৫২৫৯

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৫৯-[২৯] আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু (নাবী সা.) আমাকে সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। যথা- ১. তিনি (সা.) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন গরীব-মিসকান, ভালোবাসার এবং তাদের সহচার্য লাভের, ২. আরো নির্দেশ দিয়েছেন- আমি যেন ঐ ব্যক্তির দিকে তাকাই ’যে আমার চেয়ে নিম্নস্তরের এবং ঐ লোকের দিকে যেন না তাকাই, যে আমার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের ৩. তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছেন- আমি যেন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভালো আচরণ করি, যদিও তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ৪. তিনি (সা.) আরো নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন কারো নিকট কোন কিছু না চাই, ৫. তিনি (সা.) আরো নির্দেশ করেছেন- আমি যেন ন্যায় ও সত্য কথা বলি, যদিও তা তিক্ত হয়, ৬. তিনি (সা.) আরো আদেশ দিয়েছেন- আমি যেন আল্লাহর (দীনের) ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করি এবং ৭. তিনি আমাকে এ নির্দেশও দিয়েছেন- আমি যেন অধিক পরিমাণে (لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ) “লা-হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ” “আল্লাহর শক্তি-সামর্থ ছাড়া কারো কোন শক্তি-সামর্থ্য নেই” পাঠ করি। কেননা এ কথাগুলো ’আরশের নিচের কোষাগার হতে আগত। (আহমাদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَن أبي ذرٍّ قَالَ: أَمَرَنِي خَلِيلِي بِسَبْعٍ: أَمَرَنِي بِحُبِّ الْمَسَاكِينِ وَالدُّنُوِّ مِنْهُمْ وَأَمَرَنِي أَنْ أَنْظُرَ إِلَى مَنْ هُوَ دُونِي وَلَا أَنْظُرَ إِلَى مَنْ هُوَ فَوَقِي وَأَمَرَنِي أَنْ أَصِلَ الرَّحِمَ وَإِنْ أَدْبَرَتْ وَأَمَرَنِي أَنْ لَا أَسْأَلَ أَحَدًا شَيْئًا] وَأَمَرَنِي أَنْ أَقُولَ بِالْحَقِّ وَإِنْ كَانَ مُرًّا وَأَمَرَنِي أنْ لَا أخافَ فِي اللَّهِ لومة لَا ئم وَأَمَرَنِي أَنْ أَكْثِرْ مِنْ قَوْلِ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ فَإِنَّهُنَّ مِنْ كَنْزٍ تَحت الْعَرْش. رَوَاهُ أَحْمد

اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 159 ح 21745) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي ذر قال: امرني خليلي بسبع: امرني بحب المساكين والدنو منهم وامرني ان انظر الى من هو دوني ولا انظر الى من هو فوقي وامرني ان اصل الرحم وان ادبرت وامرني ان لا اسال احدا شيىا] وامرني ان اقول بالحق وان كان مرا وامرني ان لا اخاف في الله لومة لا ىم وامرني ان اكثر من قول: لا حول ولا قوة الا بالله فانهن من كنز تحت العرش. رواه احمد اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 159 ح 21745) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : (خَلِيلٌ) শব্দের অর্থ অন্তরঙ্গ বন্ধু, সুহৃদ, প্রিয়তম, উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ (সা.)। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চেয়ে সাহাবীগণের নিকট প্রিয় আর কোন ব্যক্তি ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাদের অনুরূপ ভালোবাসতেন। এজন্য সহাবীগণ কোন কোন সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওয়াসিয়্যাত, নির্দেশ ইত্যাদি বর্ণনা করতে গিয়ে বলতেন, আমার খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) আমাকে এই নির্দেশ অথবা এই ওয়াসিয়্যাত করেছেন। আর নবী (সা.) -ও বিশেষ কোন ব্যক্তিকে বিশেষভাবে কিছু নির্দেশ বা ওয়াসিয়্যাত করতেন। এমনি একটি ওয়াসিয়্যাতের কথা অত্র হাদীসে বিবৃত হয়েছে। আবু যার (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে সাতটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত করেন তা হলো :

১) মিসকীনকে ভালোবাসা এবং তাদের নিকটে যাওয়া, অর্থাৎ তাদের অবস্থার প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া এবং মালের সহায়ক হওয়া।

২) নীচের ব্যক্তিদের দিকে লক্ষ্য করা উপরের ব্যক্তিদের দিকে দৃষ্টিপাত না করা, অর্থাৎ বৈষয়িক ব্যাপারে নিজের সম্পদের চেয়ে কম সম্পদের অধিকারীদের প্রতি লক্ষ্য করা।

৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ওয়াসিয়্যাত করেন, যদিও সে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় পশ্চাৎপদে চলে, অর্থাৎ আত্মীয় যদি দূরেও থাকে অথবা অনুপস্থিত থাকে কিংবা সম্পর্ক রক্ষা করতে না চায়, তবুও তার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করে চলা। এ বিষয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, “তোমরা শুধু সালাম বিনিময় করে হলেও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ।” ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অর্থ হলো যদি তুমি কোন আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকো, তাহলে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা কর, আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তার সাথে তোমার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা কর এবং তা জোরদার কর।

৪) অপরের নিকট কোন কিছু চাওয়া থেকে বিরত থাকা। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) এর দু'আ ছিল : “হে আল্লাহ! তুমি আমার চেহারাকে তুমি ছাড়া অন্যকে সাজদাহ্ দেয়া থেকে যেমন সুরক্ষিত রেখেছ তেমনি আমার চেহারাকে অন্যের কাছে কিছু চাওয়া থেকেও পবিত্র রাখ।” ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে জিবরীল এসে বলেছিলেন, আপনার কোন প্রয়োজন আছে? অর্থাৎ আমার কাছে সাহায্যের প্রয়োজন আছে? উত্তরে বলেন, আছে, তবে আপনার কাছে নয়! জিবরীল 'আলায়হিস তখন বললেন, তাহলে আপনার রবের কাছে সওয়াল করুন। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম উত্তরে আবারও বললেন, আমার চাওয়ার বিষয় এবং আমার সার্বিক অবস্থা এমন ব্যাপারে আল্লাহর ‘ইল্মই আমার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহর অনেক বান্দা রয়েছে যারা নিজের বৈষয়িক প্রয়োজনও আল্লাহর কাছে যাঞ্ছা করতে লজ্জাবোধ করেছেন, তারা কিভাবে অন্যের কাছে চাইতে পারেন?

৫) আল্লাহর নাবী (সা.) আবু যার (রাঃ)-কে এ নির্দেশ করেছেন যে, তিনি যেন তিক্ত হলেও সত্য কথা বলেন। অর্থাৎ সর্বদাই হক্ব এবং ন্যায় কথা বলবে যদিও শ্রোতার নিকট তা কঠিন অথবা তিক্ত হয় অথবা বক্তব্যটি যদিও নিজের বিরুদ্ধে যায়।

৬) তিনি (সা.) এ নির্দেশও করেছেন যে, প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে আল্লাহর রাস্তায় কথা বলতে, কাজ করতে অথবা অবস্থান নিতে নিন্দুকের নিন্দার ভয় এবং শত্রুতার ভয় যেন না করা হয়।

৭) আর ‘ইবাদতে আল্লাহর সাহায্য কামনায় এবং বিপদ মুসীবত দূরীকরণে বিশেষ করে মনের দম্ভ অহংকার দূরীকরণে আল্লাহর সাহায্য কামনার ক্ষেত্রে বেশি বেশি এ কালিমা পাঠ করা “লা-হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ.....”। এ বাক্যটি আল্লাহ তা'আলার ‘আরশে ‘আযীমের তলদেশের ধনভাণ্ডার থেকে উৎসারিত হয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত কল্যাণের ভাণ্ডার এবং উৎস হলো দয়াময় রহমানের ‘আরশের নীচে; তার সাহায্য ও শক্তি ছাড়া কেউই সেখানে পৌঁছতে পারবে না।

কোন বর্ণনায় আছে, “লা-হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”.... জান্নাতের ধন-ভাণ্ডার থেকে উৎসারিত। এতে কোন বিরোধ নেই, কেননা জান্নাতের ছাদের উপরই দয়াময় রহমানের ‘আরশ।
এ বাক্যটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম বাযযার ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর একটি হাদীস উদ্ধৃত করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট বাক্যটি শিখে পাঠ করলাম। তিনি আমাকে বললেন তুমি কি এর তাফসীর জান? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন, “আল্লাহর নাফরমানী ও পাপ থেকে আল্লাহর হিফাযত ছাড়া কেউ বিরত থাকতে পারে না। আর আল্লাহর আনুগত্য ও নেক কাজে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কেউ শক্তি দিতে পারে না।”

‘আল্লামাহ্ নববী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ বাক্যটি (আল্লাহ তাআলার নিকট আত্মসমর্পণ এবং নিজেকে সপে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৯ পৃ.)।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)