পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮১৯-[৩৩] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বদা একটি দল সত্যের উপর অটল-অবিচল থেকে শত্রুর মুকাবিলায় সংগ্রাম করতে থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধবাদীদের ওপর বিজয়ী হবে। এমনিভাবে উম্মাতের শেষ দল মাসীহ দাজ্জালের (সত্য-মিথ্যার আন্দোলনে) সাথেও লড়াই-সংগ্রাম করতে থাকবে। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি ভবিষ্যদ্বাণীর বর্ণনা বিদ্যমান। আর তা হলো এই উম্মাতের একটি দল সর্বযুগেই হাকের উপর অটল অবিচল থেকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে যাবে এবং তারা বিজয়ী হবে।
(ظَاهِرِينَ عَلٰى مَنْ نَاوَأَهُمْ) অর্থাৎ তারা ঐ সকল লোকেদের ওপর বিজয়ী হবে, যারা তাদের শত্রুতা করবে। অন্য কথায়, যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী এ দলটি বিজয়ী হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ খন্ড ৫, হাঃ ২৪৮১)
হাদীসের বাণী «حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ» তথা ‘এমনকি তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে’, এখানে সর্বশেষ যুদ্ধদল বলতে মাহদী, ‘ঈসা (আঃ) ও তাদের অনুসারীগণ উদ্দেশ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
‘ঈসা (আঃ) আসমান হতে অবতরণের পর বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকট মুসলিমরা যখন তাকে (দাজ্জালকে) আটকে রাখবে তখন ‘ঈসা (আঃ) তাকে হত্যা করবেন। আর মুসলিমদের মাঝে মাহদীও উপস্থিত থাকবেন। দাজ্জালকে হত্যা করার পর আর জিহাদ থাকবে না।
ইয়া’জূজ- মা’জূজ-এর সাথে শক্তিতে মুসলিমরা পেরে উঠবে না। পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকেও ধ্বংস করে দিবেন। ফলে যতদিন ‘ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে জীবিত থাকবেন ততদিন পৃথিবীতে কোনো কাফির থাকবে না। মিরকাতুল মাফাতীহে অনুরূপ বর্ণনাই পাওয়া যায়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৮১)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২০-[৩৪] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজে জিহাদে অংশগ্রহণ করল না, মুজাহিদদের যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবস্থাও করল না এবং কোনো মুজাহিদের অবর্তমানে তার পরিবার-পরিজনের তত্ত্বাবধান (দেখাশোনা) করল না, আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের পূর্বে (দুনিয়াতেই) কঠিন বিপদাপদে নিপতিত করবেন। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ لَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُجَهِّزْ غَازِيًا أَوْ يَخْلُفْ غَازِيًا فِي أَهْلِهِ بِخَيْرٍ أَصَابَهُ اللَّهُ بِقَارِعَةٍ قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদ থেকে সর্বদিক থেকে বিমুখ ব্যক্তির জন্য ভয়াবহ সতর্কবাণী উল্লেখ করেছেন। উক্ত ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের পূর্বেই আল্লাহর পক্ষ থেকে ভয়ঙ্কর ‘আযাবের সতর্কবাণী রয়েছে এ হাদীসে।
হাদীসে বর্ণিত শব্দ (مَنْ لَمْ يَغْز) বলে হাকীকী তথা প্রকৃত যুদ্ধকে বুঝানো হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(أَصَابَهُ اللّٰهُ بِقَارِعَةٍ) এ বাক্যের ভাবার্থ হলো, ধ্বংসাত্মক দুর্যোগ দিয়ে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দিবেন। ‘আরবী শব্দ কা-রি‘আহ্ হলো এমন শাস্তি বা দণ্ডের আদেশ যা হঠাৎ করে চলে আসে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫০০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২১-[৩৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুশরিকদের সাথে তোমাদের জান, মাল ও জবান দ্বারা জিহাদ কর। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: ‘‘তোমরা মুশরিকদের সাথে জিহাদ কর’’ এ কথার ব্যাখ্যায় ‘সুবুলুস্ সালাম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, এ হাদীসটি নফসের সাথে জিহাদ করা ওয়াজিব হওয়ার দলীল। আর নাফসের সাথে জিহাদ করা মানে হলো জিহাদের উদ্দেশে বের হওয়া এবং কাফিরদের সাথে মুখোমুখী হওয়া। আর মাল দ্বারা জিহাদ বলতে যুদ্ধের জন্য যে খরচাদি হয় তা এবং অস্ত্র ক্রয়ের খরচাদি উদ্দেশ্য। আর জিহবা দ্বারা জিহাদ বলতে, কাফিরদেরকে আল্লাহর পথে আহবান ও তাদের বিরুদ্ধে মজবুত দলীল পেশ করা এবং তাদেরকে ধমক দেয়া ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫০১)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২২-[৩৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (পরিচিত-অপরিচিত সকলের প্রতি নিয়মিত) সালাম প্রতিষ্ঠা কর, (অনাহারকে) আহার করাও এবং শত্রুর মস্তক অবনত কর (আঘাত হানো), তাহলে তোমাদেরকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْشُوا السَّلَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَاضْرِبُوا الْهَامَ تُوَرَّثُوا الْجِنَانَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে বেশী বেশী সালাম বিনিময়, ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো এবং কাফিরদের নির্মূল করণার্থে জিহাদে অংশগ্রহণকে জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও আমরা জিহাদে অংশগ্রহণের ফযীলত সম্পর্কে জানতে পারি।
আরবী শব্দ ‘হাম’ হচ্ছে ‘হাম্মাহ’ এর বহুবচন, যার অর্থ মাথা। হাদীসে মাথায় আঘাত করার অর্থ হলো কাফিরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২৩-[৩৬] ফাযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক লোকের মৃত্যুর সাথে সাথে তার ’আমলের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু যে লোক আল্লাহর পথে (কোনো কাজে) নিয়োজিত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার ’আমল নিঃশেষ হয় না, কিয়ামত পর্যন্ত তার ’আমল বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সে কবরের কঠিন ’আযাব হতে নিরাপত্তা লাভ করবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَن فَضالَةَ بنِ عُبيدٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلَّا الَّذِي مَاتَ مُرَابِطًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّهُ يُنَمَّى لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَيَأْمَنُ فتْنَة الْقَبْر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসটি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর রাস্তায় শত্রুবাহিনীর কবল থেকে মুসলিমদের রক্ষা করার জন্য পাহাড়ারত মুজাহিদ মারা গেলে তার ‘আমল স্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তির ‘আমলের মতো বন্ধ হয়ে যায় না; বরং তার ‘আমল জারী থাকে এবং কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। শুধু তাই নয়, কবরের শাস্তি থেকেও সে নিরাপদ থাকে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, (كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلٰى عَمَلِه) অর্থাৎ- প্রত্যেক ব্যক্তির ‘আমলনামা তার মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায় এবং আর লেখা হয় না। কিন্তু মুসলিমদের পাহাড়াদানের কাজে নিয়োজিত অবস্থায় কেউ মারা গেলে তার ব্যাপারটি আলাদা। তার নেকী মৃত্যুর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৯৭)
(فَإِنَّه يُنْمٰى لَه عَمَلُه إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ) অর্থাৎ- তার ‘আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। প্রত্যেক সময়ে তার সাথে নতুন করে ‘আমল মিলিত হবে। আর এ নেকী বৃদ্ধির সময় কিয়ামত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করার কারণ হলো ঐ ব্যক্তি নিজেকে এমন কাজে উৎসর্গ করেছে, যার ফল মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে ভোগ করছে। সে তাদের শত্রু মুশরিকদেরকে প্রতিহত করে দীনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস চালিয়েছিল।
(وَيَأْمَنُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ) অর্থাৎ সে কবরের ফিতনাহ্ থেকে নিরাপদ থাকবে। বলা হয়েছে যে, এ ব্যক্তি ঐ সকল লোকেদের থেকে ভিন্ন, যাদের কথা সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায় তখন তার ‘আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি বিষয় ব্যতীত। ১. সদাকায়ে জারিয়াহ্, ২. উপকারী ‘ইলম ও ৩. সৎ সন্তান- যে তার পিতা-মাতার জন্য দু‘আ করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২৪-[৩৭] আর দারিমী হাদীসটি ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَرَوَاهُ الدَّارمِيّ عَن عقبَة بن عَامر
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২৫-[৩৮] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক অতি অল্প সময় আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হয়েছে, তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। যে লোক (শত্রুর আঘাতে) আল্লাহর পথে হতাহত বা ক্ষত-বিক্ষতের দরুন কাতর হয়েছে- সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, উক্ত ক্ষতস্থান (দুনিয়ার তুলনায়) সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে, রক্তের রং হবে যা’ফরানের এবং তা হতে মিশ্কের সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হতে থাকবে। আর আল্লাহর পথে জিহাদরত থাকাবস্থায় যে ব্যক্তির শরীরে ফোঁড়া-ঠোসা পরিলক্ষেত হবে, কিয়ামতের দিন উক্ত ফোঁড়ার উপরে শহীদগণের সীলমোহর থাকবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَن معاذِ بن جبلٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَوَاقَ نَاقَةٍ فَقَدْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَمَنْ جُرِحَ جُرْحًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ نُكِبَ نَكْبَةً فَإِنَّهَا تَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَغْزَرِ مَا كَانَتْ لَوْنُهَا الزَّعْفَرَانُ وَرِيحُهَا الْمِسْكُ وَمَنْ خَرَجَ بِهِ خُرَاجٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّ عَلَيْهِ طَابَعُ الشُّهَدَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: আল্লাহর রাস্তায় কিছু সময় জিহাদ করার প্রতিদান হলো জান্নাত। তাছাড়া এ পথে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত বা আহত হলে তারও রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। আলোচ্য হাদীসে এ বিষয়েই আলোকপাত করা হয়েছে।
‘‘যে আল্লাহর রাস্তায় হাদীসে উল্লেখিত সময়টুকু জিহাদ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’’। আর এ সময়টি বুঝাতে এখানে বলা হয়েছে, ‘‘ফাওয়াকু নাকাহ’’ যার অর্থ উটের দুইবার দুধ দোহনের মধ্যবর্তী সময়কে। অর্থাৎ একবার দুধ দোহনের পর পুনরায় স্তনে দুধ আসতে যে সময় লাগে তাকেই ‘‘ফাওয়াকু নাকাহ’’ বলে। আবার কারো মতে উট দোহন করা হয় সকাল ও সন্ধ্যায়। অতএব এখানে সকাল ও সন্ধ্যার মধ্যবর্তী সময়কে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ বলেন, দুধ দোহনের সময় একবার বাটে টান দেয়ার পর পুনরায় টান দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে ‘‘ফাওয়াকু নাকাহ’’ বলা হয়েছে। আর এই তৃতীয় উদ্দেশ্যটিই এ ক্ষেত্রে বেশী উপযোগী। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক মুহূর্ত সময় যুদ্ধ করবে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
نكبة ও جرح শব্দ দু’টির অর্থ একই। কারো কারো মতে, কাফিরদের পক্ষ থেকে যে ক্ষত হয় তাকে বলে جرح; আর نكبة বলা হয় ঐ ক্ষতকে যা বাহন থেকে পড়ে গিয়ে বা নিজের অস্ত্রের আঘাতে হয়ে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ দুনিয়াতে তার যে ক্ষত হয়েছিল পরকালে সে এর চেয়ে বেশী ক্ষত নিয়ে উপস্থিত হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
خراج শব্দের অর্থ ফোঁড়া। অর্থাৎ তার শরীরে যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশে বের হওয়ার পর কোনো যখম বা ফোঁড়া বের হয় তাহলে সেটাও তার জন্য মর্যাদার কারণ হবে। এটাকে শহীদদের স্ট্যাম্প বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৩৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২৬-[৩৯] খুরয়ম ইবনু ফাতিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় (দান) করবে, তার জন্য এর বিনিময়ে সাতশত গুণ সাওয়াব প্রদান করা হবে। (তিরমিযী, নাসায়ী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَن خُرَيمِ بن فاتِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كُتبَ لَهُ بسبعمائةِ ضعف» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে আল্লাহর রাস্তায় অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপক ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর সে ঘোষণা হলো, কেউ আল্লাহর রাস্তায় কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলে তার সাতশ’গুণ বেশী সাওয়াব লিখা হবে।
(أَنْفَقَ نَفَقَةً فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) এ বাক্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বুঝাতে চেয়েছেন যে, কম হোক বা বেশী, আল্লাহর রাস্তায় যে কোনো পরিমাণের অর্থ ব্যয় করলেই হাদীসে বর্ণিত সাওয়াব অর্জিত হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(كُتبَ لَه بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ) এ বাক্যে বর্ণিত নেকীর পরিমাণটি সর্বোচ্চ নয়; বরং সর্বনিম্ন প্রতিশ্রম্নত সীমা। এরপরে আল্লাহ যাকে চাইবেন আরো বৃদ্ধি করে দিবেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ এমন একটি শস্যদানার সাথে, যা থেকে সাতটি শীষ বের হয়েছে, প্রত্যেকটি শীষে একশত শস্যদানা রয়েছে। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে আরো বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ সুপ্রশস্ত এবং মহাজ্ঞানী’’। (সূরা আল বাকারা ২ : ২৬১)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২৭-[৪০] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে সর্বোত্তম দান হলো তাঁবুর ছায়ার ব্যবস্থা করা এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধরত সৈনিকের সেবা-শশ্রুষার জন্য গোলাম দান করা অথবা আল্লাহর পথে পূর্ণ বয়স্কা (বাচ্চা প্রজননকারী অথবা সৈনিকের আরোহণের জন্য) উষ্ট্রী দান করা। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْضَلُ الصَّدَقَاتِ ظِلُّ فُسْطَاطٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمِنْحَةُ خَادِمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ طَرُوقَةُ فَحْلٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে তিনটি উৎকৃষ্ট ও সর্বোত্তম সাদাকা বা দান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো :
(এক) আল্লাহর রাস্তায় যারা কাজ করে তাদের অবস্থানস্থলকে ছায়াঘেরা করার জন্য ছোট বা বড় তাঁবু সাদাকা হিসেবে দেয়া, যা সফরে থাকাকালীন সময়ে বিশেষ সময়ে বিশ্রাম নেয়া বা রাত্রিযাপন করার জন্য স্থাপন করা হয়। فُسْطَاطٍ ‘‘ফুসত্বাত্ব’’ বলা হয় এমন তাঁবুকে, যার চারপাশে বেষ্টনী দেয়া হয় না; বরং স্থানটিকে ছায়াবিশিষ্ট করার জন্য শুধুমাত্র উপরে ছাউনি দেয়া হয়। তাহযীব গ্রন্থে বলা হয়েছে, পশমের তৈরি ঘরকে ‘‘ফুস্ত্বাত্ব’’ বলা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(দুই) আল্লাহর রাস্তায় কারো খিদমাতের জন্য খাদেম বা সেবক দান করা।
(وَمِنْحَةُ خَادِمٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) এর অর্থ হলো আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া কোনো ব্যক্তিকে কোনো খাদেমের মালিক বানিয়ে দেয়া বা খাদেম ধার দেয়া। এখান থেকে বুঝা যায় যে, নিজে কারো খিদমাত করাটা আরো বেশী উত্তম ও অধিক সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(তিন) আল্লাহর রাস্তায় কোনো মুজাহিদকে সফর করার জন্য বাহন দান করা।
(طَرُوْقَةُ فَحْلٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) অর্থ হলো আল্লাহর রাস্তায় সওয়ারী বা বাহন দান করা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২৮-[৪১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দন করে, তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করা অসম্ভব, যেমনিভাবে দোহনকৃত দুধ পুনরায় স্তনে প্রবেশ করানো অসম্ভব। আর কোনো বান্দার শরীরে লেগে থাকা ধূলাবালু এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কস্মিনকালেও মিলিতি হতে পারে না।
ইমাম নাসায়ী (রহঃ) অপর হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, কোনো মুসলিমের নাকের অভ্যন্তরে আল্লাহর পথে ধূলাবালু ও জাহান্নামের ধোঁয়া কক্ষনো একত্রিত হবে না। নাসায়ীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, (সেটা) কোনো বান্দার নাকে কক্ষনো একত্রিত হতে পারে না। অনুরূপ কোনো বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও কৃপণতা কক্ষনো একত্রিত হতে পারে না।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَلِجُ النَّارَ مَنْ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ وَلَا يَجْتَمِعَ عَلَى عَبْدٍ غُبَارٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَزَادَ النَّسَائِيُّ فِي أُخْرَى: «فِي مَنْخِرَيْ مُسْلِمٍ أَبَدًا» وَفِي أُخْرَى: «فِي جَوْفِ عَبْدٍ أَبَدًا وَلَا يَجْتَمِعُ الشُّحُّ وَالْإِيمَانُ فِي قَلْبِ عَبْدٍ أَبَدًا»
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটিতে আল্লাহর রাস্তায় অটল থেকে জিহাদ করার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।
(لَا يَلِجُ النَّارَ مَنْ بَكٰى مِنْ خَشْيَةِ اللّٰهِ حَتّٰى) এর অর্থ হলো ঐ ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না যে আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে। মূলত আল্লাহর ভয়ে কাঁদা বলতে আল্লাহর বিধি-বিধান যথাযথ পালন করা এবং তাঁর নাফরমানী থেকে বিরত থাকা উদ্দেশ্য। আর প্রকৃতপক্ষে যে এরূপ করে সেই আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৩৩)
(حَتّٰى يَعُوْدَ اللَّبَنُ فِى الضَّرْعِ) এ বাক্যে দোহনকৃত দুধ পুনরায় উট বা গাভীর স্তনে ফিরে যাওয়া অসম্ভব হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে উপমা পেশ করা হয়েছে যে, আল্লাহর ভয়ে যে কাঁদে তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও তদ্রূপ অসম্ভব। আর এ বাক্যটি কুরআনের নিমেণাক্ত আয়াতের অনুরূপ : অর্থাৎ- ‘‘আর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সুঁইয়ের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে। আর এভাবেই আমি পাপীদের প্রতিদান দেই’’- (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৪০)। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৩৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮২৯-[৪২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামের আগুন কক্ষনো দু’টি চক্ষুকে স্পর্শ করবে না। একটি চক্ষু, যা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দনরত হয়। অপর চক্ষু, যা আল্লাহর পথে (কোনো কাজে বা সীমান্ত) পাহারা দেয় বিনিদ্রা অবস্থায়। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عَيْنَانِ لَا تَمَسُّهُمَا النَّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে পূর্বোল্লিখিত হাদীসের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে এবং তার সাথে আরেকটি বিষয় বাড়িয়ে বলা হয়েছে। মূলত এখানে আল্লাহর রাস্তায় পাহাড়াদানের ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, দু’টি চোখ কখনও জাহান্নামে যাবে না, (এক) যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদবে, (দুই) যে চোখ রাত জেগে আল্লাহর রাস্তায় মুসলিমদের পাহাড়াদানের কাজে নিয়োজিত থাকবে।
হাদীসে ‘চোখ’ শব্দ ব্যবহার করে মূলত ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। আংশিক বস্তুর কথা উল্লেখ করে সম্পূর্ণ বস্তুকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- চোখ বলতে ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। আর ‘‘জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না’’ এ কথা বলে বুঝানো হয়েছে যে, সে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৩৯)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩০-[৪৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী পাহাড়ের সংকীর্ণ পথ অতিক্রমকালে সুমিষ্ট পানির এক ঝর্ণা দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি আনন্দে আতিশয্যে বলে ফেললেন যে, কতই না উত্তম হতো আমি যদি লোকালয় ছেড়ে এ পাহাড়ে বসবাস করতে পারতাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাহাবীর এ আকাঙ্ক্ষার প্রসঙ্গে কথা উঠলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (সাবধান) ঐরূপ কামনা করো না। কেননা তোমাদের কারও আল্লাহর পথে অবস্থান (জিহাদে শামিল থাকা) স্বীয় বাড়ীতে সত্তর বছরের সালাত আদায় অপেক্ষা সর্বোত্তম। তোমরা কি এটা প্রত্যাশা কর না যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেন এবং পরিশেষে জান্নাতে প্রবেশ করান? তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর। কোনো ব্যক্তি আল্লাহর পথে উষ্ট্রী দোহনের বিরতির ন্যায়ও যদি কিছু সময় যুদ্ধ করে, তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَن أبي هريرةَ قَالَ: مَرَّ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِعْبٍ فِيهِ عُيَيْنَةٌ مِنْ مَاءٍ عَذْبَةٌ فَأَعْجَبَتْهُ فَقَالَ: لَوِ اعْتَزَلْتُ النَّاسَ فَأَقَمْتُ فِي هَذَا الشِّعْبِ فَذَكَرَ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَا تَفْعَلْ فَإِنَّ مَقَامَ أَحَدِكُمْ فِي سَبِيلِ الله أفضل من صلَاته سَبْعِينَ عَامًا أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَيُدْخِلَكُمُ الْجَنَّةَ؟ اغْزُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبت لَهُ الْجنَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসটি থেকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ফাযীলাতের পরিমাণ সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যায়।
شِعْبٍ বলা হয় দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী গিরিপথকে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী : ‘‘তুমি সেখানে থেকো না’’ এর দ্বারা তিনি সাহাবীকে সেখানে থাকতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ জিহাদ করা ফরয, আর ফরয ছেড়ে নফল ‘ইবাদাতের জন্য নিজেকে আলাদা রাখা অবাধ্যতার শামিল।
ইবনুল মালিক ত্বীবী (রহঃ)-এর কথা নকল করে বলেন, ‘‘উক্ত সাহাবী জিহাদ শেষ করে সেখানে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছিল, ঠিক সেভাবে যেভাবে আবেদ সাধকগণ নির্জনতা অবলম্বন করে থাকেন।
সত্তর বছর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সময়ের আধিক্য বুঝানো; কোনো সময়কে সীমাবদ্ধ করা উদ্দেশ্য নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩১-[৪৪] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে একদিনের সীমান্ত পাহারা দেয়া, অন্য সকল পুণ্যকর্মের তুলনায় এক হাজার দিনের চেয়ে উত্তম। (তিরমিযী, নাসায়ী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ يَوْمٍ فِيمَا سِوَاهُ مِنَ الْمَنَازِلِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে একদিন ‘‘রিবাত্ব’’ তথা মুসলিম সেনাদের পাহাড়ায় নিয়োজিত থাকার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং এটাকে হাজার দিন অপেক্ষা উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
(مِنَ الْمَنَازِلِ) এ বাক্যের ব্যাখ্যায় মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ ‘‘এ কথার দ্বারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে মুজাহিদদেরকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর আকলী ও নকলী দলীল বিদ্যমান রয়েছে। আর এটা রিবাত্বের অন্য আরেকটি তাফসীর তথা ‘‘সালাতের জন্য মসজিদে অপেক্ষা করাও রিবাত্ব’’ এ অর্থ নিতেও বাধা সৃষ্টি করে না। এখানে رِبَاطُ ‘রিবাত্ব’ বলতে জিহাদে আকবার তথা ময়দানের বড় জিহাদকে বুঝানো হয়েছে। আর অন্য হাদীসে এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করাকে রিবাত্ব বলার অর্থ হলো তা জিহাদে আসগার। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৬৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩২-[৪৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সামনে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী এমন তিন শ্রেণীর লোককে উপস্থিত করা হয়েছে। তন্মধ্যে একদল হলো শহীদ; দ্বিতীয় দল হলো সর্বদা হারাম পরিহার করে চলে এবং কোনো অবস্থায় কারও কাছে সহযোগিতার হাত বাড়ায় না; তৃতীয় দল হলো যে চাকর উত্তমরূপে আল্লাহর ’ইবাদাত করে ও মালিকের কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত থাকে। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: عَرَضَ عَلَيَّ أَوَّلُ ثَلَاثَةٍ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ: شَهِيدٌ وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ وَعَبَدٌ أَحْسَنَ عبادةَ اللَّهِ ونصح لمواليه . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: আলোচনাধীন হাদীসটিতে তিন প্রকার ব্যক্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে, যারা সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের একজন হলো আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ ব্যক্তি। সুতরাং এ হাদীসটিও জিহাদের ফযীলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা বহন করে।
হাদীসে বর্ণিত উক্তি (أَوَّلُ ثَلَاثَةٍ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ) এখানে তিন প্রকারের সকল লোককে বুঝানো হয়েছে।
শাহীদের পরিচয় দিতে গিয়ে ‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেনঃ শহীদকে শহীদ (সাক্ষী বা উপস্থিত ব্যক্তি) বলার কারণ হলো, সে মূলত জীবিত। তার রূহটা যেন হাজির। এটাও বলা হয়ে থাকে যে, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতামন্ডলী তার জন্য জান্নাতের সাক্ষ্য প্রদান করবেন। আরো বলা হয় যে, সে কিয়ামতের দিন রসূলগণের পক্ষে দীন উম্মাতের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন মর্মে সাক্ষ্য দিবে। আবার কেউ বলেন, জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য ঈমান তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।
হাদীসে বর্ণিত বাণী (وَعَفِيْفٌ مُتَعَفِّفٌ) বলতে ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে অন্যের কাছে কোনো কিছু চাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ ও অন্যান্য ভোগ-সামগ্রী থেকে নিজেকে দূরে রাখে এবং অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে। কারো মতে, যা তার জন্য উচিত বা উপযোগী নয় তা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ ও সংযত রাখে। আর নিজের আত্মা ও কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে ধৈর্যধারণ করে।
(وَعَبَدٌ أَحْسَنَ عِبَادَةَ اللّٰهِ) এ বাক্যে ঐ বান্দাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যে ‘ইবাদাতের শর্তাবলী ও রুকনসমূহ সঠিকভাবে আদায় করে। ‘আল্লামা তীবী (রহঃ) বলেনঃ তার ‘ইবাদাতকে ইখলাসের সাথে পালন করে, যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ «الإحسان أن تعبد الله كأنك تراه فإن لم تكن تراه فإنه يراك» অর্থাৎ- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাত কর যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও তবে জেনে রাখ তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩৩-[৪৬] ’আব্দুল্লাহ ইবনু হুবাশী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম ’আমলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, দীর্ঘ ক্বিয়ামের সালাত আদায়। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ দান সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অভাবগ্রস্ত অবস্থায় দানের প্রয়াস। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ হিজরত সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা’আলা যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিহাদ সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মুশরিকদের বিরুদ্ধে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করা। অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ ধরনের মৃত্যু (শহীদ হওয়া) উত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যার রক্ত প্রবাহিত হয়েছে এবং তার সওয়ারীর পাও কেটে ফেলা হয়েছে। (আবূ দাঊদ)[1]
নাসায়ী-এর বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে সর্বোত্তম ’আমলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সন্দেহ সংশয়মুক্ত ঈমান, গনীমাতে প্রাপ্ত মালে চুরি বা আত্মসাৎমুক্ত জিহাদ এবং মাকবুল (গ্রহণযোগ্য) হজ্জ/হজ। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ সালাত সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, দীর্ঘ কুনূত। অতঃপর অন্যান্য বর্ণনায় তারা (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী) উভয়ে ঐকমত্যে আছেন।
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَن عبدِ الله بنِ حُبَشيٍّ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «طُولُ الْقِيَامِ» قِيلَ: فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «جُهْدُ الْمُقِلِّ» قِيلَ: فَأَيُّ الْهِجْرَةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «مَنْ هَجَرَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ» قِيلَ: فَأَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «مَنْ جَاهَدَ الْمُشْرِكِينَ بِمَالِهِ وَنَفْسِهِ» . قِيلَ: فَأَيُّ الْقَتْلِ أَشْرَفُ؟ قَالَ: «مَنْ أُهْرِيقَ دَمُهُ وَعُقِرَ جَوَادُهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَفِي رِوَايَةِ للنسائي: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ: أيُّ الأعمالِ أفضلُ؟ قَالَ: «إِيمانٌ لَا شكَّ فِيهِ وَجِهَادٌ لَا غُلُولَ فِيهِ وَحَجَّةٌ مَبْرُورَةٌ» . قِيلَ: فَأَيُّ الصَّلَاةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «طُولُ الْقُنُوتِ» . ثمَّ اتفقَا فِي الْبَاقِي
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে বেশ কিছু ‘আমলকে সর্বোত্তম ‘আমল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে এমন জিহাদ, যাতে মুজাহিদ ব্যক্তি গনীমাতের মাল চুরি করেনি; বরং নিজের জান ও মাল দিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করে। সুতরাং এ হাদীসটিতেও জিহাদের ফযীলত আলোচনা করা হয়েছে।
কারো মতে হাদীসে বর্ণিত শব্দ ‘‘মুক্বিল’’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ দরিদ্র ব্যক্তি, যে ক্ষুধায় ধৈর্য ধরতে পারে। এও বলা হয় যে, মুক্বিল দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ধনী হৃদয়। যেমনটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসে এসেছে: «أفضل الصدقة ما كان عن ظهر غنى» অর্থাৎ- সর্বোত্তম সাদাকা হচ্ছে যা ধনী হওয়ার প্রাক্কালে করা হয়।
হাদীসের বাণী «طول القنوت» বলতে বুঝানো হয়েছে লম্বা ক্বিয়াম বিশিষ্ট সালাতকে। কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা যে কোনো সালাত উদ্দেশ্য। কারো মতে এখানে রাতের সালাত তথা ক্বিয়ামুল্ লায়ল উদ্দেশ্য। আর এটাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমলের সাথে বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ। (নাসায়ী হাঃ ২৫২৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩৪-[৪৭] মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি পুরস্কার সুরক্ষিত রয়েছে। ১- যুদ্ধরত অবস্থায় তার রক্তের ফোঁটা মাটিতে ঝরা মাত্রই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তাকে জান্নাতের আবাসস্থল দেখানো হয়। ২- তাকে কবরের ’আযাব হতে নিষ্কৃতি দেয়া হয়। ৩- হাশরের ময়দানের মহাভীতি হতে দূরে রাখা হয়। ৪- (কিয়ামতের দিন) সম্মানজনকভাবে তার মাথায় ইয়াকূতের মুকুট পরানো হবে, যার মধ্যে খচিত একটি ইয়াকূত দুনিয়া ও তার সমস্ত ধন-সম্পদ হতে উত্তম। ৫- সুন্দর বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট বাহাত্তর জন হূরকে তার সঙ্গিনীরূপে দেয়া হবে। ৬- তার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে সত্তরজনের সুপারিশ কবুল করা হবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ: يُغْفَرُ لَهُ فِي أوَّلِ دفعةٍ وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ الْيَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ويزوَّجُ ثنتينِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الْحُورِ الْعِينِ وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقْرِبَائِهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটিতে শহীদদের সাওয়াব তথা মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অত্র হাদীসে শহীদদের ছয়টি মর্যাদার কথা আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো শহীদ ব্যতীত অন্য কেউ একত্রে পাবে না।
(يُغْفَرُ لَه فِىْ اَوَّلِ دَفْعَةٍ) ‘আল্লামা মুনযিরী (রহঃ) এ বাক্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ শাহীদের রক্ত থেকে প্রথম ফোঁটা প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
(وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ) অর্থাৎ- সে ফাযাউল আকবার হতে নিরাপদ থাকবে।
মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ নিম্নোক্ত কুরআনের আয়াতেও এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, ফাযাউল আকবার তাদেরকে চিন্তায় ফেলবে না। (সূরা আল আম্বিয়া ২১ : ১০৩)
‘‘আল ফাযাউল আকবার’’ বলতে জাহান্নামকে বুঝানো হয়েছে, আবার কারো মতে জাহান্নামের সামনে পেশ করাকে বুঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা সেই সময়, যখন জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হবে। আবার কারো মতে, এটা সেই সময় যখন মৃত্যুকে যাবাহ করা হবে, আর কাফিররা মৃত্যুর পরিসমাপ্তি দেখে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যাপারে হতাশ হয়ে যাবে। কারো মতে এটা হচ্ছে সেই সময় যখন কাফিরদের ওপর আগুন চেপে আসবে। আবার কারো মতে আল ফাযাউল আকবার বলতে শিঙ্গার শেষ ফুঁৎকারের সময়কে বুঝানো হয়েছে। কুরআনে এসেছে, অর্থাৎ- ‘‘এবং যেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, সেদিন আকাশমন্ডলীর ও পৃথিবীর সকলেই ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ব্যতীত এবং সকলেই তাঁর নিকট বিনীত অবস্থায় আসবে’’- (সূরা আন্ নামল ২৭ : ৮৭)। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৬১)
‘‘হূর’’ হলো জান্নাতের মহিলাগণ, যারা হবে খুবই সাদা এবং খুব কালো চোখ বিশিষ্ট।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩৫-[৪৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদের কোনো চিহ্ন (নমুনা) ছাড়া মৃত্যুবরণ করল, সে কিয়ামতের দিন ত্রুটিযুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَقِيَ اللَّهَ بِغَيْرِ أَثَرٍ مِنْ جِهَادٍ لَقِيَ اللَّهَ وَفِيهِ ثُلْمَةٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসটিতে জিহাদের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। হাদীসটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, যদি কারো জিহাদের কোনো আলামাত বা চিহ্ন নিজের সাথে না নিয়েই মৃত্যুবরণ করে, অর্থাৎ জিহাদের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না থাকে, তাহলে সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করল যে, তার মাঝে ত্রুটি রয়েছে।
মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ أثر (আসার) হলো ঐ জিনিস, যা কোনো কিছু থেকে অবশিষ্ট থাকে। আর সেই অবশিষ্ট জিনিস দেখে সেই জিনিসটির অবস্থা জানা যায়।
কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ এখানে উদ্দেশ্য হলো আলামাত বা চিহ্ন। অর্থাৎ- মুজাহিদ ব্যক্তির শরীরে যুদ্ধের যে কোনো আলামাত থাকলে সে এ সতর্কবাণীর উদ্দেশ্য হবে না। সেটা ক্ষত হোক বা ক্লান্তি হোক বা পথের ধূলা হোক কিংবা টাকা-পয়সা খরচ করা হোক অথবা অস্ত্রের আঘাত হোক।
যুদ্ধ হতে পারে শত্রুদের সাথে আবার হতে পারে নফসের সাথে বা শায়ত্বনের সাথে। অনুরূপভাবে জিহাদের চিহ্ন বা আলামাতও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘তাদের চেহারায় তাদের নিদর্শন হলো সিজদার চিহ্ন বা আলামাত’’- (সূরা আল ফাত্হ ৪৮ : ২৯)। কেউ বলেনঃ এ হাদীসটির বিধান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগের সাথে খাস ছিল। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৬৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩৬-[৪৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পিঁপড়ার দংশনে তোমরা যেরূপ ব্যথাতুর হও, শাহীদের হত্যার ব্যথাও অনুরূপ অনুভূত হয়। (তিরমিযী, নাসায়ী, দারিমী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الشَّهِيدُ لَا يَجِدُ أَلَمَ الْقَتْلِ إِلَّا كَمَا يَجِدُ أَحَدُكُمْ أَلَمَ الْقَرْصَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: শাহীদের মৃত্যু কষ্টের পরিমাণ উল্লেখ করে আলোচ্য হাদীসটিতে মুজাহিদদেরকে জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
(أَلَمَ الْقَرْصَةِ) অর্থ হলো পিঁপড়ার একবার কামড় দেয়ার মতো কষ্ট। আবার কারো মতে নখ দিয়ে একবার চিমটি কাটার মতো কষ্ট। শহীদ ব্যক্তিও এত সামান্য পরিমাণ মৃত্যুকষ্ট অনুভব করে। খুবায়ব -এর কবিতায় এমনটিই বর্ণিত হয়েছে:
ولست أبالي حين أقتل مسلما على أي شق كان لله مصرع
وذلك في ذات الإله وإن يشأ يبارك على أوصال شلو ممزع
অর্থাৎ- ‘‘আমি কোনো কিছুরই পরোয়া করব না যখন আমাকে মুসলিম অবস্থায় হত্যা করা হবে। আল্লাহর রাহে যেভাবেই আমাকে ক্ষত-বিক্ষত করা হোক না কেন, সেটা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই। তিনি চাইলে আমার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা প্রত্যেকটি অঙ্গের বিনিময়ে বরকত দান করবেন’’।
খুবায়ব ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ক্রুশবিদ্ধ ব্যক্তি। ঘটনাটি হলো, খুবায়ব বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তাকে বন্দী করে মক্কায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বদর যুদ্ধে হারিসকে কাফির অবস্থায় হত্যা করেছিলেন, ফলে তার ছেলেরা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাকে কিনে নেয়। এমতাবস্থায় তারা তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে- (তিরমিযী, নাসায়ী, দারিমী)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩৭-[৫০] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু’টি ফোঁটা এবং দু’টি দাগের (চিহ্নের) চেয়ে পছন্দনীয় অন্য কিছুই নয়। ফোঁটা দু’টির একটি হলো আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনরত অশ্রুর ফোঁটা, অপরটি হলো আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা। আর দাগ দু’টির একটি আল্লাহর পথে (জিহাদে) আহত হওয়ার দাগ, অপরটি ফরয ’ইবাদাতসমূহের কোনো একটি আদায়ের দাগ। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأَثَرَيْنِ: قَطْرَةِ دُمُوعٍ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَقَطْرَةِ دَمٍ يُهْرَاقُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَمَّا الْأَثَرَانِ: فَأَثَرٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَثَرٌ فِي فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اللَّهِ تَعَالَى . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে শরীরের এক ফোঁটা রক্ত প্রবাহিত হওয়ার বিশেষ মর্যাদার কথা আলোচনা করা হয়েছে।
এ হাদীসে ‘‘আল্লাহর রাস্তায়’’ কথাটি ‘আম্ তথা ব্যাপকার্থবোধক। অর্থাৎ এখানে জিহাদ ছাড়া অন্যান্য কল্যাণকার কাজও উদ্দেশে হতে পারে, যা আল্লাহর জন্য করা হয়। এই হাদীসে চোখের পানি বুঝাতে বহুবচন ব্যবহার করার কারণ হলো তা সাধারণত পরিমাণে বেশী হয়। আর তার তুলনায় রক্তের পরিমাণ কম হয়। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘চোখের পানির ফোঁটা’’ বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। আর রক্তের ফোঁটা বুঝাতে একবচন ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের এক ফোঁটা রক্তের দাম অনেক ফোঁটা চোখের পানি অপেক্ষা বেশী।
আল্লাহর রাস্তায় আলামাত বা চিহ্ন হতে পারে মসজিদের দিকে যাওয়ার কারণে ধূলোমলিন হওয়া, হতে পারে যুদ্ধের ময়দানে প্রাপ্ত ক্ষত বা আঘাত এবং ‘ইলম অন্বেষণের কাজে বের হওয়ার ফলে কোনো চিহ্ন বা আলামাত।
(وَأَثَرٌ فِىْ فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اللّٰهِ تَعَالٰى) তথা ‘‘আল্লাহর কোনো ফরয বিধান পালনে কোনো আলামাত বা চিহ্ন’’ এ বাক্যে বুঝানো হয়েছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় উযূ করার কারণে হাত-পা ফেঁটে যাওয়া বা উযূর ভিজা অংশ অবশিষ্ট থাকা। কিংবা খুব গরমে সিজদা করার কারণে কপাল পুড়ে দাগ হয়ে যাওয়া। অথবা সিয়াম পালনের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হওয়া বা হজে/হজ্জের সফরের কারণে পা ধূলোমলিন হওয়া। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৬৯)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৩৮-[৫১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হজ্জ/হজ অথবা ’উমরাহ্ অথবা আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্য ছাড়া নৌযান সফরে বের হয়ো না। কেননা সমুদ্রের নিম্নভূমিতে আগুনের স্তর রয়েছে এবং আগুনের স্তরের নিচেও সমুদ্র অবস্থিত। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَرْكَبِ الْبَحْرَ إِلَّا حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا أَوْ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّ تَحْتَ الْبَحْرِ نَارًا وَتَحْتَ النَّارِ بَحْرًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: সাধারণত সমুদ্র পথে ভ্রমণ করতে উল্লেখিত হাদীসটিতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে হজ্জ/হজ, ‘উমরাহ্ ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্য ভ্রমণ করা যাবে বলে এ হাদীসে প্রমাণ রয়েছে। এখানেও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।
(لَا تَرْكَبِ الْبَحْرَ إِلَّا حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا أَوْ غَازِيًا فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) তথা ‘‘হজ্জ/হজ, ‘উমরাহ্ ও আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছাড়া সমুদ্রপথে ভ্রমণ করো না’’ হাদীসের এ অংশটুকুতে তাদের কথার খন্ডন রয়েছে, যারা বলেন, হজ্জ/হজ ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে সমুদ্রপথ পাড়ি দেয়া একটি সমস্যা বা বাধা। অর্থাৎ- সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে হলে হজ্জ/হজ ফরয হয় না। তবে সঠিক কথা হলো, বেশীরভাগ পথ যদি নিরাপদ হয়, তাহলে হজ্জ/হজ ফরয হয়ে যাবে। আর ব্যতিক্রম হলে হজ্জ/হজ করা ব্যক্তির ইচ্ছাধীন থাকবে। বিশিষ্ট ফাকীহ আবূ লায়স সহ অন্যান্যরাও এ মত পোষণ করেছেন।
ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি হজ্জ/হজ করার জন্য সমুদ্রপথ ছাড়া অন্য কোনো পথ পাবে না, তার জন্য সমুদ্র পথে সফর করে হজ্জ/হজ করাই ফরয। অন্যান্য ফাকীহগণও এ মত পোষণ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ ‘‘আমার কাছে এটা স্পষ্ট নয় যে, হজ্জ/হজ আবশ্যকীয়। কেননা মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসের সানাদকে য‘ঈফ বলেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৮৬)
ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ সমুদ্রের সার্বিক বিষয়াদি বর্ণনা করাই এ হাদীসের উদ্দেশ্য, কারণ তাতে সফরকারী ব্যক্তি খুব দ্রুতই বিপদ আপদের সম্মুখীন হতে পারে। কোনো সময়ই সে ধ্বংস থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৮৬)