মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)
২১০৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

এখানে সাধারণভাবে পূর্ণ কুরআনের ফাযীলাত বা মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে এবং বিশেষ কতিপয় সূরা ও আয়াতের ফাযীলাতও খাসভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

আল কুরআনের কোন বিশেষ অংশ অন্য কোন অংশের উপর বিশেষ কোন মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব রাখে কি-না তা নিয়ে গবেষকগণ ইখতিলাফ করেছেন। আবূল হাসান আল আশ্’আরী, কাযী আবূ বকর আল বাকিলানী প্রমুখ মনীষীগণ মনে করেন কুরআনের সকল আয়াত ও সূরার মর্যাদা সমান, কোন অংশই অপর কোন অংশের উপর বিশেষ কোন মর্যাদা রাখে না। কেননা মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব হলো অমর্যাদা ও ত্রুটির বিপরীত অথচ আল্লাহর কালামের হাক্বীকত ও মৌলিকত্ব এক, সেখানে কোন ত্রুটিও নেই, কোন অংশের মর্যাদারও কমতি নেই। সুতরাং আল কুরআনের কোন অংশের বিশেষ কান মর্যাদা নেই।

পক্ষান্তরে অন্য আরেকদল অর্থাৎ- জমহূর ’উলামায়ে কিরাম প্রকাশ্য এবং স্পষ্ট হাদীসের ভিত্তিতে বলেন, কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের উপর বিশেষ মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব রাখে। যেমন- হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’বকে বলেছিলেনঃ

الا اعلمك اعظم سورة في القراٰن.

’’আমি কি তোমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠ সূরাটি শিক্ষা দিব না?’’

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ ’’নিশ্চয় ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ (সূরাটি) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা রাখে।’’

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ কুরআনের কোন অংশের অধিক মর্যাদাশীল হওয়ার বিষয়টি অসংখ্য নস (কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট দলীল) দ্বারা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে ইখতিলাফ করা সত্যই আশ্চর্যজনক।

আল কুরআনের বিশেষ অংশের বিশেষ মর্যাদার বিষয় নিয়েও লোকেরা ইখতিলাফ করেছেন। একদলের মতে এ শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা তথা পুরস্কার ও সাওয়াব হলো ব্যক্তির কর্মের ভিত্তিতে যে যত আন্তরিকভাবে বা ইখলাসের সাথে চিন্তা, গবেষণা করে এবং আল্লাহর ভয় নিয়ে এর তিলাওয়াত ও ’আমল করবে তার মর্যাদা তত বেশী হবে। পক্ষান্তরে তাতে কমতি হলো ঐগুলোর কমতি হওয়া।

অন্য আরেক দল ’উলামার মতে এ শ্রেষ্ঠত্ব হলো শব্দের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে। যেমন- আল্লাহর বাণীঃوَإِلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَاحِدٌ অনুরূপ আয়াতুল কুরসী, সূরা আল হাশর-এর শেষাংশ, সূরা আল ইখলাস ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে আল্লাহ তা’আলার চূড়ান্ত ওয়াহদা-নিয়্যাতের এবং সিফাতে কামিলার প্রমাণ বাহক শব্দ রয়েছে যা ’’তাব্বাত ইয়াদা.....’’, বা অন্য কোন সূরার মধ্যে নেই। সুতরাং আল কুরআনের কতিপয় আয়াত ও সূরার বিস্ময়কর অর্থ সম্বলিত শব্দের কারণেই তার এ বিশেষ মর্যাদা।

এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখতে চাইলে ইমাম সুয়ূতির ইত্ক্বান ২য় খণ্ড ১৫৭ পৃঃ এবং ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ্’র جواب أهل العلم والإيمان بتحقيق ما أخبر به رسول الرحمان من أن قل هو الله أحد تعدل ثلث القراٰن (জওয়া-বু আহলিল ’ইলমি ওয়াল ঈমা-নি বি তাহক্বীকি মা- আখবারা বিহী রসূলুর রহমা-ন মিন আন্না কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ তা’দিলু সুলসাল কুরআ-ন) গ্রন্থ দেখে নিন।

সম্মানিত লেখকদ্বয় উক্ত গ্রন্থে আল কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের উপর, এক সূরা অন্য সূরার উপর মর্যাদা রাখার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা করেছেন।

অতঃপর জ্ঞাতব্য বিষয় যে, কুরআন শব্দটি القرأة (কিরাআত) মাসদার থেকে মাফউল অর্থে ব্যবহার হয়েছে। পরবর্তীতে এটি الجمع একত্রিতকরণের অর্থ প্রদান করেছে। যেহেতু এতে সূরাহগুলোকে এবং বিভিন্ন প্রকার জ্ঞানকে একত্রিত করা হয়েছে সেহেতু একে কুরআন বলা হয়েছে।

অন্য আরেকদলের মতে قرنت মূল ধাতু থেকে নির্গত, এর অর্থ একটি বস্ত্ত আরেকটি বস্ত্তর নিকটে হওয়া। আল কুরআনের একটি সূরা আরেকটি সূরার এবং একটি আয়াত আরেকটি আয়াতের নিকটে, সুতরাং একে কুরআন বলা হয়।


২১০৯-[১] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা (মানুষকে) শিক্ষা দেয়। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُكُمْ من تعلم الْقُرْآن وَعلمه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن عثمان رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «خيركم من تعلم القران وعلمه» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: خَيْرٌ ‘খয়রুন’ শব্দটি أخير ‘আখ্ইয়ার’ এর অর্থ প্রদান করেছে যার অর্থ অধিক ভাল, যিনি অধিক ভাল তিনি তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠও বটে।

অত্র হাদীসে বলা হয়েছে যে, কুরআন শিক্ষা করে এবং (অপরকে) শিক্ষা দেয়। কোন কোন বর্ণনায় و ‘ওয়াও’ (এবং) এর পরিবর্তে اَوْ ‘আও’ (অথবা) ব্যবহার করা হয়েছে; তখন হাদীসের অর্থ হয় যে কুরআন শিক্ষা করে অথবা অপরকে শিক্ষা দেয়...। শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়া প্রত্যেকটি কাজই উত্তম তবে যে উভয়টি করে সে সর্বোত্তম। কুরআন হলো আশরাফুল ‘উলূম বা অধিক মর্যাদাসম্পন্ন বিদ্যা, তা যে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয় স্বভাবতই সে অন্য সকল বিদ্বান থেকে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।

মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস থেকে এ ধারণা করা ঠিক নয় যে, ‘আমল এর বাইরে, অর্থাৎ- কুরআন অনুযায়ী ‘আমলের কোন প্রয়োজন নেই শুধু তা শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়াতেই এ মর্যাদা পাওয়া যাবে। বরং যিনি কুরআন শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানের সাথে সাথে সে অনুযায়ী ‘আমল করবেন তিনিই কেবল এই মর্যাদা পাবেন। ‘আমলবিহীন ‘আলিম জাহিলের মতই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১০-[২] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একদিন) মসজিদের প্রাঙ্গণে বসেছিলাম। এ সময়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসলেন ও (আমাদেরকে) বললেন, তোমাদের কেউ প্রতিদিন সকালে ’বুত্বহান’ অথবা ’আক্বীক’ বাজারে গিয়ে দু’টি বড় কুঁজওয়ালা উটনী কোন অপরাধ সংঘটন ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়া নিয়ে আসতে পছন্দ করবে? এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের প্রত্যেকেই এ কাজ করতে পছন্দ করবে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তা-ই হয় তাহলে তোমাদের কেউ কোন মসজিদে গিয়ে সকালে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত (মানুষকে) শিক্ষা দেয় না বা (নিজে) শিক্ষাগ্রহণ করে না কেন? অথচ এ দু’টি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য দু’টি উটনী অথবা তিনটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য তিনটি উটনী অথবা চারটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য চারটি উটনীর চেয়েও উত্তম। সারকথা কুরআনের যে কোন সংখ্যক আয়াত, একই সংখ্যক উটনীর চেয়ে উত্তম। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ فَقَالَ: «أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْم إِلَى بطحان أَو إِلَى العقيق فَيَأْتِي مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رحم» فَقُلْنَا يَا رَسُول الله نُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ: «أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ الله عز وَجل خير لَهُ من نَاقَة أَو نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِل» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عقبة بن عامر قال: خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم ونحن في الصفة فقال: «ايكم يحب ان يغدو كل يوم الى بطحان او الى العقيق فياتي منه بناقتين كوماوين في غير اثم ولا قطع رحم» فقلنا يا رسول الله نحب ذلك قال: «افلا يغدو احدكم الى المسجد فيعلم او يقرا ايتين من كتاب الله عز وجل خير له من ناقة او ناقتين وثلاث خير له من ثلاث واربع خير له من اربع ومن اعدادهن من الابل» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: عقيق ‘আক্বীক’ মদীনাহ্ থেকে দুই তিন মাইল দূরে অবস্থিত বৃহত্তর উটের বাজার। উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট উটের কথা বলা হয়েছে এজন্য যে, ‘আরবের লোকদের নিকট এটি ছিল অধিক প্রিয় এবং অধিক মূল্যমানের বস্ত্ত।

মসজিদে গিয়ে কুরআন শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়ার সাওয়াব ‘আরবের ঐ উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট লাল উটের মূল্যের চেয়েও অধিক বেশি, এমনকি প্রতিটি আয়াতের বিনিময় একটি করে উটের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং যে যত আয়াত পড়বে বা পড়াবে সে তত বেশি উটের মালিক হবে। এর অর্থ ঐ উট সদাকাহ্ করলে যে সাওয়াব মিলবে তা সে পাবে।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এটা উৎসাহব্যঞ্জক একটি দৃষ্টান্তমূলক কথা যাতে মানুষ এ কাজে অনুপ্রাণিত হয়। অন্যথায় কুরআন মাজীদের একটি আয়াতের মারেফাতের তুলনায় গোটা পৃথিবী তুচ্ছ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১১-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি নিজ ঘরে ফিরে তিনটি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী পেতে পছন্দ করো? আমরা বললাম, (হে আল্লাহর রসূল!) নিশ্চয়ই পছন্দ করি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তারা যেন সালাতে তিনটি আয়াত পড়ে। এ তিনটি আয়াত তার জন্য তিনটি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ إِذَا رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ أَنْ يَجِدَ فِيهِ ثَلَاثَ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ» . قُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ «فَثَلَاثُ آيَاتٍ يَقْرَأُ بِهِنَّ أَحَدُكُمْ فِي صلَاته خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثِ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ايحب احدكم اذا رجع الى اهله ان يجد فيه ثلاث خلفات عظام سمان» . قلنا: نعم. قال «فثلاث ايات يقرا بهن احدكم في صلاته خير له من ثلاث خلفات عظام سمان» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যানুরূপ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১২-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন অধ্যয়নে পারদর্শী ব্যক্তি মর্যাদাবান লিপিকার মালায়িকাহ্’র (ফেরেশ্তাগণের) সাথী হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন অধ্যয়ন করে ও যে এতে আটকে যায় এবং কুরআন তার জন্য কষ্টদায়ক হয়, তাহলে তার জন্য দু’টি পুরস্কার। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شاق لَهُ أَجْرَانِ»

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الماهر بالقران مع السفرة الكرام البررة والذي يقرا القران ويتتعتع فيه وهو عليه شاق له اجران»

ব্যাখ্যা: কুরআনের পারদর্শী বলতে সর্ববিষয়ে পণ্ডিত ব্যক্তি। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ ‘হাফেয’ যার কুরআন মুখস্থ বা পড়তে গিয়ে ঠেকে যায় না এবং কোন অসুবিধা বা কষ্ট হয় না।

(سفرة الْكرام) হলো লেখার কাজে দায়িত্বশীল সম্মানিত দূত। তারা আল্লাহর রিসালাত নিয়ে মানুষের কাছে সফর করে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতামন্ডলী) যারা লাওহে মাহফূয বা সংরক্ষিত ফলক বহন করে থাকেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, এটা এমন সহীফায় লিপিবদ্ধ যা সম্মানিত উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পবিত্র, সুসম্মানিত ও নেককার লেখকের হাতে থাকে। (সূরা ‘আবাসা ৮০ : ১৩-১৬)

 মোটকথা ভাল কুরআন তিলাওয়াতকারী মানব কল্যাণে অবতীর্ণ সম্মানিত বিশেষ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’র (ফেরেশতামন্ডলীর) সাথে বন্ধু হিসেবে থাকবেন অথবা ঐ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’র মর্যাদা লাভ করবেন। অথবা তারা এমন মর্যাদার স্থান লাভ করবেন যেখানে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তাদের বন্ধু হিসেবে থাকবেন।

পক্ষান্তরে কুরআনের উপর দক্ষতা না থাকার কারণে যারা থেমে থেমে কষ্ট করে তিলাওয়াত করবে তাদের সাওয়াব দ্বিগুণ হবে। একটি পাঠের জন্য অপরটি হলো কষ্টের জন্য। এটাও কষ্ট করে করে কুরআনুল কারীম শিক্ষার ক্ষেত্রে উৎসাহব্যঞ্জক কথা।

তাই বলে কুরআনের প্রাজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ে সে কোনক্রমেই উত্তম নয়। কেননা প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের অবস্থান হবে অতীব উন্নত ও সম্মানিত মালায়িকাহর সাথে এবং তাদের সাওয়াব হবে বহু গুণে উন্নীত। ইবনুত্ তীন সহ অনেকে বলেন, এদের মর্যাদা এত বেশি গুণে উন্নীত যে, তা গুণে শেষ করা যাবে না। ‘আল্লামা কুসতুলানী বলেন, কুরআনের দক্ষ ব্যক্তির দক্ষতা অর্জন করতেও অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। সুতরাং তার মর্যাদা বেশিই হওয়া স্বাভাবিক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১৩-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথম, সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআনের (’ইলম) দান করেছেন, আর সে তা দিন-রাত অধ্যয়ন করে। দ্বিতীয়, ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা সে সকাল সন্ধ্যায় দান করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا حَسَدَ إِلَّا على اثْنَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَار

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا حسد الا على اثنين: رجل اتاه الله القران فهو يقوم به اناء الليل واناء النهار ورجل اتاه الله مالا فهو ينفق منه اناء الليل واناء النهار

ব্যাখ্যা: ‘আরাবীতে حسد (হাসাদ) শব্দটি হিংসা, পরশ্রীকাতর ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়। যা শার‘ঈভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু এখানে শব্দটি غبطة (গিবত্বাহ্) বা ঈর্ষা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যা বৈধ। হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, হাসাদ বা হিংসা হলোঃ কারো ওপর প্রদত্ত নিয়ামত বিনষ্ট বা ধ্বংস কামনা করা এবং ঐ নিয়ামত অন্য কারো না হয়ে শুধু নিজের হোক এরূপ কামনা করা। পক্ষান্তরে হাসাদ যদি গিবত্বাহ্ বা ঈর্ষা অর্থে হয় তখন এর অর্থ হলোঃ কারো নি‘আমাতে দেখে তার স্থায়িত্ব কামনা করা এবং নিজের জন্যও অনুরূপ নিয়ামত (আসুক তা) কামনা করা, এটা সম্পূর্ণরূপে বৈধ। শুধু বৈধই নয়, ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে এ জাতীয় ঈর্ষা প্রশংসনীয়-ই বটে।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ‘উলামাগণ হাসাদ-কে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন।

১. হাক্বীক্বী বা বাস্তবিক এবং

২. মাজাযী বা রূপক।

হাক্বীক্বী বা বাস্তবটির অর্থ হলো হিংসা, যা হারাম, পক্ষান্তরে মাজাযী বা রূপকটির অর্থ হলো গিবত্বাহ্ বা ঈর্ষা, যা বৈধ, এমনকি কখনো তা প্রশংসনীয়।

অত্র হাদীসে যে হাসাদ-এর কথা বলা হয়েছে সেটি হলো ‘হাসাদ’ শব্দের রূপক অর্থ, অর্থাৎ- গিবত্বাহ্ বা ঈর্ষা। এটা কোন কোন বিষয়ে প্রশংসনীয়, তবে কোন খারাপ কাজে এটা বৈধ নয়।

যেমন সহীহুল বুখারীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, তিনি তার এক প্রতিবেশীকে বলতে শুনেছেন, আফসোস! যদি আমাকে অমুকের মতো কুরআন দান করা হতো তাহলে সে যেমন ‘আমল করে আমিও অনুরূপ ‘আমল করতাম।

দু’জন ব্যক্তি বলতে দু’টি বৈশিষ্ট্য। কুরআন নিয়ে দন্ডায়মান হওয়ার অর্থ হলো কুরআন মুখস্থ করা, তা তিলাওয়াত করা, (চাই সালাতে হোক, চাই সালাতের বাইরে হোক) তা অপরকে শিক্ষা দেয়া এবং তার হুকুম মোতাবেক ‘আমল করা। দ্বিতীয় সম্পদশালী ব্যক্তি সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয়ের ব্যাপারে দিবা-রাতের কোন পরোয়া করে না, বরং সদা-সর্বদা সে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে থাকে। আহমাদ-এর বর্ণনায় হাক্বের পথে ব্যয়ের কথা বলা আছে। দিনে রাতে ব্যয় করার অর্থ এও হতে পারে প্রকাশ্যে এবং গোপনে দান করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১৪-[৬] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারী মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো তুরঞ্জ ফল বা কমলা লেবুর ন্যায়। যার গন্ধ ভাল, স্বাদও উত্তম। যে মু’মিন কুরআন পড়ে না, তার দৃষ্টান্ত হলো খেজুরের ন্যায়। এর কোন গন্ধ নেই বটে, কিন্তু উত্তম স্বাদ আছে। কুরআন পাঠ করে না যে মুনাফিক, সে হানাযালাহ্ (তিতা) ফলের মতো, যার কোন গন্ধ নেই অথচ স্বাদ তিতা। আর ওই মুনাফিক যে কুরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত ঐ ফুলের মতো, যার গন্ধ আছে কিন্তু স্বাদ তিতা। (বুখারী, মুসলিম।)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে মু’মিন, কুরআন পড়ে ও সে অনুযায়ী ’আমল করে সে কমলা লেবুর মতো। আর যে মু’মিন কুরআন পড়ে না, কিন্তু এর উপর ’আমল করে সে খেজুরের মতো।)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مثل الْمُؤمن الَّذِي يقْرَأ الْقُرْآن كَمثل الْأُتْرُجَّةِ رِيحُهَا طِيبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ وَمَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِي لَا يقْرَأ الْقُرْآن كَمثل التمرة لَا ريح لَهَا وطعمها حلوومثل الْمُنَافِقِ الَّذِي لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الْحَنْظَلَةِ لَيْسَ لَهَا رِيحٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِي يقْرَأ الْقُرْآن مثل الريحانة رِيحهَا طيب وَطَعْمُهَا مَرٌّ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ: «الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَعْمَلُ بِهِ كَالْأُتْرُجَّةِ وَالْمُؤْمِنُ الَّذِي لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَعْمَلُ بِهِ كَالتَّمْرَةِ»

وعن ابي موسى الاشعري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «مثل المومن الذي يقرا القران كمثل الاترجة ريحها طيب وطعمها طيب ومثل المومن الذي لا يقرا القران كمثل التمرة لا ريح لها وطعمها حلوومثل المنافق الذي لا يقرا القران كمثل الحنظلة ليس لها ريح وطعمها مر ومثل المنافق الذي يقرا القران مثل الريحانة ريحها طيب وطعمها مر» . متفق عليه. وفي رواية: «المومن الذي يقرا القران ويعمل به كالاترجة والمومن الذي لا يقرا القران ويعمل به كالتمرة»

ব্যাখ্যা: কুরআন তিলাওয়াতকারী মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো উতরুজ্জাহ্ বা তুরঞ্জ ফলের ন্যায়। তুরঞ্জ (ফল) হলো বাতাবী লেবু অথবা কমলালেবু জাতীয় একটি অতীব মুখরোচক, উপাদেয় এবং সুগন্ধযুক্ত ফল। ‘আরবদের নিকট এটি ফলসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফল। কেউ কেউ বলেছেন, এমনকি এটি সকল দেশের ফলের শ্রেষ্ঠ। এর মধ্যে রয়েছে বহুবিধ বৈশিষ্ট্য ও গুণের সমাহার, দেখতেও ভারী চমৎকার। এর রং সত্যিই দৃষ্টিনন্দন ও হৃদয়গ্রাহী। এতে রয়েছে প্যারালাইসিস, জন্ডিস, কুষ্ঠরোগ এবং অর্শ্ব বা বাউশী রোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিকার ও প্রতিষেধক উপাদান। জীবনী শক্তি বর্ধক উপকরণও এতে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান।

হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, অন্য কোন ফলের নাম উল্লেখ না করে উতরুজ্জাহ্ ফলের নাম উল্লেখ করার হিকমাত হলো এর ছাল দিয়ে ঔষধ তৈরি হয়, বীজ থেকে নানা উপকারী তৈল বের করা হয়। বলা হয় যে বাড়িতে তুরঞ্জ ফল থাকে সে বাড়িতে জিন্ প্রবেশ করতে পারে না। ওর বীজের উপরের পাতলা আবরণীর সম্পর্ক হলো মু’মিনের কলবের ন্যায়। এছাড়াও ওর বহুবিধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

ঈমানের বিশেষণ খাদ্যের সাথে আর কুরআন তিলাওয়াতের বিশেষণ সুগন্ধির সাথে সাদৃশ্যযুক্ত করা হয়েছে। কেননা ঈমান মু’মিনকে কুরআন ধারণে বাধ্য করে যদিও ঈমান অর্জন কুরআন তিলাওয়াত ছাড়াও সম্ভব। অথবা ঈমানকে সুগন্ধযুক্ত খাদ্যের সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে এজন্য যে, ঈমানের কল্যাণটা হলোঃ আত্মিক, প্রত্যেকের কাছে তা প্রকাশিত হয় না, কিন্তু কুরআন তিলাওয়াতের সুগন্ধি দ্বারা সকলেই উপকৃত হয়। প্রতিটি শ্রোতাই প্রকাশ্যভাবে এর সৌন্দর্যে আপ্লুত হয়।

মাযহারী বলেন, কুরআন তিলাওয়াতকারী মু’মিনের দৃষ্টান্ত এরূপ যে, তার দৃঢ় ঈমান স্বীয় অন্তরে সুগন্ধি ছড়ায়, আর সে যখন কুরআন তিলাওয়াত করে তখন তার সম্মোহনী সুর লহরীতে মানুষ প্রশান্তি লাভ করে। শ্রোতা কুরআন শুনে সাওয়াব অর্জন করে এবং সেখান থেকে শিক্ষা লাভ করে। এটাই হলো তুরঞ্জ ফলের দৃষ্টান্ত যার স্বাদও সুন্দর গন্ধও সুন্দর।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১৫-[৭] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা এ কিতাব কুরআনের মাধ্যমে কোন কোন জাতিকে উন্নতি দান করেন। আবার অন্যদেরকে করেন অবনত। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن الله يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عمر بن الخطاب قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله يرفع بهذا الكتاب اقواما ويضع به اخرين» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাবের দ্বারা কোন জাতিকে উন্নত করেন’’। এই কিতাবের অর্থ হলো কুরআনুল কারীম। এটা মহান এবং শাশ্বত মর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ কিতাব। পূর্ববর্তী আসমানী কোন গ্রন্থই এ মর্যাদায় পৌঁছতে পারেনি। এ জাতির উন্নতির কারণ হলো আল কুরআনের প্রতি তাদের বিশ্বাস, আল কুরআনের যথাযথ মর্যাদা দান এবং তার উপর ‘আমল করা। এদের মর্যাদা এভাবে বাড়িয়ে দেয়া হবে যে, ইহকালে পাবে তারা এক সম্মানজনক জীবন এবং পরকালে আল্লাহর নৈকট্যশীল পুরস্কারপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যারা তার প্রতি পূর্ণরূপে ঈমান আনয়ন করবে না, তার ‘আমল ছেড়ে দিবে এবং তার যথাযোগ্য মর্যাদা দানে ব্যর্থ হবে আল্লাহ তা‘আলা তাদের লাঞ্ছিত করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘এ কুরআন দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা অনেক মানুষকে পথপ্রদর্শন করেন আবার অনেককে করেন পথভ্রষ্ট।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ :২৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১৬-[৮] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) বলেন, এক রাতে তিনি সূরা আল বাকারাহ্ পড়ছিলেন। তাঁর ঘোড়া তাঁর কাছেই বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়াটি লাফিয়ে উঠল। তিনি ঘোড়াটিকে চুপ করালেন। ঘোড়াটি চুপ হলো। তিনি আবার পড়তে লাগলেন। ঘোড়াটি আবার লাফিয়ে উঠল। তিনি ঘোড়াটিকে শান্ত করলেন। আবার পড়তে লাগলেন। আবার ঘোড়াটি লাফিয়ে উঠল। এবার তিনি থেমে গেলেন। কারণ তখন তাঁর ছেলে ইয়াহ্ইয়া ঘোড়াটির কাছাকাছি ছিল। তিনি ওর ক্ষতির আশংকা করলেন। তারপর তিনি তাকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে মাথা উঠালেন। দেখলেন, (আকাশে) সামিয়ানার মতো (কি একটা ঝুলছে)। আর এতে যেন অনেক বাতি রয়েছে। ভোরে উঠে তিনি তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালেন।

(ঘটনা) শুনে তিনি বললেন, তুমি পড়তে থাকলে না কেন ইবনু হুযায়র? তুমি পড়তে থাকলে না কেন? ইবনু হুযায়র বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার ঘোড়া ইয়াহ্ইয়া-কে মাড়িয়ে দেবার ভয় করছিলাম। সে ছিল ঘোড়াটির কাছাকাছি। তাই পড়া বন্ধ করে তার কাছে গেলাম। আবার আকাশের দিকে মাথা উঠালাম। দেখলাম, সামিয়ানার মতো, এতে প্রদীপের মতো কিছু আছে। তারপর আমি ওখান থেকে বের হলাম। আর তা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল।

(এসব) শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এসব কি ছিল জানো? উসায়দ বললেন, জি না, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, এটা ছিল মালায়িকাহর (ফেরেশতাগণের) দল। তাঁরা তোমার তিলাওয়াত শুনে তোমার নিকটবর্তী হচ্ছিলেন। তুমি যদি পড়তে থাকতে, ভোর পর্যন্ত তাঁরা ওখানে থাকতেন। লোকেরা তাঁদেরকে দেখতে পেত। মানুষ হতে তাঁরা লুকিয়ে থাকত না। (বুখারী, মুসলিম। তবে মতন বুখারীর। মুসলিম-এর বর্ণনায় রয়েছে, ’সামিয়ানা শূন্যে উঠে গেল,’ ’আমি বের হলাম’-এর স্থলে।)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ أُسَيْدَ بنَ حُضَيْرٍ قَالَ: بَيْنَمَا هُوَ يَقْرَأُ مِنَ اللَّيْلِ سُورَةَ الْبَقَرَةِ وَفَرَسُهُ مَرْبُوطَةٌ عِنْدَهُ إِذْ جَالَتِ الْفرس فَسكت فَسَكَتَتْ فَقَرَأَ فجالت الْفرس فَسكت فَسَكَتَتْ الْفرس ثُمَّ قَرَأَ فَجَالَتِ الْفَرَسُ فَانْصَرَفَ وَكَانَ ابْنُهُ يحيى قَرِيبا مِنْهَا فأشفق أَن تصيبه فَلَمَّا أَخَّرَهُ رَفْعَ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَإِذَا مِثْلُ الظُّلَّةِ فِيهَا أَمْثَالُ الْمَصَابِيحِ فَلَمَّا أَصْبَحَ حَدَّثَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «اقْرَأْ يَا ابْنَ حُضَيْرٍ اقْرَأْ يَا ابْنَ حُضَيْرٍ» . قَالَ فَأَشْفَقْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنْ تَطَأَ يحيى وَكَانَ مِنْهَا قَرِيبا فَرفعت رَأْسِي فَانْصَرَفْتُ إِلَيْهِ وَرَفَعْتُ رَأْسِي إِلَى السَّمَاءِ فَإِذَا مِثْلُ الظُّلَّةِ فِيهَا أَمْثَالُ الْمَصَابِيحِ فَخَرَجَتْ حَتَّى لَا أَرَاهَا قَالَ: «وَتَدْرِي مَا ذَاكَ؟» قَالَ لَا قَالَ: «تِلْكَ الْمَلَائِكَةُ دَنَتْ لِصَوْتِكَ وَلَوْ قَرَأْتَ لَأَصْبَحَتْ يَنْظُرُ النَّاسُ إِلَيْهَا لَا تَتَوَارَى مِنْهُمْ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَاللَّفْظُ لِلْبُخَارِيِّ وَفِي مُسْلِمٍ: «عرجت فِي الجو» بدل: «خرجت على صِيغَة الْمُتَكَلّم»

وعن ابي سعيد الخدري ان اسيد بن حضير قال: بينما هو يقرا من الليل سورة البقرة وفرسه مربوطة عنده اذ جالت الفرس فسكت فسكتت فقرا فجالت الفرس فسكت فسكتت الفرس ثم قرا فجالت الفرس فانصرف وكان ابنه يحيى قريبا منها فاشفق ان تصيبه فلما اخره رفع راسه الى السماء فاذا مثل الظلة فيها امثال المصابيح فلما اصبح حدث النبي صلى الله عليه وسلم فقال: «اقرا يا ابن حضير اقرا يا ابن حضير» . قال فاشفقت يا رسول الله ان تطا يحيى وكان منها قريبا فرفعت راسي فانصرفت اليه ورفعت راسي الى السماء فاذا مثل الظلة فيها امثال المصابيح فخرجت حتى لا اراها قال: «وتدري ما ذاك؟» قال لا قال: «تلك الملاىكة دنت لصوتك ولو قرات لاصبحت ينظر الناس اليها لا تتوارى منهم» . متفق عليه. واللفظ للبخاري وفي مسلم: «عرجت في الجو» بدل: «خرجت على صيغة المتكلم»

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে সূরা আল বাকারাহ্ তিলাওয়াত করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সামনে অন্য হাদীসে সূরা আল কাহাফ তিলাওয়াত করার কথা এসেছে। এর সমাধানে মুহাদ্দিস কিরমানী (রহঃ) বলেন, সম্ভবত উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) রাতে দু’টি সূরাই তিলাওয়াত করতেন। তিনি যখন রাতে কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন তার তিলাওয়াতে স্বর্গীয় সুর লহরী শুনতে আকাশ থেকে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) অবতীর্ণ হতো, তা দেখে তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করত। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত বন্ধ করলে মালায়িকাহ্’রা উপরে উঠে যেত ফলে ঘোড়াও শান্ত হয়ে যেত।

মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেছেন, আল কুরআনের আস্বাদনের (আনন্দে) ঘোড়া লাফালাফি শুরু করত, তিলাওয়াত বন্ধ করলে সে ঐ স্বাদ হারিয়ে নীরব হয়ে যেত।

সাহাবী উসায়দ  তিন তিনবার এটা প্রত্যক্ষ করলেন, অতঃপর শেষবার আকাশ পানে তাকিয়ে দেখেন সামিয়ানার ন্যায় যাতে রয়েছে অসংখ্য বাতি। কোন কোন বর্ণনায় সামিয়ানার পরিবর্তে মেঘের আবরণ বা ছায়ার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। ইবনুল বাত্ত্বাল (রহঃ) বলেন, দৃশ্যত ঐ মেঘের আবরণের ন্যায় যা ছিল মূলত তা ছিল সাকীনাহ্ এবং ওর মধ্যে ছিল মালাক (ফেরেশতা)।

তিলাওয়াত বন্ধ না করলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বাড়ি ছেড়ে চলে যেতেন না, আর ঐ বাড়িতে সাকীনাহ্ বর্ষণ হতেই থাকতো।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১৭-[৯] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সূরা ’আল কাহাফ’ পড়ছিল। দু’টি রশি দিয়ে তার ঘোড়া পাশেই বাঁধা ছিল। এমন সময় এক খণ্ড মেঘ তাকে ঢেকে নিলো। মেঘখণ্ডটি ধীরে ধীরে তার নিকটতর হতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি লাফাতে লাগল। সে ভোরে উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ ঘটনা তাঁকে জানাল। (তিনি ঘটনা শুনে) বললেন, এটা ছিল রহমত, যা কুরআনের কারণে নেমে এসেছিল। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُورَةَ الْكَهْفِ وَإِلَى جَانِبِهِ حِصَانٌ مَرْبُوطٌ بِشَطَنَيْنِ فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدْنُو وَتَدْنُو وَجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ: «تِلْكَ السكينَة تنزلت بِالْقُرْآنِ»

وعن البراء بن عازب قال: كان رجل يقرا سورة الكهف والى جانبه حصان مربوط بشطنين فتغشته سحابة فجعلت تدنو وتدنو وجعل فرسه ينفر فلما اصبح اتى النبي صلى الله عليه وسلم فذكر ذلك له فقال: «تلك السكينة تنزلت بالقران»

ব্যাখ্যা: (كَانَ رَجُلٌ) কেউ বলেনঃ তিনি হলেন আস্ওয়াদ বিন হুযায়র (রাঃ) যেমনটি তার ইতোপূর্বে বর্ণিত হাদীসে অতিবাহিত হয়েছে। তবে সেখানে তিনি সূরা আল বাকারাহ্ পাঠ করেছিলেন। আর এখানে তিনি সূরা আল কাহাফ পাঠ করেছেন।

হাফেয ইবনু হাজার বলেনঃ এই ঘটনাটির সাদৃশ্যতা রয়েছে। সাবিত বিন কায়স বিন সাম্মাস-এর ঘটনার সাথে। তবে সেটা ঘটেছিল সূরা আল বাকারাহ্ পাঠকালে। ইমাম আবূ দাঊদ-এর মুরসাল রিওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সম্ভবত আস্ওয়াদ বিন হুযায়র সূরা আল বাকারাহ্ পাঠ করেছিলেন। অতঃপর আস্ওয়াদ বিন হুযায়র-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ আমি সূরা আল বাকারাহ্ পাঠ করেছিলাম। সম্ভবত তিনি সূরা আল বাকারাহ্ ও আল কাহাফ উভয়টি পাঠ করেছিলেন; অথবা দু’টোর যে কোন একটি পাঠ করেছিলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১৮-[১০] আবূ সা’ঈদ ইবনু মু’আল্লা (রাঃ) বলেন, মসজিদে আমি সালাত আদায় করছিলাম। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন। সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি উত্তর দিলাম না। এরপর আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি সালাত আদায় করছিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ কি এ কথা বলেননি যে, যখন আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল ডাকেন তখন তাঁদের ডাকের জবাব দাও? অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মাসজিদ হতে বের হবার আগে আমি কি তোমাকে (পড়ার জন্য) শ্রেষ্ঠতর সূরাটি শিখাব না?

এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার হাত ধরলেন। তারপর আমরা মাসজিদ হতে বের হতে চাইলে, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো বলেছিলেন, ’’আমি কি তোমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠ সূরা শিখাব না?’’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটি হলো সূরা ’’আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন’’। এ সূরাই (পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত) সে সাতটি আয়াত (সাব্’উল মাসানী) ও মহা কুরআন, যা আমাকে দেয়া হয়েছে। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ بْنِ الْمُعَلَّى قَالَ: كُنْتُ أُصَلِّي فِي الْمَسْجِدِ فَدَعَانِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فَلم أجبه حَتَّى صليت ثُمَّ أَتَيْتُهُ. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي كنت أُصَلِّي فَقَالَ أَلَمْ يَقُلِ اللَّهُ (اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دعَاكُمْ)
ثمَّ قَالَ لي: «أَلَا أُعَلِّمُكَ أَعْظَمَ سُورَةٍ فِي الْقُرْآنِ قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ مِنَ الْمَسْجِدِ» . فَأَخَذَ بِيَدِي فَلَمَّا أَرَادَ أَن يخرج قلت لَهُ ألم تقل لأعلمنك سُورَة هِيَ أعظم سُورَةً مِنَ الْقُرْآنِ قَالَ: (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ)
هِيَ السَّبْعُ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنُ الْعَظِيمُ الَّذِي أُوتِيتهُ . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي سعيد بن المعلى قال: كنت اصلي في المسجد فدعاني النبي صلى الله عليه وسلم فلم اجبه حتى صليت ثم اتيته. فقلت يا رسول الله اني كنت اصلي فقال الم يقل الله (استجيبوا لله وللرسول اذا دعاكم) ثم قال لي: «الا اعلمك اعظم سورة في القران قبل ان تخرج من المسجد» . فاخذ بيدي فلما اراد ان يخرج قلت له الم تقل لاعلمنك سورة هي اعظم سورة من القران قال: (الحمد لله رب العالمين) هي السبع المثاني والقران العظيم الذي اوتيته . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: বর্ণনাকারী সাহাবীর এ ঘটনাটি ছিল মসজিদে নাবাবীতে। সালাতরত অবস্থায় তাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহবান করলে, তিনি তার ডাকে কোন সাড়া দেননি, কারণ সালাতের মধ্যে কথা বলা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করেছেন এবং সালাত ভঙ্গ করতেও নিষেধ করেছেন। আর তিনি এ কথাও ভেবেছেন যে, আল্লাহ ও তার রসূলের ডাকে সাড়া দেয়ার এ হুকুম সালাতের বাইরে।

আল্লাহ ও তার রসূলের আহবানে সাড়া দেয়ার অর্থ হলো তার আনুগত্য করা এবং হুকুম পালন করা।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরাটি শিক্ষা দানের কথা বলেছেন। এর দ্বারা উত্তমটি বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা অধিক সাওয়াবের কথা বুঝানো হয়েছে।

ইবনুত্ তীন বলেন, বড় সূরার অর্থ হলো, এর সাওয়াব অন্য যে কোন সূরা হতে বেশি। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, এটা ঐ সূরার বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, যা অন্য কোন সূরার মধ্যে নেই। আর এ সূরায় রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা ও অর্থ। এর দ্বারা কুরআনের এক অংশ অপর অংশের উপর ফাযীলাত বা মর্যাদার কথাও স্বীকৃত।

মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, সূরা ফাতিহাকে আল কুরআনের বড় সূরা বলার কারণ হলো এতে রয়েছে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা, তার আদেশ নিষেধ পালনের অঙ্গীকার ও তারই জন্য ‘ইবাদাতকে খালেসভাবে পেশ করার স্বীকৃতি। সৌভাগ্যের বস্ত্ত তার কাছেই চাওয়া এবং দুর্ভাগ্যের অবস্থান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার মহান শিক্ষা। আল কুরআনের সার্বিক মৌলিক আলোচনা এ সূরাতেই নিহীত, সুতরাং এটি সবচেয়ে বড় সূরা।

এ সূরাকে সাব্‘উল মাসানী বলা হয়েছে, (সূরা আল হিজর-এর ৮৭ নং দেখুন)। এর অর্থ পুনঃপঠিতব্য সাত আয়াত বিশিষ্ট সূরা, যেহেতু এ সূরাটি প্রতি রাক্‘আতেই প্রতি সালাতেই পাঠ করা হয়। অথবা এ সূরাটি একের পর এক, অর্থাৎ- দু’বার নাযিল হয়েছে, তাই এর নাম সাব্‘উল মাসানী।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১১৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১৯-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না। (এগুলোতে কুরআন তিলাওয়াত করো) কারণ যেসব ঘরে সূরা আল বাকারাহ্ তিলাওয়াত করা হয় সে ঘর হতে শয়তান ভেগে যায়। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَجْعَلُوا بِيُوتَكُمْ مَقَابِرَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ من الْبَيْت الَّذِي يقْرَأ فِيهِ سُورَة الْبَقَرَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تجعلوا بيوتكم مقابر ان الشيطان ينفر من البيت الذي يقرا فيه سورة البقرة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: ‘‘তোমাদের ঘরগুলোকে কবর স্থানে পরিণত করো না’’ এর অর্থ হলো কবরগুলো যেমন সালাত, জিকির-আযকার ‘ইবাদাতহীন জায়গা, তোমাদের ঘর বাড়িগুলোতে নফল সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির আযকার ইত্যাদি আদায় না করে ঐ রূপ কবরস্থানের ন্যায় করে রেখ না। বরং বাড়িতে নিয়মিত নফল সালাত কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি আদায়ের মাধ্যমে ‘ইবাদাতের স্থানে পরিণত কর।

এ হাদীসে বলা হয়েছে সূরা আল বাকারাহ্ যে ঘরে তিলাওয়াত করা হয় সে ঘর থেকে শয়তান পালায়। তিরমিযীর এক বর্ণনায় এসেছে, শয়তান সে ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।

ইবনু হিব্বান-এর এক বর্ণনায় এসেছে, রাতে যে ঘরে সূরা আল বাকারাহ্ তিলাওয়াত করা হয় তিন রাত পর্যন্ত শয়তান সে ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। আর দিনে তিলাওয়াত করলে তিন দিন পর্যন্ত শয়তান সে ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।

সূরা আল বাকারাহ্’র এ বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফাযীলাত এর বৃহত্তের কারণে এবং এ সূরার মধ্যে আল্লাহর নামসমূহ বেশি ব্যবহার হওয়ার কারণে। আর এ সূরাতে দীনের আহকাম বেশি আছে সে কারণেও। বলা হয় এতে এক হাজার আদেশ এক হাজার নিষেধ, এক হাজার হুকুম এবং এক হাজার খবর রয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২০-[১২] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড়। কারণ কুরআন পাঠ কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে। তোমরা দু’ উজ্জ্বল সূরা আল বাকারাহ্ ও আ-লি ’ইমরান পড়বে। কেননা কিয়ামতের দিন এ সূরা দু’টি মেঘখণ্ড অথবা দু’টি সামিয়ানা অথবা দু’টি পক্ষ প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে। এ দু’ সূরার পাঠকদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। বিশেষ করে তোমরা সূরা আল বাকারাহ্ পড়বে। কারণ সূরা আল বাকারাহ্ পড়া বারাকাত আর তা না পড়া আক্ষেপ। এ সূরা দু’টি পড়তে পারবে না অলস বেকুবরা। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ اقْرَءُوا الزَّهْرَاوَيْنِ الْبَقَرَةَ وَسُورَةَ آلِ عِمْرَانَ فَإِنَّهُمَا تَأْتِيَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا غَيَايَتَانِ أَو فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ تُحَاجَّانِ عَنْ أَصْحَابِهِمَا اقْرَءُوا سُورَةَ الْبَقَرَةِ فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ وَلَا تستطيعها البطلة» . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي امامة قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «اقرءوا القران فانه ياتي يوم القيامة شفيعا لاصحابه اقرءوا الزهراوين البقرة وسورة ال عمران فانهما تاتيان يوم القيامة كانهما غمامتان او كانهما غيايتان او فرقان من طير صواف تحاجان عن اصحابهما اقرءوا سورة البقرة فان اخذها بركة وتركها حسرة ولا تستطيعها البطلة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: ‘‘আমরা কুরআন পড়’’ এর অর্থ নিয়মিত তিলাওয়াত কর। কিয়ামতের দিন কুরআন এমন একটি রূপ ধারণ করে তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসেবে আসবে যা লোকেরা প্রকাশ্যে দেখবে, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ‘আমলগুলোকে আকার আকৃতি দিয়ে মীযানের পাল্লায় ওযন দিবেন। আল্লাহ তো সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল। এ জাতীয় কার্যাবলীর ব্যাপারে মু’মিনদের ঈমান আনাই কেবল দায়িত্ব।

এ দু’টি সূরাকে উজ্জ্বল নক্ষত্রের সাথে তুলনা করা হয়েছে এজন্য যে, এর হিদায়াত এবং সাওয়াব খুব বেশি ও বড়। যেন তা আল্লাহর নিকট অন্যান্য সূরার তুলনায় সমগ্র তারকার মধ্যে আকাশের দু’টি চন্দ্রের ন্যায়। এ দু’টি সূরার ফাযীলাত এজন্য বেশি যে, এতে শার‘ঈতের আহকামের নূর এবং আল্লাহ তা‘আলার আসমায়ে হুসনার উল্লেখ বেশি রয়েছে। কিয়ামতের দিন এ সূরা দু’টি তার তিলাওয়াতকারীর মাথার উপর মেঘের ন্যায় অথবা আবরের ন্যায় অথবা পাখির পাখার ন্যায় ছায়া বিস্তার করে থাকবে।

এ দু’টি সূরা বান্দার পক্ষে আল্লাহর সামনে জেরা করবে, অর্থাৎ- সুপারিশ করবে এবং তাকে আগুন থেকে বাধা প্রদান করবে। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর সামনে এ সূরা দু’টির জেরা করার অর্থ হলো তিলাওয়াতকারীর পক্ষে হুজ্জত কায়িম করা।

এ দু’টি সূরাকে পড়ার জন্য বিশেষভাবে তাকীদ করা হয়েছে, কারণ এতে রয়েছে অপরিমিত বারাকাত, পক্ষান্তরে তা বর্জনে রয়েছে অপরিমিত ক্ষতি এবং লোকসান, যা হবে কিয়ামতের দিন ভীষণ আফসোসের কারণ। নির্বোধ অলস ব্যক্তিরাই কেবল এর তিলাওয়াত বর্জন করে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২১-[১৩] নাওয়াস ইবনু সাম্’আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুরআন ও কুরআন পাঠকদের যারা কুরআন অনুযায়ী ’আমল করত (তাদের) কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে। তাদের সামনে দু’টি মেঘখণ্ড অথবা দু’টি কালো ছায়ারূপে থাকবে সূরা আল বাকারাহ্ ও সূরা আ-লি ’ইমরান। এদের মাঝখানে থাকবে দীপ্তি। অথবা থাকবে প্রসারিত- পালক বিশিষ্ট পাখির দু’টি ঝাঁক। তারা আল্লাহর নিকট কুরআন পাঠকের পক্ষে সুপারিশ করবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن النواس بن سمْعَان قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «يُؤْتَى بِالْقُرْآنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَهْلِهِ الَّذِينَ كَانُوا يَعْمَلُونَ بِهِ تَقْدُمُهُ سُورَةُ الْبَقَرَةِ وَآلُ عِمْرَانَ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ ظُلَّتَانِ سَوْدَاوَانِ بَيْنَهُمَا شَرْقٌ أَوْ كَأَنَّهُمَا فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ تحاجان عَن صَاحبهمَا» . رَوَاهُ مُسلم

وعن النواس بن سمعان قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «يوتى بالقران يوم القيامة واهله الذين كانوا يعملون به تقدمه سورة البقرة وال عمران كانهما غمامتان او ظلتان سوداوان بينهما شرق او كانهما فرقان من طير صواف تحاجان عن صاحبهما» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যার প্রায় অনুরূপই। কুরআন তিলাওয়াতকারী এবং তার ওপর ‘আমলকারীর জন্য এ মর্যাদা, কিন্তু যারা শুধু তিলাওয়াত করেছে, কিন্তু কুরআনের বিধান মতো ‘আমল করেনি সে আহলে কুরআনরূপে বিবেচিত হবে না, আর কুরআন তার জন্য সুপারিশকারীও হবে না, বরং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হবে। মানুষ ‘আমলের যেমন রূপ-অবয়ব ওযনে দেখতে পবে তেমনি আল কুরআনের সূরাগুলোরও রূপ-অবয়ব প্রত্যক্ষ করতে পারবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২২-[১৪] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবূল মুনযির! তুমি কি বলতে পারো তোমার জানা আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই ভাল জানেন। (এরপর) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেন, হে আবূল মুনযির! তুমি বলতে পারো কি তোমার জানা আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি শ্রেষ্ঠতর? এবার আমি বললাম, ’’আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়ূম।’’ উবাই বলেন, এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার বুকে হাত মেরে বললেন, হে আবূল মুনযির! জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তোমার জন্য মুবারক হোক। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا الْمُنْذِرِ أَتَدْرِي أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ مَعَك أعظم؟» . قَالَ: قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ: «يَا أَبَا الْمُنْذِرِ أَتَدْرِي أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ مَعَك أعظم؟» . قَالَ: قُلْتُ (اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ القيوم)
قَالَ فَضرب فِي صَدْرِي وَقَالَ: «وَالله لِيَهنك الْعلم أَبَا الْمُنْذر» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي بن كعب قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا ابا المنذر اتدري اي اية من كتاب الله معك اعظم؟» . قال: قلت الله ورسوله اعلم قال: «يا ابا المنذر اتدري اي اية من كتاب الله معك اعظم؟» . قال: قلت (الله لا اله الا هو الحي القيوم) قال فضرب في صدري وقال: «والله ليهنك العلم ابا المنذر» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলেন তোমার জানা কোন্ আয়াতটি কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত? তিনি উত্তরে দিলেন, আয়াতুল কুরসী।

উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর আল কুরআনের সবগুলো আয়াত-ই মুখস্থ ছিল, অর্থাৎ- তিনি পূর্ণ কুরআনের হাফেয ছিলেন। সুতরাং প্রশ্ন এবং উত্তরের অর্থ হলো আয়াতুল কুরসী সমগ্র কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত। ইসহাক ইবনু রহ্ওয়াই (রহঃ)-সহ কতিপয় মুহাক্কিক ‘আলিম বলেন, আয়াতুল কুরসী যেহেতু শ্রেষ্ঠ আয়াত; সুতরাং তার তিলাওয়াতকারীর সাওয়াব ও আজুরাও হবে সবচেয়ে বেশি এবং শ্রেষ্ঠ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২৩-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ফিতরার মাল পাহারায় নিযুক্ত করলেন। এমন সময় আমার নিকট এক ব্যক্তি এসেই অঞ্জলি ভরে খাদ্যশস্য উঠাতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম ও বললাম, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলল, আমি একজন অভাবী লোক। আমার অনেক পোষ্য। আমি নিদারুণ কষ্টে আছি। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তখন তাকে ছেড়ে দিলাম। ভোরে আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে) গেলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! তোমার হাতে গত রাতে বন্দী লোকটির কী অবস্থা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! বন্দীটি তার নিদারুণ অভাব ও বহু পোষ্যের অভিযোগ করল। তাই আমি তার ওপর দয়া করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, শুনো! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে।

[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন] আমি রসূলের বলার কারণে বুঝলাম, অবশ্যই সে আবার আসবে। আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। (ঠিকই) সে আবার এলো। দু’ হাতের কোষ ভরে খাদ্যশস্য উঠাতে লাগল এবং আমি তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, তুমি আমাকে এবারও ছেড়ে দাও। আমি বড্ড অভাবী মানুষ। আমার পোষ্যও অনেক। আমি আর আসব না। এবারও আমি তার ওপর দয়া করলাম। ছেড়ে দিলাম। ভোরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবূ হুরায়রাহ্! তোমরা বন্দীর খবর কী? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সে খুবই অভাবী। বহু পোষ্যের অভিযোগ করল। তাই আমি তার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, শুনো তোমার কাছে সে মিথ্যা বলেছে। আবারও যে আসবে।

(বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন,) আমি বুঝলাম, সে আবারও আসবে। তাই আমি তার অপেক্ষায় থেকে তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, তোমাকে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। এটা তিনবারের শেষবার। তুমি ওয়া’দা করেছিলে আর আসবে না। এরপরও তুমি এসেছ। সে বলল, এবারও যদি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাব, যে বাক্যের দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন। তুমি শোবার জন্য বিছানায় গেলে আয়াতুল কুরসী পড়বে, ’’আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম’’ আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে সব সময় তোমার জন্য একজন রক্ষী থাকবে, ভোর হওয়া পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান ঘেঁষতে পারবে না। এবারও তাকে আমি ছেড়ে দিলাম।

ভোরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার বন্দীর কী হলো? আমি বললাম (ইয়া রসূলাল্লাহ!), সে বলল, সে আমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শুনো! এবার সে তোমার কাছে সত্য কথা বলেছে অথচ সে খুবই মিথ্যুক। তুমি কি জানো, তুমি এ তিন রাত কার সাথে কথা বলেছ? আমি বললাম, জি-না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ ছিল একটা শয়তান। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: وَكَّلَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ فَأَتَانِي آتٍ فَجَعَلَ يَحْثُو من الطَّعَام فَأَخَذته وَقلت وَالله لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيَّ عِيَالٌ وَلِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ قَالَ فَخَلَّيْتُ عَنْهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا هُرَيْرَة مَا فعل أسيرك البارحة» . قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً وَعِيَالًا فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ قَالَ: «أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ وَسَيَعُودُ» . فَعَرَفْتُ أَنَّهُ سَيَعُودُ لِقَوْلِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَّهُ سيعود» . فَرَصَدْتُهُ فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ فَقُلْتُ: لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ دَعْنِي فَإِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيَّ عِيَالٌ لَا أَعُودُ فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ؟» قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً وَعِيَالًا فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ قَالَ: «أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذبك وَسَيَعُودُ» . فرصدته الثَّالِثَة فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ فَقُلْتُ لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُول الله وَهَذَا آخِرُ ثَلَاثِ مَرَّاتٍ إِنَّكَ تَزْعُمُ لَا تَعُودُ ثُمَّ تَعُودُ قَالَ دَعْنِي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ ينفعك الله بهَا قلت مَا هُوَ قَالَ إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ (اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ)
حَتَّى تَخْتِمَ الْآيَةَ فَإِنَّكَ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ من الله حَافظ وَلَا يقربنك شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ؟» قُلْتُ: زَعَمَ أَنَّهُ يُعَلِّمُنِي كَلِمَات يَنْفَعنِي الله بهَا فخليت سبيلهقال النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «أما إِنَّه قد صدقك وَهُوَ كذوب تعلم من تخاطب مُنْذُ ثَلَاث لَيَال» . يَا أَبَا هُرَيْرَة قَالَ لَا قَالَ: «ذَاك شَيْطَان» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: وكلني رسول الله صلى الله عليه وسلم بحفظ زكاة رمضان فاتاني ات فجعل يحثو من الطعام فاخذته وقلت والله لارفعنك الى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اني محتاج وعلي عيال ولي حاجة شديدة قال فخليت عنه فاصبحت فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «يا ابا هريرة ما فعل اسيرك البارحة» . قال قلت يا رسول الله شكا حاجة شديدة وعيالا فرحمته فخليت سبيله قال: «اما انه قد كذبك وسيعود» . فعرفت انه سيعود لقول رسول الله صلى الله عليه وسلم: «انه سيعود» . فرصدته فجاء يحثو من الطعام فاخذته فقلت: لارفعنك الى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال دعني فاني محتاج وعلي عيال لا اعود فرحمته فخليت سبيله فاصبحت فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا ابا هريرة ما فعل اسيرك؟» قلت يا رسول الله شكا حاجة شديدة وعيالا فرحمته فخليت سبيله قال: «اما انه قد كذبك وسيعود» . فرصدته الثالثة فجاء يحثو من الطعام فاخذته فقلت لارفعنك الى رسول الله وهذا اخر ثلاث مرات انك تزعم لا تعود ثم تعود قال دعني اعلمك كلمات ينفعك الله بها قلت ما هو قال اذا اويت الى فراشك فاقرا اية الكرسي (الله لا اله الا هو الحي القيوم) حتى تختم الاية فانك لن يزال عليك من الله حافظ ولا يقربنك شيطان حتى تصبح فخليت سبيله فاصبحت فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما فعل اسيرك؟» قلت: زعم انه يعلمني كلمات ينفعني الله بها فخليت سبيلهقال النبي صلى الله عليه وسلم: «اما انه قد صدقك وهو كذوب تعلم من تخاطب منذ ثلاث ليال» . يا ابا هريرة قال لا قال: «ذاك شيطان» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: চোর ছিল শয়তান সে সর্বদাই মিথ্যা কথা বলে থাকে কিন্তু আয়াতুল কুরসীর ফাযীলাত সংক্রান্ত বিষয়ে সে সত্য বলেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শয্যাগ্রহণের সময় আয়াতুল কুরসী পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং পার্শ্ববর্তী ঘরসমূহ নিরাপদে রাখেন। এটা বায়হাক্বীর বর্ণনা, ত্ববারানীর বর্ণনায় আয়াতুল কুরসীর সাথে সূরা আল বাকারাহ্’র শেষাংশের কথা, অর্থাৎ- আ-মানার রসূলু .....থেকে শেষ পর্যন্ত এর কথাও এসেছে।

এ সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হিফাযাতকারী নিযুক্ত হন, শয়তান তার নিকটেও আসতে পারে না। সহীহুল বুখারীতে উল্লেখ আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গতরাতে শয়তান আমার ওপর চড়াও হয়েছিল, আমি তাকে ধরে ফেলেছিলাম তাকে এই খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার ভাই সুলায়মান (আঃ)-এর দু‘আর কথা মনে করে তা আর করিনি। তিনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে এমন এক রাজত্ব দাও আমার পরে কারো পক্ষে যেন তা করা সম্ভব না হয়।

আল্লাহ আরো বলেন, আমি বাতাসকে তার অনুগত করে দিয়েছিলাম। এখন প্রশ্ন হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর শয়তান ধরা কিভাবে সম্ভব হলো? এর উত্তর এই যে, সুলায়মান (আঃ) শয়তানের আসলরূপে ধরতেন এবং দেখতেন, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) শয়তান ধরেছিলেন কিন্তু সেটা ছিল মানুষের আকৃতিতে, তার নিজস্ব আকৃতিতে নয়। সুতরাং সুলায়মান (আঃ)-এর দু‘আ ভঙ্গ হয়নি। এ হাদীস থেকে অনেক বিষয় শিক্ষা লাভ করা যায়। যেমনঃ

১. শয়তান মু’মিনের উপকারী বিষয় জানে তবে হিকমাতের বিষয় হলো এই যে, ফাসিক ফাজির তা শিক্ষা করে, তা থেকে উপকার গ্রহণ করতে পারে না। আর মু’মিন তার নিকট থেকে শিখে উপকার গ্রহণ করতে পারেন।

২. কাফিরের কতিপয় কথা বিশ্বাসযোগ্য। তবে এ বিশ্বাসযোগ্য কথা বলেই সে মু’মিন হয়ে যায় না। আর শয়তানের অভ্যাস হলো মিথ্যা বলা। মিথ্যাবাদী কখনো সত্য কথা বলে থাকে।

৩. শয়তান (জিন্) অন্যরূপ ধরলে তাকে দেখা সম্ভব।

৪. কোন সম্পদ রক্ষার জন্য নিযুক্ত রক্ষককে উকীল বলা যাবে।

৫. জিন্ মানুষের খাদ্য খায়।

৬. জিনেরাও চুরি করে এবং ধোঁকা দেয়।

তাছাড়ও এ হাদীসে আয়াতুল কুরসীর ফাযীলাত বর্ণিত হয়েছে, সদাকাতুল ফিতর ঈদের আগে উত্তোলনের বৈধতা প্রমাণিত হয়েছে এবং তা রক্ষণের জন্য একজন উকীল নিযুক্ত করার বৈধতাও স্বীকৃত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২৪-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জিবরীল আমীন (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসে ছিলেন। এ সময় উপরের দিক হতে দরজা খোলার শব্দ [জিবরীল (আঃ)] শুনলেন। তিনি উপরের দিকে মাথা উঠালেন এবং বললেন, আসমানের এ দরজাটি আজ খোলা হলো। এর আগে আর কখনো তা খোলা হয়নি। (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ) এ দরজা দিয়ে একজন মালাক (ফেরেশতা) নামলেন। তখন জিবরীল (আঃ) বললেন, যে মালাক (আজ) জমিনে নামলেন, আজকে ছাড়া আর কখনো তিনি জমিনে নামেননি। (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,) তিনি সালাম করলেন। তারপর আমাকে বললেন, আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। এটা আপনার আগে আর কোন নবীকে দেয়া হয়নি। (তাহলো) সূরা আল ফাতিহাহ্ ও সূরা আল বাকারাহ্’র শেষাংশ। আপনি এ দু’টি সূরার যে কোন বাক্যই পাঠ করুন না কেন নিশ্চয়ই আপনাকে তা দেয়া হবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: بَيْنَمَا جِبْرِيلُ قَاعِدٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ نَقِيضًا مِنْ فَوْقِهِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: «هَذَا بَابٌ مِنَ السَّمَاءِ فُتِحَ الْيَوْمَ لَمْ يُفْتَحْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ فَنَزَلَ مِنْهُ مَلَكٌ فَقَالَ هَذَا مَلَكٌ نَزَلَ إِلَى الْأَرْضِ لَمْ يَنْزِلْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ فَسَلَّمَ وَقَالَ أَبْشِرْ بِنُورَيْنِ أُوتِيتَهُمَا لَمْ يُؤْتَهُمَا نَبِيٌّ قَبْلَكَ فَاتِحَةُ الْكِتَابِ وَخَوَاتِيمُ سُورَةِ الْبَقَرَةِ لَنْ تَقْرَأَ بِحَرْفٍ مِنْهُمَا إِلَّا أَعْطيته» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عباس قال: بينما جبريل قاعد عند النبي صلى الله عليه وسلم سمع نقيضا من فوقه فرفع راسه فقال: «هذا باب من السماء فتح اليوم لم يفتح قط الا اليوم فنزل منه ملك فقال هذا ملك نزل الى الارض لم ينزل قط الا اليوم فسلم وقال ابشر بنورين اوتيتهما لم يوتهما نبي قبلك فاتحة الكتاب وخواتيم سورة البقرة لن تقرا بحرف منهما الا اعطيته» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: সূরা আল ফাতিহাহ্ ও সূরা আল বাকারাহ্’র শেষ অংশ নিয়ে মালাকের অবতরণ ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ে। কেননা সূরা আল ফাতিহাহ্ একবার মক্কায় নাযিল হয়েছিল এবং এ সময় তা জিবরীলের মাধ্যমেই নাযিল হয়েছিল। পরবর্তীবার অন্য মালাকের মাধ্যমে তা নাযিল ছিল তার সাওয়াব সহ নাযিল হওয়া। এ নাযিলের সময় জিবরীল (আঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছেই ছিলেন। এ নাযিলের সময় জিবরীলকে সম্পৃক্ত করা হলে তার অর্থ হবে তিনি এ সূরা ও আয়াতের ফাযীলাত নিয়ে অন্য মালাকের আগমনের সংবাদ নিয়ে এবং তার তা‘লিমের জন্য আগেই এসেছিলেন। সুতরাং এতে তিনিও যেন অংশীদার।

সূরা ফাতিহাহ্ এবং সূরা বাকারাহ্’র শেষ অংশকে দু’টি নূর বলে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে, কিয়ামতের দিন এ দু’টি তার পাঠকের জন্য নূর হয়ে তার সামনে দিয়ে চলতে থাকবে। অথবা এর অর্থ এ দু’টি সূরা ও আয়াত দু’টি তাকে সিরাতে মুস্তাক্বীমের পথ দেখিয়ে থাকে এবং হিদায়াত দান করে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২৫-[১৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা আল বাকারার শেষ দু’টি আয়াত, অর্থাৎ- ’আ-মানার রসূলু’ হতে শেষ পর্যন্ত পড়ে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْآيَتَانِ مِنْ آخَرِ سُورَة الْبَقَرَة من قَرَأَ بهما فِي لَيْلَة كفتاه»

وعن ابي مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الايتان من اخر سورة البقرة من قرا بهما في ليلة كفتاه»

ব্যাখ্যা: সূরা আল বাকারাহ্’র ঐ মহিমান্বিত আয়াত দু’টি হলো আ-মানার্ রসূলু থেকে শেষ পর্যন্ত। রাতে এ দু’টি আয়াত পাঠ করে কেউ ঘুমালে রাতের তাহাজ্জুদে কুরআন তিলাওয়াত অথবা সালাতের বাহিরে কুরআন তিলাওয়াতের যে হক বান্দার ওপর ছিল তা আদায় হয়ে যাবে এবং তার ফাযীলাত সে পাবে। কেউ বলেছেন, রাতে শয়তানের অনিষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য তাই যথেষ্ট হবে। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো সে জিন্-ইনসানের সকল অনিষ্টতা থেকে এবং রাতের সকল প্রকার ক্ষতি ও বিপদ থেকে রক্ষার জন্য তাই যথেষ্ট হবে। মনীষীদের প্রত্যেকের এ ব্যাখ্যাগুলোর অনুকূলে হাদীস রয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২৬-[১৮] আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَفِظَ عشر آيَات من أول سُورَة الْكَهْف عصم من فتْنَة الدَّجَّال» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي الدرداء قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من حفظ عشر ايات من اول سورة الكهف عصم من فتنة الدجال» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থকারী দাজ্জাল থেকে নিরাপদ থাকবে, এর অর্থ হলোঃ সে দাজ্জালের ফিৎনা ও অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, কেউ কেউ বলেছেন, এর শুরুতে আযায়িব বা বিস্ময়কর বিষয়সমূহ এবং আয়াত বা আল্লাহর বিশেষ নিদর্শনের কথা বিধৃত হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি ঐগুলো নিয়ে গভীর চিন্তা-গবেষণা করবে সে দাজ্জালের ফিৎনায় পতিত হবে না।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, (এ সূরায় বর্ণিত বিস্ময়কর ঘটনা) যুবকেরা যেমন স্বেচ্ছাচার যালিম বাদশাহের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা (ঐ দশ আয়াত) পাঠকারীকে যালিমের হাত থেকে অথবা সৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন।

সহীহ মুসলিম ও সুনান আবী দাঊদ-এর বর্ণনায় সূরা কাহাফ-এর প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিরমিযীর বর্ণনায় তিন আয়াত পড়ার কথা বলা হয়েছে। দুই রকম বর্ণনার মাঝে সমাধান এভাবে দেয়া যায় যে, দশ আয়াত সংক্রান্ত হাদীসটি পরে বর্ণিত হাদীস। সুতরাং এটার উপর ‘আমল করতে হবে। যে দশের ‘আমল করবে সে তিনের ফাযীলাত অবশ্যই পাবে। অথবা তিনের হাদীস-ই পরের হাদীস, তিন আয়াত পাঠ করে যদি নিরাপদ হয়ে যায় তাহলে দশ আয়াত পাঠের কোন প্রয়োজন নেই। আবার কেউ বলেছেন, দশ আয়াতের হাদীস হলো মুখস্থ করার ক্ষেত্রে আর তিন আয়াতের হাদীস হলো দেখে দেখে পাঠের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, দশ আয়াত আর তিন আয়াতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। বেশি সংখ্যার উপর ‘আমল করাই আবশ্যক। সুতরাং প্রথমের দশ আয়াত পাঠ করবে। আরেকটি বিষয় জ্ঞাতব্য যে, কোন হাদীসে সূরা আল কাহাফ-এর শেষ দশ আয়াতের কথা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমাদ, মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসায়ী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

উভয় হাদীসের সমন্বয়ে ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, তিলাওয়াতকারী সূরার শুরু থেকে দশ আয়াত এবং শেষ থেকে দশ আয়াত পাঠ করবে। আর যে ব্যক্তি চায় সকল হাদীসের উপর তার ‘আমল হোক সে যেন পূর্ণ সূরাটাই তিলাওয়াত করে নেয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২৭-[১৯] আবূ দারদা (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াতে সক্ষম? সাহাবীগণ বললেন, প্রতি রাতে কি করে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন পড়া যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيَعْجَزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ فِي لَيْلَةٍ ثُلُثَ الْقُرْآنِ؟» قَالُوا: وَكَيْفَ يَقْرَأُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ؟ قَالَ: «قُلْ هُوَ الله أحد» يعدل ثلث الْقُرْآن . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي الدرداء قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ايعجز احدكم ان يقرا في ليلة ثلث القران؟» قالوا: وكيف يقرا ثلث القران؟ قال: «قل هو الله احد» يعدل ثلث القران . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান- এ কথার ব্যাখ্যায় মনীষীগণ বিভিন্ন মতামত করেছেন। একদল বলেন, কুরআনে তিনটি বিষয় আলোচিত হয়েছেঃ

১. আহকাম ২. ঘটনা বা ইতিহাস ৩. তাওহীদ বা একত্ববাদ। সূরা ইখলাস তৃতীয়টি প্রকাশে শ্রেষ্ঠ সূরা। সুতরাং এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। এ কথার সহায়ক সহীহ মুসলিমের বর্ণনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা পূর্ণ কুরআনকে তিন অংশে বিভক্ত করেছেন, কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ পুরো কুরআনের তিন ভাগের একভাগ।

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এ সূরার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহের এমন দু’টি নাম ব্যবহার হয়েছে যার মধ্যে তার সকল গুণাবলীর পূর্ণতা নিহীত রয়েছে। অন্য কোন সূরার মধ্যে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। এ দু’টি সিফাতে কামাল বা পূর্ণগুণবাচক নাম হলো আল আহাদ এবং আস্ সামাদ।

আল্লাহ তা‘আলার এ দু’টি গুণবাচক নাম তার পবিত্র সত্তার একত্বের অর্থ প্রকাশক এবং তার চূড়ান্ত বিশেষণ। এ বর্ণনা এ অনুভূতি জাগ্রত করে যে, এই একত্বের গুণ কেবল তার জন্যই খাস এতে অন্য কারো অংশীদারিত্বের সুযোগ নেই।

আস্ সামাদ নামটির এ অনুভূতি জাগ্রত করে যে, অমুখাপেক্ষিতার পূর্ণগুণ একমাত্র আল্লাহর জন্যই খাস। এ গুণ পূর্ণরূপে কারো মধ্যেই নেই। সুতরাং এ গুণবাচক নাম অন্য কারো জন্য চলবে না। অতএব এ অদ্বিতীয় গুণ সম্বলিত নাম সমবিভ্যাহারে এ সূরাটি আল্লাহর পবিত্র স্বকীয় সত্তার পরিচয় জানার জন্য অন্য সকল সূরা তথা পূর্ণ কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।

একদল বলেছেন, সূরা ইখলাসকে আল কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সাথে দৃষ্টান্ত হলো সাওয়াবের দিক থেকে, অর্থাৎ- এ সূরা তিলাওয়াতকারী পূর্ণ কুরআন পাঠের এক তৃতীয়াংশের মতো সাওয়াব পাবে। অবশ্য ইবনু ‘উকায়ল এ কথাটিকে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন, ইবনু রাহওয়াই তা সমর্থন করেছেন।

কেউ কেউ বলেছেন, কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ এর সাওয়াব দ্বিগুণ বা অধিক গুণে দেয়া হবে যা কুরআনের অন্যান্য সূরা ডাবল সাওয়াববিহীন আল কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। তবে এ কথার পক্ষে কোন দলীল নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
২১২৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২৮-[২০] ইমাম বুখারী হাদীসটি আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَرَوَاهُ البُخَارِيّ عَن أبي سعيد

ورواه البخاري عن ابي سعيد

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি ইমাম বুখারী আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। এর ব্যাখ্যাও পূর্বের হাদীসের অনুরূপ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »