পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৮৭-[১] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সবসময় কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। যাঁর হাতে আমার জীবন নিহিত, তাঁর শপথ, নিশ্চয় কুরআন সিনা হতে এত তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায় যে, উটও তত তাড়াতাড়ি নিজের রশি ছিঁড়ে বের হয়ে যেতে পারে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ [اٰدٰبُ التِّلَاوَةِ وَدُرُوْسُ الْقُرْاٰنِ]
عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَعَاهَدُوا الْقُرْآنَ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهْوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنَ الْإِبِلِ فِي عُقُلِهَا»
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (تَعَاهَدُوا الْقُرْاٰنَ) কুরআন পাঠে তোমরা যত্মবান হও, কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও।
এ বাক্যের تَعَاهَدُ শব্দটি تعهد রূপে تفقد বা অনুসন্ধান এর অর্থ প্রদান করেছে। সুতরাং পূর্ণ বাক্যের অর্থ যেন এরূপ হয়েছে :
تفقدوه وراعوه بالمحافظة وواظبوا على قراءته وداوموا على تكرار دراسته.
অর্থাৎ- তোমরা কুরআনের প্রতি অনুসন্ধানী হও, তার হিফ্যের প্রতি যত্মবান হও, আর সদা-সর্বদা তিলাওয়াতে অভ্যস্ত হও এবং তার পাঠ-পঠন অব্যাহত রাখ, যাতে তা ভুলে না যাওয়া হয়।
‘আল্লামা তুরবিশতী (রহঃ) বলেন, عهد এবং تعاهد উভয়ের অর্থ হলো التحفظ بالشيء অর্থাৎ- কোন বস্ত্ত দ্বারা কোন বস্ত্তর হিফাযাত করা। আর تجديد العهد به এর এখানে অর্থ হলো তিলাওয়াত এবং কিরাআতের মাধ্যমে তা হিফাযাতের উপদেশ প্রদান করা যাতে স্মরণ থেকে ঐ কুরআন বিস্মৃত না হয়।
উট একটি পলায়নপর প্রাণী, একে বেঁধে না রাখলে পালিয়ে যায়। কুরআনুল কারীমকে রশিতে বাঁধা পলায়নপর উটের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ‘ইকাল বলা হয় উটের হাঁটু বাঁধার রশিকে উট যখন বসে তখন তার মোড়ানো হাঁটুকে বেঁধে রাখা হয় ফলে সে আর পালাতে পারে না। আল কুরআনের ধারক বা কুরআন পাঠকারীর অবস্থা এই যে, সে যদি কুরআনের প্রতি লক্ষ্য না রাখে, কুরআন পাঠে এবং তার হিফাযাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও যত্মশীল না হয় তাহলে ঐ পলায়নপর উটের চেয়ে অধিক দ্রুত তার হৃদয় থেকে কুরআন পালিয়ে যাবে অর্থাৎ- সে বিস্মৃত হয়ে যাবে।
কুরআনের ধারক উটের মালিকের ন্যায়, কুরআন উটের ন্যায় এবং হিফযকে উট বাঁধার (রশির) সাথে সামঞ্জস্য ও তুলনা করা হয়েছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, কুরআনুল কারীমের মাঝে এবং উটের মাঝে কোন সাদৃশ্যতা নেই। কেননা কুরআনুল কারীম হলো কদীম চিরন্তন অথচ উটনী হলো হাদেস বা নশ্বর ও ধ্বংসশীল। সুতরাং এ কুরআনুল কারীমকে উটের সাথে বাহ্যিক তুলনা করা চলে না তবে অর্থের দিক দিয়ে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
দৃষ্টান্ত দানের পরিপূর্ণ বিবরণ পরবর্তী হাদীসে রয়েছে। উটের স্বভাব হলো তার মালিক তার প্রতি অমোনযোগী হলেই সে সুযোগ বুঝে পলায়ন করবে। অনুরূপ কুরআনের হাফেয, সে যদি তার হিফযের প্রতি যত্মশীল না হয় বরং অমনোযোগী হয় তাহলে কুরআন তার হৃদয় স্পট থেকে ঐ উটের চেয়ে অধিক দ্রুত পলায়ন করবে।
ইবনুল বাত্ত্বাল (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটি এ আয়াতদ্বয়ের অনুযায়ী, মহান আল্লাহ বলেনঃ
‘‘আমি তোমার ওপর নাযিল করছি একটি গুরুভার বাণী।’’ (সূরা আল মুযযাম্মিল ৭৩ : ৫)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা আরো বলেনঃ ‘‘আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি, এ থেকে উপদেশ গ্রহণের কেউ আছ কি?’’ (সূরা আল কামার ৫৪ : ১৭)
যে কুরআন হিফাযাতে এগিয়ে আসবে, তাতে যত্মবান ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে কুরআন তার হিফয বা মুখস্থকরণে তাকে সহযোগিতা করা হবে। পক্ষান্তরে যে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এবং পলায়ন করবে কুরআনও তার নিকট থেকে পালিয়ে যাবে, অর্থাৎ- সে কুরআন বিস্মৃত হয়ে যাবে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ আল কুরআন মানুষের কোন কথা বা বাণী নয়, বরং মহান শক্তি ও ক্ষমতাধর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বাণী, এতদ্বয়ের কথার মধ্যে কোন নিকটতম মুনাসিবাত বা সম্পর্ক নেই। কেননা কালামে বাশার হলো হাদেস এবং কালামুল্লাহ হলো কদীম বা চিরন্তন, কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা তাঁর ব্যাপক অনুগ্রহ ও চিরন্তন দয়া দ্বারা মানুষের ওপর অনুগ্রহ করে কুরআন মুখস্থ বা হিফয করার বিশাল নিয়ামত দান করেছেন।
সুতরাং বান্দার জন্য উচিত সাধ্যমত কুরআন হিফয বা মুখস্থ করার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার সে নিয়ামতের প্রতি যত্মবান ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য কুরআনকে সহজ করে দিবেন। অন্যথায় মানবীয় শক্তি ও যোগ্যতা তা হিফয করতে সত্যই অপারগ।
[আপনি কি পৃথিবীর কোন ধর্ম গ্রন্থের একজন হাফেযও খুঁজে পাবেন? না, পাবেন না, তবে হ্যাঁ, পাবেন কুরআনুল কারীমের, তা একজন দু’জন নয় বরং কোটি কোটি হাফিযে কুরআন, আপনার সামনেই!! তবুও কি এ চিরন্তন কিতাব আপনি বিশ্বাস করবেন না?] -অনুবাদক