পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৫৪-[২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’’আবদুল কায়স’’ গোত্রের গোত্রপতিকে বললেনঃ তোমার মধ্যে দু’টো চরিত্র এমন আছে যে, আল্লাহ তা’আলা সেটা পছন্দ করেন- ১. সহনশীলতা ও ২. ধীরস্থিরতা বা চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করা। (মুসলিম)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِأَشَجِّ عَبْدِ الْقَيْسِ: إِنَّ فِيكَ لَخَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا الله: الْحلم والأناة . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (لِأَشَجِّ عَبْدِ الْقَيْسِ) বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে : ‘আবদুল কায়স’ গোত্রের গোত্রপতি বলতে তাদের প্রতিনিধি দলের নেতা মুনযির ইবনু ‘আয়িয-কে বোঝানো হয়েছে। সহীহ মুসলিমের বর্ণনা দ্বারা এটাই বোঝা যায়- (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১ম খন্ড, ১৭/২৫)। তবে তার নাম নিয়ে মতপার্থক্য আছে। ইবনুল কালবী বলেনঃ তার নাম মুনযির ইবনুল হারিস ইবনু যিয়াদ ইবনু ‘আসর ইবনু ‘আওফ। কথিত আছে, তার নাম : মুনযির ইবনু ‘আমির। কথিত আছে, মুনযির ইবনু ‘উবায়দ’। কথিত আছে, তার নাম : ‘আয়িয ইবনুল মুনযির। কথিত আছে, ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আওফ। তবে সঠিক ও প্রসিদ্ধ হলো ইবনু ‘আবদুল বার ও অধিকাংশ মুহাদ্দিস যা বলেছেন, তা হলো তার নাম মুনযির ইবনু ‘আয়িয।
(শারহুন নাবাবী ১ম খন্ড, হাঃ ২৫-[১৭])
‘আবদুল কায়স’ গোত্রের প্রতিনিধি দলটি যখন মদীনায় পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য উদ্যত হলো। তখন তাদের গোত্রপতি মুনযির ইবনু ‘আয়িয যাকে ‘আশাজ্জ’ নামে ডাকা হত। তিনি তাদের ঘরের কাছে এসে সবাইকে সুসংগঠিত করলেন। আর তার উটকে বেঁধে তার সুন্দর পোশাকটি পরিধান করলেন, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাছে ডেকে তার পাশে বসালেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, তোমরা কি নিজেদের ও গোত্রের সকলের পক্ষ থেকে বায়‘আত করবে? জবাবে সম্প্রদায়ের সবাই বলল, হ্যাঁ। তখন আশাজ্জ তথা মুনযির ইবনু ‘আয়িয বললেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি একজন লোকের জন্যেও কোন বিষয়ে এমন নির্দেশ প্রদান করেননি, যেটা দীন পালনের ক্ষেত্রে তার জন্য কঠিন। এখন আমরা নিজেদের জন্য আপনার কাছে বায়‘আত করছি। আর গোত্রের লোকেদের নিকট আমরা লোক পাঠাব, যারা তাদেরকে ডাকবে। যারা আমাদের অনুসরণ করবে তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে অস্বীকার করবে আমরা তার সাথে লড়াই করব। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সত্য কথা বলেছ, নিশ্চয় তোমার মধ্যে দু’টো চরিত্র এমন আছে যে, মহান আল্লাহ সেটা পছন্দ করেন - ১. সহনশীলতা ও ২. ধীরস্থিরতা বা চিন্তাভাবনা করে কাজ করা। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০১১; শারহুন নাবাবী ১ম খন্ড, হাঃ ২৫-[১৭])
(الْحِلْمُ وَالْأَنَاةُ) কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ أناة বলা হয়, সংশোধনের জন্য কাউকে অবকাশ দেয়া আর এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা। আর আলোচ্য হাদীসটিতে حلم বলতে বুঝানো হয়েছে, তার সঠিক জ্ঞান ও শাস্তি দেয়ার জন্য অবকাশ প্রদান করাকে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০১১)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৫৫-[৩] সাহল ইবনু সা’দ আস্ সা’ইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ধীরস্থিরভাবে কাজ করা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আসে, আর তাড়াহুড়া করে কাজ করা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।[তিরমিযী;[1]
আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি গরীব। কোন কোন হাদীসবিদ এর অন্যতম রাবী ’আবদুল মুহায়মিন ইবনু ’আব্বাস এর স্মরণশক্তি সম্পর্কে মতভেদ করেছেন।]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আবদুল মুহায়মিন ইবনু ‘আব্বাস ইবনু সাহল’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৫৬ পৃঃ।
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْأَنَاةُ مِنَ اللَّهِ وَالْعَجَلَةُ مِنَ الشَّيْطَانِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ. وَقَدْ تَكَلَّمَ بَعْضُ أَهْلِ الْحَدِيثِ فِي عَبْدِ الْمُهَيْمِنِ بْنِ عَبَّاس الرَّاوِي من قبل حفظه
ব্যাখ্যাঃ الْأَنَاةُ مِنَ اللهِ وَالْعَجَلَةُ مِنَ الشَّيْطَانِ ‘‘ধীরস্থিরভাবে কাজ করা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে আর তাড়াহুড়া করে কাজ করা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে’’। ইমাম মানবী (রহিমাহুল্লাহ) শারহুল জামি‘উস্ সগীরে বলেনঃ ব্যক্তি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কোন কাজে তাড়াহুড়া করে। কারণ তাড়াহুড়া করা কোন কাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে ও শাস্তির প্রদানের ক্ষেত্রে কাউকে অবকাশ দিতে বাধা দেয়। যার ফলে কাজের শেষে আফসোস অনুশোচনা করতে হয়। আর এটাই হলো শয়তানের চক্রান্ত ও তার কুমন্ত্রণা।
‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) বলেন, মানুষ যতদিন তাড়াহুড়ার ফল ছিঁড়বে ততদিন সে আফসোস করবে। অর্থাৎ যতদিন তাড়াহুড়া করে কাজ করবে ততদিন তার আফসোস শেষ হবে না। অতঃপর নিন্দিত তাড়াহুড়া বলা হয়, যাতে আনুগত্য থাকে না। যাতে সুপ্রতিষ্ঠিত করা বা প্রমাণ করা পাওয়া যায় না এবং যাতে কোন কিছু ছুটে যাওয়ার ভয় থাকে না। কারণ তাড়াহুড়া করা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অতঃপর তিনি বলেছিলেন, যদি সেটা মূসা (আ.)-এর কথার মতো হয়, وَعَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضٰى ‘‘হে আমার রব্! আমি আপনার নিকট তাড়াতাড়ি এসেছি যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন’’- (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০ : ৮৪)। বলা হয়ে থাকে, যেটা কল্যাণ কাজে তাড়াহুড়া করা হয় তাকে এ থেকে আলাদা করা হয়েছে। অর্থাৎ কল্যাণ কাজে তাড়াহুড়া করা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ ‘‘তারা কল্যাণ কাজে ছিল অগ্রগামী’’- (সূরাহ্ আল আম্বিয়া ২১ : ৯০)।
কারী বূন (بون) বলেনঃ আনুগত্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ও তাড়াহুড়া করা প্রশংসনীয়। আর ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করে ফেলা দোষণীয়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০১২)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৫৬-[৪] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব অতিক্রম করেছে, সে ব্যতীত কেউ সহনশীল হয় না এবং যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, সে ব্যতীত কেউ বিচারক হয় না। [আহমাদ ও তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান ও গরীব।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘দার্রাজ’’ নামের বর্ণনাকারী আছে, যার উপাধি আবুস্ সাম্হ, সে য‘ঈফ। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ৫৬৪৬।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا حَلِيمَ إِلَّا ذُو تَجْرُبَةٍ» رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيب
ব্যাখ্যাঃ لَا حَلِيمَ إِلَّا ذُو تَجْرُبَةٍ পা পিছলে যাওয়া ব্যক্তি বা হোঁচট খাওয়া ব্যক্তি। অথবা যে ব্যক্তি লেখা-লেখিতে বার বার ভুল করে লজ্জিত হয়। বলা হয়ে থাকে : সে ব্যক্তি ব্যতীত কেউ পূর্ণ সহনশীল হতে পারে না যে, অপদস্ততায় পতিত হয়েছে অথবা যার ভুল হয়ে গেছে, অতঃপর তার ভুলকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তারপর সে বুঝতে পেরেছে ক্ষমা কি জিনিস। সে তখন অন্যের ভুলের সময় সহনশীল হতে পারে। কারণ সে সেই সময় প্রতিষ্ঠিত ছিল। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৩৩)
وَلَا حَكِيمَ إِلَّا ذُو تَجْرِبَةٍ অর্থাৎ নিজের বা অন্যের ক্ষেত্রে পরীক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ বিচারক হতে পারে না।
মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ব্যাখ্যাকার বলেছেন, সকল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ছাড়া ও সংশোধনমূলক জ্ঞান ও ধ্বংসাত্মক জ্ঞান অর্জন না করে কেউ পূর্ণ বিচারক হতে পারে না।
কারণ হলো জ্ঞান অর্জন না করে কেউ পূর্ণ বিচারক হতে পারে না, কারণ বিচারক কোন বিষয়ের হিকমাত ছাড়া কোন কাজ করতে পারেন না। আর হিকমাতই কোন বিষয় নষ্ট হওয়া থেকে সঠিকতায় পৌঁছে দেয়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৩৩)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৫৭-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, আপনি আমাকে উপদেশ দিন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি পরিণাম ভেবে তোমার কাজ সম্পাদন করো। যদি তার শেষ ফল ভালো দেখো, তবে করে ফেলো। আর যদি শেষ ফল ভ্রান্ত ও খারাপ বলে ধারণা করো, তবে তা পরিত্যাগ করো। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আববান’’ নামের বর্ণনাকারী মাতরূক বা পরিত্যক্ত। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৫৭ পৃঃ।
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوْصِنِي. فَقَالَ: «خُذِ الْأَمْرَ بِالتَّدْبِيرِ فَإِنْ رَأَيْتَ فِي عَاقِبَتِهِ خَيْرًا فَأَمْضِهِ وَإِنْ خِفْتَ غَيًّا فَأَمْسِكْ» . رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السّنة»
ব্যাখ্যাঃ (خُذِ الْأَمْرَ بِالتَّدْبِيرِ) ‘‘তুমি পরিণাম ভেবে করবে’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে কিছু উপদেশ প্রদানের আবদার করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পরিণাম ভেবে কাজ করার পরামর্শ দিলেন। কাজটি কল্যাণকর, না ক্ষতিকর- সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা এবং কাজটি করার পর তার পরিণাম কি হবে সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করাই হলো হাদীসটির সারকথা।
(وَإِنْ خِفْتَ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে الخوف (ভয়কর) শব্দটি الظن (ধারণা করা) অর্থে। যেমন মহান আল্লাহর বাণী- إِلَّا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللهِ ‘তবে যদি তুমি মনে করো যে, তুমি আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না’’- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ২২৯)। আবার علم (জ্ঞান) ও اليقين (দৃঢ় বিশ্বাস) অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কারণ যে ব্যক্তি কোন জিনিসকে ভয় পায়, সে তার থেকে দূরে থাকে এবং তার বাস্তবতা বা সঠিক সমাধান খুঁজে বের করে। এখানে সঠিক জিনিস খুঁজে বের করার শিক্ষা রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
শিক্ষণীয় : অনেক লোক এমন রয়েছে যারা পরিণাম ভেবে কথা বলে না বা কাজ করে না। ফলে দেখা যায়, কথা বলার পরে বা কাজ করে ফেলার পরে হতাশা বা দুশ্চিন্তায় ভোগে। এ কারণেই বাংলায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। আর আমাদের বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটিই বহুদিন পূর্বে বলে গেছেন, যাতে মুসলিম জাতির উন্নতির পথে হতাশা বা আফসোস অন্তরায় না হতে পারে। কারণ পরিণাম ভেবে কাজ না করলে হতাশা বা আফসোস করা স্বাভাবিক বিষয়। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৫৮-[৬] মুস্’আব ইবনু সা’দ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। আ’মাশ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি এ বাণী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বলেই জানি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সব কাজেই দেরি করা ও ধীরে-সুস্থে করা উত্তম; কিন্তু আখিরাতের কাজ ব্যতীত। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ الْأَعْمَشُ: لَا أَعْلَمُهُ إِلَّا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «التُّؤَدَةُ فِي كُلِّ شَيْء إِلَّا فِي عَمَلِ الْآخِرَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ (قَالَ الْأَعْمَشُ) অর্থাৎ একজন বর্ণনাকারী। তিনি একজন প্রসিদ্ধ সম্মানিত তাবি‘ঈ। তার প্রকৃত নাম ছিল সুলায়মান ইবনু মিহরান আল কাহলী আল আসাদী। তিনি বানূ কাহিল-এর আযাদকৃত গোলাম ছিলেন। তিনি ৬০ হিজরীতে الري ‘রায়’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। অতঃপর তাকে কূফায় আনা হলে বানূ কাহিল-এর এক ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেন এবং তাঁকে আযাদ করে দেন। তিনি হাদীস ও ‘ইলমে ক্বিরাআত সম্পর্কে একজন প্রসিদ্ধ পন্ডিত ছিলেন। অধিকাংশ কূফাবাসী তার ওপর নির্ভর করত। তাঁর নিকট থেকে অনেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ১৪৮ হিজরী সনে মৃত্যুবরণ করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(إِلَّا فِي عَمَلِ الْآخِرَةِ) অর্থাৎ কারণ আখিরাতের কাজে দেরী করা হলো বিপদ। আর বর্ণিত আছে যে, জাহান্নামবাসীদের অধিকাংশের চিৎকার শোনা যাবে কাজের গতিক্রিয়া থেকেই।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পার্থিব কাজ চিন্তা-গবেষণার প্রথমেই উপলব্ধি করা মানুষের পক্ষ সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে পরকালের অবশ্যম্ভাবী মুক্তির উত্তম কাজ যথাশীঘ্র করাই বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ ‘‘...তোমরা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা কর...’’- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ১৪৮; সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪৮)। وَسَارِعُوا إِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَبِّكُمْ ‘‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমার দিকে ছুটে যাও...’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৩৩)।
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ ‘‘শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যতার প্রতিশ্রুতি দেয়...’’- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ২৬৮)। এ আয়াত সম্পর্কে ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মু’মিনের কর্তব্য হলো যখন তার সামর্থ্য থাকে দান করার সে যেন দান করে দেয়। দান করা থেকে বিরত না থাকে। কারণ শয়তান তাকে দারিদ্র্যতার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাকে দারিদ্র্যতার ভয় দেখায় ও দান করা থেকে তাকে বিরত রাখে। আবুল হাসান ফারশাখী একবার টয়লেটে প্রবেশ করে তার এক ছাত্রকে ডেকে বললেন, তুমি আমার শরীর থেকে জামাটা খুলে অমুক লোককে দিয়ে দাও। জবাবে ছাত্রটি বলল, যদি আপনি বের হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতেন। তখন তিনি বললেন, তাকে দান করতে আমি ভুলে যেতে পারি। আর আমি আমার মনের ব্যাপারে নিরাপদ নই, সে হয়ত পরিবর্তনও হয়ে যেতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৫৯-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম চাল-চলন, ধীরস্থির পদক্ষেপ এবং মধ্যম পন্থা অবলম্বন নুবুওয়াতের চব্বিশ ভাগের এক ভাগ। (তিরমিযী)[1]
وَعَن عبد الله بن جرجس أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «السَّمْتُ الْحَسَنُ وَالتُّؤَدَةُ وَالِاقْتِصَادُ جُزْءٌ مِنْ أَرْبَعٍ وَعشْرين جُزْءا من النُّبُوَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (السَّمْتُ الْحَسَنُ) অর্থাৎ পছন্দনীয় বা সন্তোষজনক চাল-চলন ও উত্তম পথ-পদ্ধতি। এ ছাড়াও السَّمْتُ শব্দের অর্থ রাস্তা, পথ। এখানে السَّمْتُ দ্বারা সৎলোকদের পদাঙ্কের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এছাড়াও السَّمْتُ শব্দ দ্বারা কোন রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরা বুঝায়।
(وَالتُّؤَدَةُ وَالِاقْتِصَادُ) বলা হয় সকল কাজে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করাকে। আর التُّؤَدَةُ অর্থ- সর্বাবস্থায় মধ্যম পন্থা অবম্বন করা। আর সংকোচন ও অতিরঞ্জন বা সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা।
ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মধ্যপন্থা দুই প্রকারের : প্রথমটি হল- যেটি প্রশংসনীয় ও নিন্দনীয় এর মাঝামাঝি হয়। যেমন- অত্যাচার ও ন্যায় এবং কৃপণতা ও দানের মাঝামাঝি। আর আমি এই প্রকারটি নিয়েছি মহান আল্লাহর কথা দ্বারা- وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ ‘‘...আর তাদের মধ্যে আছে মধ্যমপন্থী...’’- (সূরাহ্ ফাত্বির ৩৫ : ৩২)।
আর দ্বিতীয় প্রকারটি হলো : সাধারণভাবে প্রশংসনীয় হওয়া বুঝায়। এর দু’টি দিক আছে- সংকোচন ও অতিরঞ্জন জ্ঞান বা সীমালঙ্ঘন। যেমন দান করা। নিশ্চয় এটা অপব্যয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি। বীরত্ব এটাও ভীতু ও কাপুরুষতার মাঝামাঝি। আর হাদীসটিতে মধ্যপন্থা বলতে সাধারণভাবে প্রশংসনীয় এই প্রকারটিকে বুঝানো হয়েছে।
(من النُّبُوَّة) অর্থাৎ নুবুওয়াতের অনেক অংশের মধ্য থেকে এটাও একটা অংশ।
ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ السَّمْتُ হলো চলার পথ। আর الِاقْتِصَادُ হলো যাবতীয় কাজ-কর্মে মধ্যম পন্থায় সমাধানের চেষ্টায় রত থাকা, যাতে করে কাজটির উপর স্থির থাকা সম্ভব হয়। ‘নুবুওয়াতের অংশ’ এ কথাটি দ্বারা তিনি ইচ্ছা করেছেন বা বুঝতে চেয়েছেন, এসব উত্তম চরিত্র বৈশিষ্ট্য আম্বিয়া কিরামের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। আর এটা তাদের মর্যাদার অংশবিশেষ। সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ কর এবং এসব উত্তম চরিত্র অর্জনে নবীগণের অনুসরণ কর। এর অর্থ এই নয় যে, নুবুওয়াত একটি বিভাজ্য বস্তু, আর যার মধ্যে এসব চরিত্র পাওয়া যাবে, সেই ব্যক্তি নবী হয়ে যাবে; বরং নুবুওয়াত একটি ঐশী দান, মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এ পদমর্যাদা দান করেন। কেউ নিজ ইচ্ছায় বা নিজ চেষ্টা-সাধনা দ্বারা নবী হতে পারে না। কিংবা এর অর্থ এসব চরিত্র বৈশিষ্ট্য সেই মহৎ গুণের অন্তর্ভুক্ত, যা শিক্ষাদানের জন্য নবী-রসূলগণ এ দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছিলেন। অথবা এর অর্থ যে ব্যক্তির মাঝে এর গুণাবলীসমূহ একত্রিত হয়েছে মানুষ তাকে সম্মান-মর্যাদা প্রদান করে। আর মহান আল্লাহ তাকে এমন তাকওয়ার পোশাক পরিধান করান যা তিনি তার নবীদেরকে পরিধান করিয়েছিলেন, আর এটা যেন নুবুওয়াতেরই অংশবিশেষ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০১০; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৬০-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম অভ্যাস, উত্তম চাল-চলন এবং মধ্যম পন্থা অবলম্বন নুবুওয়াতের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْهَدْيَ الصَّالِحَ وَالِاقْتِصَادَ جُزْءٌ مِنْ خَمْسٍ وَعِشْرِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (الْهَدْيَ الصَّالِحَ) বলা হয়, সঠিক পথ বা রাস্তাকে।
(السَّمْتُ) হলো চাল-চলন, বেশ-ভূষণ সুন্দর হওয়া। আর এর মূল (الهدى ও المت একই জিনিস) হলো অনুসরণীয় পথ। আর ‘নিহায়াহ্’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, الصَّالِحُ অর্থ তার অবস্থা বেশ-ভূষণ দীনের ক্ষেত্রে সুন্দর হয়েছে। এটা কেবল চেহারা বা গায়ের রং এর দিক থেকে নয়।
(جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّة) পূর্বোক্ত হাদীসের, এর مِنَ النُّبُوَّة এর আলোচনা দ্রঃ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৬৮)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৬১-[৯] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন কথা বলে, অতঃপর এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করে, তবে তা (শ্রোতার জন্য) আমানাত তথা গচ্ছিত বস্তু। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا حَدَّثَ الرَّجُلُ الْحَدِيثَ ثُمَّ الْتَفَتَ فَهِيَ أَمَانَةٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ ‘আলকামাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তোমার নিকট কেউ কোন কথা বলার পর চলে গেলে সে কথাটি তোমার জন্য আমানাত হয়ে যায়। সে আমানাত নষ্ট করা তোমার জন্য জায়িয নয়। তিনি এদিক-সেদিক তাকানো (الْتَفَتَ) এর অর্থ করেছেন, চলে যাওয়া غاب; তবে প্রথম মতটিই অধিক বিশুদ্ধ।
ইবনু রসলান (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কেননা তার এদিক-সেদিক তাকানো এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, যার কাছে সে কথাটি বলেছে সে ছাড়া অন্য কেউ কথাটি না শুনুক। আর সে এ কথাকে গোপন রাখার চেষ্টা করছে। তার এদিক-সেদিক চাওয়া প্রমাণ করে যে, তুমি এ কথা আমার থেকে নাও আর গোপন রাখ। এ কথাটি তোমার জন্য আমানাত, অর্থাৎ তুমি কথাটি কারো কাছে বলবে না।
(فَهِيَ أَمَانَةٌ) অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি কারো নিকট কোন কথা বলে গোপন রাখার ইচ্ছায় এদিক সেদিক তাকায়, যাতে কেউ না শুনতে পায় তবে যার কাছে সে কথাটি বলছে, তার জন্য আমানাত স্বরূপ হবে। এ কথাটির হুকুম তখন আমানাতের হুকুমে হবে। তখন যার কাছে কথা বলা হয়েছে তার জন্য এ কথা প্রচার করে আমানাতকে নষ্ট করা বৈধ নয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬০; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৫৯)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৬২-[১০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুল হায়সাম ইবনু তাইয়িহান (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কোন খাদিম আছে? তিনি বললেনঃ না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন আমার কাছে গোলাম আসে, তুমি আসবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দু’জন গোলাম আনা হলে আবুল হায়সাম(রাঃ) উপস্থিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দু’জনের মধ্য থেকে একজনকে নিয়ে যাও। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর নবী! আপনি আমার জন্য বেছে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়, তাকে বিশ্বস্ত হওয়া উচিত। তুমি এ গোলামটিকে নিয়ে যাও। আমি তাকে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি তার সাথে সদাচরণ করবে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لأبي الهيثمِ بن التَّيِّهان: «هَلْ لَكَ خَادِمٌ؟» فَقَالَ: لَا. قَالَ: فَإِذَا أَتَانَا سَبْيٌ فَأْتِنَا فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِرَأْسَيْنِ فَأَتَاهُ أَبُو الْهَيْثَمِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اخْتَرْ مِنْهُمَا» . فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ اخْتَرْ لِي فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمُسْتَشَارَ مُؤْتَمَنٌ. خُذْ هَذَا فَإِنِّي رَأَيْتُهُ يُصَلِّي وَاسْتَوْصِ بِهِ مَعْرُوفًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (الْمُسْتَشَارَ مُؤْتَمَنٌ) এখানে الْمُسْتَشَارَ অর্থ যার নিকট পরামর্শ বা মতামত চাওয়া হয়, আর مُؤْتَمَنٌ অর্থ আমানাতদার বা বিশ্বস্ত। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির নিকট যে কোন বিষয়ের পরামর্শ চাওয়া হলে সে সেটার ব্যাপারে আমানাতদার।
অতএব যে পরামর্শ চাইবে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা (খিয়ানাত) করা উচিত নয়। পরামর্শদাতার উচিত হলো কল্যাণকর বিষয়টি নির্বাচন করে দেয়া। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১১৯)
(وَاسْتَوْصِ بِه مَعْرُوفًا) অর্থাৎ তাকে কল্যাণকর কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজের নির্দেশ দিবে না। আর তার জন্য সব সময় কল্যাণ কামনা করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৬৩-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল বৈঠকের ব্যাপারই আমানাতের মতো। তবে তিনটি বৈঠকের ব্যাপারে আমানাতস্বরূপ নয়, যথা- ১. অন্যায়ভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র বৈঠকের কথাবার্তা, ২. গোপনে ব্যভিচারের ষড়যন্ত্রের কথাবার্তা এবং ৩. অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র বৈঠকের কথাবার্তা। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘ইবনু আবূ জাবির’’ নামক বর্ণনাকারীর অজ্ঞতার কারণে হাদীসটি য‘ঈফ, কারণ তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিস্তারিত দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৯০৯।
وَعَنْ جَابِرٍ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: المجالسُ بالأمانةِ إِلَّا ثلاثَةَ مَجَالِسَ: سَفْكُ دَمٍ حَرَامٍ أَوْ فَرْجٌ حَرَامٌ واقتطاع مَالٍ بِغَيْرِ حَقٍّ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي سَعِيدٍ: «إِنَّ أَعْظَمَ الْأَمَانَةِ» فِي «بَاب المباشرةِ» فِي «الْفَصْل الأول»
ব্যাখ্যাঃ (المجالسُ بالأمانةِ) ইবনু রসলান (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ بالأمانةِ শব্দের ‘বা’ বর্ণটি দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, এখানে কিছু শব্দ গোপন আছে তা হলো تَحَسُّنُ الْمَجَالِسِ অথবা حُسْنُ الْمَجَالِسِ وَشَرَفُهَا উত্তম মাজলিস ও সম্মানিত মাজলিস যেটি যার উপস্থিতিগণ সকল কথা ও কাজকে গোপন রাখে। এর অর্থ হলো- মাজলিসের উপস্থিতিগণ যা শুনেছে ও দেখেছে সে ব্যাপারে যেন আমানাতদার হয়।
(بِغَيْرِ حَقٍّ) অর্থাৎ কোন মাজলিসে কেউ যদি বলে যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাই, অথবা অমুকের সাথে (মেয়ের) ব্যভিচার করতে চাই।
অথবা অমুকের সম্পদ কেড়ে নিতে চাই তখন যে ব্যক্তি এটা শুনল তার কর্তব্য হলো তা প্রচার করে দেয়া, যাতে তার ক্ষতিকে বন্ধ করে দেয়া সম্ভব হয়। তার জন্য শোনার পর চুপ থাকা জায়িয নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬১)