পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৮৯২-[১] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূকের যুদ্ধে বৃহস্পতিবার রওয়ানা হয়েছিলেন। মূলত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দ করতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
عَن كَعْب بْنِ مَالِكٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمَ الْخَمِيسِ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَكَانَ يُحِبُّ أَنْ يَخْرُجَ يَوْمَ الْخَمِيسِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (وَكَانَ يُحِبُّ أَنْ يَّخْرُجَ يَوْمَ الْخَمِيْسِ) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুদ্ধের জন্য বৃহস্পতিবার রওয়ানা হওয়া পছন্দ করতেন। ‘আল্লামা তূরিবিশতী বলেনঃ যুদ্ধে রওয়ানা হওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বৃহস্পতিবার বেছে নেয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে-
(১) এ দিনটি বরকতময় দিন। এ দিনে বান্দার ‘আমলসমূহ আল্লাহর নিকট উপস্থাপন করা হয়। আর যুদ্ধের সফর আল্লাহর পথে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পছন্দ করতেন এ দিনে আল্লাহর নিকট তার কোনো সৎ ‘আমল উপস্থাপন করা হোক তাই তিনি বৃপস্পতিবার সফর করতেন। (২) এ দিনটি সপ্তাহের সংখ্যা পূর্ণকারী দিন। (৩) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্দর নাম দ্বারা ফাল গ্রহণ করা পছন্দ করতেন।
(الْخَمِيْسُ) শব্দের অর্থ সৈন্যবাহিনী, কেননা যে বাহিনী ৫টি উপদলের সমন্বয়ে গঠিত তাকে (الْخَمِيْسِ) তথা সেনাবাহিনী বলা হয়। তাইতো তিনি এ নামটিকে উত্তম জাল হিসেবে মনে করতেন। এতে আল্লাহ তা‘আলা তাকে সংরক্ষণ করবেন এবং তার সেনাদলকে স্বীয় বেষ্টনীতে রাখবেন।
কাযী ‘ইয়ায আরো বলেন যে, خَمِيْس কে তিনি উত্তম কাল হিসেবে এজন্য গণ্য করতেন যে, এ দিনে তিনি তার শত্রু বাহিনীর ওপর বিজয় লাভ করবেন যাকে خَمِيْسِ বলা হয় অথবা এতে তিনি গনীমাতের এক-পঞ্চমাংশত তথা খুমূস অর্জনে সক্ষম হবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃহস্পতিবার সফরে বের হতে পছন্দ করতেন, এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারেই সফর করতেন বরং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্য দিনেও সফর করতেন। যেমন বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনো কোনো সফরে শনিবারেও বের হয়েছেন। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ২৯৫০; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬০২)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৮৯৩-[২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একাকী সফরের বিপদাশঙ্কার ব্যাপারে আমি যা জানি, তা যদি লোকেরা জানতো, তবে কোনো আরোহীই (মুসাফির) রাতে একাকী সফরে বের হত না। (বুখারী)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي الْوَحْدَةِ مَا أَعْلَمُ مَا سَارَ رَاكِبٌ بِلَيْلٍ وَحْدَهُ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: (لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِى الْوَحْدَةِ مَا أَعْلَمُ) মানুষ যদি জানতো একাকীত্বের মধ্যে কি ক্ষতি রয়েছে আমি যা জানি তাহলে কোনো আরোহী রাতে একাকী ভ্রমণ করত না।
‘আল্লামা মুযহির বলেনঃ এককীত্বের মধ্যে ধর্মীয় ক্ষতি রয়েছে; কেননা তার সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করার কেউ নেই, আর দুনিয়াবী ক্ষতিও রয়েছে, কারণ প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করার কেউ নেই।
ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের প্রকাশমান অর্থানুযায়ী বলা উচিত ছিল কেউ একাকী ভ্রমণ করত না। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো আরোহী রাতে একাকী ভ্রমণ করত না। রাতের কথা এজন্য বলা হয়েছে, কেননা রাতে ক্ষতির আশংকা অধিক। আর আরোহী এজন্য বলা হয়েছে, যাতে এ ধারণা করা না হয় যে, আরোহী তো একা নয় কারণ তার সাথে বাহন আছে। এতে এ ইঙ্গিতও রয়েছে যে, আরোহীর একাকী ভ্রমণের মধ্যে যদি ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে পদব্রজে একাকী ভ্রমণ করার মধ্যে ক্ষতির সম্ভাবনা আরো অধিক। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইবনু হাজার বলেনঃ (مَا أَعْلَمُ) আমি যা জানি এর দ্বারা উদ্দেশ্য যে বিপদের কথা আমি জানি অর্থাৎ- একাকী ভ্রমণ করলে যে ধরনের বিপদ আসতে পারে- এ সম্পর্কে আমি যা জানি তা যদি ‘‘লোকেরা জানতো তাহলে কেউই একাকী ভ্রমণ করতো না’’। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৯৯৮)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৮৯৪-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো কাফিলার সাথে যদি কুকুর কিংবা ঘণ্টা থাকে, তাহলে সেই কাফিলার সাথে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) থাকে না। (মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَصْحَبُ الْمَلَائِكَةُ رُفْقَةً فِيهَا كَلْبٌ وَلَا جَرَسٌ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (لَا تَصْحَبُ الْمَلَائِكَةُ رُفْقَةً) ঐ জামা‘আতের সঙ্গে মালাক (ফেরেশতা) থাকে না, অর্থাৎ রহমাতের মালাক থাকে না। এখানে সম্মানিত লেখকও সংরক্ষণকারী মালাক উদ্দেশ্য নয়। কারণ তারা সর্বদাই মানুষের সঙ্গে থাকেন এবং ‘আমলনামা লিপিবদ্ধ করেন।
(فِيهَا كَلْبٌ وَلَا جَرَسٌ) যে দলের সাথে কুকুর অথবা ঘণ্টি থাকে। এখানে ‘কুকুর’ দ্বারা এমন কুকুর উদ্দেশ্য যা শিকারী অথবা পাহারা দেয়ার কুকুর নয়। কারণ এ জাতীয় কুকুর সঙ্গে রাখা বৈধ।
ইমাম নববী বলেনঃ মালাক সঙ্গে না থাকার হিকমাত এই যে, ‘ঘণ্টি’ নিষিদ্ধ নাকূসের সমতুল্য যা কাফির সম্প্রদায় ব্যবহার করে থাকে। অথবা এর আওয়াজ অপছন্দনীয় তাই মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাদের সঙ্গী হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১১৩)
এটাও বলা হয় যে, যেহেতু বিনা প্রয়োজনে কুকুর পালন করা নিষিদ্ধ, তাই যে ব্যক্তি তা সঙ্গে রাখবে শাস্তি স্বরূপ রহমাতের মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ)-কে তাদের সঙ্গ দেয়া থেকে বিরত রাখা হবে। ফলে তারা রহমাতের মালাক সঙ্গে থাকার বরকত এবং তাদের দু‘আ ও আল্লাহর আনুগত্য করতে সহযোগিতা পাওয়া হতে বঞ্চিত হবে। অথবা কুকুর নাপাক আর মালায়িকাহ্ পবিত্র তাই নাপাকের সঙ্গী হওয়া থেকে পবিত্র মালায়িকাহ্ বিরত থাকবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৫২)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৮৯৫-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘণ্টি (বা এ জাতীয় ঝুমঝুমি শব্দ) হলো শায়ত্বনের বাদ্যযন্ত্র। (মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْجَرَسُ مَزَامِيرُ الشَّيْطَانِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: ‘‘ঘণ্টা শায়ত্বনের বাঁশী’’। ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ جَرَسُ শব্দটি একবচন হওয়া সত্ত্বেও এর খবর বহুবচন আনা হয়েছে এজন্য যে, এর আওয়াজ অবিচ্ছিন্ন যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ তা নাড়াচাড়া করে। ঘণ্টার আওয়াজকে শায়ত্বনের সাথে সম্পৃক্ত করার কারণ এই যে, আওয়াজ মানুষকে আল্লাহর জিকির এবং তার সম্পর্কে চিন্তা করা থেকে ব্যস্ত রাখে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৫৩)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৮৯৬-[৫] আবূ বাশীর আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কোনো এক সফরে ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে পাঠিয়ে কাফিলার মধ্যে এ ঘোষণা দিতে বললেন যে, কারো উটের গলায় যেন ধনুকের ছিলার মালা অবশিষ্ট না থাকে। অথবা বলেছেন, মালা থাকলে যেন তা কেটে ফেলা হয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَن أبي بشيرٍ الأنصاريِّ: أَنَّهُ كَانَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ فَأَرْسَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَسُولًا: «لَا تبقين فِي رَقَبَة بِغَيْر قِلَادَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلَادَةٌ إِلَّا قُطِعَتْ»
ব্যাখ্যা: (لَا تَبْقَيَنَّ فِىْ رَقَبَةِ بِغَيْرِ قِلَادَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلَادَةٌ إِلَّا قُطِعَتْ) কোনো উটের গলায় যেন ধনুকের ছিলার মালা অবশিষ্ট না থাকে। কারী বলেন, উটের গলার মালা কেটে ফেলার নির্দেশ এজন্য দেয়া হয়েছে যে, তাতে ঘণ্টা ঝুলানো থাকতো। আর তা শায়ত্বনের বাঁশি যা রহমাতের মালাক (ফেরেশতা) সঙ্গী হতে বাধা প্রদানকারী। শারহুস্ সুন্নাতে উল্লেখ আছে যে, মালিক (রহঃ)-এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধনুকের ছিলা দ্বারা তৈরি মালা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এজন্য যে, তা চোখ লাগা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঝুলানো হত। ‘আরবের লোকেরা এ ধরনের কাজ করত এবং মনে করত যে, তা বালা-মুসীবাত হতে রক্ষা করবে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের মালা পড়াতে নিষেধ করেছেন। আর তাদেরকে অবহিত করেছেন যে, এ ধরনের কাজ আল্লাহর কোনো ফায়সালাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। আবার কেউ বলেছেন যে, ধনুকের ছিলা দ্বারা দেয়া মালাকে কেটে ফেলতে নির্দেশ দেয়ার কারণ এই যে, মালাতে তারা ঘণ্টা ঝুলাতো, তাই এ ধরনের মালা পড়ানোকেই নিষেধ করেছেন।
ইমাম নববী বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান এবং আরো অনেকে বলেছেন, এর অর্থ হলো তোমরা ধনুকের ছিলার মালা উটের গলায় পড়াবে না যাতে তা তার গলায় পেঁচিয়ে গিয়ে ফাঁসী না লাগে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০০৫; শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১১৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৪৯)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৮৯৭-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন শস্য-শ্যামল মৌসুমে সফর করবে, তখন জমিন হতে উটকে তার হক প্রদান করবে। আর যখন শুষ্ক মৌসুমে সফর করবে, তখন দ্রুতগতিতে চলবে। আর যদি রাতে কোথাও বিরতি নিতে হয়, তখন যান চলাচলের পথ হতে সরে অবস্থান নিবে। কেননা তা রাতে জন্তু-জানোয়ারের চলাচলের পথ ও বিষাক্ত প্রাণীর আবাসস্থল।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমরা যখন শুষ্ক মৌসুমে সফর করবে, তখন (সওয়ারী দুর্বল ও ক্লান্ত হওয়ার আগেই) দ্রুত সফর শেষ করবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَافَرْتُمْ فِي الْخِصْبِ فَأَعْطُوا الْإِبِلَ حَقَّهَا مِنَ الْأَرْضِ وَإِذَا سَافَرْتُمْ فِي السَّنَةِ فَأَسْرِعُوا عَلَيْهَا السَّيْرَ وَإِذَا عَرَّسْتُمْ بِاللَّيْلِ فَاجْتَنِبُوا الطَّرِيقَ فَإِنَّهَا طُرُقُ الدَّوَابِّ وَمَأْوَى الْهَوَامِّ بِاللَّيْلِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «إِذَا سَافَرْتُمْ فِي السَّنَةِ فَبَادِرُوا بِهَا نِقْيَهَا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (إِذَا سَافَرْتُمْ فِى الْخِصْبِ فَأَعْطُوا الْإِبِلَ حَقَّهَا مِنَ الْأَرْضِ) যখন তোমরা উর্বর জমিনের উপর দিয়ে সফর করবে তখন তোমরা তোমাদের উটকে ঐ জমিনের প্রাপ্য হক প্রদান করবে। অর্থাৎ- উর্বর জমিনের উপর দিয়ে উট নিয়ে সফর করার সময় কিছুক্ষণের জন্য উটকে উর্বর জমিনে ছেড়ে দিবে যাতে তার লতা-পাতা ও ঘাস খেতে পারে।
(وَإِذَا سَافَرْتُمْ فِى السَّنَةِ فَأَسْرِعُوْا عَلَيْهَا السَّيْرَ) যখন অনুর্বর জমিনের উপর দিয়ে সফর করবে তখন তোমরা উক্ত এলাকা দ্রুত অতিক্রম করবে, অর্থাৎ অনাবৃষ্টির কারণে জমিনে লতা-পতা না থাকলে অথবা জমিন অনুর্বর হওয়ার কারণে তাতে গাছ-পালা ও ঘাস না থাকলে তোমরা দ্রুত ঐ এলাকা ছেড়ে চলে আসবে। যাতে তোমাদের উট দুর্বল হওয়ার পূর্বেই তোমরা তোমাদের আবাসে পৌঁছতে সক্ষম হও।
(فَاجْتَنِبُوا الطَّرِيْقَ فَإِنَّهَا طُرُقُ الدَّوَابِّ) তোমরা রাস্তায় অবতরণ করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা রাতের বেলায় তা কীট-পতঙ্গের রাস্তা এবং তাদের আবাস। ইমাম নববী বলেনঃ শেষ রাতে বিশ্রামের জন্য বাহন থেকে অবতরণ করাকে (تَعْرِيسُ) বলা হয়। এটাও বলা হয় যে, বিশ্রামের জন্য অবতরণ করাকেই (تَعْرِيسُ) বলা হয়। তা দিন বা রাতের যে কোনো অংশেই হোক না কেন। মোটকথা হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তা অবতরণ করা থেকে বারণ করেছেন। তার কারণ এই যে, কীট-পতঙ্গ ও বিষাক্ত এবং হিংস্র প্রাণী রাতের বেলা রাস্তায় চলা-ফেরা করে থাকে রাস্তা ভ্রমণকারীদের থেকে পরে যাওয়া দ্রব্য আহার করার জন্য। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তা অবতরণ না করে রাস্তা ছেড়ে অবতরণ করতে বলেছেন যাতে মানুষ বিষাক্ত হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারে।
(فَبَادِرُوْا بِهَا نِقْيَهَا) উটের মগজ তরতাজা থাকতেই তোমরা দ্রুত তা অতিক্রম কর। উটের শক্তি ও সক্ষমতা থাকতেই তোমরা অনুর্বর জমিন অতিক্রম কর। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১৩ খন্ড, হাঃ ১৯২৬; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৬৬; তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৫৮)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৮৯৮-[৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা কোনো এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি একটি দুর্বল উষ্ট্রীতে সওয়ারী হয়ে সেখানে উপস্থিত হলো এবং তাকে ডানে-বামে ঘুরাতে লাগল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সঙ্গীদেরকে উদ্দেশে বললেন, তোমাদের যার কাছেই একটি অতিরিক্ত সওয়ারী আছে, সে যেন যার কাছে সওয়ারী নেই তাকে দান করে দেয়। আর যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য-সামগ্রী আছে, সেও যেন তা ঐ ব্যক্তিকে দিয়ে দেয় যার কাছে কোনো আহার্য নেই। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাপারে এমনভাবে বর্ণনা করতে লাগলেন যে, আমরা মনে করলাম প্রয়োজনাতিরিক্ত জিনিসের উপর আমাদের কারো কোনো প্রকার অধিকার নেই। (মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي سَفَرٍ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذ جَاءَهُ رَجُلٌ عَلَى رَاحِلَةٍ فَجَعَلَ يَضْرِبُ يَمِينًا وَشِمَالًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ مَعَهُ فَضْلُ ظَهْرٌ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لَا ظَهْرَ لَهُ وَمَنْ كَانَ لَهُ فَضْلُ زَادٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لَا زَادَ لَهُ» قَالَ: فَذَكَرَ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ حَتَّى رَأَيْنَا أَنَّهُ لَا حَقَّ لأحدٍ منا فِي فضل. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (مَنْ كَانَ مَعَه فَضْلُ ظَهْرٍ فَلْيَعُدْ بِه عَلٰى مَنْ لَا ظَهْرَ لَه) যার অতিরিক্ত বাহন আছে, সে তার অতিরিক্ত বাহনটি তাকে দিয়ে দেয় যার বাহন নেই।
(فَذَكَرَ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ حَتّٰى رَأَيْنَا أَنَّه لَا حَقَّ لِأَحَدٍ مِنَّا فِىْ فَضْلٍ) তিনি বিভিন্ন মালের কথা উল্লেখ করে অতিরিক্ত মাল দান করতে বললেন এতে আমাদের ধারণা হলো যে, অতিরিক্ত মালে আমাদের কোনো অধিকার নেই। অর্থাৎ তিনি বিভিন্ন প্রকারে মালের নাম উল্লেখপূর্বক সকল প্রকার মালের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অংশ দান করার আদেশ করলেন। তাতে আমাদের মনে ধারণা জন্মালো যে, আমাদের কারো জন্যই প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল রাখার কোনো অধিকার নেই। অত্র হাদীসে মুখাপেক্ষী ব্যক্তিকে সাহায্য সহযোগিতার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি সফরের অবস্থায় মালের মুখাপেক্ষী হলে তাকে তার প্রয়োজন মিটানোর জন্য দান করা জরুরী যদিও সে স্বদেশে ধনী হোক না কেন। এমতাবস্থায় তাকে যাকাতের মাল দেয়াও বৈধ এবং তার জন্য তা গ্রহণ করাও বৈধ। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২ খন্ড, হাঃ ১৭২৮)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৮৯৯-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সফর হলো ’আযাবের একটি অংশ মাত্র; যা তোমাদেরকে নিদ্রা, পানাহার হতে বিরত রাখে। সুতরাং যখনই কারো সফরের প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায়, তখনই সে যেন অবিলম্বে পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে আসে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّفَرُ قِطْعَةٌ مِنَ الْعَذَابِ يَمْنَعُ أَحَدَكُمْ نَوْمَهُ وَطَعَامَهُ وَشَرَابه فَإِذا قضى نهمه من وَجهه فليعجل إِلَى أَهله»
ব্যাখ্যা: (اَلسَّفَرُ قِطْعَةٌ مِنَ الْعَذَابِ) ‘‘সফর আযাবের একটি অংশ’’। ইমাম নববী বলেনঃ সফরকে আযাবের অংশ বলার কারণ এই যে, তাতে কষ্ট ক্লান্তি, রোদ ও ঠাণ্ডা সহ্য করার অসুবিধা ভোগ করা এবং ভয় আতঙ্ক সর্বোপরি স্বজনদের পরিত্যাগ করে অসহনীয় অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, যা প্রকৃতপক্ষেই ‘আযাব।
(فَإِذَا قَضٰى نَهْمَتَه مِنْ وَجْهِه فَلْيُعَجِّلْ إِلٰى أَهْلِه) মুসাফির যখন তার সফরের প্রয়োজন মিটাবে সে যেন দ্রুত তার স্বীয় পরিবারের নিকট ফিরে আসে।
ইমামা খত্ত্বাবী বলেনঃ অত্র হাদীসে আবাসে অবস্থান করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যাতে জুমু‘আহ্ ও জামা‘আত না ছুটে যায় এবং পরিবার-পরিজন ও নিকটবর্তীদের হক বিনষ্ট না হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১৩ খন্ড, হাঃ ১৯২৭)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০০-[৯] ’আব্দুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই সফর হতে ফিরে আসতেন, তখন তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য স্বীয় পরিবারস্থ ছেলে-মেয়েদেরকে উপস্থিত করা হতো। একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফর হতে আসলেন, তখন তিনি আমাকে তার সামনে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর ফাতিমা (রাঃ)-এর পুত্রদ্বয়ের কোনো একজনকে আনা হলে তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে নিজের পিছনে বসালেন। তিনি (’আব্দুল্লাহ) বলেন, আমরা এমন অবস্থায় মদীনায় প্রবেশ করলাম যে, (আমরা) এক সওয়ারীতে তিনজন আরোহী ছিলাম। (মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَن عبدِ اللَّهِ بنِ جعفرٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَدِمَ مَنْ سَفَرٍ تُلُقِّيَ بِصِبْيَانِ أَهْلِ بَيْتِهِ وَإِنَّهُ قَدِمَ مَنْ سَفَرٍ فَسُبِقَ بِي إِلَيْهِ فَحَمَلَنِي بَيْنَ يَدَيْهِ ثُمَّ جِيءَ بِأَحَدِ ابْنَيْ فَاطِمَةَ فَأَرْدَفَهُ خَلْفَهُ قَالَ: فَأُدْخِلْنَا المدينةَ ثلاثةَ على دَابَّة. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (تُلُقِّىَ بِصِبْيَانِ أَهْلِ بَيْتِه) তাঁকে পরিবারের শিশুদের দ্বারা স্বাগতম জানানো হত। ইমাম নববী বলেনঃ আগত মুসাফিরকে শিশুদের দ্বারা স্বাগতম জানানো সুন্নাত। আর আগমনকারী ব্যক্তির জন্য সুন্নাত হলো ঐ শিশুদেরকে স্বীয় বাহনে উঠিয়ে নিয়ে আসা যারা মুসাফিরকে স্বাগতম জানাতে যায়। (শারহে মুসলিম ১৫শ খন্ড, হাঃ ২৪২৮)
আল্লামা মুনযিরী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, বাহনের পিছনে যাত্রী উঠানো বৈধ এবং একই প্রাণীর উপরে তিনজন আরোহণ করা বৈধ যদি তা ঐ পশুর জন্য কষ্টকর না হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০১-[১০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি এবং আবূ ত্বলহাহ্ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (খায়বার অভিযান শেষে মদীনায়) ফিরে আসেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তখন একই সওয়ারীতে তাঁর পিছনে সফিয়্যাহ্ (রাঃ) বসা ছিলেন। (বুখারী)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَن أنسٍ: أَنَّهُ أَقْبَلَ هُوَ وَأَبُو طَلْحَةَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَفِيَّةُ مُرْدِفَهَا عَلَى رَاحِلَته. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণের এ আগমন ছিল খায়বার থেকে। ‘শারহুস্ সুন্নাহ্’তে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, আমরা খায়বার হতে আগমন করলাম। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো এক স্ত্রী তার বাহনের পিছনে ছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, স্বীয় বাহনের পিছনে নিজের স্ত্রীকে বহন করা কোনো দোষণীয় বিষয় নয়। অবশ্যই স্ত্রীকে পর্দা করিয়ে নিতে হবে। (সম্পাদক)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০২-[১১] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় বাড়ী ফিরতেন না, বরং তিনি সকালে কিংবা সন্ধ্যায় ঘরে প্রবেশ করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَطْرُقُ أَهْلَهُ لَيْلًا وَكَانَ لَا يَدْخُلُ إِلَّا غُدْوَةً أَوْ عَشِيَّةً
ব্যাখ্যা: (كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ لَا يَطْرُقُ أَهْلَه لَيْلًا) ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সফর থেকে আগমন করে) রাতের বেলা তার পরিবারের নিকট যেতেন না।’’ ইমাম নববী বলেনঃ যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর শেষে বাড়ী ফিরবে তার জন্য এটা অপছন্দনীয় যে, সে হঠাৎ করে রাতের বেলা তার স্ত্রীর নিকট গমন করবে। তবে যার সফর নিকটবর্তী কোনো জায়গায় হয় এবং তার স্ত্রী আশা করে যে, তার স্বামী রাতেই ফিরে আসবে তার জন্য রাতের বেলা স্ত্রীর নিকট প্রবেশ করতে কোনো ক্ষতি নেই। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭১২)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০৩-[১২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন দীর্ঘদিন সফরে থাকার দরুন পরিবারবর্গ হতে দূরে থাকে, তখন সে যেন রাতের বেলায় পরিবারের কাছে (ঘরে) প্রবেশ না করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا طَال أَحَدُكُمُ الْغَيْبَةَ فَلَا يَطْرُقْ أَهْلَهُ لَيْلًا»
ব্যাখ্যা: রাতের বেলা স্ত্রীর নিকট মুসাফির ব্যক্তি কেন প্রবেশ করবে না, এর কারণ পরবর্তী হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০৪-[১৩] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (সফর হতে ফিরে) যখন তুমি রাতে ঘরে প্রবেশ করতে ইচ্ছা করবে, তখন তুমি স্বীয় স্ত্রীর কাছে যেয়ো না। যতক্ষণ না স্বামী-সংস্রবহীনা স্ত্রী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে পারে এবং অবিন্যস্ত মাথায় চিরুনী দিয়ে পরিপাটি হতে পারে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا دَخَلْتَ لَيْلًا فَلَا تَدَخُلْ عَلَى أهلك حَتَّى تستحد المغيبة وتمتشط الشعثة»
ব্যাখ্যা: (فَلَا تَدَخُلْ عَلٰى اَهْلِكَ حَتّٰى تَسْتَحِدَّ الْمَغِيْبَةَ وَتَمْتَشِطَ الشِّعْثَةَ) ‘‘সফর থেকে আগমন করে রাতের বেলায়’’ তোমার স্ত্রীর নিকট যাবে না যতক্ষণ না সে ক্ষক্ষারকার্য সম্পদান করে এবং এলোমেলো চুল পরিপাটি না করে। তূরিবিশতী বলেনঃ ক্ষক্ষŠরকার্য দ্বারা উদ্দেশ্য লজ্জাস্থানের লোম পরিষ্কার করা তা যেভাবেই হোক। অর্থাৎ স্ত্রী যেন স্বামীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় স্বাগতম জানাতে পারে, এজন্যই হঠাৎ করে রাতের বেলা স্ত্রীর নিকট যেতে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব স্ত্রী যদি স্বামীর আগমনের কথা আগে থেকেই জানতে পারে তাহলে স্ত্রীর নিকট রাতের বেলা প্রবেশ করতে সমস্যা নেই। কেননা নিষেধ করার কারণ বিদূরিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৬১৬ পৃঃ ৬১৬; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৭৫)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০৫-[১৪] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর হতে মদীনায় ফিরে আসলেন, তখন একটি উট অথবা গরু যাবাহ করে খাওয়ালেন। (বুখারী)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ نَحَرَ جَزُورًا أَوْ بَقَرَةً. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন তিনি একটি উট যাবাহ করলেন।’’ অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করলেন অথবা কোনো যুদ্ধ শেষে মদীনায় এসে উপস্থিত হলেন তখন তিনি উট যাবাহ করলেন। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সফর থেকে আগমন করার পর সাক্ষাৎ করতে আসা লোকজনদের জন্য মেহমানদারী করা সুন্নাত। ইবনুল মালিক বলেনঃ আগমনের পর মেহমানদারী করা সুন্নাত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইবনু বাত্ত্বল বলেনঃ ইমাম বা সরদার সফর থেকে আগমন করার পর তার সঙ্গীদের জন্য খাবারের আয়োজন করা সালাফদের নিকট মুস্তাহাব। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০৮৯)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০৬-[১৫] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর হতে দিনের পূর্বাহ্নেই ফিরে আসতেন। আর যখনই আসতেন, তখন সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করে দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় করতেন। অতঃপর সাক্ষাৎপ্রার্থী লোকেদের জন্য কিছু সময় অবস্থান করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَقْدَمُ مِنْ سَفَرٍ إِلَّا نَهَارًا فِي الضُّحَى فَإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثمَّ جلس فِيهِ للنَّاس
ব্যাখ্যা: (فَإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَصَلّٰى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। অর্থাৎ তিনি প্রথমে বাড়ীতে প্রবেশ না করে মসজিদে প্রবেশ করতেন, অতঃপর তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করার পর বসতেন।
(جَلَسَ فِيهِ لِلنَّاسِ) অতঃপর তাতেই লোকেদের জন্য বসতেন, অর্থাৎ লোকেদের সাথে কথা বলার জন্য এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য মসজিদেই বসতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৭৮)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯০৭-[১৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। সফর হতে মদীনায় ফিরে আসার পর তিনি আমাকে বললেন- যাও, মসজিদে গিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে নাও। (বুখারী)[1]
بَابُ اٰدَابِ السَّفَرِ
وَعَن جَابر قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَلَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ قَالَ لِي: «ادْخُلِ الْمَسْجِدَ فَصَلِّ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: فَلَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ قَالَ لِىْ : اُدْخُلِ الْمَسْجِدَ فَصَلِّ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ (জাবির বলেন) আমরা যখন মদীনায় আগমন করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন মসজিদে প্রবেশ করে সেখানে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করো। অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মুসাফিরের জন্য বাড়ীতে প্রবেশ করার আগে মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)