লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫৬-[২৬] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: দু’টি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান আছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল লোকেদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন। (প্রথমত) দীনী ব্যাপারে যে লোক নিজের চাইতে উত্তম ও উচ্চমানের তার প্রতি দৃষ্টি রেখে তার অনুকরণ করে। (দ্বিতীয়ত) দুনিয়াবী ব্যাপারে সে এমন লোকের দিকে দৃষ্টি রাখে, যে তার চাইতে নিম্নস্তরের। অতএব সে আল্লাহর প্রশংসা করে যে আল্লাহ তাকে এ ব্যক্তির ওপর সম্মান দান করেছেন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে শোকরগুজার ও ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর যে লোক দীনদারীর ব্যাপারে এমন লোকের দিকে তাকায়, যে তার অপেক্ষা নিম্নস্তরের আর পার্থিব ব্যাপারে সে এমন লোকের দিকে তাকায়, যে তার অপেক্ষা উচ্চপর্যায়ের এবং সে আক্ষেপ করতে থাকে ঐ সকল বস্তুর জন্য যা তার হাতছাড়া হয়েছে। এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ শোকরগুজার ও ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন না। (তিরমিযী)
আবু সাঈদ-এর বর্ণিত হাদীস (أَبْشِرُوايَامَعْشَرَصَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ) ফাযায়িলে কুরআন-এর পরের অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَصْلَتَانِ مَنْ كَانَتَا فِيهِ كَتَبَهُ اللَّهُ شاكراً: مَنْ نَظَرَ فِي دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ فَاقْتَدَى بِهِ وَنَظَرَ فِي دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ فَحَمِدَ اللَّهَ عَلَى مَا فَضَّلَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ كَتَبَهُ اللَّهُ شَاكِرًا صَابِرًا. وَمَنْ نَظَرَ فِي دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ وَنَظَرَ فِي دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ فَأَسِفَ عَلَى مَا فَاتَهُ مِنْهُ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ شَاكِرًا وَلَا صَابِرًا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي سَعِيدٍ: «أَبْشِرُوا يَا مَعْشَرَ صَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ» فِي بَابٍ بَعْدَ فَضَائِلِ الْقُرْآنِ اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2512) * مثنی بن الصباح : ضعیف ۔ 0 حدیث ابی سعید تقدم (2198) ۔ (ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : সবর এবং শোকর ঈমানের পূর্ণতার গুণ। অর্থাৎ যে এ দু'টি গুণ অর্জন করে সে পূর্ণ ঈমান লাভ করে। হাদীসে বর্ণিত আছে “ঈমান আধা-আধিভাবে বিভক্ত, অর্ধেক ধৈর্য আর অর্ধেক শোকর। (বায়হাকী’র শুআবুল ঈমান ৭/১২৩ পৃ, হা. ৯৭১৫)
জামি' গ্রন্থে আরো উল্লেখ আছে যার মধ্যে এ দু'টি গুণ নেই আল্লাহ তা'আলা তাকে কৃতজ্ঞ এবং ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন না।
ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতা গুণ দু’টি অর্জনের বৈশিষ্ট্য হলো দীনের ক্ষেত্রে উপরের ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করা এবং দুনিয়ার ক্ষেত্রে নিজের চেয়ে নীচের ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করা। অর্থাৎ দীন পালনে তোমার চেয়ে যে বেশি পরহেযগার ও ‘আমলকারী তুমি তার প্রতি লক্ষ্য কর পক্ষান্তরে দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও আরাম-আয়েশের উপকরণের ক্ষেত্রে যে তোমার চেয়ে নীচের অবস্থানে আছে তুমি তার প্রতি লক্ষ্য কর। তুমি যতটুক পেয়েছ তার উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, আর তোমার যা নেই তাতে ধৈর্য অবলম্বন কর। এতে আল্লাহ তোমাকে পূর্ণ মুমিন হিসেবে গণ্য করবেন।
যারা দীনের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ আমলে-আখলাকে, পরহেজগারিতায় তার চেয়ে নিম্নমানের লোকেদের সাথে নিজের তুলনা করে নিজেকে তাদের চেয়ে ভালো মনে করে বেশি বেশি ‘আমল থেকে বিমুখ হয়ে থাকে আর দুনিয়ার ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে তার চেয়ে উপরের অর্থাৎ সম্পদশালী লোকেদের সম্পদ ও বিলাস-ব্যসনের প্রতি লক্ষ্য করে এবং নিজের কাছে এরূপ ধন-সম্পদ না থাকায় পরিতাপ করে আল্লাহ তা'আলা তাদের শোকরগুজার এবং ধৈর্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন না।
আল্লাহ তা'আলা বলেন : (لِّکَیۡلَا تَاۡسَوۡا عَلٰی مَا فَاتَکُمۡ وَ لَا تَفۡرَحُوۡا بِمَاۤ اٰتٰىکُمۡ ؕ) “এটা এজন্য বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তজ্জন্যে উল্লাসিত হও।” (সূরা আল হাদীদ ৫৭:২৩)।
হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে দুনিয়া না পাওয়ায় যে পরিতাপ করে জাহান্নাম তার এক হাজার বছরের নিকটে হয়ে যায়, পক্ষান্তরে যে, আখিরাতের কোন কিছু হারানোর কারণে পরিতাপ করে সে জান্নাতের এক হাজার বছরের পথ নিকটে হয়ে যায়। (জামিউস্ সগীর ২/৫১৩ পৃ., হা. ৮৪৩২)।
দুনিয়ার সম্পদের প্রতি অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা এবং দীনের কর্মে উদাসীনতা এটা কাফির মুশরিকদের স্বভাব। মুমিনের কর্তব্য হবে অপরের বেশি সম্পদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা বরং অপরের বেশি ঈমান-আমাল দেখে নিজে ঐরূপ ‘আমালকারী হওয়ার চেষ্টা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহঃ তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৫১২)