পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫৮-[২৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মসজিদে (নববীতে) বসেছিলাম, তখন গরীব মুহাজিরগণও গোল হয়ে একস্থানে বসাছিলেন। এমন সময় হঠাৎ নবী (সা.) প্রবেশ করলেন এবং তাদের নিকট বসে গেলেন। অতঃপর আমিও উঠে তাঁদের কাছে গেলাম। তখন নবী (সা.) তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: এ সুসংবাদ গরীব মুহাজিরদেরকে পৌছে দেয়া উচিত, যাতে তাদের চেহারা আনন্দে ফুটে উঠে। (আর তা হলো এই,) “তারা ধনবান মুহাজিরদের চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেন, তখন আমি দেখলাম যে, তাঁদের চেহারার বর্ণ উজ্জ্বল হয়ে গেল। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) বলেন : এমনকি আমার মনে এ আকাঙ্ক্ষা জাগল, হায়! আমি যদি যদি তাঁদের সাথে থাকতাম অথবা তাদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَن عبد الله بن عَمْرو قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا قَاعِدٌ فِي الْمَسْجِدِ وَحَلْقَةٌ مِنْ فُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ قُعُودٌ إِذْ دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَعَدَ إِلَيْهِمْ فَقُمْتُ إِلَيْهِمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِيُبْشِرْ فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ بِمَا يَسُرُّ وُجُوهَهُمْ فَإِنَّهُمْ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ قَبْلَ الْأَغْنِيَاءِ بِأَرْبَعِينَ عَامًا» قَالَ: فَلَقَدْ رَأَيْتُ أَلْوَانَهُمْ أَسْفَرَتْ. قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو: حَتَّى تَمَنَّيْتُ أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ أَو مِنْهُم. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
صحیح ، رواہ الدارمی (2 / 339 ح 2847) [و النسائی فی السنن الکبری 3 / 443 ح 5876) و سندہ حسن ولہ شاھد عند مسلم فی صححہ (2979)، (7463)] ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : যে মসজিদে লোকেরা বসেছিলেন সেটি মদীনার কোন একটি মসজিদ, খুব সম্ভব সেটা মসজিদে নববী।
(حَلْقَةٌ) শব্দের লাম বর্ণের উপর যবর, যের এবং সুকূন যোগে পাঠ করা হয়। আল্লামাহ্ মুল্লা আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (حالق) এর বহুবচন ছাড়া লাম বর্ণে হারকাত পাঠ সিদ্ধ নয়।
দ্র. (حَلْقَةٌ) অর্থাৎ- গোলাকার, বৃত্ত মাজলিস, আংটি ইত্যাদি এখানে বৃত্তাকার মাজলিস বা বৈঠক উদ্দেশ্য। সাহাবীগণ অনেক সময়ই আল্লাহর রসূলকে মাঝখানে নিয়ে বৃত্তাকার হয়ে বসতেন, আবার সাহাবীগণ কখনো নিজেরাও বৃত্তাকার হয়ে বসতেন। ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে অধ্যায় রচনা করেছেন, (فَرَأى فُرْجَةًفِي الحَلْقَةِ فِيهَا) যে বৃত্তাকার মাজলিসের অভ্যন্তরে ফাঁকা দেখে সেখানে বসে তিনি এ অধ্যায়ের অনুকূলে আবূ ওয়াক্বিদ আল লায়সী থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেখানে (الحَلْقَةُ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। (বুখারী হা. ৬৬, মুসলিম হা. ২১৭৬)
নাবী (সা.) মুহাজির সাহাবীদের মজলিসে যোগ দিলেন, অতঃপর হতদরিদ্র ও রিক্তহস্ত মুহাজির সাহাবীদের জীর্ণ-শীর্ণ পোশাক, বুভুক্ষ মুখ ও চেহারাগুলো দেখে তাদের সান্ত্বনার বাণী শুনালেন। তারা ধনীদের চল্লিশ বছর পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (لِيُبَشَّرْ) আমরে মাজহূল বা নির্দেশসূচক কর্মবাচ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, কেউ কেউ এটাকে দু'আ অর্থে গ্রহণ করেছেন।
(اسفار) শব্দের অর্থ আলোকিত হওয়া, ফর্সা হওয়া, উজ্জ্বল হওয়া। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) এর বর্ণনা- “অতঃপর আমি তাদের দেখলাম তাদের চেহারার বর্ণ উজ্জ্বল হয়ে গেছে।” এর অর্থ হলো- রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সুসংবাদ অথবা দু'আ শুনে তারা তাদের অভাব, দারিদ্রতা ও ক্ষুধার কথা ভুলে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে, ফলে তাদের চেহারাগুলোর মলিনতা দূর হয়ে আলোকিত হয়ে গেছে। মহান আল্লাহ বলেন : (وُجُوۡهٌ یَّوۡمَئِذٍ مُّسۡفِرَۃٌ ﴿ۙ۳۸﴾ ضَاحِکَۃٌ مُّسۡتَبۡشِرَۃٌ ﴿ۚ۳۹﴾) “অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল, সহাস্য ও প্রফুল্ল।” (সূরাহ্ আল ‘আবাসা ৮০: ৩৮-৩৯)
তাই ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) দরিদ্র মুহাজির সাহাবীদের মর্যাদার কথা শুনে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেন- ‘আহা! আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম বা তাদের অন্তর্ভুক্ত হতাম!' (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃ.)