১৪২২

পরিচ্ছেদঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভয়কালীন সালাত

১৪২২-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এগিয়ে যেতে যেতে যাতুর রিক্বা’ পর্যন্ত পৌঁছলাম। এখানে একটি ছায়াবিশিষ্ট গাছের নিকট গেলে, তা আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ছেড়ে দিলাম। তিনি বলেন, এ সময় মুশরিকদের একজন এখানে এসে দেখলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারিখানা গাছের সাথে লটকানো আছে। সে তখন তরিত গতিতে তাঁর তরবারিখানা হাতে নিয়ে কোষমুক্ত করল। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, তুমি কি আমাকে ভয় পাও না? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কখনো না। সে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ আমাকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করবেন।

বর্ণনাকারী [জাবির (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ সে মুশারিককে ভয় দেখালে সে তরবারিখানা কোষবদ্ধ করে আবার ঝুলিয়ে রাখল। তিনি [জাবির (রাঃ)] আবার বললেন, এ সময় সালাতের আযান দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুসংখ্যক লোক নিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর এ দল পেছনে সরে গেলে তিনি অবশিষ্টদের নিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। তিনি [জাবির (রাঃ)] বলেন, এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার রাক্’আত হলো। অন্যান্য লোকের হলো দু’ রাক্’আত। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخَوْفِ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَقْبَلْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذْ كُنَّا بِذَاتِ الرِّقَاعِ قَالَ: كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا عَلَى شَجَرَةٍ ظَلِيلَةٍ تَرَكْنَاهَا لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ المشكرين وَسَيْفُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُعَلَّقٌ بِشَجَرَةٍ فَأَخَذَ سَيْفَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاخْتَرَطَهُ فَقَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَخَافُنِي؟ قَالَ: «لَا» . قَالَ: فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي؟ قَالَ: «اللَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْك» . قَالَ: فَتَهَدَّدَهُ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَغَمَدَ السَّيْفَ وَعَلَّقَهُ قَالَ: فَنُودِيَ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى بِطَائِفَةٍ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ تَأَخَّرُوا وَصَلَّى بِالطَّائِفَةِ الْأُخْرَى رَكْعَتَيْنِ قَالَ: فَكَانَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ وَلِلْقَوْمِ رَكْعَتَانِ

وعن جابر قال: اقبلنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى اذ كنا بذات الرقاع قال: كنا اذا اتينا على شجرة ظليلة تركناها لرسول الله صلى الله عليه وسلم قال: فجاء رجل من المشكرين وسيف رسول الله صلى الله عليه وسلم معلق بشجرة فاخذ سيف نبي الله صلى الله عليه وسلم فاخترطه فقال لرسول الله صلى الله عليه وسلم: اتخافني؟ قال: «لا» . قال: فمن يمنعك مني؟ قال: «الله يمنعني منك» . قال: فتهدده اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فغمد السيف وعلقه قال: فنودي بالصلاة فصلى بطاىفة ركعتين ثم تاخروا وصلى بالطاىفة الاخرى ركعتين قال: فكانت لرسول الله صلى الله عليه وسلم اربع ركعات وللقوم ركعتان

ব্যাখ্যা: (فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ المُشْرِكِيْنَ) এ সময় মুশরিকদের মধ্যে হতে এক ব্যক্তি আসল। ব্যক্তির নামঃ গাওরাস বিন হারিস। কারো মতেঃ দা‘সূর। কারো মতে গুওয়াইরিস।

(فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي) তোমাকে আমা হতে কে বাধা দিবে। বুখারীর বর্ণনায় এ কথাটি তিনবার এসেছে।

قَالَ: اللّهُ يَمْنَعُنِي مِنْك রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বলেন, আল্লাহ আমাকে তোমা হতে বাধা দিবেন। এ কথা বলার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রতি ভরসা করেছেন এবং তাকে রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর প্রতি সোপর্দ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ

‘‘আল্লাহ তা‘আলাই আপনাকে রক্ষা করবেন মানুষ হতে।’’ (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৬৭)

আর এ বিষয়টি অন্যতম বড় মু‘জিযা যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শত্রুর কবলে আর তার হাতে উন্মুক্ত তরবারি, তারপরেও সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পারেনি। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ ঘটনাটিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহসিকতা, শক্তিমত্তা, দৃঢ়তা ও কষ্টের সময় ধৈর্যতা ফুটে উঠে এবং অজ্ঞদের হতে তাঁর বিচক্ষণতাও প্রকাশ পায়।

(فَتَهَدَّدَه) জাবির (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ তাকে ভয় দেখালেন তবে বুখারীতে এ শব্দ ব্যবহার হয়নি। বুখারীর বর্ণনা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর তরবারি ঝুলালেন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা সকলই ঘুমালাম হঠাৎ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন আমরা তাঁর নিকট আসলাম তাঁর নিকট একজন বেদুঈন ব্যক্তি বসা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় আমার তরবারি কোষমুক্ত করেছে, অতঃপর আমি জেগে উঠি এবং সে আমাকে বলে আমা হতে তোমাকে কে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। এমতাবস্থায় সে বসে পড়ল আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শাস্তি দিলেন না।

(قَالَ: فَكَانَتْ لِرَسُولِ اللّهِ ﷺ أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ وَلِلْقَوْمِ رَكْعَتَانِ) জাবির (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য হল চার রাক্‘আত। দুই সালামে ফরয ও নফল হিসেবে আর লোকদের জন্য হল দু’ রাক্‘আত। আর এ হাদীস দ্বারা প্রামাণিত হয় ফরয সালাত আদায়কারীর জন্য নফল সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে ইকতেদা করা বৈধ। অনুরূপ নাবাবী স্থির সিদ্ধান্ত দিয়েছে মুসলিমের শরাহতে।

আর আবূ বাকরাহ্ (রাঃ) তার হাদীসে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভয়কালীন সময়ে যুহরের সালাত আদায় করলেন। সাহাবীদের কতক তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হলেন (সালাত আদায়ের জন্য)। আবার কত সাহাবী শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়ালেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন আর যারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে সালাত আদায় করলেন তারা ঐ অবস্থান নিলেন ঐ সকল সাহাবীদের স্থানে যারা শত্রুর মোকাবেলাতে রয়েছেন। অতঃপর ঐ সকল সাহাবীরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে দাঁড়ালেন এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে দু’ রাক্‘আত সালত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন। আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু হিব্বান সহীহ সানাদে বর্ণনা করেছেন। আর যায়লা‘ঈ নাসবুর রায়াতে বলেন যে, আবূ বাকরাহ-এর হাদীস সুস্পষ্ট যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সালামে চার রাক্‘আত সালাত আদায় করেছেন আর জাবির (রাঃ)-এর হাদীস তেমন সুস্পষ্ট না। সুতরাং অনেকের মতে আবূ বাকরার হাদীস জাবির (রাঃ)-এর হাদীসের ব্যাখ্যা স্বরূপ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)