পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৮৯-[১] আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সে ঘরে প্রবেশ করেন না যাতে কুকুর রয়েছে এবং সে ঘরেও না যাতে আছে (প্রাণীর) ছবি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
عَن أبي طَلْحَة قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا تصاوير»
ব্যাখ্যাঃ (لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ) মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করে না অর্থাৎ রহমাতের মালাক হিফাযাতকারী এবং মৃত্যু মালাক নয়, কেননা তারা সার্বক্ষণিক কাজের জন্য আদিষ্ট এবং তারা সর্বদা দায়িত্ব রত থাকেন।
(بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ) যে বাড়ীতে কুকুর আছে। এখানে বাড়ী বলতে বুঝায়, যে জায়গায় মানুষ বসবাস করে, তা ঘর হোক বা তাঁবু হোক অথবা অন্য কিছু। কুকুর বলতে সব ধরনের কুকুর উদ্দেশ্য। কেননা হাদীসের বর্ণনায় অনির্দিষ্টভাবে কুকুর কথাটি এসেছে, তবে ইমাম খত্ত্বাবী এবং একদল ‘আলিমের মতে উক্ত বিধান হতে ঐ সমস্ত কুকুরকে আলাদা করা হয়েছে যাদের থাকার ব্যাপারে শারী‘আতে অনুমতি আছে। তা হচ্ছে শিকারী কুকুর, পশু চারণ এবং কৃষি খামারে নিয়োজিত কুকুর। কিন্তু ইমাম খত্ত্বাবীর নিকট গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে বাড়ীতে যে কোন ধরনের কুকুর রাখা নিষেধ।
(وَلَا تصاوير) এবং মালাক ঐ গৃহেও প্রবেশ করে না যেখানে ছবি আছে। ছবি বলতে সব ধরনের প্রাণীর ছবি উদ্দেশ্য। ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে ছবির কারণে বাড়ীতে মালাক প্রবেশ করে না, তা হলো যা শখের বশত সংরক্ষণ করা হারাম। আর তা হচ্ছে যে সমস্ত প্রাণীর জীবন আছে এমন প্রাণীর ছবি যার মাথা কেটে দেয়া হয়নি। অথবা যা অবহেলিত হয়নি বিছানা এবং বালিশের স্বভাবে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমার নিকট গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, যে কোন কুকুর এবং ছবি থাকলেই ঘরে মালাক প্রবেশ করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাটের নীচে একটি কুকুর ছানা মরে থাকায় জিবরীল (আ.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করেনি। অথচ এক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওজর ছিল। তিনি জানতেন না। এতদসত্ত্বেও জিবরীল (আ.) গৃহে প্রবেশ করেননি। কারণ ঘরে কুকুর ছিল। ঘরে মালাক প্রবেশ না করার কারণ হচ্ছে কোন প্রাণীর ছবি থাকা। কেননা ছবির মাধ্যমে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ‘ইবাদাত করা হয়। আর কুকুর থাকলে মালাকের ঘরে প্রবেশ না করার কারণ হলো- সে অপবিত্র জিনিস খায়। আবার কোন কোন কুকুরকে শয়তান বলা হয়েছে। যেহেতু মালাক হচ্ছে শয়তানের বিপরীত। তাই যারা কুকুর শখ করে পালন করে তাদের শাস্তি হিসেবে তাদের ঘরে মালাক প্রবেশ করে না এবং তাদের জন্য রহমাতের দু‘আ করে না। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৪৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯০-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) মায়মূনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিন্তিত অবস্থায় ভোর করলেন এবং বললেনঃ জিবরীল (আ.) এ রাত্রে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে ওয়া’দা করেছিলেন, কিন্তু সাক্ষাৎ করেননি। আল্লাহর কসম! তিনি তো কখনো আমার সাথে কথা দিয়ে খেলাফ করেননি। অতঃপর তাঁর মনে পড়ল ঐ কুকুর ছানাটির কথা, যা তাঁর তাঁবুর নিচে ছিল। তখনই তিনি তাকে ঐখান থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। এরপর তাকে বের করে দেয়া হলো। অতঃপর কুকুরটি যে জায়গায় বসা ছিল, তিনি সে জায়গায় কিছু পানি নিজ হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিলেন। পরে যখন বিকাল হলো জিবরীল (আ.) তার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ গত রাত্রে আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করার ওয়া’দা করেছিলেন। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু আমরা এমন ঘরে প্রবেশ করি না যে ঘরে কুকুর বা ছবি থাকে। পরের দিন সকালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত কুকুর মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিলেন। এমনকি ছোট ছোট বাগানের কুকুরগুলোকেও মারার হুকুম দিলেন তবে বড় বড় বাগানের কুকুরগুলোকে ছেড়ে দেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَن ابنِ عبَّاسٍ عَنْ مَيْمُونَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أصبحَ يَوْمًا واجماً وَقَالَ: «إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ وَعَدَنِي أَنْ يَلْقَانِيَ اللَّيْلَةَ فَلَمْ يَلْقَنِي أَمَ وَاللَّهِ مَا أَخْلَفَنِي» . ثُمَّ وَقَعَ فِي نَفْسِهِ جِرْوُ كَلْبٍ تَحْتَ فُسْطَاطٍ لَهُ فَأَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ ثُمَّ أَخَذَ بيدِه مَاء فنضحَ مَكَانَهُ فَلَمَّا أَمْسَى لقِيه جِبْرِيلَ فَقَالَ: «لَقَدْ كُنْتَ وَعَدْتَنِي أَنْ تَلْقَانِي الْبَارِحَةَ» . قَالَ: أَجَلْ وَلَكِنَّا لَا نَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا صُورَةٌ فَأَصْبَحَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَئِذٍ فَأَمَرَ بِقَتْلِ الْكلاب حَتَّى إِنه يَأْمر بقتل الْكَلْب الْحَائِطِ الصَّغِيرِ وَيَتْرُكُ كَلْبَ الْحَائِطِ الْكَبِيرِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (أصبحَ يَوْمًا واجمًا) একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুষে চিন্তিত, ব্যথিত ও চুপচাপ উপনীত হলেন। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, তা দেখে মায়মূনাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আজকের মতো চিন্তিত অবস্থায় আপনাকে আর কোন দিন দেখিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ জিবরীল (আ.) আজ রাতে আমার সাথে দেখা করার ওয়া‘দা করেছিলেন কিন্ত দেখা করেননি। আল্লাহর কসম, তিনি কখনো আমার সঙ্গে ওয়া‘দা ভঙ্গ করেননি।
এ প্রসঙ্গে ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার সঙ্গী অথবা অন্য কাউকে চিন্তিত ও ব্যথিত হতে দেখলে তার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া মুস্তাহাব এবং যথাসম্ভব তাকে সহযোগিতা করা উচিত অথবা তার সাথে ব্যথিত হওয়া উচিত অথবা তার সেই অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় দেখিয়ে দেয়া এবং আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সতর্ক থাকা। এটা কোন শর্তসাপেক্ষে স্থগিত হয়ে যেতে পারে। অথবা মনে হতে পারে এটা কোন সময়সাপেক্ষ অথচ তা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত নয় ইত্যাদি। আর এ হাদীসে আরো শিক্ষণীয় হচ্ছে : যদি মানুষের কোন কাজ বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে তার কারণ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা, যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদীসের চিন্তা ভাবনা করে খাটেব নীচ থেকে কুকুরের বাচ্চা বের করেছিলেন। যেমনভাবে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরাহ্ আল আ‘রাফ-এ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ
‘‘যারা তাকওয়া অবলম্বন করে শয়তানের স্পর্শে তাদের মনে কুমন্ত্রণা জাগলে তারা আল্লাহ্কে স্মরণ করে, তখন তাদের ঈমান-চক্ষু খুলে যায়।’’ (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ : ২০১)
(ثُمَّ وَقَعَ فِي نَفْسِه جِرْوُ كَلْبٍ) অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মনে হলো জিবরীল (আ.)-এর না আসার কারণ হলো এই কুকুরের ছানাটি যা খাটের নীচে মরে ছিল। তখন তিনি উক্ত কুকুর ছানাকে বের করার আদেশ দিলেন এবং তা বের করে আনা হলো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে পানি নিয়ে উক্ত স্থানে পানি ছিটিয়ে হালকাভাবে ধুয়ে দিলেন। এরপর রাত হলে জিবরীল (আ.) আগমন করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপনি গত রাতে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ওয়া‘দা করেছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু আমরা সেই ঘরে প্রবেশ করি না যেখানে কুকুর এবং প্রাণীর ছবি থাকে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি দিয়ে নিজ হাতে কুকুরের জায়গাটি পরিষ্কার করেছিলেন। এখান থেকেই একদল ‘আলিম বলেন, কুকুর নাপাক। কারণ হলো স্থানটিতে পানি ছিটানো এবং ধৌত করা। মালিকীগণ বলে থাকেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত স্থানে কুকুরের পেশাব পায়খানার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বিধায় ধৌত করে ছিলেন।
(فَأَصْبَحَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَئِذٍ فَأَمَرَ بِقَتْلِ الْكلاب) সকাল হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল স্থানের সকল কুকুরকে মেরে ফেলতে আদেশ দিলেন, এমনকি তিনি ছোট ছোট বাগানের কুকুরগুলোকেও মেরে ফেলতে বললেন যেহেতু ছোট বাগানে পাহারা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে বড় বড় বাগানের কুকুর ছেড়ে দিতে বলেছেন যেহেতু কুকুর ছাড়া বড় বাগান পাহারা দেয়া কষ্টকর। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১০৫/৮২)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯১-[৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় গৃহে (প্রাণীর) ছবিযুক্ত কোন জিনিসই রাখতেন না; বরং তা ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَتْرُكُ فِي بَيْتِهِ شَيْئًا فِيهِ تَصَالِيبُ إِلَّا نَقَضَهُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ (لَمْ يَكُنْ يَتْرُكُ فِي بَيْتِه شَيْئًا فِيهِ تَصَالِيبُ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ীতে যে কোন প্রকার ছবি রাখতেন না বরং তা ভেঙে ফেলতেন বা তা নিশ্চিহ্ন করে ফেলতেন। হাদীসে উল্লেখিত تَصَالِيبُ এর অর্থ تَصاوير (ছবিসমূহ)। (إِلَّا نَقَضَهٗ) উহা মুছে ফেলতেন অথবা কেটে বলতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯২-[৪] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন তিনি একটি গদি (আসন) ক্রয় করলেন। তাতে প্রাণীর অনেকগুলো ছবি ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখলেন, দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন, ঘরে প্রবেশ করলেন না। আমি তাঁর চেহারায় ঘৃণার ভাব দেখতে পেলাম। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি (আমার গুনাহের জন্য) আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর কাছে তওবা্ করছি। বলুন তো, আমি কি অপরাধ করেছি? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ গদিটি কেন? আমি বললামঃ আপনার বসার এবং বিছানা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আমি কিনেছি। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সমস্ত ছবি যারা তৈরি করেছে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যা তোমরা বানিয়েছ তাতে জীবন দান করো, অতঃপর বললেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কখনো এমন ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে (প্রাণীর) ছবি থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنْهَا أَنَّهَا اشْتَرَتْ نُمْرُقَةً فِيهَا تَصَاوِيرُ فَلَمَّا رَآهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ عَلَى الْبَابِ فَلَمْ يَدْخُلْ فَعَرَفْتُ فِي وَجْهِهِ الْكَرَاهِيَةَ قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أتوبُ إِلى الله وإِلى رَسُوله مَا أذنبتُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا بَالُ هَذِهِ النُّمْرُقَةِ؟» قُلْتُ: اشْتَرَيْتُهَا لَكَ لِتَقْعُدَ عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ . وَقَالَ: «إِنَّ الْبَيْتَ الَّذِي فِيهِ الصُّورَةُ لَا تدخله الْمَلَائِكَة»
ব্যাখ্যাঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তিনি ছোট একটি গদি ক্রয় করেছিলেন যাতে প্রাণীর ছবি অংকিত ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ীতে প্রবেশকালে যখন তা দেখতে পেলেন। তিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন প্রবেশ করলেন না।
(فَعَرَفْتُ فِي وَجْهِهِ الْكَرَاهِيَةَ) আমি তার চেহারায় অপছন্দের ছাপ (রাগ) দেখতে পেলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তাওবাহ্ করছি এবং আল্লাহ ও তার রসূলের সন্তুষ্টি কামনা করছি। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর উত্তম শিষ্টাচারের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, ফলে অপরাধ বুঝার আগেই তাওবাহ্ করে ফেলেছেন।
(مَا أذنبتُ) আমি বুঝতে পারিনি যে, কিসে গুনাহের কাজ হল? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ চাদরটি এখানে কেন? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য ক্রয় করেছি যাতে আপনি তাতে বসতে পারেন এবং বালিশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। (‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তখনো অপছন্দের সঠিক কারণ জানতে পারেননি, তিনি ধারণা করেছেন সম্ভবত তা বাড়ীর কারুকাজ বর্ধিত করেছে সেজন্য তিনি অপছন্দ করেছেন। মূলত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছবির কারণে রাগ করেছিলেন।’’
(فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِنَّ أَصْحَابَ هٰذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ") অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয় এ ছবি অঙ্কনকারীদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি প্রদান করা হবে এবং বলা হবে, তোমরা যা তৈরি করেছ তাকে জীবন দান কর। কেননা তারা ছবি তৈরির মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির সামঞ্জস্য বিধান করেছে। ফলে তাদের অক্ষমতা প্রমাণ করতেই আল্লাহ জীবিত করার আদেশ করবেন।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, ছবি অঙ্কন করা হারাম এবং তা ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ। কেননা তাতে কঠিন শাস্তিত রয়েছে এবং দুনিয়ার সাজসজ্জা রয়েছে।
(وَقَالَ: إِنَّ الْبَيْتَ الَّذِىْ فِيهِ الصُّورَةُ) এবং তিনি আরো বলেন, যে বাড়ীতে/ঘরে ছবি থাকে সেই বাড়ীতে/ঘরে মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করে না। হাদীস থেকে আরো জানা যায় যে, বাড়ীতে যে কোন ধরনের ছবি (যার রূহ আছে এবং যার রূহ নেই) এবং যে কোন স্থানে (প্রবেশদ্বারে বা চলালের রাস্তায় বা ঘরে) সাজিয়ে রাখা নিষেধ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯৩-[৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন তিনি ঘরের জানালায় একটি পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তাতে ছিল প্রাণীর প্রতিকৃতি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ছিঁড়ে ফেললেন। অতঃপর তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] সে কাপড়ের খন্ড দ্বারা দু’টি বালিশ বানিয়ে নিলেন এবং তা ঘরের মধ্যেই ছিল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে হেলান দিয়ে বসতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وعنها أَنَّهَا كَانَت عَلَى سَهْوَةٍ لَهَا سِتْرًا فِيهِ تَمَاثِيلُ فَهَتَكَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاتَّخَذَتْ مِنْهُ نُمرُقتين فكانتا فِي الْبَيْت يجلسُ عَلَيْهِم
ব্যাখ্যাঃ (أَنَّهَا كَانَت عَلَى سَهْوَةٍ لَهَا سِتْرًا) তিনি তার [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] নিচু জমিতে তৈরি ছোট একটি বাড়ীতে পর্দা লাগিয়ে ছিলেন যাতে প্রাণীর ছবি অংকিত ছিল।
(فَهَتَكَهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খুলে ফেললেন এবং ছিঁড়ে ফেলে দিলেন। অতঃপর তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] তা দ্বারা দু’টি চাদর তৈরি করে বাড়ীতে রেখে দিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ দু’টিতে বসতেন।
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যদি প্রশ্ন করা হয় এ হাদীস এবং পূর্ববর্তী হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান কিভাবে সম্ভব? তাহলে এর উত্তর হচ্ছে, হয়তো উক্ত পর্দায় কোন নিষিদ্ধ প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা ছিল না তথাপি তিনি ছিঁড়ে ফেলেছেন। যেহেতু এ অধ্যায়ের পরবর্তী হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পাথর এবং মাটিকে পরিধান করাতে আদেশ দেননি। অথবা যদি প্রাণীর ছবি ধরা হয় তাহলে তা খুলে প্রাণীর মাথা মুছে ফেলে চাদর তৈরি করে ব্যবহার করা যাবে সেই অর্থে প্রয়োজ্য হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯৪-[৬] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক যুদ্ধে রওয়ানা হয়ে গিয়েছেন। আর আমি (তাঁর অবর্তমানে) একখানা কাপড় নিয়ে পর্দাস্বরূপ ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। যখন তিনি সফর শেষে ফিরে এলেন এবং পর্দাটি দেখলেন, তখন এটা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। অতঃপর বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এ আদেশ করেননি যে, আমরা ইট ও পাথরকেও যেন কাপড়-চোপড় পরিধান করাই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ فِي غَزَاةٍ فَأَخَذَتْ نَمَطًا فَسَتَرَتْهُ عَلَى الْبَابِ فَلَمَّا قَدِمَ فَرَأَى النَّمَطَ فَجَذَبَهُ حَتَّى هَتَكَهُ ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَأْمُرْنَا أَنْ نَكْسُوَ الْحِجَارَةَ وَالطِّينَ»
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একটি ধর্ম যুদ্ধে বের হলে আমি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] উটের পিঠের পালানে ব্যবহৃত একটি কাপড়কে ঘরের দরজার পর্দা হিসেবে লাগাই। তিনি ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করে উক্ত পর্দার কাপড়টি দেখতে পেয়ে টেনে নামিয়ে ফেলেন এবং বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আদেশ করেননি যে, আমরা পাথর এবং মাটিকে পরিধান করাই। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উক্ত কাপড়টিতে পাখা বিশিষ্ট ঘোড়ার ছবি ছিল, তাই তিনি ছবি নষ্ট করে দিলেন এবং তা দ্বারা বুঝালেন যে, এটা বালিশ বা বসার জন্য ব্যবহার করা বৈধ। আর দেয়ালকে ঢেকে রাখা নিষেধ দ্বারা মাকরূহ বা অপছন্দনীয় কাজ বুঝিয়েছেন যা হারাম নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯৫-[৭] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন ’আযাব ভোগ করবে এমন সব লোক যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যতা করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخلق الله»
ব্যাখ্যাঃ (أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ...) কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে তাদেরকে যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্য কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করে।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের মর্ম হচ্ছে- তারা এমন কাজ করে যাতে আল্লাহর সৃষ্টি তথা মাখলূকাতের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে, অথবা তাদের ছবি অঙ্কনের মাধ্যমে আল্লাহর কর্মের সাথে সামঞ্জস্য হয়।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যদি তারা এই ‘আক্বীদাহ্ পোষন করে যে, তাদের কর্ম আল্লাহর কর্মের মতই, তাহলে তারা কাফির। তাদের জঘন্য কুফরী কর্মের বৃদ্ধির জন্য শাস্তিও বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। নতুবা হাদীসের মর্ম হবে ধমকী প্রদান করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯৬-[৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আমার সৃষ্টির মতো করে যে ব্যক্তি (কোন প্রাণী) সৃষ্টি করতে যায়, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে? তারা একটি পিঁপড়া বা শস্যদানা কিংবা একটি যব সৃষ্টি করুক তো দেখি? (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ بِخلق كخلقي فلْيخلقوا ذَرَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوا حَبَّةً أَوْ شَعِيرَةً
ব্যাখ্যাঃ (وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ بِخلق كخلقي...) তার চেয়ে বড় যালিম আর কেউ নেই, যে তার সৃষ্টি কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর কর্মের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে। (যদি তারা তাই মনে করে থাকে) তাহলে তারা যেন ছোট একটি পিপড়া সৃষ্টি করে দেখায় অথবা একটি গম অথবা যব তৈরি করে দেখায়। মূলত এটা তাদের অক্ষমতার বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ। ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ হাদীস থেকে বুঝাতে চেয়েছেন, ছবি বলতে সব ধরনের ছবি অন্তর্ভুক্ত, যার ছায়া আছে এবং যার ছায়া নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৫৩)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯৭-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে ছবি প্রস্তুতকারীদের। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ المصوِّرون»
ব্যাখ্যাঃ (أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ المصوِّرون) কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে ছবি অঙ্কনকারীদেরকে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসটি সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যারা মূর্তির ছবি অঙ্কন করে এবং তার পূজা করে। তারা কাফির হওয়ার কারণে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। অথবা যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাজস্য বিধান করতে সক্ষম মনে করে অথবা এটাতে বিশ্বাসী হয় তারাও কাফির এবং তাদের শাস্তিও হবে কঠিন। কিন্তু যারা ছবি অঙ্কন করে কিন্তু তাতে উক্ত দু’টি উদ্দেশ্য থাকবে না তারা ফাসিক বা পাপাচারী। এ কারণে তারা কাফির হবে না, যেমনটি অন্যান্য পাপ কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯৮-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক ছবি প্রস্তুতকারী জাহান্নামী। সে যতগুলো ছবি তৈরি করেছে (কিয়ামতের দিন) সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান করা হবে এবং জাহান্নামের শাস্তি দেয়া হবে। ইবনু ’আব্বাস বলেন, যদি তোমাকে একান্তই ছবি তৈরি করতে হয়, তাহলে গাছ-গাছড়া এবং এমন জিনিসের ছবি তৈরি কর যার মধ্যে প্রাণ নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَيُعَذِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ» . قَالَ ابْن عَبَّاس: فَإِن كنت لابد فَاعِلًا فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لَا رُوحَ فِيهِ
ব্যাখ্যাঃ (كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ) প্রতিটি প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারী জাহান্নামী। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রতিটি অঙ্কনকৃত ছবির মধ্যে জীবন প্রদান করা হবে আর তা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দিবে। অথবা প্রতিটি ছবির পরিবর্তে একজন লোক নিয়োগ করা হবে যা তাকে জাহান্নামের শাস্তি দিবে। ইবনু ‘আব্বাস বলেনঃ সে যদি কোন প্রাণীর ছবি কেউ আঁকতেই চায় তাহলে যেন কোন বৃক্ষ অথবা যার প্রাণ নেই এমন জিনিসের ছবি আঁকে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা হারাম। আর তার ভয়াবহতা কঠিন, তবে কোন বৃক্ষ অথবা যার কোন প্রাণ নেই এমন ছবি অঙ্কন করা হারাম নয়, তা কোন ফলদায়ক বৃক্ষ হোক বা ফলদায়ক না হোক। এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মত কিন্তু মুজাহিদ এ মতের বিরোধী। তার মতে ফলদায়ক বৃক্ষের ছবি অঙ্কন করাও হারাম। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১১১/১০১)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯৯-[১১] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি এমন স্বপ্নের কথা বর্ণনা করবে, যা সে দেখেনি, তাকে (কিয়ামতের দিন) দু’টি যবের বীজে গিঁট লাগানোর জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে কিছুতেই গিঁট লাগাতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি অন্য লোকেদের আলোচনা কান পেতে শুনবে, অথচ তারা এ ব্যক্তির শোনাটা পছন্দ করে না অথবা তারা এ ব্যক্তি হতে দূরে থাকতে চায়, কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত সীসা ঢেলে দেয়া হবে। আর যে লোক (কোন প্রাণীর) ছবি তৈরি করবে, তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং এগুলোতে প্রাণ দান করার জন্য বাধ্য করা হবে, অথচ সে কিছুতেই প্রাণ ফুঁকতে পারবে না। (বুখারী)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ كُلِّفَ أَنْ يَعْقِدَ بَيْنَ شَعِيرَتَيْنِ وَلَنْ يَفْعَلَ وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ أَوْ يَفِرُّونَ مِنْهُ صُبَّ فِي أُذُنَيْهِ الْآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ صَوَّرَ صُورَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا وَلَيْسَ بِنَافِخٍ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ كُلِّفَ...) যে ব্যক্তি স্বপ্নে কোন কিছু না দেখেও মিথ্যা স্বপ্নের দাবী করবে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে যতক্ষণ না সে দু’টি যবের দানা একত্রে জোড় লাগাতে সক্ষম হবে। আর বাস্তবে তা করতে সক্ষম হবে না, যার ফলশ্রুতিতে তার শাস্তি অনবরত চলতেই থাকবে।
‘আল্লামা ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে তাবারীর বরাতে বলেন, জাগ্রত অবস্থায় মিথ্যা বলার পরিণতি কখনো ভয়াবহ হতে পারে। যেমন কাউকে হত্যা বা শাস্তি প্রয়োগ অথবা কারো মাল চুরির মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান। কিন্তু এর চেয়ে আরো কঠোর শাস্তি হবে যদি স্বপ্নে কোন কিছু না দেখেই আল্লাহর নামে মিথ্যা বানিয়ে বলে। যেহেতু হাদীসে এসেছে, الرُّؤْيَا جُزْءٌ مِنَ النُّبُوَّةِ সত্য স্বপ্ন হচ্ছে নুবুওয়াতের অংশ, আর যা নুবুওয়াতের অংশ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
(وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلٰى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهٗ كَارِهُونَ) যারা কারো অপছন্দ সত্ত্বেও তাদের কথা শ্রবণ করবে অথবা কেউ তাদের কথা যেন না শুনে সেজন্য দূর গিয়ে কথা বলে তা সত্ত্বেও কেউ যদি সে কথা শুনার চেষ্টা করে কিয়ামতের দিন তাদের কানে শিসা গলিয়ে ঢেলে দেয়া হবে। এই কঠোর শাস্তির বিধান তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যারা আড়ি পেতে অন্যের কথা শুনে চোগলখোরী করবে এবং ফিতনা ছড়াবে। কিন্তু যারা অন্যের কথায় আড়ি পেতে তাদের চক্রান্ত এবং ফিতনা থেকে মানুষকে সতর্ক রাখার উদ্দেশ্য রাখবে তাদের ক্ষেত্রে কঠোরতা প্রযোজ্য হবে না। এমনিভাবে যারা প্রকাশ্যে কোন কথা বলে আর অন্যেরা সহজেই তা শুনে ফেলে সে ক্ষেত্রে শ্রোতার কোন অপরাধ হবে না। কেননা তারা এক্ষেত্রে কেউ শুনাতে তাদের অপছন্দ করেনি।
(وَمَنْ صَوَّرَ صُورَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا) যারা কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করবে ক্বিয়ামাতে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হবে এবং ঐ প্রাণীতে জীবন দিতে বলা হবে। না দেয়া পর্যন্ত তাদের শাস্তি চলতেই থাকবে। যদিও তারা সক্ষম হবে না তথাপি তাদেরকে এই আদেশ করা হবে। তাদের অপারগতা প্রমাণ করার জন্য।
এ হাদীসটি তিনটি বিধানকে অন্তর্ভুক্ত করেছে যেগুলো সম্পাদন করা হারাম।
১. স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যা কথা বানিয়ে বলা
২. যারা অন্যকে শুনিয়ে কথা বলতে অপছন্দ করে তথাপি কেউ তাদের কথা আড়ি পেতে শুনে।
৩. কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৭০৪২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০০-[১২] বুরয়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলল, সে যেন তার হাতকে শূকরের রক্ত-মাংস দ্বারা রঞ্জিত করল। (মুসলিম)[1]
بَابُ التَّصَاوِيرِ
وَعَنْ بُرَيْدَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِي لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ...) যে ব্যক্তি নারদাশীর খেলবে সে যেন তার হস্তকে শুকরের রক্ত মাংসে রঞ্জিত করে। অপবিত্র প্রাণীর রক্ত মাংসে হাতকে রঞ্জিত করার কথা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে যাতে এ খেলায় মানুষের আগ্রহ না থাকে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি ইমাম শাফি‘ঈ এবং অধিকাংশ (জামহূর) ‘আলিমের মতে নারদ খেলা হারাম হওয়ার স্বপক্ষে দলীল। ইমাম মুনযিরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমের মতে নারদ খেলা হারাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)