পরিচ্ছেদঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভয়কালীন সালাত
কাফির হতে ভয়ভীতিকালীন সালাতের নিয়ম কানুনের বিষয়ে কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনাও রয়েছে তন্মধ্যে জ্ঞান অন্বেষণকারীদের জন্য সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করব।
১। ভয়ভীতির সালাত কত হিজরীতে শুরু হয় এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে জমহূর ’উলামারা বলেছেন প্রথম সালাত যাতুর রিক্বা’ যুদ্ধে পড়া হয়েছিল। আর এ যুদ্ধ সংঘটিত ইমাম বুখারীর ভাষ্যমতে ৭ম হিজরীর খায়বার যুদ্ধের পরে যা ইমাম ইবনু ক্বইয়্যিম ও ইববে হাজার শক্তিশালী মত হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
২। সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন, এ সালাত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দাকের যুদ্ধে পড়েননি। মতানৈক্যের কারণ হল ভয়ভীতিকালীন সালাত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত খন্দাক যুদ্ধের পূর্বে না পরে অবতীর্ণ হয়েছে। জমহূর ’উলামাদের অভিমত বেশি গ্রহণযোগ্য যেমন ইবনু রুশদ ইবনু ক্বাইয়্যিম হাফিয ইবনু হাজার আর কুরতুবী মুসলিমের জরাহতে, ইয়াজি, আল্লামা যায়লা’ঈ বলেছেন আমাদের নিকট খন্দাক যুদ্ধের পরে ভয়ভীতিকালীন সালাত সম্পকির্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
৩। জমহূর ’উলামাদের অভিমত এ হুকুমের কার্যকারিতা (ভয়ভীতিকালীন সালাতের হুকুম) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পরেও বলবৎ আছে। তবে ইমাম শাফি’ঈ বলেন, এর হুকুম রহিত হয়েছে আর আবূ ইউসুফ বলেন, এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথেই খাস।
৪। ভয়ভীতিকালীন সালাত নগরবাসীর জন্য বৈধ যখন শত্রুরা প্রয়োজন দেখা দিবে যেমন শত্রুদের দ্বারা নগরবাসী আক্রান্ত হলে এ মতে গেছেন জমহূর শাফি’ঈ আহমাদ আবূ হানীফাহ্ ও মালিক-এর প্রসিদ্ধ মতে। আর এ মতই সঠিক।
৫। এই ভয়কালীন পরিবেশে সালাতের রাক্’আতের সংখ্যার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না কি ইমাম ও মুক্তাদীদের ক্ষেত্রে। অধিকাংশ ’উলামাদের অভিমত যেমন ইবনু ’উমার (রাঃ) নাখ্’ঈ, মালিক, শাফি’ঈ, আহমাদ ও আবূ হানীফা ও সকল শহরবাসী ’উলামা তাদের মতে এক রাক্’আত বৈধ না তবে ইবনু ’আব্বাস, হাসান বসরী, আত্বা তাউস মুজাহিদ আরও অন্যান্যদের নিকট যুদ্ধের ভয়াবহ অবস্থায় এক রাক্’আত ও ইঙ্গিতে সালাত বৈধ দলীল আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী যা বর্ণনা করেন- হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভয়কালীন সালাত একদল নিয়ে এক রাক্’আত অপর দলকে নিয়ে অন্য আর এক রাক্’আত পড়িয়েছেন এবং সাহাবীরা (বাকি রাক্’আত) পূর্ণ করেননি।
অপর এক হাদীস যা আহমাদ ও মুসলিমে এসেছে, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের নবীর জিহ্বার মাধ্যমে নগরে অবস্থানকালীন সময়ে চার রাক্’আত, সফরে দু’ রাক্’আত আর ভয়কালীন অবস্থায় এক রাক্’আত ফরয করেছেন।
আমি (ভাষ্যকার) বলি, জমহূর ’উলামারা ইমামের সাথে এক রাক্’আত পড়া মনে করেছে আর দ্বিতীয় রাক্’আত পড়াকে অস্বীকার করেননি।
অথবা এক রাক্’আত আদায়ের বিষয়টি বৈধ ও প্রাধান্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর হাদীসের لم يقضوا বাক্য দ্বারা তারা পরে বাকি সালাত আদায় করেনি এ ব্যাখ্যা অনেক অগ্রহণযোগ্য।
৬। ইমাম আবূ দাঊদ ভয়কালীন সালাতের পদ্ধতি আটভাবে বর্ণনা করেছেন আবার কেউ বলেন নয় ভাবে আর এগুলো পরস্পর বিরোধী না কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্যবার ভয়কালীন সালাত আদায় করেছেন সুতরাং ব্যক্তির জন্য বৈধ প্রকারভেদগুলোর মধ্যে যেভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে চায় আদায় করবে।
১৪২০-[১] সালিম ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে তার পিতার সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নাজদের দিকে যুদ্ধে গেলাম। আমরা শত্রু সেনাদের মুখোমুখী হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমাদের একদল লোক তাঁর সাথে সালাতে দাঁড়ালেন। অন্য দল শত্রু সেনার সামনে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথের লোকজনসহ একটি রুকূ’ ও দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। এরপর এরা, যারা সালাত আদায় করেনি তাদের জায়গায় চলে গেলেন। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে এসে দাঁড়ালেন। এদেরে নিয়ে তিনি একটি রুকূ’ ও দু’টি সিজদা্ করলেন। তারপর তিনি একাই সালাম ফিরালেন। তাদের প্রত্যেক দল পর পর উঠে নিজেদের জন্য একটি রুকূ’ ও দু’টি সিজদা্ করলেন। এ নিয়মে সকলে সালাত শেষ করলেন।
’আবদুল্লাহর আরেকজন ছাত্র নাফি’ও এ ধরনের বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আরো বেশী বর্ণনা করেছেন। ভয় যদি আরো বেশী হয় তাহলে তারা পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবেন। অথবা সওয়ারীর উপর বসে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে অথবা উল্টা দিকে, যে দিকে ফিরতে সমর্থ হয় সেদিকে ফিরে সালাত আদায় করবেন। এরপর নাফি’ বলেন, আমার মনে হয় ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) এ কথাও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخَوْفِ
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِبَلَ نَجْدٍ فَوَازَيْنَا الْعَدُوَّ فَصَافَفْنَا لَهُمْ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي لَنَا فَقَامَتْ طَائِفَةٌ مَعَهُ وَأَقْبَلَتْ طَائِفَةٌ عَلَى الْعَدُوِّ وَرَكَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْ مَعَهُ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ انْصَرَفُوا مَكَانَ الطَّائِفَةِ الَّتِي لم تصل فجاؤوا فَرَكَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بهم رَكْعَةً وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ وَرَوَى نَافِعٌ نَحْوَهُ وَزَادَ: فَإِن كَانَ خوف هُوَ أَشَدُّ مِنْ ذَلِكَ صَلَّوْا رِجَالًا قِيَامًا عَلَى أَقْدَامِهِمْ أَوْ رُكْبَانًا مُسْتَقْبِلِي الْقِبْلَةِ أَوْ غَيْرَ مُسْتَقْبِلِيهَا قَالَ نَافِعٌ: لَا أُرَى ابْنَ عُمَرَ ذَكَرَ ذَلِكَ إِلَّا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: যুদ্ধটি ছিল যাতুর রিক্বা‘ যুদ্ধ। (فركع لنفسه ركعة وسجد سجدتين) ইবনু হাজার বলেন, হাদীসে স্পষ্টতা হল তারা (সাহাবীরা) নিজেরাই একই অবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করেছেন অথবা পরে আদায় করে নিয়েছেন। মুগনীর ভাষ্যমতে এটাই প্রাধান্য।
আর ইমাম আহমাদ এককভাবে বর্ণনা করেছেন যা আবূ দাঊদ প্রাধান্য দিয়েছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীস। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দিলেন, অতঃপর এরা তথা দ্বিতীয় দল দাঁড়ালেন তারা নিজেরাই (বাকি) রাক্‘আত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম দিলেন তারপর ফিরে গেলেন এবং প্রথম দল তাদের স্থানে ফিরে আসলেন। আর তারা নিজেরই বাকী রাক্‘আত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম দিলেন। এ হাদীসের ভাষ্য সুস্পষ্ট যে, দ্বিতীয় দল ধারাবাহিকভাবে দু’ রাক্‘আত আদায় করেছেন। অতঃপর প্রথম দল এদের পরে বাকী রাক্‘আত আদায় করে নিয়েছেন।
নাফি‘ও এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বর্ধিত বর্ণনা করেছেন যে, ভয় যদি এর চেয়ে বেশি হয় তবে তারা আপন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। ইবনু হাজার বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করে অপারগ অবস্থায় রুকু’ ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র ইঙ্গিতে সালাত আদায় বৈধ। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বক্তব্য (قِيَامًا عَلَى اقْدَامِهِمْ) পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
মুদ্দা কথা ভয় যখন প্রকট হবে, যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে এবং প্রচন্ড যুদ্ধ চলবে অথবা যুদ্ধের দামামা ও বীভিষিকা ছাড়াই শুধুমাত্র পরিবেশই প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। এমতাবস্থায় যেভাবে হোক তোমাদের সাধ্যানুযায়ী তোমরা সালাত আদায় করে নিবে চাই দাঁড়িয়ে হোক বা শোয়া অবস্থায় হোক। ক্বিবলামুখী হোক বা না হোক রুকু’ এবং সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ইঙ্গিতের মাধ্যমে হোক, তথাপিও সালাতের সময়কে অতিক্রম করবেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভয়কালীন সালাত
১৪২১-[২] ইয়াযীদ ইবনু রূমান (রহঃ) সালিহ ইবনু খাও্ওয়াত (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যা-তুর রিক্বা’ যুদ্ধে ’সালাতুল খাওফ’ আদায় করেছিলেন। তিনি বলেন, (এ যুদ্ধে সালাতের সময়) একদল লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সারি বেঁধে ছিলেন। অন্যদল (তখন) শত্রুদের মুখোমুখী ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম দল নিয়ে এক রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুসল্লীরা নিজেদের সালাত পূর্ণ করলেন, অতঃপর শত্রু সেনাদের সামনে গিয়ে কাতারবন্দী হলেন। এরপর দ্বিতীয় দল এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাতে যোগ দিলেন। যে রাক্’আত বাকী ছিল তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এদের সাথে নিয়ে আদায় করলেন। তারপর তিনি বসে থাকলেন। এ দল তাদের বাকী রাক্’আত পূর্ণ করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এদের নিয়ে সালাম ফিরালেন। (বুখারী, মুসলিম)
কিন্তু ইমাম বুখারী হাদীসটি অন্য সূত্রে ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ হতে, তিনি সালিহ ইবনু খাও্ওয়াত হতে, তিনি সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ্ হতে এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخَوْفِ
وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ عَنْ صَالِحِ بْنِ خَوَّاتٍ عَمَّنْ صَلَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ ذَاتِ الرِّقَاعِ صَلَاةَ الْخَوْفِ: أَنَّ طَائِفَةً صَفَّتْ مَعَهُ وَطَائِفَةً وِجَاهَ الْعَدُوِّ فَصَلَّى بِالَّتِي مَعَهُ رَكْعَةً ثُمَّ ثَبَتَ قَائِمًا وَأَتَمُّوا لِأَنْفُسِهِمْ ثُمَّ انْصَرَفُوا فَصَفُّوا وِجَاهَ الْعَدُوِّ وَجَاءَتِ الطَّائِفَةُ الْأُخْرَى فَصَلَّى بِهِمُ الرَّكْعَةَ الَّتِي بَقِيَتْ مِنْ صَلَاتِهِ ثُمَّ ثَبَتَ جَالِسًا وَأَتمُّوا لأَنْفُسِهِمْ ثمَّ سلم بهم
وَأَخْرَجَ الْبُخَارِيُّ بِطَرِيقٍ آخَرَ عَنِ الْقَاسِمِ عَنْ صَالِحِ بْنِ خَوَّاتٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ أَبِي حَثْمَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ব্যাখ্যা: ذَاتُ الرِّقَاعِ (যা-তুর রিক্বা') নামে নামকরণের কয়েকটি কারণ রয়েছে যা নিম্নরূপঃ
১। এ যুদ্ধে মুসলিমদের বোঝা বহনকারী সওয়ারসমূহ স্বল্প ছিল আর তারা খালি পায়ে ছিলেন তাদের পায়ে কোন জুতা ছিল না, ফলে তাদের পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। মুসলিম সৈনিকগণ ক্ষত স্থানে কাপড়ের পট্টি বেঁধেছিল। উল্লেখ্য যে ‘রিক্বা’ কাপড়ের টুকরাকে বলা হয়। এ কাপড়ের টুকরা দিয়ে পট্টি বাঁধার কারণে এ যুদ্ধকে যাতুর রিক্বা' বা পট্টি বিশিষ্ট যুদ্ধ বলা হয়।
২। যুদ্ধের স্পটে একটি গাছ ছিল যে গাছটিকে বলা হত যাতুর রিক্বা' এজন্য এ নামকরণ।
৩। যে স্থানে এ যুদ্ধ বা ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এ স্থানটির মাটি ছিল বিভিন্ন ধরনের। এক স্থানের মাটির রং আরেক স্থানের রং এর সাথে কোন মিল ছিল না কোন অংশের বর্ণ ছিল সাদা আবার কোন অংশের বর্ণ ছিল লাল আর কোন অংশের বর্ণ ছিল কালো। এ বিচিত্র বর্ণের টুকরার জন্য একে যাতুর রিক্বা' হয়েছে।
৪। আবার কারো মতে এ যুদ্ধে মুসলিমদের বিচিত্র বর্ণের ঝান্ডা ছিল। এজন্য এই নামকরণ করা হয়েছে।
৫। ইমাম দাঊদ বলেন, এ যুদ্ধে ভয়-ভীতির দরুন মুসলিমরা ‘সালাতুল খাওফ’ আদায় করেছিলেন তাই যাতুর রিক্বা' নামে নামকরণ করা হয়েছে ইত্যাদি। তবে প্রথম কারণটিকেই অনেকে বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন। যেমন বুখারী ও মুসলিম আবূ মূসা আল আশ্‘আরী হতে বর্ণনা করেন।
আর এ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার তারিখ প্রাধান্যযোগ্য মত হল যা ইমাম বুখারীর মত দিয়েছেন। খায়বার যুদ্ধের পরে ৭ম হিজরীতে। এ হাদীসের ভাষ্য মতে ভয়কালীন সালাতে এ পদ্ধতিকে ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ উত্তম বলে মনে করেন। আর ইমাম মালিক বলেন, দ্বিতীয় দল ইমামের সাথে তাশাহুদ তথা বৈঠক করবে আর ইমাম যখন সালাম দিবেন তারা দাঁড়াবে এবং বাকী নামায আদায় করে নিবে যা ছুটে গেছে মাসবূকের মতো। আর ইবনু কুদামাহ্ বলেন, প্রথম পদ্ধতিই উত্তম। কেননা আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ
‘‘এবং অন্য দল যেন আসে, যারা সালাত আদায় করেনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে সাথে সালাত আদায় করে’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১০২)। আর এটা প্রমাণ করে তাদের প্রত্যেকের সালাত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিল। কেননা বর্ণিত হয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শেষে সালাম দিয়েছেন দ্বিতীয় দলকে নিয়ে। আর প্রথম দল তাঁর সাথে তাকবীরে তাহরীমার ফাযীলাত অর্জন করেছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভয়কালীন সালাত
১৪২২-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এগিয়ে যেতে যেতে যাতুর রিক্বা’ পর্যন্ত পৌঁছলাম। এখানে একটি ছায়াবিশিষ্ট গাছের নিকট গেলে, তা আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ছেড়ে দিলাম। তিনি বলেন, এ সময় মুশরিকদের একজন এখানে এসে দেখলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারিখানা গাছের সাথে লটকানো আছে। সে তখন তরিত গতিতে তাঁর তরবারিখানা হাতে নিয়ে কোষমুক্ত করল। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, তুমি কি আমাকে ভয় পাও না? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কখনো না। সে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ আমাকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করবেন।
বর্ণনাকারী [জাবির (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ সে মুশারিককে ভয় দেখালে সে তরবারিখানা কোষবদ্ধ করে আবার ঝুলিয়ে রাখল। তিনি [জাবির (রাঃ)] আবার বললেন, এ সময় সালাতের আযান দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুসংখ্যক লোক নিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর এ দল পেছনে সরে গেলে তিনি অবশিষ্টদের নিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। তিনি [জাবির (রাঃ)] বলেন, এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার রাক্’আত হলো। অন্যান্য লোকের হলো দু’ রাক্’আত। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخَوْفِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَقْبَلْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذْ كُنَّا بِذَاتِ الرِّقَاعِ قَالَ: كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا عَلَى شَجَرَةٍ ظَلِيلَةٍ تَرَكْنَاهَا لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ المشكرين وَسَيْفُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُعَلَّقٌ بِشَجَرَةٍ فَأَخَذَ سَيْفَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاخْتَرَطَهُ فَقَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَخَافُنِي؟ قَالَ: «لَا» . قَالَ: فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي؟ قَالَ: «اللَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْك» . قَالَ: فَتَهَدَّدَهُ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَغَمَدَ السَّيْفَ وَعَلَّقَهُ قَالَ: فَنُودِيَ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى بِطَائِفَةٍ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ تَأَخَّرُوا وَصَلَّى بِالطَّائِفَةِ الْأُخْرَى رَكْعَتَيْنِ قَالَ: فَكَانَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ وَلِلْقَوْمِ رَكْعَتَانِ
ব্যাখ্যা: (فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ المُشْرِكِيْنَ) এ সময় মুশরিকদের মধ্যে হতে এক ব্যক্তি আসল। ব্যক্তির নামঃ গাওরাস বিন হারিস। কারো মতেঃ দা‘সূর। কারো মতে গুওয়াইরিস।
(فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي) তোমাকে আমা হতে কে বাধা দিবে। বুখারীর বর্ণনায় এ কথাটি তিনবার এসেছে।
قَالَ: اللّهُ يَمْنَعُنِي مِنْك রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বলেন, আল্লাহ আমাকে তোমা হতে বাধা দিবেন। এ কথা বলার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রতি ভরসা করেছেন এবং তাকে রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর প্রতি সোপর্দ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
‘‘আল্লাহ তা‘আলাই আপনাকে রক্ষা করবেন মানুষ হতে।’’ (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৬৭)
আর এ বিষয়টি অন্যতম বড় মু‘জিযা যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শত্রুর কবলে আর তার হাতে উন্মুক্ত তরবারি, তারপরেও সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পারেনি। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ ঘটনাটিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহসিকতা, শক্তিমত্তা, দৃঢ়তা ও কষ্টের সময় ধৈর্যতা ফুটে উঠে এবং অজ্ঞদের হতে তাঁর বিচক্ষণতাও প্রকাশ পায়।
(فَتَهَدَّدَه) জাবির (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ তাকে ভয় দেখালেন তবে বুখারীতে এ শব্দ ব্যবহার হয়নি। বুখারীর বর্ণনা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর তরবারি ঝুলালেন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা সকলই ঘুমালাম হঠাৎ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন আমরা তাঁর নিকট আসলাম তাঁর নিকট একজন বেদুঈন ব্যক্তি বসা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় আমার তরবারি কোষমুক্ত করেছে, অতঃপর আমি জেগে উঠি এবং সে আমাকে বলে আমা হতে তোমাকে কে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। এমতাবস্থায় সে বসে পড়ল আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শাস্তি দিলেন না।
(قَالَ: فَكَانَتْ لِرَسُولِ اللّهِ ﷺ أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ وَلِلْقَوْمِ رَكْعَتَانِ) জাবির (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য হল চার রাক্‘আত। দুই সালামে ফরয ও নফল হিসেবে আর লোকদের জন্য হল দু’ রাক্‘আত। আর এ হাদীস দ্বারা প্রামাণিত হয় ফরয সালাত আদায়কারীর জন্য নফল সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে ইকতেদা করা বৈধ। অনুরূপ নাবাবী স্থির সিদ্ধান্ত দিয়েছে মুসলিমের শরাহতে।
আর আবূ বাকরাহ্ (রাঃ) তার হাদীসে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভয়কালীন সময়ে যুহরের সালাত আদায় করলেন। সাহাবীদের কতক তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হলেন (সালাত আদায়ের জন্য)। আবার কত সাহাবী শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়ালেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন আর যারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে সালাত আদায় করলেন তারা ঐ অবস্থান নিলেন ঐ সকল সাহাবীদের স্থানে যারা শত্রুর মোকাবেলাতে রয়েছেন। অতঃপর ঐ সকল সাহাবীরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে দাঁড়ালেন এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে দু’ রাক্‘আত সালত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন। আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু হিব্বান সহীহ সানাদে বর্ণনা করেছেন। আর যায়লা‘ঈ নাসবুর রায়াতে বলেন যে, আবূ বাকরাহ-এর হাদীস সুস্পষ্ট যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সালামে চার রাক্‘আত সালাত আদায় করেছেন আর জাবির (রাঃ)-এর হাদীস তেমন সুস্পষ্ট না। সুতরাং অনেকের মতে আবূ বাকরার হাদীস জাবির (রাঃ)-এর হাদীসের ব্যাখ্যা স্বরূপ।
পরিচ্ছেদঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভয়কালীন সালাত
১৪২৩-[৪] জাবির (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ’সালাতুল খাওফ’ আদায় করলেন। আমরা তাঁর পেঁছনে দু’টি সারি বানালাম। শত্রুপক্ষ তখন আমাদের ও ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র মাঝখানে ছিল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা বাঁধলেন। আমরা তার সাথে তাকবীরে তাহরীমা বাঁধলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকূ’ করলেন। আমরাও তাঁর সাথে রুকূ’ করলাম। অতঃপর তিনি রুকূ’ হতে মাথা উঠালেন। আমরাও মাথা উঠালাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও যে সারি তাঁর নিকটবর্তী ছিল, তারা সাজদায় চলে গেলেন। আর পেছনের সারি শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে রইল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) শেষ করলে তাঁর নিকটবর্তী সারি সিজদা্ হতে উঠে দাঁড়ালে পেছনের সারি সাজদায় গেল। তারপর তারা উঠে দাঁড়াল। এরপর পেছনের সারি সামনে আসলো। সামনের সারি পেছনে সরে গেল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ করলেন। আমরা সবাই তাঁর সাথে রুকূ’ করলাম। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকূ’ হতে মাথা উঠালেন। আমরা সবাই মাথা উঠালাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর নিকটবর্তী সারি অর্থাৎ প্রথম রাক্’আতে যারা পেছনে ছিল সাজদায় গেলেন। আর পরবর্তী সারি শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে রইলেন। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর নিকটবর্তী সারি সিজদা্ শেষ করলে পরবর্তী সারি সাজদায় গেলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরালেন। আমরা সবাই সালাম ফিরালাম। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخَوْفِ
وَعَن جَابر قَالَ: صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الْخَوْفِ فَصَفَفْنَا خَلْفَهُ صَفَّيْنِ وَالْعَدُوُّ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ فَكَبَّرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَبَّرْنَا جَمِيعًا ثُمَّ رَكَعَ وَرَكَعْنَا جَمِيعًا ثمَّ رفع رَأسه من الرُّكُوع ورفعنا جَمِيعًا ثُمَّ انْحَدَرَ بِالسُّجُودِ وَالصَّفُّ الَّذِي يَلِيهِ وَقَامَ الصَّفُّ الْمُؤَخَّرُ فِي نَحْرِ الْعَدُوِّ فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السُّجُودَ وَقَامَ الصَّفُّ الَّذِي يَلِيهِ انْحَدَرَ الصَّفُّ الْمُؤَخَّرُ بِالسُّجُودِ ثُمَّ قَامُوا ثُمَّ تَقَدَّمَ الصَّفُّ الْمُؤَخَّرُ وَتَأَخَّرَ الْمُقَدَّمُ ثُمَّ رَكَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَكَعْنَا جَمِيعًا ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ من الرُّكُوع ورفعنا جَمِيعًا ثمَّ انحدر بِالسُّجُود وَالصَّفُّ الَّذِي يَلِيهِ الَّذِي كَانَ مُؤَخَّرًا فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى وَقَامَ الصَّفُّ الْمُؤَخَّرُ فِي نَحْرِ الْعَدو فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السُّجُودَ وَالصَّفُّ الَّذِي يَلِيهِ انْحَدَرَ الصَّفُّ الْمُؤَخَّرُ بِالسُّجُودِ فَسَجَدُوا ثُمَّ سَلَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَسَلَّمْنَا جَمِيعًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (فَصَفَفْنَا خَلْفَه صَفَّيْنِ وَالْعَدُوُّ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ) আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে দু’টি ছফ করলাম। শত্রুরা তখন আমাদের এবং ক্বিবলার মধ্যস্থলে ছিল। মুসলিমরা কাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন তা আবূ আইয়্যাশ এর হাদীস তা সুস্পষ্ট করে দিয়েছে যা আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, বায়হাক্বী ও ইবনু হিব্বানে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুহায়নাহ্ জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলাম তারা আমাদের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ করছিল। যখন যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়ছিলাম মুশরিকরা বলছিল, এ অবস্থায় যদি তাদেরকে (মুসলিমদেরকে) আক্রমণ করি তাহলে আমরা তাদেরকে কেটে টুকরা টুকরা করতে পারব তখন জিবরীল (আঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সংবাদ দিলেন আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও আমাদেরকে এটা জানালেন। রাবী বলেন, সাহাবীরা জবাব দিলেন তাদের সামনে সালাত আসবে আর এটা তাদের সন্তানের চেয়েও বেশি প্রিয় যখন ‘আসরের সালাত উপস্থিত হল। আমরা দু’সারিতে সারিবদ্ধ হলাম মুশরিকরা আমাদের ও ক্বিবলার মধ্যখানে।
হাদীস প্রমাণ করে শত্রু যদি ক্বিবলার দিকে অবস্থান করে তাহলে সকলেই সালাতে অংশগ্রহণ করেও তাদের বিরুদ্ধে প্রটোকল বা পাহারা দিতে পারবে। তবে সমস্যা হচ্ছে শুধুমাত্র সিজদানত অবস্থায় রুকু’তে না এমতাবস্থায়ও শত্রুর বিপক্ষে পাহারা দেয়া যায়, ফলে সকলেই ক্বিয়াম (কিয়াম) ও রুকু’তে ইমামের অনুসরণ করে আর প্রথম দু’ সাজদাতে পেছনের সারি পাহারারত থাকে ইমামের অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে অতঃপর প্রথম সারি দাঁড়ানো অবস্থায় তারা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দেয় আর পেছনের সারি প্রথম সারির স্থানে চলে আসে আর প্রথম সারি দ্বিতীয় সারির স্থানে চলে আসে যাতে করে পিছনের সারি ইমামের অনুসরণ করে শেষ দু’ সাজদায়। এভাবে প্রত্যেক দু’ দলই দু’ সিজদা্ দিয়ে ইমামের অনুসরণ করে।