১৪২০

পরিচ্ছেদঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভয়কালীন সালাত

কাফির হতে ভয়ভীতিকালীন সালাতের নিয়ম কানুনের বিষয়ে কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনাও রয়েছে তন্মধ্যে জ্ঞান অন্বেষণকারীদের জন্য সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করব।

১। ভয়ভীতির সালাত কত হিজরীতে শুরু হয় এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে জমহূর ’উলামারা বলেছেন প্রথম সালাত যাতুর রিক্বা’ যুদ্ধে পড়া হয়েছিল। আর এ যুদ্ধ সংঘটিত ইমাম বুখারীর ভাষ্যমতে ৭ম হিজরীর খায়বার যুদ্ধের পরে যা ইমাম ইবনু ক্বইয়্যিম ও ইববে হাজার শক্তিশালী মত হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

২। সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন, এ সালাত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দাকের যুদ্ধে পড়েননি। মতানৈক্যের কারণ হল ভয়ভীতিকালীন সালাত সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত খন্দাক যুদ্ধের পূর্বে না পরে অবতীর্ণ হয়েছে। জমহূর ’উলামাদের অভিমত বেশি গ্রহণযোগ্য যেমন ইবনু রুশদ ইবনু ক্বাইয়্যিম হাফিয ইবনু হাজার আর কুরতুবী মুসলিমের জরাহতে, ইয়াজি, আল্লামা যায়লা’ঈ বলেছেন আমাদের নিকট খন্দাক যুদ্ধের পরে ভয়ভীতিকালীন সালাত সম্পকির্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।

৩। জমহূর ’উলামাদের অভিমত এ হুকুমের কার্যকারিতা (ভয়ভীতিকালীন সালাতের হুকুম) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পরেও বলবৎ আছে। তবে ইমাম শাফি’ঈ বলেন, এর হুকুম রহিত হয়েছে আর আবূ ইউসুফ বলেন, এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথেই খাস।

৪। ভয়ভীতিকালীন সালাত নগরবাসীর জন্য বৈধ যখন শত্রুরা প্রয়োজন দেখা দিবে যেমন শত্রুদের দ্বারা নগরবাসী আক্রান্ত হলে এ মতে গেছেন জমহূর শাফি’ঈ আহমাদ আবূ হানীফাহ্ ও মালিক-এর প্রসিদ্ধ মতে। আর এ মতই সঠিক।

৫। এই ভয়কালীন পরিবেশে সালাতের রাক্’আতের সংখ্যার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না কি ইমাম ও মুক্তাদীদের ক্ষেত্রে। অধিকাংশ ’উলামাদের অভিমত যেমন ইবনু ’উমার (রাঃ) নাখ্’ঈ, মালিক, শাফি’ঈ, আহমাদ ও আবূ হানীফা ও সকল শহরবাসী ’উলামা তাদের মতে এক রাক্’আত বৈধ না তবে ইবনু ’আব্বাস, হাসান বসরী, আত্বা তাউস মুজাহিদ আরও অন্যান্যদের নিকট যুদ্ধের ভয়াবহ অবস্থায় এক রাক্’আত ও ইঙ্গিতে সালাত বৈধ দলীল আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী যা বর্ণনা করেন- হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভয়কালীন সালাত একদল নিয়ে এক রাক্’আত অপর দলকে নিয়ে অন্য আর এক রাক্’আত পড়িয়েছেন এবং সাহাবীরা (বাকি রাক্’আত) পূর্ণ করেননি।

অপর এক হাদীস যা আহমাদ ও মুসলিমে এসেছে, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের নবীর জিহ্বার মাধ্যমে নগরে অবস্থানকালীন সময়ে চার রাক্’আত, সফরে দু’ রাক্’আত আর ভয়কালীন অবস্থায় এক রাক্’আত ফরয করেছেন।

আমি (ভাষ্যকার) বলি, জমহূর ’উলামারা ইমামের সাথে এক রাক্’আত পড়া মনে করেছে আর দ্বিতীয় রাক্’আত পড়াকে অস্বীকার করেননি।

অথবা এক রাক্’আত আদায়ের বিষয়টি বৈধ ও প্রাধান্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর হাদীসের لم يقضوا বাক্য দ্বারা তারা পরে বাকি সালাত আদায় করেনি এ ব্যাখ্যা অনেক অগ্রহণযোগ্য।

৬। ইমাম আবূ দাঊদ ভয়কালীন সালাতের পদ্ধতি আটভাবে বর্ণনা করেছেন আবার কেউ বলেন নয় ভাবে আর এগুলো পরস্পর বিরোধী না কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্যবার ভয়কালীন সালাত আদায় করেছেন সুতরাং ব্যক্তির জন্য বৈধ প্রকারভেদগুলোর মধ্যে যেভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে চায় আদায় করবে।


১৪২০-[১] সালিম ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে তার পিতার সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নাজদের দিকে যুদ্ধে গেলাম। আমরা শত্রু সেনাদের মুখোমুখী হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমাদের একদল লোক তাঁর সাথে সালাতে দাঁড়ালেন। অন্য দল শত্রু সেনার সামনে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথের লোকজনসহ একটি রুকূ’ ও দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। এরপর এরা, যারা সালাত আদায় করেনি তাদের জায়গায় চলে গেলেন। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে এসে দাঁড়ালেন। এদেরে নিয়ে তিনি একটি রুকূ’ ও দু’টি সিজদা্ করলেন। তারপর তিনি একাই সালাম ফিরালেন। তাদের প্রত্যেক দল পর পর উঠে নিজেদের জন্য একটি রুকূ’ ও দু’টি সিজদা্ করলেন। এ নিয়মে সকলে সালাত শেষ করলেন।

’আবদুল্লাহর আরেকজন ছাত্র নাফি’ও এ ধরনের বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আরো বেশী বর্ণনা করেছেন। ভয় যদি আরো বেশী হয় তাহলে তারা পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবেন। অথবা সওয়ারীর উপর বসে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে অথবা উল্টা দিকে, যে দিকে ফিরতে সমর্থ হয় সেদিকে ফিরে সালাত আদায় করবেন। এরপর নাফি’ বলেন, আমার মনে হয় ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) এ কথাও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخَوْفِ

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِبَلَ نَجْدٍ فَوَازَيْنَا الْعَدُوَّ فَصَافَفْنَا لَهُمْ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي لَنَا فَقَامَتْ طَائِفَةٌ مَعَهُ وَأَقْبَلَتْ طَائِفَةٌ عَلَى الْعَدُوِّ وَرَكَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْ مَعَهُ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ انْصَرَفُوا مَكَانَ الطَّائِفَةِ الَّتِي لم تصل فجاؤوا فَرَكَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بهم رَكْعَةً وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ وَرَوَى نَافِعٌ نَحْوَهُ وَزَادَ: فَإِن كَانَ خوف هُوَ أَشَدُّ مِنْ ذَلِكَ صَلَّوْا رِجَالًا قِيَامًا عَلَى أَقْدَامِهِمْ أَوْ رُكْبَانًا مُسْتَقْبِلِي الْقِبْلَةِ أَوْ غَيْرَ مُسْتَقْبِلِيهَا قَالَ نَافِعٌ: لَا أُرَى ابْنَ عُمَرَ ذَكَرَ ذَلِكَ إِلَّا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن سالم بن عبد الله بن عمر عن ابيه قال: غزوت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم قبل نجد فوازينا العدو فصاففنا لهم فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي لنا فقامت طاىفة معه واقبلت طاىفة على العدو وركع رسول الله صلى الله عليه وسلم بمن معه وسجد سجدتين ثم انصرفوا مكان الطاىفة التي لم تصل فجاووا فركع رسول الله صلى الله عليه وسلم بهم ركعة وسجد سجدتين وروى نافع نحوه وزاد: فان كان خوف هو اشد من ذلك صلوا رجالا قياما على اقدامهم او ركبانا مستقبلي القبلة او غير مستقبليها قال نافع: لا ارى ابن عمر ذكر ذلك الا عن رسول الله صلى الله عليه وسلم. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: যুদ্ধটি ছিল যাতুর রিক্বা‘ যুদ্ধ। (فركع لنفسه ركعة وسجد سجدتين) ইবনু হাজার বলেন, হাদীসে স্পষ্টতা হল তারা (সাহাবীরা) নিজেরাই একই অবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করেছেন অথবা পরে আদায় করে নিয়েছেন। মুগনীর ভাষ্যমতে এটাই প্রাধান্য।

আর ইমাম আহমাদ এককভাবে বর্ণনা করেছেন যা আবূ দাঊদ প্রাধান্য দিয়েছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীস। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দিলেন, অতঃপর এরা তথা দ্বিতীয় দল দাঁড়ালেন তারা নিজেরাই (বাকি) রাক্‘আত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম দিলেন তারপর ফিরে গেলেন এবং প্রথম দল তাদের স্থানে ফিরে আসলেন। আর তারা নিজেরই বাকী রাক্‘আত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম দিলেন। এ হাদীসের ভাষ্য সুস্পষ্ট যে, দ্বিতীয় দল ধারাবাহিকভাবে দু’ রাক্‘আত আদায় করেছেন। অতঃপর প্রথম দল এদের পরে বাকী রাক্‘আত আদায় করে নিয়েছেন।

নাফি‘ও এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বর্ধিত বর্ণনা করেছেন যে, ভয় যদি এর চেয়ে বেশি হয় তবে তারা আপন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। ইবনু হাজার বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করে অপারগ অবস্থায় রুকু’ ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র ইঙ্গিতে সালাত আদায় বৈধ। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বক্তব্য (قِيَامًا عَلَى اقْدَامِهِمْ) পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।

মুদ্দা কথা ভয় যখন প্রকট হবে, যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে এবং প্রচন্ড যুদ্ধ চলবে অথবা যুদ্ধের দামামা ও বীভিষিকা ছাড়াই শুধুমাত্র পরিবেশই প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। এমতাবস্থায় যেভাবে হোক তোমাদের সাধ্যানুযায়ী তোমরা সালাত আদায় করে নিবে চাই দাঁড়িয়ে হোক বা শোয়া অবস্থায় হোক। ক্বিবলামুখী হোক বা না হোক রুকু’ এবং সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ইঙ্গিতের মাধ্যমে হোক, তথাপিও সালাতের সময়কে অতিক্রম করবেন না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)