২১০৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

এখানে সাধারণভাবে পূর্ণ কুরআনের ফাযীলাত বা মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে এবং বিশেষ কতিপয় সূরা ও আয়াতের ফাযীলাতও খাসভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

আল কুরআনের কোন বিশেষ অংশ অন্য কোন অংশের উপর বিশেষ কোন মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব রাখে কি-না তা নিয়ে গবেষকগণ ইখতিলাফ করেছেন। আবূল হাসান আল আশ্’আরী, কাযী আবূ বকর আল বাকিলানী প্রমুখ মনীষীগণ মনে করেন কুরআনের সকল আয়াত ও সূরার মর্যাদা সমান, কোন অংশই অপর কোন অংশের উপর বিশেষ কোন মর্যাদা রাখে না। কেননা মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব হলো অমর্যাদা ও ত্রুটির বিপরীত অথচ আল্লাহর কালামের হাক্বীকত ও মৌলিকত্ব এক, সেখানে কোন ত্রুটিও নেই, কোন অংশের মর্যাদারও কমতি নেই। সুতরাং আল কুরআনের কোন অংশের বিশেষ কান মর্যাদা নেই।

পক্ষান্তরে অন্য আরেকদল অর্থাৎ- জমহূর ’উলামায়ে কিরাম প্রকাশ্য এবং স্পষ্ট হাদীসের ভিত্তিতে বলেন, কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের উপর বিশেষ মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব রাখে। যেমন- হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’বকে বলেছিলেনঃ

الا اعلمك اعظم سورة في القراٰن.

’’আমি কি তোমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠ সূরাটি শিক্ষা দিব না?’’

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ ’’নিশ্চয় ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ (সূরাটি) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা রাখে।’’

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ কুরআনের কোন অংশের অধিক মর্যাদাশীল হওয়ার বিষয়টি অসংখ্য নস (কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট দলীল) দ্বারা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে ইখতিলাফ করা সত্যই আশ্চর্যজনক।

আল কুরআনের বিশেষ অংশের বিশেষ মর্যাদার বিষয় নিয়েও লোকেরা ইখতিলাফ করেছেন। একদলের মতে এ শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা তথা পুরস্কার ও সাওয়াব হলো ব্যক্তির কর্মের ভিত্তিতে যে যত আন্তরিকভাবে বা ইখলাসের সাথে চিন্তা, গবেষণা করে এবং আল্লাহর ভয় নিয়ে এর তিলাওয়াত ও ’আমল করবে তার মর্যাদা তত বেশী হবে। পক্ষান্তরে তাতে কমতি হলো ঐগুলোর কমতি হওয়া।

অন্য আরেক দল ’উলামার মতে এ শ্রেষ্ঠত্ব হলো শব্দের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে। যেমন- আল্লাহর বাণীঃوَإِلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَاحِدٌ অনুরূপ আয়াতুল কুরসী, সূরা আল হাশর-এর শেষাংশ, সূরা আল ইখলাস ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে আল্লাহ তা’আলার চূড়ান্ত ওয়াহদা-নিয়্যাতের এবং সিফাতে কামিলার প্রমাণ বাহক শব্দ রয়েছে যা ’’তাব্বাত ইয়াদা.....’’, বা অন্য কোন সূরার মধ্যে নেই। সুতরাং আল কুরআনের কতিপয় আয়াত ও সূরার বিস্ময়কর অর্থ সম্বলিত শব্দের কারণেই তার এ বিশেষ মর্যাদা।

এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখতে চাইলে ইমাম সুয়ূতির ইত্ক্বান ২য় খণ্ড ১৫৭ পৃঃ এবং ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ্’র جواب أهل العلم والإيمان بتحقيق ما أخبر به رسول الرحمان من أن قل هو الله أحد تعدل ثلث القراٰن (জওয়া-বু আহলিল ’ইলমি ওয়াল ঈমা-নি বি তাহক্বীকি মা- আখবারা বিহী রসূলুর রহমা-ন মিন আন্না কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ তা’দিলু সুলসাল কুরআ-ন) গ্রন্থ দেখে নিন।

সম্মানিত লেখকদ্বয় উক্ত গ্রন্থে আল কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের উপর, এক সূরা অন্য সূরার উপর মর্যাদা রাখার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা করেছেন।

অতঃপর জ্ঞাতব্য বিষয় যে, কুরআন শব্দটি القرأة (কিরাআত) মাসদার থেকে মাফউল অর্থে ব্যবহার হয়েছে। পরবর্তীতে এটি الجمع একত্রিতকরণের অর্থ প্রদান করেছে। যেহেতু এতে সূরাহগুলোকে এবং বিভিন্ন প্রকার জ্ঞানকে একত্রিত করা হয়েছে সেহেতু একে কুরআন বলা হয়েছে।

অন্য আরেকদলের মতে قرنت মূল ধাতু থেকে নির্গত, এর অর্থ একটি বস্ত্ত আরেকটি বস্ত্তর নিকটে হওয়া। আল কুরআনের একটি সূরা আরেকটি সূরার এবং একটি আয়াত আরেকটি আয়াতের নিকটে, সুতরাং একে কুরআন বলা হয়।


২১০৯-[১] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা (মানুষকে) শিক্ষা দেয়। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُكُمْ من تعلم الْقُرْآن وَعلمه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن عثمان رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «خيركم من تعلم القران وعلمه» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: خَيْرٌ ‘খয়রুন’ শব্দটি أخير ‘আখ্ইয়ার’ এর অর্থ প্রদান করেছে যার অর্থ অধিক ভাল, যিনি অধিক ভাল তিনি তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠও বটে।

অত্র হাদীসে বলা হয়েছে যে, কুরআন শিক্ষা করে এবং (অপরকে) শিক্ষা দেয়। কোন কোন বর্ণনায় و ‘ওয়াও’ (এবং) এর পরিবর্তে اَوْ ‘আও’ (অথবা) ব্যবহার করা হয়েছে; তখন হাদীসের অর্থ হয় যে কুরআন শিক্ষা করে অথবা অপরকে শিক্ষা দেয়...। শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়া প্রত্যেকটি কাজই উত্তম তবে যে উভয়টি করে সে সর্বোত্তম। কুরআন হলো আশরাফুল ‘উলূম বা অধিক মর্যাদাসম্পন্ন বিদ্যা, তা যে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয় স্বভাবতই সে অন্য সকল বিদ্বান থেকে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।

মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস থেকে এ ধারণা করা ঠিক নয় যে, ‘আমল এর বাইরে, অর্থাৎ- কুরআন অনুযায়ী ‘আমলের কোন প্রয়োজন নেই শুধু তা শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়াতেই এ মর্যাদা পাওয়া যাবে। বরং যিনি কুরআন শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানের সাথে সাথে সে অনুযায়ী ‘আমল করবেন তিনিই কেবল এই মর্যাদা পাবেন। ‘আমলবিহীন ‘আলিম জাহিলের মতই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)