পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৩-[১৩] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) - বলেছেন: গরীবরা ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হবে কিয়ামাতের অর্ধদিন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَدْخُلُ الْفُقَرَاءُ الْجَنَّةَ قَبْلَ الْأَغْنِيَاءِ بِخَمْسِمِائَةِ عَامٍ نِصْفِ يَوْمٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
حسن ، رواہ الترمذی (2353 وقال : حسن صحیح) [و ابن ماجہ (4122)] سفیان الثوری صرح بسماع عند ابی یعلی (10 / 411 ح 6018 و سندہ حسن) و صححہ ابن حبان (2567) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : ইতিপূর্বে এ হাদীসের কিছু ব্যাখ্যা অতিবাহিত হয়েছে। আখিরাতের একদিন দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান। অর্ধদিন পাঁচশত বছরের সমান। আল্লাহর বাণী : (وَ اِنَّ یَوۡمًا عِنۡدَ رَبِّکَ کَاَلۡفِ سَنَۃٍ مِّمَّا تَعُدُّوۡنَ) “আর তোমার রবের দরবারে (কিয়ামাতের) একদিন তোমাদের হিসাবের এক হাজার বছরের সমতুল্য।” (সূরাহ্ আল হাজ্জ ২২:৪৭) অন্য স্থানে রয়েছে : “একদিন যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।” (সূরাহ আল মা'আরিজ ৭০: ০৪)
এ দুটি আয়াতে কারীমাহ্ আপাত দৃষ্টিতে পরস্পর বিরোধী মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে কোন বিরোধ নেই, কেননা এখানে ‘আম (সাধারণ) থেকে খাস (বিশেষ)-এর বর্ণনা পেশ করা হয়েছে। অথবা লম্বা সময় হলো কাফির-মুশরিকদের জন্য এবং কম সময় হলো মু'মিনদের জন্য প্রযোজ্য। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : (فَاِذَا نُقِرَ فِی النَّاقُوۡرِ ۙ﴿۸﴾ فَذٰلِکَ یَوۡمَئِذٍ یَّوۡمٌ عَسِیۡرٌ ۙ﴿۹﴾ عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ غَیۡرُ یَسِیۡرٍ ﴿۱۰﴾) “যেদিন শিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে, সেদিন হবে কঠিন দিন, কাফিরদের জন্য এটা সহজ নয়।” (সূরা আল মুদ্দাসসির ৭৪ : ৮-১০) সারকথা কিয়ামতের দিবসটি হবে মু'মিনদের জন্য সহজ এবং দ্রুত হিসাবযোগ্য আর কাফিরদের জন্য হবে দীর্ঘমেয়াদী এবং কষ্ট।
আরেকটি প্রশ্ন এই যে, এ হাদীসে পাঁচশত বছরের কথা এসেছে পূর্বের অন্য হাদীসে চল্লিশ বছরের কথা উল্লেখ হয়েছে। এর উত্তরে মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, পূর্বের হাদীসে উল্লেখিত ধনী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ধনী মুহাজিরীন, অর্থাৎ ধনী মুহাজিরীনদের চেয়ে গরীব মুহাজিরীগণ চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। দ্বিতীয় হাদীসে উল্লেখিত ধনী দ্বারা উদ্দেশ্য মুহাজির ছাড়া অন্যান্য মু'মিন। অথবা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট প্রথমে চল্লিশ বছরের কথা জানানো হয়েছিল, ফলে তিনি তাই বলেছিলেন, পরবর্তী পাঁচশত বছরের কথা জানানো হলে তিনি পাঁচশত বছরের কথাই বলেছেন। অথবা গরীবেরও বিভিন্ন স্তর রয়েছে, সর্বোচ্চ স্তরের গরীবেরা পাঁচশত বছর পূর্বেই জান্নাতে যাবে এবং সর্বনিম্ন স্তরের গরীবেরা ধনীদের চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৩ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৪-[১৪] আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) বলেছেন: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীন অবস্থায় জীবিত রাখো, মিসকীন অবস্থায় মৃত্যু দান করো এবং মিসকীনদের দলে হাশর করো। আয়িশাহ (রাঃ) বললেন: কেন হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সা.) বললেন : তারা ধনীদের চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে ’আয়িশাহ্! কোন মিসকীনকে তোমার দুয়ার হতে (খালি হাতে) ফিরিয়ে দিও না। খেজুরের একটি টুকরা হলেও প্রদান করো। হে ’আয়িশাহ্! মিসকীনদেরকে ভালোবাসো এবং তাদেরকে নিজের কাছে জায়গা দিয়ে, ফলে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তোমাকে নিকটে রাখবেন। (তিরমিযী ও বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مِسْكِينًا وَأَمِتْنِي مِسْكِينًا وَاحْشُرْنِي فِي زُمْرَةِ الْمَسَاكِينِ» فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِنَّهُمْ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَائِهِمْ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا يَا عَائِشَةُ لَا تَرُدِّي الْمِسْكِينَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ يَا عَائِشَةُ أَحِبِّي الْمَسَاكِينَ وَقَرِّبِيهِمْ فَإِنَّ اللَّهَ يُقَرِّبُكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2352 وقال : غریب) و البیھقی فی شعب الایمان (10507) * الحارث بن النعمان : ضعیف و للحدیث شواھد کلھا ضعیفۃ ۔
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দু'আ ছিল, “হে আল্লাহ! আমাকে মিসকীন অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো”, তিনি ফকীর শব্দ ব্যবহার করেননি, যাতে এ ধারণার উদ্রেক না হয় যে, তিনি হীন ও মুখাপেক্ষী ছিলেন। (الْمِسْكِينُ) শব্দটি (الْمِسْكَنَةُ) শব্দ থেকে উৎপত্তি তার অর্থ হলো (التَّوَاضُعُ عَلٰى وَجْهِ الْمُبَالَغَةِ) অর্থাৎ অধিক মাত্রায় বিনয় প্রকাশ করা।
অথবা শব্দটি (السُّكُونُ وَالسَّكِينَةُ) থেকে উদগত হয়েছে, এর অর্থ হলো (الْوَقَارُوَالِاطْمِءْنَانُ وَالْقَرَارُتَحْتَ أحْكَامِ الْأَقْدَارِرِضًابِقَضَاءِالْجَبَّارِ) মহা প্রতাপশালী আল্লাহর ফায়সালা এবং তাক্বদীরের বিধানাবলীর উপর সন্তুষ্ট থেকে প্রশান্ত ও গাম্ভীর্যপূর্ণ জীবনযাপন।
কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বিনয়ী বানিয়ে দাও, আমাকে অহংকারী করো না। এখানে উম্মতের জন্য মিসকীনের মর্যাদার শিক্ষা রয়েছে, যাতে মানুষ তাদের সাথে বসে, তাদের ভালোবাসে। আরো রয়েছে মিসকীনদের জন্য সান্ত্বনা ও উঁচু মর্যাদার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা। সাথে সাথে এটাও উদ্দেশ্যে যে, মানুষ যেন তার জীবন নির্বাহের ন্যূনতম উপকরণ ও রসদকেই জীবনের জন্য যথেষ্ট মনে করে। আর সে অঢেল সম্পদ সংগ্রহের পিছনে না পড়ে থাকে। কেননা আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দাদের জন্য অধিক সম্পদ জীবনের জন্য ধ্বংস এবং সম্মানের জন্য অমসৃণ উপকরণ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃত্যু অবধি এই মিসকীনী অবস্থাকে কামনা করেছেন। এমনকি কিয়ামতের দিন এই মিসকীনদের দলেই হাশর বা একত্রিত হওয়ারও আশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি (সা.) মুবালাগাহ্ বা অতিরঞ্জন হিসেবে বলেছেন তা কারো কাছেই অস্পষ্ট নয়। আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে মিসকীনী অবস্থার জন্য দু'আর কারণ জিজ্ঞেস করায় তিনি তার কারণ বর্ণনা করেন। অর্থাৎ ধনীরা তাদের উত্তম ইবাদত, উত্তম চরিত্রসহ সকল আমলে মিসকীনদের সমকক্ষ হলেও মিসকীনদের চল্লিশ বছর পর জান্নাতে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে নাসীহত করেন যে, তুমি কখনো কোন মিসকীনকে খালি হাতে বিমুখ করে ফিরিয়ে দিবে না, অর্ধ টুকরো খেজুর হলেও তাকে দিবে এবং অন্তরে তাদের প্রতি মমতা রাখবে। তাদের নিকটে বসবে তাহলে কিয়ামতের দিন তার বিনিময়ে আল্লাহও তোমাকে তার নিকটে স্থান দিবেন।
(মিরকাতুল মাফাতীহ তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খণ্ড, হা. ২৩৫২; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৪ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৫-[১৫] আর এ হাদীস ইবনু মাজাহ আবু সাঈদ (রাঃ) হতে (فِىْ زمرة الْمَسَاكِين) “মিসকীনদের দলভুক্ত” পর্যন্ত রিওয়ায়াত করেছেন।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وروى ابْنُ مَاجَهْ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ إِلَى قَوْلِهِ «زمرة الْمَسَاكِين»
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (4126) * یزید بن سنان : ضعیف و ابو المبارک مجھول و للحدیث شواھد ضعیفۃ ولم یصب من صححہ ۔
ব্যাখ্যা : ইবনু মাজাহ্’র বর্ণনায় (فِىْ زمرة الْمَسَاكِين) পর্যন্ত রয়েছে। আল্লামাহ্ মুনযিরী থেকে নকল করে মীরাক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম হাকিম আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে আরো অতিরিক্ত এ অংশ বর্ণনা করেছেন : “সবচেয়ে দুর্ভাগার দুর্ভাগা হলো যার ওপর দুনিয়ার দারিদ্রতা এবং আখিরাতের ‘আযাব একত্রিত হয়।”
ইমাম হাকিম (রহিমাহুল্লাহ) একে সনদ সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে যে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “দারিদ্রতা হলো আমার গর্ব, এর দ্বারা আমি অহংকারবোধ করি।” এটি জাল হাদীস, এর কোন ভিত্তি নেই। “দরিদ্র মানুষকে কুফরীতে পৌছে দেয়”, এ বর্ণনাটি খুবই য'ঈফ, সহীহ ধরে নিলেও এ দরিদ্রতা দ্বারা (قلب) বা অন্তরের দরিদ্রতা উদ্দেশ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৪ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৬-[১৬] আবু দারদা (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: “তোমাদের দুর্বলদের মধ্যে আমাকে খোঁজ করো”। কেননা তোমাদের দুর্বলদের ওয়াসীলায় তোমাদেরকে রিযুক দান করা হয়, অথবা (বলেছেন) সাহায্য করা হয়। (আবু দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «ابْغُونِي فِي ضُعَفَائِكُمْ فَإِنَّمَا تُرْزَقُونَ - أَوْ تُنْصَرُونَ - بِضُعَفَائِكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
صحیح ، رواہ ابوداؤد (3594) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : তোমরা দুর্বলদের মাঝে আমাকে সন্ধান কর, এর অর্থ তাদের ভালোবাসার মাধ্যমে আমার সন্তুষ্টি সন্ধান কর। (ضُعَفَاء) দ্বারা উদ্দেশ্য ফকীর, মিসকীন; তাদের মাঝে’ মানে, তাদের প্রতি ইহসানের মাধ্যমে।
‘তোমরা দুর্বলদের কারণে সাহায্যপ্রাপ্ত হও', এর অর্থ শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ সাহায্য পেয়ে থাক। কেননা তাদের মধ্যে থাকে আল্লাহর অতীব প্রিয় বান্দা ও ওয়ালী, যাদের আল্লাহর অতীব নিকটে। হাদীসে কুদসীতে রয়েছে- “যে আমার ওয়ালীকে কষ্ট দেয় আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি”। (মিরক্বাতুল মাফাতীহঃ তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খণ্ড, হা. ১৭০২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৭-[১৭] উমাইয়্যাহ্ ইবনু খালিদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আসীদ (রহিমাহুল্লাহ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) গরীব মুহাজিরদের ওয়াসীলায় বিজয় কামনা করতেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أُمَيَّةَ بْنِ خَالِدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بن أسيد عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ كَانَ يَسْتَفْتِحُ بِصَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 264 ح 4062) * السند مرسل و سفیان الثوری و ابو اسحاق مدلسان و عنعنا ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : বর্ণনাকারী উমাইয়্যাহ্ ইবনু খালিদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার নিকট রাসূলুল্লাহ (সা.) (সা.)-এর সাথে তার সাহচর্য' সাব্যস্ত নয়।” মূলত হাদীসটি মুরসাল। মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, তবে এটি মুরসালুত তাবিঈ, আর মুরসালু তাবিঈ জামহূরের নিকট দলীলযোগ্য।
(يَسْتَفْتِحُ) “তিনি বিজয় প্রার্থনা করতেন”, অর্থাৎ তিনি কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় প্রার্থনা করতেন (بِصَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ) দুর্বল, রিক্তহস্ত মুহাজিরীন সাহাবীদের মাধ্যমে। তাদের সাথে নিয়ে তিনি (সা.) আল্লাহর দরবারে দু'আ করতেন অথবা তাদের দ্বারা দু'আ করাতেন। ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, এভাবে বলতেন, (اَللّٰهُمَّ انْصُرْنَاعَلَى الْأَعْدَاءِبِحَقٌِ عِبَادِكَ الْفُقَرَاءِالْمُهَاجِرِينَ) ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে তোমার বান্দা গরীব মুহাজিরদের মাধ্যমে সাহায্য কর।'
এতে গরীবদের সম্মান এবং মর্যাদা প্রমাণিত হয়েছে এবং তাদের দু'আর প্রতিও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাদের প্রতি এ তাগিদ এজন্য যে, তারা ছিলেন একাধারে ফকীর, গরীব, মাযলুম, মুজাহিদ, মুজতাহিদ। অতএব তাদের দু'আর প্রভাব সর্বসাধারণের দু'আর উপর বেশি আশা করা যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ লিত্ ত্বীবী ১০ম খণ্ড, হা. ৩৩১৪, ১৫ পৃ.; মাত্বালিউল আনোয়ার লি ইবরাহীম ইবনু ইউসুফ ৫ম খণ্ড, ১৮৮ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৮-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা কোন পাপীর ধন-সম্পদ দেখে ঈর্ষায় পতিত হয়ো না। কারণ তুমি জানো না মৃত্যুর পর সে কি অবস্থার মুখোমুখি হবে। নিশ্চয় তার জন্য আল্লাহর কাছে এমন সংহারকারী রয়েছে যার মৃত্যু নেই তথা (জাহান্নামের) আগুন। (শারহুস্ সুন্নাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَغْبِطَنَّ فَاجِرًا بِنِعْمَةٍ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا هُوَ لَاقٍ بَعْدَ مَوْتِهِ إِنَّ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ قَاتِلًا لَا يَمُوتُ» . يَعْنِي النَّارَ. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 294 ۔ 295 ح 4103) * فیہ جھم بن اوس : لایعرف و عبداللہ بن ابی مریم : لم یوثقہ غیر ابن حبان ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : (فَاجِرً) শব্দের অর্থ পাপাচারী, লম্পট। এখানে উদ্দেশ্য কাফির ফাসিক, বেদীন। (نِعْمَة) দ্বারা উদ্দেশ্য দীর্ঘ জীবন, অধিক সন্তান-সন্ততি এবং অঢেল সহায় সম্পদ।
(لَاتَغْبِطَنَّ) তোমরা গিবত্বা করবে না; গিবত্বা হলো অপরের সম্পদ দেখে তা নিজের মধ্যে হওয়ার আশা করা। এটা বৈধ, কিন্তু যারা পাপাচারী কাফির তাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত নি'আমাতসমূহ দেখে তা পাওয়ার আশা করো না। কেননা তারা এসব নি'আমাতের যথার্থ শুকরিয়া আদায় না করার কারণে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন না করার কারণে মৃত্যুর পর এমন এক কঠিন প্রতিশোধ এবং কষ্ট-ক্লেশ অর্থাৎ জাহান্নামের মধ্যে নিগৃহীত অবস্থায় পতিত হবে যেখান থেকে আর কখনো বের হতে পারবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৫ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৯-[১৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দুনিয়া হলো মুমিনদের জন্য কয়েদখানা ও দুর্ভিক্ষ (স্থান), আর যখন সে দুনিয়া ত্যাগ করল তখন সে জেলখানা ও দুর্ভিক্ষ উভয়টি মুক্ত হল। (শারহুস্ সুন্নাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَسَنَتُهُ وَإِذَا فَارَقَ الدُّنْيَا فَارَقَ السجنَ والسنةَ» . رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 297 ح 4106) [و احمد (2 / 197 ح 6855) و الحاکم (4 / 315)] * عبداللہ بن جنادۃ المعافری : لم یوثقہ غیر ابن حبان ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা'তালা মু'মিনের জন্য আখিরাতে যে নি'আমাতাজি এবং প্রতিদান তৈরি করে রেখেছেন তার তুলনায় দুনিয়া হলো কয়েদখানা ও দুর্ভিক্ষের স্থান। কয়েদখানায় মানুষ যেমন জীবন বাঁচানোর তাগিদে কোন মতো নগণ্য স্বাদযুক্ত খাদ্য খেয়ে থাকে, দুনিয়াও মু'মিনের জন্য তাই। তাছাড়া জেলখানায় যেমন স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছা তা পাওয়া এবং খাওয়া যায় না, মু'মিনের জন্য দুনিয়া ঠিক অনুরূপ। একই মতো দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষ যেমন যথেচ্ছা খাদ্য পায় না, মু'মিনের জন্য দুনিয়া ঠিক অনুরূপ। কিন্তু কাফিরদের জন্য দুনিয়া হলো জান্নাত, এজন্যই দুনিয়াকে কাফিরদের জান্নাত বলা হয়ছে। যথেচ্ছা ঘুরে ফিরে যা ইচ্ছা তাই খাওয়ার মত। তাদের হালাল হারামের কোন পরোয়া নেই, বাধা দেয়ারও কেউ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ লিত্ ত্বীবী ১০ম খণ্ড, ৩৩১৫ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫০-[২০] কতাদাহ্ ইবনু নু’মান (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালোবাসে তখন তাকে দুনিয়া হতে এমনভাবে হিফাযাত করেন যেমনিভাবে তোমাদের কেউ আপন (বিশেষ) রোগীকে পানি হতে বাঁচিয়ে রাখে। (আহমাদ ও তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَن قَتَادَة بن النُّعْمَان أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذا أحب الله عبداحماه الدُّنْيَا كَمَا يَظَلُّ أَحَدُكُمْ يَحْمِي سَقِيمَهُ الْمَاءَ» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
صحیح ، رواہ احمد (لم اجدہ) و الترمذی (2036 وقال : حسن غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (حمى) শব্দের অর্থ রক্ষা করা, প্রতিরক্ষা, আশ্রয় দেয়া। হাদীসে উল্লেখিত (حماه الدُّنْيَا) এর অর্থ করতে গিয়ে ‘আল্লামাহ্ মুল্লা আলী আল কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : (حَفِظَهٗ مِنْ مَالِ الدُّنْيَاوَمَنْصِبِهٖ وَمَايَضُرُّبِدِينِهٖ فِي الْعُقْبٰى) অর্থাৎ আল্লাহ তাকে দুনিয়ার সম্পদ এবং পদ থেকে হিফাযত করেন; আর তার দীনের পথে পরকালের জন্য যা ত্রুটিপূর্ণ ও ক্ষতিকর তা থেকে তাকে হিফাযাত করেন। আশরাফ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাকে দুনিয়া থেকে বাধা দান করেন এবং দুনিয়ার রং তামাশার কলঙ্ক থেকে রক্ষা করেন। যাতে দুনিয়াপ্রীতি রোগে তার হৃদয় আক্রান্ত না হয়।
পানির অপর নাম জীবন, কিন্তু এমন অনেক রোগ রয়েছে যে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পানি পানের আবেদন করলেও তাকে পানি দেয়া যায় না। কারণ পানি পান করলেই সে ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলার প্রিয় বান্দাদেরকে দুনিয়ার ধ্বংসশীল সম্পদ থেকে হিফাযাতের দৃষ্টান্ত ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ তার কল্যাণ চেয়েই তাকে এ থেকে হিফাযাত করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খণ্ড, হা. ২০৩৬; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৬ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫১-[২১] মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) বলেছেন: আদম সন্তান দুটি জিনিসকে অপছন্দ করে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে অথচ মু’মিনের পক্ষে ফিতনায় পতিত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু অনেক উত্তম। আর সে মাল-সম্পদের স্বল্পতাকে অপছন্দ করে অথচ মালের স্বল্পতায় (পরকালে) হিসাবনিকাশ কম হয়। (আহমাদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَن مَحْمُود بن لبيد أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اثْنَتَانِ يَكْرَهُهُمَا ابْنُ آدَمَ: يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَالْمَوْتُ خَيْرٌ لِلْمُؤْمِنِ مِنَ الْفِتْنَةِ وَيَكْرَهُ قِلَّةَ الْمَالِ وَقلة المَال أقل لِلْحسابِ . رَوَاهُ أَحْمد
اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 427 ح 24024) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : মানুষের অপছন্দের এ দুটি বস্তু হলো তার স্বভাবগত অথচ তা তার জন্য কল্যাণকর। সে অপছন্দের বস্তু দুটি হলো মৃত্যু এবং স্বল্প সম্পদ।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মানুষের যে ফিতনাহ্ থেকে মৃত্যুই উত্তম তা হলো শিরকে পতিত হওয়া।
রাগিব ইস্পাহানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: কর্মর্গত ফিতনাহ্ যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং বান্দার পক্ষ থেকে হয় যেমন বিভিন্ন বালা-মুসীবত, হত্যা, শাস্তিসহ নানা অপছন্দনীয় বিষয়।
‘আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মু'মিনের দীনী ফিতনাহ্ হলো মুরতাদ বা ধর্মচ্যুত হওয়া এবং অন্যকে গুনাহের জন্য বাধ্য করা। আবূ নু'আয়ম হিলয়াহ গ্রন্থে আবু আবদুল্লাহ আস সানাবিহী থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, দুনিয়া ফিতনার দিকে আহ্বান করছে, আর শয়তান আহ্বান করছে পাপের দিকে অথচ আল্লাহর সাক্ষাৎ এ দুয়ের সাথে অবস্থানের চেয়ে অধিক কল্যাণকর। মানুষের দ্বিতীয় অপছন্দনীয় বস্তুটি হলো স্বল্প সম্পদ। অথচ এটা তার পরকালের হিসাবের ক্ষেত্রে অতীব সহজতর ব্যবস্থা এবং আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার একান্ত পন্থা।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৬ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫২-[২২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক ব্যক্তি নাবী (সা.) -এর কাছে এসে বলল: (হে আল্লাহর নবী!) আমি আপনাকে মুহাব্বাত করি। তিনি (সা.) বললেন: একবার ভেবে দেখো তুমি কী বলছ! সে আবার বলল: আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে ভালোবাসি। এভাবে সে তিনবার বলল। এবার তিনি বললেন: যদি তুমি তোমার এ কথায় সত্যবাদী হও, তবে দরিদ্রতার বর্ম প্রস্তুত করে রাখো। কেননা যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে, দরিদ্রতা তার কাছে বন্যার গতি অপেক্ষা তার দিকে অতি দ্রুত পৌছে। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন: এ হাদীসটি গরীব।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّكَ. قَالَ: «انْظُرْ مَا تَقُولُ» . فَقَالَ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. قَالَ: «إِنْ كُنْتَ صَادِقًا فَأَعِدَّ لِلْفَقْرِ تِجْفَافًا لَلْفَقْرُ أسرعُ إِلى من يحبُّني من السَّيْل إِلَى مُنْتَهَاهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2350) * روح بن اسلم ضعیف ضعفہ الجمھور و للحدیث شواھد ضعیفۃ عند البغوی (شرح السنۃ : 4067) وغیرہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: প্রত্যেক সহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ভালোবাসতেন, কিন্তু অত্র হাদীসে বর্ণিত সাহবীর ভালোবাসার দাবী ছিল পরিপূর্ণ এবং প্রভাবপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাকে সে ভালোবাসার দাবীর প্রতি ভালো করে চিন্তা-ভাবনা করে বলার পরামর্শ দেন, কারণ সে যে দাবী করছে এটি এক মহা দাবী এবং বিশাল প্রস্তাব, এর জন্য রয়েছে জীবনের নানা ঝুঁকি।
হাদীসের শব্দ (تِجْفَافًا) এর অর্থ যুদ্ধ বর্ম এবং ঢাল। পাশ্চাত্য ভাষায় (هُوَشَيْءٌيُلْبَسُ عَلَى الْخَيْلِ عِنْدَالْحَرْبِ،كَأَنَّهٗ دِرْعٌ) এটা এমন একটি বস্তু যা যুদ্ধের সময় যুদ্ধের ঘোড়াকে পরিধান করানো হয়, যা বর্ম হিসেবে কাজ করে। কামূস অভিধানবিদ বলেন, ওটা এমন একটি যুদ্ধাস্ত্র যা ঘোড়া এবং মানুষ উভয়েই যুদ্ধকালে পরিধান করে থাকে। অতএব হাদীসের অর্থ আসে এই যে, “তুমি যদি তোমার ভালোবাসার দাবীতে সত্যবাদীই হয়ে থাক তাহলে ক্ষুধা, দারিদ্রতা, বিপদ-মুসীবাত, শূন্যতা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও সবরের পোষাক পরে তার মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।”
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমাকে যে মুহাব্বাত করে তার নিকট এসব পরীক্ষা এবং কষ্টসমূহ প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত বন্যার পানির মতো তরঙ্গায়িত হবে। কেননা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিপদ মুসীবাত এসেছে নবীদের ওপর, এরপর তুলনামুলক তার নীচের লোকেদের ওপর। এদের মধ্যে শেষ নবীর ওপর বেশি বালা-মুসীবাত আপতিত হয়েছে, তার অনুসারীদের ওপর এরই তুলনামূলক অংশ প্রযোজ্য হবে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৫০; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৬-১৭ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫৩-[২৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর রাস্তায় (দীনের প্রচারে) আমাকে যে পরিমাণ ভয় দেখানো হয়েছে, আর কাউকেও সে পরিমাণ ভয় দেখানো হয়নি। আর আল্লাহর রাস্তায় আমাকে (যেভাবে) কষ্ট দেয়া হয়েছে, আর কাউকেও (এভাবে) কষ্ট দেয়া হয়নি এবং আমার ওপর ত্রিশটি দিবারাত্র এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে যে, আমার ও বিলালের জন্য এমন খাদ্যবস্তু ছিল না যা কোন প্রাণী খেতে পারে। শুধু এ পরিমাণ কিছু ছিল যা বিলালের বগল গোপন করে রাখত। (তিরমিযী)
তিনি [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ)] হাদীসটির অর্থে বলেছেন যে, যখন নবী (সা.) কাফিরদের অত্যাচারে আত্মরক্ষার উদ্দেশে) মক্কা হতে বের হয়ে চলে গেলেন এবং বিলাল তার সাথে ছিলেন, এটা সে সময়ের ঘটনা। মূলত এ সময় বিলালের সঙ্গে এ পরিমাণ খাদ্যবস্তু ছিল যা তিনি স্বীয় বগলের নীচে দাবিয়ে রাখতেন।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ أُخِفْتُ فِي اللَّهِ وَمَا يُخَافُ أَحَدٌ وَلَقَدْ أُوذِيتُ فِي اللَّهِ وَمَا يُؤْذَى أَحَدٌ وَلَقَدْ أَتَتْ عَلَيَّ ثَلَاثُونَ مِنْ بَيْنِ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ وَمَا لِي وَلِبِلَالٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلَّا شَيْءٌ يُوَارِيهِ إِبْطُ بِلَالٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ قَالَ: وَمَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ: حِينَ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَارِبًا مِنْ مَكَّةَ وَمَعَهُ بِلَالٌ إِنَّمَا كَانَ مَعَ بِلَالٍ مِنَ الطَّعَامِ مَا يَحْمِلُ تحتَ إبطه
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2472) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : নবী-রসূলগণ সর্বকালেই আল্লাহর রাস্তায় কাফির মুশরিক দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে আমাদের নবী সবচেয়ে বেশি ভীতিপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং কষ্ট পেয়েছেন। ক্ষুধা বা খাদ্যাভাব ছিল জীবনের এক প্রকট সমস্যা। মাসের পর মাস বাড়ীতে রান্নার চুলা জ্বলত না। এমনই এক বিষয় এখানে বিবৃত হয়েছে। তিনি (সা.) বলেছেন, ত্রিশদিন আমাদের ওপর দিয়ে একাধারে অতিবাহিত হয়ে যেত কোন প্রাণীর খাদ্যযোগ্য খাবার আমার এবং বিলাল-এর ভাগ্যে জুটত না; যা জুটত তা ছিল খুবই নগণ্য, এমনকি তা বিলাল-এর বগলের নীচেই লুকিয়ে রাখা যেত। এখানে বিলাল-এর নাম এজন্য বলা হয়েছে যে, এই দুঃসময়ে বিলাল রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথেই ছিলেন।
কখন এ ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : (وَمَعْنٰى هٰذَا الْحَدِيثِ حِينَ خَرَخَ النَّتِيُّ صلى الله عليه وسلم هَارِبٍامِنْ مكَّةَ) অর্থাৎ এ হাদীসের ঘটনা ঐ সময় ঘটেছিল যখন নবী (সা.) ও কাফির মুশরিকদের অত্যাচারে মক্কা থেকে পলায়ন করেছিলেন। বর্ণিত আছে, তিনি ত্বায়িফের ‘আবদে ইয়ালীলে গমন করেছিলেন যাতে তারা তাকে মক্কার কাফিরদের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং আশ্রয় দান করেন; আর তিনিও তার রবের রিসালাতের দাওয়াত পৌছে দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা অতীব দুর্ভাগ্যজনক এবং হৃদয় বিদারক, তারা তাদের বখাটে উচ্ছৃঙ্খল বালকদের নবী (সা.) -এর পিছনে লেলিয়ে দিল, তারা তাকে পাথর নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত এবং ক্ষত-বিক্ষত করে দিল। এমনকি শরীর থেকে রক্ত ঝরে পায়ের জুতা পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ল এবং পা জুতায় আটকে গেল।
‘মাওয়াহিবুল লা দুনিয়্যাহ' গ্রন্থে উল্লেখ আছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) ত্বায়িফের উদ্দেশে এ সফরটি ছিল খাদীজার মৃত্যুর তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার কয়েকদিন আগে। এটা নুবুওয়্যাতের দশম বর্ষে ঘটেছিল এবং চাচা আবু ত্বালিব-এর ইন্তিকালের পরের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এ সফরে যায়দ ইবনু হারিসাহ্ সফরসঙ্গী ছিলেন। ত্বায়িফে তিনি (সা.) এক মাস অবস্থান করেন এবং সাকীফ গোত্রের সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করলেন। হায়! তারা তাঁর আহ্বানে সাড়া তো দিলই না বরং তাদের নির্বোধ এবং গোলামদের রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বিরুদ্ধে প্ররোচনা দিয়ে উত্তেজিত করে তুলল। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে লাগল।
মূসা ইবনু উকবাহ্ (রাঃ) বলেন, তারা তার পিছন থেকে পাথর মেরে হাঁটুর নীচের মাংসপেশী ক্ষতবিক্ষত করে ফেলল। রক্ত বয়ে বয়ে পায়ের জুতা ভরে গেল, অতঃপর তা জমাট বেঁধে পা দুটি জুতায় আটকে গেল। এক পর্যায়ে তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তারা এসে দু বাহু ধরে নবী (সা.) -কে দাঁড় করালে তিনি হাঁটতে লাগলেন, যখনই চলা শুরু করলেন অমনি পাথর নিক্ষেপ! এ দৃশ্য দেখে অন্যেরা অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়তে লাগল। যায়দ (রা.) তাঁকে প্রাণপণে রক্ষা করতে লাগলেন, এতে তারও মাথায় একাধিক যখম হয়ে গেল।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম উম্মুল মু'মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! উহুদ যুদ্ধের দিনের চেয়েও কি কোন কঠিন দিন আপনার সামনে এসেছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) ত্বায়িফের ঘটনা উল্লেখ করে বললেন যে, এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন। এ সময় আল্লাহ তা'আলা জিবরীলসহ পাহাড়ের মালাক (ফেরেশতা) প্রেরণ করেছিলেন, তারা পাহাড় চাপা দিয়ে ত্বায়িফবাসীকে ধ্বংস করার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর নবী (সা.) প্রতিশোধ এবং ধ্বংসের অনুমতি প্রদান করেননি। বরং তিনি (সা.) বলেছিলেন: আমি আশা করি তাদের বংশ থেকে এমন মানুষের জন্ম হবে যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে আর কাউকে শরীক করবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খণ্ড, হা. ২৪৭২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫৪-[২৪] আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট ক্ষুধার অভিযোগ করলাম এবং আমাদের প্রত্যেকের পেটের উপর এক একখানা পাথর বাঁধা জামা তুলে তা দেখলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের কাপড় তুলে স্বীয় পেটের উপর বাঁধা দু’খানা পাথর দেখালেন। (তিরমিযী; আর তিনি বলেছেন: হাদীসটি গরীব)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَبِي طَلْحَةَ قَالَ: شَكَوْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجُوعَ فَرَفَعْنَا عَنْ بُطُونِنَا عَنْ حَجَرٍ حَجَرٍ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَطْنِهِ عَن حجرين. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ: حَدِيث غَرِيب
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (2371) * سیار بن حاتم : حسن الحدیث ، وثقہ الجمھور ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : পেটে পাথর বাঁধার উপকারিতা কি? এর উত্তরে বলা হয়েছে, যাতে শূন্য পাকস্থলিতে হাওয়া ঢুকতে না পারে। অথবা পাথরের কারণে পেট ও মেরুদণ্ড যেন শক্ত হয়ে থাকে এবং বাঁকা হয়ে না পড়ে। কেউ কেউ বলেছেন, পাথর বেঁধেছেন এজন্য যাতে পেট ঢিলে হয়ে না যায় এবং অন্ত্রাবলী ঝুলে না পড়ে, যা নড়া-চড়ার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে।
হাফিয ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ক্ষুধার সময় পেটে পাথর বাঁধা ‘আরবদের অথবা মদীনাবাসীদের অভ্যাস ছিল। সহীবুল আযহার পাথর বাঁধার কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।
১) মদীনায় এক শ্রেণির পাথর ছিল যার নাম ‘মুশাববিআহ’ পরিতৃপ্তি দানকারী, লোকেরা ক্ষুধার্ত হলে এ পাথর বেঁধে পরিতৃপ্তি লাভ করত।
২) আল্লাহ তা'আলা পাথরের মধ্যে একটা শীতলটা দান করেছেন, ঐ শীতলতায় পেটের ক্ষুধা প্রশমিত হয়।
কেউ কেউ বলেছেন, এটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন এবং উম্মাতকে শিক্ষা দান।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহঃ তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৭১)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫৫-[২৫] আবূ হুরায়রাহ্ (সা.) হতে বর্ণিত। একবার সাহাবায়ে কিরাম ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির হয়ে পড়লেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে একটি করে খেজুর দিলেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَن أبي هُرَيْرَة أَنَّهُ أَصَابَهُمْ جُوعٌ فَأَعْطَاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَمْرَةً تَمْرَةً. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2474 وقال : صحیح) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: আবু হুরায়রাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত ক্ষুধার ঘটনা বাহ্যত আসহাবে সুফফা বা বারান্দাবাসীর, যা ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে। তাদের জন্য (সাহাবীদের পক্ষ থেকে যে দান আসত তাই সবার মধ্যে বণ্টন করা হত। এ বণ্টনে কখনো জনপ্রতি একটিমাত্র খেজুর মিলত আর এর উপরই তাদের দিন নির্বাহ হত। আসহাবে সুফফার সংখ্যা ছিল চারশত বা তার চেয়ে কিছু বেশি। এদের সত্তর জন্য ছিল স্থায়ী সদস্য।
এই একটি খেজুরেই এত বরকত হত যে, সারাদিনের খাদ্যকষ্ট ও ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। (এটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর হাতের বিশেষ বরকত এবং মু'জিযাহ্। - সম্পাদকীয়)
(মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা ২৪৭৪; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৭পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫৬-[২৬] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: দু’টি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান আছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল লোকেদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন। (প্রথমত) দীনী ব্যাপারে যে লোক নিজের চাইতে উত্তম ও উচ্চমানের তার প্রতি দৃষ্টি রেখে তার অনুকরণ করে। (দ্বিতীয়ত) দুনিয়াবী ব্যাপারে সে এমন লোকের দিকে দৃষ্টি রাখে, যে তার চাইতে নিম্নস্তরের। অতএব সে আল্লাহর প্রশংসা করে যে আল্লাহ তাকে এ ব্যক্তির ওপর সম্মান দান করেছেন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে শোকরগুজার ও ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর যে লোক দীনদারীর ব্যাপারে এমন লোকের দিকে তাকায়, যে তার অপেক্ষা নিম্নস্তরের আর পার্থিব ব্যাপারে সে এমন লোকের দিকে তাকায়, যে তার অপেক্ষা উচ্চপর্যায়ের এবং সে আক্ষেপ করতে থাকে ঐ সকল বস্তুর জন্য যা তার হাতছাড়া হয়েছে। এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ শোকরগুজার ও ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন না। (তিরমিযী)
আবু সাঈদ-এর বর্ণিত হাদীস (أَبْشِرُوايَامَعْشَرَصَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ) ফাযায়িলে কুরআন-এর পরের অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَصْلَتَانِ مَنْ كَانَتَا فِيهِ كَتَبَهُ اللَّهُ شاكراً: مَنْ نَظَرَ فِي دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ فَاقْتَدَى بِهِ وَنَظَرَ فِي دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ فَحَمِدَ اللَّهَ عَلَى مَا فَضَّلَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ كَتَبَهُ اللَّهُ شَاكِرًا صَابِرًا. وَمَنْ نَظَرَ فِي دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ وَنَظَرَ فِي دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ فَأَسِفَ عَلَى مَا فَاتَهُ مِنْهُ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ شَاكِرًا وَلَا صَابِرًا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي سَعِيدٍ: «أَبْشِرُوا يَا مَعْشَرَ صَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ» فِي بَابٍ بَعْدَ فَضَائِلِ الْقُرْآنِ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2512) * مثنی بن الصباح : ضعیف ۔ 0 حدیث ابی سعید تقدم (2198) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : সবর এবং শোকর ঈমানের পূর্ণতার গুণ। অর্থাৎ যে এ দু'টি গুণ অর্জন করে সে পূর্ণ ঈমান লাভ করে। হাদীসে বর্ণিত আছে “ঈমান আধা-আধিভাবে বিভক্ত, অর্ধেক ধৈর্য আর অর্ধেক শোকর। (বায়হাকী’র শুআবুল ঈমান ৭/১২৩ পৃ, হা. ৯৭১৫)
জামি' গ্রন্থে আরো উল্লেখ আছে যার মধ্যে এ দু'টি গুণ নেই আল্লাহ তা'আলা তাকে কৃতজ্ঞ এবং ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন না।
ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতা গুণ দু’টি অর্জনের বৈশিষ্ট্য হলো দীনের ক্ষেত্রে উপরের ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করা এবং দুনিয়ার ক্ষেত্রে নিজের চেয়ে নীচের ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করা। অর্থাৎ দীন পালনে তোমার চেয়ে যে বেশি পরহেযগার ও ‘আমলকারী তুমি তার প্রতি লক্ষ্য কর পক্ষান্তরে দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও আরাম-আয়েশের উপকরণের ক্ষেত্রে যে তোমার চেয়ে নীচের অবস্থানে আছে তুমি তার প্রতি লক্ষ্য কর। তুমি যতটুক পেয়েছ তার উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, আর তোমার যা নেই তাতে ধৈর্য অবলম্বন কর। এতে আল্লাহ তোমাকে পূর্ণ মুমিন হিসেবে গণ্য করবেন।
যারা দীনের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ আমলে-আখলাকে, পরহেজগারিতায় তার চেয়ে নিম্নমানের লোকেদের সাথে নিজের তুলনা করে নিজেকে তাদের চেয়ে ভালো মনে করে বেশি বেশি ‘আমল থেকে বিমুখ হয়ে থাকে আর দুনিয়ার ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে তার চেয়ে উপরের অর্থাৎ সম্পদশালী লোকেদের সম্পদ ও বিলাস-ব্যসনের প্রতি লক্ষ্য করে এবং নিজের কাছে এরূপ ধন-সম্পদ না থাকায় পরিতাপ করে আল্লাহ তা'আলা তাদের শোকরগুজার এবং ধৈর্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন না।
আল্লাহ তা'আলা বলেন : (لِّکَیۡلَا تَاۡسَوۡا عَلٰی مَا فَاتَکُمۡ وَ لَا تَفۡرَحُوۡا بِمَاۤ اٰتٰىکُمۡ ؕ) “এটা এজন্য বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তজ্জন্যে উল্লাসিত হও।” (সূরা আল হাদীদ ৫৭:২৩)।
হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে দুনিয়া না পাওয়ায় যে পরিতাপ করে জাহান্নাম তার এক হাজার বছরের নিকটে হয়ে যায়, পক্ষান্তরে যে, আখিরাতের কোন কিছু হারানোর কারণে পরিতাপ করে সে জান্নাতের এক হাজার বছরের পথ নিকটে হয়ে যায়। (জামিউস্ সগীর ২/৫১৩ পৃ., হা. ৮৪৩২)।
দুনিয়ার সম্পদের প্রতি অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা এবং দীনের কর্মে উদাসীনতা এটা কাফির মুশরিকদের স্বভাব। মুমিনের কর্তব্য হবে অপরের বেশি সম্পদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা বরং অপরের বেশি ঈমান-আমাল দেখে নিজে ঐরূপ ‘আমালকারী হওয়ার চেষ্টা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহঃ তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৫১২)