backs of the children of Adam...” 1 he replied that he had heard God’s messenger say when he was questioned about it, “God created Adam, then passed His right hand over his back and brought forth from it his offspring, saying, ‘I have created these for paradise and they will do the deeds of those who go to paradise.’ He then passed his hand over his back and brought forth from it his offspring, saying, ‘I have created these for hell and they will do the deeds of those who go to hell’.” A man asked, “What is the good of doing anything, messenger of God?” to which God’s messenger replied, “When God creates a man for paradise He employs him in doing the deeds of those who will go to paradise, so that his final action before death is one of the deeds of those who go to paradise, for which He will bring him into paradise. But when He creates a man for hell He employs him in doing the deeds of those who will go to hell, so that his final action before death is one of the deeds of those who go to hell, for which He will bring him into hell.”
Malik, Tirmidhi and Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: উল্লিখিত হাদীসটি আবূ দাঊদ এবং তিরমিযী থেকে সংকলিত, যেখানে সুস্পষ্ট যে, শুধু ‘আমলের দ্বারা জান্নাত বা জাহান্নামে কেউ যাবে না বরং আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত বিষয় ‘তাক্বদীর’ এখানে বিশেষভাবে কার্যকর। অতএব, যার তাক্বদীরে যা লিখা আছে সে তারই হকদার হবে।
আয়াত ও হাদীসের বাহ্যিক মতবিরোধের সুষ্ঠু সমাধানঃ
আয়াতে কারীমাতে উল্লেখ আছেঃ
وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِىْ ادَمَ مِن ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلى اَنفُسِهِمْ ألَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلى شَهِدْنَا اَن تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هذَا غَافِلِيْنَ
আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানদের পিঠ থেকে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন। অপরপক্ষে হাদীসে উল্লেখ আছে, সন্তানদেরকে আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করেছেন। এর সমাধানে মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ) তার হুজ্জাতুল্লাহ আল্ বালিগাহ্ কিতাবে বলেন, আয়াতে কারীমা হাদীসের বিপরীত নয়। কেননা আদম (আঃ) থেকে তার সন্তানদের বের করা হয়েছে আর তার সন্তানদের থেকে তাদের সন্তানদের বের করেছেন, এভাবে ধারাবাহিকভাবে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত চলবে। অতএব আয়াতে ঘটনার কিছু অংশবিশেষ বর্ণনা করা হয়েছে এবং হাদীস তার বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেছে।
আদম (আঃ)-এর পিঠের উপর দিয়ে হাত অতিক্রম করলো, (এই হাত অতিক্রমের) কোন প্রকার ব্যাখ্যা বা ধরণ বর্ণনা করা ছাড়াই এই অর্থ গ্রহণ করতে হবে।
কেউ মন্তব্য করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তার পিঠকে ফেড়েছিলেন। অতঃপর তাদেরকে সেখান থেকে তিনি বের করেছেন। তবে সবচেয়ে নিকটতম অর্থটি হচ্ছে, তিনি তাদেরকে তার পিঠের লোমের গোড়া থেকে বের করেছেন। কারণ প্রত্যেক লোমের নীচে সূক্ষ্ম ছিদ্র বিদ্যমান, যার নাম হলো سم বা ছিদ্র, যেমনঃ سَمُّ الْخِيَاطِ সুঁচের ছিদ্র। আর এটাও সম্ভব যে, সন্তান এই ছিদ্র থেকে বের হয়েছে যেমনভাবে এখান থেকে ঘাম বের হয়।
অতএব এই মুহূর্তে আয়াত এবং হাদীসকে একই সাথে নিয়ে কথা বলা আবশ্যক এভাবে যে, কিছু সন্তান কিছু সন্তানের পিঠ থেকে বের হয়েছে। আদম (আঃ)-এর পিঠ থেকে আয়াত এবং হাদীসের মধ্যকার মতবিরোধ সমাধানকল্পে এমনটাই বলতে হবে।
অত্র হাদীসটি তাক্বদীরের উপর প্রমাণবাহী এভাবে যে, আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করার পূর্বেই এগুলো তাঁরা চিরন্তন জ্ঞানের মাধ্যমে নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর সৃষ্টি করার পরে এই সৃষ্টিজীবের ভবিষ্যৎ কি হবে তা তাঁর আগেই জানা আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
৯৬-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাতে দু’টি কিতাব নিয়ে বের হলেন এবং (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, তোমরা কি জান এ কিতাব দু’টি কি? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রসূল! কিন্তু আপনি যদি আমাদের অবহিত করতেন। তিনি তাঁর ডান হাতের কিতাবের প্রতি ইশারা করে বললেন, আমার ডান হাতে কিতাবটি হচ্ছে আল্লাহ রববুল ’আলামীনের পক্ষ থেকে একটি কিতাব। এতে সকল জান্নাতীদের নাম, তাদের পিতাদের নাম ও বংশ-পরম্পরার নাম রয়েছে এবং এদের সর্বশেষ ব্যক্তির নামের পর সর্বমোট যোগ করা হয়েছে। অতঃপর এতে আর কক্ষনো (কোন নাম) বৃদ্ধিও হবে না কমতিও করা হবে না। তারপর তিনি তাঁর বাম হাতের কিতাবের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এটাও আল্লাহ রববুল ’আলামীনের পক্ষ হতে একটি কিতাব। এ কিতাবে জাহান্নামীদের নাম আছে, তাদের বাপ-দাদাদের নাম আছে এবং তাদের বংশ-পরম্পরার নামও রয়েছে। অতঃপর তাদের সর্বশেষ ব্যক্তির নাম লিখে মোট যোগ করা হয়েছে। তাই এতে (আর কোন নাম কখনো) বৃদ্ধিও করা যাবে না কমানোও যাবে না।
তাঁর এ বর্ণনা শুনার পর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এসব ব্যাপার যদি আগে থেকে চূড়ান্ত হয়েই থাকে (অর্থাৎ- জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয়টি তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে লিপিবদ্ধ হয়েছে) তবে ’আমল করার প্রয়োজন কী? উত্তরে তিনি বললেন, হক পথে থেকে দৃঢ়ভাবে ’আমল করতে থাক এবং আল্লাহর নৈকট্যার্জনের চেষ্টা কর। কেননা জান্নাতবাসীদের শেষ ’আমল (জান্নাত প্রাপ্তির ন্যায়) জান্নাতীদেরই কাজ হবে। (পূর্বে) দুনিয়ার জীবনে সে যা-ই করুক। আর জাহান্নামবাসীদের পরিসমাপ্তি জাহান্নামে যাবার ন্যায় ’আমলের দ্বারা শেষ হবে। তার (জীবনের) ’আমল যা-ই হোক। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুই হাতে ইশারা করে কিতাব দু’টিকে পেছনের দিকে ফেলে দিয়ে বললেন, তোমাদের রব বান্দাদের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রেখেছেন। একদল জান্নাতে যাবে আর অপর একদল জাহান্নামে যাবে- (সূরাহ্ আশ্ শূরা ৪২: ৭)। (তিরমিযী)[1]
ইমাম তিরমিযী ২/২১ নং পৃঃ হাদীসটির হুকুম সম্পর্কে বলেছেন : هذَا حَدِيْثٌ حَسَنْ غَرِيْبٌ صَحِيْحٌ।
আলবানী (রহ) বলেন : হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রহঃ) ও তার মুসনাদের ২/১৬৬ নং পৃঃ বর্ণনা করেছেন যার সানাদ সহীহ। আর শায়খ শান্ক্বীত্বী (রহঃ) তার ‘যাদুল মুসলিম’ নামক গ্রন্থের ১/৭ নং পৃঃ ভুলবশত হাদীসটিকে বুখারী ও মুসলিম (রহঃ)-এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত বা সম্পৃক্ত করেছেন।
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي يَده كِتَابَانِ فَقَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا هَذَانِ الكتابان فَقُلْنَا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِلَّا أَنْ تُخْبِرَنَا فَقَالَ لِلَّذِي فِي يَدِهِ الْيُمْنَى هَذَا كِتَابٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ فِيهِ أَسْمَاءُ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَأَسْمَاء آبَائِهِم وقبائلهم ثمَّ أجمل على آخِرهم فَلَا يُزَادُ فِيهِمْ وَلَا يُنْقَصُ مِنْهُمْ أَبَدًا ثُمَّ قَالَ لِلَّذِي فِي شِمَالِهِ هَذَا كِتَابٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ فِيهِ أَسْمَاءُ أَهْلِ النَّارِ وَأَسْمَاء آبَائِهِم وقبائلهم ثمَّ أجمل على آخِرهم فَلَا يُزَادُ فِيهِمْ وَلَا يُنْقَصُ مِنْهُمْ أَبَدًا فَقَالَ أَصْحَابُهُ فَفِيمَ الْعَمَلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ كَانَ أَمْرٌ قَدْ فُرِغَ مِنْهُ فَقَالَ سَدِّدُوا وَقَارِبُوا فَإِنَّ صَاحِبَ الْجَنَّةِ يُخْتَمُ لَهُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ عَمِلَ أَيَّ عَمَلٍ وَإِنَّ صَاحِبَ النَّارِ يُخْتَمُ لَهُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ وَإِنْ عَمِلَ أَيَّ عَمَلٍ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيْهِ فَنَبَذَهُمَا ثُمَّ قَالَ فَرَغَ رَبُّكُمْ مِنَ الْعِبَادِ فريق فِي الْجنَّة وفريق فِي السعير» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيح
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
‘Abdallah b. ‘Amr said:
God’s messenger came out with two books in his hands and asked, “Do you know what these two books are?” We replied, “No, messenger of God, unless you tell us.” Of the one in his right hand he said, “This is a book from the Lord of the universe containing the names of those who will go to paradise, as well as the names of their fathers and their tribes. It is completed to the last man, so there will never be any increase or diminution in their numbers.” Of the one in his left hand he then said, “This is a book from the Lord of the universe containing the names of those who will go to hell, as well as the names of their fathers and their tribes. It is completed to the last man, so there will never be any increase or diminution in their numbers.” His Companions asked, “What then, messenger of God, is the good of doing anything if the matter is already decided?” He replied, “Follow a right course and keep as near to it as you can, for the last act of one who is to go to paradise will be an act appropriate for those who go to paradise no matter what he may have done; but the last act of one who is to go to hell will be an act appropriate for those who go to hell no matter what he may have done.” God’s messenger then made a gesture with his hands throwing the books away and said, “Your Lord has decided everything about mankind; a section will be in paradise and a section in the blaze.”
Tirmidhi transmitted it.
ব্যাখ্যা: তাক্বদীরের ভালো-মন্দের উপর ‘ঈমান’’ রাখতে হবে যা ঈমানের ৬টি রুকনের অন্যতম।
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) কিময়িয়াতে সা‘দাত কিতাবে বলেছেন, বিশেষ ব্যক্তিদেরকে সাধারণদের থেকে পৃথক করা হয় দু’টি জিনিসের মাধ্যমে। (১) যে সমস্ত বিষয় সাধারণ মানুষ অর্জনের মাধ্যমে সাধন করে থাকে ঐ সমস্ত বিষয় বিশেষ ব্যক্তিরা অর্জন ছাড়াই আল্লাহর পক্ষ থেকে জানতে পারেন। আর এর নাম ‘ইলমে লাদুনী’। যেমনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَعَلَّمْنهٗ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا
‘‘আর আমরা তাকে ‘ইলমে লাদুনী শিক্ষা দিয়েছিলাম।’’ (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮ঃ ৬৫)
(২) সাধারণ জনগণ যা স্বপ্নে দেখেন বিশেষ ব্যক্তিরা তা জাগ্রত অবস্থায় দেখতে পান।
ইসলামী ব্যক্তিবর্গ বলেন, অত্র হাদীসের উপর যে ব্যক্তি যথাযথ বিশ্বাস করবে না নবুওয়াতের হাকীকাতের উপর তার ঈমান থাকবে না।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ
প্রশ্নটি হচ্ছে, হাদীস মতে যদি বিষয়টি এমনই হয় যে, কিতাবে যা লেখা আছে সে অনুপাতেই ফায়সালা হবে, কিতাবে যার নাম জান্নাতী হিসেবে লেখা আছে সে জান্নাতী আর যার জাহান্নামী লেখা আছে সে জাহান্নামী, তাহলে ‘আমল করার প্রয়োজনীয়তা কোথায়?
উক্ত প্রশ্নের উত্তরে ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, ‘‘বান্দাদের তাক্বদীরকে দলীল বানিয়ে ‘আমল থেকে দূরে থাকার কোন সুযোগ নেই। তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে ‘ইবাদাতের জন্য, অতএব তারা ‘আমল করবে।’’
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের কিতাব দু’টি নিক্ষেপ করলেন হেয় প্রতিপন্ন করে নয় বরং তাদেরকে আল্লাহর দিকে নিক্ষেপ করেছেন, এই নিক্ষেপ প্রমাণ করে যে, সেখানে আসলেই কিতাব ছিল আর যদি দৃষ্টান্তমূলক হয় তাহলে অর্থ হবে দু’হাত নিক্ষেপ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
৯৭-[১৯] আবূ খুযামাহ্ (রহঃ) সূত্রে তার পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা (রোগমুক্তির জন্য) যেসব তন্ত্রমন্ত্র পাঠ করি বা ঔষধ ব্যবহার করে থাকি কিংবা আমরা আত্মরক্ষা করতে যে কোন উপায়ে চেষ্টা করি- এ সকল কি তাক্বদীরকে কিছু পরিবর্তন করতে পারে? তিনি বললেন, এ সকল কাজও আল্লাহর (পূর্বে নির্ধারিত) তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) তাঁর জামি‘ আত্ তিরমিযীর ২/৭ নং পৃষ্ঠায় এ হাদীসের হুকুম সম্পর্কে বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ। আলবানী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসের একজন রাবী ‘‘আবূ খুযামাহ্’’ সম্পর্কে ইমাম ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেনঃ তিনি একজন তাবি‘ঈ কিন্তু তার হাদীস مُضْطَرِبٌ (মুযত্বরিব) তথা যা হাদীস দুর্বল হওযার একটি অন্যতম কারণ। শায়খ আলবানী (রহঃ) হাদীসটি য‘ঈফ আত্ তিরমিযীতে দুর্বল বলেছেন।
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَن أبي خزامة عَن أَبِيه قَالَ سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ رُقًى نَسْتَرْقِيهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللَّهِ شَيْئًا قَالَ: «هِيَ مِنْ قَدَرِ الله» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Abu Khizama said that his father asked God’s messenger, “Tell me whether spells we invoke, medicine we apply and caution we practise can avert anything God has decreed.” He replied, “They are a part of God’s decree ’
Ahmad, Tirmidhi and Ibn Majah transmitted it.
ব্যাখ্যা: মোট কথা হলো আল্লাহ তা‘আলা ঘটনা এবং ঘটনার কারণ উভয়টিই সৃষ্টি করেছেন এবং কারণসমূহকে সংগঠিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত করেছেন। সুতরাং কারণসমূহের বিদ্যমানতায় কোন বিষয় সংগঠিত হওয়াও তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
৯৮-[২০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা তাক্বদীর সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম। এমন সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে উপস্থিত হন। তিনি এটা দেখে এত রাগ করলেন যে, রাগে তাঁর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল, মনে হচ্ছিল যেন তাঁর চেহারা মুবারকে আনারের (ডালিমের) রস নিংড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের কি (তর্কে লিপ্ত হওয়া জন্য) নির্দেশ দেয়া হয়েছে অথবা এজন্য কি রসূল বানিয়ে তোমাদের নিকট আমাকে পাঠানো হয়েছে? (জেনে রাখ!) তোমাদের পূর্বে অনেক লোকেরা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে তখনই ধ্বংস হয়েছে, যখনই তারা এ বিষয় নিয়ে বাক-বিতণ্ডা করেছে। আমি তোমাদেরকে কসম করে বলছি, আবারও কসম করে বলছি- সাবধান! এ বিষয় নিয়ে তোমরা কক্ষনো তর্কে জড়িয়ে যেয়ো না। (তিরমিযী)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) তাঁর জামি‘ আত্ তিরমিযীর ২/১৯ নং পৃঃ এ হাদীসের মান সম্পর্কে বলেছেনঃ حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ، لَا نَعْرِفُهٗ اِلَّا مِنْ هذَا الْوَجْهِ مِنْ حَدِيْثِ صَالِحٍ الْمَرْيِ (হাদীসটি গরীব যা আমরা সালিহ আল মার্য়ি ব্যতীত অন্য কারো সানাদে পাইনি। আর সালিহ আল মার্য়ি-এর অনেকগুলো এক সানাদ বিশিষ্ট বর্ণনা রয়েছে যেগুলোর কোন সমর্থনযোগ্য বর্ণনা নেই।) শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেনঃ কিন্তু এ হাদীসের অনেক শাহিদে বর্ণনা রয়েছে যার কারণে হাদীসটি হাসান স্তরের।
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَنَازَعُ فِي الْقَدَرِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّمَا فُقِئَ فِي وجنتيه الرُّمَّانِ فَقَالَ أَبِهَذَا: «أُمِرْتُمْ أَمْ بِهَذَا أُرْسِلْتُ إِلَيْكُمْ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلُكُمْ حِينَ تنازعوا فِي هَذَا الْأَمر عزمت عَلَيْكُم أَلا تتنازعوا فِيهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ هَذَا الْوَجْهِ من حَدِيث صَالح المري وَله غرائب يتفرد بهَا لَا يُتَابع عَلَيْهَا قلت: لَكِن يشْهد لَهُ الَّذِي بعده
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Abu Huraira said:
God’s messenger came out to us when we were arguing about God’s decree. He was angry and his face became so red that it looked as if pomegranate seeds had been burst open on his cheeks. He then said, “Is this what you were commanded to do, or was it for this purpose that I was sent to you? Your predecessors perished only when they argued about this matter. I adjure you, I adjure you, not to argue about it.”
Tirmidhi transmitted it, and Ibn Majah transmitted something similar from ‘Amr b. Shu'aib from his father from his grandfather.
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাগান্বিত হওয়ার কারণ ছিল এই যে, তাক্বদীর হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার গোপন বিষয়সমূহের অন্যতম। আর আল্লাহ তা‘আলার গোপন বিষয় অন্বেষণ করতে নিষেধ করা হয়েছে, পাশাপাশি যারা তাক্বদীরের বিষয়ে আলোচনা করবে তারা ক্বদারিয়াহ্ বা জাবারিয়্যাহ্ বনে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া বান্দারা শারী‘আত প্রণেতার সকল আদেশ পালন করতে আদিষ্ট, এ ব্যাপারে যে সমস্ত জিনিসের গোপন রহস্য সম্পর্কে চিন্তা করা বৈধ নয় তার গোপন রহস্য বের করা ব্যতীত রেখেই।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
৯৯-[২১] ইবনু মাজাহ্ও এ অর্থের একটি হাদীস ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, যা তিনি তার পিতা, তার পিতা তার দাদার মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন।[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وروى ابْن مَاجَه فِي الْقدر نَحْوَهُ عَنْ عَمْرٍو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Ibn Majah transmitted something similar from ‘Amr b. Shu'aib from his father from his grandfather.
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০০-[২২] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে এক মুঠো মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা তিনি সমগ্র ভূপৃষ্ঠ হতে নিয়েছিলেন। তাই আদম সন্তানগণ (বিভিন্ন মাটির রং অনুযায়ী বিভিন্ন আকৃতিতে) কেউ লাল বর্ণের, কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ মধ্যবর্তী বর্ণের হয়েছে। এরূপে কেউ কোমল মেজাজের, কেউ কঠোর হয়, কেউ সৎ ও কেউ অসৎ প্রকৃতির হয়ে থাকে। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটির স্তর বা মান সম্পর্কে বলেছেন ‘হাসান সহীহ’। যেমনটি শায়খ আবুল ফারাজ আস্ সাক্বাফী (রাঃ) তার ‘‘আল ফাওয়া-য়িদ’’ গ্রন্থের ১/৯৭ নং পৃঃ হাদীসটি বর্ণনা করে সহীহ বলেছেন। আর মুসনাদে আহমাদের ৪/৪০৬ নং পৃঃ হাদীসটি রয়েছে। অতএব হাদীসটি সহীহ।
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ آدَمَ مِنْ قَبْضَةٍ قَبَضَهَا مِنْ جَمِيعِ الْأَرْضِ فَجَاءَ بَنُو آدَمَ عَلَى قَدْرِ الْأَرْضِ مِنْهُمُ الْأَحْمَرُ وَالْأَبْيَضُ وَالْأَسْوَدُ وَبَيْنَ ذَلِكَ وَالسَّهْلُ وَالْحَزْنُ وَالْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Abu Musa reported that he heard God’s messenger say, “God created Adam from a handful which he took from the whole of the earth; so the children of Adam are in accordance with the earth, some red, some white, some black, some a mixture, also smooth and rough, bad and good.”
Ahmad, Tirmidhi and Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: বানী আদম আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাদের কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ কালো বর্ণের হওয়ার কারণ হলো আদম (আঃ)-কে যে একমুষ্টি মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটির অনুপাতেই তাদের এমন বিভিন্নতা।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, উক্ত হাদীসে ৪টি গুণ যা মানুষের মধ্যে দৃশ্যমান এবং মাটিও তাই। তবে পরের ৪টি ব্যাখ্যার দাবীদার, কেননা এগুলো (اَلسَّهْلُ) সহজ-সরল, (اَلْحَرْنُ) বিষণ্ণ হওয়া, (اَلْخَبِيْثُ) মন্দ, (اَلطَّيِّبُ) ভালো, আভ্যন্তরীণ চরিত্র।
(اَلسَّهْلُ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নরম হওয়া বা ভদ্র হওয়া। (اَلْحُزْنُ) দ্বারা উদ্দেশ্য নির্বুদ্ধিতা, বোকামি; (اَلطَّيِّبُ) দ্বারা উর্বর জমিন, অর্থাৎ- মু’মিন ব্যক্তি যার প্রতিটি ক্ষেত্রেই কল্যাণকর এবং (اَلْخَبِيْثُ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জলাভূমি বা লবণাক্তভূমি, অর্থাৎ- কাফির যার পুরোটাই অকল্যাণকর।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০১-[২৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্টজীবকে অন্ধকারে সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি তাদের প্রতি স্বীয় নূর (জ্যোতি) নিক্ষেপ করেন। সুতরাং যার কাছে তাঁর এ নূর পৌঁছেছে, সে সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে। আর যার কাছে তাঁর এ নূর পৌঁছেনি, সে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। তাই আমি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলিঃ আল্লাহর জ্ঞান ও ইচ্ছা অনুযায়ী যা হওয়ার তা-ই হয়ে কলম শুকিয়ে গেছে। (আহমাদ, তিরমিযী)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٌو قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ خَلْقَهُ فِي ظُلْمَةٍ فَأَلْقَى عَلَيْهِمْ مِنْ نُورِهِ فَمَنْ أَصَابَهُ مِنْ ذَلِكَ النُّورِ اهْتَدَى وَمَنْ أَخْطَأَهُ ضَلَّ فَلذَلِك أَقُول: جف الْقلب على علم الله . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
‘Abdallah b. ‘Amr reported that he heard God’s messenger say, “God created His creatures in darkness and cast some of His light upon them. Those on whom some of that light falls will have guidance, but those who are missed by it will go astray. On that account I say that the pen has no more to write about God’s knowledge.”
Ahmad and Tirmidhi transmitted it.
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে তাক্বদীরের আলোচনা করা হয়েছে।
(خَلَقَه) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধুমাত্র মানুষ, জিন্ বা মালাক (ফেরেশতা) নয়। কেননা তাদেরকে কেবল নূর থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে।
লুম্‘আত-এর লেখক বলেন, এখানে (خَلَقَه) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জন্মের সময়, আর নিক্ষেপণের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হিদায়াতের তাওফীক্ব প্রদান এবং শারী‘আতের বিধি-বিধান প্রকাশ হওয়ার সময়। এক কথায় অত্র হাদীসে প্রমাণ রয়েছে যে, যাকে নূর দেয়া হয়েছে সে ব্যতীত সৃষ্টি করার মুহূর্তে মানুষই অন্ধকারে ছিল।
তবে এ ক্ষেত্রে ফিত্বরাতের যে হাদীস আছে তার সাথে এ হাদীসের বিষয়টি একটু সাংঘার্ষিক মনে হয় যে ফিত্রাতের হাদীস প্রমাণ করছে যে, মানুষ জন্মের সময় প্রত্যেকেই ফিতরাতের আলোর উপর থাকে আর এ হাদীসে বলা হলো আলো না দেয়ার আগ পর্যন্ত সবাই অন্ধকারেই থাকে।
যার নিকট আলোর কিছু অংশ পৌঁছাল। কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, نور দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলো ঈমানের আলো। আর কেউ কেউ বলেছেন, نور দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নিদর্শন থেকে তাকে চিনবার মতো মানবিকতা। অতএব আল্লাহ তা‘আলা যাকে হিদায়াত দান করবেন সে আল্লাহ তা‘আলার এসব নিদর্শন দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব বুঝতে পারে আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা করেন না সে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তার নিদর্শন খুঁজে পায় না। এটাই আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্রে বলেছেন,
اَوَ مَنْ كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَه نُوْرًا
‘‘যে ছিল মৃত্যু তাকে আমি জীবিত করলাম এবং তাকে আলো (হিদায়াতের আলো) দান করি।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ঃ ১২২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
اَفَمَن شَرَحَ اللّهُ صَدْرَه لِلْاِسْلَامِ فَهُوَ عَلى نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّه
‘‘আল্লাহ তা‘আলা যার সীনাকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করেছেন সে তার রবের আলোর উপর আছে।’’ (সূরাহ্ আয্ যুমার ৩৯ঃ ২২)
অতএব, বুঝা গেল হিদায়াত এবং ভ্রষ্টতা সবই আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০২-[২৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় সময়ই এ দু’আ করতেনঃ ’’হে অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমার হৃদয়কে তোমার দীনের উপর দৃঢ় রাখ’’। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা আপনার ওপর এবং আপনি যে দীন নিয়ে এসেছেন, তার ওপর ঈমান এনেছি। এরপরও কি আপনি আমাদের সম্পর্কে আশংকা করেন? জবাবে তিনি বললেন, কেননা ’ক্বল্ব, আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে রয়েছে (অর্থাৎ- তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও অধিকারে রয়েছে)। তিনি যেভাবে চান সেভাবে (অন্তরকে) ঘুরিয়ে থাকেন। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ: «يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ» فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ آمَنَّا بِكَ وَبِمَا جِئْتَ بِهِ فَهَلْ تَخَافُ عَلَيْنَا؟ قَالَ: «نَعَمْ إِنَّ الْقُلُوبَ بَيْنَ أُصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللَّهِ يُقَلِّبُهَا كَيْفَ يَشَاءُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Anas reported that God’s messenger often said, “O Thou who turnest the hearts about, establish my heart in Thy religion.” Anas said, “Prophet of God, do you fear for us who believe in you and in your message?” He replied, “Yes. The hearts are between two of God’s fingers and He turns them about as He wills.”
Tirmidhi and Ibn Majah transmitted it.
ব্যাখ্যা: (يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلى دِينِكَ) ‘‘হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর তুমি তোমার দীনের উপর অবিচল রেখো।’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু‘আ বেশী বেশী করতেন। প্রশ্ন হচ্ছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তর আল্লাহর দীন থেকে পরিবর্তন হয়ে অন্য কোন দিকে চলে যাওয়ার আশংকা কখনোই ছিল না। তাকে আল্লাহ হিফাযাত করেছেন, তারপরও এ দু‘আ করার উদ্দেশ্য কি? উত্তরঃ উদ্দেশ্য হলো, তার উম্মাতকে শিক্ষা দেয়া।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০৩-[২৫] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর হাতে (মানুষের) ’ক্বলব’ (কলব) বা মন, যেমন কোন তৃণশূন্য মাঠে একটি পালক, যাকে বাতাসের গতি বুকে-পিঠে (এদিক-সেদিক) ঘুরিয়ে থাকে।[1] (আহমাদ)
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَثَلُ الْقَلْبِ كَرِيشَةٍ بِأَرْضِ فَلَاةٍ يُقَلِّبُهَا الرِّيَاحُ ظَهْرًا لِبَطْنٍ» . رَوَاهُ أَحْمد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Abu Musa reported that God’s messenger said, “The heart is like a feather in desert country which the winds keep turning over and over.”
Ahmad transmitted it.
ব্যাখ্যা: (يُقَلِّبُهَا الرِّيَاحُ ظَهْرًا لِّبَطْنٍ) ‘‘যাকে বাতাসের গতি এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে থাকে।’’ অর্থাৎ- তৃণহীন মাঠে পরে থাকা পালককে বাতাসের গতি যেমন এদিক-সেদিক উলট-পালট করে ফেলে, এতে কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। মানুষের অন্তর তদ্রূপ আল্লাহ তা‘আলার হাতের মুঠোতে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে উলট-পালট করে থাকেন। তাইতো তা কোন সময় কল্যাণকামী হয় আবার মুহূর্তেই তা অকল্যাণকামী হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০৪-[২৬] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এ চারটি বিষয়ের উপর ঈমান না আনেঃ (১) সে সাক্ষী দিবে আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই, (২) নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর রসূল, আল্লাহ আমাকে দীনে হক সহকারে পাঠিয়েছেন, (৩) মৃত্যু ও মৃত্যুর পরে হাশ্রের (হাশরের) মাঠে পুনরুত্থান দিবসে বিশ্বাস রাখবে এবং (৪) তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস রাখবে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى يُؤْمِنَ بِأَرْبَعٍ: يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ بَعَثَنِي بِالْحَقِّ وَيُؤْمِنُ بِالْمَوْتِ وَالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ وَيُؤْمِنُ بِالْقَدَرِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
‘Ali reported that God’s messenger said, “A man is not a believer till he believes in four things :
he must testify that there is no god but God and that I am God’s messenger whom He sent with the truth ; he must believe in death and in the resurrection after death; and he must believe in the divine decree."
Tirmidhi and Ibn Majah transmitted it.
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত চারটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে কোন ব্যক্তি মু’মিন হতে পারবে না। এ থেকে জানা যায় যে, তাক্বদীর অস্বীকারকারীগণ মু’মিন নয়। তারা কাফির যদিও তারা আল্লাহর একত্ববাদে এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি বিশ্বাসী।
(يُؤْمِنُ بِالْمَوْتِ) ‘‘মৃত্যুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’’ অর্থাৎ- এ বিশ্বাস রাখে যে, এ দুনিয়া স্থায়ী নয় তা ধ্বংস হয়ে যাবে অথবা এ বিশ্বাস রাখে আল্লাহর নির্দেশে মৃত্যু ঘটে প্রকৃতিবাদীদের মতো মনে করে না যে, শরীর বিনষ্ট হয়ে যাবার কারণে মৃত্যু ঘটে।
(يُؤْمِنُ بِالْقَدَرِ) ‘‘তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’’ অর্থাৎ- এ বিশ্বাস রাখে যে, সারাবিশ্বে যা ঘটে তা আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী ঘটে। এতে এ প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের একটি রুকন, এ বিশ্বাস ব্যতীত ঈমানের অস্তিত্ব নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০৫-[২৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে দু’ রকমের লোক রয়েছে, তাদের জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই। তারা হলোঃ (১) মুর্জিয়াহ্ ও (২) ক্বদারিয়্যাহ্। (তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِي لَيْسَ لَهُمَا فِي الْإِسْلَامِ نَصِيبٌ: الْمُرْجِئَةُ وَالْقَدَرِيَّةُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Ibn ‘Abbas reported that God’s messenger said, “There are two classes among my people who have no portion in Islam, the Murji’a and the Qadariya."
Tirmidhi transmitted it and said this is a gharib tradition.
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা শাহরাস্তানী বলেন, إلْارْجَاءُ-এর দু’টি অর্থ হতে পারে। ১. বিলম্ব করা। যেমনঃ ‘আরবরা বলে থাকে, অবকাশ দাও। ২. আশা দেয়া। এই দুই অর্থই উক্ত হাদীসে উল্লিখিত মুরজিয়াহ্ দলের ওপর নেয়া যেতে পারে। কেননা তারা ‘আমলকে নিয়্যাত থেকে বিলম্বিত করে এবং তারা এ কথা বলে যে, ঈমানের পরে যতই পাপ হোক না কেন তাতে কোন ক্ষতি হবে না। যেমনিভাবে কুফরীর অবস্থায় কোন ভালো কাজ কোনই উপকারে আসবে না।
তিনি আরো বলেন, মুর্জিয়াহ্ চার শ্রেণীরঃ ১. খাওয়ারিজের মুরজিয়াহ্ দল ২. ক্বদারিয়্যাদের মুরজিয়াহ্ দল ৩. জাবরিয়াদের মুরজিয়াহ্ দল ৪. মূল মুরজিয়াহ্ দল।
অতঃপর তিনি মূল মুরজিয়াদের আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে, যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে জানতে চায় সে যেন ‘‘আল মিলাল ওয়া আন্ নিহাল’’ কিতাব দেখেন। আর অত্র হাদীসে মুরজিয়াহ্ দ্বারা জাবরিয়াই উদ্দেশ্য।
‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, এ তাক্বদীরের বিষয়ের হাদীসগুলো সহীহ, হাসান, য‘ঈফ সবগুলোই প্রমাণ করছে কোন তর্ক ছাড়াই তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনতে হবে, যা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। অতএব, তাক্বদীরকে অস্বীকার করা বা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করা কুফরী গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। (আল্লাহই ভালো জানেন)
(والقَدَرية) দু’টোতেই যবর দিয়ে অথবা দালে সাকিন দিয়ে পড়া যায়। যারা বলে থাকে বান্দা নিজেই তার কর্মসমূহের স্রষ্টা এক্ষেত্রে তাক্বদীরের কোন প্রাধান্য নেই। এই নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে যারা তাক্বদীরকে স্বীকার করে না তারা এই কারণে যে, তারা তাক্বদীর সম্পর্কে কথা বলে এবং তাক্বদীর অস্বীকার করার দলীল উপস্থাপন করে। তাদের বাড়াবাড়ির কারণেই এ নামে প্রসিদ্ধ হতে তারাই বেশী হকদার।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০৬-[২৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’আমার উম্মাতের মধ্যেও ’খাসফ’ (জমিন ধ্বসিয়ে বা অদৃশ্য করে দেয়া) এবং ’মাসখ’ (চেহারা বা আকার পরিবর্তন করে দেয়ার) মত শাস্তি হবে। তবে এ শাস্তি তাক্বদীরের প্রতি অবিশ্বাসকারীদের মধ্যেই হবে। আবূ দাঊদ, ইমাম তিরমিযীও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «يَكُونُ فِي أُمَّتِي خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَذَلِكَ فِي الْمُكَذِّبِينَ بِالْقَدَرِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وروى التِّرْمِذِيّ نَحوه
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Ibn ‘Umar said:
I heard God’s messenger say, “Some of my people will be swallowed up and some will be metamorphosed. That will come about among those who declare God’s decree to be false."
Abu Dawud transmitted it and Tirmidhi transmitted something similar.
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০৭-[২৯] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্বদারিয়্যাগণ হচ্ছে এ উম্মাতের মাজূসী (অগ্নিপূজক)। অতঃপর তারা যদি অসুস্থ হয়, তাদেরকে দেখতে যাবে না, আর যদি মারা যায়, তবে তাদের জানাযায় উপস্থিত হয়ো না। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْقَدَرِيَّةُ مَجُوسُ هَذِهِ الْأُمَّةِ إِنْ مَرِضُوا فَلَا تَعُودُوهُمْ وَإِنْ مَاتُوا فَلَا تشهدوهم» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Ibn ‘Umar reported God’s messenger as saying, “The Qadariya are the Magians of this people. If they are ill, do not visit them, and if they die, do not attend their funerals."
Ahmad and Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্তি ‘‘ক্বদারিয়্যারাই এ উম্মাতের মাজূসী’’-এর ব্যাখ্যাঃ
‘‘এ উম্মাত’’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দা‘ওয়াত কবূলকারী উম্মাত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বদারিয়্যাহ্-কে ‘অগ্নিপূজক’ বলার কারণ হচ্ছে (তাদের কথা হচ্ছে) বান্দা তার নিজের কাজের স্রষ্টা নিজেই। তাদের কাজ আল্লাহ তা‘আলার তাক্বদীরে এবং তার ইচ্ছায় হয় না। এ কথাটি অগ্নিপূজকদের কথার সদৃশ, কেননা তারা বলে পৃথিবীর প্রভু হচ্ছেন দু’জন।
১. কল্যাণের স্রষ্টা যার নাম ইয়াযদান তথা আল্লাহ তা‘আলা।
২. অকল্যাণের স্রষ্টা যার নাম আহারমান, অর্থাৎ- শায়ত্বন (শয়তান)।
আরো বলা হয়ে থাকে, অগ্নিপূজকরা বলে থাকে ভালো কাজ হচ্ছে نور তথা আলোর কৃতি, আর খারাপ কাজ হচ্ছে ظلمة তথা অন্ধকারের কৃতি। অতএব তারা দ্বৈতবাদীতে পরিণত হলো এমনিভাবে ক্বদারিয়্যারা তারা বলে ভালো আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আর খারাপ আসে অন্যের পক্ষ থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০৮-[৩০] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ক্বদারিয়্যাদের সাথে উঠা-বসা করো না এবং তাদেরকে হাকিম বা বিচারক নিযুক্ত করো না। (আবূ দাঊদ)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُجَالِسُوا أَهْلَ الْقَدَرِ وَلَا تفاتحوهم» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
‘Ibn Umar reported God’s messenger as saying, “Do not sit with those who believe in freewill and do not address them before they address you."
Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা গেল ক্বদারিয়্যাদের কাছে বসা যাবে না এবং তাদের কাছে বিচারের মুক্বদ্দামাহ্ নিয়ে যাওয়া যাবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১০৯-[৩১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছয় রকম মানুষের প্রতি আমি লা’নাত (অভিশাপ) করি এবং আল্লাহ তা’আলাও তাদের প্রতি অভিশপ্ত করেছেন। আর প্রত্যেক নবীর দু’আই কবূল হয়ে থাকে। (১) যারা আল্লাহর কিতাবের মধ্যে সংযোজন; (২) যে ব্যক্তি তাক্বদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে; (৩) যে ব্যক্তি এ উদ্দেশে জোর-জবরে ক্ষমতা দখল করে, আল্লাহ যাদেরকে অপমানিত লাঞ্ছিত করেছেন (কাফির-মুশরিক-ফাসিক্ব) তাদের যেন সে মর্যাদা দান করতে পারে এবং আল্লাহ যাকে সম্মানিত করেছেন (মু’মিন দীনদার) তাদের যেন অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে পারে; (৪) যে ব্যক্তি আল্লাহর হারামে (মক্কায়) এমন সীমালঙ্ঘন করে, যা আল্লাহ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন; (৫) যে ব্যক্তি আমার আহলে বায়ত-এর (অসম্মান করা এবং তাদের কষ্ট দেয়া) আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল মনে করে এবং (৬) যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত (নিয়ম-কানুন) পরিত্যাগ করে। (ইমাম বায়হাক্বী’র ’’মাদখাল’’ গ্রন্থে ও রযীন তাঁর স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)[1]
লেখকের শেষের কথা ধারণা দেয় যে, হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী ও রযীন-এর চেয়ে প্রসিদ্ধ, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কেউ রিওয়ায়াত করেননি। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। কারণ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী জামি‘ আত্ তিরমিযীর ২/২২, ২৩ পৃঃ ক্বদ্র (কদর) অধ্যায়ে, ইমাম ত্ববারানী তার ‘‘আল মু‘জামুল কাবীর’’ গ্রন্থের ১/২৯১ পৃঃ এবং ইমাম হাকিম ১/৩৬ পৃঃ বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকিম (রহঃ) একে দোষমুক্ত সহীহ হাদীস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আর ইমাম যাহাবী তার এ মতকে সমর্থন করেছেন। তবে ইমাম তিরমিযী এর মুরসাল হওয়াকে অধিক সঠিক বলেছেন।
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: `` سِتَّةٌ لَعَنْتُهُمْ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ وَكُلُّ نَبِيٍّ يُجَابُ: الزَّائِدُ فِي كِتَابِ اللَّهِ وَالْمُكَذِّبُ بِقَدَرِ اللَّهِ وَالْمُتَسَلِّطُ بِالْجَبَرُوتِ لِيُعِزَّ مَنْ أَذَلَّهُ اللَّهُ وَيُذِلَّ مَنْ أَعَزَّهُ اللَّهُ وَالْمُسْتَحِلُّ لِحَرَمِ اللَّهِ وَالْمُسْتَحِلُّ مِنْ عِتْرَتِي مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَالتَّارِكُ لِسُنَّتِي ``. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي الْمدْخل ورزين فِي كِتَابه
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
‘A’isha reported that God’s messenger said, “There are six whom I have cursed, whom I pray that God may curse, and every prophet’s prayer is answered:
He who makes additions to God’s Book, he who declares God’s decree to be false, he who rules proudly to exalt him whom God has humbled and humble him whom God has exalted, he who profanes God’s sacred area, he who considers he may do to my family what God has declared forbidden, and he who abandons my sunna.”
Baihaqi transmitted it in the introduction and Razin in his book.
ব্যাখ্যা: অবজ্ঞাবশত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে কাফির হয়ে যাবে এবং সে অভিশপ্ত। আর অবজ্ঞা করে নয় বরং অলসতাবশত যদি কেউ তা করে তাহলে সে পাপী হবে কাঠিন্য অর্থে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১১০-[৩২] মাত্বার ইবনু ’উকামিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর কোন বান্দার নির্ধারিত কোন জায়গায় মৃত্যুর ফায়সালা করেন, তখন সে জায়গায় তার যাওয়ার জন্য একটি প্রয়োজনও তৈরি করে দেন। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَن مطر بن عكام قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا قَضَى اللَّهُ لِعَبْدٍ أَنْ يَمُوتَ بِأَرْضٍ جَعَلَ لَهُ إِلَيْهَا حَاجَةً» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Matar b. ‘Ukamis reported God’s messenger as saying, “When God decrees that someone should die in a certain land, He gives him a reason for going there."
Ahmad and Tirmidhi transmitted it.
ব্যাখ্যা: (جَعَلَ لَه إِلَيْهَا حَاجَةً) ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সে জায়গায় তার যাওয়ার জন্য কোন প্রয়োজন তৈরি করে দেন।’’ অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা যেখানে যার মৃত্যু ঘটাবেন সে যদি ঐ এলাকার বাসিন্দা না হন তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ জায়গায় নেয়ার জন্য তার কোন প্রয়োজন তৈরি করেন। সে ঐ প্রয়োজন পূরণ করার জন্য সেখানে যান। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সেখানেই তার মৃত্যু ঘটান। এতে কুরআনে বর্ণিত এ কথার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে- وَمَا تَدْرِىْ نَفْسٌ بِأَيِّ اَرْضٍ تَمُوْتُ ‘‘কোন আত্মাই জানে না সে কোথায় মৃত্যুবরণ করবে’’- (সূরাহ্ লুক্বমান ৩১ঃ ৩৪)। উক্ত হাদীসে দলীল পাওয়া যায় তাক্বদীরের।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১১১-[৩৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মু’মিনদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের (জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে) কী হুকুম? তিনি উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি বললাম, কোন (নেক) ’আমল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ অনেক ভালো জানেন, তারা জীবিত থাকলে কী ’আমল করতো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মুশরিকদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের কী হুকুম? তিনি বললেন, তারাও তাদের বাপ-দাদার অনুসারী হবে। (অবাক দৃষ্টিতে) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন (বদ) ’আমল ছাড়াই? উত্তরে তিনি বললেন, সে বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কী ’আমল করত, আল্লাহ খুব ভালো জানেন। (আবূ দাঊদ)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَرَارِيُّ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: «مِنْ آبَائِهِمْ» . فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بِلَا عَمَلٍ؟ قَالَ: «اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ» . قُلْتُ فذاراري الْمُشْرِكِينَ؟ قَالَ: «مِنْ آبَائِهِمْ» . قُلْتُ: بِلَا عَمَلٍ؟ قَالَ: «اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
‘A’isha said:
I asked, “Messenger of God, what happens to the offspring of believers?’’ He replied, “They are joined to their parents." I asked, “Although they have done nothing, messenger of God” lie replied, “God knows best what they were doing.” I asked, “What happens to the offspring of polytheists?” He replied, “They are joined to their parents.” I asked, “Although they have done nothing?” He replied, “God knows best what they were doing.”
Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা তুরবিশতী (রহঃ) বলেছেন, তারা তাদেরই অন্তর্গত হবে তারা জান্নাতী হলে জান্নাতী আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামী হবে। কেননা, ইসলামী শারী‘আতে পিতা-মাতা যদি ইসলামের উপর তার বিধান দিয়ে থাকে এবং আদেশ দেয় তাদের (এই সমস্ত শিশুর) জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অনুরূপভাবে মুশরিকদের সন্তানদের দাস বানিয়ে রাখতে এবং মুসলিম ও মুশরিকের মাঝে উত্তরাধিকার বাতিল করে। অতএব, হাদীসের বাহ্যিক অর্থে তারা তাদের পিতামাতার সাথেই মিলিত হবে।
(قُلْتُ بِلَا عَمَلٍ) হাদীসের এ অংশটুকু ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে বের হয়েছে যা তিনি স্বভাবতই আশ্চার্যান্বিত হয়ে বলেছেন।
(قَالَ اللّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا) অর্থাৎ- ‘যদি তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়’ এ অংশটুকু ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর আশ্চর্যান্বিত হয়ে করা প্রশ্নের প্রতি উত্তর পাশাপাশি তা তাক্বদীরের প্রতি ইঙ্গিতবাহী, এজন্যই অত্র হাদীসটিকে তাক্বদীরের অধ্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
ইমাম তুরবিশতী (রহঃ) বলেন, তারা দুনিয়াতে তাদের পিতামাতার অনুগামী, তবে আখিরাতের বিষয় আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত, তিনিই ভালো জানেন তাদের কি হবে?
ক্বাযী ‘ইয়াযও এমনটাই মতামত পোষণ করেছেন যে, সাওয়াব এবং শাস্তি কোনটাই ‘আমলের কারণে হবে না। কেননা যদি ‘আমলের কারণেই জান্নাত জাহান্নাম বা শাস্তি সাওয়াব হতো তাহলে মুশরিক সন্তানেরা জাহান্নামী আর মুসলিমদের সন্তানেরা জান্নাতী হওয়ার কথা নয়। বরং আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তার শাস্তি এগুলো সব তাক্বদীরের বিষয়। অতএব, এ বিষয়ে আবশ্যক হচ্ছে বিষয়টিকে স্থগিত রাখা এবং তা আল্লাহর দিকে ন্যাস্ত করে দেয়া, এটা হচ্ছে পরকালের ক্ষেত্রে। আর দুনিয়াতে ভালো কাজ জান্নাতী হওয়ার আর খারাপ কাজ জাহান্নামী হওয়ার দলীল বহন করে।
‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবো, মুসলিমের সন্তান জান্নাতী সকলের ঐকমত্যে হবে, মুশরিকের সন্তানের ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে কিন্তু সবচেয়ে সঠিক এবং বিশ্লেষণমূলক মত হচ্ছে তারাও জান্নাতী। আর অত্র হাদীস সহ অন্যান্য এমন যত হাদীস আছে এগুলোকে তা‘বীল করতে হবে অথবা এগুলোর অর্থ এমন হবে যে, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছিলেন, তারা যে জান্নাতী এ খবর জানার আগেই। আল্লাহই ভালো জানেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১১২-[৩৪] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয় এবং যে মেয়েকে কবর দেয়া হয়, উভয়ই জাহান্নামী। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الوائدة والموؤدة فِي النَّار . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2
Ibn Mas'ud reported God’s messenger as saying, “The one who buries her daughter alive and the one who is buried alive go to hell.”
Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: الْوَائِدَةُ অর্থাৎ- যারা জীবন্ত সন্তান দাফন করে। আর কেউ কেউ বলেছেন, ধাত্রী বা সন্তান প্রসবে সহায়তাকারিণী। মহিলাকে বিশেষ উল্লেখ করার কারণ হলো জীবন্ত সন্তান কবর দেয়ার কাজটি তাদের মাধ্যমে বেশী হয়।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী আল্ ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এটা ছিল দারিদ্র্যতার ভয়ে জাহিলী যুগে কিছু আরব গোত্রের ঘৃণ্যতর ভয়ানক স্বভাব।
ক্বাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেছেন, সন্তানকে জীবন্ত গোরস্থকারী তার কৃতকর্মের জন্য জাহান্নামী হবে। আর গোরস্থ সন্তানটি কুফরীর জন্য তার পিতা-মাতার অনুগামী হবে।
অথবা গোরস্থানের ব্যাপারে এমনটা বলা যোতে পারে যে, সে প্রাপ্তবয়স্কা কাফির ছিল অথবা অপ্রাপ্তবয়স্কই, তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার ওয়াহী অথবা বিশেষ জ্ঞানের মাধ্যমেই তার সম্পর্কে জাহান্নামী হওয়ার মন্তব্য করেছেন। অতএব, এ মুহূর্তে الْوَائِدَةُ শব্দের আলিফ লামটি ইসতিগরাকী (তথা সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে এমন) না হয়ে আহদ (তথা বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) হওয়া যুক্তিযুক্ত।
অতএব ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত অত্র হাদীসের মাধ্যমে এ কথা বলা যাবে না যে, মুশরিকদের সকল সন্তানই জাহান্নামী। কেননা এটা এক বিশেষ ঘটনা ছিল, অতএব সেটিকে সকল গোরস্থ সন্তানদের ওপর ব্যাপক অর্থে ধরা যাবে না। যদিও নিয়মানুপাতে শব্দের ব্যাপক অর্থের উপরই ‘আমল করতে হয়, তথাপি দু’ শ্রেণীর হাদীসের সমন্বয় সাধনের নিমেত্তেই এই প্রয়াস।