পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫০-[৬৩] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে উট বাঁধার রশি প্রাপ্তির আশায় জিহাদ করে, সে তার নিয়্যাত অনুযায়ী তা-ই পাবে। (নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَزَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَمْ يَنْوِ إِلَّا عِقَالًا فَلَهُ مَا نَوَى» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

وعن عبادة بن الصامت قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من غزا في سبيل الله ولم ينو الا عقالا فله ما نوى» . رواه النساىي

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটি মানুষের নিয়্যাত অনুসারে কর্মফল পাওয়ার একটি দলীল। কেউ যদি কেবলমাত্র গনীমাতের সম্পদ অর্জনের জন্য জিহাদ করে তাহলে সে কেবল ঐ গনীমাতের সম্পদই পাবে- পরকালে তার জন্য কোনো প্রতিদান নেই।

হাদীসের বাণী (وَلَمْ يَنْوِ إِلَّا عِقَالًا) তথা ‘‘সে কেবলমাত্র একটি রশি পাওয়ার নিয়্যাত করেছে’’ এর উদ্দেশ্য হলো সে দুনিয়াবী কোনো তুচ্ছ প্রতিদানের আশা করেছে অর্থাৎ- শুধু গনীমাতের মাল পাওয়ার ইচ্ছা করেছে। এ বাক্যে عقال (‘ইকাল) অর্থ হলো এমন একটি রশি, যা উটকে পলায়ন করা থেকে বিরত রাখার জন্য তার হাঁতে বেঁধে রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(فَلَه مَا نَوٰى) বলতে বুঝানো হয়েছে, সে কোনো পরকালীন প্রতিদান পাবে না। এর ব্যাখ্যায় ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো মুজাহিদ ব্যক্তি যেন কোনরূপ গনীমাত লাভের প্রত্যাশা পরিত্যাগ করে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যুদ্ধ করে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ «وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوٰى» অর্থাৎ- ‘‘প্রত্যেকেই স্বীয় নিয়্যাতানুসারেই কর্মফল পাবে’’- (সহীহুল বুখারী হাঃ ১)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫১-[৬৪] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব্ (প্রতিপালক) হিসেবে, ইসলামকে দীন (জীবন বিধান) হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল (উত্তম আদর্শ) হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছে, তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে গেছে। এটা শুনে আবূ সা’ঈদ অত্যন্ত আনন্দ আতিশয্যে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ মাহাত্ম্যপূর্ণ কথাগুলো পুনরায় বলুন! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় তা বললেন। অতঃপর আরো বললেন, আরও একটি উত্তম কাজ রয়েছে যা আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে জান্নাতে একশত গুণের উচ্চাসনে মর্যাদা দিবেন, প্রতিটি মর্যাদা বা স্তরের মাঝে দূরত্ব হলো আকাশমন্ডলী ও দুনিয়ার মধ্যকার সমপরিমাণ। তিনি [আবূ সা’ঈদ (রাঃ)] জিজ্ঞেস করলেন, সেই (দ্বিতীয়) কাজটি কী, হে আল্লাহর রসূল? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ, আল্লাহর পথে জিহাদ, আল্লাহর পথে জিহাদ। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «من رَضِي بِاللَّه رَبًّا وَالْإِسْلَام دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ» . فَعَجِبَ لَهَا أَبُو سَعِيدٍ فَقَالَ: أَعِدْهَا عَلَيَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَعَادَهَا عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «وَأُخْرَى يَرْفَعُ اللَّهُ بِهَا الْعَبْدَ مِائَةَ دَرَجَةٍ فِي الْجَنَّةِ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ» . قَالَ: وَمَا هِيَ يَا رَسُولَ الله؟ قَالَ: «الْجِهَاد فِي سَبِيل الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ الله» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي سعيد رضي الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من رضي بالله ربا والاسلام دينا وبمحمد رسولا وجبت له الجنة» . فعجب لها ابو سعيد فقال: اعدها علي يا رسول الله فاعادها عليه ثم قال: «واخرى يرفع الله بها العبد ماىة درجة في الجنة ما بين كل درجتين كما بين السماء والارض» . قال: وما هي يا رسول الله؟ قال: «الجهاد في سبيل الجهاد في سبيل الله الجهاد في سبيل الله» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচনাধীন হাদীসটির ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহকে রব্ হিসেবে, ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্যিকারার্থে রসূল হিসেবে মেনে নেয়ার প্রতিদান উল্লেখ করা হয়েছে, আর তা হলো ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। উক্ত হাদীসের শেষাংশে জিহাদের ফযীলত সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।

হাদীসের বক্তব্য (مَنْ رَضِىَ بِاللّٰهِ رَبًّا) তথা ‘‘যে আল্লাহকে রব্ হিসেবে মেনে নিবে’’ এখানে উদ্দেশ্য হলো ঐ ব্যক্তি আল্লাহর সকল ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকবে এবং ধৈর্যধারণ করবে। অর্থাৎ- আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদীরের ভালো-মন্দ মেনে নিবে এবং কল্যাণ-অকল্যাণ, সুসময়-দুঃসময় সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে।

(وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ) অর্থ হলো ‘‘তার জন্য জান্নাত অবধারিত বা সুনিশ্চিত হয়ে যাবে’’। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَأُخْرٰى يَرْفَعُ اللّٰهُ بِهَا الْعَبْدَ مِائَةَ دَرَجَةٍ فِى الْجَنَّةِ) তথা ‘‘অন্য একটি কাজ রয়েছে যা দ্বারা আল্লাহ জান্নাতে বান্দার একশত স্তর বা মর্যাদা দিবেন’’ এ বাক্যের উদ্দেশ্য বর্ণনায় কাযী ইয়ায বলেনঃ এ বাক্যটির বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য হওয়া সম্ভবপর। এখানে درجة বলতে এমন স্তরসমূহকে বুঝানো হয়েছে যেগুলো একটি অপরটির চেয়ে অনেক উঁচু। আবার এ অর্থও নেয়া যেতে পারে যে, উঁচু মর্যাদা বলতে জান্নাতের নি‘আমাত ও অনুগ্রহের আধিক্য বুঝানো হয়েছে। তাদেরকে এই মর্যাদা দেয়া হবে তাদের কৎকর্ম ও সম্মানের কারণে এবং প্রত্যেকটি মর্যাদা বা স্তরের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করা হবে আসমান ও জমিনের দূরতেবর মতো। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৮৮৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫২-[৬৫] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের দরজাসমূহ তরবারির ছায়ায় ঘেরা। এটা শুনে জীর্ণশীর্ণ জনৈক ব্যক্তি তাকে (আবূ মূসা আল আশ্’আরী -কে) জিজ্ঞেস করল, আপনি কি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর লোকটি উঠে স্বীয় সঙ্গীদের নিকট গিয়ে তাদেরকে সালাম করলেন এবং নিজের তরবারির খাপ খুলে ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে উন্মু্ক্ত তরবারি নিয়ে শত্রুর মুকাবিলায় অগ্রসর হলেন এবং অবশেষে বহু শত্রু হত্যা করে নিজে শাহাদাত লাভ করলেন। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ» فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الْهَيْئَةِ فَقَالَ: يَا أَبَا مُوسَى أَنْتَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ هَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ فَرَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ فَقَالَ: أَقْرَأُ عَلَيْكُمُ السَّلَامَ ثُمَّ كَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَأَلْقَاهُ ثُمَّ مَشَى بِسَيْفِهِ إِلَى الْعَدُوِّ فَضَرَبَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي موسى قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان ابواب الجنة تحت ظلال السيوف» فقام رجل رث الهيىة فقال: يا ابا موسى انت سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول هذا؟ قال: نعم فرجع الى اصحابه فقال: اقرا عليكم السلام ثم كسر جفن سيفه فالقاه ثم مشى بسيفه الى العدو فضرب به حتى قتل. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: পূর্বোল্লিখিত হাদীসটিতে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বা যুদ্ধ করাকে জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ) তথা ‘‘নিশ্চয় জান্নাতের দরজাসমূহ তারবারির ছায়ার নীচে অবস্থিত’’, ‘উলামায়ে কিরাম এ বাক্যের ভাবার্থ নির্ণয় করে বলেন, নিশ্চয় জান্নাত লাভের সঠিক পথ বা উপায় হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়া। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯০২)

(فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الْهَيْئَةِ) তথা ‘‘অতঃপর একজন লোক জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় দাঁড়াল’’, অর্থাৎ ঐ লোকটিকে অত্যন্ত দরিদ্র মনে হচ্ছিল এবং তার মাথার চুলগুলো এলোমেলো ছিল। ফলে তাকে খুবই হুমড়াচোমড়া মনে হচ্ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৩-[৬৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের ভাইয়েরা যখন উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের রূহগুলোকে (জান্নাতের) সবুজ পাখির অভ্যন্তরে স্থাপন করেন। আর এ পাখিগুলো জান্নাতের নহরসমূহে বিচরণ করে, জান্নাতের ফল-ফলাদি খায় এবং ’আরশের ছায়ায় স্বর্ণের ফানুসে ঝুলন্তরূপে অবস্থান করে। অতঃপর তারা যখন এরূপ সুমিষ্ট পানীয়, সুস্বাদু খাদ্য ও আরামদায়ক মনোমুগ্ধকর বিশ্রামাগার লাভ করবে, তখন তারা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে বলে উঠবে, এমন কে আছে যে আমাদেরকে ভাইদের নিকট সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দেবে, আমরা যে জান্নাতে জীবিত অবস্থান করছি তারা যাতে জান্নাত লাভে অবহেলিত না হয় এবং জিহাদের মাঠে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে। এমতাবস্থায় তাদের এ আকাঙ্ক্ষার উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি তোমাদের পক্ষ হতে তাদের নিকট সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দেব। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন, ’’যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রিযকপ্রাপ্ত হয়’’- (সূরা আ-লি ’ইমরান ৩ : ১৬৯)। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لِأَصْحَابِهِ: إِنَّهُ لَمَّا أُصِيبَ إِخْوَانُكُمْ يَوْمَ أُحُدٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ تَرِدُ أَنْهَارَ الْجَنَّةِ تَأْكُلُ مِنْ ثِمَارِهَا وَتَأْوِي إِلَى قَنَادِيلَ مِنْ ذَهَبٍ مُعَلَّقَةٍ فِي ظلِّ العرْشِ فلمَّا وجَدوا طِيبَ مأكَلِهِم ومشرَبِهمْ ومَقِيلهِم قَالُوا: مَنْ يُبلِّغُ إِخْوانَنا عنَا أَنَّنا أَحْيَاءٌ فِي الْجَنَّةِ لِئَلَّا يَزْهَدُوا فِي الْجَنَّةِ وَلَا يَنكُلوا عندَ الحربِ فَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَنا أبلغكم عَنْكُمْ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ)
إِلَى أخر الْآيَات)
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لاصحابه: انه لما اصيب اخوانكم يوم احد جعل الله ارواحهم في جوف طير خضر ترد انهار الجنة تاكل من ثمارها وتاوي الى قناديل من ذهب معلقة في ظل العرش فلما وجدوا طيب ماكلهم ومشربهم ومقيلهم قالوا: من يبلغ اخواننا عنا اننا احياء في الجنة لىلا يزهدوا في الجنة ولا ينكلوا عند الحرب فقال الله تعالى: انا ابلغكم عنكم فانزل الله تعالى: (ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله امواتا بل احياء) الى اخر الايات) رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে উহুদ যুদ্ধে শহীদদের আত্মার অবস্থা বর্ণনা করে সকল মুসলিমদের জিহাদের প্রতি এবং শাহাদাতের কামনা করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

(إِنَّه لَمَّا أُصِيْبَ إِخْوَانُكُمْ يَوْمَ أُحُدٍ) এ বাক্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে চেয়েছেন যে, যখন তোমাদের মুসলিম ভাইয়েরা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিল। এ বাক্যের অর্থ হলো, তারা যখন শাহাদাতের সৌভাগ্য লাভ করেছিল। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫১৭)

(جَعَلَ اللّٰهُ أَرْوَاحَهُمْ فِىْ جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ) অর্থাৎ- সবুজ রঙের পাখীর পেটের ভিতর তাদের অন্তরসমূহ স্থাপন করা হয়েছে, ফলে তা সজিবতা ফিরে পেয়েছে এবং জান্নাতে এদিক ওদিক ঘুরাফেরার সক্ষমতা লাভ করেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(فَلَمَّا وَجَدُوْا طِيْبَ مأكَلِهِمْ وَمَشْرَبِهِمْ ومَقِيْلِهِمْ) তথা যখন তারা তাদের উত্তম পানাহারের ব্যবস্থা এবং উৎকৃষ্ট আবাসস্থল পেয়ে গেল তখন তারা দুনিয়ায় জীবিত ভাইদের কাছে এ সংবাদ পাঠানোর আকাঙ্ক্ষা করল যে, তারা জান্নাতে জীবিত অবস্থায় রয়েছে। যাতে করে অন্যরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে উৎসাহিত হয়। ‘মাক্বীল’ শব্দের অর্থ হলো ঐ জায়গা যেখানে দ্বিপ্রহরের সময় বিশ্রাম নেয়া হয়।

(وَلَا يَنْكُلُوْا عِنْدَ الْحَرْبِ) এর অর্থ হলো, তারা যেন আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ বা জিহাদ করার ক্ষেত্রে কাপুরুষতা প্রদর্শন না করে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫১৭)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৪-[৬৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার মু’মিনগণ তিন ভাগে বিভক্ত- (১) যারা আল্লাহ ও তার রসূলের ওপর দৃঢ়চিত্তে ঈমান আনে, অতঃপর কোনো সন্দেহ-সংশয় পোষণ করে না এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। (২) যাদের হাত থেকে প্রতিটি মুসলিমের স্বীয় জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করে। (৩) দুনিয়ার মোহ ও লালসা যার অন্তরে জাগ্রত হয়, অতঃপর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় তা পরিহার করে। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمُؤْمِنُونَ فِي الدُّنْيَا عَلَى ثَلَاثَةِ أَجْزَاءٍ: الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِي يأمنه النَّاس على النَّاسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ ثُمَّ الَّذِي إِذَا أَشْرَفَ عَلَى طَمَعٍ تَرَكَهُ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ . رَوَاهُ أَحْمد

وعن ابي سعيد الخدري ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: المومنون في الدنيا على ثلاثة اجزاء: الذين امنوا بالله ورسوله ثم لم يرتابوا وجاهدوا باموالهم وانفسهم في سبيل الله والذي يامنه الناس على الناس على اموالهم وانفسهم ثم الذي اذا اشرف على طمع تركه لله عز وجل . رواه احمد

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে মু’মিনদেরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের মু’মিনদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলী আলোচনা করা হয়েছে। তাদের প্রথম সারির মু’মিন হলো যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পাশাপাশি নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।

(اَلْمُؤْمِنُونَ فِى الدُّنْيَا عَلٰى ثَلَاثَةِ أَجْزَاءٍ) এ বাক্যের ব্যাখ্যায় ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ أجزاء (আজ্যা) বলা হয় নির্দিষ্ট কোনো বস্তুর বিভিন্ন অংশ বা ভাগকে। তবে বন্ধুত্ব ও সহানুভূতি বহিঃপ্রকাশের দিক থেকে সকল মু’মিন একটি মাত্র আত্মার মতো। যেন সকলে মিলে একটি সিসেঢালা প্রাচীর।

(الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا) তথা ‘‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে এবং কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করেনি’’ এ বাক্যে ‘‘কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি’’ এর অর্থ হলো, তারা তাদের ঈমান অনুসারে ‘আমল করেছে এবং আল্লাহ ও রসূলের কোনো আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলেনি। কেননা যারা আল্লাহকে দেয়া প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পূর্ণ করে তারাই প্রকৃত মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত। ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি’’ এ কথার ব্যাখ্যা হলো নিম্নোক্ত কুরআনের আয়াত : অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয় যারা বলে আমাদের রব্ হলেন আল্লাহ, অতঃপর তারা এ কথার উপর অটল অবিচল থাকে....’’- (সূরা ফুস্সিলাত ৪১ : ৩০)।

(الَّذِىْ إِذَا أَشْرَفَ عَلٰى طَمَعٍ تَرَكَه لِلّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ) এখানে ত্বমা‘ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুপ্রবৃত্তি- যেদিকে সাধারণত মানুষ অধিকহারে ধাবিত হয়। আর এই কুপ্রবৃত্তি তাকে হাকের অনুসরণ থেকে সদা বিরত রাখার জন্য প্রাণপণ অপচেষ্টা চালায়।

মহান আল্লাহ তা‘আলা এ মর্মে উল্লেখ করেন : অর্থাৎ- ‘‘আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজেকে দূরে রাখে, জান্নাতই হলো তার বাসস্থান।’’ (সূরা আন্ না-যি‘আ-ত ৭৯ : ৪০-৪১)

উল্লেখিত হাদীসে ত্বমা‘ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পার্থিব সম্মান ও সম্পদের দিকে ঝুঁকে পড়া এবং আল্লাহর কথা ভুলে যাওয়া। মূলত এসব বৈধ হলেও তা থেকে দূরে থাকাই পূর্ণ মু’মিনের পরিচয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৫-[৬৮] ’আব্দুর রহমান ইবনু আবূ ’আমীরহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিমকে আল্লাহ মৃত্যু দান করার পরে আবার তোমাদের মধ্যে (দুনিয়ায়) ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও দুনিয়া ও তার সমুদয় ধন-সম্পদের পরিমাণ তাকে দেয়া হয়, একমাত্র শাহাদাতবরণ ব্যতীত। ইবনু আবূ ’আমীরহ্ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ সমৃদ্ধ গ্রাম ও নগরের অধিবাসীর মালিক হওয়া অপেক্ষা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া আমার নিকট সর্বোত্তম। (নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن عبدِ الرَّحمنِ بن أبي عَميرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنْ نَفْسٍ مُسْلِمَةٍ يَقْبِضُهَا رَبُّهَا تُحِبُّ أَنْ تَرْجِعَ إِلَيْكُمْ وَأَنَّ لَهَا الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا غير الشَّهِيد» قَالَ ابْن عَمِيرَةَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَأَنْ أُقْتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ يَكُونَ لِي أَهْلُ الْوَبَرِ وَالْمَدَرِ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

وعن عبد الرحمن بن ابي عميرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ما من نفس مسلمة يقبضها ربها تحب ان ترجع اليكم وان لها الدنيا وما فيها غير الشهيد» قال ابن عميرة: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لان اقتل في سبيل الله احب الي من ان يكون لي اهل الوبر والمدر» . رواه النساىي

ব্যাখ্যা: আলোচনাধীন হাদীসে শাহীদের মর্যাদা আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তিই কেবল অফুরন্ত নি‘আমাত লাভের পরও পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে এসে আবার শাহাদাতের সৌভাগ্য লাভের ইচ্ছা পোষণ করবে; অথচ সেখানে সে দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর তুলনায় বেশী নি‘আমাত পাবে।

(مَا مِنْ نَفْسٍ مُسْلِمَةٍ يَقْبِضُهَا رَبُّهَا) এ বাক্যে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা নিজে মানুষের মৃত্যু ঘটান। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কতিপয় ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহই আত্মাসমূহের মৃত্যু ঘটান, আর রূপকার্থে মালাকুল মাওত (ফেরেশতা) মৃত্যু ঘটায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(لَأَنْ أُقْتَلَ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ يَّكُوْنَ لِىْ أَهْلُ الْوَبَرِ وَالْمَدَرِ) এ বাক্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত বরণ করা আমার নিকট আহলুল ওয়াবার ও আহলুল মাদার অপেক্ষা উত্তম’’। الوبر (আল ওয়াবার) শব্দের অর্থ পশম। এখানে أهل الوبر (আহলুল ওয়াবার) বলতে মরুভূমিতে বসবাসকারী বা যাযাবরদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, কারণ তাদের তাঁবুগুলো সাধারণত পশমের তৈরি হয়ে থাকে। আর المدر أهل (আহলুল মাদার) বলতে গ্রাম ও শহরে বসবাসকারীদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে। মোটকথা এখানে আহলুল ওয়াবার ও আহলুল মাদার বলতে দুনিয়া এবং তার মাঝে যত কিছু আছে সব কিছু উদ্দেশ্য। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়া এবং তার মাঝে থাকা সবকিছু অপেক্ষা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করা তার নিকট অধিক উত্তম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৬-[৬৯] হাসনা বিনতু মু’আবিয়াহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার চাচা (হারিস) আমাকে হাদীস বর্ণনা করেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, কারা জান্নাতে প্রবেশ করবে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ নবীগণ, শহীদগণ ও সদ্যপ্রসূত শিশু এবং জীবন্ত কবরস্থ (কন্যা সন্তান) জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ حَسْنَاءَ بِنْتِ مُعَاوِيَةَ قَالَتْ: حَدَّثَنَا عَمِّي قَالَ: قَلْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ فِي الْجَنَّةِ؟ قَالَ: «النَّبِيُّ فِي الْجَنَّةِ وَالشَّهِيدُ فِي الْجَنَّةِ وَالْمَوْلُودُ فِي الْجَنَّةِ وَالْوَئِيدُ فِي الْجنَّة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن حسناء بنت معاوية قالت: حدثنا عمي قال: قلت للنبي صلى الله عليه وسلم: من في الجنة؟ قال: «النبي في الجنة والشهيد في الجنة والمولود في الجنة والوىيد في الجنة» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে বিশেষ শ্রেণীর কিছু মানুষকে জান্নাতী বলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে নাবীদের পরে সর্বপ্রথম জান্নাতী হলো আল্লাহর রাস্তায় শহীদগণ। সুতরাং এ হাদীসে শহীদদের সৌভাগ্যের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

হাদীসে ‘‘শহীদ’’ শব্দের আরো একটি ব্যাখ্যা করা হয় আর তা হলো এখানে ‘শহীদ’ বলতে সাধারণ মু’মিনরাও উদ্দেশ্য হতে পারে। কেননা আল্লাহ আ‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে, তারাই তাদের রবে্র নিকট সিদ্দীক ও শুহাদা’’- (সূরা আল হাদীদ ৫৭ : ১৯)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَالْمَوْلُوْدُ فِى الْجَنَّةِ) এর ব্যাখ্যায় ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ ‘‘মাওলূদ’’ বলা হয় ঐ নবজাতক শিশুকে, যে ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই মাতৃগর্ভ থেকে পড়ে গেছে- যার কোনো পাপ নেই।

হাদীসের শেষ বাক্য (وَالْوَئِيْدُ فِى الْجنَّةِ) অর্থাৎ- ‘‘ওয়ায়ীদ ও জান্নাতী’’, ইমাম খত্ত্বাবী (রহঃ) এর ব্যাখ্যা করে বলেন, এখানে الوئيد (ওয়ায়ীদ) অর্থ হলো ঐ নবজাতক শিশু, যাকে জীবিত অবস্থায় মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়েছে। জাহিলী যুগের পথভ্রষ্ট মানুষেরা সমাজে লজ্জা ও অপমানের ভয়ে তাদের কন্যা সন্তানদের মাটিতে পুঁতে দিত। আবার তাদের কেউ কেউ অভাবের কারণে পুত্র সন্তানদেরও পুঁতে দিত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫১৭)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৭-[৭০] ’আলী, আবুদ্ দারদা, আবূ হুরায়রাহ্, আবূ উমামাহ্, ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার, ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর, জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ ও ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (ওযরবশত জিহাদে যেতে না পেরে) আল্লাহর পথে খরচের জন্য অর্থ, সম্পদ পাঠিয়ে দিয়ে সে নিজ বাড়িতে অবস্থান করে। এতে প্রতি দিরহামের (মুদ্রার) খরচের বিনিময়ে সাতশত গুণ সাওয়াব অর্জিত হবে, পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি স্বয়ং আল্লাহর উদ্দেশে জিহাদ করল এবং তাতে অর্থ ব্যয় করল, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় তার প্রতিটি দিরহাম খরচের পরিবর্তে সাতলক্ষ দিরহামের সাওয়াব অর্জিত হবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’আর আল্লাহ তা’আলা যাকে ইচ্ছা করেন, বহুগুণ বাড়িয়ে দেন’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২৬১)। (ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَلِيٍّ وَأَبِي الدَّرْدَاءِ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي أُمَامَةَ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ وَعِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَجْمَعِينَ كُلُّهُمْ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَنْ أَرْسَلَ نَفَقَةً فِي سبيلِ الله وأقامَ فِي بيتِه فلَه بكلِّ دِرْهَمٍ سَبْعُمِائَةِ دِرْهَمٍ وَمَنْ غَزَا بِنَفْسِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَنْفَقَ فِي وَجْهِهِ ذَلِكَ فَلَهُ بِكُلِّ دِرْهَمٍ سَبْعُمِائَةِ أَلْفِ دِرْهَمٍ» . ثُمَّ تَلَا هذهِ الآيةَ: (واللَّهُ يُضاعفُ لمنْ يشاءُ)
رَوَاهُ ابنُ مَاجَه

وعن علي وابي الدرداء وابي هريرة وابي امامة وعبد الله بن عمر وعبد الله بن عمرو وجابر بن عبد الله وعمران بن حصين رضي الله عنهم اجمعين كلهم يحدث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال: «من ارسل نفقة في سبيل الله واقام في بيته فله بكل درهم سبعماىة درهم ومن غزا بنفسه في سبيل الله وانفق في وجهه ذلك فله بكل درهم سبعماىة الف درهم» . ثم تلا هذه الاية: (والله يضاعف لمن يشاء) رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে স্বশরীরে অংশগ্রহণ এবং খরচ করার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।

(فَلَه بِكُلِّ دِرْهَمٍ سَبْعُمِائَةِ دِرْهَمٍ) এ বাক্যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য ব্যয়কৃত অর্থের সাতশ’ গুণ বেশী নেকী হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ নেকীর এই পরিমাণ কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত থেকেও পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ব্যায় করে তাদের উদাহরণ এমন একটি শস্যদানার মতো যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে যার প্রত্যেকটিতে একশত করে শস্যদানা রয়েছে। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে আরো বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ সুপ্রশস্ত এবং মহাজ্ঞানী’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২৬১)। আর দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রতিদান সাত হাজার গুণ বেশী হওয়ার কারণ হলো, সে স্বশরীরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং শারীরিক কষ্ট ও আর্থিত ব্যয় দু’টোই একত্রিত হয়েছে, ফলে তার প্রতিদানও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৮-[৭১] ফাযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) থেকে জেনেছি। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, শাহাদাত বরণ চারভাবে হয়ঃ প্রথমতঃ প্রকৃত মু’মিন ব্যক্তি তেজোদীপ্ত ঈমান নিয়ে সত্যনিষ্ঠার সাথে শত্রুর মুকাবিলায় লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে গেল এবং তিনি এমন মর্যাদার উচ্চাসনের অধিকারী হবে যে, কিয়ামতের দিন যার প্রতি মানুষ এমনভাবে মাথা তুলে তাকাবে যে, এটা বলতে বলতে তিনি এত উঁচু মাথা উঠালেন যাতে মাথার টুপি নীচে পড়ে গেল। তিনি (ফাযালাহ্) এ কথা দ্বারা ’উমার -এর টুপি নাকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর টুপি পড়ে যাবার উল্লেখ করেছেন তা আমার জানা নেই।

দ্বিতীয়তঃ এমন পূর্ণ মু’মিন ব্যক্তি যে শত্রুর সম্মুখীন হয়ে দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ করল বটে, কিন্তু বীরত্বের অভাবে বা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে শত্রুর মুকাবিলায় তার শরীরে কাঁটা গাছের কাঁটা বিঁধে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে, এমতাবস্থায় হঠাৎ এক ব্যক্তির তীরের আঘাতে সে মৃত্যুবরণ করল, এ ব্যক্তিই দ্বিতীয় শ্রেণীর। তৃতীয়তঃ এমন মু’মিন ব্যক্তি, যে জীবনে পাপ-পুণ্যের সাথে সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে, অতঃপর পরে যথার্থ বীরের ন্যায় জিহাদে অংশগ্রহণ করেছে এবং পরিশেষে স্বীয় ঈমানের বলে সত্যনিষ্ঠার শহীদ হয়েছে, এ ব্যক্তি হলো তৃতীয় শ্রেণীর। চতুর্থতঃ ঐ মু’মিন ব্যক্তি, যে জীবনে অনেক অনাচার-অরাজকতা করেছে, অতঃপর সে জিহাদে অংশগ্রহণ করে আল্লাহ তা’আলার সাথে কৃত অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করে, এ ব্যক্তি হলো চতুর্থ পর্যায়ের শহীদ। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن فَضالةَ بنِ عُبيد قَالَ: سمِعْتُ عمَرَ بن الْخطاب يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الشُّهَدَاءُ أَرْبَعَةٌ: رَجُلٌ مُؤْمِنٌ جَيِّدُ الْإِيمَانِ لَقِيَ الْعَدُوَّ فَصَدَقَ اللَّهَ حَتَّى قُتِلَ فَذَلِكَ الَّذِي يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ أَعْيُنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ هَكَذَا وَرَفَعَ رَأْسَهُ حَتَّى سَقَطَتْ قَلَنْسُوَتُهُ فَمَا أَدْرِي أَقَلَنْسُوَةَ عُمَرَ أَرَادَ أَمْ قَلَنْسُوَةَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: «وَرَجُلٌ مُؤْمِنٌ جَيِّدُ الْإِيمَانِ لَقِيَ الْعَدُوَّ كَأَنَّمَا ضَرَبَ جِلْدَهُ بِشَوْكٍ طَلْحٍ مِنَ الْجُبْنِ أَتَاهُ سَهْمٌ غَرْبٌ فَقَتَلَهُ فَهُوَ فِي الدَّرَجَةِ الثَّانِيَةِ وَرَجُلٌ مُؤْمِنٌ خَلَطَ عَمَلًا صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا لَقِيَ الْعَدُوَّ فَصَدَقَ اللَّهَ حَتَّى قُتِلَ فَذَلِكَ فِي الدَّرَجَةِ الثَّالِثَةِ وَرَجُلٌ مُؤْمِنٌ أَسْرَفَ عَلَى نَفْسِهِ لَقِيَ الْعَدُوَّ فَصَدَقَ اللَّهَ حَتَّى قُتِلَ فَذَاكَ فِي الدَّرَجَةِ الرَّابِعَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

وعن فضالة بن عبيد قال: سمعت عمر بن الخطاب يقول: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: الشهداء اربعة: رجل مومن جيد الايمان لقي العدو فصدق الله حتى قتل فذلك الذي يرفع الناس اليه اعينهم يوم القيامة هكذا ورفع راسه حتى سقطت قلنسوته فما ادري اقلنسوة عمر اراد ام قلنسوة النبي صلى الله عليه وسلم؟ قال: «ورجل مومن جيد الايمان لقي العدو كانما ضرب جلده بشوك طلح من الجبن اتاه سهم غرب فقتله فهو في الدرجة الثانية ورجل مومن خلط عملا صالحا واخر سيىا لقي العدو فصدق الله حتى قتل فذلك في الدرجة الثالثة ورجل مومن اسرف على نفسه لقي العدو فصدق الله حتى قتل فذاك في الدرجة الرابعة» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে ঈমান ও ‘আমলের ভিত্তিতে শহীদদেরকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে তাদের সকলেই জান্নাতী; যদিও জান্নাতে তাদের স্তর বা মর্যাদার ব্যবধান থাকবে।

(الشُّهَدَاءُ أَرْبَعَةٌ) এ কথার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘‘শহীদগণ চার প্রকারের বা চার শ্রণীর’’ এটিও উদ্দেশ্য হতে পারে, আবার চারজন নির্দিষ্ট শহীদও উদ্দেশ্য হতে পারে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ৩৮৫৮)

হাদীসে বারংবার বর্ণিত শব্দ (فَصَدَقَ اللّٰهَ) এর অর্থ হলো আল্লাহর সাথে তার যে বীরত্বের অঙ্গীকার ছিল তা পূর্ণ করেছে, অর্থাৎ কাপুরুষতা প্রদর্শন করেনি। সুতরাং সে মহান আল্লাহর সাথে যে শাহাদাতের অঙ্গীকার করেছিল তা পূর্ণ করেছে।

(حَتّٰى قُتِلَ) অর্থাৎ- সে শাহাদাত বরণ করে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ মহান আল্লাহ তা‘আলা মুজাহিদদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, তারা সাওয়াবের আশায় ধৈর্য সহকারে যুদ্ধ করবে। সুতরাং হাদীসে উল্লেখিত ব্যক্তি ধৈর্য সহকারে সাওয়াবের প্রত্যাশী হয়ে আমরণ যুদ্ধ করে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারকে স্বীয় কর্মের মাধ্যমে পূর্ণ করেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শক্তিশালী ও সাহসী মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল ও কাপুরুষ মু’মিনের তুলনায় বেশী প্রিয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৪৪)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৯-[৭২] ’উতবাহ্ ইবনু ’আব্দুস্ সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিহাদে নিহত ব্যক্তি তিন শ্রেণীর হয়ে থাকে।

১- সেই প্রকৃত মু’মিন ব্যক্তি, যে নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, শত্রুর মুকাবিলায় বীরদর্পে লড়াই করে, পরিশেষে শাহাদাত বরণ করে। এদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ ব্যক্তিই পরীক্ষিত শহীদ। সুতরাং ’আরশের নিচে আল্লাহর তাঁবুতে তাদেরই স্থান হবে। আর নবী-রসূলগণের মর্যাদা যে সমস্ত শাহীদের ওপর নাবূওয়াতের মর্যাদা ব্যতীত অধিক অন্য কোনো কিছু হবে না।

২- সেই মু’মিন ব্যক্তি, যে পাপ-পুণ্যের জীবন অতিবাহিত করেছে, আর নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করতে করতে শাহাদাত লাভ করেছে। তার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে পাপরাশি মোচনকারী শাহাদাত লাভ; যা তার অন্যায় ও অপরাধসমূহ মুছে দেয়। মূলত তরবারি হলো সকল গুনাহ মোচনকারী, ফলে সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা অনায়াসে প্রবেশ করবে।

৩- মুনাফিক (মুসলিম) নিজের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে, এমনকি শত্রু মুকাবিলায় যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণও করে; কিন্তু সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কেননা তরবারি (মুনাফিকের) নিফাক দূরীভূত করতে পারে না। (দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن عُتبةَ بن عبدٍ السَّلَميِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: الْقَتْلَى ثَلَاثَة: مُؤمن جَاهد نَفسه وَمَالِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ: «فَذَلِكَ الشَّهِيدُ الْمُمْتَحَنُ فِي خَيْمَةِ اللَّهِ تَحْتَ عَرْشِهِ لَا يَفْضُلُهُ النَّبِيُّونَ إِلَّا بِدَرَجَةِ النُّبُوَّةِ وَمُؤْمِنٌ خَلَطَ عَمَلًا صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا جَاهَدَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ» قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ: «مُمَصْمِصَةٌ مَحَتْ ذُنُوبَهُ وَخَطَايَاهُ إِنَّ السَّيْفَ مَحَّاءٌ لِلْخَطَايَا وَأُدْخِلَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَ وَمُنَافِقٌ جَاهَدَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَإِذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ فَذَاكَ فِي النَّارِ إِنَّ السيفَ لَا يمحُو النِّفاقَ» . رَوَاهُ الدارميُّ

وعن عتبة بن عبد السلمي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: القتلى ثلاثة: مومن جاهد نفسه وماله في سبيل الله فاذا لقي العدو قاتل حتى يقتل قال النبي صلى الله عليه وسلم فيه: «فذلك الشهيد الممتحن في خيمة الله تحت عرشه لا يفضله النبيون الا بدرجة النبوة ومومن خلط عملا صالحا واخر سيىا جاهد بنفسه وماله في سبيل الله اذا لقي العدو قاتل حتى يقتل» قال النبي صلى الله عليه وسلم فيه: «ممصمصة محت ذنوبه وخطاياه ان السيف محاء للخطايا وادخل من اي ابواب الجنة شاء ومنافق جاهد بنفسه وماله فاذا لقي العدو قاتل حتى يقتل فذاك في النار ان السيف لا يمحو النفاق» . رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: পূর্বোল্লিখিত হাদীসে জান্নাতী শহীদদের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হয়েছে। আর এ হাদীসে নিহত ব্যক্তিদের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হয়েছে।

প্রথম প্রকার হলো মু’মিন, যে ‘আমলের দিক থেকে পূর্ণ নেক ‘আমলকারী। নিজের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার কারণে সে জান্নাতী হবে এবং জান্নাতে নাবীদের স্তরের সাথে শুধুমাত্র নাবূওয়াতের কারণে সামান্য পার্থক্য ব্যতীত অন্য কোনো পার্থক্য থাকবে না। আর নাবীগণের সাথে তাদের এই পার্থক্যের কারণ হলো, আম্বিয়াগণ তাদের উম্মাতকে আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের সার্বিক দিকনির্দেশনা দেন আর তারা তা পালন করে, ফলে আম্বিয়াগণ বেশী মর্যাদার অধিকারী হবেন।

(مُمَصْمِصَةٌ مَحَتْ ذُنُوْبَه وَخَطَايَاهُ) তথা তার শাহাদাত বরণ তার সকল গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দিবে। এখানে ممصمصة শব্দটিকে স্ত্রীলিঙ্গে আনার কারণ হলো এর দ্বারা উদ্দেশ্য শাহাদাত বরণ করা। আর ‘আরবী ‘‘শাহাদাহ্’’ শব্দটি স্ত্রী লিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয়।

হাদীসের শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে নিহত হওয়া সত্ত্বেও মুনাফিক জাহান্নামী হবে, কারণ তরবারি নিফাকের মতো পাপকে মিটিয়ে দিতে অক্ষম; যদিও তরবারি গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়। তবে আল্লাহ তা‘আলা কখনো কখনো পাপী ও পথভ্রষ্ট লোকেদের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ আঞ্জাম দেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ «وَإِنَّ اللّٰهَ لَيُؤَيِّدُ هٰذَا الدِّينَ بِالرَّجُلِ الْفَاجِرِ» অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা পাপী ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাঁর দীনকে শক্তিশালী করেন’’- (সহীহুল বুখারী হাঃ ৩০৬২)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৬০-[৭৩] ইবনু ’আয়িয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির জানাযায় শরীক হলেন। যখন সালাত আদায়ের উদ্দেশে লাশ রাখা হলো, তখন ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এ ব্যক্তির জানাযার সালাত আদায় করাবেন না, কেননা লোকটি খারাপ ছিল। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এ ব্যক্তিকে কোনো ইসলামী ’আমল করতে দেখেছ? জনৈক ব্যক্তি উঠে বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! সে আল্লাহর পথে এক রাত (সীমান্ত) পাহাড়া দিয়েছিল। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জানাযার সালাত আদায় করলেন এবং তাকে কবরে নিজ হাতে তার উপর মাটি দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, সঙ্গী-সাথীদের ধারণা তুমি জাহান্নামের অধিবাসী। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি জান্নাতের অধিবাসী। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, হে ’উমার! মানুষের ’আমলের ব্যাপারে তোমাকে জিজ্ঞেস করা হবে না। তোমাকে তো ফিত্বরাতের (স্বভাব-ধর্ম ইসলামের কর্মের) ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن ابْن عائذٍ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جِنَازَةِ رَجُلٍ فَلَمَّا وُضِعَ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: لَا تُصَلِّ عَلَيْهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَإِنَّهُ رَجُلٌ فَاجِرٌ فَالْتَفَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى النَّاسِ فَقَالَ: «هَلْ رَآهُ أَحَدٌ مِنْكُمْ عَلَى عَمَلِ الْإِسْلَامِ؟» فَقَالَ رَجُلٌ: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ حَرَسَ لَيْلَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَثَا عَلَيْهِ التُّرَابَ وَقَالَ: «أَصْحَابُكَ يَظُنُّونَ أَنَّكَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَأَنَا أَشْهَدُ أَنَّكَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ» وَقَالَ: «يَا عُمَرُ إِنَّكَ لَا تُسْأَلُ عَنْ أَعْمَالِ النَّاسِ وَلَكِنْ تُسْأَلُ عَنِ الْفِطْرَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»

وعن ابن عاىذ قال: خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم في جنازة رجل فلما وضع قال عمر بن الخطاب رضي الله عنه: لا تصل عليه يا رسول الله فانه رجل فاجر فالتفت رسول الله صلى الله عليه وسلم الى الناس فقال: «هل راه احد منكم على عمل الاسلام؟» فقال رجل: نعم يا رسول الله حرس ليلة في سبيل الله فصلى عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم وحثا عليه التراب وقال: «اصحابك يظنون انك من اهل النار وانا اشهد انك من اهل الجنة» وقال: «يا عمر انك لا تسال عن اعمال الناس ولكن تسال عن الفطرة» . رواه البيهقي في «شعب الايمان»

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে পরোক্ষভাবে আল্লাহর রাস্তায় মুসলিমদের পাহাড়া দেয়ার ‘আমলটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে এবং যে ব্যক্তির ব্যাপারে ‘উমার খারাপ ধারণা রাখতেন কেবলমাত্র একরাত এই পাহাড়াদানের কাজে নিয়োজিত থাকায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা আদায় করলেন এবং তাকে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিলেন।

‘উমার -এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উক্ত পাপী ব্যক্তির জানাযার সালাত আদায় করতে নিষেধ করার কারণ ছিল, যাতে সকল মুনাফিক ও পাপিষ্ঠরা তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যায় এবং এটা যেন তাদের জন্য ধমকস্বরূপ হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَحَثَا عَلَيْهِ التُّرَابَ) এ বাক্যের ভাবার্থ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র হাত দিয়ে ঐ ব্যক্তির কবরে এক বা দু’বার মাটি দিলেন, যাতে লোকেরা তার সৎকাজটির প্রতি উৎসাহিত হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَلٰكِنْ تُسْأَلُ عَنِ الْفِطْرَةِ) এ বাক্যটি প্রমাণ করে যে, উল্লেখিত ব্যক্তিটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের উপরই অধিষ্ঠিত ছিল। এখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমার -কে মানুষের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করতে নির্দেশনা দিয়েছেন, কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু ও মেহেরবান।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ ফিত্বরাহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইসলাম ও সৎ ‘আমল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِه أَوْ يُنَصِّرَانِه أَوْ يُمَجِّسَانِه

অর্থাৎ- ‘‘প্রত্যেক নবজাতক শিশুই ফিত্বরাহ্-এর উপর জন্মলাভ করে, অতঃপর তার বাবা-মা- ই তাকে ইয়াহূদী, নাসারা কিংবা অগ্নিপূজক বানায়’’। (সহীহুল বুখারী, হাঃ ১৩৮৫)

হাদীসের উক্তিটির ভাবার্থ হলো, হে ‘উমার! তুমি এ অবস্থায় মৃত ব্যক্তির খারাপ ‘আমল সম্পর্কে আলোচনা করবে না; বরং তার ভালো কাজগুলো আলোচনা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেনঃ ‘‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো দিকগুলো স্মরণ কর’’। সুতরাং মৃতদের ভালো গুণাবলীসমূহ বর্ণনা করার প্রতি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমার -কে উৎসাহিত করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে