পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৮-[৬০] সাবিত (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিযাব লাগানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বললেনঃ যদি আমি তাঁর মাথার সাদা চুলগুলো গুণে দেখতে চাইতাম, তবে অনায়াসে গুণতে পারতাম (অর্থাৎ- এমন অধিক পরিমাণে সাদা হয়নি)। তিনি বললেনঃ অতএব তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খিযাব লাগাননি। অপর এক বর্ণনায় এ কথাটি বর্ধিত আছে যে, আবূ বকর(রাঃ) মেহেদী ও কাতাম ঘাস মিশ্রিত খিযাব লাগিয়েছেন। আর ’উমার(রাঃ) নিরেট মেহেদীর খিযাব লাগিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَن ثابتٍ قَالَ: سُئِلَ أَنَسٌ عَنْ خِضَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: لَوْ شِئْتَ أَنْ أَعُدَّ شَمَطَاتٍ كُنَّ فِي رَأْسِهِ فَعَلْتُ قَالَ: وَلَمْ يَخْتَضِبْ زَادَ فِي رِوَايَةٍ: وَقَدِ اخْتَضَبَ أَبُو بَكْرٍ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ وَاخْتَضَبَ عُمَرُ بِالْحِنَّاءِ بحتا
ব্যাখ্যাঃ (سُئِلَ أَنَسٌ عَنْ خِضَابِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিযাব সম্পর্কে তথা তিনি করতেন, কি করতেন না, সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ
(لَوْ شِئْتَ أَنْ أَعُدَّ شَمَطَاتٍ كُنَّ فِي رَأْسِهِ فَعَلْتُ) যদি আমি তাঁর মাথায় কালো চুলের সাথে মিশে থাকা পাকা চুল গণনা করতে চাইতাম তাহলে গণনা করতে পারতাম। তিনি এর দ্বারা সংখ্যায় খুব কম তা বুঝাতে চেয়েছেন।
(قَالَ: وَلَمْ يَخْتَضِبْ) তিনি স্পষ্ট উত্তর দেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনই মাথায় খিযাব লাগান নেই। [আনাস (রাঃ)] অপর এক বর্ণনায় বলেনঃ আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) মেহেদী এবং কাতাম দিয়ে খিযাব লাগাতেন- (বুখারী ও মুসলিম)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ : কিতাবুল লিবাস)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৯-[৬১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নিজের দাড়িতে হলুদ রং দ্বারা হলদে করতেন, এমনকি তাতে তাঁর কাপড় হলদে হয়ে যেত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি হলুদ রং ব্যবহার করেন কেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটা ব্যবহার করতে দেখেছি। বস্তুতঃ তাঁর কাছে এ রঙের চেয়ে অন্য কোন রং অধিক প্রিয় ছিল না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সমস্ত কাপড় এমনকি পাগড়ীও এ রঙে রঞ্জিত করতেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَصْفِّرُ لِحْيَتَهُ بِالصُّفْرَةِ حَتَّى تَمْتَلِئَ ثِيَابُهُ مِنَ الصُّفْرَةِ فَقِيلَ لَهُ: لِمَ تُصْبِغُ بِالصُّفْرَةِ؟ قَالَ: أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْبُغُ بِهَا وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْهَا وَقد كَانَ يصْبغ ثِيَابَهُ كُلَّهَا حَتَّى عِمَامَتَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) صُفْرَةٌ ‘সুফরাহ্’ (তথা ‘আরশ এক ধরনের লতা জাতীয় গাছ যার রং যা‘ফরানের মতো) দ্বারা তার দাড়িকে রং করতেন ফলে তার কাপড় সুফরার রঙে ভরে যেত। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো : আপনি কেন সুফরাহ্ দিয়ে দাড়ি রং করেন? তিনি উত্তর দিলেন : আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটা দ্বারা দাড়ি রং করতে দেখেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দাড়ি রং করার জন্য তা (সুফরাহ্) ছিল খুবই প্রিয়।
(وَقد كَانَ يصْبغ ثِيَابَهُ كُلَّهَا) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সুফরাহ্ ব্যবহারের ফলে কাপড় রং পাগড়ী রঙিন হয়ে যেত। তিনি সুফরাহ্ দিয়ে কাপড় রং পাগড়ী রঙিয়ে তা পরিধান করতেন তা উদ্দেশ্য নয়। কেননা অপর হাদীসে সুফরাহ্ বা যা‘ফরান দিয়ে রং করে কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮০-[৬২] ’উসমান ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (একবার) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি আমাদের সম্মুখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েক গাছি চুল বের করে আনলেন যা (মেহেদী দ্বারা) খিযাব করা ছিল। (বুখারী)[1]
وَعَن عُثْمَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَوْهَبٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ فَأَخْرَجَتْ إِلَيْنَا شَعْرًا مِنْ شَعْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مخضوبا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ ‘উসমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর গৃহে প্রবশে করি, অতঃপর তিনি আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিযাব করা একটি চুল বের করে দেখান। ইবনু মাজাহ ও আহমাদ উক্ত হাদীসে বৃদ্ধি করে বলেন, মেহেদী এবং কাতাম দ্বারা চুলটি খিযাব করা ছিল। কিন্তু পূর্বে উল্লেখিত আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো খিযাব করতেন না। অতএব উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা যায় এভাবে :
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ অবস্থার দিকে বিবেচনা করে বলেছেন, তিনি খিযাব করতেন না। আর যে হাদীসে খিযাবের কথা বলেছেন যেটা স্বল্পতার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা এবং এটাও হতে পারে যে, একটি বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে আর অন্যটি রূপক অর্থে বলা হয়েছে।
বাস্তবতা হলো : মাথার চুলের রং পরিবর্তনের কারণ হলো মাথা ব্যথার কারণে মেহেদী ব্যবহার করা অথবা অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করা। যার ফলে খিযাব মনে হতো। আর রূপক অর্থে বার্ধক্যের শুরুতে চুল লালচে হয়ে যায় যা খিযাবের মতো দেখায়। আমার নিকট গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে খিযাব না করাটা বার্ধক্যের কারণে মাথায় খিযাব লাগানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর করাটা দাড়িতে কোন কোন চুল পেকে গেলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আল্লাহই এ ব্যাপারে ভালো জানেন।
এই মর্মে ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) ইসমা‘ঈলীর সুত্রে বর্ণনা করেন : উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাড়ির একটি চুল ছিল, যাতে মেহেদী এবং কাতামের চিহ্ন ছিল। অতএব এ হাদীসটি উপরোক্ত সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। যেমনটি শামায়িল অধ্যায়ে আবূ হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খিযাব করতেন? তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮১-[৬৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক হিজড়াকে আনা হলো, সে তার হাতে এবং পায়ে মেহেদী লাগিয়ে রেখেছিল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটার এ অবস্থা কেন? সাহাবীগণ বললেনঃ সে নারীদের বেশ ধারণ করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে শহর হতে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সুতরাং তাকে শহরের বাইরে নাক্বী’ নামক স্থানে নির্বাসিত করা হলো। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাকে কতল করে দেব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সালাত আদায়কারী ব্যক্তিদেরকে কতল করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمُخَنَّثٍ قَدْ خَضَبَ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ بِالْحِنَّاءِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا بَالُ هَذَا؟» قَالُوا: يَتَشَبَّهُ بِالنِّسَاءِ فَأَمَرَ بِهِ فَنُفِيَ إِلَى النَّقِيعِ. فَقيل: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَا تَقْتُلُهُ؟ فَقَالَ: «إِنِّي نُهِيتُ عَنْ قَتْلِ الْمُصَلِّينَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ আবূ হুরায়রা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একজন মুখান্নাস তথা হিজড়া ব্যক্তিকে আনা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এ লোকটির কি হয়েছে? সাহাবীগণ বললেনঃ সে মহিলাদের সাথে সামঞ্জস্য রাখে, কথাবার্তায়, কাজকর্মে এবং চলাফেরায় এমনকি মেহেদী ব্যবহারেও। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বের করে দিতে বললেন। এরপর তাকে নাক্বী‘ নামক স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো। বলা হলো : হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি তাকে হত্যা করব? অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমাকে মুসল্লী তথা মু’মিনদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সালাত পরিত্যাগকারীকে হত্যা করা যাবে। এটা ইমাম শাফি‘ঈ-এর অনুসারীদেরও মতো। কেননা মুসল্লী বা সালাত আদায়কারী তাকেই বলা যাবে যে অধিকাংশ সময় সালাত আদায় করে থাকে, যদিও এক বা দুই বার সালাত ছুটে যায়। যারা শুধু এক দু’বার সালাত আদায় করে তাদেরকে সাধারণত মুসল্লী বলা হয় না। অতএব তাদেরকে হত্যা করা যাবে, যেহেতু তারা ইসলামের সবচেয়ে বড় নিদর্শনকে পরিত্যাগ করেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮২-[৬৪] ওয়ালীদ ইবনু ’উকবাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা জয় করলেন, তখন মক্কাবাসীরা তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে তাঁর খিদমাতে আনতে শুরু করে আর তিনি তাদের জন্য বারাকাতের দু’আ করতেন এবং তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। (বর্ণনাকারী) ওয়ালীদ বলেন, আমাকেও তাঁর খিদমাতে আনা হলো, সে সময় আমার গায়ে খলূক সুগন্ধি মাখা ছিল। সে (রঙিন) খলূক সুগন্ধির দরুন তিনি আমাকে স্পর্শ করেননি। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি মুনকার য‘ঈফ হওয়ার কারণ হলো এর সনদে আছে ‘‘আবদুল্লাহ আল হামদানী’’, আর ইনিই হলেন আবূ মূসা। ইনি একজন অপরিচিত বর্ণনাকারী। দেখুন- তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ- শু‘আয়ব আরনাউত্বব : ১৬৪২৬।
وَعَن الوليدِ بن عقبةَ قَالَ: لَمَّا فَتَحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ جَعَلَ أَهْلُ مَكَّةَ يَأْتُونَهُ بصبيانهم فيدعو لَهُم بِالْبركَةِ وَيمْسَح رؤوسهم فَجِيءَ بِي إِلَيْهِ وَأَنَا مُخَلَّقٌ فَلَمْ يَمَسَّنِي من أجل الخَلوق. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয় করেন তখন মক্কাবাসীরা তাদের শিশুদেরকে তাঁর নিকট আনতে শুরু করল এবং তিনি তাদের শিশুদের জন্য অথবা শিশুদের কারণে মক্কাহ্বাসীদের জন্য বারাকাতের দু‘আ করলেন ও তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বর্ণনাকারী ওয়ালীদ বলেনঃ আমাকেও তার নিকট আনা হলো, খলূক তথা যা‘ফরান মিশ্রিত সুগন্ধি মাখানো অবস্থায়, ফলে তিনি খলূকের কারণে আমাকে স্পর্শ করলেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকলেন। কেননা এটা ছিল মহিলাদের সুগন্ধি। যাতে স্পর্শ করার ফলে মহিলাদের সাদৃশ্য অনুকরণ করা না হয়। কেননা পুরুষদের জন্য মহিলাদের সাদৃশ্য ধারণ করা হারাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮৩-[৬৫] আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেনঃ আমার চুল ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে। সুতরাং আমি কি তা আঁচড়িয়ে রাখতে পারি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ এবং তাকে সযত্নে রাখো। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হ্যাঁ এবং তাকে যত্ন করো বলার কারণে আবূ কতাদাহ্ দৈনিক দু’বার তাতে তেল মালিশ করতেন। (মালিক)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সানাদ বিচ্ছিন্ন এবং এর মতনে উল্টাপাল্টা (ইযত্বিরাব) রয়েছে। এর ইনকিত্বা‘ তথা বিচ্ছিন্নতা হলো, নাসায়ীতে ২/২৯২ এসেছে, ইবনু মিকদাম বাহ্যিকভাবে বিশুদ্ধ কিন্তু সে সূক্ষ্মভাবে তাদলীস করত। বিস্তারিত দেখুন- গয়াতুল মিন্নাহ ফী ইতমামি তামামিল মিন্নাহ ১/৫৪।
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّهُ قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ لِي جُمَّةً أَفَأُرَجِّلُهَا؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ وَأَكْرِمْهَا» قَالَ: فَكَانَ أَبُو قَتَادَةَ رُبَّمَا دَهَنَهَا فِي الْيَوْمِ مَرَّتَيْنِ مِنْ أَجْلِ قَوْلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نِعْمَ وَأَكْرمهَا» . رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যাঃ আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেন, আমার জুম্মা তথা কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল আছে। আমি কি তা চিরুণী দিয়ে আঁচড়াবো এবং ছেড়ে রাখব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, তাকে চিরুণী কর এবং তেল দিয়ে ভালোভাবে যত্ন কর। বর্ণনাকারী বলেন, তাই আবূ কতাদাহ্ -এর এ কথার প্রেক্ষিতে ‘‘হ্যাঁ তাকে যত্ন কর’’। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮৪-[৬৬] হাজ্জাজ ইবনু হাসসান (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (শিশুকালে) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমার ভগ্নি মুগীরাহ্ সেদিনকার ঘটনাটি আমাকে (এভাবে) বর্ণনা করেছেন যে, তুমি তখন ছোট বাচ্চা ছিলে। তোমার চুলের দু’টি বেণি অথবা দু’টি গুচ্ছ ছিল। তখন আনাস (রাঃ) তোমার মাথার উপরে হাত ফিরিয়ে তোমার জন্য বারাকাতের দু’আ করলেন এবং বললেনঃ তার এ বেণি দু’টি কেটে ফেলো অথবা বলেছেনঃ মুড়িয়ে ফেলো। কেননা এটা ইয়াহূদীদের আচরণ। (আবূ দাঊদ)[1]
য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে মুগীরাহ্ বিনতু হাস্সান (حسّن) নামে একজন বর্ণনাকারী আছে, যে মাকবূলাহ্ (مقبولة)। তার ব্যাপারে ইমাম মুনযিরী (রহিমাহুল্লাহ) চুপ থেকেছেন। আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাতে ৯০০ নং-এ বলেছেনঃ সানাদ য‘ঈফ। হাফিয ইবনু হাজার আল ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) ‘‘আত্ তাকরীবে’’ তাকে মাকবূলাহ্ বলেছেন।
وَعَن الحجاح بْنِ حَسَّانَ قَالَ دَخَلْنَا عَلَى أَنَسِ بْنِ مَالك فَحَدَّثَتْنِي أُخْتِي الْمُغِيرَةُ قَالَتْ: وَأَنْتَ يَوْمَئِذٍ غُلَامٌ وَلَكَ قَرْنَانِ أَوْ قُصَّتَانِ فَمَسَحَ رَأْسَكَ وَبَرَّكَ عَلَيْكَ وَقَالَ: «احْلِقُوا هَذَيْنِ أَوْ قُصُّوهُمَا فَإِنَّ هَذَا زِيُّ الْيَهُود» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (دَخَلْنَا) আমি ও আমার পরিবার প্রবেশ করলাম। (فَحَدَّثَتْنِي أُخْتِي الْمُغِيرَةُ) অতঃপর আমাকে বোন মুগীরাহ্ হাদীস বর্ণনা করলেন। (وَأَنْتَ يَوْمَئِذٍ) যখন তুমি আনাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়েছিলেন। (غُلَامٌ) ছোট ছেলে। (وَلَكَ قَرْنَانِ) তখন তোমার মাথায় চুলের দু’টি বেনী ছিল। (أَوْ قُصَّتَانِ) অথবা কপালের উপর চুলের দু’টি বেনী ছিল। কোন কোন বর্ণনাকারী (أَوْ) ‘আও’ বলে সন্দেহ পোষণ করেছেন। (فَمَسَحَ) অতঃপর আনাস ইবনু মালিক মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
এক্ষেত্রে ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) ভুল করে ضمير-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে ফিরিয়েছেন। এটা তার স্পষ্ট ভুল ধারণ। (وَبَرَّكَ عَلَيْكَ থ والله اعلم) তোমার বারাকাতের জন্য দু‘আ করলেন এবং বললেন, তোমার চুলের এই বেনী দু’টিকে চেছে ফেল অথবা কেটে ফেল, কেননা এটা ইয়াহূদীদের নিদর্শন এবং তাদের সন্তানদের মাথায় চুল রাখার অভ্যাস। সুতরাং এর বৈপরীত্য আনয়ন কর।
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) ‘সিরাতুল মুসতাকিম’ গ্রন্থে বলেনঃ চুল বেনী করে শিং তৈরি করা নিষেধ হওয়ার কারণ হলো এটা ইয়াহূদীদের একটা নিদর্শন। অতএব এ কারণে ইসলাম এটাকে অপছন্দ করেছে। আর এ থেকে এটাও জানা যায় যে, ইয়াহূদীদের সকল কাজের বিরোধিতা করা উচিত। এমনকি চুল রাখার ক্ষেত্রেও। তবে কপালের উপরিভাগে যদি একগুচ্ছ চুল রাখা হয় এটাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা এটাতে ইয়াহূদীদের সামঞ্জস্যতা নেই। এছাড়া হাদীস থেকে আরো জানা যাচ্ছে যে, মাথার চুল রঙ করা ইয়াহূদীদের কাজ, ইসলামের সুন্নাত নয়। অতএব বাচ্চাদেরকে এ থেকে বিরত রাখা এবং তাদের মাথা মুণ্ডন করা উচিত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৯৩)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮৫-[৬৭] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীলোকের মাথা মুড়িয়ে ফেলতে নিষেধ করেছেন। (নাসায়ী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ- এর সনদে উল্টাপাল্টা (ইযত্বিরাব) আছে। এই উল্টাপাল্টা করেছে ‘হুমাম’ নামের বর্ণনাকারী। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ৬৭৮ নং, ২/১২৪ পৃঃ।
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تَحْلِقَ الْمَرْأَةُ رَأْسَهَا. رَوَاهُ النَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের মাথার চুল মুড়িয়ে ফেলতে নিষেধ করেছেন। কেননা পুরুষদের দাড়ি থাকলে যেমন সুন্দর লাগে তেমনি মেয়েদের মাথায় লম্বা চুল থাকলে সুন্দর লাগে। সুতরাং মেয়েদের কোন অবস্থাতেই চুল মুণ্ডন করা জায়িয নেই। এমনকি হজ্জ ও ‘উমরাহ্ থেকে হালাল হওয়ার ক্ষেত্রেও না। বরং তারা এক্ষেত্রে তাকসীর বা চুলের অগ্রভাগ থেকে সামান্য অংশ কর্তন করবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ৯১৪)
হাদীসের ভাষ্য থেকে বুঝা যায় যে, পুরুষদের জন্য মাথায় চুল মুণ্ডন করা জায়িয, এতে কোন মতবিরোধ নেই। এটা ‘আলী (রাঃ)-এর সুন্নাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত অনুসরণ করতে আদেশ করে বলেন- তোমাদের উচিত আমার সুন্নাত এবং সঠিক পথ প্রদর্শিত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা। অথবা আমরা বলতে পারি এটা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সরাসরি সুন্নাত নয়, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ সব সময় চুল মুণ্ডন করতেন না। কেবলমাত্র হজ্জ ও ‘উমরাহ্ শেষ করার পর চুল মুণ্ডন করতেন। সুতরাং মুণ্ডন করার অনুমতি আছে, এটাই গ্রহণযোগ্য মত (আল্লাহ ভালো জানেন)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮৬-[৬৮] ’আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ছিলেন। এ সময় দাড়ি চুলে এলোমেলো এক ব্যক্তি এলো, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দ্বারা তার প্রতি ইশারা করলেন, যেন তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন যে, সে যেন তার চুল দাড়ি ঠিক করে আসে। লোকটি তাই করল। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে ফিরে এলো। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কেউ শয়তানের মতো এলোমেলো চুলে আসতে, তা অপেক্ষা এখন যে অবস্থায় আছো তা কি উত্তম নয়! (মালিক)[1]
وَعَن عطاءِ بن يسارٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ فَدَخَلَ رَجُلٌ ثَائِرُ الرَّأْسِ وَاللِّحْيَةِ فَأَشَارَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ كَأَنَّهُ يَأْمُرُهُ بِإِصْلَاحِ شَعْرِهِ وَلِحْيَتِهِ فَفَعَلَ ثُمَّ رَجَعَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَيْسَ هَذَا خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ ثَائِرُ الرَّأْسِ كَأَنَّهُ شَيْطَان» . رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার মসজিদে অবস্থান করছিলেন, এমন সময় এলোকেশী এক লোক মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে হাতের ইঙ্গিতে মাথার চুল আঁচড়িয়ে ঠিক করতে বললেন। লোকটিকে হাতের ইঙ্গিতে মাথার চুল আঁচড়িয়ে ঠিক করতে বললেন। লোকটি এটা বুঝতে পেরে মসজিদ থেকে বেরিয়ে চুল ঠিক করে আবার তার নিকট ফিরে এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অথবা সাধারণভাবে সকলের উদ্দেশে বললেনঃ তোমাদের কেউ শয়তানের মতো এলোমেলো চুল নিয়ে প্রবেশ করার চেয়ে এটা উত্তম নয় কি? (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮৭-[৬৯] [সলিহ ইবনু আবূ হাসসান (রহিমাহুল্লাহ)] সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহিমাহুল্লাহ) হতে শুনেছেন। তিনি [সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহিমাহুল্লাহ)] বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকেই ভালোবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন, তাই পরিচ্ছন্নতাকেই পছন্দ করেন। তিনি দয়ালুও, তাই দয়া করাকে ভালোবাসেন। তিনি দাতা, তাই দানশীলতাকে পছন্দ করেন। সুতরাং তোমরা নিজেদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো। রাবী বলেন, সম্ভবতঃ ইবনু মুসাইয়্যাব বলেছেনঃ তোমাদের (ঘর-দুয়ার ও) আঙ্গিনাকে ইয়াহূদীদের মতো (অপরিচ্ছন্ন) রেখো না। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু মুসাইয়্যাব-এর বর্ণিত এ কথাগুলো আমি মুহাজির ইবনু মিসমার-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ অবিকল এ কথাগুলো আমাকে ’আমির ইবনু সা’দ তাঁর পিতার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি নিঃসন্দেহে বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের আঙ্গিনাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো। (তিরমিযী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘খালিদ ইবনু ইলইয়াস’’ য‘ঈফ রাবী। তার ব্যাপারে ইবনু হিব্বান বলেনঃ এ রাবী বিশ্বস্ত রাবীদের নিকট থেকে হাদীস জাল করত। কাজেই এ ব্যক্তি হাদীস জালকারী। ইমাম বুখারী বলেনঃ সে মুনকারুল হাদীস কোন কিছুই না। ইমাম নাসায়ী বলেন যে, মাতরূকুল হাদীস। বিস্তারিত দেখুন- তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/৬৮, হাঃ ২৭৯৯।
وَعَن ابنِ الْمسيب سُمِعَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ يُحِبُّ الطِّيبَ نَظِيفٌ يُحِبُّ النَّظَافَةَ كَرِيمٌ يُحِبُّ الْكَرَمَ جَوَادٌ يُحِبُّ الْجُودَ فَنَظِّفُوا أُرَاهُ قَالَ: أَفْنِيَتَكُمْ وَلَا تشبَّهوا باليهود
قَالَ: فذكرتُ ذَلِك لمهاجرين مِسْمَارٍ فَقَالَ: حَدَّثَنِيهِ عَامِرُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ إِلَّا أَنَّهُ قَالَ: «نَظِّفُوا أَفْنِيتَكُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত এবং পবিত্র। তিনি পবিত্রতা তথা উত্তম অবস্থা উত্তম কথা, বান্দার সুগন্ধি মাখা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ‘আমল পছন্দ করেন। তিনি পরিষ্কার, তাই পরিষ্কারকে পছন্দ করেন। তিনি দয়ালু, দয়া এবং দান-খয়রাতকে পছন্দ করেন। সুতরাং তোমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাক।
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বাক্যে "ف" (ফা) অব্যয়টি বুঝাচ্ছে এটা উহ্য একটি শর্তের জবাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তা হচ্ছে : যখন এটা প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহ পবিত্রতাকে পছন্দ করেন, তখন তোমরা যথাসম্ভব পবিত্রতা বজায় রাখবে এবং তোমাদের বাড়ীর আঙিনাকে পরিষ্কার করে রাখবে। এতে বুঝা যায় যে, প্রকৃতপক্ষই সে মেহমানদারীতে পছন্দ করে। কেননা বাড়ীর আঙিনা পরিষ্কার দেখেই বুঝা যায় তার বাড়ীতে মেহমানের আগমন ঘটেছিল।
সালিহ ইবনু আবূ হাসসান বলেনঃ আমার মনে হয় সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব বলেছেনঃ তোমাদের বাড়ীর আঙিনা এবং ঘরের দরজা জানালা পরিষ্কার করে রাখবে এবং ইয়াহূদীদের সাথে সামঞ্জস্য রাখবে না। অর্থাৎ কৃপণতাবশতঃ আতর সুগন্ধি ব্যবহার না করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা ত্যাগ করে ইয়াহূদীদের মতো হয়ো না। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৯৯)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮৮-[৭০] ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন : আল্লাহর বন্ধু ইব্রাহীম খলীল (আ.) -ই প্রথম মানুষ যিনি মেহমানের আতিথেয়তা করেছেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি খৎনা করেছেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি গোঁফ কেটেছেন। আর তিনিই প্রথম মানুষ যিনি চুল সাদা হতে দেখেছেন। তখন তিনি বলে উঠলেন : হে প্রভু! এটা কি? মহান আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে ইব্রাহীম! এটা মর্যাদার প্রতীক। তখন ইব্রাহীম (আ.) প্রার্থনা করলেন : হে প্রভু! আমার মর্যাদাকে আরো বৃদ্ধি করে দাও। (মালিক)[1]
وَعَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّهُ سَمِعَ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ يَقُولُ: كَانَ إِبْرَاهِيمُ خَلِيلُ الرَّحْمَنِ أوَّلَ النَّاس ضيَّف الضَّيْف وَأَوَّلَ النَّاسِ اخْتَتَنَ وَأَوَّلَ النَّاسِ قَصَّ شَارِبَهُ وَأَوَّلَ النَّاسِ رَأَى الشَّيْبَ فَقَالَ: يَا رَبِّ: مَا هَذَا؟ قَالَ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: وَقَارٌ يَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ: رَبِّ زِدْنِي وَقَارًا. رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যাঃ ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব-কে বলতে শুনেছেন : ইবরাহীম খলীলুর রহমান সর্বপ্রথম মেহমানের জন্য মেহমানদারী করেছেন। আর তিনিই মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম খৎনা করেছেন। কেননা ইতিপূর্বে সমস্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খৎনা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন। আর সর্বসাধারণের জন্য তখনো খৎনা করার আদেশ দেয়া হয়নি। যখন থেকে ইবরাহীম (আ.) খৎনা করলেন তখন থেকে এটা সমস্ত মানুষের জন্য সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত হল। তবে তারা ব্যতীত যারা খৎনা অবস্থায়ই জন্মগ্রহণ করেছে। তিনিই সর্বপ্রথম গোফ কেটে ছোট করেছেন। এটা এ কারণে যে, হতে পারে তার পূর্বের লোকেদের গোফ বেশী লম্বা হতো না। শুধু তাঁরই লম্বা গোফ হয়েছিল, তাই কেটেছেন। অথবা পূর্বের লোকেরা গোফের পূজা করতো না। অথবা এটাও হতে পারে যে, তিনি বেশী করে কেটে ছোট করেছেন যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তী লোকেরা তার অনুসরণ করেছে। তিনি প্রথম লোক যিনি মাথায় সাদা চুল দেখেছেন এবং আল্লাহকে প্রশ্ন করেছেন- হে প্রভু! এটা কি? আল্লাহ তা‘আলা জবাব দিলেন, হে ইবরাহীম! এটা মর্যাদার প্রতীক অর্থাৎ সাদা চুল প্রকাশ পাওয়া মানে তার জ্ঞানের পরিপক্কতা আসা এবং সকল কাজে ধিরস্থিরতা আসার যা ধৈর্য, সহিষ্ণুতা এবং ক্ষমার মতো মহৎগুণের সমাবেশ ঘটায়। তিনি আল্লাহ তা‘আলাকে বললেন- হে আল্লাহ! আমার মর্যাদাকে আরো বাড়িয়ে দাও। (ইমাম মুওয়াত্ত্বা হাদীসটি বর্ণনা করেন)
‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) মুওয়াত্ত্বা কিতাবের হাশিয়াতে উল্লেখ করেছেন, ইব্রাহীম (আ.) সর্বপ্রথম মানুষ যিনি তার নখ কর্তন করেছেন এবং প্রথম মানব যিনি চুল আঁচড়িয়েছেন এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করে চেছে ফেলেছেন, পায়জামা পরিধান করেছেন, দাড়ির পাকা চুলকে মেহেদী ও কাতামের মাধ্যমে খিযাব করেছেন এবং প্রথম মিম্বারে খুত্ববাহ্ দিয়েছেন এবং সর্বপ্রথম আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছেন এবং সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যবাহিনীকে সুবিন্যস্ত করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)