পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১০৮-[১] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে (খিলাফতের ব্যাপারে) এ কয়েকজন ছাড়া আমি অন্য আর কাউকেও যোগ্যতম মনে করি না, যাঁদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.) - মৃত্যুর সময় খুশি থেকে গেছেন। অতঃপর তিনি [’উমার (রাঃ)] ’আলী, ’উসমান, যুবায়র, ত্বলহাহ্, সা’দ ও আবদুর রহমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এর নাম উল্লেখ করেন। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: مَا أَحَدٌ أَحَقَّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْ هَؤُلَاءِ النَّفَرِ الَّذِينَ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَنْهُمْ رَاضٍ فَسَمَّى عَلِيًّا وَعُثْمَانَ وَالزُّبَيْرَ وَطَلْحَةَ وَسَعْدًا وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (3700) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مَا أَحَدٌ أَحَقَّ بِهَذَا الْأَمْرِ) অর্থাৎ খিলাফতের বিষয়ে। আর নাফার বলা হয়, তিন থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যাকে।
(وَهُوَ عَنْهُمْ رَاضٍ) অর্থাৎ তিনি তাদের প্রতি পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ তিনি তাদের সকলকে খুব ভালোভাবে চিনতেন। অথবা এখানে সন্তুষ্ট দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নির্দিষ্ট সন্তুষ্টি। আর তা হলো তারা সকলে খলীফাহ হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। অথচ তিনি তো সকল সাহাবীদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। তবে এটার সম্ভাবনা আছে যে, তিনি তাদেরকে একটু বেশি ভালোবাসতেন। কারণ তারা দশজন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। আর তারা সকলে ছিলেন কুরায়শ বংশের। আর খলীফাও তাদের মধ্যে থেকে ছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১০৯-[২] কায়স ইবনু আবূ হাযিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ত্বলহাহ (রাঃ) -এর ঐ হাতখানা বিকল অবস্থায় দেখেছি, যে হাত দ্বারা তিনি উহুদের দিন নবী (সা.) -কে (কাফিরদের আক্রমণ হতে) রক্ষা করেছিলেন। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَن قيس بن حازِم قَالَ: رَأَيْتُ يَدَ طَلْحَةَ شَلَّاءَ وَقَى بِهَا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (4063) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (رَأَيْتُ يَدَ طَلْحَةَ شَلَّاءَ) অর্থাৎ তা হলো হাতের কব্জিতে কমতি বা অবশ হওয়া। কাজ করতে না পারা। এর অর্থ এটা নয় যে, হাত কাটা হয়েছে, যা অনেকেই মনে করে। তিনি হাত দিয়ে নবী (সা.) -কে উহুদ যুদ্ধের দিন হিফাযাত করেছিলেন। ফলে তিনি নিজে আহত হয়েছিলেন। তিনি উহুদের দিন ২৪টি আঘাত পেয়েছিলেন। কথিত আছে যে, তার শরীরে মোট ৭৫টি ক্ষত পাওয়া গিয়েছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১১০-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) আহযাব (খন্দক) যুদ্ধের সময় বললেন, এমন কে আছে, যে শত্রুদলের প্রকৃত অবস্থা জেনে আমাকে দিতে পারে? তখন যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি। অতঃপর নবী (সা.) বললেন, প্রত্যেক নবীর ’হাওয়ারী থাকে। নিশ্চয় যুবায়র আমার হাওয়ারী। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَأْتِينِي بِخَبَرِ الْقَوْمِ يَوْمَ الْأَحْزَابِ؟» قَالَ الزُّبَيْرُ: أَنَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِكُلِّ نَبِيٍّ حَوَارِيَّاً وحَوَاريَّ الزبيرُ» مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2846) و مسلم (48 / 2415)، (6243) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস থেকে যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ) -এর মর্যাদা বুঝা গেল। তিনি নবী (সা.) -এর ফুফাতো ভাই ছিলেন। খন্দকের যুদ্ধের দিন নবী (সা.) শত্রুদের খবর আনার কথা বললে যুবায়র (রাঃ) তিনবার বললেন, আমি খবর আনব। তখন নবী (সা.) তার প্রতি খুশি হয়ে বলেন, প্রত্যেক নবীর সাহায্যকারী থাকে আর আমার সাহায্যকারী হলো যুবায়র ইবনুল আওয়াম। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১১১-[8] যুবায়র (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন কে আছে, যে বানূ কুরায়যা গোত্রে গিয়ে আমাকে তাদের বাস্তব অবস্থা এনে দিতে পারে? তখন আমি গেলাম। অতঃপর যখন আমি ফিরে আসলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর পিতামাতা উভয়কে একত্রে উল্লেখ করে আমার লক্ষ্যে বললেন, আমার পিতা ও মাতা তোমার জন্য কুরবান হোক। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَأْتِي بَنِي قُرَيْظَةَ فَيَأْتِينِي بِخَبَرِهِمْ؟» فَانْطَلَقْتُ فَلَمَّا رَجَعْتُ جَمَعَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبَوَيْهِ فَقَالَ: «فَدَاكَ أَبِي وَأُمِّي» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3720) و مسلم (49 / 2416)، (6245) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: কে বানু কুরায়যার কাছে গিয়ে তাদের সংবাদ নিয়ে আসবে? বানু কুরায়যাহ্ মদীনার পাশে বসবাসকারী ইয়াহুদী সম্প্রদায় ছিল। যুবায়র (রাঃ) তাদের খবর জানতে পেরে এসে নবী (সা.) -কে বললে তিনি তাঁর উদ্দেশে বললেন, আমার পিতা মাতা তোমার জন্য কুরবান হোক। এ কথা দ্বারা তিনি (সা.) তাকে সম্মান করতে চাইলেন। আর তাঁর কাজটি যে মহান তা বুঝাতে চাইলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১১২-[৫] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) উহুদ যুদ্ধের দিন সা’দ ইবনু মালিক (আবূ ওয়াক্কাস) ছাড়া আর কারো উদ্দেশে নিজের পিতামাতাকে একত্রিত করতে আমি শুনিনি। আমি শুনেছি, উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি (সা’দকে লক্ষ্য করে) বলেছেন, হে সা’দ (শত্রুদের প্রতি) তীর নিক্ষেপ কর। আমার পিতা ও মাতা তোমার জন্য কুরবান। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَن عليٍّ قَالَ: مَا سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَمَعَ أَبَوَيْهِ لِأَحَدٍ إِلَّا لِسَعْدِ بْنِ مَالِكٍ فَإِنِّي سَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ أُحُدٍ: «يَا سَعْدُ ارْمِ فَدَاكَ أَبِي وَأُمِّي» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4059) و مسلم (41 / 2411)، (6233) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: কথিত আছে যে, তিনি তার পিতা মাতাকে যুবায়র (রাঃ)-এর ঘটনায়ও একত্রিত করেছিলেন। কিন্তু ‘আলী (রাঃ) তা জানতেন না। অথবা তিনি উহুদের দিন এটা দ্বারা তাকে শক্তিশালী করতে চাইলেন। এখানে অন্য কারো জন্য বলেননি দ্বারা নবী (সা.) -এর বলাটাকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্য নয়। বরং তিনি বিষয়টি জানতেন না। এটাই বুঝা যাচ্ছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১১৩-[৬] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আরবদের (ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম লোক, যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: إِنِّي لَأَوَّلُ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ فِي سَبِيل الله. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3728) و مسلم 16 / 2966)، (7433) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে সা'দ (রাঃ) যে বীর পুরুষ ছিলেন তার একটি নিদর্শন ফুটে উঠেছে। তিনি কাপুরুষ ছিলেন না। অন্য একটি সহীহ হাদীসে আছে, যখন তাঁর বিরুদ্ধে কাপুরুষের অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তিনি তাদের জবাব দেয়ার জন্য এ কথা বলেছিলেন। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১১৪-[৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) (কোন এক অভিযান হতে) মদীনায় আগমনের পর রাত্রিতে (দুশমনের আশঙ্কায়) জেগে রইলেন এবং বললেন, যদি কোন সৎ লোক (এ রাত্রটি) আমাকে পাহারা দিত (তবে কতই না উত্তম হত!)। এমন সময় হঠাৎ আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি (সা.) প্রশ্ন করলেন, এই আগন্তক কে? বললেন, আমি সা’দ। তিনি (সা.) প্রশ্ন করলেন, এ সময় এখানে আগমনের উদ্দেশ্য কি? তিনি বললেন, আমার অন্তরে শত্রুদের তরফ হতে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর প্রতি ভয় সৃষ্টি হয়েছে, তাই আমি তাকে পাহারা দিতে এসেছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর (নির্বিঘ্নে) ঘুমিয়ে পড়লেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: سَهِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقْدِمَهُ الْمَدِينَةَ لَيْلَةً فَقَالَ: «لَيْتَ رَجُلًا صَالِحًا يَحْرُسُنِي» إِذْ سَمِعْنَا صَوْتَ سِلَاحٍ فَقَالَ: «مَنْ هَذَا؟» قَالَ: أَنَا سَعْدٌ قَالَ: «مَا جَاءَ بِكَ؟» قَالَ: وَقَعَ فِي نَفْسِي خَوْفٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجِئْتُ أَحْرُسُهُ فَدَعَا لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ نَامَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2885) و مسلم (40 / 2410)، (6231) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (سَهِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقْدِمَهُ الْمَدِينَةَ لَيْلَةً) ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) কোন এক যুদ্ধ হতে মদীনাহ্ আগমনের সময় শত্রুর ভয়ে রাত্র জাগরণ করেছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
(لَيْتَ رَجُلًا صَالِحًا يَحْرُسُنِي) মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, বাক্যটির অর্থ হলো অবশিষ্ট রাতগুলো আমাকে পাহারা দিবে যাতে আমি আত্মতৃপ্তি ও প্রশান্তির সাথে ঘুমাতে পারি এমনকি কোন মহৎ ব্যক্তি আছে? (মিরকাতুল মাফাতীহ)
হাফিয ইবনে হাজার ‘আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত বাক্য দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শত্রুর ভয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও পাহারাদার নিযুক্ত করা বৈধ। আর মানুষের ওপর দায়িত্ব হলো তাদের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার নিহত হওয়ার ভয় থাকলে তাকে পাহারা দেয়া। যে ব্যক্তি উক্ত গুরুদায়িত্ব পালন করে তাকে হাদীসের ভাষায় “সালিহ” বা উত্তম ব্যক্তি বলা হয়েছে।
পাহারাদার নিযুক্ত করা আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম বলেছিলেন, (وَ لٰکِنۡ لِّیَطۡمَئِنَّ قَلۡبِیۡ) “...কিন্তু আমার আত্মতপ্তির জন্য..."- (সূরা আল বাকারাহ্ ২: ২৬০)।
আর নবী (সা.) বলেন, (اعقلها وتوكل) “আগে উটের রশি বাঁধ”, তারপর আল্লাহর প্রতি ভরসা কর।
‘আলিমগণ বলেন, উক্ত হাদীসটি নিম্নে উল্লেখিত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা, আয়াতটি হলো: (وَ اللّٰهُ یَعۡصِمُکَ مِنَ النَّاسِ)“...আল্লাহ আপনাকে মানুষের হাত হতে রক্ষা করবেন...”- (সূরাহ আল মায়িদাহ্ ৫: ৬৭)। নবী (সা.) পাহারাদার ছেড়ে দিয়েছেন যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (শারহুন নাবাবী হা, ২৪১০)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১১৫-[৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: প্রত্যেক উম্মতেরই একজন আমীন থাকে। আর এ উম্মতের সেই আমীন হলেন আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ্। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِكُلِّ أُمَّةٍ أَمِينٌ وَأَمِينُ هَذِهِ الْأُمَّةِ أَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الْجراح. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4382) و مسلم (53 / 2419)، (6252) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (وَأَمِينُ هَذِهِ الْأُمَّةِ أَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الْجراح) হাফিয ইবন হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীসে আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ -কে বিশেষভাবে আমানতের বা বিশ্বস্ততার গুণে গুনান্বিত করা হয়েছে, যদিও উক্ত গুণ অন্যান্য সাহাবীদের মাঝেও ছিল। কিন্তু তার মাঝে এই গুণটি অন্যান্য সাহাবীদের তুলনায় বেশি ছিল এটা বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তাঁর মাঝে যতগুলো গুণ ছিল, তন্মধ্যে এ গুণটি বেশি ছিল। তাছাড়া নবী (সা.) - প্রত্যেক সাহাবীকে ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদা ও গুণে গুণান্বিত করেছেন। যেমন 'উসমান (রাঃ)-কে লজ্জার গুণে গুনান্বিত করেছেন। আলী (রাঃ)-কে বিচারকের গুণে গুনান্বিত করেছেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য সাহাবীদের ক্ষেত্রেও।
হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ ‘উবায়দাহ্ (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ করার পূর্বে উপস্থিত সকল সাহাবী উদগ্রীব হয়েছিলেন যে, ঐ বিশ্বস্ততার গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিটি যেন আমি হই বা আমার নাম উল্লেখ করা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী হা. ৩৭৬৭, শারহুন নাবাবী হা. ২৪১৯)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১১৬-[৯] ইবন আবূ মুলায়কাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে শুনেছি, যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সা.) যদি কাউকে খলীফাহ্ নিযুক্ত করে যেতেন, তাহলে কাকে নিযুক্ত করতেন? উত্তরে ’আয়িশাহ্ বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) -কে, এরপর কাকে? তিনি বললেন, ’উমার ফারূক (রাঃ) -কে। আবার প্রশ্ন করা হলো, আচ্ছা, “উমার ফারূক (রাঃ) -এর পর কাকে? তিনি বললেন, আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)-কে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَن ابْن أبي مليكَة قَالَ: سَمِعْتُ عَائِشَةَ وَسُئِلَتْ: مَنْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَخْلِفًا لَوِ اسْتَخْلَفَهُ؟ قَالَت: أَبُو بكر. فَقيل: ثُمَّ مَنْ بَعْدَ أَبِي بَكْرٍ؟ قَالَتْ: عُمَرُ. قِيلَ: مَنْ بَعْدَ عُمَرَ؟ قَالَتْ: أَبُو عُبَيْدَةَ بن الْجراح. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (9 / 2385)، (6178) ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১১৭-[১০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আবূ বকর, উমার, উসমান, ’আলী, ত্বলহাহ্ ও যুবায়র (রাঃ) -সহ হেরা পর্বতের উপর ছিলেন। এমন সময় সেই পাথরটি হেলতে লাগল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, শান্ত হয়ে যাও। তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক এবং শহীদ ছাড়া আর কেই নেই। আর কোন কোন বর্ণনাকারী সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস-এর নাম বাড়িয়েছেন এবং ’আলীর নাম উল্লেখ করেননি। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَلَى حِرَاءٍ هُوَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ وَعَلِيٌّ وَطَلْحَةُ وَالزُّبَيْرُ فَتَحَرَّكَتِ الصَّخْرَةُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اهْدَأْ فَمَا عَلَيْكَ إِلَّا نَبِيٌّ أَوْ صِدِّيقٌ أَوْ شَهِيدٌ» . وَزَادَ بَعْضُهُمْ: وَسَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ وَلَمْ يَذْكُرْ عَلِيًّا. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (50 / 2417)، (6247) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (اهْدَأْ فَمَا عَلَيْكَ إِلَّا نَبِيٌّ أَوْ صِدِّيقٌ أَوْ شَهِيدٌ) ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীসে নবী (সা.) মু'জিযাহ্ প্রকাশ পেয়েছে। কেননা নবী (সা.) ও আবূ বাকর (রাঃ) ব্যতীত সকল সাহাবী শহীদ হয়েছিলেন, ‘উমার, ‘উসমান ও ‘আলী (রাঃ) সকলে শহীদ হয়েছিলেন যা খুব প্রসিদ্ধ। আর যুবায়র (রাঃ) বাসরার নিকটবর্তী সিবা' উপত্যকায় নিহত হন, অনুরূপভাবে তলহাহ (রাঃ)-কে লোকেরা যুদ্ধের ময়দানে ছেড়ে যায় এবং একটি তীরের আঘাতে তার মৃত্যু ঘটে। আর এটা প্রমাণিত যে, কোন ব্যক্তি অত্যাচারিত অবস্থায় মারা গেলে সে ব্যক্তি শহীদ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তারা পরকালে মহাপ্রতিদান পাবেন আর দুনিয়াতে মালাক (ফেরেশতা) কর্তৃক গোসল ও দু'আপ্রাপ্ত হবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী হা. ২৪১৭)
(وَسَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ) কেউ কেউ বলেন, সাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস তাঁর নিজ প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন।
সাইয়িদ জামালুদ্দীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হতে পারে তিনি এমন কোন রোগে মৃত্যুবরণ করেন যা শহীদী হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
‘রিয়ায’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, তিনি মদীনায় নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত মতের সমাধান দেয়া হয় এভাবে যে,
১) তিনি হুকমি শহীদ। [কেননা তিনি ও আবদুর রহমান (রাঃ) নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করেন]
২) অথবা তারা উভয়ে সিদ্দীক গুণের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আল্লাহ বলেন, (وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖۤ اُولٰٓئِکَ هُمُ الصِّدِّیۡقُوۡنَ ٭ۖ وَ الشُّهَدَآءُ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ) “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট সিদ্দীক ও শহীদ বলে গণ্য...”- (সূরা আল হাদীদ ৫৭: ১৯)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)