লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্
১৯৮৭-[৬] হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের আগে সওমের নিয়্যাত করবে না তার সওম হবে না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, মা’মার ও যুবায়দী, ইবনু ’উআয়নাহ্ এবং ইউনুস আয়লী সহ সকলে এ বর্ণনাটি হাফসাহ্’র কথা বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন।)[1]
عَن حَفْصَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَمْ يَجْمَعِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمَيُّ وَقَالَ أَبُو دَاوُد: وَقفه على حَفْصَة معمر والزبيدي وَابْنُ عُيَيْنَةَ وَيُونُسُ الَأَيْلِيُّ كُلُّهُمْ عَنِ الزُّهْرِيِّ
ব্যাখ্যা: (مَنْ لَمْ يُجْمِعِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَه) ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বেই সিয়াম পালনের নিয়্যাত করে না তার সিয়াম হয় না।’’
এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, সিয়াম বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য ফজরের পূর্বে অর্থাৎ- রাত থাকতেই সিয়াম পালনের উদ্দেশে নিয়্যাত করা, অর্থাৎ- রাত থাকতেই সিয়াম পালনের উদ্দেশে দৃঢ় প্রত্যয় করা আবশ্যক। তা না হলে তার সিয়াম বিশুদ্ধ হবে না।
আমীর ইয়ামানী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, রাতের কোন অংশে সিয়াম পালনের ইচ্ছা ব্যক্ত না করলে তার সিয়াম হবে না। আর এ ইচ্ছা ব্যক্ত করা তথা নিয়্যাত করার প্রথম ওয়াক্ত সূর্যাস্তের পর থেকেই শুরু হয়। কেননা সিয়াম একটি ‘আমল বা কাজ। আর যে কোন কাজ তথা ‘ইবাদাত নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। অতএব এ ‘ইবাদাত বাস্তবে রূপলাভ করবে না যদি না রাত থাকতেই তার জন্য নিয়্যাত করা হয়। আর এ হুকুম সকল প্রকার সিয়াম তথা ফরয, নফল, কাযা, কাফফারা, মানৎ- সকল সিয়ামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
আল কারী বলেনঃ হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এই যে, ফরয ও নফল যে কোন সিয়ামের জন্যই রাত থাকতেই নিয়্যাত করতে হবে। আর এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইবনু ‘উমার, জারির ইবনু যায়দ, ইমাম মালিক, মুযানী ও দাঊদ।
অন্যান্যদের অভিমত এই যে, নফল সিয়ামের জন্য দিনের বেলায় নিয়্যাত করলেও চলবে। অত্র হাদীসকে তারা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত ঐ হাদীস দ্বারা খাস করেছেন যাতে তিনি বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বলতেন, তোমার নিকট কি খাবার কিছু আছে? আমি বলতাম, না, নেই। তখন তিনি বলতেন আমি সায়িম। কোন বর্ণনায় আছে, তাহলে আমি সায়িম।
ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ বলেনঃ নফল সিয়ামের ক্ষেত্রে ফজরের পরে নিয়্যাত করলেও চলবে কিন্তু ফরযের ক্ষেত্রে তা চলবে না। ইমাম আবূ হানীফাহ্ বলেনঃ নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পৃক্ত সিয়ামের ক্ষেত্রে ফজরের পরে নিয়্যাত করলেও চলবে। যেমন, রমাযানের সিয়াম, নির্দিষ্ট দিনের জন্য মানৎ করা সিয়াম, অনুরূপভাবে নফল সিয়াম। কিন্ত যে সমস্ত ওয়াজিব সিয়ামের জন্য সময় নির্দিষ্ট নেই যেমন কাযা ও কাফফারা তার জন্য ফজরের পূর্বেই নিয়্যাত করতে হবে।
ইমাম আবূ হানীফার পার্থক্য করার কারণ এই যে, নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পৃক্ত সিয়ামসমূহের জন্য নির্দিষ্ট সময়ই নিয়্যাতের স্থলাভিষিক্ত তা নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে।
পক্ষান্তরে যার জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই তা নির্দিষ্ট করার জন্য নিয়্যাত প্রয়োজন তথা নিয়্যাত দ্বারা তা নির্দিষ্ট হয় তাই সিয়ামের সময় শুরু হওয়ার পূর্বেই নিয়্যাত দ্বারা নির্দিষ্ট করতে হবে।
ইমাম মালিক-এর মতে সকল প্রকার সিয়ামের জন্যই ফজরের পূর্বেই নিয়্যাত করতে হবে। তিনি তার মতের স্বপক্ষে হাফসা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।