পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৮৭-[৬] হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের আগে সওমের নিয়্যাত করবে না তার সওম হবে না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, মা’মার ও যুবায়দী, ইবনু ’উআয়নাহ্ এবং ইউনুস আয়লী সহ সকলে এ বর্ণনাটি হাফসাহ্’র কথা বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন।)[1]

عَن حَفْصَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَمْ يَجْمَعِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمَيُّ وَقَالَ أَبُو دَاوُد: وَقفه على حَفْصَة معمر والزبيدي وَابْنُ عُيَيْنَةَ وَيُونُسُ الَأَيْلِيُّ كُلُّهُمْ عَنِ الزُّهْرِيِّ

عن حفصة رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له» . رواه الترمذي وابو داود والنساىي والدارمي وقال ابو داود: وقفه على حفصة معمر والزبيدي وابن عيينة ويونس الايلي كلهم عن الزهري

ব্যাখ্যা: (مَنْ لَمْ يُجْمِعِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَه) ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বেই সিয়াম পালনের নিয়্যাত করে না তার সিয়াম হয় না।’’

এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, সিয়াম বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য ফজরের পূর্বে অর্থাৎ- রাত থাকতেই সিয়াম পালনের উদ্দেশে নিয়্যাত করা, অর্থাৎ- রাত থাকতেই সিয়াম পালনের উদ্দেশে দৃঢ় প্রত্যয় করা আবশ্যক। তা না হলে তার সিয়াম বিশুদ্ধ হবে না।

আমীর ইয়ামানী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, রাতের কোন অংশে সিয়াম পালনের ইচ্ছা ব্যক্ত না করলে তার সিয়াম হবে না। আর এ ইচ্ছা ব্যক্ত করা তথা নিয়্যাত করার প্রথম ওয়াক্ত সূর্যাস্তের পর থেকেই শুরু হয়। কেননা সিয়াম একটি ‘আমল বা কাজ। আর যে কোন কাজ তথা ‘ইবাদাত নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। অতএব এ ‘ইবাদাত বাস্তবে রূপলাভ করবে না যদি না রাত থাকতেই তার জন্য নিয়্যাত করা হয়। আর এ হুকুম সকল প্রকার সিয়াম তথা ফরয, নফল, কাযা, কাফফারা, মানৎ- সকল সিয়ামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

আল কারী বলেনঃ হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এই যে, ফরয ও নফল যে কোন সিয়ামের জন্যই রাত থাকতেই নিয়্যাত করতে হবে। আর এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইবনু ‘উমার, জারির ইবনু যায়দ, ইমাম মালিক, মুযানী ও দাঊদ।

অন্যান্যদের অভিমত এই যে, নফল সিয়ামের জন্য দিনের বেলায় নিয়্যাত করলেও চলবে। অত্র হাদীসকে তারা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত ঐ হাদীস দ্বারা খাস করেছেন যাতে তিনি বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বলতেন, তোমার নিকট কি খাবার কিছু আছে? আমি বলতাম, না, নেই। তখন তিনি বলতেন আমি সায়িম। কোন বর্ণনায় আছে, তাহলে আমি সায়িম।

ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ বলেনঃ নফল সিয়ামের ক্ষেত্রে ফজরের পরে নিয়্যাত করলেও চলবে কিন্তু ফরযের ক্ষেত্রে তা চলবে না। ইমাম আবূ হানীফাহ্ বলেনঃ নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পৃক্ত সিয়ামের ক্ষেত্রে ফজরের পরে নিয়্যাত করলেও চলবে। যেমন, রমাযানের সিয়াম, নির্দিষ্ট দিনের জন্য মানৎ করা সিয়াম, অনুরূপভাবে নফল সিয়াম। কিন্ত যে সমস্ত ওয়াজিব সিয়ামের জন্য সময় নির্দিষ্ট নেই যেমন কাযা ও কাফফারা তার জন্য ফজরের পূর্বেই নিয়্যাত করতে হবে।

ইমাম আবূ হানীফার পার্থক্য করার কারণ এই যে, নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পৃক্ত সিয়ামসমূহের জন্য নির্দিষ্ট সময়ই নিয়্যাতের স্থলাভিষিক্ত তা নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে।

পক্ষান্তরে যার জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই তা নির্দিষ্ট করার জন্য নিয়্যাত প্রয়োজন তথা নিয়্যাত দ্বারা তা নির্দিষ্ট হয় তাই সিয়ামের সময় শুরু হওয়ার পূর্বেই নিয়্যাত দ্বারা নির্দিষ্ট করতে হবে।

ইমাম মালিক-এর মতে সকল প্রকার সিয়ামের জন্যই ফজরের পূর্বেই নিয়্যাত করতে হবে। তিনি তার মতের স্বপক্ষে হাফসা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৮৮-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (সাহরী খাবার সময়) তোমাদের কেউ ফজরের আযান শুনতে পেলে সে যেন হাতের বাসন রেখে না দেয়। বরং নিজের প্রয়োজন সেরে নেবে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ أَحَدُكُمْ وَالْإِنَاءُ فِي يَدِهِ فَلَا يَضَعْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا سمع النداء احدكم والاناء في يده فلا يضعه حتى يقضي حاجته منه» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (فَلَا يَضَعْهُ حَتّٰى يَقْضِيَ حَاجَتَه مِنْهُ) ‘‘পাত্র থেকে তার প্রয়োজন শেষ না করে তা রেখে দিবে না।’’ অর্থাৎ- পানাহারের প্রয়োজন শেষ হবার আগেই মুয়ায্যিনের আযান শুনে পানাহারের পাত্র রেখে দিবে না। বরং তার পানাহারের প্রয়োজন শেষ করবে। অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, ফজরের আযান শ্রবণের সময় স্বীয় হাতের পাত্র থেকে পানাহার করা বৈধ। বলা হয়ে থাকে যে, এ আযান দ্বারা ফজরের পূর্বে বিলাল (রাঃ) এর আযান উদ্দেশ্য। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলাল রাত থাকতেই আযান দেয়, অতএব তোমরা ইবনু উম্মু মাকতূম আযান দেয়ার আগ পর্যন্ত পানাহার করতে থাক।

এটাও বলা হয়ে থাকে যে, পানাহার হারাম হওয়ার সম্পর্ক ফজর উদয়ের সাথে আযানের সাথে নয়। মুয়াযযিন ফজর উদয়ের আগেও আযান দিতে পারে। অতএব এখানে আযান কোন ধর্তব্য বিষয় নয় যদি ফজর উদয়ের বিষয়টি জানা না যায়। তবে সাধারণ লোক যারা ফজর হওয়া বা না হওয়া বুঝতে পারে না তাদের জন্য আযানের উপর নির্ভর করাই শ্রেয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৮৯-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার কাছে সে বান্দা বেশী প্রিয় যে (সময় হয়ে যাবার সাথে সাথে) ইফতার করতে ব্যস্ত হয়। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَحَبُّ عِبَادِي إِلَيَّ أَعْجَلُهُمْ فطرا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: قال الله تعالى: احب عبادي الي اعجلهم فطرا . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (أَعْجَلُهُمْ فِطْرًا) ‘‘তাদের মধ্যে দ্রুত ইফতারকারী’’ অর্থাৎ স্বচক্ষে সূর্যাস্ত দেখে অথবা সংবাদের মাধ্যমে সূর্যাস্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে দ্রুত ইফতার করে। ত্বীবী বলেনঃ এ পছন্দের কারণ সম্ভবত এই যে, এতে সুন্নাতের অনুসরণ, বিদআত (বিদাত) হতে দূরে অবস্থান এবং আহলে কিতাবদের সাথে মুখালাফাত তথা তাদের বিরোধিতা করা হয়। ইবনু মালিক বলেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের পূর্বে ইফতার করে সে শান্ত মনে একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করতে সক্ষম হয়। অতএব যার অবস্থা এরূপ সে ঐ ব্যক্তির চাইতে আল্লাহর নিকট বেশী প্রিয় যার অবস্থা এমন নয়। আমীর ইয়ামানী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, বিলম্ব না করে দ্রুত ইফতার করা আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় কাজ। সূর্যাস্তের পর ইফতার না করে সাহরী পর্যন্ত সিয়াম বিসাল করা বৈধ হলেও তা উত্তম নয়। তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিষয়টি ভিন্ন। কেননা তিনি সাধারণ লোকদের মতো নন। অতএব দ্রুত ইফতার না করলেও আল্লাহর নিকট তিনি সকল সায়িমের চাইতে প্রিয়, কেননা তাকে সওমে বিসাল করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯০-[৯] সালমান ইবনু ’আমির হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ইফতার করবে সে যেন খেজুর দিয়ে (শুরু) করে। কারণ খেজুর বারাকাতময়। যদি খেজুর না পায়, তাহলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কেননা পানি পবিত্র জিনিস। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারিমী। فَإِنَّه بَرَكَةٌ [ফাইন্নাহূ বারাকাতুন] -এ অংশটুকু ইমাম তিরমিযী ছাড়া আর কেউ উল্লেখ করেননি।)[1]

وَعَنْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَفْطَرَ أَحَدُكُمْ فَلْيُفْطِرْ عَلَى تَمْرٍ فَإِنَّهُ بَرَكَةٌ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيُفْطِرْ عَلَى مَاءٍ فَإِنَّهُ طَهُورٌ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ. وَلَمْ يَذْكُرْ: «فَإِنَّهُ بَرَكَةٌ» غَيْرُ التِّرْمِذِيِّ

وعن سلمان بن عامر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا افطر احدكم فليفطر على تمر فانه بركة فان لم يجد فليفطر على ماء فانه طهور» . رواه احمد والترمذي وابو داود وابن ماجه والدارمي. ولم يذكر: «فانه بركة» غير الترمذي

ব্যাখ্যা: (فَلْيُفْطِرْ عَلٰى تَمْرٍ) ‘‘সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে।’’ এখানে আদেশ দ্বারা ওয়াজিব উদ্দেশ্য নয় বরং তা মুস্তাহাব। ইমাম শাওকানী বলেনঃ সুলায়মান-এর অত্র হাদীস এবং আনাস (রাঃ) বর্ণিত পরবর্তী হাদীস এ দু’ হাদীস প্রমাণ করে যে, খেজুর দিয়ে ইফতার বিধিসম্মত। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। তবে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস প্রমাণ করে যে, শুকনো খেজুরের চাইতে (রুতাব) ভিজা খেজুর উত্তম। অতএব সম্ভব হলে তাকেই অগ্রাধিকার দিবে।

খেজুর দিয়ে ইফতার করার নির্দেশ এজন্য দেয়া হয়েছে যে, তা যেমন মিষ্টিদ্রব্য তেমনি তা প্রধান খাদ্যও বটে। সিয়ামের কারণে ক্ষুধার প্রভাবে শরীর ক্লান্ত হয়ে পরে এবং দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। আর মিষ্টিদ্রব্য দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করে বিশেষভাবে দৃষ্টিশক্তি। তাই ক্লান্ত ও দুর্বলতা দৃঢ় করার জন্য মিষ্টিদ্রব্য দিয়ে ইফতার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইমাম শাওকানী বলেনঃ যেহেতু মিষ্টিদ্রব্য হওয়ার কারণে খেজুর দিয়ে ইফতার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, অতএব সকল প্রকার মিষ্টিদ্রব্য এর মধ্যে শামিল।

(فَإِنَّه بَرَكَةٌ) ‘‘তার মধ্যে বারাকাত রয়েছে’’ অর্থাৎ- খেজুরের মধ্যে বারাকাত এবং অনেক কল্যাণ আছে। ইবনুল কইয়্যিম বলেনঃ খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করার নির্দেশ উম্মাতের প্রতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ণ দয়া ও কল্যাণ কামিতার পরিচায়ক। কেননা সিয়াম পালনের কারণে কলিজার মধ্যে শুষ্কতা আসে। তা যদি পানি দ্বারা সিক্ত করার পর খাবার গ্রহণ করা হয় তাহলে এর পূর্ণ উপকারিতা লাভ হয়। আর খেজুরের গুণের কথা তো পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে আর কল্বের উৎকর্ষণ সাধনে পানির বৈশিষ্ট্যের বিষয় একমাত্র চিকিৎসাবিদগণই অবহিত আছেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯১-[১০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের আগে কিছু তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পেতেন, শুকনা খেজুর দিয়ে করতেন। যদি শুকনা খেজুরও না পেতেন, কয়েক চুমুক পানি পান করে নিতেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ। আর ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও গরীব।)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ عَلَى رطبات فَإِن لم تكن فتميرات فإنلم تكن تُمَيْرَات حسى حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيب

وعن انس قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم يفطر قبل ان يصلي على رطبات فان لم تكن فتميرات فانلم تكن تميرات حسى حسوات من ماء. رواه الترمذي وابو داود. وقال الترمذي: هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যা: (يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ) ‘‘সালাত আদায়ের পূর্বেই ইফতার করতেন।’’ অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের সালাতের আগে ইফতার করতেন। এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সূর্যাস্তের পর দ্রুত ইফতার করা মুস্তাহাব। তবে ‘উমার ও ‘উসমান  থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তারা উভয়ে রমাযান (রমজান) মাসে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের সালাত আদায় করতেন। অতঃপর সালাত আদায়ের পর ইফতার করতেন। এতে বুঝা যায়, বিলম্বে ইফতার করা বৈধ, তথা দ্রুত ইফতার করা ওয়াজিব নয়। অত্র হাদীস এটাও প্রমাণ করে যে, রুতাব তথা তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। তা পাওয়া না গেলে শুকনা খেজুর, তাও পাওয়া না গেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে।

যারা বলে থাকেন মক্কাতে রমাযানের পানি দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত, অথবা খেজুরের পানি মিশিয়ে ইফতার করবে তা এ জন্য প্রত্যাখ্যাত যে, তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণের বিপরীত। কেননা মক্কা বিজয়ের বৎসর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কাতে অনেকদিন সিয়াম পালন করেছেন কিন্তু এটা বর্ণিত হয়নি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার চিরাচরিত অভ্যাস পরিত্যাগ করে পানি দিয়ে ইফতার করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি তা করতেন তবে অবশ্যই তা বর্ণিত হত।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯২-[১১] যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সায়িমকে ইফতার করাবে অথবা কোন গাযীর আসবাবপত্র ঠিক করে দেবে সে তাদের (সায়িম ও গাযীর) সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। (বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান-এ আর মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্- শারহে সুন্নাহ্’য় এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি সহীহ)[1]

وَعَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من فَطَّرَ صَائِمًا أَوْ جَهَّزَ غَازِيًا فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ وَمُحْيِي السّنة فِي شرح السّنة وَقَالَ صَحِيح

وعن زيد بن خالد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من فطر صاىما او جهز غازيا فله مثل اجره» . رواه البيهقي في شعب الايمان ومحيي السنة في شرح السنة وقال صحيح

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি সায়িমকে ইফতার করাবে, অর্থাৎ যে ব্যক্তি সায়িমকে ইফতারের সময় খাবার খাওয়াবে, আর যে ব্যক্তি মুজাহিদের যাবতীয় প্রয়োজন মিটাবে তথা অস্ত্র ঘোড়া এবং সফরের পাথেয় ইত্যাদির ব্যবস্থা করবে তার জন্য ঐ সায়িম ও মুজাহিদের সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। কেননা এ দ্বারা সৎকাজ ও আল্লাহ ভীতির কাজে সহযোগিতা করা হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯৩-[১২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার পর বলতেন, পিপাসা চলে গেছে, (শরীরের) রগগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহর মর্জি হলে সাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَفْطَرَ قَالَ: «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ الله» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابن عمر قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا افطر قال: «ذهب الظما وابتلت العروق وثبت الاجر ان شاء الله» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (وَثَبَتَ الْأَجْرُ) ‘‘পুরস্কার সাব্যস্ত হয়েছে’’ অর্থাৎ- সিয়াম পালনের ক্লান্তি দূর হয়েছে এবং সিয়ামের সাওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে।

ইমাম ত্বীবী বলেনঃ ক্লান্তি দূর হওয়ার পর বিনিময় সাব্যস্ত হওয়ার উল্লেখ পরিপূর্ণভাবে স্বাদ গ্রহণের বহিঃপ্রকাশ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসীদের বক্তব্য বর্ণনা করেছেন এ বলে,

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُوْرٌ شَكُوْرٌ ‘‘সেই মহান আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা যিনি আমাদের চিন্তা দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আমাদের রব অতিশয় ক্ষমাকারী এবং অতীব পুরস্কার প্রদানকারী।’’ (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ৩৪)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯৪-[১৩] মু’আয ইবনু যুহরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার সময় (এ দু’আ) বলতেনঃ ’’আল্ল-হুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া ’আলা- রিযকবিকা আফত্বরতু’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য সওম রেখে, তোমার [দান] রিযক দিয়ে ইফতবার করছি)। (আবূ দাঊদ, হাদীসটি মুরসাল)[1]

وَعَنْ مُعَاذٍ بْنِ زُهْرَةَ قَالَ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَفْطَرَ قَالَ: «اللَّهُمَّ لَكَ صَمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد مُرْسلا

وعن معاذ بن زهرة قال: ان النبي صلى الله عليه وسلم كان اذا افطر قال: «اللهم لك صمت وعلى رزقك افطرت» . رواه ابو داود مرسلا

ব্যাখ্যা: (اَللّٰهُمَّ لَكَ صَمْتُ وَعَلٰى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ) ‘‘হে আল্লাহ! তোমার জন্যেই আমি সিয়াম পালন করেছি এবং তোমার রিযক দিয়েই ইফতার করেছি।’’ অর্থাৎ- আমার এ সিয়াম লোক দেখানো নয় বরং তা একনিষ্ঠভাবে শুধু তোমারই সন্তুষ্টির জন্য। কেননা একমাত্র তুমিই রিযকদাতা। যেহেতু তোমার দেয়া রিযক ভক্ষণ করি, কাজেই তুমি ব্যতীত অন্য কারো ‘ইবাদাত করা সমিচীন নয়।

‘আল্লামা কারী বলেনঃ লোকজনের মাঝে এ দু‘আর শেষে বাড়তি শব্দ (وبك آمنت وعليك توكلت لصوم غد نويت) এর কোন ভিত্তি নেই। বরং মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নিয়্যাত করা বিদ্‘আতে হাসানাহ্। আমি (মুবারকপূরী) বলছি, সালাত ও সওমের জন্যে মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করার কোন ভিত্তি কুরআন ও হাদীসে নেই। অতএব তা ইসলামী শারী‘আতের মধ্যে একটি বিদআত (বিদাত)। আর শারী‘আতের মধ্যে সকল প্রকার বিদআতই দূষণীয়, তাই পরিত্যাজ্য।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে