পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯২২-[৩১] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়ম ছিল সফরের সময় যখন রাতের শেষাংশে বিশ্রাম করতেন তখন ডান কাতে শুইতেন। আর যখন ফজরের পূর্ব মুহূর্তে বিশ্রাম করতেন, তখন ডান হাতের বাহু জমিনে খাড়া করে রেখে তালুতে মাথা রাখতেন। (মুসলিম)[1]
عَن أبي قتادةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ فِي سَفَرٍ فَعَرَّسَ بِلَيْلٍ اضْطَجَعَ عَلَى يَمِينِهِ وَإِذَا عَرَّسَ قُبَيْلَ الصُّبْحِ نَصَبَ ذِرَاعَهُ وَوَضَعَ رَأْسَهُ عَلَى كَفِّهِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সফরে রাস্তায় বিশ্রামের জন্য অবতরণ করলেন রাত যদি বেশী থাকতো তাহলে ডান কাতে শুয়ে পড়তেন যাতে শরীর পূর্ণ বিশ্রাম নিতে পারে। আর ফযর উদয় হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে অবতরণ করলে ডান বাহু খাড়া করে হাতের তালুর উপর ভর করে কাত হতেন যাতে ঘুম তার উপর প্রবল না হয়ে যায়। কেননা এতে সালাত ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯২৩-[৩২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আব্দুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্ (রাঃ)-কে একটি সৈন্যদলে (নেতা নিযুক্ত করে) পাঠালেন। সে সময় ছিল জুমু’আর দিন। তাঁর সঙ্গীরা ভোরেই রওয়ানা হয়ে গেল, কিন্তু ইবনু রওয়াহাহ্ বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুমু’আর সালাত আদায় করে পরে সঙ্গীদের সাথে গিয়ে মিলিত হব। অতঃপর যখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুমু’আর সালাত আদায় করলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’আব্দুল্লাহকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে তোমার সঙ্গীদের সাথে ভোরে যেতে কিসে বিরত রেখেছে? তখন তিনি বললেন, আমি আপনার সাথে জুমু’আর সালাত আদায় করে পরে গিয়ে সঙ্গীদের সাথে মিলিত হবো, এ কারণে যাইনি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যদি পৃথিবীর সমুদয় সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় কর, তবুও তোমার সঙ্গীদের সাথে ভোরে রওয়ানা হওয়ার মর্যাদা ও ফযীলত অর্জন করতে সক্ষম হবে না। (তিরমিযী)[1]
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: بَعَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ رَوَاحَةَ فِي سَرِيَّةٍ فَوَافَقَ ذَلِكَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَغَدَا أَصْحَابُهُ وَقَالَ: أَتَخَلَّفُ وأُصلّي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ أَلْحَقُهُمْ فَلَمَّا صَلَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَآهُ فَقَالَ: «مَا مَنَعَكَ أَنْ تَغْدُوَ مَعَ أَصْحَابِكَ؟» فَقَالَ: أَرَدْتُ أَنْ أُصَلِّيَ مَعَكَ ثُمَّ أَلْحَقُهُمْ فَقَالَ: «لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أدركْتَ فضلَ غدْوَتهمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِى الْأَرْضِ جَمِيْعًا مَا أَدْرَكْتَ فَضْلَ غَدْوَتِهْمْ) তুমি যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদও ব্যয় কর তাহলে তাদের সাথে সকাল বেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়ার মর্যাদা অর্জন করতে পারবে না। অর্থাৎ জিহাদে যাওয়ার ফযীলত জুমু‘আর সালাত আদায় করার চাইতে অনেক বেশী।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ হাদীসের প্রকাশমান অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে এটা বলা সঙ্গত যে, তাদের সকাল বেলা জিহাদের জন্য রওয়ানা হয়ে যাওয়াটা তোমার এ জুমু‘আর সালাতের চাইতেও উত্তম। রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা না বলে হাদীসে উল্লেখিত বাক্য বলেছেন আধিক্য বুঝানোর জন্য। অর্থাৎ তিনি যা বললেন তার অর্থ হলো কোনো কল্যাণময় কাজই জিহাদে যাওয়ার সমকক্ষ নয়। কেননা জিহাদে যেতে বিলম্ব করলে অনেক কল্যাণ ছুটে যাওয়ার ভয় রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ২য় খন্ড, হাঃ ৫২৭)
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯২৪-[৩৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে সফরের সাথে চিতাবাঘের চামড়া থাকে, তাদের সাথে রহমতের মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) থাকে না।’ (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَصْحَبُ الْمَلَائِكَةُ رُفْقَةً فِيهَا جِلْدُ نَمِرٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (لَا تَصْحَبُ الْمَلَائِكَةُ رُفْقَةً فِيْهَا جِلْدُ نَمِرٍ) যে সফরকারী দলের সাথে চিতা বাঘের চামড়া থাকে ঐ দলের সাথ রহমাতের মালাক (ফেরেশতা) সঙ্গী হয় না। চিতা বাঘের চামড়া ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কেননা এতে অহংকার ও সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা প্রকাশ পায়। অনুরূপ এটা অহংকারকারী বাদশাদের পোষাক। কারো মতেই বাঘের চামড়া দাবাগাত দ্বারা পবিত্র হয় না। সম্ভবত এর কারণ এই যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রের বাঘের চামড়া মৃত বাঘ থেকেই সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। কেননা তা শিকার করা কঠিন বিষয়। মোট কথা তা অপবিত্র। তাই যারা বাঘের চামড়া দ্বারা কোনো ধরনের পোষাক তৈরি করে বা তা ব্যবহার করে তাদের সাথে রহমাতের মালাক থাকে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
অত্র হাদীসের শিক্ষা: বাঘের চামড়া ব্যবহার করা মাকরূহ তথা নাজায়িয। বাড়ীতে বাঘের চামড়া রাখা নিন্দনীয়। কেননা বাঘের চামড়া ব্যবহারকারী মুসাফিরদের সাথে রহমাতের মালাক থাকে না এটা প্রমাণ করে যে, ঘরেও যদি তা পাওয়া যায় তাহলে মালাক ঐ ঘরে প্রবেশ করবে না। আর এটা এজন্য যে, তা ব্যবহার করা জায়িয নয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১২৬)
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা
৩৯২৫-[৩৪] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খাদেমই হলো সফরের নেতা। সুতরাং যে ব্যক্তি সঙ্গীদের খিদমাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে; আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণ ছাড়া অন্য কোনো ’আমল দ্বারা কেউ উক্ত ব্যক্তির সমপর্যায়ের উচ্চ মর্যাদা লাভে সমর্থ হবে না। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَيِّدُ الْقَوْمِ فِي السَّفَرِ خَادِمُهُمْ فَمَنْ سَبَقَهُمْ بِخِدْمَةٍ لَمْ يَسْبِقُوهُ بِعَمَلٍ إِلَّا الشَّهَادَةَ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যা: (سَيِّدُ الْقَوْمِ فِى السَّفَرِ خَادِمُهُمْ) খাদেম হলো সফরের নেতা। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ এর দু’টি অর্থ হতে পারে-
(১) নেতার এরূপই হওয়া উচিত। অর্থাৎ যিনি নেতা হবেন তিনি সফরে তার সঙ্গীদের খাদেম, কেননা তার কর্তব্য হলো তার সঙ্গীদের কল্যাণের দিকে খেয়াল রাখা এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখা।
(২) সফরে যিনি খাদেম তিনিই প্রকৃতপক্ষে নেতা যদিও প্রকাশ্যে তিনি তাদের মধ্যে মর্যাদায় ছোট।
(فَمَنْ سَبَقَهُمْ بِخِدْمَةٍ لَمْ يَسْبِقُوْهُ بِعَمَلٍ إِلَّا الشَّهَادَةَ) অতএব সফরে যে ব্যক্তি খিদমাতে অগ্রগামী হবে কেউই তাকে কোনো কাজের মাধ্যমে অতিক্রম করতে করতে পারবে না শাহাদাত ব্যতীত। অর্থাৎ সাওয়াবে এত বেশী অগ্রগামী হবে যে, একমাত্র আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ছাড়া কেউ তার সাওয়াব অতিক্রম করতে পারবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)