পরিচ্ছেদঃ ৩১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০৭-[২০] মাসরূক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সবচেয়ে প্রিয় ’আমল কোনটি- এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেন, যে ’আমলই হোক তা সব সময় করা। তারপর আমি প্রশ্ন করলাম, রাত্রের কোন সময়ে তিনি (তাহাজ্জুদের) সালাতের জন্যে সজাগ হতেন? তিনি বললেন, মোরগের ডাক শুনার সময়। (বুখারী, মুসলিম)[1]
عَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ: أَيُّ الْعَمَلِ كَانَ أَحَبَّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَتْ: الدَّائِمُ قُلْتُ: فَأَيُّ حِينَ كَانَ يَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ؟ قَالَتْ: كَانَ يَقُومُ إِذا سمع الصَّارِخ
ব্যাখ্যা: (قَالَتْ: الدَّائِمُ) তিনি (‘আয়িশাহ্) বললেন, যা সর্বদা করা হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন ‘আমল নিয়মিত পালন করেন সে ‘আমলই আল্লাহর নিকট প্রিয়।
(كَانَ يَقُومُ إِذَا سَمِعَ الصَّارِخَ) তিনি যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন তখন উঠে রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (الصَّارِخ) থেকে উদ্দেশ্য মোরগ। এতে ‘আলিমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। অধিক চিৎকার করার কারণে মোরগকে (صارخ) নামকরণ করা হয়েছে। ইবনু বাত্তাল বলেন, মোরগ রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে চিৎকার করে। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত এ সময়ে উঠে রাতের সালাত আদায় করতেন।
হাদীসের শিক্ষাঃ ‘আমলের পরিমাণে অল্প হলেও তা নিয়মিত আদায় করা পছন্দনীয় ‘আমল।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০৮-[২১] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যদি আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাত্রে সালাতরত অবস্থায় দেখার জন্যে লক্ষ্য করতাম, তাহলে আমরা তাঁকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখতে পেতাম। আর আমরা যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘুম অবস্থায় দেখার জন্যে লক্ষ্য করতাম, তাহলে আমরা তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায়ই দেখতে পেতাম। (নাসায়ী)[1]
وَعَن أنس قَالَ: مَا كُنَّا نَشَاءُ أَنْ نَرَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي اللَّيْلِ مُصَلِّيًا إِلَّا رَأَيْنَاهُ وَلَا نَشَاءُ أَنْ نَرَاهُ نَائِما إِلَّا رَأَيْنَاهُ. رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের কিছু অংশ ঘুমাতেন এবং কিছু অংশ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি কখনো পূর্ণ রাত সালাত আদায় করতেন না। আবার পূর্ণ রাত ঘুমাতেন না। এও উদ্দেশ্য হতে পারে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের কিছু অংশ সালাতে কাটিয়ে কিছু অংশ ঘুমাতেন। একই রাতে তিনি তা একাধিকবার করতেন। সিন্দী বলেন, রাতে সালাত আদায় করা ও ঘুমানোর জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দিষ্ট কোন সময় ছিল না। রাতের প্রতি সময়েই তিনি কোন রাতে ঘুমিয়েছেন আবার ঐ সময়েই কোন রাতে সালাত আদায় করেছেন। এ বক্তব্য ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঐ বক্তব্যের বিরোধী নয় যাতে তিনি বলেন, মোরগের চিৎকার শুনে তিনি উঠতেন। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার ঘরে থাকতেন তখন এ সময় সালাত আদায় করতেন এবং তিনি যা অবলোকন করেছেন সে সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। আর আনাস (রাঃ)-এর এ হাদীসে অন্যান্য সময়ের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে যা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) অবহিত নন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০৯-[২২] হুমায়দ ইবনু ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সফরে গিয়েছিলাম। (তখন আমি মনে মনে চিন্তা করলাম) আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে উঠলে তাঁকে আমি সালাতের সময় দেখতে থাকব। যাতে তিনি কিভাবে সালাত আদায় করেন তা আমি দেখতে পাই (পরে আমি সেভাবে ’আমল করব)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইশার সালাত, যাকে ’আত্বামাহ্ বলা হয়, আদায় করার পর ঘুমিয়ে গেলেন (কিছু সময় আরাম করলেন)। তারপর তিনি সজাগ হলেন। তারপর আকাশের দিকে তাকালেন ও এ আয়াত, ’’রব্বানা- মা- খালাকতা হা-যা- বা-ত্বিলান..... ইন্নাকা লা- তুখলিফুল মি’আ-দ’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৯১-১৯৪) পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন।
তারপর তিনি বিছানার দিকে গেলেন। মিসওয়াক বের করলেন। এরপর তাঁর নিকট রাখা পানির পাত্র হতে পানি বের করলেন। মিসওয়াক করলেন। উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন। সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। সালাত শেষ হওয়ার পর আমি মনে মনে বললাম, যত সময় তিনি ঘুমিয়েছেন তত সময় তিনি সালাত আদায় করেছেন। তারপর তিনি ঘুমিয়ে গেলেন। শেষে আমি মনে মনে বললাম, যত সময় তিনি সালাত আদায় করেছেন তত সময় তিনি ঘুমিয়েছিলেন। এরপর তিনি সজাগ হলেন। আবার ওসব কাজ করলেন যা পূর্বে করেছিলেন এবং তাই বললেন যা পূর্বে বলেছিলেন (অর্থাৎ মিসওয়াক, উল্লিখিত আয়াত ইত্যাদি)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজ্রের (ফজরের) পূর্ব পর্যন্ত এভাবে তিনবার করলেন। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قُلْتُ وَأَنَا فِي سَفَرٍ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَاللَّهِ لَأَرْقُبَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلصَّلَاةِ حَتَّى أَرَى فِعْلَهُ فَلَمَّا صَلَّى صَلَاةَ الْعِشَاءِ وَهِيَ الْعَتَمَةُ اضْطَجَعَ هَوِيًّا مِنَ اللَّيْلِ ثُمَّ اسْتَيْقَظَ فَنَظَرَ فِي الْأُفُقِ فَقَالَ: (رَبنَا مَا خلقت هَذَا بَاطِلا)
حَتَّى بَلَغَ إِلَى (إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ)
ثُمَّ أَهْوَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى فِرَاشِهِ فَاسْتَلَّ مِنْهُ سِوَاكًا ثُمَّ أَفْرَغَ فِي قَدَحٍ مِنْ إِدَاوَةٍ عِنْدَهُ مَاءً فَاسْتَنَّ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى حَتَّى قُلْتُ: قَدْ صَلَّى قَدْرَ مَا نَامَ ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتَّى قُلْتُ قَدْ نَامَ قَدْرَ مَا صَلَّى ثُمَّ اسْتَيْقَظَ فَفَعَلَ كَمَا فَعَلَ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَقَالَ مِثْلَ مَا قَالَ فَفَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثٌ مَرَّاتٍ قَبْلَ الْفَجْرِ. رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (فَاسْتَلَّ مِنْهُ سِوَاكًا) তিনি তা থেকে মিসওয়াক নিলেন অর্থাৎ তিনি বিছানার দিকে অগ্রসর হয়ে তা থেকে ধীরে সুস্থে একটি মিসওয়াক বের করলেন। (فَاسْتَنَّ) অতঃপর তিনি দাঁত ঘষলেন। অর্থাৎ মিসওয়াক দাঁতের উপর রেখে তা দিয়ে দাঁত ঘষলেন। (فَفَعَلَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ ثَلَاثً مَرَّاتٍ قَبْلَ الْفَجْرِ) উপরে বর্ণিত কাজগুলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজ্রের (ফজরের) আগ পর্যন্ত তিনবার করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২১০-[২৩] ইয়া’লা ইবনু মুমাল্লাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর রাত্রের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও ক্বিরাআতের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, তাঁর সালাতের বিবরণ দিলে তোমাদের কি কল্যাণ হবে? যে সময় পরিমাণ সালাত আদায় করতেন, সে পরিমাণ সময় ঘুমাতেন। তারপর সে সময় পরিমাণ সালাত আদায় করতেন যে পরিমাণ সময় ঘুমাতেন, এভাবে ভোর হয়ে যেত। বর্ণনাকারী ইয়া’লা বলেন, অতঃপর উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তাঁর ক্বিরাআতের বর্ণনা দিয়েছেন, দেখলাম তিনি পৃথক পৃথক এক এক অক্ষর করে বিস্তারিত পড়ার বর্ণনা দিলেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী)[1]
وَعَن يَعْلَى بْنِ مُمَلَّكٍ أَنَّهُ سَأَلَ أُمَّ سَلَمَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قِرَاءَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَلَاتِهِ؟ فَقَالَتْ: وَمَا لَكُمْ وَصَلَاتُهُ؟ كَانَ يُصَلِّي ثُمَّ يَنَامُ قَدْرَ مَا صَلَّى ثُمَّ يُصَلِّي قَدْرَ مَا نَامَ ثُمَّ يَنَامُ قَدْرَ مَا صَلَّى حَتَّى يُصْبِحَ ثُمَّ نَعَتَتْ قِرَاءَتَهُ فَإِذَا هِيَ تَنْعَتُ قِرَاءَةً مُفَسَّرَةً حَرْفًا حَرْفًا)
رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: (وَمَا لَكُمْ وَصَلَاتُه) তোমরা তাঁর সালাতের বিবরণ শুনে কি করবে? অর্থাৎ তোমরা তাঁর মতো করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে না। এ দ্বারা প্রশ্নকারীর প্রশ্ন করাকে অস্বীকার করা উদ্দেশ্য নয়। তিনি এর দ্বারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমলের প্রতি আশ্চর্যবোধ প্রকাশ পূর্বক বলতে চেয়েছেন যে, তোমরা তাঁর মতো ‘আমল করতে সক্ষম নও। অতএব তাঁর ‘আমলের গুণাগুন বা বর্ণনা শুনে তোমরা কি করবে? (فَإِذَا هِيَ تَنْعَتُ قِرَاءَةً مُفَسَّرَةً حَرْفًا حَرْفًا) অতঃপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্বিরাআত (কিরআত) বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন। এর দ্বারা দু’টির কোন একটি উদ্দেশ্য হতে পারে।
১। তিনি বলেন যে, তার ক্বিরাআত (কিরআত) এ রকম এ রকম ছিল।
২। তিনি স্বয়ং তারতীলের সাথে স্পষ্টভাবে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করে শুনালেন, অতঃপর বললেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্বিরাআত (কিরআত) এরূপ ছিল।