লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভয়কালীন সালাত
১৪২১-[২] ইয়াযীদ ইবনু রূমান (রহঃ) সালিহ ইবনু খাও্ওয়াত (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যা-তুর রিক্বা’ যুদ্ধে ’সালাতুল খাওফ’ আদায় করেছিলেন। তিনি বলেন, (এ যুদ্ধে সালাতের সময়) একদল লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সারি বেঁধে ছিলেন। অন্যদল (তখন) শত্রুদের মুখোমুখী ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম দল নিয়ে এক রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুসল্লীরা নিজেদের সালাত পূর্ণ করলেন, অতঃপর শত্রু সেনাদের সামনে গিয়ে কাতারবন্দী হলেন। এরপর দ্বিতীয় দল এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাতে যোগ দিলেন। যে রাক্’আত বাকী ছিল তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এদের সাথে নিয়ে আদায় করলেন। তারপর তিনি বসে থাকলেন। এ দল তাদের বাকী রাক্’আত পূর্ণ করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এদের নিয়ে সালাম ফিরালেন। (বুখারী, মুসলিম)
কিন্তু ইমাম বুখারী হাদীসটি অন্য সূত্রে ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ হতে, তিনি সালিহ ইবনু খাও্ওয়াত হতে, তিনি সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ্ হতে এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخَوْفِ
وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ عَنْ صَالِحِ بْنِ خَوَّاتٍ عَمَّنْ صَلَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ ذَاتِ الرِّقَاعِ صَلَاةَ الْخَوْفِ: أَنَّ طَائِفَةً صَفَّتْ مَعَهُ وَطَائِفَةً وِجَاهَ الْعَدُوِّ فَصَلَّى بِالَّتِي مَعَهُ رَكْعَةً ثُمَّ ثَبَتَ قَائِمًا وَأَتَمُّوا لِأَنْفُسِهِمْ ثُمَّ انْصَرَفُوا فَصَفُّوا وِجَاهَ الْعَدُوِّ وَجَاءَتِ الطَّائِفَةُ الْأُخْرَى فَصَلَّى بِهِمُ الرَّكْعَةَ الَّتِي بَقِيَتْ مِنْ صَلَاتِهِ ثُمَّ ثَبَتَ جَالِسًا وَأَتمُّوا لأَنْفُسِهِمْ ثمَّ سلم بهم وَأَخْرَجَ الْبُخَارِيُّ بِطَرِيقٍ آخَرَ عَنِ الْقَاسِمِ عَنْ صَالِحِ بْنِ خَوَّاتٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ أَبِي حَثْمَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ব্যাখ্যা: ذَاتُ الرِّقَاعِ (যা-তুর রিক্বা') নামে নামকরণের কয়েকটি কারণ রয়েছে যা নিম্নরূপঃ
১। এ যুদ্ধে মুসলিমদের বোঝা বহনকারী সওয়ারসমূহ স্বল্প ছিল আর তারা খালি পায়ে ছিলেন তাদের পায়ে কোন জুতা ছিল না, ফলে তাদের পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। মুসলিম সৈনিকগণ ক্ষত স্থানে কাপড়ের পট্টি বেঁধেছিল। উল্লেখ্য যে ‘রিক্বা’ কাপড়ের টুকরাকে বলা হয়। এ কাপড়ের টুকরা দিয়ে পট্টি বাঁধার কারণে এ যুদ্ধকে যাতুর রিক্বা' বা পট্টি বিশিষ্ট যুদ্ধ বলা হয়।
২। যুদ্ধের স্পটে একটি গাছ ছিল যে গাছটিকে বলা হত যাতুর রিক্বা' এজন্য এ নামকরণ।
৩। যে স্থানে এ যুদ্ধ বা ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এ স্থানটির মাটি ছিল বিভিন্ন ধরনের। এক স্থানের মাটির রং আরেক স্থানের রং এর সাথে কোন মিল ছিল না কোন অংশের বর্ণ ছিল সাদা আবার কোন অংশের বর্ণ ছিল লাল আর কোন অংশের বর্ণ ছিল কালো। এ বিচিত্র বর্ণের টুকরার জন্য একে যাতুর রিক্বা' হয়েছে।
৪। আবার কারো মতে এ যুদ্ধে মুসলিমদের বিচিত্র বর্ণের ঝান্ডা ছিল। এজন্য এই নামকরণ করা হয়েছে।
৫। ইমাম দাঊদ বলেন, এ যুদ্ধে ভয়-ভীতির দরুন মুসলিমরা ‘সালাতুল খাওফ’ আদায় করেছিলেন তাই যাতুর রিক্বা' নামে নামকরণ করা হয়েছে ইত্যাদি। তবে প্রথম কারণটিকেই অনেকে বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন। যেমন বুখারী ও মুসলিম আবূ মূসা আল আশ্‘আরী হতে বর্ণনা করেন।
আর এ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার তারিখ প্রাধান্যযোগ্য মত হল যা ইমাম বুখারীর মত দিয়েছেন। খায়বার যুদ্ধের পরে ৭ম হিজরীতে। এ হাদীসের ভাষ্য মতে ভয়কালীন সালাতে এ পদ্ধতিকে ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ উত্তম বলে মনে করেন। আর ইমাম মালিক বলেন, দ্বিতীয় দল ইমামের সাথে তাশাহুদ তথা বৈঠক করবে আর ইমাম যখন সালাম দিবেন তারা দাঁড়াবে এবং বাকী নামায আদায় করে নিবে যা ছুটে গেছে মাসবূকের মতো। আর ইবনু কুদামাহ্ বলেন, প্রথম পদ্ধতিই উত্তম। কেননা আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ
‘‘এবং অন্য দল যেন আসে, যারা সালাত আদায় করেনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে সাথে সালাত আদায় করে’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১০২)। আর এটা প্রমাণ করে তাদের প্রত্যেকের সালাত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিল। কেননা বর্ণিত হয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শেষে সালাম দিয়েছেন দ্বিতীয় দলকে নিয়ে। আর প্রথম দল তাঁর সাথে তাকবীরে তাহরীমার ফাযীলাত অর্জন করেছে।