পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৫৯-[৪৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন পাপী লোকের প্রশংসা করা হয়, আল্লাহ তা’আলা ক্রুদ্ধ হন এবং তার প্রশংসার কারণে আল্লাহ তা’আলার ’আরশ কেঁপে ওঠে। (’বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আবূ খল্ফ’’ নামের একজন বর্ণনাকারী, ইনি একজন য‘ঈফ রাবী। ‘‘আল মীযানে’’ ইমাম যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এই বর্ণনাকারীকে ইবনু মা‘ঈন মিথ্যুক বলেছেন। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৩৯৯।
عَنْ
أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا مُدِحَ الْفَاسِقُ غَضِبَ الرَّبُّ تَعَالَى وَاهْتَزَّ لَهُ الْعَرْشُ» رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ (إِذَا مُدِحَ الْفَاسِقُ) যখন কোন ফাসিক বা পাপাচারী ব্যক্তির প্রশংসা করা হয়। যেমন তাকে সাইয়্যিদ বা সর্দার বলে সম্বোধন করা হয়।
(غَضِبَ الرَّبُّ تَعَالٰى) তখন আল্লাহ তা‘আলা প্রশংসাকারীর ওপর রাগান্বিত হন। (وَاهْتَزَّ لَهُ الْعَرْشُ) এবং তার উক্ত প্রশংসা করার কারণে ‘আরশ প্রকম্পিত হয়।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘আরশ প্রকম্পিত হওয়ার অর্থই হলো বিরাট কোন কাজ সংঘটিত হওয়া। কেননা তাতে সন্তুষ্ট প্রকাশ করা হয় যাতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট এবং রাগান্বিত হন। বরং সে কুফরীর একদম কাছে পৌঁছে যায়। কেননা সে যেন আল্লাহ যা হারাম করেছে তা হালাল বানিয়ে ফেলে; আর এটা বর্তমানে ব্যাপক মহামারীর আকার ধারণ করেছে। অধিকাংশ ‘আলিম, কবি-সাহিত্যিক এবং লোক দেখানো কুরআনের কারীদের মধ্যে। আর এটা যদি ফাসিকের প্রশংসা করার বিধান হয় তাহলে যারা যালিমের প্রশংসা করে এবং তাদের শরণাপন্ন হয় তাদের কি অবস্থা কি হবে? অথচ আল্লাহ বলেছেন- وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ ‘‘তোমরা যালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে...’’- (সূরাহ্ হূদ ১১ : ১১৩)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬০-[৪৯] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনকে বিশ্বাস ভঙ্গ ও মিথ্যা ব্যতীত অন্য যে কোন স্বভাবে তৈরি করা হয়। (আহমাদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ইনক্বিত্বা‘ বা বিচ্ছিন্নতা আছে। হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৩৮৯ পৃঃ।
وَعَنْ أَبِي
أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُطْبَعُ الْمُؤْمِنُ عَلَى الْخِلَالِ كلِّها إِلا الخيانةَ وَالْكذب» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যাঃ (يُطْبَعُ الْمُؤْمِنُ عَلَى الْخِلَالِ كلِّها) মু’মিন বান্দাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সর্বপ্রকার সুন্দর গুণ দিয়ে। (إِلا الخيانةَ وَالْكذب) আমানাতের খিয়ানাত এবং মিথ্যা- এই দু’টি মন্দ গুণ (দোষ) ব্যতীত। কেননা মু’মিন বান্দাকে সত্যবাদিতা ও আমানাতদারিতার উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। আর ইমাম ও সত্যবাদীর দাবী এটিই। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা صِيغَةِ الْحَصْر তথা সীমাবদ্ধকারণের শব্দ ব্যবহার করে বলেন- إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللهِ وَأُولٰئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ ‘‘শুধুমাত্র তারাই মিথ্যারোপ করে, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে না এবং তারাই মিথ্যাবাদী’’- (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ১০৫)। এমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهٗ ‘‘যার তার আমানাতদারী নেই তার ঈমান নেই।’’ (আহমাদ)
অতএব মু’মিন বান্দার পক্ষ থেকে যদি কখনো মিথ্যা এবং খিয়ানাত প্রকাশ পায় তাহলে সেটা হবে তার স্বভাব বহির্ভূত বিষয়। তার আসল সৃষ্টিগত স্বভাব থেকে নয়।
অথবা মু’মিন ব্যক্তি এ দু’টি মন্দ গুণ থেকে মুক্ত থাকবে, এটি মুবালাগা বা আধিক্য অর্থে প্রযোজ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬১-[৫০] আর ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমান’’ গ্রন্থে সা’দ ইবনু আবী ওয়াককাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন।
وَالْبَيْهَقِيّ فِي
شُعَبِ الْإِيمَانِ
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقاص
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬২-[৫১] সাফওয়ান ইবনু সালীম (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ঈমানদার কি ভীরু হতে পারে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’’হ্যাঁ’’। জিজ্ঞেস করা হলো, ঈমানদার কি কৃপণ হতে পারে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’’হ্যাঁ’’। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, ঈমানদার কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’’না’’।
[মালিক; আর ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমানে’’ মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন][1]
وَعَنْ صَفْوَانَ
بْنِ سَلِيمٍ أَنَّهُ قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ جَبَانًا؟ قَالَ: «نعم» . فَقيل: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ بَخِيلًا؟ قَالَ: «نَعَمْ» . فَقِيلَ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ كَذَّابًا؟ قَالَ: «لَا» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شعب الْإِيمَان» مُرْسلا
ব্যাখ্যাঃ (أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ جَبَانًا؟) মু’মিন বান্দা কি সাধারণত ভীরু হতে পারে? (قَالَ: نعم) তিনি বললেন, হ্যাঁ হতে পারে যা ঈমানের পরিপন্থী নয়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আবার জিজ্ঞেস করা হলো, মু’মিন বান্দা কি স্বভাবত কৃপণ হতে পারে? যেমনটি আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃوَكَانَ الْإِنْسَانُ قَتُورًا ‘‘...বাস্তবিকই মানুষ বড়ই সংকীর্ণচিত্ত’’- (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭ : ১০০)। তিনি বললেন, হ্যাঁ, হতে পারে তবে সাধারণ ঈমান বা পরিপূর্ণ ঈমানের পরিপন্থী নয়। তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হলো। (أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ كَذَّابًا؟) মু’মিন বান্দা কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? অর্থাৎ অধিক মিথ্যা কথা বলতে পারে অথবা স্বভাব ও চরিত্র অনুযায়ী মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন না, হতে পারে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬৩-[৫২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, শয়তান কোন কোন সময় মানুষের আকৃতি ধারণ করে কোন সম্প্রদায়ের কাছে আসে এবং তাদের সাথে মিথ্যা কথা বলে। অতঃপর দলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়। এরপর তাদের মধ্য থেকে কোন একজন বলে, আমি এক ব্যক্তির কাছ থেকে এ কথা বলতে শুনেছি, তাকে দেখলে চিনি; কিন্তু নাম জানি না। (মুসলিম)[1]
وَعَن
ابْن مسعودٍ قَالَ: إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَتَمَثَّلُ فِي صُورَةِ الرَّجُلِ فَيَأْتِي الْقَوْمَ فَيُحَدِّثُهُمْ بِالْحَدِيثِ مِنَ الْكَذِبِ فَيَتَفَرَّقُونَ فَيَقُولُ الرَّجُلُ مِنْهُمْ: سَمِعْتُ رَجُلًا أَعْرِفُ وَجْهَهُ وَلَا أَدْرِي مَا اسْمُهُ يُحَدِّثُ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَتَمَثَّلُ فِي صُورَةِ الرَّجُلِ) শয়তান কখনো কখনো মানুষের রূপ ধারণ করে এবং কোন সম্প্রদায়ের জনসমাজে এসে তাদের নিকট মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করে, ফলে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তখন তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি এ কথা বলে- আমি একজন লোককে এ কথা বলতে শুনেছিলাম আমি চেহারা দেখলে চিনব কিন্তু তার নাম জানি না। সে লোকটি এরূপ এরূপ কথা বলে। সম্ভবত এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসই হবে। আর এটাই মিথ্যার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম। ফলে সে কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আর এজন্য শয়তানের নেতা এর উপর গুরুত্বারোপ করে এবং মানুষের আকৃতি ধারণ করে, অভ্যন্তরীণ কুমন্ত্রণাকে শক্তিশালী করার জন্য। অথবা তা থেকে ঝগড়া-ফাসাদের শাখা প্রশাখা বের করার জন্য। যেমন- মিথ্যা অপবাদ এবং অনুরূপ অন্যান্য কিছু।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসের শিক্ষা হলো- কারো কাছ থেকে কোন কথা শুনলে খুব সতর্ক হওয়া উচিত এবং যদি বক্তা সম্পর্কে জানা যায় যে, সে সত্যবাদী তাহলে তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করা জায়িয আর যদি সে মিথ্যুক হয় তাহলে তার কথা বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এ মর্মে সহীহ মুসলিমে হাদীস রয়েছে- كَفٰى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ একজন মানুষ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সেযা শুনবে, যাচাই না করে তাই বর্ণনা করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬৪-[৫৩] ’ইমরান ইবনু হিত্ত্বান (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি আবূ যার (রাঃ)-এর কাছে এলে তাঁকে কালো চাদর জড়ানো অবস্থায় একাকী মসজিদে অবস্থানরত পেলাম। আমি বললামঃ হে আবূ যার! এ একাকিত্ব কিরূপ? তখন আবূ যার(রাঃ) বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ একাকী থাকা খারাপ সহ-উপবেশনকারীর চেয়ে উত্তম এবং ভালো সহ-উপবেশনকারী একাকী থাকার চেয়ে ভালো। ভালো কথা শিক্ষা দেয়া চুপ থাকার চেয়ে উত্তম, আর চুপ থাকা খারাপ শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম।[1]
‘আত্ তালখীস’ গ্রন্থে ইমাম যাহাবী বলেনঃ সহীহ নয়। হাদীসটি য‘ঈফ কারণ সনদে আছে শরীক ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল কাযী, তার স্মৃতিশক্তি খারাপ। ‘আত তাকবীর’ গ্রন্থে হাফিয ইবনু হাজার আল ‘আসকালানী (রহ) বলেনঃ সে সত্যবাদী তবে অনেক ভুল করে। কুফার বিচারক পদে আসীন হওয়ার পর থেকে তার মুখস্থশক্তি পরিবর্তন হয়ে যায়। বিস্তারিত সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৮৫৩।
وَعَنْ عِمْرَانَ
بْنِ حِطَّانَ قَالَ: أَتَيْتُ أَبَا ذَرٍّ فَوَجَدْتُهُ فِي الْمَسْجِدِ مُحْتَبِيًا بِكِسَاءٍ أَسْوَدَ وَحده. فَقلت: يَا أَبَا ذَر ماهذه الْوَحْدَةُ؟ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْوَحْدَةُ خَيْرٌ مِنْ جَلِيسِ السُّوءِ وَالْجَلِيسُ الصَّالِحُ خَيْرٌ مِنَ الْوَحْدَةِ وَإِمْلَاءُ الْخَيْر خيرٌ من السكوتِ والسكوتُ خيرٌ من إِملاءِ الشَّرّ»
ব্যাখ্যাঃ (أَتَيْتُ أَبَا ذَرٍّ فَوَجَدْتُهٗ فِي الْمَسْجِدِ...) আমি আবূ যার (রাঃ)-এর নিকট আসলাম, মসজিদে একাকী কালো চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, (يَا أَبَا ذَر ماهذه الْوَحْدَةُ؟) হে আবূ যার! তুমি কেন একাকী বসে আছ? তখন তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন- (مِنْ جَلِيسِ السُّوءِ) খারাপ সঙ্গীর সাহচর্যের চেয়ে একাকী থাকাই উত্তম। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে ভালো সঙ্গী নিতান্তই কম।
(وَإِمْلَاءُ الْخَيْر خيرٌ من السكوتِ والسكوتُ خيرٌ من إِملاءِ الشَّرّ) এবং চুপ থাকার চেয়ে ভালো কিছু করা উত্তম আর অন্যায় কিছু করার চেয়ে চুপ থাকাই ভালো। কেননা নিঃসঙ্গ ও একাকী চুপচাপ থাকাই ভলো। অর্থাৎ নিঃসঙ্গ ও একাকী চুপচাপ থাকা অন্যায় থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬৫-[৫৪] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির নীরব থাকায় যে মর্যাদা লাভ হয়, তা ষাট বছরের নফল ’ইবাদাতের চেয়েও উত্তম।[1]
وَعَن عِمْرَانَ
بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَقَامُ الرَّجُلِ بِالصَّمْتِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سنة»
ব্যাখ্যাঃ (مَقَامُ الرَّجُلِ بِالصَّمْتِ) কোন ব্যক্তির জন্য অনর্থক কাজের চেয়ে চুপচাপ থাকা তথা নিরবতা অবলম্বন করা। (أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سنة) ষাট বছর ‘ইবাদাতের চেয়ে উত্তম তথা ‘ইবাদাতের পাশাপাশি অধিক কথা বলা এবং সৎকাজে সুপ্রতিষ্ঠিত না থাকার চেয়ে চুপ থাকাই উত্তম।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘ইবাদাত করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় আর নিরবতা অবলম্বন করলেই তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যেমন- হাদীসে এসেছে, مَنْ صَمَتَ نَجَا যে চুপ থাকল সে পরিত্রাণ পেল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬৬-[৫৫] আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলাম। অতঃপর আবূ যার(রাঃ) দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন। তিনি এতটুকু পর্যন্ত বললেন যে, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। কেননা এটা তোমার সকল কাজের অধিক সৌন্দর্যের কারণ হবে। আমি বললামঃ আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কুরআন পাঠ ও আল্লাহর স্মরণকে তোমার জন্য আবশ্যিক করে নাও। কেননা এটা তোমার জন্য আকাশে স্মরণযোগ্য এবং জমিনে আলোকস্বরূপ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ দীর্ঘ সময় নীরব থাকো। কেননা নিরবতা শয়তানকে দূরীভূত করে এবং তোমার দীনী কাজে তোমার জন্য সহায়ক হয়। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ অধিক হাসি থেকে নিরাপদে থাকো। কেননা এটা অন্তরকে মৃত করে ফেলে এবং মুখমণ্ডল ের জ্যোতিকে দূর করে দেয়। আমি বললামঃ আরো কিছু বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তিক্ত হলেও ন্যায় কথা বলবে। আমি অনুরোধ করলামঃ আরো উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে কোন নিন্দুকের তিরস্কারকে ভয় করো না। আমি বললামঃ আমাকে আরো কিছু বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন তোমার অন্তরে অপরের কুৎসা রটানোর ইচ্ছা হয়, তখন এই ভেবে তোমার ইচ্ছাকে থামিয়ে দেবে যে, তোমার মধ্যে ত্রুটি রয়েছে।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ’’ নামের রাবীর জীবনীতে বলা হয়েছে, সে ‘আবদুল মালিক ইবনু জুরায়জ থেকে অনেক উল্টাপাল্টা বর্ণনা করত। আর ‘উকায়লী তাঁর ‘‘আয্ যু‘আফাহ্’’ নামক কিতাবে ৪/৪০৪ পৃঃ উল্লেখ করেছেন, তার হাদীসের অনুসরণ করা যায়নি, আর হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সে প্রসিদ্ধ নয়। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১২/৩১৭ পৃঃ।
وَعَن أبي
ذرٍّ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ الْحَدِيثَ بِطُولِهِ إِلَى أَنْ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَوْصِنِي قَالَ: «أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللَّهِ فَإِنَّهُ أَزْيَنُ لِأَمْرِكَ كُلِّهِ» قُلْتُ: زِدْنِي قَالَ: «عَلَيْكَ بِتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ وَذِكْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَإِنَّهُ ذِكْرٌ لَكَ فِي السَّمَاءِ وَنُورٌ لَكَ فِي الْأَرْضِ» . قُلْتُ: زِدْنِي. قَالَ: «عَلَيْكَ بِطُولِ الصَّمْتِ فَإِنَّهُ مَطْرَدَةٌ لِلشَّيْطَانِ وَعَوْنٌ لَكَ عَلَى أَمْرِ دِينِكَ» قُلْتُ: زِدْنِي. قَالَ: «إِيَّاكَ والضحك فَإِنَّهُ يُمِيتُ الْقَلْبَ وَيَذْهَبُ بِنُورِ الْوَجْهِ» قُلْتُ: زِدْنِي. قَالَ: قُلِ الْحَقَّ وَإِنْ كَانَ مُرًّا . قُلْتُ: زِدْنِي. قَالَ: «لَا تَخَفْ فِي اللَّهِ لومة لائم» . قلت: زِدْنِي. لِيَحْجُزْكَ عَنِ النَّاسِ مَا تَعْلَمُ مِنْ نَفْسِكَ
ব্যাখ্যাঃ (قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَوْصِنِي قَالَ : أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللهِ) আবূ যার (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দিচ্ছি। এটা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলের জন্য উপদেশ। যেমন- আল্লাহ বলেনঃ
وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللهَ
‘‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদেরকে আর তোমাদেরকেও আদেশ দিয়েছি যে, আল্লাহকে ভয় কর।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১৩১)
(فَإِنَّهٗ أَزْيَنُ لِأَمْرِكَ) কেননা তা (তাকওয়া) তোমার দীনের সমস্ত বিষয় বিশ্বাস-কথা-কাজ সবকিছুকে সুসজ্জিত করে তোলে। যেহেতু তাকওয়া প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সর্বপ্রকার শির্ক বর্জন করা, কাবীরাহ্ ও সগীরাহ্ গুনাহ থেকে বিরত থাকা, সন্দেহমূলক বিষয় পরিহার, কুপ্রবৃত্তি থেকে দূরে থাকা, যাবতীয় অন্যায় পরিহার করতে সহায়তা করে।
(قُلْتُ: زِدْنِي) ‘‘আমি বললামঃ সৎকাজ বেশী করে সম্পাদন করতে আমাকে আরো উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (عَلَيْكَ بِتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ) তুমি বেশী করে কুরআন তিলাওয়াত করবে, কেননা তা তাকওয়া অবলম্বনের সহায়ক ‘আমল এবং উচ্চ মর্যাদা লাভের উপায় এবং বেশী করে আল্লাহর জিকর করবে। কেননা কুরআন তিলাওয়াত এবং জিকর- এ দু’টি ‘আমল আসমানে তোমাকে নাম স্মরণ করবে এবং পৃথিবীতে তোমার জন্য আলো হবে।
(قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আরো উপদেশ দিন যাতে আপনার উল্লেখিত ‘আমলগুলো সম্পাদন করতে সহায়ক হয়। তিনি বললেন- (عَلَيْكَ بِطُولِ الصَّمْتِ) তোমাকে নিরবতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা তা শয়তানকে তাড়াতে সহায়তা করবে এবং তোমার দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে সহায়তা করবে। (قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আমাকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, إِيَّاكَ وَكَثْرَةَ الضَّحِكِ তুমি অধিক হাসি থেকে দূরে থাকবে। কেননা অধিক হাস্য অন্তরকে মেরে ফেলে তথা অন্তরে কঠোরতা আনয়ন করে যার দরুন উদাসীনতা সৃষ্টি করে। ফলে আল্লাহর স্মরণ থেকে অন্তর উদাসীন হলে অন্তর মরে যায়।
(وَيَذْهَبُ بِنُورِ الْوَجْهِ) এবং মুখের জ্যোতি চলে যায়। তথা মুখের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য দূর হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ (سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ) ‘‘...তাদেরকে তুমি দেখবে রুকূ‘ ও সাজদায় অবনত অবস্থায়...’’- (সূরাহ্ আল ফাতহ ৪৮ : ২৯)।
(قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আমাকে আরো উপদেশ দিন। তিনি বললেন, (قُلِ الْحَقَّ) তুমি সত্য কথা বলবে যদিও সত্য কথা অন্তরে অথবা বাতিলপন্থীদের নিকট তিক্ত মনে হয় তথা বিস্বাদ সৃষ্টি করে।
(قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আমাকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, (لَا تَخَفْ فِي اللهِ لومة لائم) তুমি আল্লাহর জন্য এবং তার ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে কারো তিরস্কারকে ভয় করবে না। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সকলের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে- আল্লাহর পথে অটুট থাকা এবং মানুষের প্রশংসা অথবা তিরস্কারকে উপেক্ষা করে চলা।
যেমনটি আল্লাহ বলেছেনঃ
(وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلًا) ‘‘...এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি মগ্ন হও’’- (সূরাহ্ আল মুয্যাম্মিল ৭৩ : ৮)।
(قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আমাকে আরো কিছু বলুন। তিনি বললেন, তুমি তোমাকে মানুষের দোষত্রুটি অন্বেষণ থেকে দূরে রাখবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬৭-[৫৬] আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হে আবূ যার! তোমাকে কি এমন দু’টো স্বভাবের কথা বলব, যে স্বভাব দু’টি পিঠে খুব হাল্কা; কিন্তু পাপ-পুণ্যের পাল্লায় খুব ভারী? আমি বললামঃ জ্বী বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ দীর্ঘ নিরবতা ও উত্তম ব্যবহার। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! বান্দা এ দু’টো কাজের মতো উত্তম আর কোন কাজ করে না।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়া কারণ, এর সনদে ‘‘আবূ বকর’’ নামের একজন বর্ণনাকারী আছে, তার আসল নাম বাশ্শার ইবনুল হাকাম ইবনু ‘আদী তাঁর ‘‘আল কামিল’’ নামক কিতাবে ২/২৩ পৃষ্ঠাতে বলেন, সে একজন বাসরার অধিবাসী। সে সাবিত আল বুনানী ও অন্যান্যদের থেকে হাদীস মুনকার করত। দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ২৯৯৯।
وَعَنْ أَنَسٍ
عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى خَصْلَتَيْنِ هُمَا أَخَفُّ عَلَى الظَّهْرِ وَأَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ؟» قَالَ: قُلْتُ: بَلَى. قَالَ: «طُولُ الصَّمْتِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا عَمِلَ الْخَلَائق بمثلهما»
ব্যাখ্যাঃ (يَا أَبَا ذَرٍّ أَلَا أَدُلُّكَ عَلٰى خَصْلَتَيْنِ هُمَا أَخَفُّ عَلَى الظَّهْرِ) হে আবূ যার! আমি কি তোমাকে এমন দু’টি স্বভাবগত ‘আমলের সন্ধান দিব যা পালনকারীর পক্ষ শরীরে বা মুখে বহন করা খুবই সহজ এবং ওজনের পাল্লায় খুবই ভারী হবে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বোধগম্য বিষয়কে বাস্তবতার সাথে উপমা দিয়ে বলেছেন যাতে গ্রহণ করা খুবই সহজ হয়। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন- كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ দু’টি বাক্য মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ এবং ওজনের পাল্লায় খুবই ভারী। (বুখারী ও মুসলিম)
(قَالَ: قُلْتُ: بَلٰى) তিনি বলেন- আমি বললাম, (হে আল্লাহর রসূল!) অবশ্যই আমাকে বলুন। তিনি বললেন- (طُولُ الصَّمْتِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ) নিরবতা পালন করা এবং উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া। এরপর তিনি বললেন, সেই সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ সৃষ্টিকুলের মাঝে এটি ‘আমলের মতো ‘আমল আর নেই।
ইবনু আবুদ্ দুন্ইয়া (রহিমাহুল্লাহ) সফওয়ান ইবনু সালিম থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ أَلَا أُنْبِئُكَ بِأَمْرَيْنِ خَفِيفٌ أَمْرُهُمَا عَظِيمٌ أَجْرُهُمَا لَمْ تَلْقَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ بِمِثْلِهِمَا: طُولُ الصَّمْتِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ আমি কি তোমাদেরকে অতি সহজ দু’টি ‘ইবাদাতের সন্ধান দিব না? যা শরীরের পক্ষ বহন করা খুবই সহজ এবং তাদের সাওয়াব অনেক বেশী। আল্লাহর নিকট তার মতো আর কিছু পাবে না, তা হলো নিরবতা এবং উত্তম চরিত্র। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬৮-[৫৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, তখন তিনি (আবূ বকর সিদ্দীক) তাঁর কোন এক দাসকে ভৎর্সনা করছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ভৎর্সনাকারী ও সিদ্দীক- কখনো একই ব্যক্তি হতে পারে না। পবিত্র কা’বার রবে্র কসম! এটা শুনে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) ঐ দিনই কিছু দাস মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেনঃ ভবিষ্যতে আমি কখনো এ কাজের পুনরাবৃত্তি করব না। (বায়হাক্বী উপরিউক্ত পাঁচটি হাদীস ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَن عَائِشَة
قَالَتْ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَبِي بَكْرٍ وَهُوَ يَلْعَنُ بَعْضَ رَقِيقِهِ فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ فَقَالَ: «لَعَّانِينَ وَصِدِّيقِينَ؟ كَلَّا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ» فَأَعْتَقَ أَبُو بَكْرٍ يَوْمَئِذٍ بَعْضَ رَقِيقِهِ ثُمَّ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: لَا أَعُودُ. رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الْخَمْسَةَ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ (مَرَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَبِي بَكْرٍ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, এমতাবস্থায় যে, তিনি তার কতক চাকরকে অভিসম্পাত করছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে লক্ষ্য করলেন অথবা আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) তার দিকে লক্ষ্য করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (لَعَّانِينَ وَصِدِّيقِينَ؟) সিদ্দীক লা‘নাতকারীও হতে পারে? অথবা তুমি কি লা‘নাতকারী এবং সিদ্দীক তথা এ দু’টি গুণের সমাবেশ ঘটতে দেখেছ?
(كَلَّا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ) কখনই নয়, কা‘বার রবের শপথ।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে- তোমরা কি সিদ্দীক কে অভিসম্পাতকারীরূপে দেখেছ? কখনই নয়, আল্লাহর কসম! তোমরা এ দু’টি গুণকে একত্রে কোন দিন দেখতে পাবে না। এ বাক্যে আশ্চর্যতা প্রকাশ পেয়েছে।
(فَأَعْتَقَ أَبُو بَكْرٍ يَوْمَئِذٍ بَعْضَ رَقِيقِه) অতঃপর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) অনিচ্ছাকৃত ভুলের কাফফারাহ্ হিসেবে তার কতক দাসকে মুক্ত করে দিলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওযর পেশ করতে এলেন। অতঃপর বললেনঃ আমি এমন কাজ আর কখনো করবো না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬৯-[৫৮] আসলাম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’উমার (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট আসলেন, তখন আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ) নিজের জিহবা টানছিলেন। তখন ’উমার(রাঃ) বললেনঃ থামুন, দেখি! আপনি কি করছেন? আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ) বললেনঃ এ জিহবাই আমাকে ধ্বংসের স্থানসমূহে নিক্ষেপ করেছে। (মালিক)[1]
وَعَنْ أَسْلَمَ قَالَ: إِنَّ عُمَرَ دَخَلَ يَوْمًا على أبي بكر الصِّدّيق رَضِي الله عَنْهُم وَهُوَ يَجْبِذُ لِسَانَهُ. فَقَالَ عُمَرُ: مَهْ غَفَرَ الله لَك. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: إِنَّ هَذَا أَوْرَدَنِي الْمَوَارِدَ. رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ عُمَرَ دَخَلَ يَوْمًا على أَبِىْ بكر الصِّدّيق) একদিন ‘উমার আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করলেন। এমতাবস্থায় যে, তিনি তার জিহ্বাকে টেনে ধরে আছেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, (مَهْ) এ কাজ থেকে বিরত হোন। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তিনি দু‘আ অর্থে এটা বলেছেন অথবা তার ব্যাপারে যা শুনেছেন সে ব্যাপারে সংবাদমূলক। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) তাকে বললেন- নিশ্চয় এই জিহ্বাই জিহ্বার প্রতি ইঙ্গিত করে বলার উদ্দেশ্য হলো এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন অথবা তাকে তুচ্ছকরণ।
(أَوْرَدَنِي الْمَوَارِدَ) আমাকে ধ্বংসের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে বা আমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।
বায়হাক্বীর বর্ণনায় এসেছে- তিনি বলেন, নিশ্চয় এটি আমাকে ধ্বংসের অনিষ্টতায় প্রবেশ করিয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে কেবল জিহ্বাই তার কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহর নিকট অভিযোগ করবে।
ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি নিজেকে অহেতুক কথা বলা থেকে বিরত রাখার জন্য মুখে পাথরকুচি রাখতেন এবং তিনি তার জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করে বলতেন- এটাই আমাকে ধ্বংসের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৭০-[৫৯] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের পক্ষ থেকে আমাকে ছয়টি জামানাত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হব- ১. যখন তোমরা কথা বলবে, সত্য বলবে, ২. যখন প্রতিশ্রুতি দেবে, প্রতিশ্রুতি পালন করবে, ৩. যখন তোমাদের কাছে গচ্ছিত রাখা হবে, তা পরিশোধ করবে, ৪. নিজের লজ্জাস্থানসমূহকে হিফাযাত করবে, ৫. নিজ দৃষ্টি অবনমিত রাখবে, ৬. নিজের হস্তদ্বয়কে আয়ত্তে রাখবে।[1]
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اضْمَنُوا لِي سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنُ لَكُمُ الْجَنَّةَ: اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ وأدوا إِذا ائتمتنم واحفظوا فروجكم وغضوا أبصاركم وَكفوا أَيْدِيكُم
ব্যাখ্যাঃ (أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "اضْمَنُوا لِي سِتًّا) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার জন্য তোমাদের ৬টি অভ্যাসের জামিনদার হও তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিনদার হব। অর্থাৎ কৃতকার্যতার সাথে জান্নাতে প্রবেশের অথবা নৈকট্যপ্রাপ্ত উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতীদের স্তরে পৌঁছানোর জামিনদার হব।
(اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ) যখন তোমরা কথা বলবে, সত্য বলবে।
(أَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ) যখন অঙ্গীকার করবে তখন তা পূর্ণ করবে।
(وأدوا إِذا ائتمتنم) যখন তোমাদের নিকট আমানাত রাখা হবে, তখন তোমরা আমানাত আদায় করবে এবং সাক্ষ্য প্রদান করবে।
(وغضوا أبصاركم) যার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হারাম তা হতে দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে।
(وَكفوا أَيْدِيكُم) তোমরা তোমাদের হাতকে জুলুম করা হতে বিরত রাখবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৭১-[৬০], ৪৮৭২-[৬১] ’আবদুর রহমান ইবনু গানম ও আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যাদেরকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়। আর আল্লাহ তা’আলার নিকৃষ্ট বান্দা তারা, যারা মানুষের পরোক্ষ নিন্দা করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং পূত-পবিত্র লোকেদের পদস্খলন প্রত্যাশা করে। (বর্ণিত হাদীসদ্বয় আহমাদ ও বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ غَنْمٍ وَأَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خِيَارُ عِبَادِ اللَّهِ الَّذِينَ إِذَا رُؤُوا ذُكِرَ اللَّهُ. وَشِرَارُ عِبَادِ اللَّهِ الْمَشَّاؤُونَ بِالنَّمِيمَةِ وَالْمُفَرِّقُونَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ الْبَاغُونَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ» . رَوَاهُمَا أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ (خِيَارُ عِبَادِ اللهِ الَّذِينَ إِذَا رُؤُوا ذُكِرَ اللهُ) আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তারাই উত্তম যাদেরকে দেখলে আল্লাহর স্মরণ হয়। এখানে এ হাদীসের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে- الْمُؤْمِنُ مِرْآةُ الْمُؤْمِنِ মু’মিন হচ্ছে অন্তরের আয়না স্বরূপ।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসটির দু’টি মর্মার্থ থাকতে পারে।
১। তারা আল্লাহর সাথে এমন গভীর সম্পর্ক বজায় রাখে যে, তাদেরকে যারাই দেখবে তাদের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ জেগে উঠবে, কেননা তাদের চেহারায় ‘ইবাদাতের ছায়া ভেসে রয়েছে।
২। যারাই তাদেরকে দেখবে তারাই আল্লাহকে স্মরণ করবে। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, النَّظَرُ إِلٰى وَجْهِ عَلِيٍّ عِبَادَةٌ এ হাদীসের মর্ম হলো, ‘আলী (রাঃ) যখন জনসম্মুখে বের হতেন তখন মানুষেরা বলত লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, কেমন সম্মানিত এ বালকটি, কেমন বীরপুরুষ ছেলেটি, এ ছেলেটি কত জ্ঞানী, কত সহিষ্ণু। তাকে দেখলেই তারা তাওহীদের বাণী বলতে উদ্বুদ্ধ হয়।
(وَشِرَارُ عِبَادِ اللهِ الْمَشَّاؤُونَ بِالنَّمِيمَةِ) এবং আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম হচ্ছে যারা ফিতনাহ্-ফাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশে একজনের কথা অন্যজনের নিকট নিয়ে বেড়ায়।
(الْمُفَرِّقُونَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ) প্রিয়জনের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে।
(الْبَاغُونَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ) পুত-পবিত্র লোকেদের ধ্বংস, বিপর্যয় ও পদস্খলন কামনা করে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৭২-[৬১] দেখুন পূর্বের হাদিস।
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ غَنْمٍ وَأَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خِيَارُ عِبَادِ اللَّهِ الَّذِينَ إِذَا رُؤُوا ذُكِرَ اللَّهُ. وَشِرَارُ عِبَادِ اللَّهِ الْمَشَّاؤُونَ بِالنَّمِيمَةِ وَالْمُفَرِّقُونَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ الْبَاغُونَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ» . رَوَاهُمَا أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَان»
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৭৩-[৬২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’জন সায়িম (রোযাদার) ব্যক্তি যুহর কিংবা ’আসর সালাত আদায় করল। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সমাপন করে বললেনঃ তোমরা যাও পুনরায় উযূ করো এবং সালাত আদায় করো, আর তোমাদের সওম (রোযা) পূর্ণ করে অন্য কোনদিন সেটা কাযা করো। তারা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! কেন কাযা করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেননা তোমরা অমুক ব্যক্তির পরোক্ষ নিন্দা-রটনা করেছ।[1]
হাদীসটির ব্যাপারে আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি হাদীসটির সানাদ সম্পর্কে এখনও অবহিত হতে পারিনি। আর আমি একে সহীহ মনে করি না। য‘ঈফাহ্ ৮৩৫ নং হাদীসের শেষে। ‘‘জাওয়ামিউল কালিম’’ সফ্টওয়্যার হাদীসটিকে মাওযূ‘ হিসেবে উল্লেখ করেছে। কারণ, এর সনদে ‘‘আল মুসান্না ইবনু বকর’’ নামের রাবী মাতরূকুল হাদীস এবং ‘‘আববাদ ইবনু মানসূর’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ।
وَعَن ابنِ
عبَّاسٍ أَنَّ رَجُلَيْنِ صَلَّيَا صَلَاةَ الظُّهْرِ أَوِ الْعَصْرِ وَكَانَا صَائِمَيْنِ فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ قَالَ: «أَعِيدَا وُضُوءَكُمَا وَصَلَاتَكُمَا وامْضِيا فِي صومكما واقضيا يَوْمًا آخَرَ» . قَالَا: لِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «اغتبتم فلَانا»
ব্যাখ্যাঃ (أَنَّ رَجُلَيْنِ صَلَّيَا صَلَاةَ الظُّهْرِ أَوِ الْعَصْرِ) দুই ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুহর অথবা ‘আসরের সালাত আদায় করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে বললেনঃ তোমরা দু’জন পুনরায় তোমাদের উযূ করা এবং সালাত আদায় কর, আর ইফত্বারের মাধ্যমে সওম ভঙ্গ করো না এবং অন্য আরেকদিন সওমকে পুনরায় আদায় করে নিও।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সিয়ামের ক্ষেত্রে পুনরায় আদায় করার নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর আলোকে أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا ‘‘...তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?...’’- (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ১২)। আর সালাতের ক্ষেত্রে কারণ হলো যেহেতু সে তার ভাইয়ে রক্ত ও গোশত ভক্ষণের মাধ্যমে অপবিত্র হয়ে গেছে।
মূল কথা হলো- ভালো কাজ করার পূর্বে মন্দ কাজ সম্পাদন করলে তার পূর্ণতা হ্রাস পায়। যেমনভাবে অন্যায়ের পর ভালো কাজ করলে তা দূরীভূত হয়। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ‘‘...পুণ্যরাজি অবশ্যই পাপরাশিকে দূর করে দেয়...’’- (সূরাহ্ হূদ ১১ : ১৪)।
সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে বান্দার হক নষ্ট করে গীবত করার কঠোরতা উল্লেখ করেছেন। কখনো সম্পূর্ণ ‘ইবাদাত নষ্ট হয়ে যায়, যেহেতু গীবতকারীর ‘আমল থেকে গীবতকৃত ব্যক্তিকে সাওয়াবে দিয়ে দেয়া হয়, ফলে অপরাধী ব্যক্তি সালাত ও সওম শূন্য হয়ে যায়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সালাত ও সিয়াম পুনরায় আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটা ছিল ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের জন্য খাস ফাতাওয়া অন্যের জন্য এ বিধানটি ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য নয়।
(قَالَا) তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, (اغتبتم فلَانا) ‘‘তোমরা অমুক বান্দার গীবত করেছ।’’ অর্থাৎ সালাত আদায়ের পূর্বে এবং উযূর পরে ও সওম শুরুর পূর্বে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৭৪-[৬৩], ৪৮৭৫-[৬৪] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী ও জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’গীবত’’ ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! গীবত ব্যভিচার হতে ভয়ঙ্কর কিভাবে হতে পারে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ ব্যভিচার করে, অতঃপর তওবা্ করে এবং আল্লাহ তা’আলা অনুগ্রহ করে তওবা্ কবুল করেন। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, অতঃপর ব্যভিচারী তওবা্ করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করেন; কিন্তু পরোক্ষ নিন্দাকারীকে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ না যার নিন্দা করা হলো সে ক্ষমা করে।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আববাদ ইবনু কাসীর’’ নামের রাবী মাতরূক। ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সে অনেক মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করেছে। য‘ঈফাহ্ ১৮৪৬।
وَعَن أبي سعيدٍ وجابرٍ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِ» - وَفِي رِوَايَةٍ: «فَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ اللَّهُ لَهُ وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يغفِرَها لَهُ صَاحبه»
ব্যাখ্যাঃ (الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا) গীবত, যিনা-ব্যভিচারের চেয়েও আরো মারাত্মক ভয়ংকর কাজ তথা বান্দার অধিকার সংশ্লিষ্ট কাজের বিপরীত একটি কঠিন অপরাধমূলক কাজ।
(قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟) সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিভাবে গীবত, যিনা-ব্যভিচারের চেয়েও কঠিন? অথচ যিনাও তো একটি বড় গুনাহ- এ ব্যাপারে কঠিন ভীতি প্রদর্শন ও হত্যা, বেত্রাঘাত ইত্যাদি শাস্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
(قَالَ: إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ) তিনি উত্তরে বললেনঃ কোন ব্যক্তি যিনা করে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আল্লাহও তাকে ক্ষমা করে দেন, ফলে সে সত্য ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, সে তাওবাহ্ করলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। কিন্তু গীবতকারী যদিও আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তথাপি গীবতকৃত ব্যক্তি ক্ষমা করে না দেয়া পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করা হয় না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৭৫-[৬৪] দেখুন পূর্বের হাদীস।
وَعَن أبي سعيدٍ وجابرٍ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِ» - وَفِي رِوَايَةٍ: «فَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ اللَّهُ لَهُ وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يغفِرَها لَهُ صَاحبه»
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৭৬-[৬৫] আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যিনাকারী বা ব্যভিচারী তওবা্ করে; কিন্তু পরোক্ষ নিন্দাকারীর জন্য তওবা্ নেই। [উপরিউক্ত তিনটি হাদীস ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।][1]
হাদীসটি মাওযূ‘ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু জামীল ইবনু মিহরান’’ নামের বর্ণনাকারী মাজহূলুল হাল এবং অজ্ঞাত। আরো এক ব্যক্তি আছে যার পরিচয় জানা যায়নি (عن رجل)। জাওয়ামিউল কালিম সফটওয়্যার।
وَفِي رِوَايَةِ
أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: «صَاحِبُ الزِّنَا يَتُوبُ وَصَاحِبُ الْغِيبَةِ لَيْسَ لَهُ تَوْبَةٌ» . رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
ব্যাখ্যাঃ (صَاحِبُ الزِّنَا يَتُوبُ) যিনাকারীর পক্ষ থেকে তাওবার আশা করা যায় অথবা তার নিকট বড় অপরাধ হওয়ায় অধিকাংশ সময় নিজেই তাওবাহ্ করে থাকে।
(وَصَاحِبُ الْغِيبَةِ لَيْسَ لَهٗ تَوْبَةٌ) কিন্তু গীবতকারীর জন্য তাওবার সুযোগ নেই। অর্থাৎ গীবতকারী অধিকাংশ সময় বিষয়টিকে সহজ ভেবে তাওবাহ্ করে না অথচ এটা আল্লাহর নিকট বিরাট অপরাধ অথবা গীবতকারী এ ব্যাপারে সন্তুষ্টচিত্তে থাকায় তার স্বতন্ত্র কোন তাওবার সুযোগ হয় না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৭৭-[৬৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গীবতের কাফফারাহ্ হলো, গীবতকারী যার গীবত করেছে, তার জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করবে এবং এভাবে বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে এবং তাকে ক্ষমা করো। [ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’দা’ওয়াতুল কাবীর’’-এ বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেন, এ হাদীসটির বর্ণনা সূত্র দুর্বল।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আমবাসাহ্’’ নামের বর্ণনাকারীর ব্যাপারে ইমাম বুখারী বলেনঃ যাহিবুল হাদীস। আবূ হাতিম বলেন, সে হাদীস তৈরি করত। ইবনু হিব্বান বলেনঃ সে অনেক মিথ্যা হাদীস তৈরি করেছে, সুতরাং তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা বৈধ নয়। ‘‘আত্ তাকরীব’’ গ্রন্থে বলা হয়েছে মাতরূক। আবূ হাতিম তাকে হাদীস তৈরিকারী বলেছেন। এছাড়াও আশ্‘আস ইবনু শাবীব নামের বর্ণনাকারী মাজহূলুল হাল, য‘ঈফাহ্ ১৫১৯। ‘‘জাওয়ামিউল কালিম’’ সফ্টওয়্যার হাদীসটিকে মাওযূ‘ বলে উল্লেখ করেছে।
وَعَنْ أَنَسٍ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ كَفَّارَةِ الْغِيبَةِ أَنْ تَسْتَغْفِرَ لِمَنِ اغْتَبْتَهُ تَقُولُ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَلَهُ «. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي» الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ وَقَالَ: فِي هَذَا الْإِسْنَاد ضعف
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ مِنْ كَفَّارَةِ الْغِيبَةِ) গীবতের কাফফারার মধ্য হতে এটি একটি। অর্থাৎ যথাযথভাবে তাওবাহ্ করার পর গীবতের কাফফারার মধ্যে একটি হচ্ছে :
(أَنْ تَسْتَغْفِرَ لِمَنِ اغْتَبْتَهٗ) তুমি যার গীবত করেছ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
(تَقُولُ: اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَلَهٗ) এ কথা বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করে দাও। (এখানে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যদি গীবতকারী দলবদ্ধ জামা‘আত হয়, সেদিকে লক্ষ্য করে অথবা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি লক্ষ্য করে)
হাদীসের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, এ ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা তখন হবে যখন গীবত তার নিকট না পৌঁছে। যদি গীবত তার কাছে পৌঁছে থাকে তাহলে অবশ্যই তার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি নিতে হবে এভাবে : তার নিকট গিয়ে উক্ত কথা উল্লেখ করে ক্ষমা চাইবে। যদি তা করা সম্ভব না হয়, তাহলে প্রতিজ্ঞা করবে যে, যখনই তাকে পাবে তার নিকট গিয়ে ক্ষমা চাইবে। যদি সে ক্ষমা করে দেয় তাহলেই তার ওপর থেকে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যদি এ সমস্ত কাজ করতে অপারগ হয় গীবতকৃত ব্যক্তির মারা যাওয়ার কারণে বা তার অনুপস্থিতির কারণে সেক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং তার অনুগ্রহ ও দয়া কামনা করবে এবং প্রতিপক্ষকে নিজ দয়ায় যেন সন্তুষ্ট করে দেন সেই প্রার্থনা করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)