পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
ফাযীলাত বা মর্যাদা দ্বারা উদ্দেশ্য অতিরিক্ত সাওয়াব ও পুরস্কার। ধন-সম্পদের মাধমে অর্জিত মর্যাদার কথা বুঝানো হয়নি। নাবী (সা.)-এর জীবন ’ইবাদতের ক্ষেত্রে ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং বর্ণাঢ্য। কিন্তু জীবনের সুখ-সামগ্রী ও খানাপিনায় তিনি ছিলেন দরিদ্রের মতো।
৫২৩১-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: এমন অনেক লোক আছে- যাদের মাথার চুল এলোমেলো, মানুষের দুয়ার হতে বিতাড়িত। তবে সে যদি আল্লাহর নামে শপথ করে তখন তা পূরণ করেন। (মুসলিম) ।
৪১১৬, সুনান আন্ নাসায়ী ৪৭৫৫, সহীহুল জামি ৮৭০২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২৯০৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৬৪৩, মা'রিফাতুস্ । সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাকী ৫০৮৪, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০৬১২, ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৪৭৭, মুসনাদে আবূ ইয়া'লা ৩৫১৯, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৮৬১, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৭১৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৬৩০৬, আস্ সুনানুস্ সুগরা ৩১৫৮।
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رُبَّ أَشْعَثَ مَدْفُوعٍ بِالْأَبْوَابِ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (138 / 2622)، (6682) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (أَشْعَثَ) শব্দের অর্থ হলো (مُتَفَرِّقُ شَعْرِرأْسِهٖ) মাথার চুল এলোমেলো, উস্কখুষ্ক হওয়া। কাযী বায়যাভী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, চুল ধুলামণ্ডিত ও অগোছালো হওয়া। (مَدْفُوعٍ بِالْأَبْوَابِ) “মানুষের দরজা থেকে বিতাড়িত”- এ ব্যাখ্যা হলো কারো বাড়ীতে সওয়াল করতে বা চাইতে গেলে লোকেরা তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে অথবা বকা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। একেবারে বিনয় ও হীনতার সাথে কারো দরজায় গেলেও তাকে তুচ্ছই ভাবা হয়। বাড়ীতে একান্ত প্রবেশ করতে দিলেও তাকে চরম তুচ্ছজ্ঞান করে প্রবেশ করানো হয়। অথচ আল্লাহর দরবারে তার মর্যাদা অনেক বেশি। এটা এজন্য যে, আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টিকুল তথা লোকচক্ষু থেকে তার অবস্থাকে ঢেকে রাখতে চান, যাতে অন্যের সাথে তার মুহাব্বাত সৃষ্টি হয়ে না যায়।
(وْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ) অর্থাৎ সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে তবে তা পূরণ করে। এ বাক্যের ব্যাখ্যায় বলা হয়, সে আল্লাহর কোন কর্মে যদি শপথ করে বলে যে, আল্লাহ এ কাজ করেছেন কিংবা করেননি, তা হলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন, তাকে কসম ভঙ্গের কাফারাহ্ দিতে হয় না। অর্থাৎ শপথকে সত্যে পরিণত করেন, এতে বিষয়টি তার কসমের মুআফিক হয়ে যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারূহুন্ নাবাবী ১৬ খণ্ড, ১৫১ পৃ., হা. ২৬২২; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩০৯ পৃ.; লু'আহ্ ৮ম খ, ৪৫৫ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৩২-[২] মু’আব ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ (রাঃ) নিজের সম্পর্কে মনে করলেন যে, নিম্নশ্রেণির লোকেদের চেয়ে তার অধিক মর্যাদা রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (তাঁর এ ধারণাটি বুঝতে পেরে) বললেন : তোমাদের মধ্যকার দুর্বল ব্যক্তিদের ওয়াসীলায় এবং তাদের দু’আয় তোমাদেরকে (শত্রুর মোকাবিলায়) সাহায্য করা হয় এবং রিযক্ব দেয়া হয়। (বুখারী)।
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَن مُصعب بن سعدٍ قَالَ: رَأَى سَعْدٌ أَنَّ لَهُ فَضْلًا عَلَى مَنْ دُونَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلَّا بِضُعَفَائِكُمْ؟» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (2896) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস ছিলেন একজন জালীলুল কদর সাহাবী। সা'দ (রাঃ)-এর এটা ছিল ধারণা বা কল্পনা যে, দরিদ্রদের তুলনায় তিনি হয়তো বেশি মর্যাদার অধিকারী হবেন। কেননা তিনি একাধারে ছিলেন বীরযোদ্ধা এবং দানশীল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার এ ধারণা দূরীকরণের জন্য বললেন, না বরং তোমরা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে ঐ দরিদ্রদের কারণেই সাহায্যপ্রাপ্ত হও এবং গনীমাতের সম্পদ লাভ করে থাক। অতএব তাদের সম্মান করবে, তাদের ওপর অহংকার করবে না। (মিক্বাতুল মাফাতীহ; লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৫৬ পৃ.; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১০ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৩৩-[৩] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি জান্নাতের দ্বারে দাঁড়াই, দেখলাম; যারা তাতে প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশই গরীব-মিসকীন। আর বিত্তবান-সম্পদশালী লোকেরা আটকা পড়ে আছে। তবে জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতঃপর আমি জাহান্নামের দ্বারে দাঁড়াই তখন (দেখলাম) তাতে যারা প্রবেশ করছে। তাদের অধিকাংশ নারী সম্প্রদায়। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُمْتُ عَلَى بَابِ الْجَنَّةِ فَكَانَ عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا الْمَسَاكِينَ وَأَصْحَابُ الْجَدِّ مَحْبُوسُونَ غَيْرَ أَنَّ أَصْحَابَ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ وَقُمْتُ عَلَى بَابِ النَّارِ فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخلهَا النِّسَاء» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6547) و مسلم (93 / 2736)، (6937) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: জান্নাতের দরজায় রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দাঁড়ানো স্বপ্নযোগে হয়েছিল। কেউ বলেছেন, এটা মিরাজের রাত্রিতে হয়েছিল। কেউ আবার কাশফের মাক্বামের কথা উল্লেখ করেছেন।
(أَصْحَابُ الْجَدِّ) হলো (أَرْبَابُ الْغِنَى مِنَ الْمُؤَمِنِينَ الْأَغْنَيَاءِوَالْأُمَرَاءِ) অর্থাৎ, মু'মিন সম্পদশালী ব্যক্তিবর্গ এবং প্রাচুর্যশালী আমীর-উমারাগণ। এরা আটকা পড়ে থাকবে তাদের অঢেল সম্পদের দীর্ঘ হিসাবের প্রতিক্ষায়। আর গরীবেরা সামান্য সম্পদের হিসাব দ্রুত দিয়ে ধনীদের পাঁচশত বছর আগেই জান্নাতে চলে যাবে। ঐ দিকে কাফির মুশরিকদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, মু'মিনদের মধ্যকার জান্নাতী হবে দু'প্রকার। এক প্রকার দ্রুত জান্নাতে প্রবেশ করবে, অন্যদল আটকা পড়ে থাকবে। অতঃপর দীর্ঘ হিসাব-নিকাশের পর তাদের জান্নাতের ব্যবস্থা হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, ৪৭১ পৃ., হা. ৬৫৪৭; শারহুন্ নাবাবী ১৭ খণ্ড, ১৫ পৃ., হা, ২৭৩৬; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১০)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৩৪-[৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আমি জান্নাতে তাকিয়ে দেখলাম তার অধিবাসীদের অধিকাংশই হলো দরিদ্র। আর জাহান্নামে তাকিয়ে দেখলাম তার অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী সম্প্রদায়। (বুখারী ও মুসলিম)।
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ. وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6546) و مسلم (94 / 2737)، (6938) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৩৫-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: গরীব মুহাজিরগণ কিয়ামতের দিন ধনীদের চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম)।
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ يَسْبِقُونَ الْأَغْنِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى الْجَنَّةِ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (37 / 2979)، (7463) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : মক্কার মুহাজিরগণ ছিলেন গরীব। তাদের কথা এখানে উল্লেখ করা হলেও এ মর্যাদায় তাদের সাথে অন্যান্য গরীব মুসলিমগণও অন্তর্ভুক্ত হবেন। গরীব মু'মিনগণ ধনীদের চেয়ে চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে যাবেন। হাদীসে (أَرْبَعِينَ خَرِيفًا) এর অর্থ করা হয়েছে চল্লিশ বছর। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) নিহায়াহ্ গ্রন্থ থেকে নকল করে বলেন, (الْخَرِيفُ الزَّمَانُ الْمَعْرُوفُ بَيْنَ الصَّيْفِ وَالشِّتَاءِ) খরীফ হলো শীত গ্রীষ্মের মাঝের পরিচিত একটি সময় বা ঋতু, বাংলায় শরৎকাল। এর দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য বছর। কেননা শরৎকাল বছরে একবারই আসে। চল্লিশের এই পরিমাণ দুনিয়ার এই ব্যবহৃত সময় নাকি আখিরাতের সময়ের তা। উল্লেখ নেই। অতএব উভয় সম্ভাবনাই বিদ্যমান। অথবা এটা আধিক্য বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
মোটকথা হলো গরীবেরা ধনীদের চেয়ে চল্লিশ বছর আগেই জান্নাতের আরাম-আয়েশ ভোগ করতে থাকবেন। এটা তাদের দুনিয়ার নি'আমাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রতিদান হিসেবে পাবেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন :
(کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا هَنِیۡٓـئًۢا بِمَاۤ اَسۡلَفۡتُمۡ فِی الۡاَیَّامِ الۡخَالِیَۃِ) “তোমরা সানন্দে খাও এবং পান কর ঐ সময় কাজের বিনিময়ে যা তোমরা বিগতকালে প্রতিদানের আশায় করেছিলে।” (সূরা আল হাককাহ্ ৬৯ : ২৪)
কিয়ামতের দিন দীর্ঘসময় ক্ষুৎপিপাসায় পড়বে ঐ ব্যক্তি যে দুনিয়াতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে (পেট পুরে খেয়ে) পরিতৃপ্ত অবস্থায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ৮ম খণ্ড, হা, ১১৯২, পৃ. ৮৭; আশ শিফা ১০ম খণ্ড, ৩৩১১ পৃ.; লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৫৮ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৩৬-[৬] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। তখন তিনি তাঁর নিকটে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, এই যে লোকটি গেল, তার সম্পর্কে তোমার কী ধারণা? সে বলল, ইনি তো সম্ভান্ত লোকেদের একজন। আল্লাহর শপথ! ইনি এমন যোগ্যতাসম্পন্ন লোক যে, যদি সে কোন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় তখন তার সাথে বিবাহ দেয়া হবে। আর যদি সে কারো সম্পর্কে সুপারিশ করে তখন তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) (কিছুক্ষণ) নীরব রইলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি অতিক্রম করল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) (এ ব্যক্তি সম্পর্কেও তাকে) প্রশ্ন করলেন: এ লোকটি সম্পর্কে তোমার কী ধারণা? জবাবে সে বলল : হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যক্তি তো দরিদ্র মুসলিমদের একজন। সে তো এরই উপযোগী যে, যদি সে কোন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় তবে তার সাথে বিবাহ দেয়া হবে না। আর যদি সে সুপারিশ করে, তাও গ্রহণ করা হবে না। আর যদি সে কথা বলে তাও শুনা হবে না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, (তুমি যার প্রশংসা করেছ) সারা ভূপৃষ্ঠে তার মতো লোকে ভরপুর থাকলেও তাদের তুলনায় এ লোকটি উত্তম (যার তুমি দুর্নাম করেছ)। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: مَرَّ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لِرَجُلٍ عِنْدَهُ جَالِسٍ: «مَا رَأْيُكَ فِي هَذَا؟» فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَشْرَافِ النَّاسِ: هَذَا وَاللَّهِ حَرِيٌّ إِنْ خَطَبَ أَنْ يُنْكَحَ وَإِنْ شَفَعَ أَنْ يُشَفَّعَ. قَالَ: فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ مر على رَجُلٌ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَأْيُكَ فِي هَذَا؟» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا رَجُلٌ مِنْ فُقَرَاءِ الْمُسْلِمِينَ هَذَا حَرِيٌّ إِنْ خَطَبَ أَنْ لَا ينْكح. وإِن شفع أَن لَا يُشفَع. وإِن قَالَ أَنْ لَا يُسْمَعَ لِقَوْلِهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا خَيْرٌ مِنْ مِلْءِ الْأَرْضِ مِثْلَ هَذَا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6447) و مسلم (لم اجدہ) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসে আল্লাহর রসূল (সা.) তুলে ধরেছেন, সমাজে সম্ভ্রান্ত এবং প্রকৃত সম্ভ্রান্ত সম্পর্কে বাস্তব ধারণা। মানব সমাজে পরিচিত সম্ভ্রান্ত যদি আল্লাহর কাছে সম্ভ্রান্তরূপে বিবেচিত না হয় তাহলে এরূপ গোটা জমিনে ভরপুর সম্ভ্রান্ত লোকের চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রিয় একজন ব্যক্তিই উত্তম। যদিও সমাজের মানুষ তাকে হীন ও তুচ্ছ ভাবে, তার সাথে কেউ আত্মীয় করতে চায় না, তার সুপারিশ কোন মহলে গৃহীত হয় না, কিন্তু সে একাই উত্তম মানুষ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৪২২ পৃ.; ফাতহুল বারী ১১শ খণ্ড, হা. ৬৪৪৭; ইবনু মাজাহ ৩য় খণ্ড, হা, ৪১২০)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৩৭-[৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সা.) -এর পরিবারবর্গ লাগাতার দু’দিন যবের রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হননি এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মৃত্যু হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: مَا شَبِعَ آل مُحَمَّد من خبر الشَّعِيرِ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (5416) و مسلم (22 / 2970)، (7445) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পরিবার হলো তার পূতপবিত্র স্ত্রীগণ এবং তাদের খাদিমগণ। যব গমের তুলনায় কম মূল্যমানের, যবের রুটিই যেহেতু পাননি তাহলে গমের রুটির তো প্রশ্নই ওঠে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) দু'দিন একাধারে পেট পুরে খেতে পাননি, একদিন পেটপুরে খেলে অন্যদিনে উপোষ থাকতেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ তা'আলা জমিনের ধনভাণ্ডারের চাবি তার কাছে পেশ করেছিলেন এবং মক্কার একটি পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করে তার নিকট পেশ করেছিলেন কিন্তু তিনি এ কথা বলে দরিদ্রতাকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, আমি একদিন ক্ষুধার্ত থেকে সবর করব, আরেকদিন খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব। কেননা ঈমান দুই অংশে বিভক্ত, এক অংশ সবরের মধ্যে, অন্য অংশ শুকরিয়ার মধ্যে; যেমন আল্লাহ বলেছেন :
(اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّکُلِّ صَبَّارٍ شَکُوۡرٍ) “নিশ্চয় তাতে উপদেশ রয়েছে প্রত্যেক ধৈর্যশীল এবং কৃতজ্ঞ বান্দাদের জন্য।” (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪ : ৫, লুকমান ৩১ : ৩১, আশ শুআরা- ২৬ : ৩৩)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এ অবস্থা মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এমনকি তিনি মৃত্যুর পূর্বে তার বর্মটি এক ইয়াহূদীর কাছে বন্ধক রেখে সামান্য কয়েক সা' যব ধার গ্রহণ করেছিলেন। অনেকে বলে থাকেন রাসূলুল্লাহ (সা.) শেষ জীবনে ধনী হয়ে গিয়েছিলেন। উপযুক্ত হাদীস দ্বারা তাদের এ দাবী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। হ্যা, তাঁর হাতে অনেক সম্পদ এসেছিল কিন্তু সেগুলো তিনি নিজের জন্য সংরক্ষণ করেননি বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব খরচ করে দিয়েছেন। অবশ্য তিনি সদা সর্বদা অন্তরের ধনী ছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা. ৬৪৫৪; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১১ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৩৮-[৮] সাঈদ আল মাকবুরী (রহিমাহুল্লাহ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। একদিন তিনি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন যাদের সম্মুখে উপস্থিত করা হয়েছিল ভুনা করা বকরী। তারা খাওয়ার জন্য আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে ডাকলেন; কিন্তু তিনি এ বলে খেতে অস্বীকার করলেন যে, নাবী (সা.) এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, অথচ তিনি যবের রুটি দ্বারাও পরিতৃপ্ত হতে পারেননি। (বুখারী)
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَن سعيد المَقْبُري عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّهُ مَرَّ بِقَوْمٍ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ فَدَعَوْهُ فَأَبَى أَنْ يَأْكُلَ وَقَالَ: خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيرِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (5414) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের বর্ণনাকারী ‘সা'ঈদ', কোন কোন সংস্করণে “আবু সা’ঈদ” বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এটা ভুল এবং নির্ভরযোগ্য মূলনীতির পরিপন্থী। কিছু গবেষক দ্বারা বিশুদ্ধ সংস্করণে “সা'ঈদ ইবনু আবু সাঈদ আল মাকবুরী” বলে উল্লেখ রয়েছে। আবু সাঈদ-এর আসল নাম কায়সান। তিনি কবরস্থানের কাছে বাস করতেন বলে তাকে মাকবুরী বলা হয়। আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জীবদ্দশায় খানা-খাদ্যের চিত্র স্মরণ করে মজাদার লোভনীয় ভুনা বকরির গোশত খাওয়ার আহ্বান পেয়েও তা বর্জন করেছেন। এটা ছিল তাঁর নাবী প্রেমের চরম নিদর্শন এবং দুনিয়াবিমুখ জীবনের অন্যতম প্রমাণ।
(মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী হা. ৫৪১৪, আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১১ পৃষ্টা)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৩৯-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি নাবী (সা.) -এর কাছে কিছু যবের রুটি ও গন্ধময় পুরাতন চর্বি নিয়ে আসলেন। এদিকে নাবী (সা.) মদীনার এক ইয়াহূদীর কাছে নিজের লৌহবর্মটি গচ্ছিত রেখে পরিবারবর্গের জন্য কিছু যব ঋণ এনেছিলেন। (অধস্তন) বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে এটাও বলতে শুনেছি যে, মুহাম্মাদ (সা.) -এর পরিবারের কাছে কোন সন্ধ্যাকালেই এক সা’ গম বা এক সা’ কোন খাদ্য দানা (আগামীকালের জন্য) মওজুদ থাকত না। অথচ তার স্ত্রী ছিলেন ৯ জন। (বুখারী)
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّهُ مَشَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِخُبْزِ شَعِيرٍ وَإِهَالَةٍ سَنِخَةٍ وَلَقَدْ رَهَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دِرْعًا لَهُ بِالْمَدِينَةِ عِنْدَ يَهُودِيٍّ وَأَخَذَ مِنْهُ شَعِيرًا لِأَهْلِهِ وَلَقَدْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «مَا أَمْسَى عِنْدَ آلِ مُحَمَّدٍ صَاعُ بُرٍّ وَلَا صَاعُ حَبٍّ وَإِنَّ عِنْدَهُ لَتِسْعُ نِسْوَةٍ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (2069) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : আনাস (রাঃ) প্রায়ই বিভিন্ন খানা খাদ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দরবারে নিয়ে আসতেন। তার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) মাঝে মধ্যে বাড়িতে খানা তৈরি করেও আনাস-কে পাঠিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বাড়ীতে ডেকে নিয়ে খাওয়াতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইয়াহূদীর নিকট লৌহবর্ম বন্ধক রেখে পরিবারের জন্য কয়েক সা' যব নিয়েছিলেন। এটা ছিল একেবারে জীবনের শেষ প্রান্তে। আর তা এজন্য যে, যাতে তার অবস্থা মানুষের কাছে গোপন থাকে অথবা সাহাবীগণ লজ্জায় তাকে সাহায্য না করেন। সর্বোপরি হাত পাতা বা চাওয়া থেকে নিজকে পবিত্র রাখা এবং উম্মাতের নিকট তার কাজের বিনিময় নেয়া থেকে পবিত্র থাকাই উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেন, (اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّکُلِّ صَبَّارٍ شَکُوۡرٍ)
“আর আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাচ্ছি , আমার বিনিময় তো বিশ্বপ্রতিপালকের নিকট রয়েছে।” (সূরাহ আশ শুআরা- ২৬ : ১০৯, ১২৭)
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নয়জন স্ত্রী একত্রে ছিলেন, তাদের দিন-কাল এভাবে অতিবাহিত হত যে, কারো ঘরেই আগামীকালের জন্য এক সা' গম কিংবা অন্য কিছু খাদ্য দানা সঞ্চয় রেখে রাত শুরু হত না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৪র্থ খণ্ড, হা. ২০৬৯; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১১পৃ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪০-[১০] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম তিনি একখানা খেজুর পাতার চাটাইয়ের উপর শুয়ে আছেন। তাঁর ও চাটাইয়ের মাঝে কোন বিছানা ছিল না। ফলে চাটাই তাঁর দেহে চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছিল। আর তিনি ঠেস দিয়েছিলেন (খেজুর গাছের) আঁশপূর্ণ একটি চামড়ার বালিশের উপর। আমি বললাম : হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন তিনি যেন আপনার উম্মাতকে সচ্ছলতা প্রদান করেন। পারসিক ও রোমীয়গণকে সচ্ছলতা প্রদান করা হয়েছে, অথচ তারা (কাফির) আল্লাহর ইবাদত করে না। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : হে খত্ত্বাব-এর পুত্র! তুমি কি এখনো এ ধারণায় রয়েছ? তারা তো এমন এক সম্প্রদায়, যাদেরকে পার্থিব জীবনে নিআমাতসমূহ আগাম প্রদান করা হয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে- তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তারা দুনিয়াপ্রাপ্ত হোক আর আমাদের জন্য থাকুক পরকাল? (বুখারী ও মুসলিম)।
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَن عمر قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا هُوَ مُضْطَجِعٌ عَلَى رِمَالِ حَصِيرٍ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ فِرَاشٌ قَدْ أَثَّرَ الرِّمَالُ بِجَنْبِهِ مُتَّكِئًا عَلَى وِسَادَةٍ مِنْ أَدَمٍ حَشْوُهَا لِيفٌ. قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: ادْعُ اللَّهَ فَلْيُوَسِّعْ عَلَى أُمَّتِكَ فَإِنَّ فَارِسَ وَالرُّومَ قَدْ وُسِّعَ عَلَيْهِمْ وَهُمْ لَا يَعْبُدُونَ اللَّهَ. فَقَالَ: «أَوَ فِي هَذَا أَنْتَ يَا ابْنَ الْخطاب؟ أُولئكَ قوم عجلت لَهُم طيبتاتهم فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا» . وَفِي رِوَايَةٍ: «أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ لَهُمُ الدُّنْيَا وَلَنَا الْآخِرَةُ؟» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2468) و مسلم (31 ، 30 / 1479)، (3691 و 3692) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : (رِمَالِ حَصِيرٍ) এর অর্থ খেজুর পাতা দ্বারা বানানো চাটাই। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর রাজকীয় খাটপালঙ্কে শয়নের কথা, কিন্তু তিনি দুনিয়ার এসব বিলাস-ব্যসনের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করেননি। তিনি সাদাসিধে মাটিতে খেজুর পাতার চাটাইয়ের উপর শুয়ে থাকতেন। এটাও ছিল নিখাদ চাটাইয়ের উপর শোয়া। এই চাটাইয়ের উপর চাদর কিংবা কম্বল কিছুই ছিল না, ফলে চাটাইয়ের দাগ তাঁর দেহে লেগে যেত। বালিশটিও কি নরম বা আরামদায়ক ছিল? মোটেও না; চামড়ার খোলশে খেজুরের ছাল, কোন মত মাথাটা বিছানা থেকে একটু উঁচু করে শোবার ব্যবস্থা।
‘উমার (রাঃ) রোম-পারস্যবাসীর সুখ-সমৃদ্ধির কথা তুলে আল্লাহর কাছে দু'আ করতে বললেন যে, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মতেরা আল্লাহর ইবাদত করে তারা কেন দরিদ্র থাকবে, আল্লাহ তা'আলা যেন তাদের সম্পদ বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর রসূল তার উত্তরে উক্ত কথাগুলো বলেন। অর্থাৎ মু'মিনদের জন্য আখিরাতে চিরস্থায়ী সুখ আর নি'আমাত আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ইবনু মাজাহ হা, ৪১৫৩, আল লুম'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৬১ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪১-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় আমি “সুফফাবাসীদের মধ্য হতে সত্তরজন লোককে দেখেছি যে, তাঁদের কোন একজনের কাছেও একখানা চাদর ছিল না। হয়তো একখানা লুঙ্গি ছিল অথবা একখানা কম্বল যা তারা নিজেদের ঘাড়ের সাথে পেঁচিয়ে রাখত। তা কারো অর্ধ নলা পর্যন্ত, আবার কারো টাখনু পর্যন্ত পৌঁছত। আর তারা তাকে নিজের হাত দ্বারা ধরে রাখত- এ আশঙ্কায় যেন সতর দৃষ্টিগোচর হয়ে না পড়ে। (বুখারী)
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَقَدْ رَأَيْتُ سَبْعِينَ مِنْ أَصْحَابِ الصُّفَّةِ مَا مِنْهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ إِمَّا إِزَارٌ وَإِمَّا كِسَاءٌ قَدْ رُبِطُوا فِي أَعْنَاقِهِمْ فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْنِ وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الْكَعْبَيْنِ فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَرَاهِيَةَ أَن ترى عَوْرَته . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (442) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লামাহ্ মুল্লা ‘আলী আল কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলে সুফফার মোট অধিবাসী ছিলেন চারশত মুহাজির সাহাবী, তাঁরা মসজিদে কুরআন শিক্ষার জন্য থাকতেন। এখান থেকে প্রয়োজনে বিভিন্ন অভিযানে গমন করতেন। এদের সত্তরজন ছিলেন স্থায়ী সদস্য। রাবী আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তাদের জীবনের অবস্থায়ই বর্ণনা করছেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের হাক্কের ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল করেন : (لِلۡفُقَرَآءِ الَّذِیۡنَ اُحۡصِرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ لَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ ضَرۡبًا فِی الۡاَرۡضِ ۫ یَحۡسَبُهُمُ الۡجَاهِلُ اَغۡنِیَآءَ مِنَ التَّعَفُّفِ ۚ تَعۡرِفُهُمۡ بِسِیۡمٰهُمۡ ۚ لَا یَسۡـَٔلُوۡنَ النَّاسَ اِلۡحَافًا ؕ)
“(দান) ঐ অভাবীদের জন্য যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, তাদের পক্ষে জমিনের কোথাও বিচরণ করা সম্ভব নয়। যাঞ্ছা থেকে বিরত থাকার দরুন অজ্ঞরা তাদের ধনী মনে করে, কিন্তু তোমরা তাদের লক্ষণ দেখে তাদের চিনে নিতে পারবে। তারা ব্যাকুল হয়ে লোকেদের কাছে যাঞ্ছা করে (চেয়ে) বেড়ায় না।” (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২: ২৭৩)
ব্যাখ্যা : তারা জীবন নির্বাহের রসদ হিসেবে সামান্য মজ্জা কিংবা আঁটি সম খাদ্য বস্তুতে তাওয়াক্কুল ও তুষ্ট হয়ে থাকতেন। পরিধেয় বস্ত্রের কথা তো হাদীসেই বর্ণিত হয়েছে। চাদর থাকলে লুঙ্গি নেই লুঙ্গি থাকলে চাদর নেই। যাদের চাদর ছিল তারা তা গলায় বেঁধে শরীর ও নিম্নদেশ আবৃত করে রাখতেন। এই চাদরও অনেকের ছিল সংকীর্ণ, ফলে তা দিয়ে শরীর ও লজ্জাস্থান একত্রে ঢেকে রাখা ছিল দূরহ। তাই অনেকেই স্বাভাবিক চলাফেরা এবং উঠা বসার সময় লজ্জাস্থান প্রকাশ হওয়ার ভয়ে হাত দ্বারা কাপড়ের দু' কিনারা জড়িয়ে রাখতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১ম খণ্ড, হা. ৪৪২; আল লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৬৪ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪২-[১২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখে যাকে মাল-সম্পদে, স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে অধিক দেয়া হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চাইতে নিম্নমানের ব্যক্তির দিকে তাকায়। (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সা.) বলেছেন: তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিম্ন অবস্থার লোকের প্রতি তাকাও। এমন ব্যক্তির দিকে তাকিয়ো না যে তোমাদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের। তাহলে এ পন্থা অবলম্বনই হবে আল্লাহর নি’আমাতকে অবজ্ঞা না করার এক উপযোগী মাধ্যম।
الفصل الاول - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ فِي الْمَالِ وَالْخَلْقِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «انْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَا تَنْظُرُوا إِلَى من هُوَ قوقكم فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُم»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6490) و مسلم (9 ، 8 / 2963)، (7428) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : নিজের সম্পদ, শরীর-স্বাস্থ্য সৌন্দর্য এবং পরিবার-পরিজনের চেয়ে অপরের সম্পদ এবং শরীর-স্বাস্থ্য বা সৌন্দর্য বেশি ও ভালো দেখে তার দিকে মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবে না। সম্পদশালী হওয়া, সুস্থ ও সুন্দর ইত্যাদি হওয়া- এ সবগুলো আপেক্ষিক বিষয়, অতএব তোমার চেয়ে বেশি যার আছে তার দিকে না। তাকিয়ে তোমার নীচের দিকে তাকাও। দেখবে সে তোমার চেয়ে কত সমস্যায় নিপতিত। তখন তোমার অল্প কষ্ট ভুলে যাবে।
ইবনু জারীর (রহিমাহুল্লাহ) প্রমুখ বলেন, এ হাদীস কল্যাণের প্রকারসমূহ একত্রকারী। কেননা মানুষের স্বভাব হলো সে যখন দেখে কাউকে দুনিয়ার কল্যাণ দান করা হয়েছে সে তখন নিজের মধ্যে অনুরূপ কল্যাণ কামনা করে। আর নিজের কাছে আল্লাহর দেয়া যে নি'আমাত রয়েছে তাকে সে কম মনে করে থাকে। আর তার নিআমাতের সাথে আরো যুক্ত হয়ে অপরের চেয়ে বেশি কিংবা সমান সমান হোক এটা সে কামনা করে। এটা অধিকাংশ লোকের স্বভাব বা প্রকৃতি। কিন্তু মানুষ যদি তার নীচের দিকে তাকাত তাহলে তার নিজের ওপর আল্লাহর দেয়া নি'আমাতের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ত, ফলে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করত, আল্লাহর কাছে নত হয়ে ভালো কাজ করত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শাবৃহু নাবাবী ১৮ খণ্ড, ৭৭ পৃ., হা, ২৯৬৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪১৭ পৃ., হা. ২৫১৩; ইবনু মাজাহ ৩য় খণ্ড, ৪৮২ পৃ.)