পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
রুকূ’ সালাতের অন্যতম রুকন যা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মাতের ইজমা থেকে প্রমাণিত। রুকূ’র শাব্দিক অর্থ اِلْاِنْحِنَاءُ তথা মাথা ঝুকানো/নত করা এবং এর দ্বারা উদ্দেশ্য বিনয়ী হওয়া। বলা হয় কোন কোন তাফসীরকারকের মতে এ উম্মাতের জন্য ৩টি একটি (রুকূ’) বিশেষ বৈশিষ্ট্য। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ ’’তোমরা রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ’ কর’’, আর এ বিষয়টি এজন্য যে, ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের সালাতে রুকূ’ নেই এবং রুকূ’ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার উম্মাতের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর রুকূ’ দ্বারা উদ্দেশ্য ’’সালাত’’। যেমন আল্লাহ বলেন, وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ ’’(হে মারইয়াম (আঃ)!) তুমি মুসল্লীদের সাথে সালাত আদায় কর’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২: ৪৩)।
প্রতি রাক্’আতে রুকূ’ হওয়ার হিকমাত হলো রুকূ’ই হচ্ছে সাজদার জন্য ভূমিকা স্বরূপ যা সর্বোচ্চ বিনয়। আর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দু’বার হওয়ার উদ্দেশ্য এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। আবার অনেকে অন্য কথাও বলেছেন, তবে এ কথা সুস্পষ্ট এটি একটি ’ইবাদাত।
৮৬৮-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রুকূ’ ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ঠিকভাবে আদায় করবে। আল্লাহর কসম! আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে আমার পিছন দিক হতেও দেখি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَقِيمُوا الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ فَوَاللَّهِ إِنِّي لأَرَاكُمْ من بعدِي»
ব্যাখ্যা: হাদীসটি বুখারী, মুসলিম ও নাসায়ী সংকলন করেছেন।
হাফিয ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দেখাটা বাস্তবিক এবং সুস্পষ্ট, আর এ বিষয়টি তাঁর সাথেই সংশ্লিষ্ট এবং তাঁর শানেই প্রযোজ্য। আর এটা ইমাম বুখারীর অভিমত। তিনি এ হাদীসটি চয়ন করেছেন في علامات النبوة ‘‘নুবূওয়্যাতের নিদর্শনের উপর’’। অনুরূপ ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য ইমামের অভিমত। এটা রসূলের মর্যাদার সাথেই প্রযোজ্য।
হাদীসের শিক্ষাঃ
* রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মু‘জিযা যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পিছন দিক হতে দেখতেন।
* সালাতের প্রতি যত্নশীল ও সংরক্ষণকারী হওয়া এবং তা‘দীল আরকান ও বিনয় নম্রতার সাথে আদায় করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ।
* ইমাম সাহেব সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মুক্তাদীদেরকে সতর্ক করবেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৬৯-[২] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুকূ’, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা), দু’ সাজদার মধ্যে বসা, রুকূ’র পর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময়ের পরিমাণ (ক্বিরাআতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় ছাড়া প্রায় সমান সমান ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنِ الْبَرَاءِ قَالَ: كَانَ رُكُوعُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَسُجُودُهُ وَبَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ وَإِذَا رَفَعَ مِنَ الرُّكُوعِ مَا خَلَا الْقيام وَالْقعُود قَرِيبا من السوَاء
ব্যাখ্যা: (مَا خَلَا الْقِيَامَ وَالْقُعُودَ قَرِيبًا مِنَ السَّوَاءِ) দ্বারা উদ্দেশ্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের প্রতি কার্যক্রম তথা রুকূ', সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ইত্যাদি সময়ের দৃষ্টিতে প্রায় সমান ছিল তবে দাঁড়ানো ও প্রথম বৈঠক, শেষ বৈঠকের দীর্ঘ সময় ছিল তুলনামূলক।
হাদীসটি আরো প্রমাণ করে ধীরস্থিরতা প্রশান্তচিত্ততা সালাতের বিরতি সময়ে যেমন (রুকূ‘ হতে উঠার পর)। দু’ সাজদার মাঝখানে স্বাভাবিক বৈঠক ও রুকূ‘ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) লম্বা হবে।
ইবনু দাক্বীক্ব বলেনঃ ধীরস্থিরতা গুরুত্বপূর্ণ রুকন যা পরবর্তীতে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস আসছে, সুতরাং দুর্বল দলীলের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যাবে না। যারা বলেন, ধীরস্থিরতা একটি গুরুত্বহীন রুকন। আর তাদের দলীল হলো ক্বিয়াস। সুস্পষ্ট দলীলের মোকাবিলায় ক্বিয়াস অচল।
আবার অনেক সময় ই‘তিদাল তথা রুকূ' থেকে উঠা ও দু’ সাজদার মাঝখানের সময়ে শারী‘আতসম্মত দু‘আ (যিকর-আযকার)-গুলো রুকূ‘র দু‘আর চাইতে অনেক বড় বা লম্বা যেমন রুকূ‘র সময় ‘‘সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’’ তিনবার বলতে যে সময় লাগে তার চেয়ে সময় বেশি সময় লাগবে রুকূ‘ থেকে উঠার পর এ দু‘আ ‘‘আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু হামদান কাসীরান্ ত্বইয়্যিবাম্ মুবা-রকান্ ফীহি’’।
অনুরূপ এর চেয়ে আরো বেশি শব্দ নিয়ে দু‘আ এসেছে সহীহ মুসলিমে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ), আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-গণের বর্ণনায় (حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا) এর পরে সংযোজন হয়েছে مِلْأَ السَّموتِ وَمِلْأَ الْأَرْضِ، وَمِلْأَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ। আর ইবনু আবী আওফার হাদীসে যোগ হয়েছেন (اَللّهُمَّ طَهِّرْنِيْ بِالثَّلْجِ)। অন্যান্য হাদীসে আরো অতিরিক্ত শব্দ এসেছে (أَهْلُ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ)।
মুসলিম-এর অপর একটি হাদীস অধ্যায়ে উল্লিখিত হাদীসের বিরোধিতা করেছে, অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে, ক্বিয়াম (কিয়াম), রুকূ'-সিজদা্ (সিজদা/সেজদা), বৈঠক সবই বরাবর বা সমান ছিল কমবেশী ছিল না।
সমাধানঃ মুসলিমের হাদীসটি প্রমাণ করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন সময় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এভাবে আদায় করতেন, অর্থাৎ- সালাতের সকল বিষয় সমান সমান ছিল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাক্‘আতে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ এবং অন্যান্য সূরাহ্ পড়তেন। অতঃপর রুকূ‘ করতেন, অনুরূপ সময় ধরে যতটুকু ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করেছেন; অতঃপর দাঁড়াতেন এবং বলতেন, (رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ) হে আমাদের রব! সকল প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য, অতঃপর রুকূ‘ সমপরিমাণ সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। (মুসলিম)
সমাধানের ক্ষেত্রে প্রথমটাই প্রাধান্য পরে যে তার এ দীর্ঘ সময় বরাবরটা মাঝে মধ্যে ছিল। ক্বিরাআত (কিরআত) ও বৈঠক ছাড়া সবগুলো সমান ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৭০-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ’’সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলতেন, সোজা হয়ে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমরা মনে করতাম নিশ্চয়ই তিনি (সাজদার কথা) ভুলে গেছেন। এরপর তিনি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন ও দু’ সাজদার মধ্যে এত লম্বা সময় বসে থাকতেন, আমরা মনে করতাম, তিনি নিশ্চয় দ্বিতীয় সাজদার কথা) ভুলে গেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَالَ: «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» قَامَ حَتَّى نَقُولَ: قَدْ أَوْهَمَ ثُمَّ يَسْجُدُ وَيَقْعُدُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ حَتَّى نَقُولَ: قَدْ أوهم. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: সাহাবীরা এভাবে মনে করতেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ' থেকে উঠার পর এত লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন। আমরা মনে করতাম তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত ছেড়ে দিয়েছেন এবং নতুন আকারে তিনি সালাতে দাঁড়াবেন।
হাদীসটি প্রমাণ করেঃ সালাতে লম্বা দীর্ঘ সময় ধরে ধীরস্থিরতা ও বৈঠক দু’ সাজাদার মাঝখানে।
হাদীসটি মুসলিম, আবূ দাঊদ সংকলন করেছেন আর বুখারী মুসলিম বর্ণনা করেছে, সাবিত আনাস (রাঃ) হতে, তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দেখাতে কোন কম-বেশী করবো না যেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করেছেন। সাবিত বলেনঃ আনাস (রাঃ) যেভাবে সালাত আদায় করতো আমি তোমাদের সে রকম দেখছি না।
যখন তিনি রুকূ' হতে মাথা উঠাতেন তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এমনকি কেউ বলতো নিশ্চয় তিনি ভুলে গেছেন এবং যখন মাথা উঠাতেন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে এত দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করতেন মনে হয় তিনি ভুলে গেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৭১-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ’আমল করে নিজের রুকূ’ ও সাজদায় এই দু’আ বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ ’’সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ فِي رُكُوعِهِ وَسُجُودِهِ: «سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي» يَتَأَوَّلُ الْقُرْآن
ব্যাখ্যা: এ দু‘আটি সূরাহ্ আন্ নাসর নাযিল হওয়ার পর রুকূ‘ এবং সাজদায় খুব বেশি বলতেন। সালাতের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু‘আ চয়ন করার কারণ অন্য সকল সময়ের চেয়ে এ সময়টি বেশি উত্তম এবং আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নে পরিপূর্ণ একাগ্রতা আসে।
আবার কেউ কেউ বলেন, সালাতের বাইরেও এ দু‘আটি পড়তেন দলীল স্বরূপ মুসলিমের হাদীসটি পেশ করে থাকেন। যেখানে বর্ণিত হয়েছে তিনি এ দু‘আটি সালাতের ভিতরে এবং বাইরেও পড়তেন।
হাদীসটি প্রমাণ করে রুকূ‘তে তাসবীহ বৈধ এবং সাজদাতে দু‘আ; যা আগত হাদীসটি প্রমাণ করে। যেখানে বলা হয়েছে, তোমরা রুকূ‘তে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করবে আর সাজদায় বিনয়ের সাথে দু‘আ করবে।
এর বিপরীত হবে না কারণ রুকূ‘তে দু‘আ নিষেধ করে না যেমনি তেমনি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব নিষেধ করে না এজন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব দু‘আ বিপরীত না।
ইবনু দাক্বীক্ব বলেছেনঃ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাদীসটি দু‘আ বৈধ প্রমাণ করে।
আবার এটা সম্ভাবনা আছেঃ সাজদায় বেশি বেশি দু‘আ করা আর রুকূ‘তে (اَللّهُمَّ اغْفِرْلِىْ) বলা খুব বেশি না, সুতরাং সংঘর্ষ থাকে না, মোদ্দা কথা সাজদার তুলনায় রুকূ‘তে দু‘আ করার বিষয়টি অতি নগণ্য।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৭২-[৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ ও সাজদায় বলতেন, ’’সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ’’ মালাক ও রূহ জিবরীলের রব অত্যন্ত পবিত্র, খুবই পবিত্র। (মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ وَسُجُودِهِ: «سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رب الْمَلَائِكَة وَالروح» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (سُبُّوْحٌ) দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি ও অংশীদারিত্ব হতে মুক্ত এবং যা তার উলূহিয়্যাত বা উপাসনার শানে প্রযোজ্য নয়।
(قُدُّوْسٌ) দ্বারা উদ্দেশ্য তিনি পূত-পবিত্র ঐ সকল বস্ত্ত হতে যা সৃষ্টিকর্তার মর্যাদার শানে প্রযোজ্য না।
যার সংক্ষেপ অর্থ দাঁড়ায় আমার রুকূ‘ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সে মহান পূত-পবিত্র সত্তার জন্য যে সকল প্রকার সৃষ্টির গুণাবলী হতে মুক্ত।
(وَالرُّوْحِ) দ্বারা উদ্দেশ্য জিবরীল (আঃ) , যেমনটি আল্লাহ বলেনঃ
يَوْمَ يَقُوْمُ الرُّوْحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا
‘‘যেদিন জিবরীল (আঃ) এবং মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবেন।’’ (সূরাহ্ আন্ নাবা ৭৮ : ৩৮)
نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الأَمِيْنُ
‘‘বিশ্বস্ত মালাক (ফেরেশতা) একে নিয়ে অবতরণ করেছে।’’ (সূরাহ্ আশ্ শু‘আরা ২৬ : ১৯৩)
تَنَزَّلُ المَلَائِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا
‘‘ক্বদরের রাত্রে মালায়িকাহ্ এবং জিবরীল (আঃ) অবতরণ করেন।’’ (সূরাহ্ আল ক্বদর (কদর) ৯৭ : ৪)
হাদীসটি মুসলিম ও আবূ দাঊদ নাসায়ী বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৭৩-[৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ’তে তোমাদের ’রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু’আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ ক্ববূল করা হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا إِنِّي نُهِيتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তার উম্মাতের জন্যও রুকূ‘ ও সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত নিষেধ যা ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত মুসলিমের অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকূ' ও সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন। রুকূ' সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা হারাম হবার প্রমাণ এই হাদীস।
রুকূ' ও সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল বলে বিবেচিত হবে। নিষেধাজ্ঞার হিকমাত হলো রুকূ' এবং সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হলো বিনয় ও নম্রতার চূড়ান্ত রূপ। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র দু‘আই বেশী মানায়।
হাদীসের বাণীঃ (فَعَظِّمُوا فِيْهِ الرَّبَّ) তার পবিত্রতা ঘোষণা করো। তিনি সকল প্রকার ত্রুটি থেকে মুক্ত তা ঘোষণা করো এবং তার মর্যাদা ঘোষণা করো। আর বড়ত্ব এ ঘোষণার শব্দগুলো বিভিন্ন হাদীসে এসেছে যেমন ‘আয়িশাহ্, ‘উক্ববাহ্ ইবনু আমির, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ এবং ‘আওফ ইবনু মালিক-এর হাদীস।
(وَأَمَّا السُّجُودُ فَا) দু‘আতে তোমরা চূড়ান্ত বিনয়ভাবে প্রকাশ করো।
ইমাম সিন্দী (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা অন্যতম দু‘আ।
* আর এ হাদীসটি দলীল হিসেবে প্রমাণ করে সাজদায় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য এবং দুনিয়া ও আখিরাতের অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য যে কোন দু‘আ করা যাবে।
(فَقَمِنٌ) উল্লেখ্য যে, বাস্তবেই আল্লাহ দু‘আ কবূল করবেন। সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হচ্ছে আল্লাহর নিকটবর্তী হবার অন্যতম জায়গা, সুতরাং দু‘আ কবূল হওয়ারও অন্যতম জায়গা।
আর হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করেছে সাজদায় দু‘আ করার জন্য যেহেতু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হচ্ছে দু‘আ কবূলের স্থান। আর এ সংক্রান্ত অনেক পঠিত দু‘আ হাদীসে এসেছে যেমন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর আগত হাদীস সাজদার ফাযীলাত সংক্রান্ত হাফিয ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সাজদায় দু‘আ করা উদ্বুদ্ধ করে সকল প্রকার প্রয়োজন মিটাতে আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ধর্ণা দেয়। যেমনটি আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছেঃ
‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই যেন সকল প্রকার প্রয়োজন তার রবের কাছে চায় এমনকি তার জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও।’’ (তিরমিযী)
প্রয়োজনে একই চাওয়া বার বার চাইতে পারে আর আল্লাহ তার চাওয়ানুযায়ী সাড়া দিয়ে থাকেন।
আর এ হাদীসটি সুস্পষ্ট প্রমাণ করে রুকূ‘তে তাসবীহ পড়া এবং সাজদায় দু‘আ করা ওয়াজিব- এ মতে গেছেন ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল ও মুহাদ্দিস কিরামগণের একটি দল। তবে জমহূর ‘উলামারা বলেন, এটি মুস্তাহাব। কারণ সালাত ভুলকারীকে এটি শিক্ষা দেননি যদি ওয়াজিব হতো তাহলে অবশ্যই আদেশ করতেন। তবে এ মতটি গ্রহণযোগ্য না যা বিবেকবানের কাছে সুস্পষ্ট।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৭৪-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ’’সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলবে, তখন তোমরা ’’আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’’ বলবে। কেননা যার কথা মালায়িকার কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا قَالَ الْإِمَامُ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا: اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تقدم من ذَنبه
ব্যাখ্যা: ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে রুকূ‘ থেকে যখন দাঁড়াতেন (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ) বলতেন, তখন তার পিঠকে রুকূ' থেকে সোজা করতেন, অতঃপর দাঁড়ানো থাকা অবস্থায় বলতেন, (رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ)।’’
দারাকুত্বনীর হাদীস যা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ) বললেন যারা তার পিছনে ছিল তারাও বলল (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ) তবে ইমাম দারাকুত্বনী এ হাদীসটিকে আরো সুস্পষ্ট করে বলেছা বিশুদ্ধ শব্দ হচ্ছে যখন ইমাম (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ) বলবে তার পিছনে যারা আছের তথা মুক্তাদীরা (رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ) বলবে।
ইমাম দারাকুত্বনী আরও রিওয়ায়াত করেন যা বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে বুরায়দাহ্! তুমি যখন তোমার মাথা রুকূ‘ থেকে উঠাবে বলবে (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ) ও (اَللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ) অর্থাৎ- হে আল্লাহ, হে আমাদের প্রতিপালক! তোমারই প্রশংসায় পরিপূর্ণ আকাশসমূহ পরিপূর্ণ এ পৃথিবী এবং অনাগত ভবিষ্যতে আপনি যা চান তা পরিপূর্ণ।
উল্লিখিত এ হাদীস প্রমাণ করে ইমাম, মুক্তাদী ও মুনফাবিদ (একাকী সালাত আদায়কারী ব্যক্তি)-দের মাঝে কোন পার্থক্য নেই তথা সকলেই তাসমী ও তাহমীদ বলবে।
যার বলা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) বলার সময় মিলে যাবে তার সমস্ত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। ছোট গুনাহ খাত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীস প্রমাণ করে মালায়িকাহ্ মুসল্লীদের সাথে এ কথা বলতে থাকে। তারাও আল্লাহর মাগফিরাত কামনা করে এবং দু‘আ ও যিকিরে উপস্থিত হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৭৫-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ হতে তাঁর পিঠ সোজা করে উঠে বলতেন, ’’সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ মিলআস্ সামা-ওয়া-তি ওয়া মিল্আল আরযি ওয়া মিল্আ মা- শি’তা মিন শাইয়িম বা’দ’’- (অর্থাৎ- আল্লাহ শুনেন যে তার প্রশংসা করে। হে আমার রব! আকাশ ও পৃথিবীপূর্ণ তোমার প্রশংসা, এরপর তুমি যা সৃষ্টি করতে চাও তাও পরিপূর্ণ)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَفَعَ ظَهْرَهُ مِنَ الرُّكُوعِ قَالَ: «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ من شَيْء بعد» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: প্রশংসাটি কি পরিমাণ যা আসমান ও জমিন বরাবর, এ প্রশংসার বাক্যটি দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করা সম্ভব নয়। এখানে উদ্দেশ্য হলো অধিক সংখ্যক সংখ্যা যদি এ শব্দগুলোকে কোন একটা আকার আকৃতিতে রূপান্তর করা হয় তাহলে এত বিশাল সংখ্যক হবে যে তার অবস্থানে আসমান এবং জমিনসমূহ পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
আবার কারো মতেঃ বিশাল সংখ্যক পরিমাণ যেমন বলা হয়ে থাকে জমিনের স্তর পূর্ণ হবে। কারো মতেঃ প্রতিদান ও সাওয়াব।
‘আল্লামা তুরবিশতী বলেনঃ (مِلْءَ مَا شِئْتَ) বাক্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর প্রশংসায় প্রাণান্ত চেষ্টার পর নিজের অপারগতা প্রকাশ করা।
আর তার প্রশংসা আসমান ও জমিন পরিপূর্ণ বাক্যটি প্রতিযোগিতাকারীর চেষ্টা চূড়ান্ত শেষ সীমানা। এর শেষে ‘বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীনে ছেড়ে দিয়েছে’, এরপরে প্রশংসার ভাষা তার নিকটে নেই। হাদীসটি আর আগত দু’টি হাদীস রুকূ‘তে লম্বা ধীরস্থিরতা প্রমাণ করে। আর যারা এটিকে নফল সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট মনে করে তাদের কোন দলীল নেই।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৭৬-[৯] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ হতে মাথা উঠিয়ে বলতেনঃ
’’আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু মিল্আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়া মিল্আ মা- শি’তা মিন শাইয়্যিম বা’দু আহলুস্ সানা-য়ি ওয়াল মাজদি আহাক্কু মা ক্ব-লাল ’আবদু ওয়া কুল্লুনা- লাকা ’আবদুন, আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি’আ লিমা- আ’ত্বাইতা ওয়ালা- মু’তিয়া লিমা- মানা’তা। ওয়ালা ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ’’-
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! তোমারই সব প্রশংসা। আকাশ পরিপূর্ণ ও পৃথিবী পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। হে প্রশংসা ও মর্যাদার মালিক! মানুষ তোমার প্রশংসায় যা বলে তুমি তার চেয়েও অধিক প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি যা দিবে তাতে বাধা দেবার কেউ নেই। আর তুমি যাতে বাধা দিবে তা দিতেও কেউ সমর্থ নয়। কোন সম্পদশালীর সম্পদই তোমার শাস্তি হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ قَالَ: «اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ أَهْلُ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجد» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ) তথা বান্দা যা বলে তার চেয়ে আল্লাহ তা‘আলা অনেক বেশী যোগ্য- এ কথার দ্বারা বান্দা আল্লাহর দিকে নিজকে সোপর্দ করা ও বড়ত্ব ঘোষণা করা এবং একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয়া আর এ কথাটির ব্যাখ্যা অন্য স্থানে এসেছে (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ) ‘‘একচ্ছত্র ক্ষমতা ও শক্তির মালিক কেবলমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই’’।
(لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ) অর্থাৎ- তুমি যা দান করো তাতে বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই আর যাতে তুমি বাধা দাও তাও দান করার মতো কেউ নেই- এ বাক্যটি কুরআনের এ আয়াতটিরই প্রতিধনিত্ব হয়েছেঃ ‘‘আল্লাহ মানুষের জন্য রহমাত বা অনুগ্রহের মধ্যে যা খুলে দেন তা ফেরাবার কেউ নেই আর তিনি যা বারণ করেন তা কেউ প্রেরণ করতে পারে না।’’ (সূরাহ্ আল ফা-ত্বির ৩৫ : ২)
(وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ) উদ্দেশ্য আল্লাহর নিকট কোন কাজে আসবে না মানুষের ধন-সম্পদ, সম্মান, ক্ষমতা; উপকার আসবে শুধুমাত্র নেক আ‘মাল।
আবার কেউ বলেছেনঃ আল্লাহর শাস্তি থেকে মানুষের ধন-সম্পদ, মান-মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে না যদি তিনি শাস্তি দিতে চান।
(وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ) অর্থাৎ- মানুষের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ও আ‘মাল তেমন কোন উপকার আসবে না, মূলত আল্লাহর অনুগ্রহ দয়া ও রহমাতই উপকারে আসবে।
হাদীসটি প্রমাণ করে এ গুরুত্বপূর্ণ রুকনে প্রত্যেক মুসল্লীদের জন্য এ সমস্ত যিকর-আযকার শারী‘আতসম্মত।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - রুকূ‘
৮৭৭-[১০] রিফা’আহ্ ইবনু রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকূ’ হতে মাথা তুলে, ’’সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বললেন (যে ব্যক্তি আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করলো আল্লাহ তা শুনলেন), তখন এক ব্যক্তি ’বলল, ’’রব্বানা- লাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবাম্ মুবা-রকান্ ফীহ’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য প্রশংসা, অনেক প্রশংসা, যে প্রশংসা শির্ক ও রিয়া হতে পবিত্র ও মুবারক)। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এখন এ বাক্যগুলো কে পড়ল? সেই ব্যক্তি উত্তরে বললো, আমি, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেন, আমি ত্রিশজনেরও অধিক মালাক দেখেছি এ কালিমার সাওয়াব কার আগে কে লিখবে, এ নিয়ে তাড়াহুড়া করছেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الرُّكُوْعِ
وَعَنْ رِفَاعَةَ بْنِ رَافِعٍ قَالَ: كُنَّا نُصَلِّي وَرَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ قَالَ: «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» . فَقَالَ رَجُلٌ وَرَاءَهُ: رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ: «مَنِ الْمُتَكَلِّمُ آنِفًا؟» قَالَ: أَنَا. قَالَ: «رَأَيْتُ بِضْعَةً وَثَلَاثِينَ مَلَكًا يَبْتَدِرُونَهَا أَيُّهُمْ يَكْتُبهَا أول» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সেটা ছিল জামা‘আতের ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)।
হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন বিশর ইবনু ‘ইমরান আয্ যাহরানী রিফা‘আহ্ ইবনু ইয়াহ্ইয়া বর্ণনা করে সালাতটি মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। যারা দাবী করে যে, এটি নফল সালাতে তাদের প্রত্যুত্তরে এটি শক্তিশালী দলীল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করলে প্রশ্ন করলেন এ বাক্যগুলো কে বলেছে। প্রথমবারে কেউ জবাব দেয়নি। দ্বিতীয়বার আবার প্রশ্ন করেছেন, কেউ জবাব দেয়নি। তৃতীয়বার আবার প্রশ্ন করলেন। রিফা‘আহ্ ইবনু রাফি' বলেন, আমি বলেছি, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেন বললে? (উক্ত সাহাবী বলেন) আমি বাক্যগুলো বলেছি কল্যাণের আশায়।
এ হাদীস দ্বারা রুকূ'তে ধীরস্থিরতার প্রমাণ হয় এবং রুকূ' হতে ওঠার ক্ষেত্রে।