পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৮৭-[১] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সবসময় কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। যাঁর হাতে আমার জীবন নিহিত, তাঁর শপথ, নিশ্চয় কুরআন সিনা হতে এত তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায় যে, উটও তত তাড়াতাড়ি নিজের রশি ছিঁড়ে বের হয়ে যেতে পারে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَعَاهَدُوا الْقُرْآنَ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهْوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنَ الْإِبِلِ فِي عُقُلِهَا»
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (تَعَاهَدُوا الْقُرْاٰنَ) কুরআন পাঠে তোমরা যত্মবান হও, কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও।
এ বাক্যের تَعَاهَدُ শব্দটি تعهد রূপে تفقد বা অনুসন্ধান এর অর্থ প্রদান করেছে। সুতরাং পূর্ণ বাক্যের অর্থ যেন এরূপ হয়েছে :
تفقدوه وراعوه بالمحافظة وواظبوا على قراءته وداوموا على تكرار دراسته.
অর্থাৎ- তোমরা কুরআনের প্রতি অনুসন্ধানী হও, তার হিফ্যের প্রতি যত্মবান হও, আর সদা-সর্বদা তিলাওয়াতে অভ্যস্ত হও এবং তার পাঠ-পঠন অব্যাহত রাখ, যাতে তা ভুলে না যাওয়া হয়।
‘আল্লামা তুরবিশতী (রহঃ) বলেন, عهد এবং تعاهد উভয়ের অর্থ হলো التحفظ بالشيء অর্থাৎ- কোন বস্ত্ত দ্বারা কোন বস্ত্তর হিফাযাত করা। আর تجديد العهد به এর এখানে অর্থ হলো তিলাওয়াত এবং কিরাআতের মাধ্যমে তা হিফাযাতের উপদেশ প্রদান করা যাতে স্মরণ থেকে ঐ কুরআন বিস্মৃত না হয়।
উট একটি পলায়নপর প্রাণী, একে বেঁধে না রাখলে পালিয়ে যায়। কুরআনুল কারীমকে রশিতে বাঁধা পলায়নপর উটের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ‘ইকাল বলা হয় উটের হাঁটু বাঁধার রশিকে উট যখন বসে তখন তার মোড়ানো হাঁটুকে বেঁধে রাখা হয় ফলে সে আর পালাতে পারে না। আল কুরআনের ধারক বা কুরআন পাঠকারীর অবস্থা এই যে, সে যদি কুরআনের প্রতি লক্ষ্য না রাখে, কুরআন পাঠে এবং তার হিফাযাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও যত্মশীল না হয় তাহলে ঐ পলায়নপর উটের চেয়ে অধিক দ্রুত তার হৃদয় থেকে কুরআন পালিয়ে যাবে অর্থাৎ- সে বিস্মৃত হয়ে যাবে।
কুরআনের ধারক উটের মালিকের ন্যায়, কুরআন উটের ন্যায় এবং হিফযকে উট বাঁধার (রশির) সাথে সামঞ্জস্য ও তুলনা করা হয়েছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, কুরআনুল কারীমের মাঝে এবং উটের মাঝে কোন সাদৃশ্যতা নেই। কেননা কুরআনুল কারীম হলো কদীম চিরন্তন অথচ উটনী হলো হাদেস বা নশ্বর ও ধ্বংসশীল। সুতরাং এ কুরআনুল কারীমকে উটের সাথে বাহ্যিক তুলনা করা চলে না তবে অর্থের দিক দিয়ে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
দৃষ্টান্ত দানের পরিপূর্ণ বিবরণ পরবর্তী হাদীসে রয়েছে। উটের স্বভাব হলো তার মালিক তার প্রতি অমোনযোগী হলেই সে সুযোগ বুঝে পলায়ন করবে। অনুরূপ কুরআনের হাফেয, সে যদি তার হিফযের প্রতি যত্মশীল না হয় বরং অমনোযোগী হয় তাহলে কুরআন তার হৃদয় স্পট থেকে ঐ উটের চেয়ে অধিক দ্রুত পলায়ন করবে।
ইবনুল বাত্ত্বাল (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটি এ আয়াতদ্বয়ের অনুযায়ী, মহান আল্লাহ বলেনঃ
‘‘আমি তোমার ওপর নাযিল করছি একটি গুরুভার বাণী।’’ (সূরা আল মুযযাম্মিল ৭৩ : ৫)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা আরো বলেনঃ ‘‘আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি, এ থেকে উপদেশ গ্রহণের কেউ আছ কি?’’ (সূরা আল কামার ৫৪ : ১৭)
যে কুরআন হিফাযাতে এগিয়ে আসবে, তাতে যত্মবান ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে কুরআন তার হিফয বা মুখস্থকরণে তাকে সহযোগিতা করা হবে। পক্ষান্তরে যে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এবং পলায়ন করবে কুরআনও তার নিকট থেকে পালিয়ে যাবে, অর্থাৎ- সে কুরআন বিস্মৃত হয়ে যাবে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ আল কুরআন মানুষের কোন কথা বা বাণী নয়, বরং মহান শক্তি ও ক্ষমতাধর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বাণী, এতদ্বয়ের কথার মধ্যে কোন নিকটতম মুনাসিবাত বা সম্পর্ক নেই। কেননা কালামে বাশার হলো হাদেস এবং কালামুল্লাহ হলো কদীম বা চিরন্তন, কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা তাঁর ব্যাপক অনুগ্রহ ও চিরন্তন দয়া দ্বারা মানুষের ওপর অনুগ্রহ করে কুরআন মুখস্থ বা হিফয করার বিশাল নিয়ামত দান করেছেন।
সুতরাং বান্দার জন্য উচিত সাধ্যমত কুরআন হিফয বা মুখস্থ করার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার সে নিয়ামতের প্রতি যত্মবান ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য কুরআনকে সহজ করে দিবেন। অন্যথায় মানবীয় শক্তি ও যোগ্যতা তা হিফয করতে সত্যই অপারগ।
[আপনি কি পৃথিবীর কোন ধর্ম গ্রন্থের একজন হাফেযও খুঁজে পাবেন? না, পাবেন না, তবে হ্যাঁ, পাবেন কুরআনুল কারীমের, তা একজন দু’জন নয় বরং কোটি কোটি হাফিযে কুরআন, আপনার সামনেই!! তবুও কি এ চিরন্তন কিতাব আপনি বিশ্বাস করবেন না?] -অনুবাদক
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৮৮-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির জন্য এ কথা বলা খুবই খারাপ যে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি। বরং সে যেন বলে, তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা বার বার কুরআন পড়তে থাকবে। কারণ কুরআন মানুষের মন হতে চতুষ্পদ জন্তু হতেও দ্রুত পালিয়ে যায়। (বুখারী, মুসলিম। ইমাম মুসলিম, ’রশিতে বাঁধা চার পা জন্তু’ বাড়িয়ে বলেছেন।)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: بئس مالأحدهم أَنْ يَقُولَ: نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ بَلْ نُسِّيَ وَاسْتَذْكِرُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ مِنَ النَّعَمِ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَزَادَ مُسلم: «بعقلها»
ব্যাখ্যা: এখানে نُسِّىَ (অর্থাৎ- ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে) এর অর্থ হলো কুরআন সংরক্ষণ করা ও স্মরণ করাতে তার শিথিলতা থাকার কারণে কুরআন ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তখন সে বুঝতে পারে যে, কুরআন থেকে সরে যাওয়া ও অমনোযোগিতার কারণে তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো রহমাত থেকে দূরে সরানো। যেমন কুরআন মাজীদে আছে, نَسُوا اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ অর্থাৎ- ‘‘তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে গিয়েছেন’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৭)। এটা মূলত কুরআনের প্রতি আদব, এর সৌভাগ্য অর্জনে শৈথিল্যতা থাকায় আফসোস করা ও স্পষ্টভাবে পাপকার্যের সাথে জড়িত হওয়া থেকে সতর্ক হওয়ার জন্য এরূপ বলা হয়ে থাকে। আর সে এর দ্বারা যেন তার বিরুদ্ধে অবহেলার কথা স্বীকার করে।
ইবনু হাজার (রহঃ) তাঁর ফাতহুল বারী গ্রন্থে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখানে الذم (দোষারোপ)-এর কারণ বলতে কুরআনের প্রতি অমনোযোগিতাকে বুঝা যায়। কেননা এর প্রতি যত্নবান না হওয়া ও অধিক অবহেলার কারণে ভুল হয়ে থাকে। তাই যদি সে তিলাওয়াত ও সালাতে বেশি বেশি পড়ার মাধ্যমে কুরআনের প্রতি মনোযোগী হয় তাহলে তার হিফয স্থায়ী থাকবে।
কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করল। অতঃপর গাফেল হয়ে ভুলে গেলে তার অবস্থা নিন্দনীয়। অর্থাৎ- এখানে (ذم الحال) নিন্দনীয় অবস্থা উদ্দেশ্য, (ذم القول) নিন্দনীয় কথা নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৮৯-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনকে স্মৃতিতে ধারণকারীদের দৃষ্টান্ত হলো রশিতে বাঁধা উটের মতো। উটের প্রতি সব সময় লক্ষ্য রেখেই তাঁকে বেঁধে রাখা যেতে পারে। আর লক্ষ্য না রাখলে সে রশি ছিঁড়ে পালিয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّمَا مَثَلُ صَاحِبِ الْقُرْآنِ كَمَثَلِ صَاحِبِ الْإِبِلِ الْمُعَقَّلَةِ إِنْ عَاهَدَ عَلَيْهَا أَمْسَكَهَا وَإِنْ أَطْلَقَهَا ذَهَبَتْ»
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, যদি কোন ব্যক্তি কুরআন মাজীদকে মুখস্থ করে রাখতে চায় তবে তাকে প্রত্যহ তিলাওয়াত করতে হবে এবং সালাতে বেশি বেশি পড়তে হবে নতুবা সে খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে। এখানে কুরআন পাঠকে উটের রশির বন্ধনের সাথে দেয়া হয়েছে এজন্য যে, গৃহপালিত পশুর মধ্যে সবচাইতে বেশি উট ছাড়া পেলে পালিয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯০-[৪] জুনদুব ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মনের আকর্ষণ থাকা পর্যন্ত কুরআন পড়বে। মনের ভাব পরিবর্তিত হলে অর্থাৎ- আগ্রহ কমে গেলে তা ছেড়ে উঠে যাবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «اقرؤوا الْقُرْآنَ مَا ائْتَلَفَتْ عَلَيْهِ قُلُوبُكُمْ فَإِذَا اخْتَلَفْتُمْ فَقومُوا عَنهُ»
ব্যাখ্যা: কুরআন পাঠের আদব হলো তা আগ্রহ ভরে তিলাওয়াত করা। মনের আকর্ষণ যতক্ষণ বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ তিলাওয়াত করা দরকার। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেছেন, তোমরা প্রফুল্লতা সহকারে আনন্দচিত্তে কুরআন তিলাওয়াত কর। অতএব যখন তোমাদের অস্বস্তি চলে আসবে এবং অন্তর বিবিধ চিন্তা করবে তখন তোমরা তিলাওয়াত পরিত্যাগ কর। কেননা এটা অমনোযোগী হয়ে পড়ার চাইতে নিরাপদ।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯১-[৫] আবূ কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরআন পাঠ কেমন ছিল? তিনি বললেন, তাঁর কুরআন পাঠ ছিল টানা টানা। তারপর তিনি [আনাস (রাঃ)] ’বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ পড়লেন। তিনি ’বিস্মিল্লা-হি’ টানলেন। ’রহমা-নির’ টানলেন এবং ’রহীম’-এ টানলেন। (বুখারী)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنْ قَتَادَةَ قَالَ: سُئِلَ أَنَسٌ: كَيْفَ كَانَتْ قِرَاءَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: كَانَت مدا مَدًّا ثُمَّ قَرَأَ: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ يَمُدُّ بِبَسْمِ اللَّهِ وَيَمُدُّ بِالرَّحْمَنِ وَيَمُدُّ بِالرَّحِيمِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কিরাআত ছিল মাদ্দ সহকারে এবং স্পষ্ট। তিনি প্রতিটি অক্ষরের সিফাত ও হক যথাযথভাবে আদায় করে পড়তেন। علم التجويد-এ অনেক রকম মাদ্দ এর প্রকার দেখতে পাওয়া যায়। যেমন মাদ্দে তাবায়ী মাদ্দে আসলী, ফারয়ী। আবার কোনটির নাম মুত্তাসিল, মুনফাসিল ইত্যাদি। মাদ্দের পরিমাণ নিয়ে কারীদের মাঝে মতানৈক্য বিদ্যমান। মাদ্দের পরিমাণ কেউ বলেছেন, হাফ আলিফ কারো মতে দুই আলিফ। কেউ বলেছেন, তিন আলিফ। এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা তাজবীদের কিতাবে রয়েছে। মোটকথা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি মাদ্দ যথাযথভাবে দীর্ঘ করে পড়েছেন। যেমন الله শব্দের ‘লাম’ যা ‘হা’ এর পূর্বে আছে তাকে টেনে পড়েছেন। الرحمٰن এর মিম-কে ও الرحيم এর ي-কে টান দিয়ে পড়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯২-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন নবীর সুর করে কুরআন পড়াকে আল্লাহ তা’আলা যতটা কান পেতে শোনেন আর কোন কথাকে এতো কান পেতে শোনেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَذِنَ اللَّهُ لِشَيْءٍ مَا أَذِنَ لِنَبِيٍّ يَتَغَنَّى بِالْقُرْآنِ»
ব্যাখ্যা: সুললিত কন্ঠের তিলাওয়াত আল্লাহর নিকটে পছন্দনীয়। তাই কুরআন মাজীদকে সুমধুর কণ্ঠে করুণ সুরে পাঠ করা বাঞ্ছনীয়। যাতে উপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে যায়, আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং শ্রোতার মন প্রভাবিত হয়ে বিগলিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ‘ইলমে তাজবীদের নিয়ম-কানুন এবং আয়াতের শব্দসমূহ ও বর্ণের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। তবে কুরআনকে গানের সুরে পরিবর্তন করে পড়া নিঃসন্দেহে হারাম। অন্য হাদীসে এসেছে, কোন ব্যক্তি সুমদুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেই ব্যক্তি যখন তাকে কুরআন তিলাওয়াত করতে শুনবে ভীত অবস্থায়। আর এটা হচ্ছে ‘আরবদের স্বাভাবিক সুর। যখন কারী সুন্দর আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করে তখন সবাই উদ্বেলিত হয়ে উঠে এবং তাদের মাঝে চিন্তা ও ভীতির সঞ্চার হয়। দাঊদ (আঃ) কাঁদো কাঁদো সুরে যখন যাবূর পড়তেন তখন জল-স্থলের সমস্ত প্রাণী মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করত এবং চুপে কাঁদত। তিনি যাবূরকে ৭০ ধরনের সুরে এমনভাবে তিলাওয়াত করতেন যে উত্তেজিত লোক উৎফুল্ল হয়ে যেত।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯৩-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কোন নবীর মধুর স্বরে সুরেলা কণ্ঠে স্বরবে কুরআন পাঠ যত পছন্দ করেন, তত পছন্দ করেন না আর কোন স্বরকে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَذِنَ اللَّهُ لِشَيْءٍ مَا أَذِنَ لِنَبِيٍّ حَسِنِ الصَّوْتِ بِالْقُرْآنِ يَجْهَرُ بِهِ»
ব্যাখ্যা: প্রত্যেক নাবী সুমধুর কন্ঠের অধিকারী ছিলেন যেমন হাদীসে এসেছে, (ما بعث الله نبياً إلا حسن الوجه حسن الصوت) এখানে নাবী বলতে প্রত্যেক নাবী ও প্রচারকারী, অর্থাৎ- সাধারণ মানুষ। তারা সবাই কুরআনকে সালাতে, তিলাওয়াতের সময় ও প্রচারের ক্ষেত্রে উঁচু স্বরে সুললিত কণ্ঠে পাঠ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯৪-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুর করে কুরআন পড়ে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (বুখারী)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْآنِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (لَمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْاٰنِ) এর ব্যাখ্যায় বিভিন্ন জন একাধিক অর্থ বর্ণনা করেছেন।
কেউ বলেন, (لم يحسن صوته) অর্থাৎ- যে সুন্দর কন্ঠে পড়ে না।
কেউ বলেন, (لم يجهر به) অর্থাৎ- যে উঁচু স্বরে পড়ে না।
কেউ বলেন, (لم يستغن به عن الناس) অর্থাৎ যে মানুষের কাছ থেকে এবং পূববর্তীদের ঘটনা প্রবাহ ও কিতাবাদি থেকে অমুখাপেক্ষী হতে চায় না।
কেউ বলেন, (لم يترنم) অর্থাৎ- যে ব্যথিত চিন্তিত হয় না।
কেউ বলেন, (التلذذ والاستحلاء) অর্থাৎ যে মজা পায় না বা স্বাদ পায় না।
কেউ বলেন, (أن يجعله هجيراه) অর্থাৎ- দুপুরে তিলাওয়াত করে না।
কেউ বলেন, যে ঈমানের জন্য কুরআন থেকে উপকার গ্রহণ করে না এবং তার মধ্যস্থিত প্রতিশ্রুতি ও শাস্তির কথাকে সত্য বলে স্বীকার করে না।
(لم يطلب غنى النفس) অর্থাৎ- যে স্বীয় আত্মপ্রফুল্লতা চায় না।
ইমাম ইবনু হাজার (রহঃ) উপরোক্ত ব্যাখ্যাসমূহের সমন্বয় সাধন করে বলেন যে, সুমধুর সুরে উচ্চৈঃস্বরে চিন্তাবিমোহিত হয়ে ও নিজকে সংবাদ সম্পর্কে অন্যের নিকট অমুখাপেক্ষী মনে করে কুরআন পাঠ করে। কেননা সুললিত কন্ঠের পাঠ দ্বারা অন্তর বিমুগ্ধ হয় অন্তর বিগলিত হয়ে অশ্রু বয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯৫-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে বসে আমাকে বললেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পড়ো (আমি তোমার কুরআন পড়া শুনব)। (তাঁর কথা শুনে) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সামনে আমি কুরআন পড়ব? অথচ এ কুরআন আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কুরআন আমি অন্যের মুখে শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি সূরা আন্ নিসা পড়তে শুরু করলাম। আমি ’’তখন কেমন হবে আমি যখন প্রত্যেক উম্মাতের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকেও সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব এদের বিরুদ্ধে’’ এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এখন বন্ধ করো। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকালাম। দেখলাম তাঁর দু’ চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ: «اقْرَأْ عَلَيَّ» . قُلْتُ: أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ؟ قَالَ: «إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي» . فَقَرَأْتُ سُورَةَ النِّسَاءِ حَتَّى أَتَيْتُ إِلَى هَذِهِ الْآيَةِ (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدا)
قَالَ: «حَسْبُكَ الْآنَ» . فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ
ব্যাখ্যা: বিচক্ষণ ব্যক্তির মুখে তাৎপর্যপূর্ণ কথা শোভনীয় এবং প্রিয় কথা প্রেমিকের মুখে বেশি আনন্দ দান করে। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন অন্যের মুখ থেকে আল্লাহর প্রিয় বাণী শোনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যাতে কুরআন পেশ করা অন্যের নিকটে সুন্নাত হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। হয়তবা তিনি পাঠকৃত আয়াতকে গবেষণা বা চিন্তা-ভাবনা করার জন্য পাঠ করতে বলেছিলেন। কেননা, শ্রবণকারী ব্যক্তি পাঠকের চাইতে বেশি বোঝার সুযোগ পায়। আর পাঠক তার পাঠের নিয়ম-কানুনের প্রতি বেশি খেয়াল রাখে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াত শ্রবণ করার পর ক্রন্দন করেছেন তার উম্মাতের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে, কেননা তিনি তাদের জ্ঞান ও ‘আমল সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করবেন। হাদীসে বলো হয়েছে যে, কুরআন শ্রবণ করা ও এর প্রতি মনোযোগ দেয়া ও ক্রন্দন করা মুস্তাহাব।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, কুরআন পাঠের সময় ক্রন্দন করা সৎ মানুষের গুণ। ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন, কেউ কুরআন পাঠের সময়ে কাঁদতে চাইলে মনকে চিন্তিত করতে হবে এবং তার মধ্যে বর্ণিত শাস্তি, ধমক, হুমকি, প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে ভয় করতে হবে। তারপর সে স্বীয় অভ্যন্তরে সেগুলোর কমতি বুঝতে পারবে। এরূপ হলে তার কান্না আসবে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯৬-[১০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে বললেন, তোমাকে কুরআন তিলাওয়াত শুনাতে আল্লাহ আমাকে হুকুম দিয়েছেন। উবাই জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ কি আমার নাম ধরে আপনাকে এ কথা বলেছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। এবার উবাই বললেন, রব্বুল ’আলামীনের কাছে আমি কী উত্থাপিত হয়েছি? রব্বুল ’আলামীনের কাছে আমার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে? বা আমার নাম নেয়া হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। এ কথা শুনে উবাই-এর দু’ চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ’’আমাকে আল্লাহ তা’আলা হুকুম দিয়েছেন তোমাকে ’লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূ’ সূরা পাঠ শুনাতে। উবাই বললেন, আল্লাহ কি আমার নাম বলেছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। শুনে উবাই কেঁদে ফেললেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ: «إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ الْقُرْآنَ» قَالَ: آللَّهُ سَمَّانِي لَكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . قَالَ: وَقَدْ ذُكِرْتُ عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . فَذَرَفَتْ عَيْنَاهُ. وَفِي رِوَايَةٍ: إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ (لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا)
قَالَ: وَسَمَّانِي؟ قَالَ: «نَعَمْ» . فَبَكَى
ব্যাখ্যা: আবূ ‘উবায়দ বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উবাই বিন কা‘ব কর্তৃক তিলাওয়াত উপস্থাপনের উদ্দেশ্য হলো, যে এটা দ্বারা কিরাআত শিক্ষা করতে পারবে এবং কুরআনের হিফয স্মৃতিপটে স্থির হয়ে যাবে। আর এর কারণে এটি একটি সুন্নাতে পরিণত হয়। কা‘ব (রাঃ) এর নিকটে কুরআন পাঠ করার দ্বারা তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা হয়েছে এবং কুরআন সংরক্ষণে তার ভূমিকার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আর যেহেতু তিনি কুরআন মুখস্থকরণে প্রচেষ্টা ব্যয় করেছেন সেহেতু তিনি এর জন্য বিশেষিত হয়েছেন। আর এজন্যই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (أقرؤكم أبي) অর্থাৎ- উবাই তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ পাঠক। উবাই বিন কা‘ব আল্লাহর নিকটে তার আলোচনার কথা শুনে খুশিতে আনন্দিত হয়ে কেঁদে ফেলেছেন এই ভয়ে যে, তিনি এত বড় মর্যাদার অধিকারী হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে কমতি হয়েছে নাকি? এ সূরাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো এতে তাওহীদ, রিসালাত, নিয়্যাতের বিশুদ্ধতা, মুসহাফ, কিতাবসমূহ, নাবীদের মর্যাদা, সালাত, যাকাত, বিচার দিবস, জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯৭-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুর দেশে কুরআন নিয়ে সফর করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম। ইমাম মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, কুরআন নিয়ে সফরে বের হয়ো না। কারণ কুরআন শত্রুর হাতে পড়ে যাওয়া আমি নিরাপদবোধ করি না।)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِن يُسَافَرَ بِالْقُرْآنِ إِلَى أَرْضِ الْعَدُوِّ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: «لَا تُسَافِرُوا بِالْقُرْآنِ فَإِنِّي لَا آمن أَن يَنَالهُ الْعَدو»
ব্যাখ্যা: মহাগ্রন্থ আল কুরআন একটি সম্মানিত ঐশী গ্রন্থ। সবার নিকটে এর মর্যাদা রয়েছে। কোন মুসলিমকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের মাসহাফ নিয়ে অমুসলিম শত্রুদের ভূখণ্ডে সফর করতে নিষেধ করেছেন এই আশঙ্কায় যে, কোন শত্রু হয়ত তাকে পেয়ে অবমাননা করবে বা তুচ্ছ জ্ঞান করবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, শত্রু ভূখণ্ডে যদি কুরআনের অসম্মানের ভয় না থাকে তবে কুরআন নিয়ে সফর করা যাবে। যেমন কোন জায়গায় যদি মুসলিম সৈন্য বিজয়ী থাকে। কিন্তু কুরআন জানা ব্যক্তি সে সব জায়গায় সফর করতে পারবে। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ সফর করতেন শত্রু ভূখণ্ডে। এটা বিশুদ্ধ মত যার প্রতি ইমাম বুখারী, আবূ হানীফাসহ অন্যরাও সম্মতি দিয়েছেন।