পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
জেনে রাখা ভাল যে, সালাতুল লায়ল, ক্বিয়ামুল লায়ল ও তাহাজ্জুদ একই সালাতের বিভিন্ন নাম। যার ওয়াক্ত ’ইশার সালাতের পর থেকে ফাজর (ফজর) হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে এটাও বলা হয়ে থাকে যে, বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ ঐ সালাতকে বলা হয় যা শেষ রাতে আদায় করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই অগ্রগণ্য।
১১৮৮-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইশার সালাতের পর ফাজর (ফজর) পর্যন্ত প্রায়ই এগার রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। প্রতি দু’ রাক্’আত সালাতের পর সালাম ফিরাতেন। শেষের দিকে এক রাক্’আত দ্বারা বিতর আদায় করে নিতেন। আর এক রাক্’আতে এত লম্বা সিজদা্ করতেন যে, একজন লোক সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত পড়ে ফেলতে পারত। এরপর মুয়াযযিনের ফাজ্রের (ফজরের) আযানের আওয়াজ শেষে ফজরের (ফজরের) সময় স্পষ্ট হলে তিনি দাঁড়াতেন। দু’ রাক্’আত হালকা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এরপর খুব স্বল্প সময়ের জন্যে ডান পাশে ফিরে শুয়ে যেতেন। এরপর মুয়াযযিন ইক্বামাত(ইকামত/একামত)ের অনুমতির জন্যে তাঁর কাছে এলে তিনি মসজিদের উদ্দেশে বেরিয়ে যেতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِيمَا بَين أَن يفرغ من صَلَاة الْعشَاء إِلَى الْفَجْرِ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُسَلِّمُ مِنْ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَيُوتِرُ بِوَاحِدَةٍ فَيَسْجُدُ السَّجْدَةَ مِنْ ذَلِكَ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِينَ آيَةً قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ فَإِذَا سَكَتَ الْمُؤَذِّنُ مِنْ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَتَبَيَّنَ لَهُ الْفَجْرُ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ ثُمَّ اضْطَجَعَ عَلَى شِقِّهِ الْأَيْمَنِ حَتَّى يَأْتِيهِ الْمُؤَذّن للإقامة فَيخرج
ব্যাখ্যা: (يُصَلِّي فِيمَا بَين أَنْ يَّفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ) ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হতে অবসর হওয়ার পর থেকে ফাজর (ফজর) হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতেন। এ বাক্যটি রাতে ঘুমের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উভয় সালাতকেই শামিল করে। (إِحْدى عَشْرَةَ رَكْعَةً) এগার রাক্‘আত এটা অধিকাংশ সময়ের কথা বলা হয়েছে। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তের রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার কথা সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
(يُسَلِّمُ مِنْ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ) প্রতি দুই রাক্‘আতের পর সালাম ফেরাতেন। এতে প্রমাণিত হয় রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দুই রাক্‘আত করে আদায় করা উত্তম। ‘‘রাতের সালাত দুই রাক্‘আত করে’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীও তাই প্রমাণ করে।
(وَيُوْتِرُ بِوَاحِدَةٍ) আর তিনি এক রাক্‘আত বিতর আদায় করতেন। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বিতরের সর্বনিম্ন সংখ্যা এক রাক্‘আত। এটাও প্রমাণিত হয়, পৃথক এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা সঠিক। ইমাম আবূ হানীফাহ্ ব্যতীত অন্য তিন ইমামের অভিমতও তাই। আর ইমাম আবূ হানীফাহ্ বলেন, এক রাক্‘আত বিতর বিশুদ্ধ নয়। পৃথক এক রাক্‘আত সালাত হয় না। ইমাম নাবাবী বলেন, সহীহ হাদীস তার এ অভিমত প্রত্যাখ্যান করে।
(فَيَسْجُدُ السَّجْدَةَ مِنْ ذلِكَ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِيْنَ آيَةً) তোমাদের কারো পঞ্চশ আয়াত পাঠ করার মতো সময় পর্যন্ত দীর্ঘ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন। এতে রাতের সালাতের সিজদা্ দীর্ঘ করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বিতরের পৃথক সালাতের সাজদার কথা বলা হয়নি। অত্র হাদীস রাতের সালাতের সিজদা্ দীর্ঘ করা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল।
(ثُمَّ اضْطَجَعَ) অতঃপর তিনি শয়ন করতেন। অর্থাৎ তিনি স্বীয় ঘরে সুন্নাত আদায় করার পর আরাম করার জন্য শয়ন করতেন। যাতে বিনা ক্লান্তিতে ফাজরের (ফজরের) সালাত আদায় করতে পারেন। অথবা ফরয ও নফলের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টির লক্ষ্যে শয়ন করতেন। এ হাদীস ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত ঘরে আদায় করার পর শয়ন করা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল।
তবে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ‘‘তোমাদের কেউ যখন ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত সালাত আদায় করে তখন সে যেন ডান কাতে শয়ন করে’’ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, ঘর হোক অথবা মাসজিদ হোক যেখানে ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করবে সেখানেই শয়ন করা মুস্তাহাব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে শয়ন না করার কারণ এই যে, তিনি মসজিদে সুন্নাত আদায় না করার কারণে মসজিদে শয়ন করেনি। তিনি স্বীয় ঘরে ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করতেন তাই ঘরেই শয়ন করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৮৯-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকেই এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজ্রের (ফজরের) সুন্নাত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (ঘরে) আদায়ের পর যদি আমি সজাগ হয়ে উঠতাম তাহলে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। আর আমি ঘুমে থাকলে তিনি শয়ন করতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ فَإِنْ كُنْتُ مستيقظة حَدثنِي وَإِلَّا اضْطجع. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (فَإِنْ كُنْتُ مُسْتَيْقِظَةً حَدَّثَنِىْ) যদি আমি সজাগ থাকতাম তাহলে তিনি আমার সাথে কথা বলতেন। অর্থাৎ তিনি ফাজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করার পর আমার নিকট আসতেন। আমাকে জাগ্রত অবস্থায় পেলে আমার সাথে কথা বলতেন। আমাকে জাগ্রত না পেলে শয়ন করতেন। এ হাদীস এবং আবূ দাঊদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস যাতে বলা হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সাথে কথা বলতেন।
এ দুই হাদীসের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা কখনো তিনি তাহাজ্জুদ সালাতের শেষে কথা বলতেন। আবার কখনো ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করে কথা বলতেন। আবূ দাঊদ-এর এ হাদীস দ্বারা অনেকেই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, ফাজরের (ফজরের) সুন্নাতের পর শয়ন করা মুস্তাহাব নয়। এর জবাবে বলা যায় যে, কোন কোন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শয়ন ত্যাগ করা তা মুস্তাহাব হওয়াকে অস্বীকার করে না। বরং তা ওয়াজিব না হওয়া বুঝায় এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে শয়নের যে আদেশ রয়েছে তা আবশ্যকীয় আদেশ নয় এ হাদীস তাই প্রমাণ করে। ইমাম নাবাবী বলেন, সুন্নাতের পর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা বলা প্রমাণ করে ফাজরের (ফজরের) সুন্নাতের পর কথা বলা বৈধ তা মাকরূহ নয় যেমনটি কুফাবাসীগণ মনে করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯০-[৩] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত সুন্নাত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিজের ডান পাঁজরের উপর শুয়ে যেতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ اضْطَجَعَ عَلَى شقَّه الْأَيْمن
ব্যাখ্যা: (اضْطَجَعَ عَلى شِقَّهِ الْأَيْمَنِ) তিনি ডান কাতে শয়ন করতেন। কেননা তিনি সকল কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন বিধায় ডান কাতে শয়ন করতেন। অথবা তিনি তাঁর উম্মাতের জন্য এ ক্ষেত্রে করণীয় বিধান জানানোর উদ্দেশে এরূপ করতেন। কেননা কলবের অবস্থান বাম পাশে। যদি কেউ বাম পাশে শয়ন করে তা হলে অধিক আরামের কারণে তিনি ঘুমে ডুবে যাবেন যা ডান কাতে শয়নের মধ্যে হবে না। কারণ এমতাবস্থায় কলব ঝুলন্ত থাকবে ফলে ঘুম কম হবে। তবে তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা তাঁর চোখ ঘুমালেও অন্তর ঘুমায় না। আর এ হাদীসটিও পূর্বের হাদীসদ্বয়ের ন্যায় ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায়ের পর শয়ন করা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯১-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে তের রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এর মাঝে বিতর ও ফাজ্রের (ফজরের) সুন্নাত দু’ রাক্’আতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً مِنْهَا الْوتر وركعتا الْفجْر. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত ও বিতরসহ সর্বমোট তের রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এটা ছিল তার অধিকাংশ সময়ের ‘আমলের বর্ণনা। নচেৎ এর কম বা বেশি আদায় করার কথাও সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত আছে। এ হাদীস বিতর ও ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত তাহাজ্জুদের সাথে উল্লেখ করার কারণ এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বিতর আদায় করার পর ফাজর (ফজর) পর্যন্ত জাগ্রত থাকতেন এবং তাহাজ্জুদ ও বিতর আদায় করার অব্যাহতির পরেই ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯২-[৫] মাসরূক্ব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাত্রের সালাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, ফাজ্রের (ফজরের) সুন্নাত ব্যতীত কোন কোন সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাত রাক্’আত, কোন কোন সময় নয় রাক্’আত, কোন কোন সময় এগার রাক্’আত আদায় করতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ عَنْ صَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاللَّيْلِ. فَقَالَت: سبع وتسع وَإِحْدَى عشر رَكْعَة سوى رَكْعَتي الْفجْر. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (سِوى رَكْعَتَي الْفَجْرِ) ফাজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত ব্যতীত এ বাক্য প্রমাণ করে যে, সাত, নয় বা এগার রাক্‘আত বিতরসহ আদায় করতেন। ইমাম নাবাবী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাতের সংখ্যা সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো উল্লেখ করার পর ক্বাযী ‘আয়ায-এর মন্তব্য উল্লেখ পূর্বক বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এগার রাক্‘আতের বর্ণনা এটি হল অধিকাংশ সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাতের বর্ণনা। অন্যান্য বর্ণনা যার মধ্যে আরো কম বেশির উল্লেখ আছে তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন কোন সময়ের ‘আমলের বর্ণনা। তন্মধ্যে ফাজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাতসহ সর্বোচ্চ পনের রাক্‘আতের বর্ণনা রয়েছে। আর সর্বনিম্ন সাত রাক্‘আত। ক্বাযী ‘আয়ায এও বলেছেন যে, এতে কোন মতভেদ নেই যে, রাতের সালাতের জন্য রাক্‘আতের এমন কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই যার থেকে কম বা বেশি করা যাবে না।
রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এমন একটি ‘ইবাদাত যিনি তা যত বেশি করতে পারবেন তিনি তত বেশি সাওয়াব অর্জন করবেন। মতভেদ শুধু এ বিষয়ে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং কত রাক্‘আত আদায় করেছেন এবং নিজের জন্য তা পছন্দ করেছেন। আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমাযান বা তার বাইরে এগার রাক্‘আতের বেশি আদায় করতেন না এ থেকে উদ্দেশ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভ্যাস অনুযায়ী অধিকাংশ সময় এর চাইতে বেশি আদায় করতেন না। তবে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমল সম্পর্কে ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত এবং তাহাজ্জুদের শুরুতে হালকা দুই রাক্‘আতসহ সর্বমোট পনের রাক্‘আতের কথা বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯৩-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাত্রে (তাহাজ্জুদের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্যে দাঁড়াতেন তখন তিনি তাঁর সালাতের আরম্ভ করতেন দু’ রাক্’আত সংক্ষিপ্ত সালাত দিয়ে। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ لِيُصَلِّيَ افْتتح صلَاته بِرَكْعَتَيْنِ خفيفتين. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (افْتَتَحَ صَلَاتَه بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ) হালকা দুই রাক্‘আত দ্বারা তিনি রাতের সালাত আরম্ভ করতেন। ত্বীবী বলেন, হালকা দুই রাক্‘আত দ্বারা সালাত আরম্ভ করার উদ্দেশ্য হলো যাতে ঘুমের জড়তা কেটে গিয়ে উৎফুল্লতা আসে এবং সালাতে পূর্ণ মনোযোগের সাথে প্রবেশ করতে পারেন। এর পর তিনি তা দীর্ঘ করতেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত পরবর্তী হাদীসে এর নির্দেশ রয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হালকা দুই রাক্‘আত দিয়ে শুরু করা মুস্তাহাব। আর এটাও বুঝা যায় যে, এ দুই রাক্‘আত তাহাজ্জুদের অন্তর্ভুক্ত। আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যখন তার বর্ণনায় এ দুই রাক্‘আত সংযোগ করেছেন তখন তিনি তের রাক্‘আতের কথা বলেছেন। আর যখন তিনি তা বাদ দিয়েছেন তখন এগার রাক্‘আতের কথা বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯৪-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন রাত্রে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠে, সে যেন দু’ রাক্’আত সংক্ষিপ্ত সালাত দ্বারা (তার সালাত) আরম্ভ করে। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللَّيْلِ فَلْيَفْتَحِ الصَّلَاة بِرَكْعَتَيْنِ خفيفتين. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হালকা দুই রাক্‘আত দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করবে। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে, অতঃপর ইচ্ছামত তা দীর্ঘ করবে। এ থেকে জানা যায় যে, রাতের সালাত হালকা দুই রাক্‘আত দ্বারা আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমনটি পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯৫-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর বাড়ীতে রাত কাটালাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাত্রে তাঁর বাড়ীতে ছিলেন। ’ইশার পর কিছু সময় তিনি তাঁর স্ত্রী মায়মূনার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তারপর শুয়ে পড়েন। রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে অথবা রাতের কিছু সময় অবশিষ্ট থাকতে তিনি সজাগ হলেন। আকাশের দিকে লক্ষ করে এ আয়াত পাঠ করলেনঃإِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّموتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَأَۤيَاتٍ لِّأُوْلِي الْأَلْبَابِ অর্থাৎ ’’আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করা, রাত ও দিনের ভিন্নতার (কখনো অন্ধকার কখনো আলোকিত, কখনো গরম কখনো শীত, কখনো বড়ো কখনো ছোট) মাঝে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে আল্লাহর নিদর্শন’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৯০)। তিনি সূরাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। তারপর উঠে তিনি পাত্রের কাছে গেলেন। এর বাঁধন খুললেন। পাত্রে পানি ঢাললেন। তারপর দু’ উযূর মাঝে মধ্যম ধরনের ভাল উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন।
হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, (মধ্যম ধরনের উযূর অর্থ) খুব অল্প পানি খরচ করলেন। তবে শরীরে দরকারী পানি পৌঁছিয়েছেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। (এসব দেখে) আমি নিজেও উঠলাম। অতঃপর উযূ করে তাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কান ধরে তাঁর বাম পাশ থেকে ঘুরিয়ে এনে আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। তার তের রাক্’আত সালাত আদায় করা শেষ হলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। শুয়ে পড়লে তিনি নাক ডাকতেন। তাই তাঁর নাক ডাকা শুরু হলো। ইতোমধ্যে বেলাল এসে সালাত প্রস্তুতির ঘোষণা দিলেন। তিনি সালাত আদায় করালেন। কোন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন না। তার দু’আর মাঝে ছিল,
’’আল্ল-হুম্মাজ্’আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়াফী বাসারী নূরাওঁ ওয়াফী সাম্’ঈ নূরাওঁ ওয়া’আই ইয়ামীনী নূরাওঁ ওয়া’আই ইয়াসা-রী নূরাওঁ ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়া তাহতী নূরাওঁ ওয়া আমা-মী নূরাওঁ ওয়া খলফী নূরাওঁ ওয়াজ্’আল্ লী নূরা-’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে, আমার বামে, আমার উপরে, আমার নিচে, আমার সম্মুখে, আমার পেছনে নূর দিয়ে ভরে দাও। আমার জন্যে কেবল নূরই নূর সৃষ্টি করে দাও।)।
কোন কোন বর্ণনাকারী এ শব্দগুলোও নকল করেছেন, ’’ওয়াফী লিসা-নী নূরা-’’ (অর্থাৎ- আমার জিহবায় নূর পয়দা করে দাও)। (অন্য বর্ণনায় এ শব্দগুলোও) উল্লেখ করেছেন, ’’ওয়া ’আসাবী ওয়া লাহমী ওয়াদামী ওয়া শা’রী ওয়া বাশারী’’ (অর্থাৎ- আমার শিরা উপশিরায়, আমার মাংসে, আমার রক্তে, আমার পশমে, আমার চামড়ায় নূর তৈরি করে দাও)। (বুখারী, মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিমেরই আর এক বিবরণে এ শব্দগুলোও আছে, ’’ওয়াজ্’আল ফী নাফসী নূরাওঁ ওয়া আ’যিম লী নূরা-’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার মনের মধ্যে নূর সৃষ্টি করে দাও এবং আমার মাঝে নূর বাড়িয়ে দাও)। মুসলিমের এক বিবরণে আছে, ’’আল্ল-হুম্মা আ’ত্বিনী নূরা-’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নূর দান করো)।[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: بِتُّ عِنْدَ خَالَتِي مَيْمُونَةَ لَيْلَةً وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهَا فَتَحَدَّثَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ أَهْلِهِ سَاعَةً ثُمَّ رَقَدَ فَلَمَّا كَانَ ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ أَوْ بَعْضُهُ قَعَدَ فَنَظَرَ إِلَى السَّمَاءِ فَقَرَأَ: (إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْل وَالنَّهَار لآيَات لأولي الْأَلْبَاب حَتَّى خَتَمَ السُّورَةَ ثُمَّ قَامَ إِلَى الْقِرْبَةِ فَأَطْلَقَ شِنَاقَهَا ثُمَّ صَبَّ فِي الْجَفْنَةِ ثُمَّ تَوَضَّأَ وُضُوءًا حَسَنًا بَيْنَ الْوُضُوءَيْنِ لَمْ يُكْثِرْ وَقَدْ أَبْلَغَ فَقَامَ فَصَلَّى فَقُمْتُ وَتَوَضَّأْتُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِأُذُنِي فَأَدَارَنِي عَنْ يَمِينِهِ فَتَتَامَّتْ صَلَاتُهُ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً ثُمَّ اضْطَجَعَ فَنَامَ حَتَّى نَفَخَ وَكَانَ إِذَا نَامَ نَفَخَ فَآذَنَهُ بِلَالٌ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ وَكَانَ فِي دُعَائِهِ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَفِي بَصَرِي نُورًا وَفِي سَمْعِي نُورًا وَعَنْ يَمِينِي نُورًا وَعَنْ يَسَارِي نُورًا وَفَوْقِي نُورًا وتحتي نورا وأمامي نورا وَخَلْفِي نُورًا وَاجْعَلْ لِي نُورًا» وَزَادَ بَعْضُهُمْ: «وَفِي لِسَانِي نُورًا» وَذُكِرَ: وَعَصَبِي وَلَحْمِي وَدَمِي وَشِعَرِي وبشري)
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: «وَاجْعَلْ فِي نَفْسِي نُورًا وَأَعْظِمْ لِي نُورًا» وَفِي أُخْرَى لِمُسْلِمٍ: «اللَّهُمَّ أَعْطِنِي نورا»
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ تَوَضَّأَ وُضُوءًا حَسَنًا بَيْنَ الْوُضُوءَيْنِ) অতঃপর তিনি দুই উযূর মধ্যবর্তী সুন্দর অযূ করলেন। অর্থাৎ তিনি এতে পানি বেশিও ব্যবহার করেননি। আবার প্রয়োজনের চেয়ে কমও ব্যবহার করেননি। ফলে তা ছিল সুন্দর উযূ। অথবা উযূর অঙ্গগুলো দুই বার করে ধুয়েছেন। যা এক ও তিনের মধ্যবর্তী।
(وَقَدْ أَبْلَغَ) তবে পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেছেন। অর্থাৎ উযূর পানি অঙ্গসমূহের যেখানে পৌঁছানো ওয়াজিব সেখানে পৌঁছিয়েছেন কিন্তু সীমালঙ্ঘন করেনি।
(فَتَتَامَّتْ صَلَاتُه ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً) তাঁর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তের রাক্‘আত পূর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ এক রাক্‘আত বিতরসহ তাঁর সালাত তের রাক্‘আত হয়েছে।
(فَنَامَ حَتّى نَفَخَ) তিনি ঘুমালেন এমনকি তাঁর নাক ডাকল। অর্থাৎ তিনি স্বজোরে নিঃশ্বাস ফেলতে থাকেন ফলে তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শোনা গেল যেমন ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে শোনা যায়।
‘‘অতঃপর তিনি সালাত আদায় করলেন কিন্তু উযূ করলেন না।’’ তিনি ঘুমিয়ে নাক ডাকলেন তা সত্ত্বেও উযূ না করার কারণ এই যে, মূলত ঘুম উযূ ভঙ্গের কারণ নয় বরং অজান্তে বায়ু নির্গত হওয়ার সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার ফলে উযূ করার বিধান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তর যেহেতু জাগ্রত থাকে তা ঘুমায় না, তাই তার ঘুম এ সন্দেহমুক্ত ফলে তা উযূর মধ্যে কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই তার উযূ ও নষ্ট হয় না। এটা শুধুমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস। অর্থাৎ এটি তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যে রাতে তার খালা মায়মূনার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সে রাতে তিনি তের রাক্‘আত রাতের সালাত আদায় করেছিলেন এবং এরপর দুই রাক্‘আত ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করেছিলেন। যদিও সে রাতে সালাতের রাক্‘আত সংখ্যা বর্ণনায় বর্ণনাকারীগণ বিভিন্ন সংখ্যা বর্ণনা করেছেন কিন্তু অধিকাংশ বর্ণনাকারীই বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত সুন্নাত ব্যতীতই তের রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন। অতঃপর দুই রাক্‘আত ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করেছিলেন। তাই তাদের এ বর্ণনাকেই প্রাধান্য দিতে হবে এজন্য যে, তারা অন্যান্যদের তুলনায় অধিক সংরক্ষণকারী এবং তাদের বর্ণনায় সংখ্যার আধিক্য রয়েছে যা অন্য বর্ণনাতে নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯৬-[৯] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুইলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে জাগলেন। মিসওয়াক করলেন ও উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন। তারপর এ আয়াত পাঠ করলেন, ইন্না ফী খালকিস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি..... সূরার শেষ পর্যন্ত। এরপর তিনি দাঁড়ালেন, অতঃপর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। সালাতে তিনি বেশ লম্বা ক্বিয়াম (কিয়াম), রুকূ’ ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। সালাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে গেলেন ও নাক ডাকতে শুরু করলেন। এ রকম তিনি তিনবার করলেন। তিনবারে তিনি ছয় রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। প্রত্যেকবার তিনি মিসওয়াক করলেন, উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন। ঐ আয়াতগুলোও পঠ করলেন। সর্বশেষ বিতরের তিন রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْهُ: أَنَّهُ رَقَدَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاسْتَيْقَظَ فَتَسَوَّكَ وَتَوَضَّأَ وَهُوَ يَقُول: (إِن فِي خلق السَّمَاوَات وَالْأَرْض. . .)
حَتَّى خَتَمَ السُّورَةَ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ أَطَالَ فِيهِمَا الْقِيَامَ وَالرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ ثُمَّ انْصَرَفَ فَنَامَ حَتَّى نَفَخَ ثُمَّ فَعَلَ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ سِتَّ رَكَعَاتٍ كُلُّ ذَلِكَ يَسْتَاكُ وَيَتَوَضَّأُ وَيَقْرَأُ هَؤُلَاءِ الْآيَاتِ ثُمَّ أَوْتَرَ بِثَلَاثٍ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী বলেন, হাবীব ইবনু আবী সাবিত-এর এ বর্ণনাটি অন্য সকল বর্ণনার বিরোধী। এতে ঘুমের বর্ণনা এসেছে যা অন্যান্য বর্ণনাতে নেই এবং রাক্‘আতের সংখ্যাতেও অন্যান্য বর্ণনার সাথে বিরোধপূর্ণ। ক্বাযী (‘আয়ায) বলেন, এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, এ বর্ণনাকারী প্রথম সংক্ষিপ্ত দুই রাক্‘আত গণ্য করেননি, যা দিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শুরু করতেন। এজন্যই তিনি বলেছেন, তিনি দুই রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং খুব দীর্ঘ করলেন। এতে বুঝা যায় যে, তা সংক্ষিপ্ত দুই রাক্‘আতের পরে ছিল। অতঃপর তিনি দীর্ঘ দুই রাক্‘আত আদায় করেছেন। এরপর ছয় রাক্‘আত আদায় করার পর তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন। এভাবে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত সর্বমোট তের রাক্‘আত আদায় করেছেন। যা অন্যান্য বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯৭-[১০] যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার ইচ্ছা করলাম, আজ রাত্রে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দেখব। প্রথমে তিনি হালকা দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। তারপর দীর্ঘ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ করে। তারপর তিনি আরো দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন যা পূর্বের দু’ রাক্’আত থেকে কম লম্বা ছিল। তারপর আরো দু’ রাক্’আত আদায় করলেন যা পূর্বের আদায় করা দু’ রাক্’আত হতে কম দীর্ঘ ছিল। তারপর তিনি আরো দু’ রাক্’আত যা আগে আদায় করা দু’ রাক্’আত হতে কম লম্বা ছিল। তারপর আরো দু’ রাক্’আত আদায় করলেন যা আগের আদায় করা দু’ রাক্’আত থেকে কম দীর্ঘ ছিল। এরপর তিনি বিতর আদায় করলেন। এ মোট তের রাক্’আত (সালাত) তিনি আদায় করলেন। (মুসলিম)
আর যায়দ-এর কথা, অতঃপর তিনি দু’ রাক্’আত আদায় করলেন যা প্রথমে আদায় করা দু’ রাক্’আত থেকে কম লম্বা ছিল। সহীহ মুসলিমে ইমাম হুমায়দীর কিতাবে, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, সুনানে আবূ দাঊদ এমনকি জামি’উল উসূলসহ সব স্থানে চারবার উল্লেখ করা হয়েছে।[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَن زيد بن خَالِد الْجُهَنِيّ أَنَّهُ قَالَ: لَأَرْمُقَنَّ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّيْلَةَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ طَوِيلَتَيْنِ طَوِيلَتَيْنِ طَوِيلَتَيْنِ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا [ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا] ثُمَّ أَوْتَرَ فَذَلِكَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
قَوْله: ثمَّ صلى رَكْعَتَيْنِ وهما دون اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا أَرْبَعَ مَرَّاتٍ هَكَذَا فِي صَحِيحِ مُسْلِمٍ وأفراده من كتاب الْحميدِي وموطأ مَالك وَسنَن أبي دَاوُد وجامع الْأُصُول
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ) অতঃপর অতি দীর্ঘ দুই রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। ত্বীবী বলেন, (طَوِيْلَتَيْنِ) শব্দটি তিনবার উল্লেখ করেছেন তাকীদ স্বরূপ। অর্থাৎ এ দুই রাক্‘আত অতি দীর্ঘ ছিল। আর দুই রাক্‘আত অতি দীর্ঘ করার কারণ এই যে, সালাতের শুরুতে প্রফুল্লতা বেশি থাকে এবং বিনয়ীও থাকে পরিপূর্ণ। এজন্য ফরয সালাতে প্রথম রাক্‘আত দ্বিতীয় রাক্‘আতের তুলনায় দীর্ঘ করার বিধান রয়েছে।
ثُمَّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُوْنَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا অতঃপর দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন। আর তা ছিল পূর্বের দু’ রাক্‘আতের তুলনায় হালকা। প্রথম দু’ রাক্‘আতের চেয়ে হালকা বা সংক্ষিপ্ত করার করার কারণ এই যে, প্রথম দুই রাক্‘আত পূর্ণ প্রফুল্লতা ও বিনয়ের পর ধীরে ধীরে তা হ্রাস পেতে থাকে তাই তিনি সালাত ধীরে ধীরে সংক্ষিপ্ত করেছেন।
(ثُمَّ أَوْتَرَ) অতঃপর তিনি বিতর আদায় করেছেন। অর্থাৎ এক রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন ফলে প্রথম সংক্ষিপ্ত দুই রাক্‘আত ও তের রাক্‘আতের মধ্যে গণ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯৮-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছলে বার্ধক্যের কারণে তিনি ভারী হয়ে গেলেন। তখন তিনি অনেক সময়ে নফল সালাতগুলো বসে বসে আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا بَدَّنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَثَقُلَ كَانَ أَكْثَرُ صَلَاتِهِ جَالِسًا
ব্যাখ্যা: (كَانَ أَكْثَرُ صَلَاتِه جَالِسًا) তাঁর অধিকাংশ সালাতই ছিল বসাবস্থায় অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বৃদ্ধ হওয়ার ফলে দুর্বল হয়ে পড়েন তখন নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অধিকাংশ সময় বসে বসেই আদায় করতেন। হাফসাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নফল সালাত বসে আদায় করতে দেখিনি। তবে মৃত্যুর এক বৎসর পূর্ব থেকে তিনি বসে বসে নফল সালাত আদায় করতেন।
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নফল সালাত বসে আদায় করা বৈধ। ইমাম নাবাবী বলেন, এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে ইজমা তথা ঐকমত্য রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯৯-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেসব সূরাহ্ পরস্পর একই রকমের ও যেসব সূরাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একসাথে করতেন আমি এগুলোকে জানি। তাই ’আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ তাঁর ক্রমিক অনুযায়ী বিশটি সূরাহ্ যা (তিওয়াতে) মুফাস্সালের প্রথমদিকে তা গুণে গুণে বলে দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরাগুলোকে এভাবে একত্র করতেন যে, এক এক রাক্’আতে দু’ দু’টি সূরাহ্ পাঠ করতেন। আর বিশটি সূরার শেষের দু’টি হলো, (৪৪ নং সূরাহ্) হা-মীম আদ্ দুখা-ন ও (৭৮ নং সূরাহ্) ’আম্মা ইয়াতাসা-আলূন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: لَقَدْ عَرَفْتُ النَّظَائِرَ الَّتِي كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرِنُ بَيْنَهُنَّ فَذَكَرَ عِشْرِينَ سُورَةً مِنْ أَوَّلِ الْمُفَصَّلِ عَلَى تَأْلِيفِ ابْنِ مَسْعُودٍ سُورَتَيْنِ فِي رَكْعَةٍ آخِرُهُنَّ (حم الدُّخان)
و (عَم يتساءلون)
ব্যাখ্যা: (يَقْرِنُ بَيْنَهُنَّ) যে সূরাগুলো তিনি মিলাতেন অর্থাৎ একই রাক্‘আতে যে দুই, দুই সূরাহ্ পাঠ করতেন ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) মুফাসসাল থেকে এরূপ বিশটি সূরাহ্ উল্লেখ করেন। সূরাগুলো হলোঃ
১। সূরাহ্ আর্ রহমা-ন ও সূরাহ্ আন্ নাজম একই রাক্‘আতে।
২। ইক্বতারাবাত (সূরাহ্ আল ক্বামার) ও সূরাহ্ আল হা-ক্বক্বাহ্ একই রাক্‘আতে।
৩। সূরাহ্ আত্ব তূর ও সূরাহ্ আয্ যা-রিয়া-ত একই রাক্‘আতে।
৪। সূরাহ্ ওয়াক্বি‘আহ্ ও সূরাহ্ আল ক্বালাম একই রাক্‘আতে।
৫। সূরাহ্ আল মা‘আরিজ ও সূরাহ্ আন্ নাযি‘আত একই রাক্‘আতে।
৬। সূরাহ্ আল মুতাফফিফীন ও সূরাহ্ ‘আবাসা একই রাক্‘আতে।
৭। সূরাহ্ আল মুদ্দাস্সির ও সূরাহ্ আল মুযযাম্মিল একই রাক্‘আতে।
৮। সূরাহ্ আদ্ দাহর (ইনসান) ও সূরাহ্ আল ক্বিয়া-মাহ্ এবং রাক্‘আতে।
৯। সূরাহ্ আন্ নাবা- ও সূরাহ্ সালাত একই রাক্‘আতে।
১০। সূরাহ্ আদ্ দুখা-ন ও সূরাহ্ আত্ তাকভীর একই রাক্‘আতে। এটি ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) সংকলিত মুসহাফের ক্রমিক অনুযায়ী।
এতে বুঝা যায় যে, ‘উসমান (রাঃ) সংকলিত মুসহাফ এবং ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) সংকলিত মুসহাফের ক্রমধারায় পার্থক্য রয়েছে। ক্বাযী আবূ বাকর বাক্বিল্লানী (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট যে ক্রম ধারায় সংকলিত মুসহাফ বিদ্যমান, হতে পারে যে তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশক্রমে সাজানো হয়েছে। এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, সাহাবীদের ইজতিহাদের ভিত্তিতে তা সাজানো হয়েছে। তবে বুখারীর একটি বর্ণনা প্রথম অভিমতকে সমর্থন করে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বৎসর জিবরীল (আঃ) কে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। এখানে যা প্রকাশমান তা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ ক্রমধারা অনুযায়ী পাঠ করে শুনিয়েছেন।