লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২০৫-[১০] খব্বাব ইবনুল আরত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে হিজরত করেছি, অতএব আমাদের পুরস্কার আল্লাহর কাছে সাব্যস্ত হয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁদের পুরস্কারের কিছুই ভোগ না করে (দুনিয়া হতে) চলে গেছেন। মুসআব ইবনু উমায়র (রাঃ) তাঁদের অন্যতম। তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হলে তাকে কাফন দেয়ার জন্য একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। যখন ঐ চাদরটি দিয়ে আমরা তার মাথা ঢাকতাম তখন তাঁর উভয় পা বের হয়ে পড়ত, আবার যখন পা দুটি ঢাকতাম তখন তার মাথা বের হয়ে পড়ত। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, চাদর দ্বারা তার মাথাটি ঢেকে দাও এবং পা দুটির উপর কিছু ইযখির ঘাস রাখ, আর আমাদের মাঝে কেউ এমনও রয়েছেন, যার ফল পেকেছে এবং তিনি তা আহরণ করছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)
وَعَن خبّاب بن الأرتِّ قَالَ: هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبْتَغِي وَجْهَ اللَّهِ تَعَالَى فَوَقَعَ أَجْرُنَا عَلَى اللَّهِ فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْكُلْ مَنْ أَجْرِهِ شَيْئًا مِنْهُمْ: مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مَا يُكَفَّنُ فِيهِ إِلَّا نَمِرَةٌ فَكُنَّا إِذَا غطينا بهَا رَأْسَهُ خَرَجَتْ رِجْلَاهُ وَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ خَرَجَ رَأْسُهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غطوا بهَا رَأسه وَاجْعَلُوا على رجلَيْهِ الْإِذْخِرِ» . وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهُوَ يهدبها. مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ، رواہ البخاری (3898) و مسلم (44 / 940)، (2177) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের রাবী বলেন, আমরা তাঁর সাথে হিজরত করেছি। এতে আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিদান সাব্যস্ত হয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা দুনিয়ার কোন ফল ভোগ করতে পারেনি। আবার অনেক সাহাবী দুনিয়ার ফলও ভোগ করেছেন। যারা ইসলামের বিজয়কাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তারা বিভিন্ন সময় গনীমতের মাল পেয়েছেন এবং তারা স্বাচ্ছন্দময় জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু যারা বিজয়ের আগেই মারা গেছেন তাঁরা দুনিয়ার কোন ফলই ভোগ করতে পারেননি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মু'আব ইবনু 'উমায়র। যিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।
এ হাদীসের মাধ্যমে মুসআব ইবনু উমায়র (রাঃ)-এর মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ তিনি দুনিয়াতে কোন প্রতিদান লাভ করেননি, এজন্য তার সব প্রতিদান আখিরাতের জন্য অবশিষ্ট আছে। এ বিষয়ে মুসলিমের একটি হাদীস রয়েছে। আর সেটি হলো, যে কোন গাজী আল্লাহর পথে জিহাদ করে যদি গনীমাতের সম্পদ পায় তাহলে সে তার আখিরাতের প্রতিদানের দুই-ততীয়াংশ দুনিয়াতে পেয়ে গেল। আর এক-ততীয়াংশ তার জন্য আখিরাতে অবশিষ্ট থাকল।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা মু'আব ইবনু উমায়র (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, মুস্'আব কুরশী ‘আবদারী অনেক মর্যাদাবান ও বড় মাপের সাহাবী ছিলেন। নবী (সা.) দারুল আরক্বামে প্রবেশ করার পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমেই হাবশায় হিজরত করেন। তারপর তিনি আবার মক্কায় ফিরে আসেন কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং ইসলাম শিখানোর জন্য দ্বিতীয় ‘আকাবার পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে মদীনায় পাঠান। তবে কেউ কেউ বলেন, প্রথম আকাবার বায়'আতের পরেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে মদীনায় পাঠান। সেখানে তিনি আনসারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এতে দুই একজন করে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। এভাবে তাদের মাঝে ইসলাম প্রসার লাভ করে।
এক সময় সে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পত্র লিখে অনুমতি চাইলেন যে, তিনি সেখানে মুসলিমদেরকে একত্রিত করতে চান। তখনি রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে অনুমতি দিলেন। হিজরতের পূর্বে তিনিই প্রথম জুমু'আর সালাতের জন্য মদীনায় লোকদেরকে একত্রিত করেন। দ্বিতীয় ‘আকাবায় সত্তরজন মুসলিমদের সাথে তিনি নবী (সা.)-এর কাছে আগমন করেন। তারপর মক্কায় কিছুকাল অবস্থান করেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়, (رِجَالٌ صَدَقُوۡا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَیۡهِ ۚ) “তারা এমন লোক যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করে।” (সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩: ২৩)
ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে জাহিলী যুগে তিনি খুব আরাম-আয়েশে ও স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করার পরে তিনি একেবারে দুনিয়াত্যাগী হয়ে যান এবং সকল আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেন। তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অবশেষে উহুদ যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)