পরিচ্ছেদঃ ১৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা

الْحَذَرِ শব্দের অর্থ : বিরত থাকা, সতর্ক থাকা বা সকল প্রকার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা। এ শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক।

الْحَذَرِ এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকাকে বলে, যে কথা ও কাজে ইহকালীন ও পরকালীন চিরস্থায়ী সুখ থেকে বঞ্চিত করে এবং আত্মার উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

التَّأَنِّي শব্দের অর্থ : ধীরস্থিরভাবে কোন কাজ করা, তাড়াহুড়া করে কোন কাজ না করা। ধীরস্থিরতার মধ্যে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য এসে থাকে। কোন কাজে তাড়াহুড়া পরিহার করে শলা-পরামর্শভিত্তিক ধীরস্থিরতার সাথে কাজ করা নবী-রসূলদের ও সাহাবীদের কর্ম ছিল। আলোচ্য অধ্যায়ে এ বিষয়ের হাদীসগুলো আলোচনা করা হয়েছে।


৫০৫৩-[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক গর্ত থেকে মু’মিনকে দু’বার দংশন করা যায় না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْحَذَرِ وَالتَّأَنِّىْ فِى الْأُمُورِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يلْدغ الْمُؤمن من جُحر مرَّتَيْنِ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يلدغ المومن من جحر مرتين» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) থেকে কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেন, এ হাদীসটির পটভূমি হলো একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা, তা হলো : أَبُو غُرَّةَ ‘‘আবূ গুররাহ্’’ নামক এক ব্যক্তি কুরায়শ কাফিরদের মধ্যে একজন বিখ্যাত কবি ছিল। সে কবিতার ছন্দে মুসলিমদের কুৎসা রচনা করে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করত। অপরদিকে স্বীয় দলের দুরাচার লোকেদেরকে কবিতার মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অত্যাচার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করত। বাদ্র যুদ্ধের দিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ময়দানে নামলে তাকে বন্দি করে মদীনায় আনা হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, সে ভবিষ্যতে এরূপ আর করবে না। এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল যে, এ পাপিষ্ঠ তার সেই মন্দ চরিত্র থেকে ফেরেনি। এমনকি পরবর্তী বছর উহুদের যুদ্ধেও সে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কবিতা আবৃত্তি করে ময়দানে উপস্থিত হয়েছে। এবারও সে মুসলিমদের হাতে বন্দি হয়ে মদীনায় আনীত হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। এবারও সে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবে না বলে শক্তভাবে প্রতিশ্রুতি দিলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, لَا يلْدغ الْمُؤمن من جُحر مرَّتَيْنِ  ‘‘এক গর্ত থেকে মু’মিনকে দু’বার দংশন করা যায় না।’’ এরপর তাকে হত্যা করা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৩৩)

(لَا يلْدغ) অর্থাৎ মু’মিন ব্যক্তির এমন গাফিল বা অমনোযোগী হওয়া উচিত নয় যে, একবার অসচেতনতাবশতঃ ধোঁকা খেয়ে পুনরায় ধোঁকা খাওয়া। এটা দুনিয়ার ক্ষেত্রে যেমন আখিরাতের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনি। বলা হয়ে থাকে, এর অর্থ হলো মু’মিন কোন কাজের জন্য দুনিয়াতে শাস্তি পেলে পরকালে তাকে আর শাস্তি দেয়া হবে না। কথিত আছে : এ হাদীসটিতে অসাবধানতা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। আর বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আবূ ‘উবায়দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসটির অর্থ হলো, মু’মিন ব্যক্তির জন্য উচিত নয়, কোন কাজে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর পুনরায় সে কাজে ফিরে যাওয়া।

হাফিয ইবনু হাজার আল ‘আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বেশিরভাগ মুহাদ্দিস এটিই বুঝিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে এ হাদীসটির বর্ণনাকারী ইমাম যুহরী (রহিমাহুল্লাহ)-ও। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৩৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)