পরিচ্ছেদঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০০-[১৩] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাত্রে (তাহাজ্জুদের) সালাত(সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার ’’আল্ল-হু আকবার’’ বলে এ কথা বলেছেন : ’’যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল ’আযামাতি’। তারপর তিনি সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা পড়ে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ পড়তেন। এরপর রুকূ’ করতেন। তাঁর রুকূ’ প্রায় ক্বিয়ামের মতো (দীর্ঘ) ছিল। রুকূ’তে তিনি সুবহা-না রব্বিআল ’আযীম বলেছেন। তারপর রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে প্রায় রুকূ’ সমপরিমাণ সময় দাঁড়িয়েছেন। (এ সময়) তিনি বলতেন, ’লিরব্বিয়াল হামদু’ অর্থাৎ সব প্রশংসা আমার রবের জন্যে। তারপর তিনি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছেন। তাঁর সাজদার সময়ও তাঁর ’ক্বাওমার’ বরাবর ছিল। সাজদায় তিনি বলতেন, সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা-। তারপর তিনি সিজদা্ হতে মাথা উঠালেন। তিনি উভয় সাজদার মাঝে সাজদার পরিমাণ সময় বসতেন। তিনি বলতেন, ’রব্বিগফির লী, ’রব্বিগফির লী’ হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করো। হে আল্লাহ আমাকে মাফ করো। এভাবে তিনি চার রাক্’আত (সালাত) আদায় করলেন। (এ চার রাক্’আত সালাতে) সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্, আ-লি ’ইমরান, আন্ নিসা, আল মায়িদাহ্ অথবা আল আন্’আম পড়তেন। এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী শু’বার সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, হাদীসে শেষ সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ উল্লেখ করা হয়েছে না সূরাহ্ আল আন্’আম। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ حُذَيْفَةَ: أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ وَكَانَ يَقُولُ: «الله أكبر» ثَلَاثًا «ذُو الْمَلَكُوتِ وَالْجَبَرُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ» ثُمَّ اسْتَفْتَحَ فَقَرَأَ الْبَقَرَةَ ثُمَّ رَكَعَ فَكَانَ رُكُوعُهُ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهِ فَكَانَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ» ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ فَكَانَ قِيَامُهُ نَحْوًا مِنْ رُكُوعِهِ يَقُولُ: «لِرَبِّيَ الْحَمْدُ» ثُمَّ سَجَدَ فَكَانَ سُجُودُهُ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهِ فَكَانَ يَقُولُ فِي سُجُودِهِ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى» ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ وَكَانَ يَقْعُدُ فِيمَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ نَحْوًا مِنْ سُجُودِهِ وَكَانَ يَقُولُ: «رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي» فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ قَرَأَ فِيهِنَّ (الْبَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ وَالنِّسَاءَ وَالْمَائِدَةَ أَوِ الْأَنْعَامَ)
شَكَّ شُعْبَة)
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ اسْتَفْتَحَ) অতঃপর (ইসতিফতাহ) অর্থাৎ সালাত শুরু করার দু‘আ পাঠ করলেন অথবা ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ শুরু করলেন। ইবনু হাজার বলেন, সানা এর স্থলে উপরোক্ত দু‘আ পাঠ করার পর ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করলেন।
(فَقَرَأَ الْبَقَرَةَ) তিনি সূরাহ্ বাক্বারাহ্ পাঠ করলেন। অর্থাৎ প্রথমে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করার পর সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ সম্পূর্ণ পাঠ করলেন। যদিও এখানে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের কথা উল্লেখ নেই। কেননা এটা সর্বজনবিদিত যে, সূরাহ্ ফা-তিহাহ্ ব্যতীত সালাত হয় না। তাই তা উল্লেখ করেননি।
(فَكَانَ قِيَامُه نَحْوًا مِنْ رُكُوعِه) তার ক্বিয়াম (কিয়াম) রুকূ‘র মতই দীর্ঘ ছিল। অর্থাৎ রুকূ‘ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়নোটা রুকূ‘র সমপরিমাণ অথবা তার কাছাকাছি পরিমাণ দীর্ঘ ছিল। এতে বুঝা যায় যে, সোজা হয়ে দাঁড়ানোটাও সালাতের একটি দীর্ঘ রুকন। তবে শাফি‘ঈদের নিকট রুকূ‘র পরে এই দাঁড়ানোটা একটা রুকন হলেও তা দীর্ঘ রুকন নয়।
হাদীসের শিক্ষাঃ
১। দুই সাজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা অবস্থায় আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি বিধিবদ্ধ নিয়ম।
২। নফল সালাতে দীর্ঘ ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করা এবং সকল রুকন দীর্ঘ করা মুস্তাহাব। এতে তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যারা মনে করেছে যে, রুকূ‘র পরে এবং দুই সাজদার মাঝের স্থিতি অবস্থা দীর্ঘ করা মাকরূহ।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০১-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক দশটি আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে (রাতে) ক্বিয়াম (কিয়াম) করবে তাকে ’গাফিলীনের’ (অচেতনদের) মাঝে গণ্য করা হবে না। আর যে লোক একশত আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে ক্বিয়াম (কিয়াম) করে তার নাম আনুগত্যশীলের মাঝে লিখা হবে। আর যে লোক এক হাজার আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে ক্বিয়াম (কিয়াম) করবে তার নাম ’অধিক সাওয়াব পাওয়ার লোকদের’ মাঝে লিখা হবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَامَ بِعَشْرِ آيَاتٍ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ وَمَنْ قَامَ بِمِائَةِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الْقَانِتِينَ وَمَنْ قَامَ بِأَلْفِ آيَةٍ كُتِبَ من المقنطرين» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (كُتِبَ مِنَ الْمُقَنْطِرِيْنَ) অধিক পুরস্কারপ্রাপ্তদের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হয়। الْمُقَنْطِرِيْنَ শব্দটি الْقِنْطَارُ থেকে গঠিত। যার অর্থ প্রচুর মাল। ইবনু হিব্বান তার স্বীয় গ্রন্থে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, ‘ক্বিনত্বা-র’ এর পরিমাণ বার হাজার ‘উক্বিয়্যাহ্। আর এক ‘উক্বিয়্যাহ্ আকাশ এবং জমিনের মাঝে যা আছে তার চাইতেও উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০২-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাত্রের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) বিভিন্ন রকমের হতো। কোন সময় তিনি শব্দ করে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন, আবার কোন সময় নিচু স্বরে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: كَانَ قِرَاءَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاللَّيْلِ يَرْفَعُ طَوْرًا وَيَخْفِضُ طَوْرًا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (يَرْفَعُ طَوْرًا وَيَخْفِضُ طَوْرًا) কখনো তিনি ক্বিরাআত (কিরআত) উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করতেন আবার কখনো নিম্নস্বরে পাঠ করতেন। অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন একাকী থাকতেন তার নিকটে কেউ না থাকতো তখন রাতের সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) স্বরবে পাঠ করতেন। আর তাঁর নিকটে কোন ঘুমন্ত ব্যক্তি থাকলে নিম্নস্বরে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন।
হাদীসের শিক্ষাঃ রাতের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) স্বরবে এবং নীরবে উভয়ভাবেই পাঠ করা বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০৩-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, স্বীয় বাড়ীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন আওয়াজে (সালাতে) ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন যে, কামরার লোকেরা তা শুনতে পেত। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَتْ قِرَاءَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَدْرِ مَا يَسْمَعُهُ مَنْ فِي الْحُجْرَةِ وَهُوَ فِي الْبَيْتِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (عَلى قَدْرِ مَا يَسْمَعُه مَنْ فِي الْحُجْرَةِ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এতটুকু আওয়াজ করতেন যে, যারা কক্ষে থাকতো তারা তা শুনতে পেতো। অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) খুব বেশি উঁচু স্বরেও ছিল না এবং একেবারে নীরবও ছিল না বরং এতটুকু আওয়াজ করে তা পাঠ করতেন যে, যারা ঘরে অবস্থান করতো তারা তা শুনতে পেত। তবে এ আওয়াজ ঘরের বাইরে থেকে শুনা যেতো না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ অবস্থা ছিল রাতে ঘরে সালাত আদায়কালীন সময়ে। আর যখন তিনি মসজিদে সালাত আদায় করতেন তখন উঁচু আওয়াজেই তা আদায় করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০৪-[১৭] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাত্রে বাইরে এসে আবূ বকরকে সালাতরত অবস্থায় পেলেন। তিনি নীচু শব্দে কুরআন পাঠ করছিলেন। এরপর তিনি ’উমারের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি উচ্চ শব্দ করে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলেন। আবূ ক্বাতাদাহ্ বলেন, (সকালে) যখন আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) দু’জনে রসূলের খিদমাতে একত্র হলেন; তিনি বললেন, আবূ বকর! আজ রাত্রে আমি তোমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তুমি নীচুস্বরে কুরআন কারীম পড়ছিলে। আবূ বকর আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যাঁর নিকট মুনাজাত করছিলাম, তাঁকেই জানাচ্ছিলাম। তারপর তিনি ’উমার (রাঃ) কে বললেন, হে ’উমার! (আজ রাত্রে) আমি তোমার নিকট দিয়েও যাচ্ছিলাম। তুমি সালাতে উঁচু শব্দে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলে। ’উমার (রাঃ) আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি উঁচু শব্দে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে ঘুমে থাকা লোকগুলোকে সজাগ করছিলাম আর শায়ত্বন (শয়তান)-কে তাড়াচ্ছিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’জনের কথা শুনে আবূ বকরকে) বললেন, আবূ বকর! তুমি তোমার শব্দকে আরো একটু উঁচু করবে। (’উমার (রাঃ) কে বললেন) ’উমার! তুমি তোমার আওয়াজকে আরো একটু নীচু করবে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ لَيْلَةً فَإِذَا هُوَ بِأَبِي بَكْرٍ يُصَلِّي يَخْفِضُ مِنْ صَوْتِهِ وَمَرَّ بِعُمَرَ وَهُوَ يُصَلِّي رَافِعًا صَوْتَهُ قَالَ: فَلَمَّا اجْتَمَعَا عِنْدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا أَبَا بَكْرٍ مَرَرْتُ بِكَ وَأَنْتَ تُصَلِّي تَخْفِضُ صَوْتَكَ» قَالَ: قَدْ أَسْمَعْتُ مَنْ نَاجَيْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَقَالَ لِعُمَرَ: «مَرَرْتُ بِكَ وَأَنْتَ تُصَلِّي رَافِعًا صَوْتَكَ» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أُوقِظُ الْوَسْنَانَ وَأَطْرُدُ الشَّيْطَانَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا بَكْرٍ ارْفَعْ مِنْ صَوْتِكَ شَيْئًا» وَقَالَ لِعُمَرَ: «اخْفِضْ مِنْ صَوْتِكَ شَيْئًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وروى التِّرْمِذِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: (قَدْ أَسْمَعْتُ مَنْ نَاجَيْتُ) (আবূ বাকর বললেন) আমি যার সাথে কথা বলেছি তাকে শুনিয়েছি। অর্থাৎ সালাতে আমি আমার রবের সাথে কথা বলি। তিনি সবই শোনেন, তিনি তো উঁচু আওয়াজের মুখাপেক্ষী নন।
(أُوقِظُ الْوَسْنَانَ) (‘উমার (রাঃ) বললেন) আমি ঘুমন্তদের জাগাই অর্থাৎ এমন সব ব্যক্তি যারা গভীর ঘুমে নিমগ্ন অথচ তন্দ্রা তাদের উপর চেপে বসেছে তাদের জাগিয়ে দেই।
হাদীসের শিক্ষাঃ
১। কর্মে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ যা উত্তম পন্থা হিসেবে বিবেচিত।
২। কারো মধ্যে ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা পরিবর্তনের জন্য হস্তক্ষেপ করা। তার এটাই সঠিক পথের সন্ধান দানকারীদের অভ্যাস।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০৫-[১৮] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (এক রাত্রে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাতে ভোর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে একটি মাত্র আয়াত পড়তে থাকলেন, আয়াতটি এই ’’ইন তু’আযযিব হুম ফায়িন্নাহুম ’ইবা-দুকা ওয়া ইন তাগফির লাহুম ফায়িন্নাকা আন্তাল ’আযীযুল হাকীম’’ অর্থাৎ ’’হে আল্লাহ! যদি তুমি তাদেরকে আযাব দাও তাহলে তারা তোমার বান্দা। আর যদি তুমি তাদেরকে মাফ করো, তাহলে তুমি সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ১১৮)। (নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَصْبَحَ بِآيَةٍ وَالْآيَةُ: (إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإنَّك أَنْت الْعَزِيز الْحَكِيم)
رَوَاهُ النَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (حَتّى أَصْبَحَ بِايَةٍ) এক আয়াত পাঠ করেই ভোরে উপনীত হলেন। অর্থাৎ সালাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বার বার একটি আয়াতই পাঠ করলেন এবং একের পর এক তার অর্থ সম্পর্কে চিন্তা ফিকির করলেন।
শিক্ষণীয় দিক হল, সালাতে একই আয়াত বার বার পাঠ করা বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০৬-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত (সুন্নাত) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। সে যেন (জামা’আত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত) ডান পাশে শুয়ে থাকে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ فَلْيَضْطَجِعْ على يَمِينه» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ফাজ্রের (ফজরের) সুন্নাত আদায়ের পর শয়ন করা সম্পর্কে একাধিক অভিমত রয়েছে নিম্নে তা আলোচনা করা হল-
১। তা সুন্নাত এ অভিমত ইমাম শাফি‘ঈ ও তার অনুসারীদের।
২। তা মুস্তাহাব এ অভিমত একদল সাহাবী ও তাবি‘ঈদের, সাহাবীদের মধ্যে আবূ মূসা আল আশ্‘আরী, রাফি‘ ইবনু খাদীজ, আনাস ইবনু মালিক ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) প্রমুখদের। তাবি‘ঈদের মধ্যে মুহাম্মাদ, ‘উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র, আবূ বাকর ইবনু ‘আবদুর রহমান, খারিজাহ্ ইবনু যায়দ, ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও সুলায়মান ইবনু ইয়াসার প্রমুখদের।
৩। তা ওয়াজিব এ অভিমত আবূ মুহাম্মাদ ‘আলী ইবনু হাযম এর। তিনি মুহাল্লা গ্রন্থে (৩/১৯৬) বলেন, যিনিই ফাজ্রের (ফজরের) দুই রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করেবেন তার ফাজ্রের (ফজরের) ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিশুদ্ধ হবে না। যদিনা তিনি ডান কাতে শয়ন করেন। এটা তার পক্ষ থেকে বাড়াবাড়ি। তার পূর্বে কেউ এ অভিমত পেশ করেনি।
৪। তা মাকরূহ ও বিদ্‘আত, এ অভিমত সাহাবীদের মধ্যে ইবনু মাস্‘ঊদ ও ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর। তবে ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে ভিন্ন মতও বণিত হয়েছে।
৫। তা উত্তমের বিপরীত কাজ, এ অভিমত হাসান বসরী (রহঃ)-এর
৬। এ শয়ন মূল উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হল ফাজ্রের (ফজরের) সুন্নাত ও নফলের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করা। তা যে কোন উপায়ে হতে পারে। ইমাম শাফি‘ঈ থেকে এ অভিমত বর্ণনা করা হয়েছে।
৭। যিনি রাতে নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন তার জন্য তা মুস্তাহাব। অন্যের জন্য তা বিধি সম্মত নয়।
৮। ঘরে সুন্নাত আদায়কারীর জন্য তা মুস্তাহাব, মসজিদে আদায়কারীর জন্য তা মুস্তাহাব নয়। কিছু সালাফদের থেকে এ অভিমত বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকেও তা বর্ণিত হয়েছে।
উপরোক্ত অভিমতগুলোর মধ্যে থেকে ২য়, অভিমত তথা তা মুস্তাহাব এ অভিমতই অগ্রগণ্য।