পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০৮-[১৭] সখর ইবনু ওয়াদা’আহ্ আল গামিদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করেনঃ হে আল্লাহ! আমার উম্মাতকে ভোরে বরকত ও প্রাচুর্য দান কর। রাবী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখনই কোনো ছোট বা বড় সেনাদল পাঠাতেন, তখন তা দিনের প্রথমাংশেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী সখর একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। সুতরাং তিনিও তার ব্যবসা-বাণিজ্যের মালামাল দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। ফলে তিনি প্রচুর ধনবান ও সম্পদশালী হয়েছিলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]
عَن صخْرِ بن وَداعةَ الغامِديِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا» وَكَانَ إِذا بعثَ سريَّةً أوْ جَيْشًا بَعَثَهُمْ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ وَكَانَ صَخْرٌ تَاجِرًا فَكَانَ يَبْعَثُ تِجَارَتَهُ أَوَّلَ النَّهَارِ فَأَثْرَى وَكَثُرَ مالُه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد والدارمي
ব্যাখ্যা: فَلَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ قَالَ لِىْ : اُدْخُلِ الْمَسْجِدَ فَصَلِّ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ (জাবির বলেন) আমরা যখন মদীনায় আগমন করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন মসজিদে প্রবেশ করে সেখানে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করো। অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মুসাফিরের জন্য বাড়ীতে প্রবেশ করার আগে মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০৯-[১৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রাতে সফরে বের হও। কেননা রাতের বেলায় জমিন সংকুচিত হয়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكُمْ بِالدُّلْجَةِ فَإِنَّ الْأَرْضَ تُطوَى بالليلِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘‘তোমরা রাতে ভ্রমণ কর, কেননা রাতে জমিনকে সংকুচিত করা হয়’’। ‘আল্লামা মুযহির (রহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো তোমরা শুধু দিনে ভ্রমণ করেই তুষ্ট থেকো না বরং রাত্রেও সফর করবে। কেননা রাত্রের সফর সহজ। কারণ ভ্রমণকারী ধারণা করে যে, সে অল্প রাস্তা অতিক্রম করেছে, প্রকৃতপক্ষে সে অল্প সময়ে অনেক রাস্তা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৬৮)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১০-[১৯] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন আরোহী (সফরকারী) এক শায়ত্বন, দু’জন আরোহী দুই শায়ত্বন, কিন্তু তিনজন হলো একটি পরিপূর্ণ জামা’আত। (মালিক, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ وَالثَّلَاثَةُ رَكبٌ» . رَوَاهُ مالكٌ وَالتِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ) ‘‘একা ভ্রমণকারী আরোহী শায়ত্বন’’। ‘আল্লামা মুযহির (রহঃ) বলেনঃ অর্থাৎ- একা একা ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে দু’জন ভ্রমণকারী দু’টো শায়ত্বন। আর যে ব্যক্তি নিষিদ্ধ কাজ করে সে শায়ত্বনের আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি শায়ত্বনের আনুগত্য করে সে যেন নিজেই একটি শায়ত্বন। এজন্যই একা ভ্রমণকারীকে শায়ত্বন বলা হয়েছে।
ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ একা ভ্রমণকারী ব্যক্তি যদি সফরে মারা যায় তাহলে তার নিকট এমন কোনো ব্যক্তি উপস্থিত পাওয়া যাবে না যে, তাকে গোসল দেয়াবে এবং দাফন করবে। আর তার নিকট এমন ব্যক্তিও পাওয়া যাবে না যার নিকট তার মাল সম্পর্কে ওয়াসিয়্যাত করতে পারে এবং সফরে তার রেখে যাওয়া মাল তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দিতে পারে এবং তার সংবাদ তার পরিবারের নিকট পৌঁছাতে পারে। আর যদি সফরে তিনজন একত্রে থাকে তাহলে পরস্পরে তাদের কাজে সহযোগিতা করতে পারবে এবং জামা‘আত সহকারে সালাত আদায় করতে পারবে এতে করে তারা জামা‘আতে সালাত আদায় করার সাওয়াবও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে। তাইতো তিনজনের কমে সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬০৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৭৪)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১১-[২০] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনজন লোক যখন সফরে বের হবে, তখন তারা যেন একজনকে আমীর (নেতা) নির্বাচন করে নেয়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا كَانَ ثَلَاثَةٌ فِي سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوا أحدهم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (فَلْيُؤَمِّرُوْا أَحَدَهُمْ) তাদের একজনকে আমীর বানিয়ে নিবে, অর্থাৎ- যখন জামা‘আতবদ্ধভাবে সফর করবে (যার নিম্নসংখ্যা তিনজন) তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম তাকে আমীর নিযুক্ত করবে।
‘শারহেস্ সুন্নাহ্’তে উল্লেখ করা হয়েছে এ নির্দেশ দেয়ার কারণ এই যে, যাতে তারা সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে এবং তাদের মধ্যে কোনো ধরনের মতভেদ সৃষ্টি না হতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ অত্র হাদীসে এ প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যদি দু’জন ব্যক্তি তৃতীয় কোনো এক ব্যক্তিকে তাদের দু’জনের মধ্যে কোনো বিষয়ে ফায়সালা করার জন্য শালিস নিযুক্ত করে এবং ঐ তৃতীয় ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গতভাবে ফায়সালা করে তাহলে তার ফায়সালা কার্যকারী করা যাবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬০৬)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১২-[২১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম সফরসঙ্গী চারজন। উত্তম (ক্ষুদ্র) সৈন্যবাহিনী চারশত জন, উত্তম (বৃহৎ) সৈন্যবাহিনী চারহাজার জন। আর বারো হাজারের কোনো সৈন্য বাহিনী স্বল্প সংখ্যার কারণে কক্ষনো বিজিত হয় না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خَيْرُ الصَّحَابَةِ أَرْبَعَةٌ وَخَيْرُ السَّرَايَا أَرْبَعُمِائَةٍ وَخَيْرُ الْجُيُوشِ أَرْبَعَةُ آلَافٍ وَلَنْ يُغْلَبَ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا مِنْ قِلَّةٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: (خَيْرُ الصَّحَابَةِ أَرْبَعَةٌ) ‘‘চারজনের দল উত্তম দল’’ অর্থাৎ তিনজনের বেশী লোক যে দলে থাকে সে দল উত্তম দল।
আবূ হামিদ বলেনঃ মুসাফির ব্যক্তি কখনো বাহন ও প্রয়োজন মুক্ত হয় না। মুসাফির যদি মাত্রা তিন হয় আর বাহনও সংরক্ষণ করতে হয় এবং প্রয়োজনও মিটাতে হয় তাহলে একজন প্রয়োজন মিটাতে গেলে এবং একজন বাহন সংরক্ষণে নিয়োজিত থাকলে মুসাফির একাকী হয়ে যাবে যার সাথে কোনো সঙ্গী থাকবে না ফলে সে আশংকামুক্ত থাকতে পারবে না এবং সঙ্গী না থাকার কারণে অন্তরের সংকীর্ণতা থেকেও মুক্ত থাকবে না।
মুযহির (রহ) বলেনঃ সঙ্গী যদি তিনজন না হয়ে চারজন হয় তবে তা উত্তম। কেননা সফরসঙ্গী সর্বসাকূল্যে তিনজন হলে তাদের মধ্যে একজন যদি অসুস্থ হয়ে পরে এবং সে তার কোনো এক সফরসঙ্গীকে তার ওয়াসী (ওয়াসিয়্যাত বাস্তবায়নকারী) নিযুক্ত করতে চায় তাহলে তার এই ওয়াসিয়্যাত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য একজন মাত্র লোক বাকী থাকলো যা ওয়াসিয়্যাতের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। আর যদি চারজন থাকে তাহলে তার ওয়াসিয়্যাতের সাক্ষী হওয়ার জন্য দু’জন লোক বাকী থাকলো। যা সাক্ষী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। সফরসঙ্গী যখন অধিক হয় পরস্পরে সহযোগিতা করাও সহজ হয়। অনুরূপ অধিক সংখ্যক লোকের একত্রে সালাত আদায় করাও অধিক উত্তম।
(وَلَنْ يُغْلَبَ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا مِنْ قِلَّةٍ) বারো হাজার সৈন্যের দল সংখ্যাল্পতার জন্য পরাজয় বরণ করবে না, অর্থাৎ যে সৈন্য দলের সংখ্যা বারো হাজার হয় ঐ সেনা দল যদি পরাজয় বরণ করে তাহলে সে পরাজয়টা সংখ্যাল্পতার জন্য হবে না, অন্য কোনো কারণে হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬০৮)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১৩-[২২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে কাফিলার পিছনে থাকতেন, যেন তিনি দুর্বল সওয়ারীকে দ্রুত হাঁকিয়ে নিতে পারেন এবং অসমর্থ সওয়ারীকে নিজের সওয়ারীতে বসিয়ে নিতে পারেন এবং সর্বোপরি পুরো কাফিলার জন্য দু’আ করতে থাকতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَلَّفُ فِي الْمَسِيرِ فَيُزْجِي الضَّعِيفَ وَيُرْدِفُ ويدْعو لَهُم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يَتَخَلَّفُ فِى الْمَسِيرِ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণে পিছনে থেকে যেতেন, অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভ্রমণে বের হতেন তখন তিনি তার সঙ্গীদের থেকে পিছনে থেকে যেতেন নম্রতার বহিঃপ্রকাশের জন্য এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য।
(فَيُزْجِى الضَّعِيفَ) দুর্বলকে পরিচালনা করতেন, অর্থাৎ- যার বাহন দুর্বল হয়ে পরতো তার বাহনকে পরিচালনা করতেন অন্যান্য সফর সঙ্গীদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য।
(وَيُرْدِفُ) তার বাহনের পিছনে চড়াতেন, অর্থাৎ- পদব্রজের কোনো ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে তাকে স্বীয় বাহনের পিছনে উঠিয়ে নিতেন।
(وَيَدْعُوْ لَهُمْ) তাদের জন্য দু‘আ করতেন, অর্থাৎ- তাদের সকলের জন্য দু‘আ করতেন, অথবা দুর্বলদের সহযোগিতা করতেন ও অন্যদের জন্য দু‘আ করতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৩৬)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১৪-[২৩] আবূ সা’লাবাহ্ আল খুশানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ যখন সফরে কোথাও অবতরণ করতেন, তখন তাঁরা পাহাড়ের সংকীর্ণপথ ও পাহাড়ী এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের এভাবে সংকীর্ণপথ ও পাহাড়ী এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করা মূলত শায়ত্বনের কাজ। রাবী বলেন, এরপর হতে লোকেরা যখনই কোনো জায়গায় অবতরণ করত, তখন তারা পরস্পর এমনভাবে মিলেমিশে অবস্থান করত যে, একখানা কাপড় তাদের উপর জড়িয়ে দিলে সকলেই আবৃত হতো। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أبي ثعلبَةَ الخُشَنيِّ قَالَ: كَانَ النَّاسُ إِذَا نَزَلُوا مَنْزِلًا تَفَرَّقُوا فِي الشِّعَابِ وَالْأَوْدِيَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ تَفَرُّقَكُمْ فِي هَذِهِ الشِّعَابِ وَالْأَوْدِيَةِ إِنَّمَا ذَلِكُمْ مِنَ الشَّيْطَانِ» . فَلَمْ يَنْزِلُوا بَعْدَ ذَلِكَ مَنْزِلًا إِلَّا انْضَمَّ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ حَتَّى يُقَالَ: لَوْ بُسِطَ عَلَيْهِمْ ثوبٌ لعمَّهم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (إِنَّمَا ذٰلِكُمْ مِنَ الشَّيْطَانِ) তোমাদের এ কাজ শায়ত্বনের পক্ষ থেকে অর্থাৎ তোমাদের বিচ্ছিন্নতা শায়ত্বনের পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এবং তার শত্রুদের তাদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়ার জন্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬২৫)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১৫-[২৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন আমাদের প্রতি তিনজনের জন্যে একটি উটের ব্যবস্থা ছিল, এমনিভাবে আবূ লুবাবাহ্ ও ’আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আরোহী। রাবী বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পায়ে হাঁটার পালা আসতো তখন তারা বলতেন, আপনার হাঁটার পালায় আমরাই হাঁটব। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাদের তুলনায় বেশী শক্তিশালী নই আর সাওয়াব প্রত্যাশাকারী হিসেবে আমি তোমাদের চেয়ে বেশী মুখাপেক্ষী। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كُنَّا يَوْمَ بَدْرٍ كُلَّ ثَلَاثَةٍ عَلَى بَعِيرٍ فَكَانَ أَبُو لُبَابَةَ وَعَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ زَمِيلَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَكَانَتْ إِذَا جَاءَتْ عُقْبَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَا: نَحْنُ نَمْشِي عَنْكَ قَالَ: «مَا أَنْتُمَا بِأَقْوَى مِنِّي وَمَا أَنَا بِأَغْنَى عَنِ الْأَجْرِ مِنْكُمَا» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة
ব্যাখ্যা: (مَا أَنْتُمَا بِأَقْوٰى مِنِّىْ وَمَا أَنَا بِأَغْنٰى عَنِ الْأَجْرِ مِنْكُمَا) দুনিয়াতে তোমরা আমার চাইতে অধিক শক্তিশালী নও এবং আমিও তোমাদের চেয়ে সাওয়াব হতে অমুখাপেক্ষী নই। অর্থাৎ- দুনিয়াতে তোমরা আমাকে পরিত্যাগ করে অধিক লাভবান হতে পারবে না, যেহেতু তোমরা আমার চাইতে অধিক শক্তিশালী নও। আর তোমাদের মাধ্যমে যে সাওয়াব অর্জন করবে। পরকালে আমি সে সাওয়াব হতে অমুখাপেক্ষী নই। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, নাবী অত্র হাদীসে তার নম্রতা এবং তার সঙ্গীদের প্রতি সহানুভূতির চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১৬-[২৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের জন্তু-জানোয়ারের পিঠকে মিম্বার বানিয়ে নিয়ো না। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে এজন্য তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যেন তোমাদেরকে তারা যথাস্থানে পৌঁছে দেয়, যেখানে তোমরা অক্লান্ত কষ্ট ব্যতীত পৌঁছতে সক্ষম নও। আর আল্লাহ তা’আলা জমিনকেও তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন; সুতরাং তার উপরে তোমাদের অবস্থানের মাধ্যমে প্রয়োজন পূর্ণ করে নাও। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَتَّخِذُوا ظُهُورَ دَوَابِّكُمْ مَنَابِرَ فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى إِنَّمَا سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُبَلِّغَكُمْ إِلَى بَلَدٍ لَمْ تَكُونُوا بَالِغِيهِ إِلَّا بِشِقِّ الْأَنْفُسِ وَجَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فَعَلَيْهَا فَاقْضُوا حَاجَاتِكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (لَا تَتَّخِذُوْا ظُهُوْرَ دَوَابِّكُمْ مَنَابِرَ) পশুর পিঠকে তোমরা মিম্বার বানাবে না। অর্থাৎ তোমরা পশু থামিয়ে তার পিঠে বসে বেচাকেনা বা এ জাতীয় কোনো কথা বলবে না। বরং তোমরা পশুর পিঠ থেকে নেমে তোমাদের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে পুনরায় তার পিঠে আরোহণ করবে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এখানে مَنَابِرَ শব্দ দ্বারা দাঁড়ানোর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা ‘আরবের লোকেরা যখন ভাষণ দিত তখন মিম্বাবের উপর দাঁড়াতো। আর ক্বিয়াম অর্থাৎ দাঁড়ানো দ্বারা উদ্দেশ্য থামানো।
ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাহনের উপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এমন কোনো প্রয়োজন যদি দেখা দেয় যা জমিনে দাঁড়িয়ে অর্জন করা সম্ভব নয় তাহলে পশুর পিঠের উপর দাঁড়ানো বৈধ। অতএব বিনা প্রয়োজনে পশুর পিঠের উপর দাঁড়িয়ে থেকে তাকে কষ্ট দেয়া অবৈধ।
(وَجَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فَعَلَيْهَا فَاقْضُوا حَاجَاتِكُمْ) আল্লাহ জমিনকে তোমাদের জন্য বিছানা ও অবস্থানের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন, অতএব তাতেই তোমাদের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন কর। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা জমিনকে যেহেতু অবস্থানের জায়গা বানিয়েছেন আর পশুকে বানিয়েছেন বাহন; অতএব জমিনেই তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় কাজ কর পশুর পিঠে নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৬৪)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১৭-[২৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন কোনো স্থানে অবতরণ করতাম, তখন জন্তু-জানোয়ারের পিঠ হতে সবকিছু নামিয়ে সালাত আদায় করতাম। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أنسٍ قَالَ: كُنَّا إِذَا نَزَلْنَا مَنْزِلًا لَا نُسَبِّحُ حَتَّى نحُلَّ الرِّحالَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (كُنَّا إِذَا نَزَلْنَا مَنْزِلًا لَا نُسَبِّحُ حَتّٰى نحُلَّ) আনাস বলেন, আমরা যখন কোনো স্থানে অবতরণ করতাম পশুর পিঠ থেকে বোঝা নামানোর আগে সালাত আদায় করতাম না। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ এখানে তাসবীহ দ্বারা উদ্দেশ্য চাশ্তের সালাত। অর্থাৎ সাহাবীগণ সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়া সত্ত্বেও বাহনের পিঠ থেকে মাল-পত্র নামিয়ে তাকে পরিত্রাণ দেয়ার আগে সালাত আদায় করতেন না। এটা ছিল পশুর প্রতি সাহাবীদের দরদ ও সহানুভূতি প্রদর্শনের বহিঃপ্রকাশ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীসের অর্থ হলো, আমরা বাহনের পিঠ থেকে মালপত্র নামানোর আগে চাশ্তের সালাত আদায় করতাম না। কোনো কোনো ‘আলিমের মতে আরোহী নিজে খাওয়ার আগে বাহনের পশুকে আগে ঘাস পানি ইত্যাদি খাওয়ানো মুস্তাহাব। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, পৃঃ ৫২)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১৮-[২৭] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়ে হেঁটে পথ চলছিলেন, তখন এক ব্যক্তি একটি গাধাসহ সেখানে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এতে আরোহণ করুন! এই বলে সে পিছনে সরে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, না; এরূপ হবে না। তুমিই তোমার সওয়ারের সামনে বসার বেশী হকদার। তবে যদি তুমি এ অধিকার আমার জন্য দাও (দিতে পারো)। তখন লোকটি বলল, আমি তা আপনাকে প্রদান করলাম। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরোহণ করলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن بُرَيْدَة قَالَ: بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي إِذا جَاءَهُ رَجُلٌ مَعَهُ حِمَارٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ارْكَبْ وَتَأَخَّرَ الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا أَنْتَ أَحَقُّ بِصَدْرِ دَابَّتِكَ إِلَّا أَنْ تَجْعَلَهُ لِي» . قَالَ: جَعَلْتُهُ لَكَ فَرَكِبَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (أَنْتَ أَحَقُّ بِصَدْرِ دَابَّتِكَ إِلَّا أَنْ تَجْعَلَه لِىْ) তুমি তোমার পশুর অগ্রভাগের অধিক হকদার যতক্ষণ সে অধিকার আমার জন ছেড়ে না দাও। এখানে صَدْرِ শব্দ দ্বারা পশুর পিঠের সে অংশ উদ্দেশ্য যা তার ঘাড়ের সঙ্গে মিলিত। অর্থাৎ আমি সামনের দিকে আরোহণ করব আর তুমি আমার পিছনে থাকবে তা হবে না। কেননা পশু যেহেতু তোমার, কাজেই তার সামনে বসার অধিকারও তোমারই। তবে সে অধিকার যদি ছেড়ে দাও তবে ভিন্ন কথা।
(قَالَ : جَعَلْتُه لَكَ فَرَكِبَ) লোকটি বলল, এ অধিকার আমি আপনাকে দিলাম; অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সামনে আরোহণ করলেন। অর্থাৎ লোকটি যখন তার অধিকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ছেড়ে দিলেন তখন তিনি ঐ পশুর সম্মুখভাগে আরোহণ করলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯১৯-[২৮] সা’ঈদ ইবনু আবূ হিন্দ (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক প্রকারের উট শায়ত্বনের জন্য হয় এবং একপ্রকারের ঘরও শায়ত্বনের জন্য হয়। মূলত শায়ত্বনের উট হলো যা আমি দেখেছি; তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ খুব স্বাস্থ্যসম্মত উত্তম উট সঙ্গে নিয়ে সফরে বের হয়, কিন্তু নিজেও তাতে আরোহণ করে না এবং সে তার এমন ভাইয়ের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করে যার নিকট সওয়ারী নেই, আর তাকে আরোহণও করায় না। আর শায়ত্বনের ঘর, আমি তা দেখিনি। রাবী সা’ঈদ বলেন, আমার ধারণা, তাই শায়ত্বনের ঘর ঐ সমস্ত ’হাওদা’ই (আসন) হবে, যা লোকেরা মূল্যবান রেশমী কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَكُونُ إِبِلٌ لِلشَّيَاطِينِ وَبُيُوتٌ لِلشَّيَاطِينِ» . فَأَمَّا إِبِلُ الشَّيَاطِينِ فَقَدْ رَأَيْتُهَا: يَخْرُجُ أَحَدُكُمْ بِنَجِيبَاتٍ مَعَهُ قَدْ أَسْمَنَهَا فَلَا يَعْلُو بَعِيرًا مِنْهَا وَيَمُرُّ بِأَخِيهِ قَدِ انْقَطَعَ بِهِ فَلَا يَحْمِلُهُ وَأَمَّا بُيُوتُ الشَّيَاطِينِ فَلَمْ أَرَهَا كَانَ سَعِيدٌ يَقُولُ: لَا أُرَاهَا إِلَّا هَذِهِ الْأَقْفَاصَ الَّتِي يَسْتُرُ النَّاسُ بِالدِّيبَاجِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (تَكُوْنُ إِبِلٌ لِلشَّيَاطِينِ) ‘‘এক প্রকারের উট শায়ত্বনের জন্য’’ এর দ্বারা এমন উট উদ্দেশ্য যা পালন করা হয় অহংকার প্রদর্শন ও মাল বৃদ্ধির জন্য। এর দ্বারা শারী‘আতসম্মত কোনো কাজ সম্পাদন করা উদ্দেশ্য নয় এবং এমন কোনো কাজেও ব্যবহার করা হয় না যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।
(وَبُيُوْتٌ لِلشَّيَاطِيْنِ) ঘর হবে শায়ত্বনের জন্য। অর্থাৎ- ঐ অতিরিক্ত ঘর যা প্রয়োজনহীন অথবা যা বানানো হয়েছে হারাম উপায়ে অর্জিত মাল দ্বারা অথবা যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে শুধুমাত্র সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জনের জন্য।
(فَلَا يَعْلُوْ بَعِيرًا مِنْهَا) সে ঐ উটগুলোর কোনটিতে আরোহণ করে না, অর্থাৎ উটগুলোকে শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই লালন পালন করে, তাতে সে নিজেও আরোহণ করে না।
(وَيَمُرُّ بِأَخِيْهِ قَدِ انْقَطَعَ بِه فَلَا يَحْمِلُه) সে তার এমন ভাইয়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে যে পথ চলতে দুর্বল হয়ে পড়েছে, কিন্তু সে তার ঐ দুর্বল ভাইকে তাতে আরোহণ করায় না।
পশু সৃষ্টিই করা হয়েছে তার উপর আরোহণের মাধ্যমে তা দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্য। অতএব সে যখন তার দুর্বল কোনো ভাইকে তাতে আরোহণ করায় না যে পথ চলতে অক্ষম এতে সে উক্ত উটকে উপকার সাধন হতে বিরত রাখার মাধ্যমে শায়ত্বনের আনুগত্য করল। সুতরাং তা যেন শায়ত্বনের জন্যই। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ শায়ত্বনের উট দ্বারা উদ্দেশ্য যে উট তার সঙ্গী নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ- ‘‘সেই মোটাসোটা উত্তম উট’’ যে ব্যক্তি সফরে তা নিজের সাথে রাখে কিন্তু নিজেও সে উটে আরোহণ করে না এবং প্রয়োজনের সময় অন্যকেও তার উপর আরোহণ করায় না। আর শায়ত্বনের জন্য ঘর দ্বারা উদ্দেশ্য সেই হাওদাজ যা রেশমের কাপড় দ্বারা তৈরি যা দাম্ভিক লোকেরা সফরে সঙ্গে নিয়ে যায়। এ ব্যাখ্যা করেছেন তাবি‘ঈগণ। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৬৫)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯২০-[২৯] সাহল ইবনু মু’আয তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কোনো এক জিহাদে ছিলাম। পথিমধ্যে এক বিসত্মীর্ণ এলাকা জুড়ে লোকেরা অবস্থান করে যান চলাচল বন্ধ করে রেখেছিল। এতদশ্রবণে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি অন্যের অবস্থান বা যান চলাচল সংকীর্ণ বা বন্ধ করে, তার কোনো জিহাদ নেই। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن سهلِ بن مُعاذٍ عَن أبيهِ قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَضَيَّقَ النَّاسُ الْمُنَازِلَ وَقَطَعُوا الطَّرِيقَ فَبَعَثَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُنَادِيًا يُنادي فِي النَّاسِ: «أَنَّ مَنْ ضَيَّقَ مَنْزِلًا أَوْ قَطَعَ طَرِيقًا فَلَا جِهَادَ لَهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (أَنَّ مَنْ ضَيَّقَ مَنْزِلًا أَوْ قَطَعَ طَرِيْقًا فَلَا جِهَادَ لَه) অবশ্যই যে ব্যক্তি অবতরণস্থল সংকীর্ণ করে ফেলল অথবা চলার রাস্তা বিচ্ছিন্ন করে দিল তার কোনো জিহাদ নেই। অর্থাৎ বিশ্রামের জন্য অবতরণের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজনের চেয়ে বেশী জায়গা নিয়ে অন্যের অবতরণের স্থানকে সংকীর্ণ করে ফেললো অথবা মানুষের চলাচলের রাস্তায় অবতরণ করে তাদের চলার পথে বিঘ্ন ঘটালো তার জিহাদ নেই, অর্থাৎ সে ব্যক্তি জিহাদের পূর্ণ সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে মানুষের ক্ষতি করার কারণে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬২৬)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯২১-[৩০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সফর শেষে ফিরে আসার পর কোনো ব্যক্তির নিজ পরিবারে প্রবেশ করার উত্তম সময় হলো রাতের প্রথমভাগে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ أَحْسَنَ مَا دَخَلَ الرَّجُلُ أَهْلَهُ إِذَا قَدِمَ مِنْ سفرٍ أوَّلُ الليلِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা : তূরিবিশতী এবং কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ অত্র হাদীস এবং পূর্বে বর্ণিত হাদীস ‘‘যখন কোনো ব্যক্তি দীর্ঘদিন সফর শেষে বাড়ী ফিরে সে যেন রাতে প্রবেশ না করে’’, হাদীসদ্বয়ের মধ্যে বৈপরীত্য প্রকাশমান। এ দুই হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য এই যে, রাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ দ্বারা উদ্দেশ্য স্ত্রীকে সময় না দিয়ে তার সাথে নির্জনে মিলিত হবে না এবং প্রয়োজন মিটানোর চেষ্টা করবে না। বাড়ীতে প্রবেশ করা ও স্ত্রীর সাথে দেখা করা নিষিদ্ধ নয়। আর অত্র হাদীসে প্রথম রাতে প্রবেশ করা উত্তম বলার কারণ এই যে, মুসাফির ব্যক্তি যখন অনেক দূরের সফর থেকে বাড়ী ফিরে আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই সে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে। তাই সে যখন প্রথম রাতে বাড়ীতে ফিরে এসে তার প্রয়োজন মিটানোর সুযোগ পায় তখন তার শরীর হালকা হয় এবং মন প্রশান্তি লাভ করে, ফলে সে ভালোভাবে ঘুমাতে পারে। তাই প্রথম রাতে প্রবেশ করাকে উত্তম বলা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৭৪)