লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৬০-[৩৮] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’ইয়া- ’ইবা-দিয়াল্লাযীনা আসরফূ ’আলা- আনফুসিহিম, লা- তাকনাত্বূ ......’’ (অর্থাৎ- হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)। এ আয়াতের পরিবর্তে সারা দুনিয়া হাসিল হওয়াকেও আমি পছন্দ করি না। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। অতঃপর তিনবার করে বললেন, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে তার ব্যাপারেও।[1]
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا أُحِبُّ أَنَّ لِي الدُّنْيَا بِهَذِهِ الْآيَةِ (يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرفُوا على أنْفُسِهم لَا تَقْنَطوا) الْآيَةَ» فَقَالَ رَجُلٌ: فَمَنْ أَشْرَكَ؟ فَسَكَتَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «أَلا وَمن أشرَكَ» ثَلَاث مرَّاتٍ
ব্যাখ্যা: (مَا أُحِبُّ أَنَّ لِى الدُّنْيَا بِهٰذِهِ الْاٰيَةِ) ‘‘আমি পছন্দ করি না এ আয়াতের বিনিময়ে দুনিয়া আমার জন্য হাসিল হোক’’। অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলার বাণী- ‘‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩) এ আয়াতের পরিবর্তে সমগ্র দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা যদি আমার অর্জিত হয় আর আমি তা দান-খয়রাত করি অথবা তা আমি উপভোগ করি তবুও তা আমার নিকট পছন্দনীয় ও প্রিয় নয়। কেননা এ আয়াতে সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর এজন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে এ আয়াতের কথা উল্লেখ করেছেন। নতুবা কুরআনের সকল আয়াতই এ রকম, অর্থাৎ- তাঁর বিনিময়ে দুনিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না।
ইমাম শাওকানী বলেনঃ কুরআন কারীমের এ আয়াতটি সর্বাধিক আশাপ্রদ আয়াত। কেননা এতে সর্বাধিক শুভসংবাদ রয়েছে। প্রথমত আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে তার নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ يَا عِبَادِىَ ‘‘হে আমার বান্দাগণ!’’ এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন। এরপর বলেছেন যে, যারা অধিক বাড়াবাড়ি করেছে এবং অধিক পরিমাণ গুনাহতে লিপ্ত হয়েছে তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাদের তাঁর রহমাত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। অতএব যারা গুনাহ করেছে তবে বাড়াবাড়ি করেনি তাদের প্রতি নিরাশ না হওয়ার বাণী আরো অধিক কার্যকর।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রকারের গুনাহ ক্ষমা করবেন’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)। এতে বুঝা গেল যে, গুনাহের ধরন যাই হোক না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করেন। তবে আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আল্লাহ তা‘আলা শির্ক গুনাহ ক্ষমা করেন না’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)। এ শির্ক গুনাহকারী ব্যক্তি যদি তাওবাহ্ করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে তাহলে তিনি তাও ক্ষমা করেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)।
(فَقَالَ رَجُلٌ: فَمَنْ أَشْرَكَ؟) ‘‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে তাকে কি ক্ষমা করা হবে?’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বললেনঃ (أَلَا وَمَنْ أَشْرَكَ) ‘‘হ্যাঁ, যে শির্ক করেছে তাকেও তিনি ক্ষমা করবেন (যদি সে তাওবাহ্ করে)।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ শির্কে লিপ্ত ব্যক্তিও لَا تَقْنَطُوْا مِن رَّحْمَةِ اللّٰهِ ‘‘তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩) এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।