পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
ভাষা বিজ্ঞানী আল্লামাহ্ জাওহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (الْأَمَلُ) শব্দের অর্থ হলো (الرَّجَاءُ) আশা, আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা এবং তা অর্জনে ডুবে থাকা, মৃত্যু ও পরকালের পাথেয় ও প্রস্তুতি থেকে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত এবং গাফিল থাকা। যেমন আল্লাহর বাণী : (ذَرۡهُمۡ یَاۡکُلُوۡا وَ یَتَمَتَّعُوۡا وَ یُلۡهِهِمُ الۡاَمَلُ فَسَوۡفَ یَعۡلَمُوۡنَ) “আপনি ছেড়ে দিন তাদেরকে, খেয়ে নিক এবং ভোগ করে নিক এবং দীর্ঘ আশায় ব্যাপৃত থাকুক। অতি সত্বর তারা জেনে নিবে।” (সূরাহ্ আল হিজর ১৫ : ০৩)
অবশ্য ’ইলম ও আ’মালের জন্য দীর্ঘ আশা, এটা নিন্দনীয় নয়তো বটেই বরং সর্বোসম্মতভাবে প্রশংসনীয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)
৫২৬৮-[১] ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নাবী (সা.) একটি চতুর্ভুজ আঁকলেন এবং তার মধ্যে একটি রেখা টানলেন যা চতুর্ভূজ পার হয়ে বাহিরে চলে গেছে। অতঃপর মধ্য রেখাটির উভয় পার্শ্বে অনেকগুলো ছোট ছোট রেখা এঁকে বললেন : (মনে করো, মধ্যের রেখাটি) এটা মানুষ। আর এটা (চতুর্ভূজ) তার বয়সের সীমা, যা তাকে বেষ্টন করে রয়েছে। আর ঐ রেখার বাইরের অংশটি তার আকাঙ্ক্ষা। আর এ সমস্ত ছোট দাগগুলো তার বিপদ-মুসীবাত (যাতে সে আপতিত হতে পারে)। যদি সে একটি বিপদ হতে রক্ষা পায় তবে পরবর্তী বিপদে আক্রান্ত হয়। যদি সেটা হতেও রক্ষা পায় তবে এর পরেরটিতে আক্রান্ত হয়। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب الأمل والحرص)
عَن عبد الله قَالَ: خَطَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطًّا مُرَبَّعًا وَخَطَّ خَطًّا فِي الْوَسَطِ خَارِجًا مِنْهُ وَخَطَّ خُطُطًا صِغَارًا إِلَى هَذَا الَّذِي فِي الْوَسَطِ مِنْ جَانِبِهِ الَّذِي فِي الْوَسَطِ وفقال: «هَذَا الْإِنْسَانُ وَهَذَا أَجَلُهُ مُحِيطٌ بِهِ وَهَذَا الَّذِي هُوَ خَارِجُ أَمَلِهِ وَهَذِهِ الْخُطُوطُ الصِّغَارُ الْأَعْرَاضُ فَإِنْ أَخْطَأَهُ هَذَا نَهَسَهُ هَذَا وَإِنْ أخطأه هَذَا نهسه هَذَا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (6417) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যাঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) - মাটির উপর কিংবা অন্য কোন কিছুর উপর একটি চতুর্ভুজ অংকন করেছিলেন।
হায়াতের রেখা দ্বারা বেষ্টিত মানুষের উক্ত বেষ্টনী ভেদ করে বের হওয়া অথবা পলায়ন করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। কিন্তু তার আশা ও আকাঙ্ক্ষা এত শক্তিমান ও দুর্বার যে, ঐ দুর্ভেদ্য হায়াত সীমা ভেদ করে অনেক দূরে পৌঁছে গিয়েছে।
এদিকে বিভিন্নমুখী বিপদ মুসীবাতের রেখাগুলো সারিবদ্ধভাবে তার দু’দিকে অবস্থান নিয়েছে, একের পর এক এগুলো তার ওপর আবর্তিত হয়, একটি থেকে রক্ষা পেলে অন্যটি আক্রমণ ও দংশন করে থাকে। সর্বশেষে কোন একটির আক্রমণ আর প্রতিহত করতে পারে না, ফলে সীমাহীন আশা নিয়ে হায়াতের সীমায় গিয়ে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, লু'আতুত্ তানক্বীহ ৮ম খণ্ড, ৪৮৫ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৬৯-[২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নাবী (সা.) কয়েকটি রেখা আঁকলেন। তারপর বললেন : এটা (এ রেখাটি) আকাঙ্ক্ষা। আর এটা তার আয়ু (এর রেখা)। এ অবস্থায় আশা আকাঙ্ক্ষার মধ্যে হঠাৎ কাছাকাছি রেখাটি (মৃত্যু) তার দিকে এগিয়ে আসে। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: خَطَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطُوطًا فَقَالَ: «هَذَا الْأَمَلُ وَهَذَا أَجَلُهُ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَهُ الْخَطُّ الأقربُ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (6418) ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭০-[৩] উক্ত রাবী (আনাস রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সা.) বলেছেন : আদম সন্তান বৃদ্ধ হয় এবং দুটি জিনিস তার মধ্যে জওয়ান হয়- সম্পদের প্রতি ভালোবাসা এবং দীর্ঘ জীবনের আকাঙ্ক্ষা। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَهْرَمُ ابْنُ آدَمَ وَيَشِبُّ مِنْهُ اثْنَانِ: الْحِرْصُ عَلَى الْمَالِ وَالْحِرْصُ عَلَى الْعُمُرِ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6421) و مسلم (115 / 1047)، (2412) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : ‘আরবী (يَهْرَمُ) শব্দটি (بَابُ سَمِعَ) থেকে এসেছে, (الْهَرَمُ) মাসদার থেকে এর অর্থ বৃদ্ধ হওয়া, চুল সাদা হয়ে যাওয়া; এখানে দুর্বল হওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
(يَشِبُّ) শব্দটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুল্লা আলী ক্বারী বলেন, (يَنْمُو وَيَقْوٰى) অর্থাৎ বাড়ে এবং শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ আদম সন্তান বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু তার দু'টি বস্তু বাড়তে থাকে এবং খুব শক্তিশালী হতে থাকে।
ইমাম বায়হাকীর ‘তাজ’ অনুরূপ কামূস' গ্রন্থে বলা হয়েছে: (أَنَّ الْهَرَمَ كِبَرُلسِّنِّ مِنْ بَابِ عَلِمَ، وَشَبَّ شَبَابًامِنْ بَابِ ضَرَبَ)
(هَرِمَ) শব্দটি অধিক বয়সের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, এটি (بَابُ عَلِمَ) থেকে এসেছে আর (شَبَّ شَبَابٌ) এসেছে (ضَرَبَ) এর অধ্যায় থেকে।
সম্পদের লোভ হলো সম্পদ জমা করা বা পুঞ্জিভূত করা, তা কাউকে না দেয়া। আর দীর্ঘ জীবনের আকাঙ্ক্ষা হলো মৃত্যুকে দূরে ভাবা এবং হায়াতের সীমানায় কুলাবে না জেনেও দীর্ঘকাল বাঁচার আশায় আ'মাল স্থগিত রাখা কিংবা পরে করব বলে বিলম্বিত করা।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (يَشِبُّ) শব্দটি (اسْتِعارَةٌ) বা অলঙ্কার শাস্ত্রের রূপক ব্যবহার, এর অর্থ হলো- বৃদ্ধের অন্তর বা কলব দুনিয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে যুবকের যৌবনকালের শক্তিতে শক্তিমান। (মিরকাতুল মাফাতীহ; লুম'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৮৭ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭১-[৪] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন : বৃদ্ধ লোকের অন্তর দুটি ব্যাপারে সর্বদা জওয়ান হতে থাকে। দুনিয়ার ক্ষেত্রে ভালোবাসা ও দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষার। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يَزَالُ قَلْبُ الْكَبِيرِ شَابًّا فِي اثْنَيْنِ: فِي حُبِّ الدُّنْيَا وَطول الأمل . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6420) و مسلم (114 / 1046)، (2411) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যানুরূপ। বৃদ্ধের এই দুনিয়াপ্রীতির দ্বারা মূলত মৃত্যুকে অপছন্দ করা। কেননা বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু ও পরকালের চিন্তা এবং তার জন্য প্রস্তুত থাকা ছিল আবশ্যক কিন্তু সে তা ভুলে সম্পদ ও দীর্ঘায়ুর আশায় বিভোর। (মিরকাতুল মাফাতীহ; লুম'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৮৮ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭২-[৫] উক্ত রাবী (আবু হুরায়রাহ্ রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা সে ব্যক্তির আপত্তির অবকাশ রাখেননি যার মৃত্যুকে বিলম্বিত করে ষাট বছরে পৌঁছে দিয়েছেন। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْذَرَ اللَّهُ إِلَى امْرِئٍ أَخَّرَ أَجَلَهُ حَتَّى بَلَّغَهُ سِتِّينَ سَنَةً» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (6419) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : হাদীসে উল্লেখিত (أعَزَّرَ) শব্দটি (عزر) মূলধাতু থেকে উৎপন্ন অর্থ ওযর বা আপত্তি পেশ করা। এর উপর হামযা অক্ষরটি (سلب مأحز) মাদ্দাহর অর্থ দূরীকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তার ওযর বা আপত্তি উঠিয়ে নেন, তার ওযর পেশ করার আর কোন সুযোগ রাখেন না। এর অর্থ হলো মানুষের বয়স যখন ষাট বছরে পৌঁছে যায় তখন সে এক সম্মানের জীবনে পদার্পণ করে; এটা তার জীবনের জন্য অতিরিক্ত পাওনা, এ সময়ে সে অতীতের পাপের জন্য তাওবাহ করবে, ‘ইবাদতে চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করবে। কিন্তু এসবের পরোয়া না করে সে যদি গাফিল হয়েই থাকে তাহলে কিয়ামতের বিচারের কোর্টে আল্লাহ তা'আলা তার তাওবাহ ও ইবাদাত-বন্দেগী না করার কোন প্রকার আপত্তি গ্রহণ করবেন না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৮৮ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭৩-[৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আদম সন্তানকে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দুটি উপত্যকাও যদি দেয়া হয়, সে তৃতীয়টির আকাঙ্ক্ষা করবে। মূলত আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া অন্য কিছুই পরিপূর্ণ করতে পারবে না, আর যে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ্ কুকূল করেন। (বুখারী ও মুসলিম)।
الفصل الاول ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادِيَانِ مِنْ مَالٍ لَابْتَغَى ثَالِثًا وَلَا يَمْلَأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6436) و مسلم (118 / 1049)، (2418) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসে ধন-সম্পদের দুটি উপত্যকার কথা বলা হয়েছে। অন্য একটি বর্ণনায় স্বর্ণের দুটি উপত্যকার কথা বলা হয়েছে। অপর বর্ণনায়, স্বর্ণের দুটি উপত্যকার কথা উল্লেখ রয়েছে। (لَابْتَغَى ثَالِثًا) সে তৃতীয় আরেকটির আকাঙ্ক্ষা করবে’ অর্থাৎ আরেকটি বড় এবং বিশাল উপত্যকা সে কামনা করবে। এভাবে তাকে যদি সেটাও দেয়া যায় তাহলে চতুর্থ বা পঞ্চমটির আকাঙ্ক্ষা সে করবে। আর এভাবে তার আশা ও আকাঙ্ক্ষা চলতে থাকবে। সম্পদ দিয়ে তার চোখও আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ হবে না, হবে একমাত্র মাটি দ্বারা। অর্থাৎ কবরের মাটিই কেবল তার অসীম আকাঙ্ক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটাবে। এতে নাবী (সা.)-এর সতর্ক সংকেত যে বখীলের বুখালতিটা হলো লোভের উত্তরাধিকারী এবং তা মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাবের নিগঢ়ে প্রোথিত। আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদে বলেছেন যা প্রচলিত প্রবাদ ও হাদীসের চেয়ে অধিক স্পষ্ট। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (قُلۡ لَّوۡ اَنۡتُمۡ تَمۡلِکُوۡنَ خَزَآئِنَ رَحۡمَۃِ رَبِّیۡۤ اِذًا لَّاَمۡسَکۡتُمۡ خَشۡیَۃَ الۡاِنۡفَاقِ ؕ وَ کَانَ الۡاِنۡسَانُ قَتُوۡرًا) “বলুন : যদি আমার পালনকর্তার রহমতের ভাণ্ডার তোমাদের হাতে থাকত, তবে খরচের ভয়ে তা অবশ্যই ধরে রাখতে, মানুষ তো অতিশয় কৃপণ।” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ১০০)
মানুষের সম্পদের লোভ এবং দরিদ্রতাভীতি হলো বুখালতি বা কৃপণতার মূল কারণ। এমনকি নিজের ব্যাপারেও সে কৃপণতা করে থাকে। এর দৃষ্টান্ত ঐ পিপাসিত পাখির চেয়েও অধিক যে সাগরের উপরে পিপাসা নিয়ে উড়ে বেড়ায় কিন্তু সাগরের পানি শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে না খেয়ে মারা যায়।
উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা তাওবাহ করবে আল্লাহ তাদের তাওবাহ্ কবুল করবেন। অর্থাৎ যে আল্লাহর রহমতের দিকে ফিরে আসবে এবং তার রহমত কামনা করবে আল্লাহ তাকে তার রহমতের আশ্রয়ে গ্রহণ করবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল লুম'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৮৯ পৃ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭৪-[৭] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার শরীরের এক অংশ ধরে বললেন : পৃথিবীতে অপরিচিত মুসাফির অথবা পথযাত্রীর মতো জীবন-যাপন করো। আর প্রতিনিয়ত নিজেকে কবরবাসী মনে করো। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبَعْضِ جَسَدِي فَقَالَ: «كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سبيلٍ وعُدَّ نفسَكَ فِي أهل الْقُبُور» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (6416) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার-এর শরীরে কোন একটি অংশ ধরে বলছিলেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন। মুল্লা আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, শরীরে বা কাঁধে হাত রাখার হিকমত হলো তাকে নিকটে টেনে নেয়া এবং নিজের দিকে মনোনিবেশ করানো, যাতে তার কথাগুলো ভালোভাবে উপলব্ধি করে নিতে পারে।
অতঃপর তিনি তাকে বললেন, তুমি দুনিয়ায় এভাবে থাকো যেন একজন অপরিচিত ব্যক্তি অথবা পথিক। এটা এজন্য যে, দুনিয়া হলো চলাচলের স্থান এবং (কোন নদী) পার হওয়ার সেতুসদৃশ।
অতএব মু'মিনের উচিত ‘ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে নিমগ্ন থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাস ও বছরগুলো পাড়ি দিয়ে প্রকৃত দেশ ও আবাসভূমি জান্নাতে পৌছার প্রতি উদ্গ্রীব থাকা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে আরো বলেন, তুমি তোমাকে কবরবাসীদের মধ্যে গণনা কর। অর্থাৎ তুমি তোমাকে কবরের অভিযাত্রী অথবা কবরে বসবাসকারী হিসেবে ধরে নাও। এটা যেন ঐ বাক্যের মতো : (مُو تُوا قَبْلَ أَنْ تَمُو تُوا،وَحَاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا) তোমার মরণের আগেই তুমি মরে যাও এবং তোমার হিসাব গ্রহণের পূর্বেই নিজের হিসাব নিজে গ্রহণ কর। (মিরকাতুল মাফাতীহ; লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৮৯ পৃ.)।