লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৪-[১৪] আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) বলেছেন: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীন অবস্থায় জীবিত রাখো, মিসকীন অবস্থায় মৃত্যু দান করো এবং মিসকীনদের দলে হাশর করো। আয়িশাহ (রাঃ) বললেন: কেন হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সা.) বললেন : তারা ধনীদের চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে ’আয়িশাহ্! কোন মিসকীনকে তোমার দুয়ার হতে (খালি হাতে) ফিরিয়ে দিও না। খেজুরের একটি টুকরা হলেও প্রদান করো। হে ’আয়িশাহ্! মিসকীনদেরকে ভালোবাসো এবং তাদেরকে নিজের কাছে জায়গা দিয়ে, ফলে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তোমাকে নিকটে রাখবেন। (তিরমিযী ও বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مِسْكِينًا وَأَمِتْنِي مِسْكِينًا وَاحْشُرْنِي فِي زُمْرَةِ الْمَسَاكِينِ» فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِنَّهُمْ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَائِهِمْ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا يَا عَائِشَةُ لَا تَرُدِّي الْمِسْكِينَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ يَا عَائِشَةُ أَحِبِّي الْمَسَاكِينَ وَقَرِّبِيهِمْ فَإِنَّ اللَّهَ يُقَرِّبُكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2352 وقال : غریب) و البیھقی فی شعب الایمان (10507) * الحارث بن النعمان : ضعیف و للحدیث شواھد کلھا ضعیفۃ ۔
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দু'আ ছিল, “হে আল্লাহ! আমাকে মিসকীন অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো”, তিনি ফকীর শব্দ ব্যবহার করেননি, যাতে এ ধারণার উদ্রেক না হয় যে, তিনি হীন ও মুখাপেক্ষী ছিলেন। (الْمِسْكِينُ) শব্দটি (الْمِسْكَنَةُ) শব্দ থেকে উৎপত্তি তার অর্থ হলো (التَّوَاضُعُ عَلٰى وَجْهِ الْمُبَالَغَةِ) অর্থাৎ অধিক মাত্রায় বিনয় প্রকাশ করা।
অথবা শব্দটি (السُّكُونُ وَالسَّكِينَةُ) থেকে উদগত হয়েছে, এর অর্থ হলো (الْوَقَارُوَالِاطْمِءْنَانُ وَالْقَرَارُتَحْتَ أحْكَامِ الْأَقْدَارِرِضًابِقَضَاءِالْجَبَّارِ) মহা প্রতাপশালী আল্লাহর ফায়সালা এবং তাক্বদীরের বিধানাবলীর উপর সন্তুষ্ট থেকে প্রশান্ত ও গাম্ভীর্যপূর্ণ জীবনযাপন।
কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বিনয়ী বানিয়ে দাও, আমাকে অহংকারী করো না। এখানে উম্মতের জন্য মিসকীনের মর্যাদার শিক্ষা রয়েছে, যাতে মানুষ তাদের সাথে বসে, তাদের ভালোবাসে। আরো রয়েছে মিসকীনদের জন্য সান্ত্বনা ও উঁচু মর্যাদার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা। সাথে সাথে এটাও উদ্দেশ্যে যে, মানুষ যেন তার জীবন নির্বাহের ন্যূনতম উপকরণ ও রসদকেই জীবনের জন্য যথেষ্ট মনে করে। আর সে অঢেল সম্পদ সংগ্রহের পিছনে না পড়ে থাকে। কেননা আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দাদের জন্য অধিক সম্পদ জীবনের জন্য ধ্বংস এবং সম্মানের জন্য অমসৃণ উপকরণ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃত্যু অবধি এই মিসকীনী অবস্থাকে কামনা করেছেন। এমনকি কিয়ামতের দিন এই মিসকীনদের দলেই হাশর বা একত্রিত হওয়ারও আশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি (সা.) মুবালাগাহ্ বা অতিরঞ্জন হিসেবে বলেছেন তা কারো কাছেই অস্পষ্ট নয়। আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে মিসকীনী অবস্থার জন্য দু'আর কারণ জিজ্ঞেস করায় তিনি তার কারণ বর্ণনা করেন। অর্থাৎ ধনীরা তাদের উত্তম ইবাদত, উত্তম চরিত্রসহ সকল আমলে মিসকীনদের সমকক্ষ হলেও মিসকীনদের চল্লিশ বছর পর জান্নাতে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে নাসীহত করেন যে, তুমি কখনো কোন মিসকীনকে খালি হাতে বিমুখ করে ফিরিয়ে দিবে না, অর্ধ টুকরো খেজুর হলেও তাকে দিবে এবং অন্তরে তাদের প্রতি মমতা রাখবে। তাদের নিকটে বসবে তাহলে কিয়ামতের দিন তার বিনিময়ে আল্লাহও তোমাকে তার নিকটে স্থান দিবেন।
(মিরকাতুল মাফাতীহ তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খণ্ড, হা. ২৩৫২; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৪ পৃ.)