পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৫৭-[২৭] আবূ ’আবদুর রহমান আল হুবুলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, একদিন জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করে, আমরা কি ঐ সমস্ত গরীব মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত নই? (যারা ধনীদের আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে?) তখন ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর প্রশ্ন তাকে বললেন : আচ্ছা! তোমার স্ত্রী আছে কি? যার কাছে তুমি প্রশান্তি লাভ করো? সে বলল : হ্যা, আছে। আবদুল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করলেন : আচ্ছা! তোমার থাকার এমন কোন ঘর আছে কি, যেখানে তুমি অবস্থান করো? সে বলল : হ্যা। তখন ’আবদুল্লাহ বললেন : তবে তো তুমি ধনীদের একজন। এবার লোকটি বলল : আমার একজন সেবকও আছে। তখন ’আবদুল্লাহ বললেন : তবে তো তুমি বাদশাহদের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনাকারী (আবু) আবদুর রহমান বলেন : একদিন আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, এমন সময় তিনজন লোক এসে ’আবদুল্লাহ-কে বলল : হে আবু মুহাম্মাদ! আমরা আল্লাহর কসম করে বলছি, আমরা কোন কিছুর সামর্থ্য রাখি না। আমাদের কাছে খরচপাতি নেই, আরোহণের জানোয়ারও নেই এবং অন্য কোন মাল-সামানও নেই (এমতাবস্থায় জিহাদে আমরা কিভাবে অংশগ্রহণ করতে পারি?) তখন ’আবদুল্লাহ তাদেরকে বললেন : তোমরা কি চাও? যদি তোমরা (আমার নিকট) কিছু পেতে চাও, তবে তোমরা আবার আমার কাছে এসো। (কেননা এখন আমার কাছে দেয়ার মতো কিছু নেই,) তখন আমি তোমাদেরকে তা প্রদান করব যা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করে দেন। আর যদি তোমাদের ইচ্ছা থাকে তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে বাদশার নিকট সুপারিশ করব। আর যদি তোমরা চাও তবে ধৈর্যধারণ করো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় দরিদ্র মুহাজিরীন কিয়ামতের দিন সম্পদশালীদের চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এতদশ্রবণে তারা বলে উঠল, আমরা ধৈর্যধারণ করব, আমরা আর কিছুই যাঞ্ছা করব না। (মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

عَن أبي عبد الرَّحْمَن الحُبُليِّ قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو وَسَأَلَهُ رَجُلٌ قَالَ: أَلَسْنَا مِنْ فُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ؟ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ: أَلَكَ امْرَأَةٌ تَأْوِي إِلَيْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: أَلَكَ مَسْكَنٌ تَسْكُنُهُ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَأَنْتَ مِنَ الْأَغْنِيَاءِ. قَالَ: فَإِنَّ لِي خَادِمًا. قَالَ: فَأَنْتَ مِنَ الْمُلُوكِ. قَالَ: عَبْدُ الرَّحْمَنِ: وَجَاءَ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَأَنَا عِنْدَهُ. فَقَالُوا: يَا أَبَا مُحَمَّد إناوالله مَا نَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ لَا نَفَقَةَ وَلَا دَابَّةَ وَلَا مَتَاعَ. فَقَالَ لَهُمْ: مَا شِئْتُمْ إِنْ شِئْتُمْ رَجَعْتُمْ إِلَيْنَا فَأَعْطَيْنَاكُمْ مَا يَسَّرَ اللَّهُ لَكُمْ وَإِنْ شِئْتُمْ ذَكَرْنَا أَمْرَكُمْ لِلسُّلْطَانِ وَإِنْ شِئْتُمْ صَبَرْتُمْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ يَسْبِقُونَ الْأَغْنِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى الْجَنَّةِ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا» . قَالُوا: فَإِنَّا نَصْبِرُ لَا نَسْأَلُ شَيْئا . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (37 / 2979)، (7462 و 7463) ۔
(صَحِيح)

عن ابي عبد الرحمن الحبلي قال: سمعت عبد الله بن عمرو وساله رجل قال: السنا من فقراء المهاجرين؟ فقال له عبد الله: الك امراة تاوي اليها؟ قال: نعم. قال: الك مسكن تسكنه؟ قال: نعم. قال: فانت من الاغنياء. قال: فان لي خادما. قال: فانت من الملوك. قال: عبد الرحمن: وجاء ثلاثة نفر الى عبد الله بن عمرو وانا عنده. فقالوا: يا ابا محمد اناوالله ما نقدر على شيء لا نفقة ولا دابة ولا متاع. فقال لهم: ما شىتم ان شىتم رجعتم الينا فاعطيناكم ما يسر الله لكم وان شىتم ذكرنا امركم للسلطان وان شىتم صبرتم فاني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ان فقراء المهاجرين يسبقون الاغنياء يوم القيامة الى الجنة باربعين خريفا» . قالوا: فانا نصبر لا نسال شيىا . رواه مسلم رواہ مسلم (37 / 2979)، (7462 و 7463) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : মানুষের আশ্রয়ের জন্য স্ত্রী, বসবাসের জন্য আবাসন জীবনের জন্য যথেষ্ট। যারা গরীব মুহাজির সাহাবী তাদের এ দুয়ের কোনটিই ছিল না। আবার কারো একটি থাকলেও অন্যটি ছিল না। অতএব যে ব্যক্তি এসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ)-এর কাছে দুটো জিনিসই থাকার কথা জানালেন, ফলে তিনি তাকে ধনিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করলেন। এটা ছিল মুহাজির সহাবীদের জীবনের পরম পাওনা। এর সাথে যদি কারো চাকর বা ক্রীতদাস থাকত তবে তো সে বাদশাহ শ্রেণির, অবশ্য এটা আপেক্ষিক বিষয় ও রূপক কথা, কিন্তু তাদের জীবনে যেন ছিল এটাই বাস্তবতা। বাদশাহ বলার এও অর্থ হতে পারে যে, সে কপর্দকহীন নয় এবং অপরের ওপর কাজের নির্দেশ জারী করতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) সম্ভবত এ বাক্যটি আল্লাহ তা'আলার এ বাণী থেকে গ্রহণ করেছেন : (وَ جَعَلَکُمۡ مُّلُوۡکًا) “আর তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করেছেন”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ ৫ : ২০)। বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরকার ইবনু জারীর (রহিমাহুল্লাহ)

ইবনু আব্বাস প্রমুখাৎ, উক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে বর্ণনা করেছেন: বানী ইসরাঈলের কোন ব্যক্তির যদি ঘর, স্ত্রী এবং খাদেম থাকত তবে তাকে বাদশাহ বলা হত।
হাদীসে (عَنْ عَبْدِالرَّحْمٰنِ) বলে বর্তমানে অধিকাংশ মিশকাতের সংস্করণে যে নাম রয়েছে সেটা ভুল; প্রকৃত বাক্য হবে (عَن أبي عبد الرَّحْمَن) ‘আবূ আবদুর রহমান হতে বর্ণিত সহীহ মুসলিমে এভাবেই বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে।

তিন ব্যক্তির অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা দীনের পথে ছিল, অর্থাৎ তারা বলছিলেন- আমাদের কাছে এমন কোন কিছু নেই যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করব, এমন কোন সওয়ারী নেই যা দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করব এবং এমন কোন আসবাবপত্র বা সামগ্রী নেই যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহার করব অথবা তা বিক্রি করে ইসলামের কাজে ব্যয় করব। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তখন তিন ব্যক্তিকে ডেকে বললেন, তোমরা যদি এগুলো পাওয়ার আশা কর তাহলে তোমরা অন্য সময় আমার নিকট আসবে, আমি বাদশাহর নিকট বলে অথবা বায়তুল মালের খাদেমকে বলে যতটুকু সম্ভব তোমাদের জন্য মঞ্জুর করব। সেটা দিয়ে তোমরা তোমাদের ইচ্ছা পূরণ করবে। তোমরা ইচ্ছা করলে তোমাদের এই অভাব ও দারিদ্রতার উপর ধৈর্যধারণও করতে পার; কেননা ধৈর্যধারণ হলো সফলতা অর্জনকারীদের সর্বোচ্চ মাকাম এবং সম্পদ না পাওয়ার শ্রেষ্ঠ প্রশান্তি ও আনন্দ। অতঃপর তিনি তাদের রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর হাদীস শুনিয়ে দিলেন যে, গরীব মুহাজিরগণ ধনীদের চেয়ে জান্নাত গমনে চল্লিশ বছরের অগ্রগামী হবেন, এ কথা শুনে তারা সকলেই দুনিয়ার সম্পদ গ্রহণ পরিহার করে আখিরাতে জান্নাতের অগ্রগামীতাকে গ্রহণ করে নিলেন।
(মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহুন্ নাবাবী ১৮ খণ্ড, হা, ২৯৭৯; লুম'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৭৪ পৃ.)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৫৮-[২৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মসজিদে (নববীতে) বসেছিলাম, তখন গরীব মুহাজিরগণও গোল হয়ে একস্থানে বসাছিলেন। এমন সময় হঠাৎ নবী (সা.) প্রবেশ করলেন এবং তাদের নিকট বসে গেলেন। অতঃপর আমিও উঠে তাঁদের কাছে গেলাম। তখন নবী (সা.) তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: এ সুসংবাদ গরীব মুহাজিরদেরকে পৌছে দেয়া উচিত, যাতে তাদের চেহারা আনন্দে ফুটে উঠে। (আর তা হলো এই,) “তারা ধনবান মুহাজিরদের চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেন, তখন আমি দেখলাম যে, তাঁদের চেহারার বর্ণ উজ্জ্বল হয়ে গেল। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) বলেন : এমনকি আমার মনে এ আকাঙ্ক্ষা জাগল, হায়! আমি যদি যদি তাঁদের সাথে থাকতাম অথবা তাদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَن عبد الله بن عَمْرو قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا قَاعِدٌ فِي الْمَسْجِدِ وَحَلْقَةٌ مِنْ فُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ قُعُودٌ إِذْ دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَعَدَ إِلَيْهِمْ فَقُمْتُ إِلَيْهِمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِيُبْشِرْ فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ بِمَا يَسُرُّ وُجُوهَهُمْ فَإِنَّهُمْ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ قَبْلَ الْأَغْنِيَاءِ بِأَرْبَعِينَ عَامًا» قَالَ: فَلَقَدْ رَأَيْتُ أَلْوَانَهُمْ أَسْفَرَتْ. قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو: حَتَّى تَمَنَّيْتُ أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ أَو مِنْهُم. رَوَاهُ الدَّارمِيّ

صحیح ، رواہ الدارمی (2 / 339 ح 2847) [و النسائی فی السنن الکبری 3 / 443 ح 5876) و سندہ حسن ولہ شاھد عند مسلم فی صححہ (2979)، (7463)] ۔
(صَحِيح)

وعن عبد الله بن عمرو قال: بينما انا قاعد في المسجد وحلقة من فقراء المهاجرين قعود اذ دخل النبي صلى الله عليه وسلم فقعد اليهم فقمت اليهم فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «ليبشر فقراء المهاجرين بما يسر وجوههم فانهم يدخلون الجنة قبل الاغنياء باربعين عاما» قال: فلقد رايت الوانهم اسفرت. قال عبد الله بن عمرو: حتى تمنيت ان اكون معهم او منهم. رواه الدارمي صحیح ، رواہ الدارمی (2 / 339 ح 2847) [و النساىی فی السنن الکبری 3 / 443 ح 5876) و سندہ حسن ولہ شاھد عند مسلم فی صححہ (2979)، (7463)] ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : যে মসজিদে লোকেরা বসেছিলেন সেটি মদীনার কোন একটি মসজিদ, খুব সম্ভব সেটা মসজিদে নববী।
(حَلْقَةٌ) শব্দের লাম বর্ণের উপর যবর, যের এবং সুকূন যোগে পাঠ করা হয়। আল্লামাহ্ মুল্লা আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (حالق) এর বহুবচন ছাড়া লাম বর্ণে হারকাত পাঠ সিদ্ধ নয়।
দ্র. (حَلْقَةٌ) অর্থাৎ- গোলাকার, বৃত্ত মাজলিস, আংটি ইত্যাদি এখানে বৃত্তাকার মাজলিস বা বৈঠক উদ্দেশ্য। সাহাবীগণ অনেক সময়ই আল্লাহর রসূলকে মাঝখানে নিয়ে বৃত্তাকার হয়ে বসতেন, আবার সাহাবীগণ কখনো নিজেরাও বৃত্তাকার হয়ে বসতেন। ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে অধ্যায় রচনা করেছেন, (فَرَأى فُرْجَةًفِي الحَلْقَةِ فِيهَا) যে বৃত্তাকার মাজলিসের অভ্যন্তরে ফাঁকা দেখে সেখানে বসে তিনি এ অধ্যায়ের অনুকূলে আবূ ওয়াক্বিদ আল লায়সী থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেখানে (الحَلْقَةُ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। (বুখারী হা. ৬৬, মুসলিম হা. ২১৭৬)

নাবী (সা.) মুহাজির সাহাবীদের মজলিসে যোগ দিলেন, অতঃপর হতদরিদ্র ও রিক্তহস্ত মুহাজির সাহাবীদের জীর্ণ-শীর্ণ পোশাক, বুভুক্ষ মুখ ও চেহারাগুলো দেখে তাদের সান্ত্বনার বাণী শুনালেন। তারা ধনীদের চল্লিশ বছর পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (لِيُبَشَّرْ) আমরে মাজহূল বা নির্দেশসূচক কর্মবাচ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, কেউ কেউ এটাকে দু'আ অর্থে গ্রহণ করেছেন।
(اسفار) শব্দের অর্থ আলোকিত হওয়া, ফর্সা হওয়া, উজ্জ্বল হওয়া। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) এর বর্ণনা- “অতঃপর আমি তাদের দেখলাম তাদের চেহারার বর্ণ উজ্জ্বল হয়ে গেছে।” এর অর্থ হলো- রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সুসংবাদ অথবা দু'আ শুনে তারা তাদের অভাব, দারিদ্রতা ও ক্ষুধার কথা ভুলে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে, ফলে তাদের চেহারাগুলোর মলিনতা দূর হয়ে আলোকিত হয়ে গেছে। মহান আল্লাহ বলেন : (وُجُوۡهٌ یَّوۡمَئِذٍ مُّسۡفِرَۃٌ ﴿ۙ۳۸﴾  ضَاحِکَۃٌ مُّسۡتَبۡشِرَۃٌ ﴿ۚ۳۹﴾) “অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল, সহাস্য ও প্রফুল্ল।” (সূরাহ্ আল ‘আবাসা ৮০: ৩৮-৩৯)
তাই ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) দরিদ্র মুহাজির সাহাবীদের মর্যাদার কথা শুনে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেন- ‘আহা! আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম বা তাদের অন্তর্ভুক্ত হতাম!' (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃ.)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৫৯-[২৯] আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু (নাবী সা.) আমাকে সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। যথা- ১. তিনি (সা.) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন গরীব-মিসকান, ভালোবাসার এবং তাদের সহচার্য লাভের, ২. আরো নির্দেশ দিয়েছেন- আমি যেন ঐ ব্যক্তির দিকে তাকাই ’যে আমার চেয়ে নিম্নস্তরের এবং ঐ লোকের দিকে যেন না তাকাই, যে আমার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের ৩. তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছেন- আমি যেন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভালো আচরণ করি, যদিও তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ৪. তিনি (সা.) আরো নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন কারো নিকট কোন কিছু না চাই, ৫. তিনি (সা.) আরো নির্দেশ করেছেন- আমি যেন ন্যায় ও সত্য কথা বলি, যদিও তা তিক্ত হয়, ৬. তিনি (সা.) আরো আদেশ দিয়েছেন- আমি যেন আল্লাহর (দীনের) ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করি এবং ৭. তিনি আমাকে এ নির্দেশও দিয়েছেন- আমি যেন অধিক পরিমাণে (لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ) “লা-হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ” “আল্লাহর শক্তি-সামর্থ ছাড়া কারো কোন শক্তি-সামর্থ্য নেই” পাঠ করি। কেননা এ কথাগুলো ’আরশের নিচের কোষাগার হতে আগত। (আহমাদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَن أبي ذرٍّ قَالَ: أَمَرَنِي خَلِيلِي بِسَبْعٍ: أَمَرَنِي بِحُبِّ الْمَسَاكِينِ وَالدُّنُوِّ مِنْهُمْ وَأَمَرَنِي أَنْ أَنْظُرَ إِلَى مَنْ هُوَ دُونِي وَلَا أَنْظُرَ إِلَى مَنْ هُوَ فَوَقِي وَأَمَرَنِي أَنْ أَصِلَ الرَّحِمَ وَإِنْ أَدْبَرَتْ وَأَمَرَنِي أَنْ لَا أَسْأَلَ أَحَدًا شَيْئًا] وَأَمَرَنِي أَنْ أَقُولَ بِالْحَقِّ وَإِنْ كَانَ مُرًّا وَأَمَرَنِي أنْ لَا أخافَ فِي اللَّهِ لومة لَا ئم وَأَمَرَنِي أَنْ أَكْثِرْ مِنْ قَوْلِ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ فَإِنَّهُنَّ مِنْ كَنْزٍ تَحت الْعَرْش. رَوَاهُ أَحْمد

اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 159 ح 21745) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي ذر قال: امرني خليلي بسبع: امرني بحب المساكين والدنو منهم وامرني ان انظر الى من هو دوني ولا انظر الى من هو فوقي وامرني ان اصل الرحم وان ادبرت وامرني ان لا اسال احدا شيىا] وامرني ان اقول بالحق وان كان مرا وامرني ان لا اخاف في الله لومة لا ىم وامرني ان اكثر من قول: لا حول ولا قوة الا بالله فانهن من كنز تحت العرش. رواه احمد اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 159 ح 21745) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : (خَلِيلٌ) শব্দের অর্থ অন্তরঙ্গ বন্ধু, সুহৃদ, প্রিয়তম, উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ (সা.)। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চেয়ে সাহাবীগণের নিকট প্রিয় আর কোন ব্যক্তি ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাদের অনুরূপ ভালোবাসতেন। এজন্য সহাবীগণ কোন কোন সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওয়াসিয়্যাত, নির্দেশ ইত্যাদি বর্ণনা করতে গিয়ে বলতেন, আমার খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) আমাকে এই নির্দেশ অথবা এই ওয়াসিয়্যাত করেছেন। আর নবী (সা.) -ও বিশেষ কোন ব্যক্তিকে বিশেষভাবে কিছু নির্দেশ বা ওয়াসিয়্যাত করতেন। এমনি একটি ওয়াসিয়্যাতের কথা অত্র হাদীসে বিবৃত হয়েছে। আবু যার (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে সাতটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত করেন তা হলো :

১) মিসকীনকে ভালোবাসা এবং তাদের নিকটে যাওয়া, অর্থাৎ তাদের অবস্থার প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া এবং মালের সহায়ক হওয়া।

২) নীচের ব্যক্তিদের দিকে লক্ষ্য করা উপরের ব্যক্তিদের দিকে দৃষ্টিপাত না করা, অর্থাৎ বৈষয়িক ব্যাপারে নিজের সম্পদের চেয়ে কম সম্পদের অধিকারীদের প্রতি লক্ষ্য করা।

৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ওয়াসিয়্যাত করেন, যদিও সে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় পশ্চাৎপদে চলে, অর্থাৎ আত্মীয় যদি দূরেও থাকে অথবা অনুপস্থিত থাকে কিংবা সম্পর্ক রক্ষা করতে না চায়, তবুও তার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করে চলা। এ বিষয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, “তোমরা শুধু সালাম বিনিময় করে হলেও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ।” ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অর্থ হলো যদি তুমি কোন আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকো, তাহলে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা কর, আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তার সাথে তোমার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা কর এবং তা জোরদার কর।

৪) অপরের নিকট কোন কিছু চাওয়া থেকে বিরত থাকা। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) এর দু'আ ছিল : “হে আল্লাহ! তুমি আমার চেহারাকে তুমি ছাড়া অন্যকে সাজদাহ্ দেয়া থেকে যেমন সুরক্ষিত রেখেছ তেমনি আমার চেহারাকে অন্যের কাছে কিছু চাওয়া থেকেও পবিত্র রাখ।” ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে জিবরীল এসে বলেছিলেন, আপনার কোন প্রয়োজন আছে? অর্থাৎ আমার কাছে সাহায্যের প্রয়োজন আছে? উত্তরে বলেন, আছে, তবে আপনার কাছে নয়! জিবরীল 'আলায়হিস তখন বললেন, তাহলে আপনার রবের কাছে সওয়াল করুন। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম উত্তরে আবারও বললেন, আমার চাওয়ার বিষয় এবং আমার সার্বিক অবস্থা এমন ব্যাপারে আল্লাহর ‘ইল্মই আমার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহর অনেক বান্দা রয়েছে যারা নিজের বৈষয়িক প্রয়োজনও আল্লাহর কাছে যাঞ্ছা করতে লজ্জাবোধ করেছেন, তারা কিভাবে অন্যের কাছে চাইতে পারেন?

৫) আল্লাহর নাবী (সা.) আবু যার (রাঃ)-কে এ নির্দেশ করেছেন যে, তিনি যেন তিক্ত হলেও সত্য কথা বলেন। অর্থাৎ সর্বদাই হক্ব এবং ন্যায় কথা বলবে যদিও শ্রোতার নিকট তা কঠিন অথবা তিক্ত হয় অথবা বক্তব্যটি যদিও নিজের বিরুদ্ধে যায়।

৬) তিনি (সা.) এ নির্দেশও করেছেন যে, প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে আল্লাহর রাস্তায় কথা বলতে, কাজ করতে অথবা অবস্থান নিতে নিন্দুকের নিন্দার ভয় এবং শত্রুতার ভয় যেন না করা হয়।

৭) আর ‘ইবাদতে আল্লাহর সাহায্য কামনায় এবং বিপদ মুসীবত দূরীকরণে বিশেষ করে মনের দম্ভ অহংকার দূরীকরণে আল্লাহর সাহায্য কামনার ক্ষেত্রে বেশি বেশি এ কালিমা পাঠ করা “লা-হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ.....”। এ বাক্যটি আল্লাহ তা'আলার ‘আরশে ‘আযীমের তলদেশের ধনভাণ্ডার থেকে উৎসারিত হয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত কল্যাণের ভাণ্ডার এবং উৎস হলো দয়াময় রহমানের ‘আরশের নীচে; তার সাহায্য ও শক্তি ছাড়া কেউই সেখানে পৌঁছতে পারবে না।

কোন বর্ণনায় আছে, “লা-হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”.... জান্নাতের ধন-ভাণ্ডার থেকে উৎসারিত। এতে কোন বিরোধ নেই, কেননা জান্নাতের ছাদের উপরই দয়াময় রহমানের ‘আরশ।
এ বাক্যটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম বাযযার ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর একটি হাদীস উদ্ধৃত করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট বাক্যটি শিখে পাঠ করলাম। তিনি আমাকে বললেন তুমি কি এর তাফসীর জান? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন, “আল্লাহর নাফরমানী ও পাপ থেকে আল্লাহর হিফাযত ছাড়া কেউ বিরত থাকতে পারে না। আর আল্লাহর আনুগত্য ও নেক কাজে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কেউ শক্তি দিতে পারে না।”

‘আল্লামাহ্ নববী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ বাক্যটি (আল্লাহ তাআলার নিকট আত্মসমর্পণ এবং নিজেকে সপে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৯ পৃ.)।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৬০-[৩০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার মধ্য হতে তিনটি জিনিসকে ভালোবাসতেন- খাদ্য, নারী ও সুগন্ধি। এর মধ্যে দু’টি তো তিনি অর্জন করেছেন, আর একটি লাভ করেননি। লাভ করেছেন নারী ও সুগন্ধি। আর (পর্যাপ্ত পরিমাণ) খাদ্য লাভ করেননি। (আহমাদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ مِنَ الدُّنْيَا ثَلَاثَةٌ الطَّعَامُ وَالنِّسَاءُ وَالطِّيبُ فَأَصَابَ اثْنَيْنِ وَلَمْ يُصِبْ وَاحِدًا أَصَابَ النِّسَاءَ وَالطِّيبَ وَلَمْ يُصِبِ الطَّعَامَ. رَوَاهُ أَحْمد

اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (6 / 72 ح 24944) * فیہ رجل : مجھول و الحدیث الآتی (5261) یغنی عنہ ۔
(ضَعِيف)

وعن عاىشة قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يعجبه من الدنيا ثلاثة الطعام والنساء والطيب فاصاب اثنين ولم يصب واحدا اصاب النساء والطيب ولم يصب الطعام. رواه احمد اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (6 / 72 ح 24944) * فیہ رجل : مجھول و الحدیث الآتی (5261) یغنی عنہ ۔ (ضعيف)

ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দুনিয়ার পছন্দনীয় তিনটি বস্তু ভোগ্য এবং জৈবিক চাহিদার উদ্দেশে ছিল

১) খাদ্য পছন্দনীয় ছিল দেহের সুস্থতা রক্ষা এবং ‘ইবাদতে শক্তি অর্জনের জন্য। সুখাদ্য সকল মানুষের মৌলিক অধিকারও বটে, অতএব এটাই ছিল তার প্রিয় হওয়ার কারণ।

২) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট নারী পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলো নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। জাহিলী যুগে নারীর মাতৃত্বের অথবা স্ত্রীত্বের কোনই মর্যাদা ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) যথাস্থানে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে নারীকে তার সঠিক আসনে অধিষ্ঠিত করাই এ ভালোবাসার উদ্দেশ্য। অন্যথায় তিনি আরবের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী নারীদের বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বহু সন্তানের জননী বিধবা নারী পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী খাদীজাকে বিবাহ করে যৌবন ও জীবনের বৃহৎ অংশ অতিবাহিত করতেন না। সর্বোপরি হীন ও ঘৃণ্য ইচ্ছার অবলুপ্তি ঘটিয়ে উত্তম ও পবিত্র বস্তুর মাধ্যমে পার্থিব প্রশান্তি লাভ করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।

৩) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট সুগন্ধি পছন্দনীয় ছিল। কতিপয় চিকিৎসাবিদের মতে এটা হলো মস্তিষ্ক সুস্থতার অন্যতম উপকরণ। উচ্চ মর্যাদা, ভদ্রতা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতীক হলো সুগন্ধি ব্যবহার, এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তা পছন্দ করতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ও খাদ্য ছাড়া অন্য দুটি পেয়েছেন, এর অর্থ তিনি নারীকে তার আসনে পৌছাতে সক্ষম হয়েছেন এবং উচ্চ মর্যাদা ও ভদ্রতার প্রকৃত রূপরেখা তৈরি করে এক পরিচ্ছন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রচুর সম্পদও পেয়েছেন কিন্তু তিনি তা জমিয়ে রাখেননি, বরং আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে দিয়েছেন। তাই তাকে দরিদ্র মনে করা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৯-২০ পৃ.)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৬১-[৩১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সুগন্ধি ও নারীকে আমার কাছে অতি প্রিয় করে দেয়া হয়েছে। আর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে সালাতের মধ্যে। (আহমাদ ও নাসায়ী)
আর ইবনুল জাওযী (حُبِّبَ إِلىَّ)-এর পরে (مِنَ الدُّنْيَا) -এ শব্দটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «حُبِّبَ إِلَيَّ الطِّيبُ وَالنِّسَاءُ وَجُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيُّ. وَزَادَ ابْنُ الْجَوْزِيِّ بَعْدَ قَوْلِهِ: «حُبِّبَ إِليَّ» منَ الدُّنْيَا

اسنادہ حسن ، رواہ احمد (3 / 199 ح 13088) و النسائی (7 / 61 ح 3391) ۔
(حسن)

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «حبب الي الطيب والنساء وجعلت قرة عيني في الصلاة» . رواه احمد والنساىي. وزاد ابن الجوزي بعد قوله: «حبب الي» من الدنيا اسنادہ حسن ، رواہ احمد (3 / 199 ح 13088) و النساىی (7 / 61 ح 3391) ۔ (حسن)

ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসে যে তিনটি বস্তুর কথা বলা হয়েছে তার দুটি বিষয় পূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এবং তার ব্যাখ্যাও অতিবাহিত হয়েছে। এ হাদীসে বর্ণিত ভিন্ন তৃতীয় বস্তুটি হলো সালাত বা নামায যা চোখের শীতলতা বা প্রশান্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘আল্লামাহ্ মুল্লা আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসে (فِعْلِ) বা ক্রিয়াগুলো (فِعْلِ مَجْهُولِ) বা কর্মবাচ্যে ব্যবহার করা হয়েছে, এজন্য বিষয়টি প্রকৃতি ও স্বভাবগত নয়, বরং এগুলো তাকে বাধ্য করে তার বান্দাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ হিসেবে প্রিয় করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য সলাত এর ব্যতিক্রম, কেননা স্বভাবগতভাবেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তা পছন্দ করতেন। যেমন তিনি বিলালকে নির্দেশ করতেন : হে বিলাল! তুমি আমাকে সলাতের মাধ্যমে (অন্য সবকিছু থেকে) প্রশান্তি দাও, অর্থাৎ তুমি সলাতের জন্য আযান দাও। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশেফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৬২-[৩২] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন তাঁকে ইয়ামান দেশে পাঠালেন তখন তাঁকে বললেন : নিজেকে বিলাসিতা হতে বাঁচিয়ে রেখ। কেননা আল্লাহর খাস বান্দাগণ বিলাসী জীবন-যাপন করেন না। (আহমাদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا بَعَثَ بِهِ إِلَى الْيَمَنِ قَالَ: «إِيَّاكَ وَالتَّنَعُّمَ فَإِنَّ عِبَادَ الله لَيْسُوا بالمتنعمين» . رَوَاهُ أَحْمد

اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 243 ح 22456) [و ابو نعیم فی حلیۃ الاولیاء (5 / 155)] * مریح بن مسروق روی عنہ جماعۃ و وثقہ ابن حبان وحدہ و ارسل عن عمر ففی سماعہ من معاذ نظر لانہ توفی قبل عمر رضی اللہ عنھما ۔

وعن معاذ بن جبل ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لما بعث به الى اليمن قال: «اياك والتنعم فان عباد الله ليسوا بالمتنعمين» . رواه احمد اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 243 ح 22456) [و ابو نعیم فی حلیۃ الاولیاء (5 / 155)] * مریح بن مسروق روی عنہ جماعۃ و وثقہ ابن حبان وحدہ و ارسل عن عمر ففی سماعہ من معاذ نظر لانہ توفی قبل عمر رضی اللہ عنھما ۔

ব্যাখ্যা : ইতোপূর্বে একাধিক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)- মু'আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে কাযী এবং গভর্নর হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। তার রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বিভিন্ন ওয়াসিয়্যাত-নাসীহত করেন। অত্র হাদীসে এমনি একটি নাসীহাত বিবৃত হয়েছে। এ নাসীহাতে তিনি (সাঃ) তাকে অতিরিক্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যপূর্ণ জীবন থেকে নিজেকে রক্ষার কথা বলেছেন। কেননা অতি ভোজন ও সীমাতিরিক্ত বিলাসিতা মানুষকে শাহওয়াত তথা প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণে বাধ্য করে, ফলে সে আল্লাহর “ইবাদত করতে কমই সক্ষম হয়ে থাকে। উপরন্তু সে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়। এজন্য আল্লাহর খাস এবং প্রিয় বান্দারা মোটেও বিলাসী জীবন পছন্দ করেন না। এমন বিলাসী জীবন হলো কাফির-মুশরিক, জাহিল আল্লাহবিমুখ ব্যক্তিদের জন্য খাস। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (ذَرۡهُمۡ یَاۡکُلُوۡا وَ یَتَمَتَّعُوۡا وَ یُلۡهِهِمُ الۡاَمَلُ فَسَوۡفَ یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳﴾) “আপনি তাদের ছেড়ে দিন, তারা খেয়ে নিক এবং ভোগ করে নিক, আর আশায় ব্যাপৃত থাকুক। অতি সত্ত্বর তারা (তাদের পরিণতি) জেনে নিবে।” (সূরাহ্ আল হিজর ১৫ : ০৩)
এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে- পানাহারকে লক্ষ্য ও আসল বৃত্তি সাব্যস্ত করে নেয়া এবং সাংসারিক বিলাস-ব্যসনের দীর্ঘ পরিকল্পনা প্রণয়নে মেতে থাকা কাফিরদের দ্বারাই হতে পারে, যারা পরকাল ও তার হিসাব নিকাশে বিশ্বাস করে না। (তাফসীরে মা'রিফুল কুরআন ৭২৫ পৃ.)

আল্লাহ আরো বলেন, (وَ یَاۡکُلُوۡنَ کَمَا تَاۡکُلُ الۡاَنۡعَامُ وَ النَّارُ مَثۡوًی لَّهُمۡ) “আর যারা কাফির তারা ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুষ্পদ জন্তুর মতো আহার করে, তাদের বাসস্থান জাহান্নাম”- (সূরাহ্ মুহাম্মাদ ৪৭ : ১২)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৬৩-[৩৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর তরফ থেকে অল্প রিযকের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, আল্লাহ তার অল্প ’আমলে সন্তুষ্ট হন।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ رَضِيَ مِنَ اللَّهِ بِالْيَسِيرِ مِنَ الرِّزْقِ رَضِيَ الله مِنْهُ بِالْقَلِيلِ من الْعَمَل»

اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (4585 ، نسخۃ محققۃ : 4265) * اسحاق بن محمد الفروی ضعیف ضعفہ الجمھور و الراوی شک فی سماعہ من ابیہ و السند منقطع ۔
(ضَعِيف)

وعن علي رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من رضي من الله باليسير من الرزق رضي الله منه بالقليل من العمل» اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (4585 ، نسخۃ محققۃ : 4265) * اسحاق بن محمد الفروی ضعیف ضعفہ الجمھور و الراوی شک فی سماعہ من ابیہ و السند منقطع ۔ (ضعيف)

ব্যাখ্যা : হাদীসের শব্দ (مَنْ رَضِيَ) অর্থ হলো : (مَنْ قَنَعَ،مِنْهُ بِقَلِيلٍ مِنَ الطَّعَامِ) “যে আল্লাহর দেয়া সামান্য জীবিকা পেয়েই পরিতুষ্ট; এতে সে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ-অনুযোগ করে না, কারো কাছে কিছু চায় না এবং ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার সাথে জীবন নির্বাহ করে থাকে আল্লাহ তা'আলা তার অল্প ‘আমলেই সন্তুষ্ট হন। প্রকৃতপক্ষে বান্দার সন্তুষ্টি প্রথমত আল্লাহর সন্তুষ্টিরই প্রভাব, অতঃপর শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি তার জাতি সন্তুষ্টির চূড়ান্ত রূপ, আর তা হলো তার পুরস্কার। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৬৪-[৩৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে অভুক্ত ও অভাবী ব্যক্তি তার প্রয়োজনের কথা মানুষের নিকট গোপন করে (সবর করে) তখন আল্লাহর জিম্মায় এ ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি বৈধভাবে এক বছরের রিযক তাকে পৌঁছে দেবেন। (হাদীস দু’টি ইমাম বায়হাক্বীর শুআবুল ঈমান বর্ণনা করেছেন)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ جَاعَ أَوِ احْتَاجَ فَكَتَمَهُ النَّاسُ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَرْزُقَهُ رِزْقَ سَنَةٍ مِنْ حلالٍ» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»

اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10054 ، نسخۃ محققۃ : 9581) * فیہ ابو عبد الرحمن السلمی ضعیف جدًا ، ولاعمش مدلس و عنعن ان صح السند الیہ و علل أخری ۔
(ضَعِيف)

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من جاع او احتاج فكتمه الناس كان حقا على الله عز وجل ان يرزقه رزق سنة من حلال» . رواهما البيهقي في «شعب الايمان» اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10054 ، نسخۃ محققۃ : 9581) * فیہ ابو عبد الرحمن السلمی ضعیف جدا ، ولاعمش مدلس و عنعن ان صح السند الیہ و علل أخری ۔ (ضعيف)

ব্যাখ্যা : “যে ব্যক্তি অভুক্ত থাকে এটা প্রকৃত এবং বাস্তব ক্ষুধাকেই বুঝানো হয়েছে। অথবা এমন অভাব যে, কোন বস্তু তার ক্ষুধা, কিংবা অন্যান্য প্রয়োজন মিটানোর মতো নেই, কিন্তু সে তার ক্ষুধা ও অভাবের কথা কারো কাছে প্রকাশ করে না বরং ধৈর্যধারণ করে থাকে এমন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর হক রয়েছে এক বছর পর্যন্ত তাকে হালাল রিযক দান করেন। এখানে ‘হক’ অর্থ পূর্ণ অঙ্গীকার অথবা তার নিকট আবশ্যক সিদ্ধান্ত। ক্ষুধা হলো ঐ ক্ষুধা যাতে ধৈর্য এবং অল্পে তুষ্টি রয়েছে, আর ‘কিতমান’ হলো নিজের অভাব তথা ক্ষুধাকে গোপন রাখা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)।


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৬৫-[৩৫] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা তাঁর ঈমানদার, গরীব, পরিবারের বোঝা বহনকারী, অবৈধ উপায় থেকে মুক্ত- এমন বান্দাকে ভালোবাসেন। (ইবনু মাজাহ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ عَبْدَهُ الْمُؤْمِنَ الْفَقِيرَ الْمُتَعَفِّفَ أَبَا الْعِيَالِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه

اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (4121) * فیہ موسی بن عبیدۃ ضعیف و القاسم بن مھران لم یثبت سماعہ من عمران و فیہ علۃ أخری ولہ شاھد ضعیف جدًا ۔
(ضَعِيف)

وعن عمران بن حصين قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله يحب عبده المومن الفقير المتعفف ابا العيال» . رواه ابن ماجه اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (4121) * فیہ موسی بن عبیدۃ ضعیف و القاسم بن مھران لم یثبت سماعہ من عمران و فیہ علۃ أخری ولہ شاھد ضعیف جدا ۔ (ضعيف)

ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। আল্লামাহ্ মুল্লা ‘আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ)-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন : (الْمَعْنٰى أَنَّهٗ مَعَ كَوْحِبَ الْعِيَالِ وَفَقِيرَ الْحَالِ وَكَسِيرَ الْبَالِ تَعَفَّفَ عَنِ السُّؤَالِ،فَهُوَ الْمُؤْمِنُ عَلٰى وَجَهِ الْكَمَلِ، فَلِذَاأَحَبَّهٗ ذُوالْجَلَالِ وَالْجَمَالِ) ‘দরিদ্র মুমিন বান্দার” অর্থ হলো দরিদ্রতার সাথে সাথে সে অধিক পোষ্যের অধিকারী, ফকীরী হালাত ও ভগ্ন জীবন, কিন্তু অপরের নিকট কিছু চাওয়া থেকে মুক্ত থাকে, সেই হলো পূর্ণমাত্রায় মু'মিন। এজন্য আল্লাহু যুল জালাল ওয়াল জামাল তাকে ভালোবাসেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৬৬-[৩৬] যায়দ ইবনু আসলাম (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’উমার (রাঃ), পান করার জন্য পানি চাইলেন। তখন তাঁর কাছে এমন পানি আনা হলো যাতে মধু মিশ্রিত ছিল। তখন তিনি বললেন : এটা বড়ই সুস্বাদু বটে। তবে আমি আল্লাহ তা’আলাকে এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর দোষারোপ করতে শুনেছি যারা নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : তোমরা তোমাদের পার্থিব জীবনেই তোমাদের প্রাপ্ত নি’আমাতের স্বাদ উপভোগ করেছ। অতএব আমি আশঙ্কা করছি (অনুরূপভাবে আমাদেরকেও আগে-ভাগে দুনিয়াতে দ্রুতবেগে আমাদের ভালো কাজের প্রতিদান দেয়া হচ্ছে কিনা? এ বলে তিনি আর তা পান করলেন না। (রযীন)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَن زيدِ بنِ أسلمَ قَالَ: اسْتَسْقَى يَوْمًا عُمَرُ فَجِيءَ بِمَاءٍ قَدْ شيبَ بعسلٍ فَقَالَ: إِنَّه لطيِّبٌ لكني أَسْمَعُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ نَعَى عَلَى قَوْمٍ شَهَوَاتِهِمْ فَقَالَ (أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَا) فَأَخَافُ أَنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ لَنَا فَلَمْ يشربْه. رَوَاهُ رزين

لم اجدہ ، رواہ رزین (لم اجدہ) ۔
(ضَعِيف)

وعن زيد بن اسلم قال: استسقى يوما عمر فجيء بماء قد شيب بعسل فقال: انه لطيب لكني اسمع الله عز وجل نعى على قوم شهواتهم فقال (اذهبتم طيباتكم في حياتكم الدنيا واستمتعتم بها) فاخاف ان تكون حسناتنا عجلت لنا فلم يشربه. رواه رزين لم اجدہ ، رواہ رزین (لم اجدہ) ۔ (ضعيف)

ব্যাখ্যা : মধুমিশ্রিত পানির ব্যাপারে ‘উমার (রাঃ) বলেন, (الَطَيِّب) ‘উত্তম’ শব্দটি সুন্দর, পবিত্র, সুস্বাদ ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এ উত্তম বা সুস্বাদু যে অর্থেই ব্যবহৃত হোক না কেন তা প্রকৃতিগতভাবে, শারই দিক থেকে, উপকারিতা এবং গুণগত মানের দিক থেকেও শ্রেষ্ঠত্বের দাবী রাখে।

‘উমার (রাঃ) -এর কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে কিছু শব্দ ও বাক্য উহ্য রয়েছে আর তা হলো : (أنَّهٗ لَطَيِّبٌ أَشَتَهِيهِ لَكِنِّي أعْرِ ضُ عَنّهُ، لأَنِّي سَمِعَتُ اللّٰهَ عَزَّ وَجَلَّ...) (আমি জানি এ মধুমিশ্রিত) পানি বা শরবত অবশ্যই সুস্বাদু এবং পবিত্র, কিন্তু আমি তা বর্জন করেছি এজন্য যে, আল্লাহ এমন এক জাতিকে অপছন্দ করেছেন বা দোষারোপ করেছেন যারা তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা চরিতার্থ করার জন্যই নানা প্রকার সুখাদ্য ও পানীয়ের স্বাদ উপভোগ করেছে। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছেন তোমরা দুনিয়ার জীবনেই তোমাদের স্বাদের বস্তুগুলো উপভোগ করেছ, আখিরাতের সঞ্চয় তোমাদের কিছুই নেই। আল্লাহ বলেন : “যে কেউ ইহকাল কামনা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।” (সূরাহ্ ইসরা ১৮ : ১৮)

‘উমার (রাঃ)-এর মধুমিশ্রিত পানি বা শরবত গ্রহণ না করা ছিল স্বীয় প্রবৃত্তির বিরোধিতার জন্য এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৬৭-[৩৭] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার জয় করা পর্যন্ত আমরা খেজুর দ্বারাও পরিতৃপ্ত হইনি। (বুখারী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَن ابنِ عمَرَ قَالَ: مَا شبِعنا من تمر حَتَّى فتحننا خَيْبَرَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (4243) ۔
(صَحِيح)

وعن ابن عمر قال: ما شبعنا من تمر حتى فتحننا خيبر. رواه البخاري رواہ البخاری (4243) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর কথা আমরা খেজুর দ্বারা পরিতৃপ্ত হইনি' এ ‘আমরা' দ্বারা ‘উমার (রাঃ)-এর পরিবারের সদস্যদের বুঝানো হয়েছে।
মুল্লা ‘আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো : (نَحْنُ مَعْشَرَالصَّحَابَةِ مَعَهٗ صلَّى اللَّهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) আমরা সমস্ত সাহাবী এবং আমাদের সাথে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) - নিজেও। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও  তার পরিবার পরিজনও এর অন্তর্ভুক্ত, এটাই বাস্তব। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২১ )


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে