পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রুকূ‘

৮৭৮-[১১] আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যে পর্যন্ত রুকূ ও সাজদাতে তার পিঠ স্থিরভাবে সোজা না করে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হবে না। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।

عَنْ أَبِي مَسْعُودِ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُجْزِئُ صَلَاةُ الرَّجُلِ حَتَّى يُقِيمَ ظَهْرَهُ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ

عن ابي مسعود الانصاري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تجزى صلاة الرجل حتى يقيم ظهره في الركوع والسجود» . رواه ابو داود والترمذي والنساىي وابن ماجه والدارمي وقال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح

ব্যাখ্যা: হাদীসে পিঠ সোজা করা দ্বারা উদ্দেশ্য ধীরস্থিরতা ও প্রশান্তচিত্ততা। আর হাদীসটি প্রমাণ করে রুকূ' সাজদায় ধীরস্থিরতা ও প্রশান্তচিত্ততা আবশ্যক যা এ কথা প্রমাণ করে যে, বিশেষ করে যে রুকূ‘ সাজদায় তার পিঠকে সোজা করে না তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ হয় না- এ মতে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ ও জমহূর ‘উলামাহ্ আর আবূ ইউসুফ-ও গেছেন। আর এটি সঠিক অভিমত উল্লিখিত অনুচ্ছেদের হাদীস এবং পূর্বে অতিবাহিত মুসীয়ুস্ সালাত (সালাতে ভুলকারী) হাদীসটি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দলীল।

আর হুযায়ফাহ্ (রাঃ) ও আবূ ক্বাতাদার হাদীস যা তৃতীয় অনুচ্ছেদে আসবে এবং আনাস (রাঃ)-এর হাদীস যা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে এবং ‘আলী ইবনু মাযবান-এর মারফূ' সূত্রে বর্ণিত হাদীস যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘হে মুসলিমের দল! যে ব্যক্তি রুকূ‘ ও সাজদায় পিঠকে সোজা করে না তার কোন সালাত নেই তথা তার সালাত হয় না’’- এ বিষয়ে স্পষ্ট দলীল।

‘আলী  (রাঃ)-এর হাদীসটি আহমাদ, ইবনু মাজাহ্, ইবনু খুযায়মাহ্ তা সহীহ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। যাওয়ায়িদে বলেছেন, এর সানাদ সহীহ। এর সিক্বাহ্ রাবী।

ইবনু মাজাহ্ ও নাসায়ীর সানাদে সিনদী বলেন, অনুচ্ছেদে হাদীসটি রুকূ' ও সাজদায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করার দলীল। আর জমহূর ‘উলামাহ্ এটিকে ফরয বলেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রুকূ‘

৮৭৯-[১২] ’উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ’’ফাসাব্বিহ বিসমি রব্বিকাল ’আযীম’’ (তোমার মহান রবের নামের পবিত্রতা বর্ণনা কর)- এ আয়াত নাযিল হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ আয়াতটিকে তোমরা তোমাদের রুকূ’তে তাসবীহরূপে পড়। এভাবে যখন ’’সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-’’ (তোমরা উচ্চ মর্যাদাশীল রবের নামের পবিত্রতা ঘোষণা কর) আয়াত নাযিল হলো, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা এটিকে তোমাদের সাজদার তাসবীহতে পরিণত কর। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ (فسبح باسم رَبك الْعَظِيم)
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اجْعَلُوهَا فِي رُكُوعِكُمْ» فَلَمَّا نَزَلَتْ (سَبِّحِ اسْمَ رَبك الْأَعْلَى)
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اجْعَلُوهَا فِي سُجُودِكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْن مَاجَه والدارمي

وعن عقبة بن عامر قال: لما نزلت (فسبح باسم ربك العظيم) قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اجعلوها في ركوعكم» فلما نزلت (سبح اسم ربك الاعلى) قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اجعلوها في سجودكم» . رواه ابو داود وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) এবং সামনে আগত হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসও এর প্রমাণ। রুকূ‘তে ‘‘সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’’ এবং সাজদায় ‘‘সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা-’’ খাস করার উদ্দেশ্য হলো এটা বিনয়ভাব প্রকাশের অন্যতম নমুনা। কেননা সাজদাতে শরীরের সবচেয়ে দামী অঙ্গ ললাটকে অবনত করা হয় দু’টো পায়ের উপর ভর করে। আর বিনয়ের সর্বোচ্চ পন্থা হলো রুকূ'।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রুকূ‘

৮৮০-[১৩] ’আওন ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন রুকূ’ করবে সে যেন রুকূ’তে তিনবার ’’সুবহা-না রব্বিয়াল ’আযীম’’ পড়ে। তাহলে তার রুকূ’ পূর্ণ হবে। আর এটা হলো সর্বনিম্ন সংখ্যা। এভাবে যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে, সাজদায়ও যেন তিনবার ’’সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা-’’ পড়ে। তাহলে তার সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) পূর্ণ হবে। আর তিনবার হলো কমপক্ষে পড়া। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্;[1]

ইমাম তিরমিযী বলেন, এর সানাদ মুত্তাসিল নয়। কেননা ’আওন (রহঃ) ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়নি।

وَعَنْ عَوْنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَقَالَ فِي رُكُوعِهِ: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَقَدْ تَمَّ رُكُوعُهُ وَذَلِكَ أَدْنَاهُ وَإِذَا سَجَدَ فَقَالَ فِي سُجُودِهِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَقَدْ تَمَّ سُجُودُهُ وَذَلِكَ أَدْنَاهُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد ابْن مَاجَهْ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِمُتَّصِلٍ لِأَنَّ عونا لم يلق ابْن مَسْعُود

وعن عون بن عبد الله عن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا ركع احدكم فقال في ركوعه: سبحان ربي العظيم ثلاث مرات فقد تم ركوعه وذلك ادناه واذا سجد فقال في سجوده سبحان ربي الاعلى ثلاث مرات فقد تم سجوده وذلك ادناه . رواه الترمذي وابو داود ابن ماجه. وقال الترمذي: ليس اسناده بمتصل لان عونا لم يلق ابن مسعود

ব্যাখ্যা: ইমাম শাওকানী বলেন, নির্দিষ্ট পরিপূর্ণ সংখ্যা নির্ধারণের ব্যাপারে কোন দলীল নেই। বরং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দীর্ঘ সময় ধরে পড়ার পরিমাপ অনুযায়ী বেশি বেশি তাসবীহ পড়া দরকার। সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসবে।

ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীস প্রমাণ করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী ব্যক্তি রুকূ' ও সাজদায় তিনের কম যেন তাসবীহ না পড়ে- এ ব্যাপারে হুযায়ফার হাদীসও প্রমাণ করে যেখানে তিনি বলেন, আমি [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি যখন তিনি রুকূ‘তে যেতেন ‘‘সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’’ তিনবার বলতেন আর সাজদায় ‘‘সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা-’’ তিনবার বলতেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রুকূ‘

৮৮১-[১৪] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’তে ’’সুবহা-না রব্বিয়াল ’আযীম’’ ও সাজদায় ’’সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা-’’ পড়তেন। আর যখনই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্বিরাআতের সময় রহমতের আয়াতে পৌঁছতেন, ওখানে থেমে যেতেন, রহমত তলবের দু’আ পাঠ করতেন। আবার যখন ’আযাবের আয়াতে পৌঁছতেন, সেখানে থেমে গিয়ে ’আযাব থেকে বাঁচার জন্য দু’আ করতেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, দারিমী)[1] নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্ এ হাদীসটিকে ’’সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা-’’ পর্যন্ত নকল করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।

وَعَنْ حُذَيْفَةَ: أَنَّهُ صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ» وَفِي سُجُودِهِ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى» . وَمَا أَتَى عَلَى آيَةِ رَحْمَةٍ إِلَّا وَقَفَ وَسَأَلَ وَمَا أَتَى عَلَى آيَةِ عَذَابٍ إِلَّا وَقَفَ وَتَعَوَّذَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ وَرَوَى النَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ إِلَى قَوْلِهِ: «الْأَعْلَى» . وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ

وعن حذيفة: انه صلى مع النبي صلى الله عليه وسلم فكان يقول في ركوعه: «سبحان ربي العظيم» وفي سجوده: «سبحان ربي الاعلى» . وما اتى على اية رحمة الا وقف وسال وما اتى على اية عذاب الا وقف وتعوذ. رواه الترمذي وابو داود والدارمي وروى النساىي وابن ماجه الى قوله: «الاعلى» . وقال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح

ব্যাখ্যা: মুসলিমের রিওয়ায়াতে এসেছে, রাবী বলেনঃ আমি কোন এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শুরু করলেন, অতঃপর সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ একশত আয়াত পড়ে রুকূ' করলেন; অতঃপর আবার পড়লেন, আমার মনে হয় বাক্বারাহ্ দিয়ে রাক্‘আত শেষ করলেন, আবার পড়লেন।

এ রিওয়ায়াত সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে, সালাতটি হুযায়ফাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে পড়েছেন তা রাত্রির সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। রহমাতের আয়াতে আসলে বিরতির মাঝে তিনি আল্লাহর কাছে রহমাত কামনা করতেন। আর ‘আযাবের আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে শাস্তি হতে মাফ চাইতেন।

মুল্লা ‘আলী কারী  বলেনঃ আমাদের সাথীরা তথা হানাফী মাযহাব ও মালিকীরা এ সালাতটি নফল সালাত বলেছেন। কেননা ফরয সালাতে তিলাওয়াতের মাঝে কোন কিছু চাওয়া ও পরিত্রাণ চাওয়ার বিষয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে অনুমোদন দেননি। আবার সম্ভাবনা রয়েছে ফরয সালাতেও বৈধ। জমা‘আতের সালাতে এ মতটি করেছেন তবে এর দলীল একেবারেই অপ্রতুল।

আমি (ভাষ্যকার বলি) ইতিপূর্বে মুসলিমের রিওয়ায়াতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত এটা রাতের সালাত তথা নফল আর ফরয সালাতে এমনটি ঘটেছে এমন কোন সুস্পষ্ট দলীল অবগত হয়নি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে