২১২৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১২৩-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ফিতরার মাল পাহারায় নিযুক্ত করলেন। এমন সময় আমার নিকট এক ব্যক্তি এসেই অঞ্জলি ভরে খাদ্যশস্য উঠাতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম ও বললাম, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলল, আমি একজন অভাবী লোক। আমার অনেক পোষ্য। আমি নিদারুণ কষ্টে আছি। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তখন তাকে ছেড়ে দিলাম। ভোরে আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে) গেলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! তোমার হাতে গত রাতে বন্দী লোকটির কী অবস্থা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! বন্দীটি তার নিদারুণ অভাব ও বহু পোষ্যের অভিযোগ করল। তাই আমি তার ওপর দয়া করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, শুনো! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে।

[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন] আমি রসূলের বলার কারণে বুঝলাম, অবশ্যই সে আবার আসবে। আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। (ঠিকই) সে আবার এলো। দু’ হাতের কোষ ভরে খাদ্যশস্য উঠাতে লাগল এবং আমি তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, তুমি আমাকে এবারও ছেড়ে দাও। আমি বড্ড অভাবী মানুষ। আমার পোষ্যও অনেক। আমি আর আসব না। এবারও আমি তার ওপর দয়া করলাম। ছেড়ে দিলাম। ভোরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবূ হুরায়রাহ্! তোমরা বন্দীর খবর কী? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সে খুবই অভাবী। বহু পোষ্যের অভিযোগ করল। তাই আমি তার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, শুনো তোমার কাছে সে মিথ্যা বলেছে। আবারও যে আসবে।

(বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন,) আমি বুঝলাম, সে আবারও আসবে। তাই আমি তার অপেক্ষায় থেকে তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, তোমাকে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। এটা তিনবারের শেষবার। তুমি ওয়া’দা করেছিলে আর আসবে না। এরপরও তুমি এসেছ। সে বলল, এবারও যদি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাব, যে বাক্যের দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন। তুমি শোবার জন্য বিছানায় গেলে আয়াতুল কুরসী পড়বে, ’’আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম’’ আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে সব সময় তোমার জন্য একজন রক্ষী থাকবে, ভোর হওয়া পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান ঘেঁষতে পারবে না। এবারও তাকে আমি ছেড়ে দিলাম।

ভোরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার বন্দীর কী হলো? আমি বললাম (ইয়া রসূলাল্লাহ!), সে বলল, সে আমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শুনো! এবার সে তোমার কাছে সত্য কথা বলেছে অথচ সে খুবই মিথ্যুক। তুমি কি জানো, তুমি এ তিন রাত কার সাথে কথা বলেছ? আমি বললাম, জি-না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ ছিল একটা শয়তান। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: وَكَّلَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ فَأَتَانِي آتٍ فَجَعَلَ يَحْثُو من الطَّعَام فَأَخَذته وَقلت وَالله لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيَّ عِيَالٌ وَلِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ قَالَ فَخَلَّيْتُ عَنْهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا هُرَيْرَة مَا فعل أسيرك البارحة» . قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً وَعِيَالًا فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ قَالَ: «أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ وَسَيَعُودُ» . فَعَرَفْتُ أَنَّهُ سَيَعُودُ لِقَوْلِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَّهُ سيعود» . فَرَصَدْتُهُ فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ فَقُلْتُ: لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ دَعْنِي فَإِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيَّ عِيَالٌ لَا أَعُودُ فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ؟» قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً وَعِيَالًا فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ قَالَ: «أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذبك وَسَيَعُودُ» . فرصدته الثَّالِثَة فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ فَقُلْتُ لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُول الله وَهَذَا آخِرُ ثَلَاثِ مَرَّاتٍ إِنَّكَ تَزْعُمُ لَا تَعُودُ ثُمَّ تَعُودُ قَالَ دَعْنِي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ ينفعك الله بهَا قلت مَا هُوَ قَالَ إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ (اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ)
حَتَّى تَخْتِمَ الْآيَةَ فَإِنَّكَ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ من الله حَافظ وَلَا يقربنك شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ؟» قُلْتُ: زَعَمَ أَنَّهُ يُعَلِّمُنِي كَلِمَات يَنْفَعنِي الله بهَا فخليت سبيلهقال النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «أما إِنَّه قد صدقك وَهُوَ كذوب تعلم من تخاطب مُنْذُ ثَلَاث لَيَال» . يَا أَبَا هُرَيْرَة قَالَ لَا قَالَ: «ذَاك شَيْطَان» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: وكلني رسول الله صلى الله عليه وسلم بحفظ زكاة رمضان فاتاني ات فجعل يحثو من الطعام فاخذته وقلت والله لارفعنك الى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اني محتاج وعلي عيال ولي حاجة شديدة قال فخليت عنه فاصبحت فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «يا ابا هريرة ما فعل اسيرك البارحة» . قال قلت يا رسول الله شكا حاجة شديدة وعيالا فرحمته فخليت سبيله قال: «اما انه قد كذبك وسيعود» . فعرفت انه سيعود لقول رسول الله صلى الله عليه وسلم: «انه سيعود» . فرصدته فجاء يحثو من الطعام فاخذته فقلت: لارفعنك الى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال دعني فاني محتاج وعلي عيال لا اعود فرحمته فخليت سبيله فاصبحت فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا ابا هريرة ما فعل اسيرك؟» قلت يا رسول الله شكا حاجة شديدة وعيالا فرحمته فخليت سبيله قال: «اما انه قد كذبك وسيعود» . فرصدته الثالثة فجاء يحثو من الطعام فاخذته فقلت لارفعنك الى رسول الله وهذا اخر ثلاث مرات انك تزعم لا تعود ثم تعود قال دعني اعلمك كلمات ينفعك الله بها قلت ما هو قال اذا اويت الى فراشك فاقرا اية الكرسي (الله لا اله الا هو الحي القيوم) حتى تختم الاية فانك لن يزال عليك من الله حافظ ولا يقربنك شيطان حتى تصبح فخليت سبيله فاصبحت فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما فعل اسيرك؟» قلت: زعم انه يعلمني كلمات ينفعني الله بها فخليت سبيلهقال النبي صلى الله عليه وسلم: «اما انه قد صدقك وهو كذوب تعلم من تخاطب منذ ثلاث ليال» . يا ابا هريرة قال لا قال: «ذاك شيطان» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: চোর ছিল শয়তান সে সর্বদাই মিথ্যা কথা বলে থাকে কিন্তু আয়াতুল কুরসীর ফাযীলাত সংক্রান্ত বিষয়ে সে সত্য বলেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শয্যাগ্রহণের সময় আয়াতুল কুরসী পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং পার্শ্ববর্তী ঘরসমূহ নিরাপদে রাখেন। এটা বায়হাক্বীর বর্ণনা, ত্ববারানীর বর্ণনায় আয়াতুল কুরসীর সাথে সূরা আল বাকারাহ্’র শেষাংশের কথা, অর্থাৎ- আ-মানার রসূলু .....থেকে শেষ পর্যন্ত এর কথাও এসেছে।

এ সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হিফাযাতকারী নিযুক্ত হন, শয়তান তার নিকটেও আসতে পারে না। সহীহুল বুখারীতে উল্লেখ আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গতরাতে শয়তান আমার ওপর চড়াও হয়েছিল, আমি তাকে ধরে ফেলেছিলাম তাকে এই খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার ভাই সুলায়মান (আঃ)-এর দু‘আর কথা মনে করে তা আর করিনি। তিনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে এমন এক রাজত্ব দাও আমার পরে কারো পক্ষে যেন তা করা সম্ভব না হয়।

আল্লাহ আরো বলেন, আমি বাতাসকে তার অনুগত করে দিয়েছিলাম। এখন প্রশ্ন হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর শয়তান ধরা কিভাবে সম্ভব হলো? এর উত্তর এই যে, সুলায়মান (আঃ) শয়তানের আসলরূপে ধরতেন এবং দেখতেন, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) শয়তান ধরেছিলেন কিন্তু সেটা ছিল মানুষের আকৃতিতে, তার নিজস্ব আকৃতিতে নয়। সুতরাং সুলায়মান (আঃ)-এর দু‘আ ভঙ্গ হয়নি। এ হাদীস থেকে অনেক বিষয় শিক্ষা লাভ করা যায়। যেমনঃ

১. শয়তান মু’মিনের উপকারী বিষয় জানে তবে হিকমাতের বিষয় হলো এই যে, ফাসিক ফাজির তা শিক্ষা করে, তা থেকে উপকার গ্রহণ করতে পারে না। আর মু’মিন তার নিকট থেকে শিখে উপকার গ্রহণ করতে পারেন।

২. কাফিরের কতিপয় কথা বিশ্বাসযোগ্য। তবে এ বিশ্বাসযোগ্য কথা বলেই সে মু’মিন হয়ে যায় না। আর শয়তানের অভ্যাস হলো মিথ্যা বলা। মিথ্যাবাদী কখনো সত্য কথা বলে থাকে।

৩. শয়তান (জিন্) অন্যরূপ ধরলে তাকে দেখা সম্ভব।

৪. কোন সম্পদ রক্ষার জন্য নিযুক্ত রক্ষককে উকীল বলা যাবে।

৫. জিন্ মানুষের খাদ্য খায়।

৬. জিনেরাও চুরি করে এবং ধোঁকা দেয়।

তাছাড়ও এ হাদীসে আয়াতুল কুরসীর ফাযীলাত বর্ণিত হয়েছে, সদাকাতুল ফিতর ঈদের আগে উত্তোলনের বৈধতা প্রমাণিত হয়েছে এবং তা রক্ষণের জন্য একজন উকীল নিযুক্ত করার বৈধতাও স্বীকৃত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)